আকাশেও অল্প নীল পর্ব -২০+২১

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ২০
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৬০,
রাইমা নিজের ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে নাম্বারটা চেনার চেষ্টা করলো। কিন্তু চিনতে পারলো না। তার আগেই কল টা কেটে গেলো। কল টা কেটে যাওয়ার পরও আবার বেজে উঠলো। রাইমা সংকোচ নিয়ে কল রিসিভ করলো। রিসিভ করেই সালাম দিলো,

“আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়া আলাইকুম আসসালাম মা। কেমন আছো?”

ফোনের ওপর পাশ থেকে একটা মহিলা কণ্ঠস্বর প্রশ্ন করলেন। রাইমা আচমকা অপরিচিত কারোর মুখে মা ডাক শুনে উত্তরে বললো,

“জি আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু আপনি কে?”

“আমি! আমায় তুমি নাও চিনতে পারো। কিন্তু আমি তোমায় চিনি। আমাদের সরাসরি দেখা হয়নি। কিন্তু আমি তোমায় লুকিয়ে দেখেছি।”

“আপনার কণ্ঠস্বর বলছে, আপনি আমার মায়ের বয়সী কেউ। আন্টি বলেই ডাকি তবে?”

“তুমি চাইলে মা-ও ডাকতে পারো।”

“আমি সেদিকে গড়াতে চাই না আন্টি। আপনি যেহেতু আমায় চিনেন! তবে আপনারও উচিত পরিচয় টা দেওয়া। নতুবা কল কে”টে আমি নাম্বার ব্লক দিবো।”

রাইমা কিছু টা বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বললো। রাইমার কথার উত্তরে ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর আসলো,

“আমি আমিরা শেখ। দিগন্ত আহসান এবং স্নেহা আহসানের মা।”

“মানে টা কি? আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?”

“স্নেহার থেকে নিয়েছি। আমি স্নেহার কাছেই আছি। তোমায় আগে আগে ফোন দেওয়ার কিছু কারণ আছে। তুমি বরযাত্রীর সাথে আসলে আমার সাথে একটু একান্তে কথা বলতে পারবে মা? এটা জরুরী।”

“কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনিনা। কিভাবে চিনে একান্তে কথা বলবো?”

“আমি তোমায় চিনি তো, সুযোগ বুঝে হাত টেনে নিবো। আপাতত রাখছি মা।”

রাইমা কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই কল কে”টে যায়। রাইমা কান থেকে ফোন নামিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,

“স্ট্রেঞ্জ! দিগন্ত সাহেব তো বলেছিলেন, উনার মা’কে সহ্যই করতে পারেন না। অথচ আজ বিয়ের দিনে স্নেহা ভাবীর কাছে উনি! হচ্ছে কি এসব?”

“কোনো সমস্যা হয়েছে রাই?”

রাইমাকে হতচকিত দেখে শার্লিন এগিয়ে এসে প্রশ্ন টা করে। রাইমা উত্তরে বলে,

“নাথিং, কিছু হয়নি। আগে সবাইকে রেডি করে দেই। ঐ বাড়িতে গিয়ে এসব নিয়ে ভাবা যাবে।”

রাইমা কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো বলে সাইরা, সাইফা, তিশা চুপচাপ বসেছিলো। রাইমা ওদের দিকে তাকিয়ে ওদের চুপচাপ দেখে প্রশ্ন করে,

“তোরা এতো চুপচাপ কেনো?”

“তুমি ফোনে কথা বলেছিলে আপু, সেজন্য।”

তিশা উত্তর দেয়। রাইমা ওদের বড়ো হওয়ায় তিনজনই হালকা ভয় পায় রাইমাকে। রাইমা বুঝে পায়না, ও বা”ঘ নাকি ভাল্লু”ক যে ওকে ভয় পায়! রাইমা কি ওদের খেয়ে ফেলবে? চিন্তা গুলো মাথায় আসতেই নিজমনপ হেসে তিনজনকেই চটপট সাজিয়ে রেডি করে দেয়। শাহনাজ বেগম তখনই ওদের রুমে আসে। এসেই সবার সাজ শেষ অথচ রাইমা এখনও রেডি হওয়া শেষ করেনি দেখে বলেন,

“কি মা? তুমি কখন তৈরি হবে? মাহাদ তো তৈরি হয়েছে। সবাই তৈরি, ডাকছে তো!”

“তোমার মেয়ে এমনিও সাজে না মা। তুমি যাও, ১০মিনিটে আসছি আমি।”

“আচ্ছা আমি যাচ্ছি তবে।”

৬১,
শাহনাজ বেগম বললেন, এরপর চলে গেলেন। রাইমা উনি চলে যেতেই আয়নার সামনে বসলো। শার্লিনকে যেভাবে চুল বেধে দিয়ে সেভাবে চুল বেধে নেয় শার্লিনের সাহায্যে। ওয়াটার ফল এলিগেন্ট ডিজাইনে চুল বেধে তাতে বেলী ফুলের গাজরা ঝুলিয়ে দেয় শার্লিন। রাইমা মুখে হালকা ফেস পাউডার আর ঠোটে লিপগ্লোজ লাগিয়ে নেয়। কিছু মেয়ে থাকে যাদের সাজগোজ একদম অপছন্দ। সবথেকে কথা তারা সাজতে চেয়েও সাজে না, আলেসমি লাগে। রাইমা নিজেও সেই কিছু মেয়ের কাতারে পরে। যার দরুণ তার সাজগোজের বাহার এতোটুকুই। শার্লিন রাইমার পাশে হালকা নিচু হয়ে গালের সাথে গাল ঠেকিয়ে আয়নায় দুইজনের দিকে দুজন তাকায়। ওদের দুজনকে ঘিরে দাড়ায় সাইরা, সাইফা, তিশা। রাইমা মুচকি হাসে। সবাই একসাথে কতোদিন পর! শুধু একজন মিসিং এখানে। তার কথা মনে আসতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাইমা। না এবার ইফরাদের সাথে কথা বলতে হবে তার ব্যাপারে। এতোদিন ইফরাদদের খোজার চেষ্টা করেও খুজে পায়নি সে। আসলে যারা হারায় খুজে পাওয়া যায়, কিন্তু যারা নিজেকে আড়ালে রাখে তাদের খুজে পাওয়া মুশকিল। শার্লিন রাইমাকে চুপসে যেতে দেখে বললো,

” কি হলো তোর?”

“কিছু না, চল আমরা যাই। সবাই হয়তো অপেক্ষা করছে।”

“হু চল। তার আগে একটা গ্রুপ ফটো তো অবশ্যই তুলতে হবে।”

ওরা সবাই মিলে একটা গ্রুপ ফটো তুলে বাইরে আসে। মোটামুটি সবার তৈরি হওয়া শেষ। বরযাত্রীতে বেশি মানুষ যাচ্ছে না। রাইমা-রা কয়েকজন কাজিন’স, মাহাদের বাবার দিকের কাজিন’স আর মুরব্বী কিছু মানুষ। মহিলারা কেউ যাচ্ছেন না। শাশুড়ি সম্পর্কের মহিলা মানুষ গুলো বাসায় থাকবেন। নতুন বউ আসবে তাকে বরণের আয়োজন করবেন এজন্য কেউ যাবেন না। রাইমা-রা এসে পরতেই সাহিরা বেগম তাড়া দিলেন বরযাত্রী বের হওয়ার জন্য। এমনিই অনেক টা দেরি হয়ে গিয়েছে। মেসবাহ আর ইফরাদও এসে পরেছে৷ বরের গাড়িতে মাহাদ, রাইমা, শার্লিন আর মাহাদের এক চাচাতো বোন বসলো। ইফরাদ আর মেসবাহ দুজনই ইফরাদের বাইকে এসেছে, তার বাইকেই যাবে। বাকিদের জন্য মিনি মাইক্রো বাস ভাড়া করা হয়েছে। সবাই উঠে বসে গাড়িতে। মাহাদ আগেই মায়ের থেকে বিদায় নিয়েছে। তবুও গাড়ি ছাড়ার আগে জানালা দিয়ে মায়ের দিকে একপলক তাকিয়ে ইশারায় বিদায় জানালো। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। রাইমা সীটে গা এলিয়ে দিয়ে বসে পরে। কেমন একটা ছটফটে অনুভতি হচ্ছে দিগন্তের মা কি বলবেন এই চিন্তায়! যা বলার বলবেন উনি, দিগন্তকে সব জানিয়েই তবেই সে কথা বলবে। নয়তো পরে দিগন্ত রেগে গেলে! যতোই তার হবু শাশুড়ী হোক হবু স্বামী আর হবু শাশুড়ীর মাঝে তো ঠিক নেই। রাইমা শার্লিনের কাধে মাথা এলিয়ে দেয়। কোথায় বিয়েটা ইনজয় করবে! সেখানেও অশান্তি। ভালো লাগছেনা তার।

৬২,
দিগন্তদের বাড়িতে, স্নেহাকে বউ সাজানো প্রায় শেষ। পার্লার থেকে তাকে সাজানোর জন্য মানুষ এনেছে দিগন্ত। তার কথা তার বোনকে লাল টুকটুকে সুন্দর বউ সাজে যেনো সাজানো হয়। বিয়ে নিয়ে স্নেহার যেনো কোনো আফসোস না থাকে। ভাইয়ের পাগলামির কথা মনে আসতেই মৃদু হাসে স্নেহা৷ পার্লারের মেয়েটা তার মাথায় লাল দোপাট্টা টা ক্লিপ দিয়ে আটকে দিয়েই বললো,

“আপনাকে সাজানো শেষ ম্যাম।”

“ওকে, আপনারা তাহলে যেতে পারেন এখন। আপনাদের যা পেমেন্ট সব তো করা হয়েছে মেইবি!”

“ইয়েস ম্যাম। আমরা তবে যাই! আপনার যদি কোনো কিছুতে প্রবলেম ফিল হয়, আপনি বলতে পারেন! আমরা ঠিক করে দিয়ে যাই?”

“না আমি ঠিক আছি। সব কিছু ঠিক আছে।”

“ওকে ম্যাম, আমরা আসলাম। আপনার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।”

স্নেহা মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানাতেই ওরা চলে যায়৷ এতোক্ষণ স্নেহাকে সাজাচ্ছিলো বলে দিগন্তের কড়া নিষেধ ছিলো যেনো ঘরে কেউ না প্রবেশ করে। কেউ জানি বিরক্ত না করে। সাজানো শেষ করে ওরা চলে যেতেই স্নেহার চাচাতো বোন ঐশী আর ফুফাতো বোন ইশা সাথে স্নেহার স্কুলের কিছু কলিগ তার রুমে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পরে। স্নেহার দিকে তাকিয়ে ঐশী বললো,

“মাশাল্লাহ আপাই, আজ দুলাভাইয়ের মাথা ঘুরে যাবে দেখিস।”

“সব মেকআপের খেল বোন। আমি এতোটা সুন্দর না যে মাথা ঘোরাবে কারোর।”

“আল্লাহর সৃষ্টি সব সুন্দর। তাই নিজেকে অসুন্দর ভাবার কোনো কারণ দেখছি না। ২য় বার যেনো এই কথা না শুনি।”

দিগন্ত স্নেহার রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বললো। স্নেহা কাতর নয়নে দিগন্তের দিকে তাকালো। বিয়ের দিন সকালেও ভাইয়ের সাথে তার ছোটোখাটো ঝগড়া লেগে গিয়েছিলো। কারণ টা মিসেস আমিরা শেখ। উনি একদম সোজা বিয়ের দিনই তাদের বাসায় হাজির হয়েছেন। দিগন্ত উনাকে বাসায় থাকতে দিতে রাজী ছিলো না, কিন্তু স্নেহা তাকে থামিয়ে দিয়েছে। বলেছে, সারাজীবন তো পাশে পেলো না, অন্তত বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে একটু পাশে থাক। উনি এসে বেশিরভাগ সময়ই স্নেহার আশপাশে ছিলেন, যার ফলে দিগন্ত দূর থেকেই বোনের সব বিষয় খেয়াল রেখেছে, কাছে আসেনি। এইমাত্র তার রুমে আসলো সকালে আমিরা শেখ আসার পর। স্নেহা বসা থেকে উঠে এসে ভাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দিগন্তও বোনকে আকড়ে ধরে বলে,

“এখন কাদিস না আপা। সাজ নষ্ট হবে। মাহাদ ভাই আগে তোকে দেখুক এরপর নষ্ট হলেও সমস্যা নেই।”

স্নেহা ভাইয়ের বুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই কিল মা”রে কতোগুলো। অভিযোগের সুরে বলে,

“আমার কথা মনে পরলো তোর?”

“তোরই বিয়ে আপা। তোর বিয়ে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম আমার।”

“তাহলে যা ব্যস্ত থাক। এখন আসলি কেন?”

“একটা জিনিস দিতে।”

“কি?”

দিগন্ত উত্তর দেয়না। স্নেহার হাত ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে পকেট থেকে একটা বক্স বের করে। বক্স খুলে সিম্পল একটা চিকন চেইন বের করে পরিয়ে দেয় দিগন্ত। রুমে উপস্থিত সকলে দিগন্ত থাকায় একটু চুপচাপ দাড়িয়ে ভাইবোনের ভালোবাসা দেখছে। পৃথিবীতে ভাইবোন, বোনে বোনের ভালোবাসা সবথেকে সুন্দর, পবিত্র, স্নিগ্ধ। সবাই মুগ্ধ নয়নে সেই ভালোবাসা দেখছে। এছাড়া দিগন্ত বেশি হইচই পছন্দ করেনা। যার ফলে সবাই চুপ।

৬২,
স্নেহা গলায় হাত দেয়। দিগন্তের দেওয়া চেইনে একটা লকেট। লকেটা লাভ শেইপে বানানে। দুটো লাভ একসাথে জুড়ে দেওয়া। স্নেহা তা খুলে দেখে। ভেতরে মাহাদ আর তার ছবি দিয়ে বানানো লাভ। স্নেহা দিগন্তের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চাহনীতে তাকায়। জিগাসা করে,

“এটা কখন বানালি?”

“বানাতে একটু সময় লাগতো। কিন্তু এক্সট্রা টাকা খরচ করেছি। তোর বিয়ের গিফট আমার পক্ষ থেকে।”

“তুই নিজেই আমার জীবনের একটা সুন্দর গিফট ভাই। তুই থাকলেই আমার আর কাউকে লাগবেনা।”

“আচ্ছা তুই থাক, বসে একটু রেস্ট কর। বরযাত্রী ওন দ্যা ওয়ে। কখন জানি এসে পরে।”

স্নেহা মাথা হেলায় দুদিকে। বিছানায় বসে উঠে গিয়ে। দিগন্ত ইশা আর ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলে,

“ইশা, ঐশী? তোমরা কি গেইট আটকাবে? ব্যবস্থা করে দিতে বলবো?”

ইশা, ঐশী একসাথে খুশিতে লাফিয়ে উঠে। দিগন্ত যে রাগী, দুজনের গেইট ধরতে চাওয়ার প্ল্যানের কথা জানাতেই পারেনি। দিগন্ত নিজ থেকে বলায় তাদের এই অবস্থা। ইশা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,

“দিন ভাইয়া। আমরা প্ল্যানই করছিলাম। কিন্তু আপনাকে বলার সাহসটা আগে হয়নি।”

“গেইট তো আমিও তোমাদের সাথে ধরবো ঐশী। ছোটো শ্যালক বলে কথা। এসো এসো। বাকিরা আপার সাথে থেকে আপাকে দেখে রাখেবেনি। চলো এসো।”

দিগন্ত চলে যায়, তার পিছুপিছু ওরাও যায়। স্নেহা অবাক হয় দিগন্তের এতো পরিবর্তন দেখে। যেখানে হইচই দিগন্তের পছন্দ না, সেখানে গেইটে দাড়িয়ে তর্কাতর্কি করবে! বিষয়টা দারুণ তো! দেখতে হবে বিষয়টা। স্নেহা এক কলিগকে ডেকে বললো,

“শোনো আপু, গেইট ধরায় কি হয় না হয় একটু ভিডিও করে রেখো তো গিয়ে। আমি দেখবো পরে।”

স্নেহার কথা ফুরোতেই হইচই শোনা যায় বর এসেছে, বর এসেছে। স্নেহার সব কলিগ রাও বর দেখতে রুম থেকে চলে যায়। তখনই আমিরা শেখ রুমে প্রবেশ করে। স্নেহা উনাকে দেখে প্রশ্ন করে,

“আপনি কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ?”

“নিচে, তোমার চাচী ফুফুর সাথে সব গুছিয়ে হলো কিনা দেখছিলাম।”

“দিগন্তের আশেপাশে বেশি ঘেষার চেষ্টা করিয়েন না। রেগে গেলে কুরু”ক্ষেত্র বেঁধে যাবে।”

“আমায় কি মা বলে ডাকা যায় না স্নেহা? ”

স্নেহার চোখ ভিজে আসে। তবুও নিজের অনুভূতি সামলে বলে,

“শুধু আমি মেয়ে বলে, মায়ের জাত বলে আপনাকে একটু সহ্য করি। নয়তো আপনাকে এই বাড়িতে এলাউ আমিও করতাম না। যখন আপনাকে প্রয়োজন ছিলো, আপনি আসেননি। আমরা সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে যখন বড়ো হলাম! তখন আপনার মাতৃত্ব বোধ জাগলো? যখন বাবা সুস্থ হয়েছিলো, তখন স্ত্রী ছিলেন উনার এটা মনে পরেছিলো বলে এসেছিলেন তখন? আমি কিছু বলিনা মানে এই নয় আমি সব ভুলে গিয়েছি। নেহাতই ঐ যে বললাম মায়ের জাত আমি! মনটা পাথর করতে পারিনা। এজন্য আপনি এখানে দাড়িয়ে থাকতে পেরেছেন। দিগন্তের হবু স্ত্রী রাইমাকে ফোন দিয়ে কথা বলতে পেরেছেন। এখন যদি রাইমাকে বুঝিয়ে দিগন্তকে আপনার সাথে মা ছেলের স্বাভাবিক সম্পর্ক জুড়তে পারেন আমি খুশি হবো। তখনই না হয় মা ডাকবো!”

আমিরা শেখ মাথা নিচু করে নিলেন। তার অপরাধ টা যে একটু বেশিই বড়ো আগে থেকেই জানেন। দিনকে দিন এই অপরাধের বেঝা আর টানা যাচ্ছে না। উনার শেষ ভরসা রাইমা। দূরে থাকলেও ছেলে মেয়ের প্রতিটা কদম উনি নখদর্পনে রাখেন। সব জানার চেষ্টা করেন। যার ফল এখন দিগন্তকে উনার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরাতে যদি পারে তবে রাইমা-ই পারবে বলে উনার বিশ্বাস। এখন বাকিটা উপরওয়ালা জানেন কি হবে! আমিরা শেখ দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এদিকে স্নেহাকে তার সব কলিগ রা এসে স্টেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছুটে এসেছে। সবাই স্নেহাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।
#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ২১
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৬৩,
বাসার গেইটে একপ্রকার বিতর্ক প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছে। পাত্রপক্ষকে গেইটে আটকে দাড়িয়ে আছে কনেপক্ষ। মাহাদের পাশে দাড়িয়েছে রাইমা, অপরপাশে শার্লিন। আর বাকি রা ওদের পিছনেই আছে। এপাশে দিগন্ত, ইশা, ঐশী দাড়িয়ে। পিছনে আরও বাকি মানুষজন। ঐশী মাহাদকে মিষ্টি শরবত খাইয়ে দিয়ে টাকার দাবী জানিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাদের দাবী পূরণ না হলে গেইট ছাড়া হবে না। মাহাদ প্রথমে সব টাকা না দিলেও অর্ধেক দিয়ে দেয়। দিগন্ত তা দেখে বললো,

“আমার দুলাভাই আদৌও এতো কিপ্টে? নাকি বিয়ের গেইটে ঠকবে না বলে কিপ্টামি শুরু করেছে?

রাইমা উত্তরে মাহাদের আগেই বললো,

” শুনেছি আপনি পুরো একটা স্কুল দেখেশুনে চালান। তা স্কুল সামলানো বাদ দিয়ে গেইটে দারোয়ানের চাকরি শুরু করেছেন?”

রাইমার কথায় সবাই হো হো করে হাসা শুরু করে। দিগন্ত রাইমার কথার জবাবে মৃদু হাসলো। এরপর বললো,

“কি করবো বলুন! গেইটে যদি থাকে আপনার মতো মায়াবতী! তাহলে গেইটের দারোয়ান কেন? আপনার চলাচলের রাস্তা পরিস্কার কারীও হতে পারি।”

রাইমা সবার মাঝে দিগন্তের এরকম নির্লজ্জ কথা শুনে আড়ালে মুচকি হাসে। ঠোট টিপে হেঁসে বললো,

“বাহ বেয়াই সাহেব! তাহলে আমাদের গেইট ছেড়ে এবার পরিস্কার করে দিন!”

দিগন্ত উত্তরে বললো,

“সবারই সব কাজের একটা বেতন থাকে বেয়াইন সাহেবা। দিয়ে দেন, গেইট ছেড়ে দিই!”

“আমরা তো নিজ থেকে এসে আপনাকে চাকরির অফার করিনি, তাহলে বেতন কেনো দিবো?”

বললো শার্লিন। দিগন্ত তার দিকে তাকিয়ে বললো,

“শালিকা হও আমার। সাপোর্ট নাও ওদের৷ নট ফেয়ার শার্লিন!”

“গেইটের ফিতার ঐপাশে থাকলে অবশ্যই আপনার সাপোর্ট নিতাম দুলাভাই।”

উত্তর দিলো শার্লিন। মাহাদ এবার ঝেড়ে কাশলো। ভরাট কণ্ঠে বললো,

“এতো তর্কাতর্কির আর প্রয়োজন নেই। আমি আমার মন খুশি করে যতোটুকু টাকা দিচ্ছি! নিয়ে খুশিমনে গেইট ছাড়ো।”

“মাহাদ ভাই! আপনার কি বিয়ে করার ধৈর্য সইছে না? কনেপক্ষের কাছে হারার জন্য একদম উদগ্রীব হয়ে আছেন দেখছি?”

রাইমা মাহাদের কথা শুনে বললো কথাটা। ফের একদফা হাসির দমক। হাসি কিছু টা কমে আসলে মাহাদ নিজের কথামতো টাকা দিয়ে দেয়। টাকার এমাউন্টে সবাই মোটামুটি খুশি হয়ে গেইট ছাড়লো। দিগন্তের চাচা আর ফুফা মিলে মাহাদকে স্টেজে বসালো। বাগানের এমাথা-ওমাথা দুই স্টেজ সাজানো। একটায় স্নেহাকে বসানো হয়েছে, অপর টায় মাহাদকে বসানো হলো। মাহাদের পাশে ইফরাদ আর মেসবাহ বসলো। ওরা বাইকে আসার দরুণ আগেই এসে পরেছিলো। এসে বাড়ির ভেতরেই দুজনে আড্ডা দিচ্ছিলো কিছুক্ষণ। মাহাদ আসায় তার কাছে এসে বসলো। স্নেহার পাশে ঐশী আর ইশা বসেছে। মাহাদ একপলক স্নেহার দিকে তাকালো। তাকানোর পর চোখ ফেরানো দায় হয়ে পরলো তার জন্য। প্রতিটা মানুষের কাছে তার ভালোবাসার মানুষটি সবার থেকে বেশি সুন্দর। মাহাদের কাছেও তাই। কিছু টক্সিক মানুষের কাছে স্নেহার বয়সটা হয়তো বেশি বলে কথাও শোনানো হয়েছে! কিন্তু এই যে এক জোড়া ভালোবাসার পূর্ণতা! এটার মতো শান্তিই বা কোথায়? স্নেহা যে তার জন্য যত্ন করে, ভালোবেসে বউ সেজেছে! তার হচ্ছে নিজের অস্তিত্বের সাথে নতুন একটা সত্বা যোগ করছে! এর থেকে আনন্দের আর কি আছে? সেখানে কিছু টক্সিক মানুষের কথায় কিছু যায় আসেনা মাহাদের। তার ভালোবাসার পূর্ণতা এটাই শান্তি তার কাছে। মাহাদকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকতে দেখে ইফরাদ বললো,

“ভাই, বাসর ঘরেও দেখা যাবে। আপাতত এতো মানুষের মাঝে চোখ টা একটু সরায় রাখেন!”

মাহাদ সম্বিত ফিরে পায়। স্নেহার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ইফরাদের কথায় হাসার চেষ্টা করে।

৬৪,
রাইমা আর শার্লিন স্নেহার সাথে দেখা করতে ওর পাশে এসে বসেছে একটু। ইশা, ঐশী একপাশে সরে গিয়ে ওদের বসার জায়গা করে দিয়েছে। রাইমা এতোক্ষণ মাহাদ যে স্নেহাকে নিষ্পলক দেখছিলো! তা খেয়াল করেছে। মাহাদ চোখ সরিয়ে নেওয়ার পর সে স্নেহার কানে ফিসফিস করে বললো,

“মাহাদ ভাইয়ের নজর সরছিলো না ভাবী। তুমি তো একটি পলক আমার ভাইকে দেখলে না। এটা অন্যা”য় হলো ভাবী।”

স্নেহা লজ্জা পায়। আজ একটু বেশিই লজ্জা পাচ্ছে সে। কেনো এমন হচ্ছে ধরতেও পারছেনা। বিয়ে বলে কি এতো লজ্জা এসে বাসা বাধলো তার মাঝে! ভেবে পেলোনা স্নেহা। সে সলজ্জ ভঙ্গিতে উত্তর দেয়,

“তোমার ভাইয়ের মতো নির্লজ্জ হতে পারলে ভালো হতো।”

“সেইম টু ইউ ভাবী। আমারও তোমার ভাইয়ের মতে নির্লজ্জ হতে হবে। নয়তো তোমার ভাইকে সোজা করা যাবে না।”

স্নেহা হতবাক হয় রাইমার কথায়। তার ভাই আবার কি করলো! সে রাইমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,

“কি করেছে আমার ভাই!”

রাইমা গেইট ধরার সময়ে দিগন্তের কর্মকান্ড সব বলে দেয়। সব শুনে স্নেহা নিজের হাসি সংবরণ করার চেষ্টা করে। স্নেহার হাসি আটকানোর প্রয়াস দেখে রাইমা বলে,

“তোমার হাসি পাচ্ছে? আমি কিন্তু লজ্জা পেয়েছিলাম তখন।”

“আমার ভাই টা একটু ওরকমই রাই। কথা বলে কম, কিন্তু যা নলে মাটিতেও ফেলা যায় না। সহ্যও করা যায় না।”

“আর তার ঘাড়েই আমায় বেঁধে দিচ্ছো!”

“এই তোমরা ননদ ভাবী কি এতে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছো বলো তো?”

শার্লিন রাইমা এবং স্নেহার উদ্দেশ্যে কথাটা বলে। রাইমা ভ্রুকুটি করে রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“কানে কি কম শুনোস? পাশেই তো বসে আছিস! শুনতে পাস না।”

“আমরা নারী জাতীরা বইন, একজনকে বলা কথা অপর জন যেনো শুনতে না পায়! এই ভেবে সেরকম করে কথা বললে, যাকে বলা হয় সপ ব্যতিত সবাইই শুনতে পায়।”

“থাম তুই৷ এখন আর মুখ খুলিস না।”

“কিছু বলাও যায় না। যা কথাই বলবোনা।”

“হয়েছে, হয়েছে তোমরা থামো, ঝগড়া লাগিও না।”

স্নেহা দুজনকে থামাতে কথাটা বলে। তখনই রাইমা থেমে স্নেহার দিকে ফিরে বলে,

“এই ভাবী! একটা কথা বলতেই ভুলে গিয়েছি। তোমার মা বোধ হয় আমার কাছে ফোন দিয়েছিলো তাইনা? আমার নাম্বার তোমার কাছ থেকে পেয়েছে বললেন উনি! আমার সাথে কথাও বলতে চেয়েছেন, তখন ফোনে বলেছেন উনি। উনাকে তো কোথাও দেখছিনা!”

স্নেহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হতাশ কণ্ঠে বলে,

“মা আমার রুমে বসে আছেন। বাইরে আসলেই দিগন্ত রাগ করে না বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বসে থাকে! তাই মা’কে রুমেই থাকতে বলেছি। জানোই তো সব। নতুন করে কি আর বলবো!”

রাইমা সেই কথার জবাবে আর কিছু বলে না। ভেবে নেয়, দিগন্তকে না জানিয়ে আমিরা শেখের সাথে কথাই বলবে না সে। না জানিয়ে কথা বলার পর দিগন্ত জানলে তার উপর রাগারাগি করলে! সম্পর্ক শুরুর আগেই কোনো প্রকার তিক্ততা চায় না রাইমা। তখনই হইচই উঠে বিয়ে পড়ানো হবে। কাজী এসে গেছেন। রাইমা আর শার্লিন স্টেজ ছেড়ে নেমে আসে।

৬৫,
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর জন্য মাহাদের কাছে আগে বসে। সব নিয়ম শেষ করে যখন কবুল বলতে বলা হলো, তখন তার গলার স্বর একটু কাপছিলো। দীর্ঘ বট বছরের অপেক্ষা শেষে অবশেষে পূর্ণতার ধাপটা তার দিক থেকে পূর্ণই হলো। স্নেহার দিকে তাকিয়ে একটা সস্তির হাসি দিলো মাহাদ। কাজী সাহেব মাহাদের কাছে বিয়ের সব কার্যক্রম শেষে স্নেহার কাছে যায়। স্নেহাকেও সব বলা শেষে কবুল বলতে বলা হলে মাহাদের দিকে তাকায় সে। লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কবুল বলে দিলো স্নেহা। এরপর চোখ বন্ধ করে নেয় সে। কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান এটা। মাহাদ খুশিতে কেদে ফেলেছে। পাশে বসা ইফরাদকে জড়িয়ে আনন্দে চোখের জল ফেলে মাহাদ। ছেলেরা সহজে তো কান্না করে না। অধিক শোক আর আনন্দেই হঠাৎ তাদের চোখে জল আসে। উপস্থিত সকলে মাহাদের পাগলামি দেখে সস্তির হাসি হাসে। সবাই-ই তো আগে থেকে মোটামুটি জানতো স্নেহা আর মাহাদের ভালোবাসার কথা। রাইমা অদূরে দাড়িয়েই বিয়ের কাজ দেখছিলো। শার্লিন পাশে নেই। সে বাকিদের সাথে মজা করছে চেয়ারে বসে বসে। দুজনেরই কবুল বলা শেষ হলে রাইমা আস্তে করে আলহামদুলিল্লাহ বলে নেয়। তখনই কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কেউ একজন বলে,

“একদিন আপনাকে আমার করে পবিত্র বিয়ের বন্ধনে বেধে নিয়ে এভাবেই আলহামদুলিল্লাহ বলবো। বিষয় টা সুন্দর তাই না?”

রাইমা চকিতে ঘাড় ঘুরায় কথাটুকু শুনে। দিগন্তকে দেখতে পায়। দিগন্ত বুকে হাত বেধে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোটের কোণে মৃদু হাসি৷ পরণে আকাশী রঙা পাঞ্জাবি আর সাদা পাঞ্জাবির সাথে পড়ার টাউজার। মাথায় চুলগুলো এলেমেলো। ছোটো ছোটো চুলগুলো কপালে এসে পরে আছে। হাতে সাধারণ একটা ঘড়ি। একদম সাধারণ বেশভূষায় সজ্জিত এই পুরুষকে একসময় বিরক্ত লাগলেও এখন ভালোই লাগে রাইমার। যখন বিরক্ত লাগতো, তখন তো আর নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবে এমন নজরে বা চিন্তায় তাকায়ইনি সে। সেজন্য বিরক্তির মাত্রা আসতো দিগন্তকে দেখলেই। অথচ এখন! কি মুগ্ধতা নিয়ে তাকায় সে। ভাবতেই হালকা হাসে রাইমা। দিগন্ত সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,

“আমার মাঝে এতো কি দেখছেন মিস রাইমা খন্দকার? প্রেমে পরে গেলেন?”

“পরতেও পারি। আফটার অল মানুষ টা আমারই হবে তো তাইনা?”

“ঠোঁটকাটা জানতাম আমি, আপনিও যে ঠোঁটকাটা মানুষ। বুঝত পারিনি।”

“হলেও হতে পারি। আপনার থেকেই শেখা।”

দিগন্তের হাসির পরিমাণ তীর্যক বাড়লো। সে ঠোঁটের কোণে হাসি প্রশস্ত করে বললো,

“আপনার প্রেমে পরার চেষ্টা করতে করতে আমিও বোধ হয় প্রেমে করেই গেলাম রাইমা খন্দকার। মিষ্টি রঙের এই মিষ্টি লেহেঙ্গায় আপনাকে মিষ্টির মতোই লাগছে জানেন তো! ইচ্ছে করছে একটু জড়িয়ে ধরি। ইচ্ছে গুলো তোলা থাকলো রাইমা খন্দকার। বিয়ের পর দীর্ঘ সময় জড়িয়ে বসে থাকবো।”

৬৬
রাইমা সলজ্জ হাসলো দিগন্তের কথা শুনে। মাথা নিচু করে বললো,

“তবে যে আপনার কাজ! যাই হোক পরিচয় হওয়ার পর থেকে তো একদিনও দেখলাম না আপনি কাজের কাজ কিছু করছপন! সবসময় তো দেখলাম ঝগড়াই করতেন! তাহলে আপনি কাজ টা করেন কখন?”

“বিয়ের পর সাথে থাকলেই টের পাবেন। আপনাকে সময় দেওয়ার মতো সময় টা বের হবে কি না সন্দেহ! আপাতত এতোদিন ফ্রিই ছিলাম, এতিমখানার কাজ শেষ হওয়া, আপার বিয়ে। মোটামুটি কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলাম। তখন তো আর সম্ভব হবে না তাই না?”

“যতোই কাজ থাকুক, আমায় সময় না দিলে মে”রে তক্তা বানিয়ে ফেলে রেখে দেবো।”

“ভয় পেয়ে গেলাম।”

কথার এ পর্যায়ে দুজনই হাসলো এবার। সবার ডাক পরলো খাওয়া দাওয়া করার। দিগন্ত আর রাইমা দুজনই সেদিকে পা বাড়ায়। সেই পাট চুকিয়ে খানিক সময় পাত্র আর কনেকে একসাথে বসিয়ে হাতে তুলে দেওয়া, আয়নায় মুখ দেখার নানান নিয়ম শেষ করা হলো। পর্ব আসলো বিদায় দেওয়ার৷ স্নেহাকে বিদায় দেওয়ার সময় টায় দিগন্ত নিজেকে যতোই চাইলো শক্ত রাখার! পারলো না। বোনকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার সময় বোনকে জড়িয়ে প্রবল কান্নায় ভেঙে পরলো সে। তার কান্নার দমকে বাতাসও ভারি ভারি লাগছে রাইমার কাছে। আচ্ছা মেয়েদের বিদায় বেলায় এতোটা কষ্ট কেনো? রাইমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ভাইবোনের কান্না দেখে উপস্থিত প্রতিটা মানুষের চোখের কোণে জল জমেছে। স্নেহার চাচা আর ফুফু তো স্নেহাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে দেখাশোনা করেছে। উনারাও নিজেদের সামলাতে পারলেন না। কান্নারত সব মানুষ থেকে বাসায় ঢোকার মূল দরজায় দাড়িয়ে একজন মহিলা কাঁদছেন। রাইমার দৃষ্টি সেদিকে পরতেই সে সন্দেহ করলো, হয়তো ঐটাই আমিরা শেখ। উনি নাকি কথা বলবেন! কই তার কাছে তো আসলো না! তবে না এসে ভালোই হয়েছে। দিগন্তের সাথে কঘা বলাও হয়নি। আগে কথাটা হোক। কান্নাকাটির দমক একটু কমে আসলে মাহাদের বাবার কথায় পাত্রপক্ষ সব গাড়িতে উঠলো। স্নেহা নিজেকে সামলে ভাইকে একটু শক্ত হতে বলে গাড়িতে উঠে বসে। সবাই গাড়িতে উঠার পর গাড়ি চলতে শুরু করে। রাইমা গাড়ির জানালা দিয়ে একবার মাথা বের করে দিগন্তের দিকে তাকালো। ছেলেটা ছলছল চাহনীতে তাকিয়ে আছে গাড়ির দিকে। রাইমারও চোখেও জল জমে। মানুষ থাকায় ইশারায় কিছু বলতেও পারলো না। মাথা ঢুকিয়ে পাশে বসা শার্লিনের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। দুয়া করতে থাকলো, দিগন্ত যেনো নিজেকে সামলে নিতে পারে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here