আগুন ঝরার দিনে পর্ব -০৭

#আগুন_ঝরার_দিনে

#পর্ব_৭

বেশ ক’দিন ধরে সজলের খুব মেজাজ খারাপ। মেজাজ খারাপের কারনে সে কোনো কাজে মোনোযোগ দিতে পারছে না। বাসা, অফিস এমনকি বন্ধুদের আড্ডাতে কোথাও সজল স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে উপস্থিত থাকতেও পারছে না। সব সময় তীব্র মন খারাপের একটা কাঁটা তার মনের ভেতর খচখচ করে। তার এই মন খারাপের অন্যতম কারন হলো রুহী। এই মেয়েটির সাথে কয়েক মাস আগে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে রুহীর সাথে তার সময়গুলো বেশ ভালো কাটছিল। বিয়ের দিন কবে আসবে তা গুনতে গুনতেই যেন বিয়ের দিনটা দ্রুত ঘনিয়ে আসছিল।

হিসেব মতো, রুহির সাথে আর পনের দিন পর তার বিয়ে হবার কথা ছিল। কিন্তু হুট করে বিয়ের দিনটা পিছিয়ে গেল। রুহির নানী গত সপ্তাহে মারা গিয়েছেন। রুহীর পরিবার চাচ্ছে বিয়ের দিনটা যেন দু মাস পেছানো হয়। রুহীর পরিবার সজলের বাবা মাকে বলতেই তারাও এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলেন। বিরক্তিতে সজল ভ্রুঁ কুঁচকালো। তার মন বলছে সম্পূর্ণ অন্য কথা। তার মনে হচ্ছে এই বিয়ে রুহীর বাবা-মার ইচ্ছেতে নয় বরং রুহীর ইচ্ছেতে পেছানো হয়েছে। একটা মেয়ে সামান্য চুমু খাওয়াকে কেন্দ্র করে যে বিয়ে পেছানোর মত এত বড় একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারে তা তার ধারনাতেও ছিল না। সজল দেখল, এখন রাত দশটা বাজে। হিসেব মত রুহীদের বাড়ির সবার ডিনার খাওয়া শেষ হয়েছে। রুহীদের বাড়িতে সবাই নয়টার মধ্যে ডিনার সেরে দশটার মধ্যে শুয়ে পড়ে। সজল একটু ভেবে নিয়ে রুহীকে ফোন করলো। আজ সে রুহীর সাথে সরাসরি কথা বলবে। রুহীর ভেতরে কী চলছে তা সে জানতে চাইবে। জোর করে হলেও আজ সে রুহীর পেট থেকে কথা বের করেই ছাড়বে। রুহীকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবে, এই বিয়ে পেছানোর কারন আসলে কী? রুহীর নানীর মৃত্যু? নাকি অন্য কিছু কিংবা অন্য কেউ?

ফোনটা ক্রমাগত বেজে চলেছে। রুহী তীব্র হতাশা নিয়ে ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে। সজল ফোন করছে। টানা চারবার রিং হলো তারপর একসময় রিং বাজা বন্ধ হয়ে গেল। রুহী নিজের কাজে মোনোযোগ দিল। কাল তার একটা অ্যাসাইনমেন্ট আছে। রুহী এখন সেই অ্যাসাইনমেন্টের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। একটু পর আবার ফোনটা বাজলো। রুহী প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়েই ফোনটা রিসিভ করল।

ফোনের অপর প্রান্তের গলা শুনতেই রুহীর শরীর হিম হয়ে গেল। আশফাক স্যার ফোন করেছে। তার গলায় উৎকন্ঠা ঝড়ে পড়ছে। কী হলো মন খারাপ নাকি মেজাজ খারাপ?

রুহী তাড়াতাড়ি বলল, না না এমন কিছু নয়। আমি ভেবেছিলাম সজল ফোন করেছিল। আমি যখন আপনার ফোনটা রিসিভ করেছিলাম তখন আসলে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাইনি।

– কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?

রুহী একটু অবাক হয়ে বলল, কোন কাজটা?

– এই যে সজল ফোন করেছিল ভেবে তুমি তার সাথে ফোন ধরেই বাজে ব্যবহার করলে। যার সাথে দুমাস পর তোমার বিয়ে হবে তার সাথে এমন ব্যবহার করা কি ঠিক?

– কে বলল সজলের সাথে আমার দুমাস পর বিয়ে হবে?

– তুমি তো দুদিন আগেই বললে তোমার নানী মারা যাবার কারনে তোমাদের বিয়েটা দুই মাস পিছিয়েছে।

রুহী বলল, সজলকে আমি বিয়ে করব না। এই বিয়ে আমি ভেঙে দিব।

– কেন? বিয়ে ভেঙে দিবে কেন?

রুহী কিছু বলল না। চুপ করে রইল।

আশফাক আবারো বলল, তোমার উত্তর আমি পেলাম না রুহী। তুমি কি আমার কারনে সজলের সাথে তোমার বিয়েটা ভেঙে দিতে চাইছো?

রুহী তীব্র ভাবে দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল, না না তা নয়। সজলকে আমার ভালো লাগে না। তাকে আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

– কারনটা কি জানতে পারি?

আজ রুহীকে পাগলামীতে পেয়ে বসেছে। সে অনায়াসে আশফাককে বলে বসল, জানেন সজল আমার সাথে কী করেছে? সে ক’দিন আগে আমার ইচ্ছে অনিচ্ছের তোয়াক্কা না করেই আমাকে চুমু খেয়েছে।

আশফাক হেসে ফেলল। রুহী ফোনের অপর প্রান্ত থেকে আশফাকের হাসি ঠিকই টের পেল। আশফাক তরল গলায় বলল, সে তার হবু স্ত্রীকে চুমু দিয়েছে তাতে এমন দোষের কী!

রুহী থমথমে গলায় বলল, আপনি হলেও এমন করতেন বুঝি?

– অবশ্যই করতাম এবং করেছিও। দীপার সাথে বিয়ে ঠিক হবার পর দীপাকে আমি জোর করে চুমু খেয়েছিলাম ঠিক সজলের মত।

রুহী রাগ করে বলল, আচ্ছা আমি রাখছি।

– রাগ করছ কেন? তোমার কী ধারনা দীপাকে আমি কখনো চুমু খাইনি? চুমু না খেলে, তাকে প্রাণ ভরে আদর না করলে আমাদের বাচ্চাটা কীভাবে হলো বলো তো?

আশফাকের কথা শুনে রুহীর কান দিয়ে গরম বাতাস বের হতে শুরু করল। লজ্জায় তার ফর্সা মুখটাও টকটকে লাল হয়ে গেছে। রুহী আবারো বলল, আমি রাখছি।

আশফাক একটু গম্ভীর হয়ে বলল, তোমাকে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে রুহী। তুমি খুব ভালোমতই জানো, যেভাবে তুমি ভাবছো তা কখনো সম্ভব নয়।

– কী ভাবছি আমি? আপনি কি ভাবছেন আপনার প্রেমে আমি পাগল হয়ে গেছি? আপনাকে বিয়ে করার জন্য আমি মুখিয়ে আছি?

– আমি তা ভাবছি না রুহী। কারন প্রেম কিংবা বিয়ে আমাদের দুজনের সাথে এসব কোনো সম্পর্কই স্বাভাবিক ভাবে যায় না রুহী। আমি তোমাকে আগেও বলেছি আমাদের সম্পর্কের কোনো স্বাভাবিক ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। যদি থাকত তাহলে রাত দশটার সময় সিগারেট কিনতে যাচ্ছি এই বাহানা করে আমাকে বাড়ির বাইরে আসতে হত না।

রুহী একটু থেমে বলল, আমাদের দুজনের সম্পর্ক নিয়ে আমার কোনো এক্সপেক্টেশন নেই।

– থাকার কথাও নয়। তোমার মত অল্প বয়স্ক সুন্দরী একটা মেয়ে কেন আমার মত একজন মধ্য বয়স্ক বিবাহিত পুরুষের কাছে কোনো এক্সপেক্টেশন রাখবে। তোমার কাছে আমি কিছুই লুকোইনি রুহী। তুমি খুব ভালোমত জানো, দীপার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। তবুও আমি কোনো ভাবে চাই না আমার আর দীপার মাঝে কখনো সেপারেশন হোক। আমাদের ছেলেটা বাবা মা দুজনের আদর ভালোবাসায় বড় হোক এটাই আমার চাওয়া।

– আপনি কেন এই কথাগুলো বার বার বলেন আমাকে?

– কারন আমরা মানুষ তো। সব জেনে, সব বুঝেও আমরা বড় বড় ভুল করি। এই যেমন আজ সারাদিন তোমার সাথে আমার দেখা হয়নি, কথা হয়নি তাই মনটা খুব ছটফট করছিল। দেখো কেমন পাগলের মত রাতে তোমাকে ফোন দিয়ে বসলাম।

– তাহলে এবার আপনি বলুন, আমার সাথে কথা হয়নি বলে কেন আপনার মন ছটফট করছিল? কেন আপনি আমাকে রাতে ফোন দিয়েছেন?

– আমি জানি না রুহী। আমি সত্যি জানি না।

রুহী আর কোনো কথা বলল না। ফোনটা রেখে দিল।

রুহী ফোনটা রেখে দেবার পর আশফাক বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট শেষ করল। দীপার আগেও তার জীবনে আরো দুই একজন মেয়ে এসেছিল। এমনকি এখনো রুহীর চেয়ে অনেকগুন সুন্দর মেয়েরা তাকে নক করে, তার সাথে একটু মেশার জন্য, কথা বলার জন্য মুখিয়ে থাকে। অথচ অদ্ভুৎ ভাবে রুহী তাকে নিজের দিকে টানছে। অন্য কোনো মেয়ের প্রতি এতখানি তীব্র আকর্ষণ আশফাক এর আগে কখনো বোধ করেনি। আশফাক ভ্রুঁ কুঁচকে ভাবলো, এতক্ষণ ফোনে কথাগুলো কি সে আসলে রুহীকে শোনাচ্ছিল নাকি নিজেকেই?

“চলবে”

“আমার লেখা পড়তে ভালো লাগলে ২০২৩ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত আমার থ্রিলার উপন্যাস “ত্ন” বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। রকমারি, বুকমার্ক, প্রজ্ঞা, ধী ছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন বুকশপে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। ধন্যবাদ সবাইকে। “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here