#অশ্রুমালা
part–29
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
রোদেলা অবিশ্বাস্য চোখে আবেগের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বললো আবেগ মাত্র? সে কি কানে ভুল শুনেছে? হয়তোবা! আবেগ কোন দিন ই তাকে মানবে না সে এটা জানে। দুইদিন আগে জ্বর এসেছে অজ্ঞান ও হয়ে গিয়েছিল জন্য মাথায় কিছু একটা হয়ে আবেগ ভুল-ভাল বকছে। হ্যা এটাই হবে হয়তোবা৷
আবেগ বিরক্তি নিয়ে বলে, এভাবে হা করে তাকিয়ে কেন আছো? মুখে মাছি ঢুকে যাবে তো।কাইন্ডলি সাট ইউর মাউথ।
রোদেলা টুপ করে মুখ বন্ধ করে নিল। আবেগ হালকা হাসলো এবং বলল, জানো? মুখ হা করে রাখায় তোমাকে একদম ব্যাঙের মতো লাগছিল!
রোদেলা মাথা নিচু করে ফেলে।আবেগ কেন তাকে পিঞ্চ মারছে?।
হুট করে তার এখন বেশ লজ্জা লাগছে। নতুন বউয়েরা বিয়ের পরের দিন সকালে যেমন লজ্জার মধ্যে থাকে সেও এখন এমন ই লজ্জার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
আবেগ রোদেলার দিকে তাকালো। মেয়েটা দেখতে কিন্তু খুব সুন্দর। কেবল সুন্দর না মুখের চারপাশ দিয়ে একটা মায়াবি ভাব ফুটে উঠেছে৷
সাধারণত সুন্দর মেয়েরা মায়াবি হয় না। সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে মায়া নামক হরমোন টা নাই। এরা কঠিন স্বভাবের হয়। এদের চেহারায় একটা কাঠ কাঠ ভাব থাকে। মায়া শব্দটা কেন যেন শ্যামবর্ণার সাথে খুব মানায়! এটা আবেগের ব্যক্তিগত মনোভাব। কিন্তু রোদেলা এই থিউরি সামান্য ভুল প্রমানিত করেছে। দেখতে রূপবতী হলেও রোদেলার চেহারায় একটা মায়া ভাব আছে। সম্ভবত চোখের কারনে!
একটা মানুষের সমগ্র সৌন্দয তার চোখের উপর নির্ভর করে। এটাও আবেগের ব্যক্তিগত মনোভাব। তার মতে, যার চোখ যতো সুন্দর সেই ব্যক্তি ততো বেশি সুন্দর!
রোদেলার চোখের পল্লব বেশ ভারী। চোখের মনি অনেক কালো আর গভীর। চোখে অধিকাংশ সময় কাজল পড়ে থাকে রোদেলা। আবেগের মনে হয় রোদেলাকে কেবল কাজল দিলেই কাজলবতী লাগে!
এর বেশি কিছু দিলে যেমন-মেকাপ করলে ওকে ভুতের মতো লাগবে!
রোদেলার দুধে আলতা গায়ের রঙ। লম্বাও ভালোই।বাঙ্গালী মেয়েরা যেই হাইটের হয় তেমনি। আহামরি লম্বা ও না আবার খাটো ও বলতে ভুল হবে।
আবেগ আরো একটা বিষয় খেয়াল করে, রোদেলার ডান পাশে ঠিক ঠোঁটের শেষ ভাগ বরাবর একটা কালো তিল আছে৷ তিলটার সাইজ ও মোটামোটি বড় আর কালো কুচকুচে।
এই তিলটা যেন রোদেলার রুপকে বহু গুন বাড়িয়ে দেয় প্রতিনিয়ত।হাসলে মনে হয় তিলটাও তার সঙ্গে হাসছে!
রোদেলার আরো একটা বিষয় না বলতেই নয়। তাহলো তার কেশ!
কোমড় ছাড়িয়ে গেছে। বেশ লম্বা, সিল্কি চুল রোদেলার। কিন্তু ঘন না। অনেক পাতলা তার চুল। তাও চুলের কারনে রোদেলাকে আরো বেশি সুন্দরী লাগে। বাঙ্গালী নারীর মতো খাড়া নাক। যার জন্য নাকফুল পড়লে বেশ মানায়। গাল গুলো একটু ফোলা ফোলা।আর টসটসে।
আবেগদের পরিবারের সব মেয়েদেরই গাল ফোলা। তার বোন, ফুফু, দাদি,রোদেলা সবার গাল একটু ফোলা ফোলা।
রোদেলা কে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে, আবেগ রোদেলার গা ঘেষে বসল। তাদের মধ্যে বেশ খানিকটা দূরত্ব ছিল। আবেগ সমুদ্র কে ট্রলিতে শুইয়ে তার ফোন বের করে ইউবটিউবে গিয়ে একটা বেবি রাইম বের দিল। সমুদ্র মনোযোগ দিয়ে গান শুনতে লাগলো। খুব মজা পাচ্ছে। গানের তালে তালে একটু আঙুল নাড়াচ্ছে সে।
আবেগ রোদেলার অতি নিকটে গিয়ে বসে পড়ে। লজেন্স খাওয়ায় রোদেলার ঠোঁট কমলা হয়ে গেছে। আবেগ আগ্রহ নিয়েই রোদেলাকে দেখছে। ইন্টারেস্টিং ব্যাপারটা!
লিপস্টিক না দিয়েই ঠোঁটে রঙ হয়ে গেছে।সবচেয়ে মজার বিষয় হলো রংটা রোদেলার।চেহারার সাথে ফুটে উঠেছে। এর চেয়ে হালকা বা ডিপ হলে একদম বেখাপ্পা লাগত।
রোদ অস্বস্তিবোধ প্রকাশ করে বলে, কিছু বলবে?
–হুম।
–কি? বল!
আবেগ রোদেলার হাত চেপে ধরে। এতে রোদেলা অবাক হলো কিন্তু মুখে কিছু বলল না।
আবেগ রোদেলার চোখে চোখ রেখে বলে, আমাকে বল তো, একচুয়ালি কোন কারনে তুমি রিশাদকে ছেড়েছো? আই ওয়ান্ট টু নো।
রোদেলা অস্থির হয়ে পড়ল। কেন আবার সেই কাল রাতের দিন গুলোর কথা জানতে চাচ্ছে আবেগ? সে কি জানে? ওইসব দিনের কথা মনে করলেই রোদেলার গা হীম ঠান্ডা হয়ে আসে?
রোদেলার ঠোঁট কাপতে লাগলো। সে ঘামছেও বুঝি। চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ!
আবেগ রোদেলার হাত আরো জোরে ধরে তাকে আশস্ত করে যে সে আছে তার পাশে৷
রোদেলা কি মনে করে যেন বলে উঠে,
আমি আমার মনে কোন দিনই রিশাদকে জায়গা দিতে পারি নি। জানো আবেগ? আমাদের মনটা না একটা বাড়ির মতো? আমাদের মনের সেই বাড়িতে কয়েকটি কক্ষ থাকে। প্রতিটি কক্ষ প্রতিটি মনের মানুষের জন্য বরাদ্দ থাকে। আমার মনের বাড়িটা খুব একটা বড় না। ছোট্ট একটা পাখির বাসার মতো। সেই বাসার সবচেয়ে সুন্দর কক্ষটার দলিলে আমি তোমার মালিকানার স্বাক্ষর চেয়েছিলাম,,,,,,,,
আবেগের নিজেকে এবার অপরাধীর মতো লাগতে লাগলো। মেয়েটা তাকে কতো ভালোবাসত! অথচ সে তাকে বারেবারে ক্ষনে ক্ষনে অবজ্ঞা করে গেছে।
রোদেলা নিচু গলায় বলে, তুমি জানতে চাচ্ছিলে না কেন আমি রিশাদকে ছেড়ে চলে এসেছি? তাও চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়?
–হুম।
–আমি কি করতাম বল? আমিও নিরুপায় ছিলাম৷ আমার আর রিশাদের বৈবাহিক সম্পর্ক মাত্র এক বছর। এর মধ্যে আমি মাত্র ওর সাথে সাত মাস সংসার করেছি। এই সাতটা মাস আমার জীবন টাকে নরক বানিয়ে দিয়েছিল রিশাদ। প্রথম যেদিন গায়ে তোলে সেই দিনটা ছিল বিয়ের চতুর্থ দিন। ভাবতে পারো একটা মেয়েকে বিয়ের চারদিনের মাথায় তার হ্যাসবেন্ড গায়ে হাত তুলেছে৷ আসলে দোষটা আমার ই ছিল। প্রথম থেকেই আমি ওর অত্যাচার সহ্য করেছি। চুপ থেকেছি। প্রতিবাদ করি নি। বাসায় কাউকে কিছু বলিও নি রিশাদের অত্যাচারের ব্যাপারে
–এই জায়গায় অনেক বড় ভুল করেছো। যেদিন প্রথম হাত তুলল সেদিন ই প্রতিবাদে কিছু করা উচিত ছিল। ফুফিকে জানাতে৷
–তোমরা সবাই তো আমাকে ততো দিনে বিকিয়েই দিয়েছিলে রিশাদের কাছে৷ তাই কাকে কি বলব? (আহত গলায়)
আবেগ মাথা নিচু করল।
রোদেলা জানালার দিকে তাকিয়ে কান্না মিশ্রিত চোখে বলে, অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছিল তাও আমি চুপচাপ সংসার করে গেছি। হয়তোবা তোমদের প্রতি অভিমান কিংবা অভিযোগ করেই কাউকে কিছু জানাতাম না। মুখ বুজে সহ্য করতাম। আমার তখন বারবার একটা কথাই মনে হতো– তোমাদের কে কেন বলব নিজের কষ্টের কথা? তোমরাই তো ঠেলে দিয়েছো নরকে। আর যে নরকে রেখে আসে, সে কি নরক যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবে কোন দিন? রিশাদের আরো একটা বিষয় আমি জানতে পারি। বিয়ের দুইমাসের মাথায়। ওর এক্সট্রা ম্যারিটিয়্যাল রিলেশন চলে অন্য মেয়েদের সাথে। শুধু তাই না, প্রস্টিটিউশনের ব্যবসার সাথেও জড়িত সে। এসব নিয়ে আমি ওর সাথে খোলাসা ভাবে ডিসকাস করি। এক রাতে তারিখ এখনো মনে আছে আমার। বারোই জুলাই। সে রাতে আমি ওর জানোয়ার রুপ দেখেছিলাম। হাতে পোড়া দাগ দেখেছিলে না? এই দাগ সে রাতেই হয়েছিল।
–ওহ।
— এর পর আরো জঘন্য কাজ করা শুরু করল রিশাদ৷ আমি নাকি সুন্দর না। আমার রুপ নাই এসব কথা বলে বাসায় বাহিরের মেয়ে আনা শুরু করল।এতে ওর মাও ওকে সাপোর্ট দিত। বলত ছেলে মানুষ এমন একটু করবেই!
সত্যি বলতে ওর এমন কান্ডে আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত হতাম না। এভাবেই সময় কেটে গেল।আমি প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর রিশাদ এবোর্শন করতে বলে। কেন সে সন্তান চায় না এটা অজানা আমার কাছে৷ কিন্তু আমি কিছুতেই রাজী হয় নি এবোর্শনের জন্য । উপায় না পেয়্ব সে জোর-জবরদস্তি করে আমাকে অজ্ঞান করে হাসপাতালে নিয়ে যায় বাচ্চা নষ্ট করার জন্য কিন্তু কথায় আছে না রাখে আল্লাহ মারে কে? ওই হাসপাতালের ডাক্তার উনি রিশাদের কথা বিশ্বাস করেন নি তাই অপারেশন ও করে নি। আমার জ্ঞান আসার অপেক্ষায় ছিল। কি যেন বন্ড সিগনেচার করতে হয়। জ্ঞান ফেরার পর তখন আমি ওনাকে সব সত্য বলে দিই যে আমি বাচ্চা নষ্ট করতে চাচ্ছি না। সাহায্য চেয়েছিলাম ডাক্তাররের কাছে। তখন উনি আমাকে আমার বাসায় পৌছে দিয়ে আসে৷ তুমি ভাবতে পারছো আবেগ? যদি সেই ভালো ডাক্তারটা আমার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা না করেই অপারেশন শুরু করত, তবে আমি আমার ছেলেকে হারিয়ে ফেলতাম চিরতরে!
আবেগের বুক হুহু করে উঠে। চূর্ণবিচূর্ণ হতে লাগলো হৃদয়! সমুদ্র কে জন্ম হওয়ার আগেই এতোটা লড়াই করতে হয়েছে কেবল মায়ের পেটে আশ্রয় পাওয়ার জন্য?
আবেগের চোখে সমুদ্রের দিকে পড়ল। শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে সমুদ্র। পরমে যত্নে কোলে তুলে নিল তাকে আবেগ। তারপর অনেক গুলো চুমু খেল সমুদ্রের কপালে।এতে সমুদ্রের ঘুম বিঘ্ন হলো। সে নড়েচড়ে উঠে। আবেগ রোদেলার দিকে তাকিয়ে দেখে রোদেলা ও তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আবেগ বুকের সাথে সমুদ্র কে জড়িয়ে রেখে সিটে হেলান দিল। কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না তার। বরং এই মূহুর্তে নিরবতা পালন করার বাসনা জাগছে সেই সাথে রোদেলাকে ও নিজের বুকে আগলে নেওয়ার ইচ্ছাটা প্রবল থেকে প্রবলতর এবং প্রবলতম হচ্ছে!
★★★
খাওয়ার টেবিলে বসে আছে অথৈ। পোলাও খায় নি সে। খাওয়ার রুচি নেই। তার বাবা খেতে আসলেন। তখনো অথৈ জোড়োসোরো হয়ে বসে আছে চেয়ারে। সামনে দই আর মিস্টির প্যাকেট। অথৈ দই আর সাদা জাম মিস্টি একসাথে খেতে খুব পছন্দ করে। বাবা ও সাদা জাম আর দই এনেছে। যা দেখে কিছু টা খুশি হলো অথৈ। সে একটা বাটিতে দই আর মাঝখানে মিস্টি তুলে নিয়ে চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করছে কিন্তু খেতে মন চাচ্ছে না তার।
আজিজুল সাহেব টেবিলে বসলেন এবং প্লেটে খাবার তুলে নিলেন। এই বাসায় কোন রুলস নাই। যে যার মতো খায়, ঘুমায়, বাইরে যায়। অথৈয়ের বাবা-মা আলাদা দুই রুমে থাকে। অথৈয়ের বড় ভাই এই বাসায় ই থাকে না। আলাদা ফ্লাট নিয়ে থাকে। বাবা-মায়ের সাথে সে কথা বলে না। তবে মাঝে মধ্যে অথৈয়ের সাথে কথা বলে। অথৈ ও প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। আর মেঘের সাথে প্রেমের কথা জানার পর তো অথৈয়ের বাবা-মা দুইজন ই তার উপর রেগে আছে।
আজকে সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য বশত তাদের টাইমিং মিলে গেছে।
অথৈকে দেখে তার বাবা জিজ্ঞেস করে, ডিনার না করে কেবল মিস্টি খাচ্ছো কেন?
অথৈ বলে, খেয়েছি আমি। যা ডাহা মিথ্যা।
আজিজুল সাহেব আর কিছু বললেন না। উনি খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। অথৈ না পারছে উঠে যেতে আর না পারছে বসে থাকতে।
উনি প্রশ্ন করল, তোমার ভাই তোমার সাথে কথা বলে?
অথৈ মাথা ঝাকালো।
–কেমন আছে ও?
–ভালো।
–লাস্ট কবে কথা হয়েছে?
অথৈ কাতর গলায় বলে, এক সপ্তাহ আগে৷
আজিজুল সাহেব বলেন, ভাইয়ের সাথে এতো কম যোগাযোগ কেন? প্রতিদিন কথা বলবে। আচ্ছা, তোমার ফর্মাল জামা আছে?
অথৈ বুঝে পেল না। ফর্মাল জামা দিয়ে সে কি করবে? এখন ফয়সালের সাথে দেখা করার আগেও ফর্মাল লুকে যেতে হবে?
অথৈ না বুঝে প্রশ্ন করে, কেন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে?
আজিজুল সাহেব কঠিন গলায় বলে, আজ-কাল এই প্রাইভেট কোম্পানির ঢংয়ের শেষ নাই৷ মিটিংয়ে ফর্মাল ড্রেস ছাড়া ঢুকতে দেয় না।
অথৈ অবাক হয়ে তার বাবার দিকে তাকালো।
উনি কড়া গলায় বলে, এভাবে তাকানোর কি আছে? ড্রয়িং রুমে দুইটা সাদা সালোয়ার কামিজ আছে আর পাচ হাজার টাকা। পছন্দ হলে নিজের জন্য রেখে দিও।
বলে উঠে পড়লেন আজিজুল সাহেব।
অথৈ হতভম্ব হয়ে গেল। তার চোখ দুই দিয়ে বেয়ে পড়ে। তবে এটা দুখের না। সুখের৷
চলবে। #অশ্রুমালা
part–30
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
সকালের আলো ফুটতে শুরু করার সাথে সাথেই বাস ও থেমে গেল। গন্তব্যে পৌছে গেছে যে বাস। আর তো চাইলেও সামনে যাওয়া যাবে না! যাত্রী নামতে শুরু করল। সবার মুখে ব্যস্ততার ছাপ।
এতো শত ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই ঠেলাঠেলি সামলিয়ে বাসের উপর থেকে ব্যাগ বের করে নিচে নামল রোদেলা আর আবেগ।
ঢাকা মানেই ব্যস্ততা আর এই ব্যস্ততার ছোয়া সমস্ত ঢাকাবাসীর মধ্যে ছেয়ে গেছে।প্রতিটি ঢাকাবাসীর চেহারার মধ্যে একটা অদৃশ্য তাড়া আর বানোয়াট ব্যস্ততা বিরাজ করে। গ্রাম যেমন শান্ত,ধীর-স্থির সেখানে বাস করা মানুষের মধ্যেও এক ধরনের স্থিরতা বিরাজ করে।
বাস থেকে নেমেই আবেগ আশেপাশে তাকালো। এখান থেকে আরো ঘণ্টা-খানেক পর বাসা পৌছাতে পারবে। ঘড়িতে ছয়টার কম বাজে।
সে গাড়িতেই উবার কল করে রেখেছিল। আর দশ মিনিট পর গাড়ি আসবে। স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছে তারা।
সব যাত্রী নেমে যে যার মতো চলে যেতে লাগলো। এতো পথ এক সাথে পাড়ি দিল সবাই কিন্তু এখন যে যার মতো পৃথক পৃথক হয়ে যে যার ঘরে চলে যাচ্ছে। কারো জন্য কারো মায়া নেই। এজন্য বুঝি তাদের মুসাফির বলে!
আমাদের প্রত্যকের জীবনে কেউ না কেউ মুসাফির হয়ে আসে। কিছু টা সময় একসাথে তাদের সাথে কাটাই, ক্ষনিকের জন্য পরিচিত হই, হালকা সাক্ষাৎ করি,কুশল বিনিময় করি। কিন্তু যাত্রা শেষে যে যার মতো চলে যায়। কেউ কারো জন্য এক দন্ডের জন্য থামে না।চঞ্চলতা আর ব্যস্ততা নিয়ে নিজ গন্তব্যে এগিয়ে যায়। তাদের বৈশিষ্ট্যই চলে যাওয়া যেমন পানির ধর্ম গড়িয়ে পড়া!
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, তাদের জন্য কোন ধরনের মায়া কাজ করে না। নাকি করে?
আবেগের চোখের সামন দিয়ে বাসে তের ঘন্টা একসাথে যাত্রা করা সেই বুড়ি মহিলা কলার কাদি হাতে নিয়ে হেটে যাচ্ছে । কই মায়া তো লাগছে না আবেগের? বরং মনে হচ্ছে সে তো যাবেই!
উবার ড্রাইভার আবেগকে ডাকতে লাগে। আবেগের হুশ ফেরে। সে দেখল, রোদেলা গাড়িতে বসে পড়েছে ইতিমধ্যে ।
আবেগ ও তড়িঘড়ি করে উঠে বসল গাড়িতে।
গাড়ি শাশা করে আগাচ্ছে। থেকে থেকে সিগন্যালের কারনে থামছে। ঢাকার নিত্য চেনা লাল-সবুজ-হলুদ বাতি দেখে স্বস্তি বোধ করে আবেগ। সত্যি বলতে গ্রামের খোলামেলা পরিবেশ, ঠান্ডা বাতাসে আরাম পেলেও কিছু টা অস্বস্তি লেগেছে তার। অচেনা লাগত সবকিছু ।যে যেখানে থেকে অভ্যস্ত সে সেখানেই শান্তি খুজে নিবে৷
আবেগের কাধে রোদেলা মাথা ঠেকিয়ে দিল। ইচ্ছাকৃত ভাবেই। এতে বিরক্ত আবেগ। সে ড্রাইভারের সামনে কিছু বলতেও পারছে না রোদেলাকে। তাও আস্তে করে বলে, আশ্চর্য! আমার কাধে কেন মাথা রেখেছো?
রোদেলা হাসিমুখে বলে, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
–সিটে হেলান দিয়ে ঘুমাও।
–উহু। সিটে হেলান দিতে কেমন জানি লাগে। কে না কে বসেছে!
আবেগ আর কিছু বলল না।
এবার রোদেলা ই নিজে থেকে বলে উঠে, তুমিই না রাতে বললে আমার সব আবদার পূরণ করার দায়িত্ব তোমার। আমার এখন ঘুমুতে মন চাচ্ছে।
আবেগ নিশ্চুপ থেকে সম্মতি দেয়। রোদেলা যদিও বা ঘুমায় নি। কিন্তু পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে থাকে। এক অদ্ভুত প্রশান্তি মনে বয়ে যাচ্ছে তার।
গাড়ি থেকে নেমে বিল মিটিয়ে উপরে উঠে গেল তারা। বেল বাজাতেই ইমতিয়াজ রহমান গেট খুললেন। এখন বাজে সোয়া সাতটা। বাসায় সবাই সকাল-সকাল ই উঠে।
ইমতিয়াজ রহমান হাসিমুখ করে বলে, আসলি তোরা এতো জলদি? আমি তো ভেবেছি দশটার আগে পৌছাবি না।
আবেগ ব্যাগ মেঝেতে রেখে রুমে পা বাড়ালো উত্তর টা রোদেলা দিল। সে বলল, মামা, রাস্তায় জ্যাম ছিল না একদম।
–ও। ফ্রেস হয়ে নে মা৷
–হুম।
রোদেলা সমুদ্রকে নিয়ে রুমে ফিরল। আবেগ বাথরুমে। রোদেলা নিজেও পড়নের জামা-কাপড় নিয়ে ইভানার রুমে গেল ফ্রেস হতে।
এই বাসায় ইভানাই একটু দেরিতে উঠে।
ইভানা ঘুমাচ্ছিল। রোদেলা বাথরুম থেকে গোসল সেরে বের হলো এবং রান্নাঘরে গেল।
সে জানে এভাবে হুটহাট গ্রামে যাওয়ায় বেজার মামী। তার উপর তার আদরের মানিকের টুকরো ছেলেও গিয়েছিল। এতে আরো রেগে থাকার কথা। তাই মামী হতে সাবধানে থাকতে হবে। কথা শোনানোর কোন সুযোগই দেওয়া যাবে না।
পরোটা আর সবজি রান্না করল সে। সাথে দুধ চা। তারপর প্লেটে সাজিয়ে আবেগের কাছে গেল।
আবেগ মাত্র বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল। রোদেলা কে আসতে দেখে খুশিই হলো। মূলত চা দেখে সে খুশি হয়। তার মাত্র ই চা খেতে মন চাচ্ছিল। আর চা পেয়ে গেল।
সে চায়ের কাপ হাতে নিল। রোদেলা সেই সাথে নাস্তার প্লেট ও ধরিয়ে দেয়।
আবেগ বলে, ময়নার মা এসে গেছে?
–না। আসেনি এখনো।
–নাস্তা কে বানালো?
–আমি মাত্র বানালাম।
আবেগ ভ্রু যুগল কুচকে বলে, কেন? এতোটা জানি করে রান্না করতে গেলে?
–তো? না খেয়ে ঘুমাবে? খেয়ে যতোক্ষন ইচ্ছা ঘুমাও।
–তুমি খেয়েছো?
রোদেলার টনক নড়ল। কেন যেন তার এই প্রশ্নটা খুব পছন্দের একটা প্রশ্ন। কেউ যখন তাকে জিজ্ঞেস করে খেয়েছে কিনা সে? তখন সে খুব খুশি হয় মনে মনে। ভালো লাগে তার৷ কিন্তু এই প্রশ্ন করার মানুষ বড্ড স্বপ্ল!
এখনো মনে মনে খুশি হলো রোদেলা। মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, খাই নি এখনো।
রোদেলার জবাব শুনে আবেগ উঠে রুমের বাইরে গেল এবং কিছু সময় বাদে আরো একটা প্লেট আনলো। তারপর রোদেলার দিকে দিয়ে বলে, তুমিও খেয়ে শুয়ে পড়ো। ইউ নিড রেস্ট।
রোদেলা মৃদ্যু হেসে খেয়ে নিল এবং সমুদ্রের পাশে শুয়ে পড়ে সে।
আবেগ নাস্তা করে চা খেয়ে বারান্দায় গেল। সিগারেট ধরালো সে। গ্রামে গিয়ে একটাও সিগারেট খায় নি। সিগারেট ফুকতে লাগলো আবেগ। কেন যেন ঘুম উবে গেছে। চা খাওয়ার পর ঘুমটা কোথায় যেন পালিয়ে গেছে। ভেতর থেকে কোন শব্দ আসছে। রোদেলা ঘুমিয়ে গেছে বোধহয়।
★★★
মেঘ ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে কোনরকমে নাস্তা সেরে অফিসে গেল। আজকে আধ ঘন্টা লেইট করে ফেলেছে সে। কালকে সারারাত ঘুম হয় নি তার। নিঘুম পাড় করেছে পুরাটা রাত। এর পেছনে একটা কারন ও আছে। সেটা অবশ্যই অথৈ সংক্রান্ত। অথৈ রিলেটেড কোন সমস্যা ছাড়া তার জীবনে কোন সমস্যার দাম নাই। মেঘ ফয়সালের পিছনে একটা লোক লাগিয়েছিল। খবর-আপডেট ভালো আসে নি! ফয়সালের রিভিউ ভালো না৷ ছেলেটার নাকি আগেও রিলেশন ছিল। তার ও রিলেশন ছিল কিন্তু ফয়সাল নাকি প্লে বয় টাইপের। অথৈ যে বোকা! এই জনমে কোন দিন টের ই পাবে না ফয়সাল তাকে ঘোল খাওয়াচ্ছে৷ অথৈকে যে সতক করবে তার ও উপায় নাই।মেঘকে সব খান থেকে ব্লক মেরে রেখেছে অথৈ। যোগাযোগ করতে হলে কারো সাহায্য লাগবে। রোদেলার সাথে নাকি অথৈয়ের কথা হয় না।কেমন মেয়ে? নিজের ফ্রেন্ডের সাথেও কথা বলে না!
তাহলে কি সে গিয়ে পারসোনালি সরাসরি করহা বলবে? কথা তো বলতেই হবে। নাহলে অথৈয়ের সাথেও খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। রিশাদকে দেখার পর সত্যি বলতে এখন অপরিচিত কোন ছেলের সাথে মেয়েদের বিয়ে হতে দেখলেই আত্মা কেপে উঠে। অবশ্য সবাইকে এক কাতারে ফেলা অপরাধ! তাও রোদেলার পরিনতি দেখে তার সত্যি অপরিচিত কারো সাথে বিয়ে হতে দেখলে ভয় লাগে। অথৈয়ের জন্য সে টেনশন করছে। অথৈ রোদেলার মতো এতো স্ট্রং না। এমন কোন পপরিস্থিতি তে অথৈ যদি পড়ত হয় ও আত্মহত্যা করত না হয় পাগল হয়ে যেত। একে তো ওর ফ্যামিলি প্রেসার অনেক। স্ট্রিক গাডিয়ান তারপর যদি ফয়সাল ভালো না হয়। আম ও যাবে ছালাও যাবে।
মেঘ উঠে দাড়ালো এবং জানালার কাছে গেল। হুহু করে বাতাস আসছে। সে চোখ বুজে ফেলে।
অথৈয়ের কি কপাল! তার মতো এতো ভালো এক্স বয়ফ্রেন্ড পেয়েছে যে কিনা এক্স গার্লফ্রেডের বিয়ের পাত্রের খবরাখবর বের করে যাচাই করে।
মেঘ কেবিনের কাছে গিয়ে পানি ফ্লাস্ক থেকে ঢেলে খেতে লাগলো। এই ফ্লাস্কটা অথৈয়ের দেওয়া। সে ফ্লাস্কটার গায়ে হাত বুলালো।
তার আর অথৈয়ের ব্রেক আপ হয়েছে খুব ই তুচ্ছ কারনে। হুট করে একদিন অথৈ ফোন করে জানায় সে আর মেঘের সাথে সম্পর্কে থাকবেনা৷
কেন ব্রেক আপ করছে অথৈ ভ্যালিড রিজন নাই তার! মেঘের তো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। কারন অথৈকে সে আসলেই খুব ভালোবাসে। এই টুয়েন্টি টুয়েন্টির যুগেও তার ভালোবাসা খাটি৷ অথৈ যে পরিবারের চাপে পড়ে ব্রেক আপ করেছে এটা মেঘ বুঝতে পেরেছে৷ এই জায়গায় অথৈ ভুল করছে৷ অথৈ কি পারে না তার মা-বাবার সাথে কথা বলতে? এভাবে চুপ থেকে অথৈ নিজেও কষ্ট পাচ্ছে, মেঘকেও কষ্ট দিচ্ছে। মেঘ একটা বড় করে দম নিল। কেন এমন করছে অথৈ। “ব্রেকআপ” বলে ওই যে ফোন কেটে দিল আর তো কথা হয় না। সুযোগ ও পায়নি মেঘ অথৈয়ের সাথে কথা বলার। মাঝে মধ্যে মেঘের খুব করে মন চায় অথৈকে ওর বাসা থেকে কিডন্যাপ করে এনে বিয়ে করে ফেলতে। কিন্তু সে তো আর সিনেমার নায়ক না। তাই তো কোন দোষ না থাকার পরও নিজের প্রেমিকার বিয়ে দেখবে। তাও যেমন-তেমন পাত্র না প্লে বয় বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার পাত্র!
ফয়সালের একটা ছবি মেঘের ফোনে আছে৷ সে ছবিটা বের করে নিজের চেহারার সাথে তুলনা করল।
ফয়সালের চেয়ে সে হাজার গুন হ্যান্ডসাম। তার চুল কি সুন্দর সিল্কি হেয়ার। কপালে চুল পড়েও থাকে কয়েকটা। লম্বাও অনেক। ড্রাসিং ও কি কম? মেঘ নিজেই নিজের উপর ফিদা। তার বেশ কয়েকটা ফিমেইল কলিগ তার উপর ইন্ট্রারেস্টেড।
আচ্ছা! অথৈ যদি তার বাবার সাথে কথা না বলে, তবে কি একবার কথা বলে দেখবে? লাস্ট অপারচুনিটি অথৈকে পাওয়ার হারাতে দেওয়া যাবে না।
★★★
ইভানা ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। পাক্কা দেড় ঘন্টা ধরে। কোন দিকে হুশ নেই। জাবেদা খাতুন দুই বার এসে কিসব বলে গেলেন যার একটাও কানে নেয় নি ইভানা।এতে মনে মনে ক্ষিপ্ত তিনি। তার মেয়ের এমনি আগে থেকেই ফোনের নেশা বেশি। ইদানিং আরো বেড়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ জন্য বেশি কিছু বলতে ও পারে না। ইভানা তো আর রোদেলা না যে বোকা দিলে বা কথা শুনালে মাথা নিচু করে সব শুনবে।
ইভানা হচ্ছে এই বাসার কালবৈশাখী ঝড়। এটা অবশ্য আবেগের দেওয়া নাম। ওকে কেউ কিছু বললে প্রতিউত্তরে ঝগড়া করে। আর মেডিকেলে চ্যান্স পাওয়ার অযুহাত দেখিয়ে বকা দিতে পারে না ইভানাকে। ইভানাকে বকা দিলে তার মেয়েতো প্রতিবাদ করবেই তার উপর আবেগ জানতে পারলে সে এসে তার মাক্ব জবাবদিহি করে, কেন তার আদরের ছোট বোন বকা দিচ্ছে। এজন্য আর কিছুই বলে না তিনি ইভানাকে।
তিনি ইভানার দিকে তাকালো। মিটমিট করে হাসছে ইভানা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে।জাবেদা খাতুন বিরক্তি নিয়ে চলে গেলেন।
ইভানা শৌখিনের সাথে চ্যাট করছে। কোয়ান্টাম থেকে এসেই মনে সাহস জুটিয়ে শায়েরীর কাছ থেকে আইডি নিয়ে নক দিয়েছিল। শায়েরী কিছুটা নার্ড টাইপের। তাই ইভানাকে একদম ই টিচ করে নি। ইভানা অবশ্য শায়েরীকে বলে ফেলেছে যে সে শৌখিনের উপর ক্রাশ খাইছে শায়েরী প্রতিউত্তরে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে ছিল। ভিডিও কলের দরুন সেই লুক দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল ইভানার। এই নিয়ে চতুর্থ বার তারা চ্যাট করছে। প্রতিবার চ্যাটিং শুরু করলে পাক্কা দুই ঘন্টা ধরে চলতে থাকে। প্রতিবার ই ইভানায় নক দিয়েছে। খুব শৌখিন ও ইন্টারেস্টেড এটা চ্যাট করে বোঝা যাচ্ছে। ওপাশ থেকে শৌখিনের ম্যাসেজ আসল। আজকে বিকেলে দেখা করতে পারবে?
এই ম্যাসেজ দেখে ইভানার গা কাপতে শুরু করে। এতো যেন মেঘ বা চাইতেই বৃষ্টি! সেও নাচতে নাচতে রাজী হয়ে যায়। শৌখিনের ম্যাসেজে লাভ রিয়্যাক্ট দিয়ে সে রিপ্লে দেয়, ওকে। টেস্ট্রি ট্রিটের গলির সামনে দাড়াবা। আমি ওখানেই আসব।
শৌখিন বলে, আচ্ছা। বিকেল পাচটায় আসব৷
ইভানা সুন্দর করে সেজেগুজে বসে আছে। তার একা যেতে কেমন জানি লাগছে। আচ্ছা ভাবিকে নিয়ে গেলে কেমন হবে? শৌখিন নিশ্চয়ই চমকে যাবে। ছেলেটাকে চমকালে কেমন দেখাবে? আরো সুন্দর নিশ্চয়ই!
ইভানা ঠিক করে,সে একা যাবে না। ভাবীকে সঙ্গে নিবে। আর শৌখিনকে একটা বড়সড় শক দিবে।
বিকেল চারটার দিকে আবেগ চেম্বারের উদ্দেশ্য বের হলো। আবেগের চেম্বার ট্রেস্টি ট্রিটের গলির একটু সামনেই।
সাড়ে চারটায় ইভানা রোদেলা কে জোড়াজুড়ি করে বাইরে নিয়ে আসল। ইভানা একবার য বলবে তাই করবে। অগত্যা এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বের হয় রোদেলা। পড়নে সালোয়ার কামিজ তার। টেস্ট্রি ট্রিটের সামনে দাড়াতেই দেখল ফুচকার দোকান। তখনো পাচটা বাজে নি। তাই ইভানা রোদেলাকে ফুচকা খাওয়া ত্ব নিয়ে গেল। দুই প্লেট ফুচকা। বোম্বে মরিচ দিয়ে ওডার দেয়৷
কিছুক্ষনের মধ্যে ফুচকা চলে এলো। যেই না রোদেলা ফুচকা মুখে দিবে হুট করে কোথা থেকে যেন আবেগ এসে ছো মেরে ফুচকার প্লেট কেড়ে নিল। রোদেলা তো হতভম্ব!
আবেগ ধমক মেরে বলে, এই করোনা কালে তুমি রাস্তায় দাঁড়ায় ফুচকা খাও কোন সাহসে?
তারপর ইভানার দিকে তাকিয়ে বলে, আর তুই?তুই না ডাক্তার হবি আর দুই বছর পর? তার পর ও এই পপরিস্থিতি তে কিভানে স্ট্রি ফুড খাস আর মাস্ক কই তোদের?
ইভানা রোদেলা দুইজন ই চুপ৷ মাস্ক পড়ার কথা মাথাতেই ছিল না।
ইভানা আবেগের বকার হাত থেকে বাচার জন্য বলে, ভাইয়া আমার একটা কাজ আছে। আমি যাই।
আবেগ আবার আরেকটা ধমক দিয়ে পকেট মাস্ক বের করল। দুইটা। একটা রোদেলাকে দিল আর একটা ইভানা৷
ইভানা মাস্ক পড়েই হাওয়া।
আবেগ রোদেলার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, বাসায় গিয়েই গরম পানি আর স্যাভলন দিয়ে গোসল করবা৷
–আচ্ছা।
চলবে।
[