#অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১০_১১
শ্রেয়িতা আশ্চর্যময়ী দৃষ্টিকোণে তাকিয়ে আছে। আয়নার দিকে একপলক দেখে নিল। শাড়িটা শুদ্ধভাবে পিনআপ করেছে কিনা। না শুদ্ধতম হয়েছে। তাহলে এ পোলা ড্যাব ড্যাব করে কেন তাকিয়ে আছে! এর অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না সে।
গলাটা পরিষ্কার করার ভান করে যুবকের কাছে গেল। এখনো এক ধ্যানে পড়ে রয়েছে যুবক।
শ্রেয়িতাকে কাছে আসতে দেখে এক পা করে করে পিছিয়ে গেল সে। ফ্যান চলছে তাও যেন কপালে ঘাম এসে ভীড় জমিয়েছে তার। শ্রেয়িতা যুবকের বেহাল দশা দেখে ফিক করে হেসে দিল।
ইফদিয়ার তড়িঘড়ি রুমের চলে আসে। শ্রেয়িতা কে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে পাশে থাকা যুবকের দিকে তাকায়। যুবকটা যেন ফিট হয়ে মূর্তির মত খাঁড়া রয়ে গেল। ইফদিয়ার কাছে গিয়ে টুকা দিল। কোনো নড়বড় নেই মনে হচ্ছে কোনো ধ্যানমগ্নে ব্যস্ত। ঠোঁট ফুলিয়ে এবার চিমটি কাটল হাতের ডগায়। ‘আহ’ করে হালকা আর্তনাদ করে উঠে যুবক।
ইফদিয়ার চোখ পাঁকিয়ে বলে,
‘কি ইসম ভাই মেয়েদের মত চিল্লাচ্ছো কেন! পাশের বাসার আন্টির কাছে ধোলাই খাওয়ার ইচ্ছে জাগছে।’
‘কি কস বোন। আমি এখানে এসে পরী দেখব তার ধারণাই ছিল না।’
ইফদিয়ার ভাইয়ের কথায় অবাক হয়ে ভাইয়ের চৌপাশ ঘুরে বলে,
‘কোথায় পরী তুই একলা দাঁড়িয়ে আছিস।’
‘গাধী তাইলে এটা কে!’
শ্রেয়িতাকে ‘পরী’ সমব্ধন করায় লজ্জায় কেঁপে উঠল। মাথা নুয়ে শাড়ির আঁচল চেপে ধরে। অকস্মাৎ যুবকটি যে তার ডাইরেক্ট প্রশংসা করে বসবে তা জানলে রুমের ভেতরই থাকতো না। তাও আবার ইফদিয়ার কি না তারই বোন। ইশ! ভাবতেও ভীষণ লাজুকতা ঘিরে ধরছে।
শ্রেয়িতা যত ভাবছে ততই লাজুকতা কাজ করছে শরীরের শিরা উপশিরায়। ইসমাইল শ্রেয়িতার আপাদমস্তক দেখে বলে,
‘অপূর্ব রুপসী।’
ইফদিয়ার টাস্কি খেয়ে যায়। ইসমাইল মেঁতে রইল নিজের ধ্যানময়ী নারীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে। শ্রেয়িতা সহ্য করতে না পেরে রুম থেকে চলে যায়। ইফদিয়ার মুচকি হেসে যাওয়ার আগে ভাইয়ের ঘাড়ে জোরে চিমটি কাটে। এতে উচ্চস্বরে ‘আহ’ করে উঠে ইসমাইল। ইফদিয়ারকে আর পাই কে! দিল এক দৌড় রুম থেকে। ইসমাইল চেঁচিয়ে বলে,
‘রাক্ষসী ভালো হইবো না কইয়া দিলাম।’
ইফদিয়ারও তাল মিলিয়ে বলে,
‘ভালো হয়ে যাও বাচ্ছা।’
ইসমাইল হালকা হেসে মাথার চুল নাড়তে থেকে কাবার্ড খুলে এপ্রোন ঢুকিয়ে রাখে। ঘার্মাক্ত কাপড়গুলি বালতির মধ্যে ফেলে দিল। পরিপাটি কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে গেল। মাঝপথে পা থামিয়ে পিছিয়ে গেল আয়নার দিকে মুখ করে। নিজেকে একবার দেখে শিষ বাজাতে থেকে ওয়াশরুমে ঢুকে।
১৬.
শ্রেয়িতা ইফদিয়ার রুমে পায়চারী করছে। কবে আসল উত্তরটা সে দিবে। কেনো সে তার ভাইয়ের রুমে গিয়ে ছিল তার আসল কারণটা না জানানো পর্যন্ত। তার শান্তি নেই। ইফদিয়ার ডাইনিং টেবিলে বাটি,গ্লাস,ভাত,তরকারি এনে রাখল।
শ্রেয়িতা কে বসার রুমে পেল না। শুদ্ধ ধারণা মোতাবেক শ্রেয়িপ্পিকে নিজ রুমে পেল। পরন্তু চিন্তিত মুখখানি দেখে ইফদিয়ার সন্নিকটে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে।
‘আপু আইনস্টাইনের মত হেঁটে কি আবিষ্কার করছো মাথায়।’
‘আইনস্টাইন কি এভাবে হাঁটতো!’
‘জানি না কিন্তু বেটা বুড়ো যতগুলো গরুর মত সূত্র দিয়া গেল। ঘাস খাওয়ার মত হজম করা লাগে।’
‘তা বটে সূত্রের শেষ নেই।’
‘বলিও না আপু পিজিক্স কেমিস্ট্রি বই ধরতেও ইচ্ছে করে না। এক একটা পাতা খেয়ে মোটকু বানিয়ে ফেলেছে বই নিজেকে।’
‘বই নিজে কই খাইলো তাকে তো খানা ঠুসাইয়া দিল হাদারামের দলবল!’
কথার পরিপক্ষে মুচকি হাসি দিল ইফদিয়ার।
‘আহহ শোন না তোকে একটা কথা বলার ছিল।’
ইফদিয়ার শ্রেয়িতার গম্ভীর মুখশ্রী দেখে কোমল কণ্ঠে বলে,
‘হে বলো না শ্রেয়িপ্পি।’
‘আসলে আমি না ইচ্ছে করে তোমার ভাইয়ের রুমে যায় নি। তোমার ওয়াশরুমে ঝরণার কলে পানি আসছিল না। সুতরাং কাপড় নিয়ে তোমার ভাইয়ের রুমটা খালি দেখে ঢুকে পড়ে ছিলাম। বিশ্বাস করো তখনো জানতাম না যে রুমটা তোমার টীট ব্রাদারের। হঠাৎ কোথার থেকে উদয় হলো রুমে। আমাকে দেখেই কেনো যেন চিৎকার দিয়ে উঠল। প্রথমে আমিও হকচক খেয়ে ছিলাম। এই বুঝি আমার শাড়ি পরা যথার্থ হয়নি। কিন্তু যখন আয়নায় দেখলাম যে না হুবহু পরেছি। তখন অবাক হয়ে শুধু তোমার ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া দেখ ছিলাম।’
অসহায়ের মুখ করে দম ছাড়ল শ্রেয়িতা। পিটপিট করে দৃষ্টিপাত করে রেখেছে ইফদিয়ার। শ্রেয়িতার নিষ্প্রভ চাহনী দেখে ‘হে হে’ করে হেসে উঠে। ধপাস করে খাটের উপর বসে যায়। শ্রেয়িতা খিটখিটে অক্ষিদ্বয়ে দৃষ্টি রাখে ইফদিয়ার উপর। রমণী তাও পাত্তাহীন ভাবে হেসে যাচ্ছে। যা সহ্য হলো না শ্রেয়িতার। ইফদিয়ার ছোট পুচকি গাল জোরে টেনে দিল। ইফদিয়ার ‘আউচ’ করে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
‘আমার গাল টেনে রাগ মিটাও কেন। যার সামনে বেইজ্জত হলে তার গাল গিয়ে টানো।’
শ্রেয়িতা অবাককর দৃষ্টিতে চেঁচিয়ে বলে,
‘হোয়াইট আর ইউ ম্যাড! আইম অলরেডি ফিলিং সেইম ইফুডল।’
‘ওকে ফাইন লিসেন ডোন্ট ওয়ারি। হি ইজ মাই লাভলী ব্রাদার ইসমাইল বুহিয়ান। লাইক এ সাই বয়।’
‘কি তোমার ভাই কে কোন এঙ্গেলে সাই লাগে হে! এক্করে নির্লজ্জের বস্তা।’
শ্রেয়িতা বলার পর ইফদিয়ার কোনো উত্তর না পেয়ে চোখ পাঁকিয়ে তাকায়। দেখে রমণী মিটমিটিয়ে হাসছে। ভ্রু কুঁচকে অনুধাবন করার চেষ্টা করে। পরক্ষণে হাসির কারণ বুঝতে পেরে ত্রপাট অস্বস্তিতে পড়ে গেল। হালকা কেশে দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়াস করে ইসমাইল। সে লাঞ্চ করে নি। তাই খাওয়ার জন্যে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে দেখে খাবার পরিবেশন করা। অথচ সদস্যগণ অন্তর্হিত হয়ে পড়েছে। তখন হাসির খিলখিলানির শব্দে রুমটির সান্নিধ্য পেতে এগিয়ে গেল। দরজা আলগা করে ভিজিয়ে ছিল। অতঃপর শ্রেয়িতা আর ইফদিয়ার কথোপকথন গোপনে শ্রবণ করে নিল। তথাপি শ্রেয়িতা নামক মেয়েটির শেষ কথা শুনে কেন যেন ভীষণভাবে হৃদয়টা লাফাতে শুরু করে ছিল। পরমুর্হুতে নিজের মনের ভাবনা ঝেড়ে ফেলে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কেশে উঠে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
শ্রেয়িতা ঢোক গিলে এলোমেলো দৃষ্টি নিয়ে পরখ করে। কোনোভাবেও অক্ষিদ্বয়কে ইসমাইল এর অক্ষির সম্মুখীন হতে দিল না। বড্ড দমিয়ে রাখল নিজেকে। ইসমাইল দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
‘বলি খাবার কি ইদুঁরের জন্যে সাজানো হয়েছে। পেটে অবশ্য একদল ইদুঁর লাফালাফি করছে। শিগ্রি যদি নারীরা খেতে আসতেন বড্ড ধন্য হতাম।’
শ্রেয়িতা সাহস করে ‘উহু’ উচ্চারণ করে চোখ ঘুরিয়ে ভাব নিল। যেন ইসমাইল এর কথা শুনতেই পাই নি। সে শ্রেয়িতার ভাব দেখে ইফদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘রাস্তার ভাবওয়ালীকে কুড়িয়ে এনেছিস।’
ইফদিয়ার হেসেই উঠে। আজ যেন সে মজা পাচ্ছে। চরম লেভেলের মজা যাকে বলে। ভাই আর নতুন পরিচিত শ্রেয়িপ্পির উক্তিগুলো দারুণ লাগছে শুনতে। শ্রেয়িতা আগে চলে যাওয়ায় ভাইবোন একসঙ্গে এলো। শ্রেয়িতা বসে পড়েছে। তবে খাওয়া শুরু করেনি। ইফদিয়ার শ্রেয়িতাকে খেতে না দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,
‘আপু খাবার মজা হয়নি খাচ্ছো না যে!’
‘এত সুন্দর সুঘ্রাণ মাশাআল্লাহ তোমার হাতে জাদু আছে নিশ্চয়। ঘ্রাণ যদি এত সুঘ্রাণ হয় তাহলে খেতে ভারি সুস্বাদু হবে।’
‘জাযাকাল্লাহু খাইর আপু। তবে খাওয়া শুরু করলে না যে!’
প্রশ্নের উত্তরে মুচকি হেসে শ্রেয়িতা বলে,
‘না আসলে তোমরা ছিলে না। একা খেতে আনইজি ফিল হয়।’
ইতস্ততঃ বোধক দৃষ্টিতে তাকালো। তারা চুপ করে পরিস্থিতি মানিয়ে খেতে বসে। ইসমাইল খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল। ক্লান্ত আর খাবার খেয়ে ঘুম যেন দলা পাঁকিয়ে এসেছে। নিজেকে সামলাতে না পেরে ঘুমিয়ে পড়ল। শ্রেয়িতা জগিং সুট পরে শাড়িটা ফিরিয়ে দিল। কুশলাদি বিনিময় করে নিজ পথে বেরিয়ে যায় শ্রেয়িতা।
১৭.
নিরিবিলি রুমের মধ্যে আঁটকা পড়েছে নাহেম। হাত-পা ছড়াছড়ি করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। দম ফাটিয়ে চিৎকার করতে চাইছে তাও পারছে না। কেননা মুখে-হাত-পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে কেউ। শো শো পিনপন ধুমকা হাওয়া রুমের মধ্যে প্রবেশ করছে। যার ফলে ভুতূড়ে লাগছে পরিবেশটা। না আছে কোনো আসবাবপত্র, না আছে কোনো মানব। একদম ধীরস্থির নির্জন জায়গায় মরিয়া হয়ে পড়েছে নাহেম উল্লাহ। বাহির থেকে রুমের অভ্যন্তরীণ দশা পরখ করছে যুবক। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।
হাত দিয়ে চুলগুলো নেড়ে তার পাশে থাকা অপর যুবকের দিকে তাকায়। সেই যুবকের ভয়ার্ত মুখ দর্শন করে বলে,
‘যেভাবে দেখছিস যেন ধর্ষণ করবি ওরে।’
‘হা*লা তোকে কি শয়তানে লারে! এক বুইডারে কিডনাপ করলি কারে।’
‘কেন দরদ উতলাচ্ছে বুঝি।’
‘উফ যবু বি সিরিয়াস ম্যান কেন কিডনাপ করলি।’
‘দেখ এই যাবিয়াজ মেশরাফ কৈফিয়ৎ দেওয়ার মত মানব নয়।’
যাবিয়াজের উক্তিতে হতাশার শ্বাস ছাড়ে এরফান। হে অপর যুবকটি এরফান। সে যাবিয়াজের সঙ্গে অপহরণ করেছে নাহেম উল্লাহকে। তার সঙ্গে মারপিঠ করে হাত নোংরা করার কোনো ইচ্ছে যাবিয়াজের। ফলে নাহেম যে দুহাতে ইফদিয়ার শরীরে বাজে স্পর্শ করেছিল। সেই দুহাতে মধু লাগিয়ে দিয়েছে। রুমের দরজার বাহিরে এরফান দাঁড়িয়ে আছে। শুকনো একমুঠো শ্বাস ফেলার সঙ্গে ঢোক গিলল। হাত কাঁপছে প্রচন্ড রকমের। তবুও শক্ত ভাবে আঁকড়ে রেখেছে ঘন লাল পিঁপড়ার ছাউনী। যা কাঁচের টুকরো দিয়ে আবৃত।
যাবিয়াজ তীক্ষ্ম নয়নে নাহেমের দিকে তাকিয়ে আছে। চাহনীতে রাগ সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। গম্ভীর রাগমিশ্রিত কণ্ঠে এরফানকে উদ্দেশ্য করে আদেশানুসারে বলে,
‘লিভ দ্যা রেড অ্যান্ড।’
এরফান যথার্থভাবে দরজার নিচে নল সহযোগে লাল পিঁপড়াগুলো ছেড়ে দিল। দরজার নিচ থেকে নল ভেদ করে দলবল নিয়ে বের হলো লাল পিঁপড়া। তারা মধুর মত সুমিষ্ঠিয় খাদ্যের ঘ্রাণ পেয়ে প্রখর শক্তিশালী হয়ে উঠে। দল নিয়ে ছো ছো করে এগিয়ে গেল নাহেমের দিকে। অকস্মাৎ নাহেমের মাথার উপরে থাকা সাদা ডিম বাতি জ্বলে উঠে। বাতি খেয়াল করার পর কানে কোনো পোকার আক্রমণের শব্দ পায়। ভয়ভীতির ন্যায় সামনে যেই তাকালো। তখনই চেঁচামেচি করার প্রচেষ্টা চালায়। লাল পিঁপড়াগুলো তার হাতের বাহুতে উঠে খাওয়া শুরু করে। বাহুর অস্থিসহ খেয়ে ফেলতেছে এমন অজস্র যন্ত্রণা ভোগ করছে। বাঁধন খুলার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। কিন্তু লাভ হলো না। কারণ তার হাতের আঙুলেও খাওয়ার ভাগ বসিয়েছে পিপাসার্ত পিঁপড়াগুলি।
এরফান জানালার বাহির থেকে দৃশ্য দেখে মুখ চেপে ধরে। এ মুহূর্তে ভয়াবহ দৃশ্য দেখে বমি পাচ্ছে তার। যাবিয়াজ স্বাভাবিক ভাবে বসে ফোনে পাবজি খেলছে। হাত নেড়ে এনিমিদের শুট করছে। এরফান এর করুণ দশা দেখে যাবিয়াজ মুখ টিপে হাসছে। নম্র সরল কণ্ঠে বলে,
‘তুই গর্ভবতী হতে চলেছিস। যা চটজলদি বমি করে ফেল।’
‘শা*লা তোর মত হারামী নিজের বাপদাদার গৌষ্ঠিতেও দেখি নাই।’
‘দেখবিও কেমনে আমি তো এক পিচ পয়দা সেই কবে নিয়া নিছি। তোর গৌষ্ঠিতে আবার কেন পয়দা হতে যামু।’
‘দোস্ত যদি মইরা যায়।’
‘কংগ্রেস তাহলে জানাযার ব্যবস্থা করব।’
‘পুলিশের হাতে ধরা একবার পড়লে। একদম মৃত্যুদন্ড দিয়া দিবে।’
‘সেটা তখন দিবি যখন ভিক্টিম ক্রিমিনাল এর তথ্য বলবে। আমার ধারণামতে সেই তথ্য দেওয়ার মত অবস্থাও ছেলের থাকবে না। কোজ অফ হি ডাজেন্ট সি এ্যাজ।’
‘ওহ সে আমাদের দেখে নি কারণ আমরা ক্লোরোফর্ম দূর থেকে নাকে ছিটিয়ে দিছি। আমাদের মুখ দেখার আগেই তো ঘুমে তলিয়ে পড়ছিল।’
‘শাবাস এই হলো বুদ্ধিমানের কথা।’
এরফান পুনরায় জানালার দিকে তাকায়। নাহেমের চামড়া কবলে খাচ্ছে পিঁপড়াগুলি। এবার দমে রাখতে পারিনি এরফান। গলগলিয়ে বমি করে দিল। কিন্তু ভাগ্যবশত যাবিয়াজ পলিথিন তার মুখে চেপে ধরেছিল। না হলে আজ ‘ইন্নালিল্লাহ’ হয়ে যেত। এরফান মুখ উঠিয়ে পানি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিল। যা থুথু ফেলছে সব পলিথিনে ফেলছে। কোনো প্রকার ক্লু ছাড়ে নি রুমের বাহিরে। ত্রিশ মিনিট হয়ে যাওয়ায় যাবিয়াজ এরফানকে উৎকোচ কণ্ঠে বলে,
‘স্প্রে ফায়ার অন কর।’
এরফান কথামত অন করে দিল। পুনরায় বলে,
‘পিঁপড়ার নল শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে।’
এরফান আঁকড়ে ধরে এতে পিঁপড়াগুলো পেট ভরিয়ে বাসস্থানে ফিরে এলো। স্প্রে হওয়ার পর নাহেমের শরীরের করুণ দশা দৃশ্যমান হলো। পৈশাচিক হাসি দিল যাবিয়াজ। নাহেমের দু হাতের বাহু থেকে গোরা পর্যন্ত চামড়া খসে গেছে, অস্থিসমূহ যেন লক্ষ হচ্ছে, হাতের আঙুলগুলি হতে টপ টপ করে রক্ত ঝরচ্ছে। যাবিয়াজ ব্যাগ থেকে পরিচ্ছদ আলখেল্লা পরে নিল। হাতে গ্লাভস, পুরু মুখ কাপড় দ্বারা আবৃত করে রুমে প্রবেশ করে। নাহেমকে কাঁধে উঠিয়ে মেডিক্যাল এ নেওয়ার জন্যে গাড়িতে বসায়। তার শরীর থেকে উৎকট দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এরফানও একইভাবে নিজেকে আবৃত করে রেখেছে। মেডিক্যাল এর সম্মুখে এসে রাস্তার মাঝে ফেলল নাহেম কে। যাতে লোক দেখিয়ে সাহায্য করতে পারে। নিজেদের পরণের পোশাক গাড়িতে লুকিয়ে রাখে। এরফান অকস্মাৎ নাহেমকে দেখেছে এমন ভান করে চেঁচিয়ে বলে,
‘আরে ভাই কি হলো! আপনি রাস্তায় শুয়ে আছেন কেনো। এই সবাই কই কেউ ডক্টর ডাকো।’
যাবিয়াজ চায়ের টং এ এসে দাঁড়িয়ে যায়। মানুষদের কানাঘুসো করে বেড়ায়।
‘আহারে সবাই চলেন সহায়তা করি।’
মানুষজন জটিয়ে নাহেমকে মেডিক্যাল ভর্তি করায়। রিসেপশনের টাকা মিটিয়ে ডক্টর চিকিৎসায় মনোনিবেশ করল। এরফানের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
‘দোস্ত লোকটার পরিবারকে জানানো দরকার। কে না কে হঠাৎ রাস্তায় কেনো পড়ে থাকে বুঝে না।’
যাবিয়াজ এর অভিনয় দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে এরফানের। সে যেন পটু অভিনেত্রকে দেখছে। যার বলা, বেশভূষা, চলনে মনে হচ্ছে তার চেয়ে উদারচিত্ত মানব আর কেউ নয়। নাহেম এর ফোনের কল লিস্ট চেক করে। সেখানে প্রতিটা কনটাক্টে নতুন নতুন মেয়ের নাম। পাশে এডিট নামে লেখা রয়েছে গার্লফ্রেন্ড। এসমূহ নাম দেখে নাক ছিটকায় যাবিয়াজ। অথচ অন্য একটি নাম দেখে চটে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে নামটা ডিলেট করে দিল। কেননা তার কল লিস্টে ইফদিয়ার কনটাক্ট নাম্বার ছিল। সেই নামে ইফু ডালিং লেখা দেখে তার মাথা বিগড়ে যায়। বিরবিরিয়ে বলে,
‘অন্যের সম্পদে হক বসানোর উচিৎ শিক্ষা দিছি হারামখোর বেয়াক্কলাহ।’
পরক্ষণে নাহেম এর মায়ের নাম্বার পেয়ে কল করে করুণ দশার কথা অবগত করে। তিনি শুনে আতঙ্কময়ী কান্না জুড়ে ছুটে এলেন। নাহেম এর মা কে পেয়ে যাবিয়াজ ইফদিয়ার নামে নানান কু কথা বলে কান ভরিয়ে দিল। এরফান শুনে মুখ গোল করে হা করে তাকিয়ে থাকে।
যাবিয়াজ সব মিটিয়ে এরফানের কাছে আসে। বেচারা কি কথা হয়ছে ইশারা করে জিজ্ঞাসা করে। যাবিয়াজ নিজের শার্টের কলার টেনে এটিটিউট মার্কা লুক দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এরফান হ্যাবলার মত তার পথ অনুকরণ করে গাড়িতে বসে।
#অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১২
১৮.
সূর্যের তীর্যক রশ্নির নিচে দাঁড়িয়ে আছে ইসমাইল আর ইফদিয়ার। আজ বোনকে নিজ দায়িত্বে সযত্নে স্কুলে পৌঁছে দিতে চাই। বোনও ভাইয়ের মার্জিতপূর্ণ কথায় অস্বীকার করে নি। প্রধান রাস্তা সড়কের পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে রিক্সা খুঁজছে। কিন্তু ব্যস্ত নগরীর যানবাহনে মানুষ ভরপুর। কোনো রিকশাও খালি যাচ্ছে না। তার উপর ট্রাফিক সিগন্যাল নষ্ট থাকায় রাস্তায় গাড়ি চলাচল এর খুব বেগতিক দশা। ইফদিয়ার বোরকা পরিহিত থাকায় ঘামছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ব্যাগ থেকে পানি বের করে নিজের গলা ভিজিয়ে নিল। ভাইয়ের দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিল। ইসমাইল দৃষ্টিলব্ধে বোতল নিয়ে গডগড করে খেয়ে নিল। অর্ধপূর্ণ বোতল বোনকে রাখতে আদেশ করে। রিকশার খোঁজ নিষ্প্রতিভ হওয়ায় ইসমাইল মিহি কণ্ঠে বলে,
‘বোন তুই দাঁড়া সামনে গিয়ে সিএনজি ডেকে আনি।’
প্রত্যত্তরে মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। ইসমাইল ৪-৫ মিনিট হেঁটে খালি সিএনজির জন্যে দৃষ্টিকটু করে রইল। পরক্ষণে এক বয়স্ক লোককে পেল। তাকে নিয়ে ইফদিয়ার কাছে এলো। ভাইকে যেতে দেখে সে একটি গাড়ির কাঁচ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়ির ভেতর কেউ আছে কি নেই। তা নিয়ে মাথা ঘামায় নি। ভাবল গাড়ির ইঞ্চিন বন্ধ তার মানে কেউ নেই। চুপ করে সেও ভদ্র মেয়ের মত দাঁড়িয়ে থাকে। ইসমাইল সিএনজি এনে হাত ধরে ইফদিয়ারকে পাশ ঘেঁষে বসায়। সিএনজি মামাকে উদ্দেশ্য করে ক্যান্টনমেন্ট কলেজ এর দিকে যেতে বলে।
সিএনজি পথদূরে যেতেই গাড়ির মালিক কাঁচ সরিয়ে নিল। বাঁ হাতটা জানালার বাহিরে বের করে মুঠোবদ্ধ করে। ডান হাতে চোখে পরিহিত বাদামী রঙের সানগ্লাসটা নামিয়ে নিল। সিএনজির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিপাত রেখে কর্কশকণ্ঠে বলে,
‘অপ্সরীমনি খুব তেজ শরীরে রাইট! অন্য নাগরের সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে সিএনজিতে ঘুরা। বুঝবি সময় হতে দে আমার।’
বাঁ হাত গাড়িতে ঢুকিয়ে কাঁচ উঠিয়ে নিল। ইঞ্চিন চালু করে রাস্তার ডান দিকে নিয়ে যায়।
ইসমাইল স্কুলে ইফদিয়ারকে ছেড়ে দিল। তার যাওয়ার দিকে খুব দায়িত্বশীল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ভাইকে এক পলক দেখতে পিছে ঘুরে। ইসম ভাইকে ধারণাগত অপেক্ষা করতে দেখে হাত উচিঁয়ে ‘বাই’ দিল। ইসমাইল স্মিত পরিমাণে হাসি দিয়ে নিজেও ‘বাই’ দিল। সিএনজি মামাকে হসপিটালের ঠিকানা দিল। সেখানে পৌঁছে দরদাম ধরিয়ে দিবে বলে জানায়। শর্তমত সিএনজি মামা নিয়ে যায়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ইফদিয়ার প্রথমবার বোরকা পড়ায় অস্বস্তিবোধ করছে। কেননা সবসময় ঢিলেঢালা,মোটা ফ্রক,হিজাব আর মাস্ক পরে আসতো। এখন থেকে সে বোরকা,হিজাব,নেকাপ,হাতের কালো মোজা পরা শুরু করেছে। প্রথমবার পরেছে সকলের দৃষ্টিতে যেন সে কোথাকার জংলী রুপ ধারণ করেছে। সবগুলির মাঝে নিজেকে প্রবলবেগে শান্ত করে দৃষ্টিকোণ দিয়ে তিয়ানাকে খুঁজতে থাকে। ইতিমধ্যে একটি মেয়ে তার পাশে খালি জায়গা পাওয়ায় বসে পড়ে। মেয়েটি তার পাশের পরিপাটি বোরকা পরিহিত মেয়েকে দেখে বলে,
‘তুমি কি ইফদিয়ার!’
চমকিত দৃষ্টিতে পিটপিটিয়ে তাকায় ইফদিয়ার। নিজের নাম অপরিচিত কারো মুখে শুনে আশ্চর্য হলো। মেয়েটা তার সমবয়সী হওয়ায় আহ্লাদী কণ্ঠে বলে,
‘হ্যা কিন্তু চিনলে কেমনে!’
‘ও হো চিনব না কেনো আসলেই সে ঠিক বলছিল তোমার মেজিক্যাল আইস ইজ ভেরি কিউট!’
ভেবাচেকা দৃষ্টিতে পলক ফেলে তাকায় ইফদিয়ার। কেউ যে তাকে নিয়ে কমপ্লিমেন্ট দিবে। ভাবতেও হাসি পাচ্ছে। যেখানে তিয়ানা ইজ্জতের সুজি বানিয়ে রাখে।
মাথার মধ্যে আকস্মিক মেয়েটির চেনার ব্যাপারটা চলে আসে। সন্দেহের অক্ষি মেলে বলে,
‘বাই দ্যা ওয়ে হু আর ইউ গার্ল!’
‘আমি তিয়ানার ফুপাতো বোন রুহিয়া। প্রিভিয়াস স্টাডি ভিলেজ এন্ড প্রেজেন্ট স্টাডি টাউন।’
‘বুঝলাম তবে আমায় চিনলে যে।’
‘উফ বলিও না আমি তিয়ানার বাসায় এলেই সে তোমার গল্পেরঝুড়ি নিয়ে বসতো। দম ফাটানো হাসি পেতো আমার। তোমাদের কথাগুলি শুনে। এমনকি আজব সব কান্ড যে ঘটাও সেগুলোও তিয়ানা বলেছে।’
‘আচ্ছা কিন্তু সে কই অনেকদিন হলো দেখি না বান্ধবীকে। আমিও কয়েকদিন পর স্কুলে এসেছি।’
‘তিয়ানার চিকেনফক্স হয়েছে।’
আহত অক্ষিগোলকে পানির সঞ্চার হলো। প্রিয় মানুষের অসুস্থতা শুনলেই হৃদপিন্ডও বুঝি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবেগ আঁটকাতে না পেরে রুহিয়ার হাত আঁকড়ে ধরে বলে,
‘বোন সে কোথায় বাসায় নাকি মেডিক্যাল এ!’
‘বাসায় আছে কিন্তু চিন্তা করিও না। কারণ পরিবারের সবাই নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে যত্ন নিচ্ছে তিয়ানার।’
কথাটি শুনে খুশি যেমন হলো তেমনি মলিন চেহারায় দৃষ্টি অগোচর ক্ষত। তিয়ানার পরিবার সবর্দায় হাসিমাখায় ভরপুর থাকে। তাদের সকলের সঙ্গে ছোট থেকে পরিচিত সে। আঙ্কেল-আন্টির হৃদপিন্ড যেন সরলতায় পূর্ণ। পূর্ণাঙ্গ পরিবারের মাঝে বিরাজ করে তিয়ানার পরিবার। সকলের অগোচরে চোখের অপূর্ণ অশ্রু মুছে নিল। তাদের ইংরেজি ম্যাডাম মিসেস খাদিজা চলে আসেন। বই বের করে লেসন টুয়েলেভ এ ইম্পোট্যান্ট কুয়েশ্চনে মার্ক করার আদেশ করলেন। বই এর পাতায় নজর বুলিয়ে নিচ্ছে ইফদিয়ার। তখনি প্রিন্সিপাল রুমে আসেন। তিনি এসে সৌজন্যমূলক কুশল বিনিময় করেন মিসেস খাদিজার সঙ্গে। বাচ্চাদের দিকে দৃষ্টিগোচর করে প্রহরা গলায় বলেন,
‘আপনাদের বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সামনের সপ্তাহ থেকে। আজকের মধ্যে বেতন পরিশোধ করার অনুরোধ রইল ধন্যবাদ ভালোবাসা।’
প্রিন্সিপাল স্যার যাওয়ার পর মিসেস খাদিজা উৎসাহী গলায় বলেন,
‘তোমাদের ভেতর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস রেখে পরীক্ষা দিবে। আর যা মার্ক করে দিয়েছি সবগুলো ভালোভাবে পড়বে। দেখবে আনকমন হবে না কুয়েশ্চন পেপার। গুড লাক স্টুডেন্টস।’
‘থ্যাংকস ম্যাডাম।’
মিসেস খাদিজা চশমা ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
স্কুল ছুটির পর ভার্সিটির দিকে ছুটে গেল ইফদিয়ার। ভীষণ আকুলতা হৃদমাঝাড়ে ভীড় জমিয়েছে প্রিয় মানুষকে এক পলক দেখার। তার কণ্ঠধ্বনি শুনার। আজ যে করেই হোক যাবিয়াজের সঙ্গে দেখা করেই ছাড়বে বলে পণ করে নিল রমণী। ছেলেটা পাইছি কি!
তার অনুভূতির সঙ্গে খেলা করে বেড়াবে। আর সে লুচির মত করে ঘুরে ঘুরে নাচবে। একদম না নিজের সেল্ফ হুড বলতেও একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে তো নাকি।
কিন্তু হায় কপাল পুড়া! ভার্সিটির প্রবেশদ্বার বন্ধ। এমনকি পুরু ভার্সিটি নির্জনবাসে পূর্ণ।
কোনো ছাত্র-ছাত্রীর আনাগোনা না দেখে চৌপাশে দৃষ্টিকটু নিয়ে তাকায়। পরক্ষণে দারোয়ান চাচাকে পেল। উনার কাছে গিয়ে অনুরোধী গলায় বলে,
‘আঙ্কেল আজ ভার্সিটি অফ !’
‘হ্যা মামুনি। ভার্সিটির সকল ছাত্র-ছাত্রীগণ এনজিও ক্যানভাসে গেছে। সেখানে সাহায্যের হাত বাড়াতে তরুণদের দরকার।’
‘ওহ কবে আসবে!’
‘হয়ত একসপ্তাহ লাগবে।’
ইফদিয়ার মলিন মুখে মাথা নেড়ে নিম্র গলায় ‘ধন্যবাদ’ বলে পথচলা ধরে। বুকের মধ্যে ব্যাগ শক্ত করে জড়িয়ে ভাবে।
‘যায়াজ এই মুহূর্ত হতে আপনাকে মিস করব না। কেনো জানেন! কারণ আপনি অচল পথিকদের সহায়তায় চিকিৎসাধীনের আয়ত্তে আছেন। আপনাকে মিস করলেও যেন একরাশ লজ্জা অন্তরালে ছড়িয়ে পড়বে। আপনি না আসা অব্দি পুঙ্খানুপুঙ্খ পড়াশুনায় মনোনিবেশ করব।’
ইফদিয়ার মুচকি হেসে নিজের কপালে চাপ্পর দিয়ে বাসার জন্যে রিকশা ভাড়া করে।
১৯.
এপ্রোন পরিহিত অবস্থায় গলায় স্টেথোস্কোপ যন্ত্রটি ঝুলিয়ে রোগীর হাতের পার্লস চেক করছে যাবিয়াজ। পাশেই এরফান, ফেরদৌস অন্যান্য রোগীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে।
অকস্মাৎ রোগী কাশতে আরম্ভ করে। তার গলা দিয়ে রক্তপূর্ণ কফ বের হচ্ছে। যা দেখে আর্তকে উঠলেও নিজেকে প্রখরভাবে শক্ত রাখে যাবিয়াজ। রোগীর মুখে বাটি ধরে রেখে যথাসম্ভব কফ ফেলিয়ে নিল। পিঠে আলতো করে চাপ্পর মেরে রোগীকে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করে যাবিয়াজ। এনজিও ক্যানভাসের পাশে ভিন্ন একটি কক্ষ রয়েছে। যেটিতে অবস্থান করছে বর্তমানে ভার্সিটির শিক্ষকগণ। যারা মেডিক্যাল ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যে এনজিও তে এনেছেন। যোগ্য নিবার্চন কমিটি নিয়ে আলোচনায় মতঁ।
যাবিয়াজ রোগীর বাহুতে ঘুমের ইঞ্জেকশন পুশ করে তুলো দিয়ে স্থানটি মুছে দিল। রোগী চোখ বুজে কষ্ট নিবারণ করার প্রয়াস করে। যুবক কফপূর্ণ রক্তের বাটি নিয়ে ল্যাবে প্রবেশ করে।সেখানে পরীক্ষণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞগণ বসে নানান পরীক্ষা-নিরাক্ষা করছেন। রক্ত কফের বাটিটি তাদের দিয়ে রোগ শনাক্ত করার জন্যে বলে।
এরফান সবেমাত্র দম ফেলে ধপাস করে বসল। ফেরদৌস এপ্রোনের পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুচ্ছে। এরফান যাবিয়াজকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেরদৌসকে জিজ্ঞাসা করে।
‘যাবিয়াজ কোথায় গেল!’
‘তার রোগীর শরীরে কোন রোগ আক্রমণ করেছে। তা শনাক্ত করতে গেছে ল্যাবে নিশ্চয়।’
‘ইয়াপ রাইট। সম্ভবত নিউমোনিয়া হয়েছে পেশেন্ট এর।’
‘কেমনে বুঝলি নিউমোনিয়া। তার গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে। এই লক্ষণ মূলত ফুসফুসে ক্যান্সার না হয় টিউমারের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ হয়।’
‘উহু রোগীর স্বাস্থ্য ভালো আছে কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা জাতীয় পানীয় বিপুল পরিমাণে পান করার কারণে রোগীর গলা ফ্যাস ফ্যাসে পর্যায়ে পৌঁছায়। যার ফলে কাশির সঙ্গে রক্তের কফ বের হয়েছে। অলওয়েজ যে ক্যান্সার টিউমারের ক্ষেত্রে গলা দিয়ে রক্ত বের হয়। তা শুদ্ধ নয়। যথার্থভাবে বলছি দেখিস রিপোর্টে নিউমোনিয়ার কথা আসবে।’
এরফান-ফেরদৌস একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করে। তারা কোনোভাবেও চেলেঞ্জ লাগতে চায় না সম্মুখীন যুবকের সঙ্গে। কারণ যাবিয়াজ জিতবে সেটা সিউর। এরফান হাত উঁচিয়ে বলে,
‘ভাই আমি নাকে দুধ না খাইলেও মুখ দিয়া খাই। তাই গ্যারান্টি ফ্যারান্টি বলে আমাদের তেরোটা বাজানোর ব্যবস্থা না করলেই খুশি হবো।’
যাবিয়াজ মুখ টিপে হেসে ফোনটা বের করে। এক নজর ফোনের ওয়ালপেপারে বুলিয়ে পুনরায় রেখে দিল পকেটে। দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে অস্পষ্ট সুরে মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে।
‘একসপ্তাহ প্রত্যাশার প্রহরে নিমজ্জিত।’
ফেরদৌস না শুনতে পেলেও এরফান সুস্পষ্টভাবে শুনতে পেল। হাতের কনুই দিয়ে আলতো করে ধাক্কা মারে। ভাবপূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে এরফানের দিকে পরখ করে যাবিয়াজ। সে হ্যাবলামার্কা হাসি দিয়ে বলে,
‘লাভকুমারী বুঝি কাঁদছে।’
‘তোর বউ অসুস্থ জানিস।’
শুনে ফট করে কাশতে আরম্ভ করে এরফান। নিজের পাশে থাকা পানি গডগডিয়ে খেয়ে বলে,
‘কেকে বউ কিসের বউ!’
‘কেন রে ভীমরতি মারোস। রাতবিরাতে ফষ্টিনষ্টি করে এখন কস কার বউ কিয়ের বউ।’
এই মুহুর্ত মনে হচ্ছে এরফানের চারদিকে পৃথিবী গোল গোল করে ঘুরছে। সে ফষ্টির সঙ্গে নষ্টিও করে ফেলছে। এমন সাংঘাতিক ঘটনা সম্পর্কে সেই তো অবগত নয়।
আমতা আমতা করে যাবিয়াজের কানের কাছে এসে বলে,
‘দোস্ত খেয়েই কি আমার দাম ধরছিস। এত রমণী ললনার সামনে ইজ্জতের তেরোটা বানাস ক্যা রে!’
‘তিয়ানা কে কল করে জানাচ্ছি।’
বাকরুদ্ধ দশার মত তাকায় এরফান। কান থেকে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। মাথার মধ্যে ‘পাগল হয়ে যাব আমি, পাগল হয়ে যাব’ গানটা বেজে উঠে। অবাকের সপ্তম পর্যায়ে গিয়ে এরফান জ্ঞান হারায়। কিছু পড়ার বিকট শব্দ শুনায় যাবিয়াজ হাহা করে হেসে উঠে।
চলবে….