#আগাছা
#Khadija_Akter
#পর্ব_১১
আমি যেনো কোথাও পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম…..হৃদয় পোড়ার গন্ধ!
হ্যাঁ মনে হয় তরীর হৃদয় পুড়ছে।
আমি কখনো চিন্তাও করিনি যে আমি এমন বেহায়ার মতো তৃতীয় কারো সামনে এভাবে স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।
আমি এমন কেনো করছি নিজেও জানি না।
তবে ভিতরে ভিতরে খুব শান্তি পাচ্ছি।অনিক যে শুধু আমার আর শুধু আমাকেই ভালোবাসে সেটা দেখা দরকার তরীর!আর দেখাতেই পেরেই বোধহয় এই প্রশান্তিটা পাচ্ছি।
একটুপরে আড়চোখে চেয়ে দেখলাম দরজার কাছ থেকে ছায়াটা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে।
তরী চলে যেতেই এবার আমি অনিককে সরিয়ে দিতে চাইলাম,
–এই বললাম না,আমার কাজ আছে।তবুও ছাড়ছো না কেন আমায়!ছাড়ো তো।
–মানে কি!নিজেই বলবে কাজ আছে,আবার নিজেই না গিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরবে!
আবার একটু পরে বলবে,এবার ছেড়ে দাও!
এ্য্যহ্ এত্তো সোজা নাকি!
অনিক এবারে আর আমাকে ছাড়লো না।বরং আরও বেশি করে চেপে ধরলো।
আমিও জোর করলাম না বেশি।আসলে ওর সান্নিধ্যে ছেড়ে আমারও মন চাইছিল না যেতে।
আবারও দু’জন দুজনাতে ডুবে গেলাম।
একটু পরেই তরীর বেশ জোরেসোরে চিৎকার শোনা গেল!
আমরা মুহুর্তেই সচকিত হয়ে গেলাম!
অনিক উত্তেজিত হয়ে বললো,
–তরীর গলা না?নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।
চলো যাই।
–তুমি যাও আমি চেঞ্জ করে এক্ষুনি আসছি।
অনিক চলে যেতেই আমি ঝটপট কাপড়টা পাল্টে নিলাম।তারপর দৌঁড়ে গেলাম তরীর রুমে।
তরীর হাত কেটে গেছে!অনিক তরীর পাশে বসে তরীকে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে,
–হাত কাটলো কিভাবে?আর এতো রাতে কি করছিলে যে হাত কেটে গেল!ঘুমাওনি কেন?
–অনিক জি জু,আমার খুব ক্ষুধা লেগেছিল।তাই ফল কাটতে গেছিলাম তখনি আমার হাতটা কেটে গেছে।
তরী কান্না করছে খুব।
আমার কেনো জানি তরীর কান্নাকে আসল মনে হচ্ছে না।ওর কান্নার মাঝেও আমি ন্যাকামী দেখতে পাই!
ব্যান্ডেজ শেষ করে অনিক বললো,
–আমি ফল কেটে দিচ্ছি।তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাও।
–না,না জিজু।এখন আর ফল খাব না। ক্ষুধা চলে গেছে আমার।
কিন্তু অনিক জিজু একটা রিকুয়েষ্ট ছিল।
–এভাবে অনুনয় করে কেন বলছো?ফ্রী ভাবে বলতে পারো তুমি আমাদের কাছে সবকিছু।
–আমার আজকে খুব ভয় লাগছে।কালরাতে ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি!একা থাকতে খুব ভয় লাগছে আমার।
প্লিজ আপুকে বলো না আমার সাথে যেনো আজ রাতটা ঘুমায়।
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলাম এতক্ষণ।
আর এখন আমি ওর উদ্দেশ্য একদম পরিষ্কার করে বুঝে গেলাম।
ও চাইছে না যে রাতটা আমি আর অনিক একসাথে কাটাই।দু’জন দুজনকে সময় দেই!
আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম,
–তা কীভাবে হয়?অনিক একা থাকবে নাকি?
আর এতো বড় মেয়ে এতোদিন একা ঘুমাতে পেরেছ তো আজও পারবে।সাবাস শুয়ে পড়ো ছোট বোন।
তরী আমার কথার পাত্তা না দিয়ে অনিকের দিকে চেয়ে বেশ কাঁদো কাঁদো সুরে অনুনয় করতে লাগলো বারবার।
যা ভেবেছিলাম তাই,অনিকেরও মন গলে গেল।অনিক আমার চোখের দিকে একরাশ হতাশা নিয়ে তাকিয়ে বললো,
–তরী যেহেতু ভয় পাচ্ছে তো আজ রাতটা এখানেই কাটাও প্লিজ।এক রাতেরই তো ব্যাপার,আমার কোনো প্রব্লেম হবে না।
অনিকের প্রতি খুব রাগ উঠলো আমার।আজকের মতো একটা বিশেষ রাতে বউকে অন্যরুমে পাঠিয়ে দিয়ে বলছে “তার কোনো সমস্যা হবে না”।
আমি যে ওর কথায় রেগে আছি,সেটা অনিক নিজেও বুঝতে পারলো।কিন্তু কিছুই বললো না।
মনে মনে বললাম,বাহ্ তরী বাহ্!অনিকের মনের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তুমি আজ তো আমাদের আলাদা করে দিলেই।
কিন্তু খুব শীঘ্রই তুমি তল্পিতল্পা গুটিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখো।
মুখে বললাম,
–আচ্ছা আমি আসছি।
তোমার জিজুকে বিছানা ঠিক করে দিয়ে আসি।
বলেই তরীর রুম থেকে বেরিয়ে আমাদের রুমে চলে আসলাম।আমার পিছু পিছু অনিকও বের হয়ে এলো।
অনিক রুমে ঢোকা মাত্রই ইচ্ছেমতো এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে লাগলাম ওকে।
প্রচন্ড রাগ-জিদে শরীরে আমার কিড়মিড় করছিল।
মারতে মারতে চেচিয়ে বললাম,
–তুমি তো তরীর চাল বুঝোনি,তোমাকে বোকা বানাইছে ঠিকই কিন্তু আমি ওর উদ্দেশ্যে বুঝে গেছি, বুঝছো?ও তোমার কাছ থেকে আমাকে আজকের রাতটায় দূরে সরানোর জন্যই এমন নাটক করলো।
অনিক হাহা করে হেসে উঠলো।তারপর আমার হাত দুটো ওর এক হাতের মধ্যে আটকে নিয়ে খুব শান্ত গলায় বললো,
–এতে তরীর কি লাভ শুনি হুম?ওর হাত যে কেটেছে এটা তো সত্যি নাকি?নাকি আবার বলবা এটাও তরীর নাটক।হাহাহা।
সারাক্ষণ এই মাথাটায় এসব চিন্তা নিয়েই ঘুরো তাইনা?
আজেবাজে চিন্তা বন্ধ করতে পারো না তুমি হুম?
–তুমি কেন বুঝতে চাইছো না,তরী তোমাকে পছন্দ করে!আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে চায়।
–আমাকে পছন্দ করে? হাহাহা!এই বুড়োকে?
আর পছন্দ যদি করেই থাকে,তাহলে আমার চোখে ধরা পড়ে না কেন?আমাকে কেন এসে বলে না হুম?আর ওকে আমি কাল সকালে অনেক সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছি,এরকম কিছু যদি মাথায় থেকেও থাকে তাহলে যেনো ঝেড়ে ফেলে।
শুনো পাগলী,তুমি এসব চিন্তা মাথা থেকে ফেলো দাও।
–আর যদি তুমি প্রমাণ পাও যে তরী তোমাকে পছন্দ করে,ভালোবাসে,আপন করে পেতে চায়।তাহলে তখন তুমি কি করবা বলে দাও?
–এই, এবার বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?এতো রাতে কিসব শুরু করলা বলো তো।
–না,আগে বলো তাহলে কি করবা তুমি?আমাকে ছেড়ে দিয়ে তরীকে বিয়ে করবা?ও তো আমার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী।
বলতে বলতে অভিমানে আমার বুক ভরে উঠলো।আমার গাল বেয়ে টুপ করে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
অনিক হয়তো ভাবতেই পারেনি আমি এতোটা সিরিয়াসভাবে কথা বলছি এটা নিয়ে।
ও অবাক হয়ে গেল!চোখ মুছে দিতে দিতে বললো,
–আরেহ্ আরে তুমি কাঁদছো কেন!কাঁদার কি হলো এখানে!
আচ্ছা যাও ধরে নিলাম তরী আমাকে পছন্দ করে আর আমি এটার প্রমাণ ও পেয়ে গেছি।তারপর কি করবো জানো?
–কি?
–ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ওকে ঘর থেকে বের করে দিব।আর বলবো,”কোথাকার কোন পেত্নীরে তুই!উড়ে এসে জুড়ে বসে মেহেরের স্বামীর দিকে নজর দিয়েছিস!এত্তো সাহস তোর!”
আমি এবার বাচ্চাদের মতো খুশি হয়ে হাততালি দিয়ে উঠলাম।
–খুশি তুমি?
–হুম অনেক!
খুশি খুশি মনে আমি চাদর ঝেড়ে বিছানাটা ঠিকঠাক করতে লাগলাম।অনিক আমাকে হেল্প করতে করতে বললো,
–আচ্ছা শুনো?
–হুম
–থাক, তোমার নাহয় যেতে হবে তরীর কাছে ঘুমাতে।
এখানেই থেকে যাও না।
আমি চোখ পাকিয়ে ভেঙচি কেটে বললাম,
–খুব তো বলে এলে তখন,”তুমি এঘরে ঘুমাও,আমার কোনো সমস্যা নাই!”
–বলছি তো কি হইছে?এখন আবার ফিরিয়ে নিলাম দরকার হয়!থেকে যাও না প্লিজ।
–এই চুপ!কথা না বলে ঘুমাও তো।
–প্লিজ লক্ষ্মীটি!আমি তোমাকে চাই এখন।
অনিক আমাকে টেনে নিয়ে এসে নাকে নাক ঘষতে শুরু করে। দিল।
একটুপর অনিককে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করে শুইয়ে দিলাম।তারপর ওর গায়ে চাঁদর টেনে দিলাম একটা। কপালে একটা চুমু দিয়ে লাইটটা অফ করে চলে আসলাম।
চুপচাপ শুয়ে আছি আমি তরীর পাশে।
কোথায় এখন অনিকের বুকে শুয়ে থাকার কথা, তা না এখন এখানে একটা ডাইনীর সাথে রাত কাটাতে হচ্ছে!
তরী অনেক্ষন ধরেই নড়াচড়া করছে।
হঠাৎ রাতের এই নীরবতা ভেঙে রিনরিনে কন্ঠে বলে উঠলো,
–মিসেস মেহেরীমা অনিক!
–……….
–আমি জানি তুমি ঘুমাওনি।কিন্তু ঘুমের ভাণ করে পড়ে আছো।
আহা চুহ্ চুহ্!
বিরহ বিরহ বিরহ!বিরহের রাত!
তো কেমন লাগছে তোমাকে দেওয়া আমার বিবাহবার্ষিকীর উপহার এই বিরহময় রাত!
যেখানে এখন তোমার নাগরের সাথে লীলাখেলায় মত্ত থাকার কথা সেখানে এখন একা একা শুয়ে থেকে শোক পালন করছো। হাহাহা।
আমার প্রচন্ড রাগ উঠলো।চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,
–জাস্ট শাট আপ।
আমি জানি ভয় টয় কিছু না!সবই তোমার নাটক।
অনিককে সরলসোজা পেয়ে তুমি ভালোই বোকা বানাতে পারছো।কিন্তু আমি বোকা না,তোমার গেমস আমি খুব ভালো করেই বুঝি।
–বাহ্,কিন্তু বুঝেও কি করতে পেরেছ তুমি!দেখো এখানে শুয়ে শুয়ে সুখস্বপ্ন কল্পনা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছো না।হাহাহা।
আর আমি যে ভয় পাইনা তবুও মিথ্যা বলে তোমাকে আমার রুমে রেখে দিয়েছি এটা বুঝলে নাটক আর কিছু বুঝলে না!
–মানে?কি বলতে চাও তুমি?
–এটাই যে,হাতটা কিন্তু আমার এমনি এমনি কাটেনি!আমি নিজের ইচ্ছায় কেটেছি।হাহাহা।
হাত না কাটলে হয়তো অনিক আমার উপর এতোটা সিমপ্যাথি দেখাতো না!তাই আগে হাত কেটেছি,অনিকের সিমপ্যাথি গেইন করেছি।তারপর ভয় পাওয়ার নাটক করে তোমাদের দুজনকে আলাদা করে তোমাদের এই মধুর রাতকে বরবাদ করে দিয়েছি।হাহাহাহিহিহি!
এবার বলো,তরীকে ১০ এর মধ্যে কত দিবে?
আমি জাস্ট ভাবতে পারছিলাম না,তরী এতোটা নিচে নেমে গেছে।
জাস্ট আমাদের আলাদা করার জন্য সে নিজের হাতই নিজে কেটে নিল!ও তাহলে আরও কতই কিই না করতে পারে!
যে নিজেকে আঘাত করতে পারে,সে অন্যকে মেরে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করবে না।
আমার কেমন ভয় ভয় লাগতে শুরু করলো তরীর পাশে শুয়ে থাকতে।ইচ্ছে হচ্ছে,এখনি দৌঁড় দিয়ে অনিকের কাছে চলে যাই।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে,তরী পুনরায় বলতে শুরু করলে,
–তরীকে এতো কাঁচা খেলোয়াড় ভেবো না ম্যাডাম।
তরী একবার যা চায় তা যেকোনো মূল্যে হাসিল করেই থাকে।
–তুমি কি জানো অনিক তোমাকে এক রত্তিও ভালোবাসে না!ও তোমাকে নিজের বোন ভাবে।
–হ্যাঁ জানি তো!কালই তো অনিক আমায় মুখের উপর বলে দিল আমায় নাকি ভালোবাসে না!
ভালোবাসে না তাতে কি!তরীর তাতে কিছু যায় আসে না বুঝলে?
তরী তো অনিককে ভালোবাসে আর আপাততঃ এটাই তরীর জন্য যথেষ্ট।
ছেলে মানুষ হলো হায়েনার জাত!মেয়ে মানুষের গন্ধ পেলেই হলো!দেখবে,যেদিন অনিক আমার গন্ধ একবার শুকবে সেদিনের পর থেকে সুড়সুড় করে তোমাকে ছেড়ে আমার কাছে চলে আসবে।
আরেকটা কথা, অনিককে না পাওয়া পর্যন্ত আমি ক্ষ্যান্ত হবো না।এর জন্য যত নিচে নামতে হবে নামবো আমি।যে আমার পথের কাঁটা হবে তাকেই শেষ করে ফেলবো।এমন কি তোমাকেও……..।
দাঁতে দাঁত পিষে কথাগুলো বলতে বলতে তরী ওর মুখটা প্রায় আমার মুখের উপরে এনে ঝুঁকে রইলো।
প্রচন্ড ভয় আমার বুকে ঝেঁকে বসলো!সেই সাথে খুব কান্নাও পাচ্ছিল এইটুকু তরীর এহেন দানবীয় রুপ দেখে।
আমি আস্তে করে চোখটা বন্ধ করে নিয়ে চুপ করে পড়ে রইলাম।
ঘুমিয়েই গেছিলাম কিনা জানি না।যখন চোখ খুললাম দেখি চারপাশে অন্ধকার! ড্রীমলাইট পর্যন্ত অফ!চেয়ে দেখি ইলেক্ট্রিসিটি নেই।
আস্তে করে বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে পাওয়ার বাটনে চাপ দিলাম
রাত -৩ঃ৩২।
তারমানে প্রায় ২ ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছি।পাশে ফোনের আলোটা ফেললাম।
তরী ঘুমাচ্ছে।ঘুমন্ত তরীকে দেখতেও আমার কেমন ভয় ভয় করছিল।
আমি কোনো শব্দ না করে আস্তে আস্তে পা টিপেটিপে খাট থেকে নেমে গেলাম।তারপর এক দৌঁড়ে আমাদের রুমে এসে দরজায় ছিটকিনি দিয়ে দিলাম।
অনিক ঘুমাচ্ছিল।ওকে আর জাগাইনি।আস্তে করে ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম,ওর বালিশে মাথা রেখে।
অভ্যাসবশত অনিক এপাশে ফিরিয়েই ঘুমের মধ্যেই আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিল।
অনিকের বাহুডোরে থেকে নিজেকে এখন খুব নিরাপদ লাগছে।একটু আগেই যে হৃদপিণ্ডটা ধড়াস ধড়াস করে লাফাচ্ছিল একটা অজানা ভয়ে।সেটা এখন আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসলো।
একসময় ঘুমিয়ে রাজ্যে হারিয়ে গেলাম……
সকালে খুব ভোরে ভোরে ঘুম ভাঙলো আমার।অনিক এখনো ঘুমে।
রাতে এসে যেভাবে শুয়েছিলাম,এখনো একই ভাবে শুয়ে আছি।অনিকের এক হাতের উপর আমার মাথা,অন্য হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে চেপে রেখেছে তার বুকের সাথে।
আর আমি আমার মুখ অনিকের বুকে গুঁজে রেখেছি।
আস্তে আস্তে করে আমার উপর থেকে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে,আমি উঠে গেলাম।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।
সকালের বাতাসটা বেশ লাগছে।ইচ্ছে হচ্ছিল অনিককেও ডেকে নিয়ে এসে দুজন মিলে উপভোগ করি পরিবেশটা।
কিন্তু গতকাল সারাদিন বেচারার উপর অনেক দকল গেছে তাই আর ডাকলাম না।
তখনি মনে পড়লো,কালকের অনেক জিনিসপত্র এখনো ধোয়া বাকী আছে।সকাল থেকেই কাজে নেমে না গেলে কাজ শেষ করতে সারাদিন লেগে যাবে।
রুমে এসে চুলটা খোঁপা লরে নিয়ে দরজাটা খুলে বের হতে যাব তখন কিছু একটার সাথে পা লেগে উল্টে পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলাম।
চেয়ে দেখলাম,দরজায় হেলান দিয়ে তরী শুয়ে আছে।শরীরের জামাকাপড় আর চুল অনেক এলোমেলো হয়ে আছে।
নাক মুখ লাল হয়ে ফোলে গেছে,কান্না যে অনেক করেছে সেটা স্পষ্ট!
রাতে উঠে হয়তো দেখেছে আমি অনিকের কাছে চলে এসেছি!তাই ওর এই পাগলামী!
কিন্তু তরীর হাতের একটা জিনিসের প্রতি চোখ পড়তেই আমি আঁতকে উঠলাম!একটা শার্ট তরী ওর বুকের সাথে চেপে ধরে ঘুমিয়ে আছে!
অনিকের সাদা শার্ট!সেই সাদা শার্টটা যেটা তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও পাইনি অনিক আর আমি।
তারমানে তরী এটা চুরি করে ওর কাছে রেখে দিয়েছিল!আর এটাকে অনিক ভেবে এভাবে বুকে নিয়ে ও রাতে ঘুমায়!
রাগে আমার শরীর জ্বলে উঠলো।শার্টটা কেড়ে নিতে যাব তখনি মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল একটা।
“আমি যদি এই অবস্থায় অনিকের সামনে তরীকে তুলে ধরতে পারি তাহলে তো অনিকের বিশ্বাস হয়ে যাবে তরী যে অনিককে পছন্দ করে!”
দ্রুত অনিকের কাছে এসে ডাকতে লাগলাম,
— অনিক, অনিক উঠো।
এই অনিক,উঠো প্লিজ।
–উমমম,কয়টা বাজে!আরেকটু ঘুমাই প্লিজ।
অনিক তো উঠলোই না উল্টো এপাশ থেকে ঐপাশ হয়ে আবার বালিশে মুখ গুজে দিল।
–এই উঠো লক্ষ্মী।তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো।
এবার তোমার বিশ্বাস হয়ে যাবে যে তরী যে তোমাকে পছন্দ করে।
চোখ বন্ধ রেখেই অনিক এবার বিছানায় উঠে বসলো।ঘুম ঘুম কন্ঠে বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
–উফফ মেহের!এতো সকাল সকালও আবার শুরু করে দিয়েছ।ঘুমাতে যাওয়ার আগেও তরী,ঘুম থেকে উঠার পরেও তরী!
আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও প্লিজ।
বলেই অনিক আবার শুয়ে পড়লো।
আমি এবার বেশ দৃঢ় কন্ঠে বললাম,
–তুমি যদি না উঠো এখন।আমি কিন্তু কান্না করা শুরু করবো।
অনিক এবার কড়া মেজাজ দেখিয়ে,মুখটা শক্ত করে উঠে সোজা বেড থেকে নেমে গেল।
কঠিন গলায় বললো,
–চলো,দেখিয়ে শান্তি হও।
দেখি তোমার নতুন পাগলামী,আসো।
আমি অনিকের রাগকে খুব একটা পাত্তা দিলাম না।শুধু একবার অনিককে দেখাই তারপর নিজেই বুঝবে,
আমি ঠিক ছিলাম নাকি ভুল।
অনিককে নিয়ে দরজার সামনে আসলাম,
–দেখো তরী তোমার সাদা…..
এইটুকু বলেই তাকিয়ে দেখলাম,যেখানে তরী বসে ঘুমাচ্ছিল সেখানে তরী নেই!জায়গাটা ফাঁকা।
অনিক আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো,
–দেখাও?দেখাও তোমার তরীকে।কই দেখতে পাচ্ছি না তো।দেখাও দেখাও…
আমি হতাশ কন্ঠে বললাম,
–বিশ্বাস করো, তরী এখানেই ছিল।ঐ যে শার্টটা,সাদা শার্টটা যেটা তুমি পাচ্ছিলে না!ঐটা তরীর কাছেই আছে।
ও শার্টটা জড়িয়ে ধরে এখানে বসেই ঘুমাচ্ছিল।এই তো ঠিক এখানেই
–এখানেই ছিল তো, এখন কোথায় গেল বলো!হাওয়া হয়ে তো যায়নি।
–আ আমার মনে হয় ত তরী ওর রুমে চলে গেছে।আসো না ওর রুমে গিয়ে দেখে আসি একবার ।আমি নিশ্চিত সেখানে গিয়ে দেখবো তোমার শার্টটা নিয়ে তরী শুয়ে আছে।
–আর কিছু পাগলামীর বাকী আছে মেহের?তোমার দেখতে ইচ্ছে করলে তুমি গিয়ে দেখে আসো যাও।আমার অত শখ নেই।প্লিজ আমার চোখে খুব ঘুম এখন,আমি একটু ঘুমাই?
আমার একপ্রকার জেদের কারণেই অনিক অবশেষে আমার পিছু পিছু চললো তরীর রুমের দিকে।
গিয়ে দেখলাম তরী বিভোর ঘুমে মগ্ন।
হাত পা ছড়িয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে এই ঘুম গভীর ঘুম;কমপক্ষে ২/৩ ঘন্টা আগের ঘুম!আশে পাশে কোথাও শার্টটা দেখতে পাচ্ছি না।
অনিক আমার দিকে রাগ নিয়ে অনেক্ষন চেয়ে রইলো,
–কলিজা ঠান্ডা হইছে?
আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই অনিক হনহন করে চলে যাচ্ছে রুমের দিকে।
আমার এখন নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।
আমি কি তবে ভুল দেখলাম!কিন্তু আমি তো ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অনেকসময় নিয়ে স্থির হয়ে সজ্ঞানে দরজা খুললাম।
তাই ঘুমের ঘোরে ভুলভাল দেখার তো প্রশ্নই উঠে না।
এগুলো ভাবতে ভাবতেই ঘুরে রুম থেকে বের হতে নিচ্ছিলাম;ঠিক তখনি তরী বলে উঠলো,
–১০ মধ্যে কত দিবে।
ঘুমের অভিনয় কেমন করলাম?
তরীর কন্ঠ শুনে চকিতে ওর দিকে ফিরে তাকালাম,দেখি আধ-শোয়া হয়ে তরী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি চেচিয়ে ডাকতে লাগলাম,
–অনিক!অনিক!অনিক, দেখে যাও।
#চলবে