অস্তিত্বে চাই তোমার ছোঁয়া পর্ব -০৭+৮

#অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৭_০৮

১২.
ইসমাইল মিসেস জাবিয়াকে বিছানার মধ্যে স্যালাইন পুশ করে বেড রেস্টে রেখেছে। মায়ের কপালে হাত রেখে আলতো করে চুমু খেলো। রুম থেকে বেরিয়ে এসে ইফদিয়ার চিন্তিত রুপ দেখে। মেয়েটা বড্ড শুকিয়ে গেছে। খাবার খাই কিনাও সন্দেহ। পালিত বাবা যে পরিমাণে অসভ্য, নষ্টের কিট! তার ব্যাপারে অবহিত ইসমাইল।
রমণী জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে যতই না মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে রাখুক। ভেতরে সেও যন্ত্রণায় প্রণয়ের লোভে দগ্ধ হয়। কি হবে যদি একটু ভালোবাসা পাই ! খুব কি বেশি চাওয়া হয়ে যাবে সেই ব্যকুলতা।
আচ্ছা পৃথিবীতে সব মানুষ মায়ার পিছনে ছুটে কেনো। মায়া পুড়ালে কি ছুঁড়ে ফেলতে হয়। এটি কি কোনো ইতিহাস বা বই এর পাতায় লেখা আছে। মনে তো হয় না। কারণ ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াটা হলো ভীষণ আন্দনের।
এই প্রণয়ের ঢেউ শুরু হয়ই দুটি হৃদয়ের সমন্বয়ে। যেখানে একটি ছাড়া অন্যটি অচল।

কিন্তু ঐযে বাস্তবতা।
এই বাস্তবটা এতো কঠিন যে কখনও কখনও বুকের ভেতর গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু ভালোবাসাও অসহায় হয়ে পড়ে।
নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে। যখন কাঙ্কালীনি হয়ে প্রণয়িনী হতে ইচ্ছে করে যাবিয়াজ নামক মানুষটির। সে কি কখনো বুঝবে না হৃদয়ের দগ্ধ !

হঠাৎ কাঁধে কারো শক্ত স্পর্শে ধ্যান ফিরে ইফদিয়ার। একরাশ ভাবনা দূরে ঠেলে দিয়ে মাকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করল ইসমাইলকে।

‘ভাই আম্মা কেমন আছে! কি হয়েছে উনার!’

‘বলব তার আগে আমাকে বল কয়েকদিনে কি ঘটে ছিল!’

মাথা নিচু করে ফেলে ইফদিয়ার। মনের আর মস্তিষ্কের লড়াই শুরু হলো। ব্যকুল হয়ে বলতে মন চাচ্ছে। তবুও হচ্ছে না বলা। কেমনে বলবে ভাই তার ব্যস্ত মানুষ। রাত-দিন পেরিয়ে যেতে না যেতে চেম্বার থেকে ডাক পড়ে। সদর চিন্তা ফেলে তখন সেবাপ্রদানে ছুটে যেতে হয়। ইফদিয়ারকে নিরব দেখে ধমক দিল ইসমাইল।
ইফদিয়ার ছলছল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। ইসমাইল প্রশস্ত অবস্থায় টু শব্দ বের করল না। বোনকে শান্ত হবার জন্যে নিরবে আগলে নিল। ভাইয়ের পরশ স্নেহে কষ্টের সহে ঘটনা খুলে বলে। ইসমাইল দৃঢ় এক ঘৃণ্য মনভাবে শ্বাস ছেড়ে আলতো করে গালে হাত রাখে ইফদিয়ার। অনুশোচনাময় কণ্ঠে বলে,

‘তোদের দোহাই খেয়ে পড়াশুনা করে এতোটা ব্যকুল হয়েছিলাম। যে ভাবতেও পারিনি আম্মার সঙ্গে জঘন্য ঘটনা ঘটে যাবে। কিন্তু বোন আমার তোকে আমি আগলে রাখব। এবার কোনো হেলফের করব না। আম্মা যতদিন সুস্থ না হয়ছে। ততদিন তুই আমার সঙ্গে থাকবি।’

ইফদিয়ার সটান হয়ে জিজ্ঞাসা করে।

‘আ আম্মার কি হয়েছে। তুমি ব্যথাতুর কণ্ঠে কেনো কথা বলছো!’

‘আম্মা প্যারালাইজড হয়ে পড়ছেন। কিন্তু এটি মারাত্মক না। একে স্লিপ প্যারালাইসিস বলে।
একজন ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য কথা বলা বা নাড়াচাড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন।
গভীর ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা।
ঘুমের ওই পর্যায়টিকে বলা হয় র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট-রেম।
রেম হল ঘুমের এমন একটি পর্যায় যখন মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে এবং এই পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। কিন্তু সে সময় শরীরের আর কোন পেশী কোন কাজ করেনা। এ কারণে এসময় মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীরকে অসাড় মনে হয়।
যেমন আম্মার হয়েছে। আব্বার জঘন্যতম কাজ তিনি সহ্য করতে পারেন নি। একমুর্হুতের জন্যে ভেবেছিলেন এই বুঝি সব মিথ্যে। তবে সব সত্য বুঝতে পেরে ঘুমের মধ্যেই প্যারালাইজড হয়ে পড়লেন।’

ইফদিয়ার মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল। তার মা যে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে শয্যাশায়ী হবেন ধারণা করার মতন নয়। ইসমাইল বোনকে বসিয়ে মিসেস হালিমাকে পানি আনতে বলে। তিনি মালকিনের কথা শুনে আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছিলেন। তবুও নিজেকে গুটিয়ে রেখে ছিলেন। ছোট সাহেব এর কথায় পানি নিয়ে হাজির হলো। ইসমাইল পানি এগিয়ে দিল বোনের দিকে। ইফদিয়ার ঢগঢগ করে পানি খেয়ে নিল।
তার মাথায় হাত বুলিয়ে আশ্বস্ত করে বলে,

‘বোন প্লিজ সামলা নিজেকে। আমি আছি এখন থেকে। সব ঠিক করে দেবো। দেখিস আম্মা ভালো হয়ে যাবে।’

ইফদিয়ার উঠে দৌড়ে রুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে ঢুকে ঝরণার কল ছেড়ে দিল। অঝড় ধারায় চোখের নোনাজল ফেলছে। এই কষ্টের স্রোত যেন শেষ হবার নয়। ইসমাইল নিজের রুমে গেল। বেশ ধকল গিয়েছে।
তবুও শান্তি লাগছে অনেক বছর পর নিজের পুরনো রুমে এসেছে। বাড়িতে তাকে এনেছিল মিসেস জাবিয়া। আহসান সাহেব ইফদিয়ার হওয়ার পর থেকে খুব বাজে ব্যবহার করতেন স্ত্রীর সঙ্গে। মুখ বুজে সহ্য করলেও মেয়ের দিকে তাকিয়ে সুখের রাত কাটাতেন। মেয়ে সন্তান পেয়েও তিনি ছেলে সন্তানের জন্যে ছটপট কর ছিলেন। তখন এতিমখানায় গিয়ে ৭ বছরের এক ছেলেকে দত্তক নিলেন। ছেলেটা খুব শান্তশিষ্ঠ, ভদ্র স্বভাবের ছিল। নতুন মায়ের ভালোবাসা পেয়ে খুব খুশি ছিল। কিন্তু বাবার ব্যবহারে ভয় পেয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করে।

‘আম্মা আব্বা এত মারে কেনো তোমায়!’

‘একদিন যেন তুই শোধ নিবি বলে।’

অবুঝ ছেলে মায়ের কথার অর্থ কতটুকু বুঝল জানতেন না তিনি। প্রতিদিন মা আর ছোট বোন পেয়ে হাসিখুশি ছিল ইসমাইল। তার নামটাও রেখে ছিলেন মিসেস জাবিয়া। ভাই-বোন এর নাম একই অক্ষরে মিল রেখে ইফদিয়ার-ইসমাইল। কিন্তু খুশিটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। দুই বছর পর আহসান সাহেব খুব কড়াকড়ি করতে আরম্ভ করলেন। বিশেষ করে টাকা-পয়সার ব্যাপারে মিসেস জাবিয়ার সঙ্গে ঝগড়া করতেন।
কয়েকদিন পর তিনি গর্জন সহকারে বলে ছিলেন।

‘বাসায় উটকো ঝামেলা চান না।’

মিসেস জাবিয়া চুপ করে ছিলেন। বিধায় এর শাস্তি স্বরুপ গালে চড় মেরে কর্কশ কণ্ঠে বলেন,

‘হয় তোর মেয়েরে রাখ না হয় ছেলেরে রাখ। মেয়েরে না চাইলে দে আমি বিক্রি করে দিমু।’

আহসান সাহেবের সে দিনের কথায় মিসেস জাবিয়া অতিশয় ভয় পেয়ে যান। ইসমাইল আড়ালে পালিত বাবার মুখের কথাটা শুনে থমকে যায়। পৃথিবীর মধ্যে এমন নিষ্ঠুরতম মানুষ আছে জানা ছিল না তার। তাকে না হয় বিক্রি করে দিবে বলল। বুঝা যায় সে রক্তের সন্তান নয়। কিন্তু নিজের রক্তের সন্তানকে কেউ বিক্রি করে দিতে চাইবে। তা বিশ্বাস করা দুষ্কর। ইফদিয়ার রুমে চলে আসে। ছোট মেয়েটা ভাই কে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে কোলে উঠার জন্যে প্রবণতা দেখায়। ইসমাইল ম্লান হেসে বোনকে কোলে উঠিয়ে নিল। তার দুগালে স্নেহের চুম্বন দিয়ে বলে,

‘ইফুপাখি তোকে খুব মিস করব রে। তোর ভাইটারে ভুলে যাইস না কখনো।’

ইফদিয়ার তখন ৬ বছর বয়সী মেয়ে। উচ্চতায় আর ওজনে কম হওয়ায় ইসমাইল তাকে কোলে নিতো। ভাইয়ের কথার প্রসঙ্গে সে মাথা নেড়ে সায় দিল। হয়ত বুঝেছিল না হয় আন্দাজ করেছিল। মিসেস জাবিয়া ঝগড়া মিটিয়ে রুমে এলেন। ইসমাইল জানে তার জন্যে কি হবে ব্যাপারটা। যত হোক সে নিজ সন্তান নয়। সেও চাই না বোনটাকে হারাতে। তাই মেনে নিল। তবে সে ভাবতে পারিনি তার মায়ের হৃদয় এতটা উদারচিত্ত। তাকে বিদেশে এক খালার বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে ছিল। সেখানে থেকে ভালোভেবে পড়াশুনা চালাতে সক্ষম হলো। যার ফলে সফল ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত হয়ে দেশের মাঠিতে পা রাখে। বছরখানিক চোখের পলকে কেমনে কেটে গেল ভাবা মুশকিল। বোনও তার কিশোরী হয়ে গেল। সেও সফল যুবক বটে। বোনটাকে এখন আগলে রেখে আম্মাকে সুস্থ করাই হলো তার প্রধান লক্ষ্য।

ভাবনার শিরঃপীড়া কাটিয়ে ইসমাইল গোসল সেরে নিল। বিছানায় গা হেলিয়ে ঘুমের জন্যে প্রস্তুতি নিল।

১৩.

রবিউল সাহেব ভীষণ চিন্তাধারা বয়ে যাচ্ছেন। ইদানিং কল না আসায় দুশ্চিন্তায় ভোগছেন। কলটা না পেলে যেন হৃদয়ের দহনক্রিয়া আরম্ভ হয়। কলের মাধ্যমে অপরপাশের কণ্ঠের সংস্পর্শে সুমুধর স্নেহমমতার অনুভূতি পান। ফোনটা হাতে নিয়ে বার বার চাপাচাপি করছেন। দেখতেও পারছেন না। তবুও অনুভব করে কললিস্ট খুঁজার চেষ্টা করছেন।
রাতের ১১টা বেজেছে। বিশেষত রবিউল সাহেব গ্রাম্য পরিবেশের নিয়মে অভ্যস্ত। গভীর রাত জাগেন না। তবে মাঝমধ্যে ইচ্ছে হলে জাগেন। খাবারের পর্ব শেষ সেই কবে। যাবিয়াজ নিজ রুমে আছে। তাই বিষয়টা উপেক্ষা করে শুয়ে পড়েন। হয়ত ব্যস্ততার খাতায় নাম লিখিয়েছে অপর ব্যক্তি।

যাবিয়াজের ঘুম উবে গেছে সেই কখন। যখন থেকে সে রক্তজবার মত টকটকে লাল ওষ্ঠের সম্মুখীন হলো। সম্মোহীত দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করে আছে রমণীর পানে। পরমানন্দে বিশ্রাম নিচ্ছে রমণী নিজ খাটে। অথচ সে জানে কেউ গভীরতম ঘোরদৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে। চোখ-মুখে একরাশ মুগ্ধতা এসে ভীড় করেছে রমণীর উপর। কখনো তাকে গভীরভাবে দেখা হয়নি যাবিয়াজের। আজ পলক ফেলতে পারছে না। ঘুমন্তপরী জাগ্রত অবস্থায় কি উড়নচুন্ডী রুপে থাকে। তথাপি নিষ্পাপ শিশুর ন্যায় নিদ্রামগ্ন রয়েছে ইফদিয়ার। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
যাবিয়াজ হালকা ঝুঁকে তার মুখের উপর। রমণীর কাছে আসায় ঘন নিঃশ্বাস শরীরের শিরা উপশিরায় বয়তে শুরু করে। আনমনে কপালে পরশমাখা চুম্বন দিয়ে বলে,

‘কবুল বলে সাক্ষী করে দেবো রমণী যে, তোমার সবাধিকারে আমি রইব; আমার সবাধিকারে তুমি রইবে। সামান্য ক্ষত পাওয়ার দিনটুকু দিবো না।’

ইফদিয়ার ঘন নিঃশ্বাস আর চুম্বনের আকর্ষণে কেঁপে উঠে। এতে বিন্দুমাত্র ভয় পেল না যাবিয়াজ। চুপটি করে দৃষ্টিনন্দে ব্যস্ত। কেঁপে উঠে পরক্ষণে ঘুমিয়ে যায়। হালকা হেসে উঠে যুবক। রমণীর ব্যথিত হাতে মলম দিয়ে ওষ্ঠের ছোঁয়া দিল। বাঁ হাতের উপর একগুচ্ছ রক্তজবার সঙ্গে ছোট চিরকুট গেঁথে দাঁড়িয়ে যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে জানালা টপকে চলে যায়। কেননা টিনের বাসা হওয়ায় জানালা পেড়িয়ে যাওয়াটা খুব সহজ। বাইকে বসে হেলমেট মাথায় দিল। সোজা বাইক ঘুরিয়ে এক নিস্তরণ জায়গায় গেল।

_______

স্কুলে এসে ইফদিয়ার অবাক। মশিউর স্যার হাস্যমুখী দৃষ্টিতে তাকে ইশারায় ডাকে। সে ভদ্রতার কাতিরে গেল। তিনি গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।

‘হাতের ব্যথা কমেছে মা!’

চট করে মাথা তুলে দৃষ্টিকোণ ফেলে। মশিউর স্যারের আহত কণ্ঠ শুনে হা হয়ে গেল। এতো কঠোর স্যারের হৃদয় গলছে কেমনে বোঝতে পারছে না সে। মশিউর দুঃখী কণ্ঠে বলে,

‘মেয়ের মত তুমিও আমার মেয়ে। গতকাল আমার মেয়েও এক স্যারের কাছে স্কেলের বারি খেয়েছে। তার হাতটা দেখে যেমন কষ্ট লেগেছে। তার চেয়ে বেশি আহত আর দুঃখ পেয়েছি তোমার হাতে একইভাবে বারি দিয়ে। মেয়ের ফুপিয়ে কান্নার আর্তনাদে তোমার কান্নার মর্ম উপলদ্ধি করেছি। পারলে ক্ষমা করো মা।’

‘না না স্যার কি বলছেন এসব। ওমন কথা বলে লজ্জিত করবেন না। আপনি গুরুজন ভুল হলে শাসন করতেই পারেন। আল্লাহ হাফেজ।’

‘আল্লাহ হাফেজ।’

তিয়ানা পাশ থেকে শুনে বেক্কলের মত তাকিয়ে আছে। ইফদিয়ারকে হাতের কনুই দিয়ে মেরে বলে,

‘ব্যাপার কি স্যার নরম হলো কেমনে!’

ইফদিয়ার ঠোঁট বাঁকিয়ে বুঝায় ‘কে জানে’। দুজন ক্লাসে চলে গেল। একজন যে দূরান্তরে দাঁড়িয়ে ঘোরলাগানো দৃষ্টিগোচরে প্রশান্তির শ্বাস ছাড়ল। তা কারো বোধ্যগম হলো না।
তারা দুই পিরিয়ড ক্লাস করে অবসর পিরিয়ড পেল। ফলে সকল ছাত্র-ছাত্রী আড্ডা দিচ্ছে। অবসরে হালকা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেল ইফদিয়ার। পিছনে কারো আভাস পেয়ে থেমে যায়। হুট করে পিছে ফিরে জট করে ধাক্কা খেল কারো বলিষ্ঠ দেহের সঙ্গে। চোখ তুলে পিটপিট করে দেখে বলে,

‘তুমি আল্লাহ স্বপ্ন দেখছি না তো। আজ মনে হয় তোমার চেহারা দেখে ঘুম থেকে উঠছিলাম। সাথ সাথ দর্শন দিয়া দিলা উম্মাহ।’

ইফদিয়ার কথা শুনে যাবিয়াজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পাশ কেটে এগিয়ে যায়। রমণী মুখ ফুলিয়ে পা ফেলে আগাতে নিল ওমনে ধপাস করে পড়ে যায়।
সঙ্গে দিল গর্জন সমেত চিৎকার।

‘আল্লাহ কোমর গেল রে। এখনো যায়াজ সোনাকে পটাইতে পারলাম না। অথচ তুমি এখনোই পুঙ্গটুঙ্গ বানিয়ে দিলা। এবার আমার হবু বাচ্চাগণের কি হবে! জামাইটা তো আর দেখতেও আসব না। শ্বাশুড়ি মা যদি কই হাইঁটা দেখাও। তখন কেমনে হাঁটবো ভ্যা ভ্যা।’

যাবিয়াজ বিরক্তির শ্বাস ফেলে চোখ ঘুরিয়ে নিল। সে এসেছিল পানি ফেলার শোধের হিসাব নিতে। তার ধারণা ছিল যখন ইফদিয়ার বুঝতে পারবে তার পিছে কেউ আছে। তখন দেখে খুব এক্সসাইমেন্ট হয়ে পড়বে। যা সামলাতে না পেরে সাবানের পানিতে পা পিছলে পড়ে যাবে। ঠিক ধারণক্ষমতার ন্যায় কাজ হওয়ায় পেট ফাটিয়ে হাসতে মন চাচ্ছে যাবিয়াজের। অবশ্য টাইলসের উপর সাবানের পানি সে ফেলে নি। কোনো ক্লিন সার্ভার ভুলবশত ফেলে গেছে।
যার ফলে তার শোধ নেওয়া হয়ে গেল। এ মুর্হুত গম্ভীর ভাব করে আছে। কারণ রমণী যদি হাসি আচ করতে পারে। তাহলে ভয়ংকর কোনো পদ্ধতি আমলে নিবে। ইফদিয়ার ছলছল দৃষ্টি নিয়ে যাবিয়াজকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘কেউ যদি আমায় কোলে করে ক্লাসে পৌঁছে দিতো। কতই না উপকার হতো।’

যাবিয়াজ বুঝেও অবুঝ হয়ে পিঠ দেখিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার পিছনের রমণী যে আহত হয়েছে তা বেশ ধারণা করতে পেরেছে। ভাবল এবার উপকার করবে। যেই পিছে ফিরতে গেল তৎক্ষণাৎ ইফদিয়ার বলে,

‘আরে আপনি কি করছেন স্যার!’

নাহেম স্যারকে স্কুলকে দেখে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেল ইফদিয়ার। ঘৃণ্যে মুখটা সরিয়ে নিল। স্যারের কোল থেকে নামার জন্যে ছুটাছুটি করতে লাগে। যাবিয়াজ হাত মুঠো করে ফেলে। দৃষ্টিপাত টাইলসের উপর রাখে। নাহেম স্যার বিশ্রী দৃষ্টি নিয়ে বলেন,

‘ওহো তুমি আমার ছাত্রী। এটুকু সহায়তা করতেই পারি।’

ইফদিয়ার কলিজা পানি শুকিয়ে কাঠ। স্যারের মুখের উম্মাদের চেতনা দেখতে পাচ্ছে। ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হবে ভেবেই যেন মরমরা দশা হয়ে পড়ে তার। নাহেম যেতে নিলে কারো ‘ওয়েট স্যার’ কর্কশকণ্ঠ শুনে থেমে যায়। চোখ ফিরিয়ে দেখে একজন যুবক তাকে ডাকছে। নাহেম ভদ্রতার ভান করে বলে,

‘জ্বী।’

‘ইফদিয়ারকে নামিয়ে দিন।’

‘কেনো আমার পরিচিত এ। সো আই উইল হেন্ডেল।’

তর্জনী আঙুল দিয়ে কপাল চুলকে চোখযুগলে অগ্নিশর্মা স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলল। যা ইফদিয়া দেখতে না পারলেও নাহেম স্পষ্ট দেখতে পেয়ে নামিয়ে দিল। ইফদিয়ার ব্যথা অনুভব করায় পড়ে যেতে লাগে। কিন্তু যাবিয়াজ পূর্বেই কোলে উঠিয়ে নিল। শান্ত ভঙ্গিমায় নাহেম এর চোখের সামনে নিজের গুপ্তভার নিয়ে গেল। নাহেম অপমানিত বোধ করে চলে যায়।
ইফদিয়ার আশ্চর্যান্বিত হয়ে লাজুক হাসচ্ছে। যা চোখ এড়ালো না যাবিয়াজের।
#অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৯

১৪.
অস্বস্তিকর দশায় পড়ে গেল ইফদিয়ার। সম্মুখে রবিউল সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। কানে শুনতে পেলেন কোনো মেয়ের কাঁচের চুড়ির আওয়াজ। বুঝতে সক্ষম হলেন কোনো মেয়ে নিশ্চিত দাঁড়িয়ে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। দরজা আলগা খুলে অনুরক্ত কণ্ঠে বলেন,

‘কে তুমি মামুনি!’

দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়া ইফদিয়ার আমতা আমতা করে বলে,

‘আ আঙ্কেল আ আমি যায়াজ ভাইয়ের কাছে প্রাইভেট পড়তে এসেছি।’

নিজের কথায় বোকা বনে গেল। শেষমেষ মিথ্যে বলে দিল। কিই বা করবে এ সুযোগটা লুফে নেওয়ার জন্যে বাসার ভেতর প্রবেশ করতে পারবে। রবিউল সাহেব আশ্চর্য হয়ে বললেন,

‘কিন্তু যায়াজ নামের কেউ নেই আমার বাসায়।’

অক্ষিজোড়া আপনাপানি ডিম্বাকার হয়ে গেল ইফদিয়ার। সে ‘যায়াজ’ নামটা যাবিয়াজ কে ভালোবেসে ডাকে। সেখানে পুরুপুরি যাবিয়াজ এর বাবার সামনে কিনা বলে ফেলল। ভেবেই ভিজা গলায় ঢোক গিলল। মুচকি হাসার ভান করে বলে,

‘আঙ্কেল স্যারের নাম এভারেস্টের মত বড়। ওতো বড় ডাকতে পারি না। অতঃপর নাম ছোট করে ফেললাম হেহে।’

ব্যবলাকান্তের মত হেসে ফেলায় নিজে লজ্জা পেল ইফদিয়ার। রবিউল সাহেব মেয়েটিকে বিনা দেখে শুধু অনুভবে বুঝতে পারলেন। যে মেয়েটি ভীষণ চঞ্চল,সাবলিল ও প্রাণবন্ত। কথার মধ্যে অনন্য মাধুয্যতা পেয়েছেন। তার চেয়ে বড় কথা মেয়েটির কণ্ঠধ্বনি আর হাসির শব্দ যেন গভীর সম্পর্কের কারো সঙ্গে মিলে। ভাবতেও যেন রবিউল সাহেবের হৃদয়ের দলা নেড়ে উঠে। পরম আবেশে ইফদিয়ার মাথায় নিজের হাত বুলিয়ে দিল। আকস্মিক হাত বুলানো দেখে স্তদ্ধ হয়ে পড়ে সে। কখনো বাবার ভালোবাসা পায় নি। এমনকি ‘বাবা’ শব্দটির সঙ্গে সে পরিচয় হয়নি। শুধু বাবা আছে বলে সেই বাবার নামের শব্দটি বহন করে যাচ্ছে। রবিউল সাহেব কি করছেন বুঝতে পেরে হাত সরিয়ে নিলেন। ইতস্ততঃ হয়ে চোখের কালো চশমা সরিয়ে চোখ চুলকালেন। হয়ত ময়লা পড়েছে ভেবে ইফদিয়ার স্বাভাবিক দাঁড়িয়ে রইল। বাসার চৌকাঠ হতে ভেতরের দিকে দৃষ্টিকোণ রাখছে। অক্ষিদ্বয় যে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য পাওয়ার লোভে প্রখর হয়ে পড়েছে। অথচ রবিউল সাহেব নিজের চোখে আসা অনাকাঙ্ক্ষিত অশ্রু কালো ফ্রেমের চশমার গোপন হতে মুছে নিলেন। ইফদিয়ার কে দুঃখী কণ্ঠে বলেন,

‘মামুনি যাবিয়াজ বাবা বাসায় নেই। সেই যে বেরিয়ে হয়েছে দেড় ঘণ্টা হবে।’

কথাটি শুনে রমণীর মুখটা মলিন হয়ে গেল। নিম্র কণ্ঠে ‘আচ্ছা’ বলে বিদায় নিচ্ছিল। সেই মুহূর্তে উচ্চ ধ্বনি তার কানে ভেসে আসে। পিছে ঘুরে দেখে রবিউল সাহেব গলা চেপে ধরে জোরে জোরে কাশি দিচ্ছেন। উনাকে বেশ দূর্বল, আতঙ্ক আর অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে। যা লক্ষ করে ভীষণ ভয় পেল ইফদিয়ার। চট জলদি পা ফেলে বাসায় প্রবেশ করে রবিউলকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিল। কিন্তু রবিউল সাহেবের গলার কাশি থামছে না। অকারণে কেশে যাচ্ছেন। ইফদিয়ার মাথায় বুদ্ধি এলো। সে ডাইনিং টেবিল আছে কিনা খুঁজছে। পরক্ষণে পেয়েও যায়। সেখানে গিয়ে দেখে টেবিলে ভাতের প্লেট এটোঁ রাখা। তার মানে এই খাবারটা খাচ্ছিলেন তিনি। অন্য প্লেটে হাত ধুয়ে একটি বাটিতে একমুঠো ভাত নিল।
ভাত কে হাতের মুঠে চেপে চেপে টেনিস বলের মতো বানিয়ে বাটি নিয়ে রবিউল সাহেবের কাছে এলো। তিনি এখনো গলায় হাত রেখে কাশি দিচ্ছেন। ইফদিয়ার ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে বলে,

‘আঙ্কেল এই ধরেন টেনিস ভাত। মুখে পুরে নেন। কিন্তু চাবাবেন না সোজাসুজি গিলে নেন। দেখবেন কাঁটা নেমে যাবে।’

রবিউল সাহেব আগপিছ না ভেবে হাতে ভাতের মুঠো পেয়ে গিলে ফেললেন। এভাবে তিনবার গিলার পর সিদ্ধি করতে পেরে স্নেহময়ী গলায় বলেন,

‘ধন্যবাদ মামুনি। আজ একটুর জন্যে মরণ হতে চলেছিল।’

‘এমন বলবেন না আঙ্কেল। আপনি আমার বাবার বয়সী। কেমনে আপনার মরণ হতে দেখতাম!’

‘কিন্তু মামুনি তুমি বুঝলে কি করে আমার গলায় মাছ আঁটকে গেছে।’

‘ওহ আঙ্কেল ডাইনিং টেবিলে আপনার এঁটো খাবার রাখা দেখলাম। সেখানে ইলিশ মাছের ভর্তা আর ইলিশ মাছের ভাজি রাখা দেখে বুঝতে পারলাম। গলায় বোধ হয় কাঁটা আঁটকে গেছে।’

‘বাহ! চমৎকার পর্যবেক্ষক তুমি।’

‘হেহে এজন্য ডিটেক্টিভের মত আপনার ছেলেকে পাহাড়া দেই হুম!’

‘এ্যাঁ কি বললে!’

থতমত দৃষ্টি রাখে ইফদিয়ার। দাঁত দিয়ে জিভ কেটে অপ্রস্তুত ভঙ্গিমায় বলে,

‘আহ আপনার ছেলে বিবিধ বুদ্ধির অধিকারী।’

‘কি বলছো মামুনি! তোমার মতে তাকে বুদ্ধিবান লাগে। আমার তো যাবিয়াজকে এটম বোমক গাধা লাগে।’

ইফদিয়ার সংকোচিত দৃষ্টিতে অবাককর গলায় বলে,

‘কেনো আঙ্কেল আপনার ছেলের প্রতি উদাসীনতা কাজ করে !’

‘না রে মামুনি আর কত বছর একা নাতী-নাতনীর ডাক না শুনে থাকব। একে তো চোখের জ্যোতি নেই। তারপর দাদা ডাক না শুনার বেদনা। বুড়ো হয়ে গেলাম। ছেলেকে বারংবার বলেছি বিয়ে করে নিতে। একটা বউমা থাকলে আমারও সুবিধা গল্প করার মতন মানুষ পাবো। সেখানে নাতী নাতনী আসলে তো কথাই নেই।’

ইফদিয়ার শুনে স্বাভাবিক রইলেও। তার ভেতরটা মুচোড় দিচ্ছে। কেননা সে প্রথম থেকে ভেবে এসেছিল রবিউল সাহেব দেখতে পান। দেখার পরই হয়ত সাবলীল ভাষায় কথা বলছেন। বাবার মত মানুষটার যে চোখের জ্যোতি নেই শুনতেই ক্লেশকর রোগের কবলে পড়ে। সংযত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এই বাবা আর তার বাবার মধ্যে পার্থক্য খুঁজার চেষ্টা করে। উত্তর পেল এই বাবা হলো আল্লাহর তৈরি উদারচিত্ত হৃদপিন্ডে গড়া এক মানব। অন্যদিকে আহসান নামক বাবাটা হলো আল্লাহর তৈরি এমন মানব যা শয়তানের প্ররোচনায় দ্বীনপথ ভুলে গিয়ে কুকর্মে লিপ্ত হয়েছে। সত্যি আল্লাহ সবাইকে পূর্ণভাবে সব মেলায় না। অনেকের ভাগ্য এমন হয় যে তারা পুরু পরিবার পাই তবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি ছুটে যায়। হয়ত সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি হারানোর ছিল তাই হারিয়ে যায় জীবন থেকে। হঠাৎ রবিউল সাহেবের সাড়ায় দেন ফেরে ইফদিয়ার। হরবরিয়ে খেয়াল করে বেলা ৩টা শেষ হবার উপক্রম। আসরের আযান শুরু হবে। সে এখনো যাবিয়াজের বাসায় ব্যাপারটা ভালো দেখায় না।
রবিউল সাহেবের কথার পিঠে সাবলীল কণ্ঠে বলে,

‘আঙ্কেল আজ আছি। ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।’

রবিউল সাহেব পুনরায় নিজের হাতের স্পর্শ মাথায় রাখলেন ইফদিয়ার। হাত বুলিয়ে বলেন,

‘সুখী হউ মামুনি সাবধানে বাড়ি যেও আর দুঃখিত আমার ছেলেটা না থাকায় তোমার কথা জানাতে পারলাম না। আল্লাহ হাফেজ।’

ইফদিয়ার সালাম বিনিময় করে বেরিয়ে গেল। মাঝপথে হেঁটে যাচ্ছে। রাস্তায় অগণিত ছেলেমেয়ে হাঁটাচলা করছে। কিছু ধার্মিক মেয়েও হেঁটে যাচ্ছে। তবে তাদের দেখে কোনকালে ধার্মিক মনে হচ্ছে না। কারণ তাদের পরণের বোরকা শরীরের সঙ্গে ফিট করা। অথাৎ শরীরের প্রতিটা অঙ্গ বোরকার উপরে দৃশ্যপট হচ্ছে। মুখে নেকাপ পরেছে তাও কপাল আর নাকের ডগা পর্যন্ত উম্মুক্ত। তাদের দেখে কয়েকজন ছেলে শিষ বাজাচ্ছে। ঐ মেয়েগুলো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চলে যাচ্ছে।
অথচ সে যাচ্ছে তার উপর কারো নজর নেই। ভেবেই মুচকি হাসি দিল। কারণ তার পরণের ফ্রক হচ্ছে মোটা,ঢিলেঢালা। যার কারণে শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দৃশ্যমান হচ্ছে না। ঘন নীল রঙের হিজাব দিয়ে চোখ-কপাল-নাক আবৃত করে রেখেছে। দূর পথে হেঁটে এসে হাঁপিয়ে গেল। সেদিনের ঘটনা মনে পড়ে যায়।

অতীত…

যাবিয়াজের ধমকে লাফিয়ে উঠে ইফদিয়ার। নিজের বুকের উপরে কয়েকবার ফুঁ দিয়ে বলে,

‘ঐ শশ্নান ঘরের ভূত এমনে কেউ চিল্লাই।’

‘কোল পাইছো বলে আয়েশে ঘুমাচ্ছো। নামনো কোল থেকে। লজ্জা করে না ছেলের কোলে পড়ে থাকতে।’

‘ও আল্লাহ লজ্জা কিসের নিজের হবু জামাই এর কোলে উঠতে।’

‘ইউ।’

‘লাভ ইউ বলবা যে সোনা। কবে যে বলবে বলদ।’

‘হেই ইউ আমি বলদ হলে তুমি গাভী।’

‘ওকে ইউ আর মাই কাউ।’

যাবিয়াজ নামিয়ে দিল। জোর করে হলেও কেননা গাড়ির কাছে চলে এসেছে। কিছুক্ষণ পর স্কুল ভার্সিটি ছুটি হয়ে যাবে। কেউ দেখলে আবার কেলেঙ্কারি লাগিয়ে দিবে। ইফদিয়ার যুবকের চৌপাশ নজর বুলানো দেখে সেও দৃষ্টি দিল। দশা করুণ হবে ধারণা করে দাঁড়িয়ে যায়। যুবকের পাশ কেটে হাঁটার ব্যর্থ চেষ্টা করতে গেলে যাবিয়াজ বিনাবাক্যে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে দিল। রমণী টু শব্দ পর্যন্ত করল না। ভাবল বেশি বিরক্ত করা হয়ে যাবে। গাড়ি বাসা পর্যন্ত আসা অব্দি দুজনের মধ্যে নিরবতা কেটেছে।
বাসায় এসে ইসমাইল এর সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে ছিল। কোমরে কেমনে ব্যথা পেয়েছ জিজ্ঞাসা করলে ওয়াশরুমে পড়েছে বলে জানিয়ে দিল। ফলে ভাইয়ের দেওয়া মলম ব্যবহার করে কোমরটাও দারুণ বেদনামুক্ত হয়েছে।

১৫.

ভাবনার বিচ্ছেদ কাটিয়ে পার্কের বেঞ্চে বসে পড়ে। আজ যাবিয়াজ কে খুব দেখার ইচ্ছে জেগে ছিল। কারণ সে স্কুলে যায় নি এই ধরে দুদিন। যার ফলে যাবিয়াজকেও দেখার সুযোগ পায় নি। কোমরের ব্যথা কমে গেলেও কাল থেকে স্কুলে যাবে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
আকস্মিক কেউ ‘পুচকি ভাবি’ বলায় ঘাবড়ে গেল ইফদিয়ার। পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে সুশ্রী এক রমণী। জগিং সুট পরে আছে। ঘার্মাক্ত মুখের মধ্যে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় হাঁপাচ্ছে। আফসোস সে চিনতে না পারায় বলে,

‘জ্বি আপু বুঝলাম না আমি ভাবি!’

‘না রহিমা খালাম্মা তোমার ভাবি।’

‘এটা আবার কে।’

‘ধুর ছাতা তোমাকে উদ্দেশ্য করে ডাকছি।’

‘কি যে বলো না আপু। আমি অবিবাহিত বালিকা। কিশোরী বলতে পারো বিয়ে করার সময় হয়নি।’

‘আহা বিয়ে করার সময় হয়নি। বরঞ্চ পিরিত করে বেড়াও।’

বড়জোড় জটকা খেল ইফদিয়ার। চট করে বোকার মত প্রশ্ন করে।

‘কার সঙ্গে পিরিত করলাম আপু! এটা কোথাও ভাইরাল হয়েছে। বিশ্বাস করো আপু এক জীবনে যাবিয়াজ সোনা ছাড়া কারো লগে পিরিত মারার স্বপ্নও দেখি নাই।’

শ্রেয়িতা ইফদিয়ার বেক্কলপূর্ণ কথায় হেসে ফেলে।
সে জগিং করে বিকালবেলায়। পার্কে অন্য মেয়ে একলা বেঞ্চে বসে থাকায় সেও বসে পড়ে। যেহেতু ছেলে-বৃদ্ধরা বাকি বেঞ্চ দখল করে রেখেছে। সেহেতু অচেনা ধার্মিক মেয়ের পাশে বসে পানি পান করে। পরবর্তীতে খেয়াল করে স্বয়ং যাবিয়াজের লাভকুমারী ইফদিয়ার বসা।
পার্কে দারুণ পরিচয় হলো দুজনের। শ্রেয়িতা বয়সে বড় হওয়ায় ইফদিয়ার ‘শ্রেয়িপ্পি’ বলে সমব্ধন করে। শ্রেয়িতা বারণ করলেও শুনে নি। পরন্তু সেও জবাবদিহি করে ইফদিয়ারকে ‘ইফুডল’ বলে ডাকবে। ইফদিয়ার সম্মতি দিল। সে হেসে শ্রেয়িতা কে বলে,

‘আপু চলো না আমার বাসায়। আমার বাসা এইতো ৪নং গলির মোড়ে। এখান থেকে আর ৫ মিনিট হাঁটলে বাসায় পৌঁছে যাবো।’

শ্রেয়িতা নাকচ করে দেওয়ায় মন খারাপ হলো তার। যা পর্যবেক্ষণ করে সে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

‘চলো একটা দৌড় হয়েই যাক। ৫ মিনিট এর পৌঁছানোকে ১ মিনিটে শেষ করে দেয়।’

খুশি হয়ে ইফদিয়ার আর শ্রেয়িতা দৌড় লাগায়। শ্রেয়িতা জোরে যেতে চেয়েছিল অন্যথায় যায় নি। কারণ ইফদিয়ার বোরকা পরিহিত ছিল। যার ফলে সে হোঁচট খেতে পারে ভাবে আস্তে ধীরে দৌড়ায়। ইফদিয়ার ব্যাপারটা সহজ করে দিয়ে শ্রেয়িতার হাত ধরে বাসায় প্রবেশ করে।
ইফদিয়ার শ্রেয়িতাকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে আম্মার একটা শাড়ি দিয়ে বলে,

‘আপু ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি নাস্তা দেবো খেয়ে যাবে প্লিজ প্লিজ।’

শ্রেয়িতার ক্লান্ত লাগছিল। তাই না করে নি। ওয়াশরুমে শাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ে।

ইসমাইল চেম্বার থেকে বাসায় এসে দেখে দরজা ভিজানো। ঢুকে দেখে কিচেন থেকে মুরগীর রোস্টের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। ঘ্রাণ শুকে বুঝতে পারল তার ‘ইফুপাখি’ বোনটা ভীষণ খুশি আজ। সে যেদিন খুশি হয় সেদিনই ভালো রান্না করে। অন্যান্য সময় ভেজিটেবল নিয়ে রান্না চালিয়ে দেয়। বোন কাজে ব্যস্ত হওয়ায় ভাইকে খেয়াল করে নি। ইসমাইল ছন্দবেশী হয়ে রুমে চলে এলো। মৃদু হাসি দিয়ে যেই ফিরল তৎক্ষণাৎ গগনবিদারী চিৎকার দিল।

চলবে….

চলবে…..
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/398952065159905/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here