আড়ালে_ভালোবাসি পর্ব ১১+১২

#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট ১১||

নিশাত ধমকের সুরে ঈশা কে চুপ করতে বলে । ঈশা আরহান এর দিকে তাকিয়ে দেখে আরহান কেমন করে তাকিয়ে আছে তাই ঈশা বলে

_” আরে আপু রেগে যাচ্ছিস কেনো ? আমি just দেখছিলাম এটা আমার জিজু কি না মানে রূপা আপুর জামাই এর মত দেখতে তো (রূপা নিশাতের মামাতো বোন ) তাই গুলিয়ে ফেলছিলাম কিন্ত এখন সব কিলিয়ার

_” যাকে তাকে দেখে উল্টা পাল্টা বলবি না আগে ভালো করে দেখবি তার

নিশাত কে থামিয়ে দিয়ে ঈশা বলতে শুরু করে

_” আরে আপু তুই এত হাইপার হচ্ছিস কেনো ? ভুল তো মানুষের জন্য নাকি গরু ছাগলের জন্য তাই না ভাইয়া (আরহান এর দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে )

আরহান আবার কেশে উঠে এবার জয় কানে কানে বলে

_” এত কাশিস না নিশাত করোনার রুগী মনে করে হসপিটালে দিয়ে আসবে (ফিসফিসিয়ে )

আরহান কনুই দিয়ে গুতা মেরে নিশাতের দিকে তাকায় । নিশাত কে দেখে বুঝা যাচ্ছে রেগে আছে কিন্ত কিছু বলতে পারছে না । নেহা কথা বলা শেষ করে বলে

_” কি হলো দাড়িয়ে আছিস কেনো ? ভিতরে চল

এবার জয় বলে

_” হা তোমরা ভিতরে যাও দেখো কেমন লাগছে ? আর নিশাত you are looking beautiful তাই না আরহান

আরহান এর দিকে তাকিয়ে দেখে আরহান নিশাত কে দেখছে। জয় ধাক্কা দিতেই আরহান বলে

_” হুম কিন্ত সব থেকে সুন্দর লাগছে এই প্রিন্সেস কে একদম বার্বি ডলের মত লাগছে (ঈশা কে দেখিয়ে )

_” আপনাকে ও খুব সুন্দর লাগছে Mr handsome

আরহান নিচু হয়ে ঈশার গালে টেনে বলে

_” তাই তোমার নাম কি cutie pie

_” ঈশা তোমার ??

নিশাত রেগে বলে

_” ইসু বড়দের আপনি করে বলতে হয়

নিশাত এর কথার পেক্ষিতে আরহান বলে উঠে

_” তুমি আমাকে তুমি করে বলবে । এতে কারোর কোনো সমস্যা হবে না যদি কারোর হয় সে হিংসুটে

নিশাত কিছু বলতে গিয়ে বললো না । ঈশা আরহান গল্পের ঝুলি খুলে দিয়েছে ।আরহান ও ঈশার সাথে খুব ফ্রী ভাবে কথা বলছে যেনো কত দিনের চেনা

ওদের কথার মাঝে সেখানে ফিহা আসতেই নিশাত আরহান এর কাছ থেকে ঈশা কে নিয়ে সিড়ি দিয়ে চলে যায় । যাওয়ার সময় তাকিয়ে দেখে আরহান কেমন অসহায় এর মত তাকিয়ে আছে

ফিহা বকবক করছে আরহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে । নিশাত একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওখান থেকে চলে যায় । নিশাত যেতেই আরহান একবার জয়ের দিকে তাকায় তো একবার ফিহার দিকে ।

_” বেবি আমি তোমাকে কিছু বলছি ?

_” হুম বলো (বিরক্তি নিয়ে )

_” বলো মানে কি আমাকে কেমন লাগছে বললে না তো

_” রোজ যেমন লাগে

ফিহা গাল ফুলিয়ে বলে

_” আমাকে সুন্দর লাগছে না ? সবার মত কি লাগছে

আরহান চোখ বন্ধ করে নিশাতের মুখ মনে করে বলে।

_” ভালোবাসার মানুষকে একবার দেখলে অন্য কাউকে আর ভালো লাগে না । প্রতিদিন নতুন করে নতুন ভাবে ভালোবাসার মানুষের প্রেমে পড়া

একটু দেখার জন্য পাগলের মত ছুটে যাওয়া । চোখের দেখার চেয়ে মনের দেখা বেশি টানে। রূপ দেখে ভালোবাসা সেটা তো ক্ষণিকের মোহ মাত্র । রূপ তো একদিন নষ্ট হয়ে যাবে কিন্ত মন সবসময় সতেজ থাকবে । মনকে ভালোবাসা আসল ভালোবাসা

ফিহা আরহান কে জড়িয়ে ধরে বলে

_” বেবি তুমি এত কঠিন কঠিন কথা কি করে বলো আমি তো বুঝতেই পারি না

আরহান মুচকি হেসে জয়কে ইশারা করতেই জয় পকেট থেকে একটা বক্স বের করে দেয় । আরহান সেটা নিয়ে ফিহা কে ছেড়ে বলে

_” তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি

_” সত্যি ? (খুশিতে গদগদ হয়ে )

_” হুম

আরহান বক্স থেকে দুল বের করে ফিহা কে দেয় m ফিহা খুশি হয়ে পড়ে নেয়

_” wow কি সুন্দর কতো টাকা নিয়েছে? দেখে তো অনেক দামি মনে হচ্ছে

_” just for u কিন্ত তোমাকে প্রমিজ করতে হবে কখনো খুলবে না সবসময় পড়ে থাকবে

ফিহা খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলে

_” প্রমিজ কখনো খুলবো না । তাহলে এখন আমি যাই

আরহান মাথা নাড়ায়। ফিহা যেতে জয় বলে

_” যদি খুলে ফেলে তাহলে তো খেলা শেষ

_” কিছু শেষ না আমি আছি কি করতে (বাকা হেসে )

এদিকে নিশাত,নেহা মিলে ঈশা কে ভার্সিটি ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে ঈশা বক বক করছে আর দেখছে ।

অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরির পর নিশাত বলে

_” ইসু এবার চল তোকে কিছু খাইয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেবো

ইসু আর নেহা একে অপরের দিকে তাকাতাকি করে ঈশা মন খারাপ করে বলে

_” আপু তুই এমন করছিস কেনো ? এখনো তো অনুষ্ঠান শুরু হলো না আর তুই

_” দেখ ইসু পাকনামি করিস না আসতে চাইছিস তাই নিয়ে এসেছি কিন্ত বেশিক্ষণ থাকা যাবে না অনুষ্ঠান শুরু হবে দেরি করে

_” তা আমি থাকলে তোর কি এমন হচ্ছে ?

_” সেটাই তো তোর সমস্যা কোথায়? ঈশা আমার সাথে আসছে আমার সাথে যাবে

_”তোরা যা খুশি কর

নিশাত রাগ করে অন্য দিকে চলে গেলো নেহা আর ঈশা হাসছে

_” ঈশা আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো তুই যাবি?

_” যাবো না মানে এখন আপুর কাছে গেলে আমাকে গিলে খাবে

নেহা হেসে ঈশার হাত ধরে যেতে গেলে জয় আর আরহান সামনে এসে দাঁড়ায় । নেহা কিছু বলার আগেই জয় বলে

_’ ঈশা কে আমাদের কাছে রেখে যাও আমরা দেখছি

নেহা যেতে চায় না কিন্ত ঈশা জোর করে পাঠিয়ে দেয় ।

আরহান হেসে বলে

_” তো এবার বলো আমাকে জিজু কেনো ডাকলে ?

_” সেইসময় তো বললাম বিশ্বাস হলো না

_” মোটেও না তবে জিজু ডাক শুনতে আমার কোনো সমস্যা নেই (মুচকি হেসে )

_” আমার ও জিজু বলতে কোনো সমস্যা নেই । আর আমি জানি আপনি আপুকে প্রতিদিন ফুল দিয়ে যান সেদিন সকালে আপনাকে ফুল রাখতে দেখেছিলাম আর এটাও জানি আপনি সারারাত আমাদের বাড়ির সামনে বসে থাকেন

আরহান আর জয় হা হয়ে শুনছে নিশাতের চেয়ে ঈশা বেশি পাকনা । ঈশা আবার বলে

_” আমার আপনাকে জিজু হিসেবে খুব ভালো লাগছে

_” আস্তে তোমার ঘাড় তেরা বোন শুনলে সব শেষ

ঈশা হেসে বলে

_” ঘাড় তেড়া কে সোজা তো আপনাকে করতে হবে। বাবা গো এমন ভালোবাসা আমি কখনো দেখিনি যে রাত জেগে দাড়িয়ে থাকে শুধু দেখার জন্য

আরহান হেসে দেয় । জয় জোড়ে বলে

_” দেখতে হবে না ভাইটা কার তবে যাই বলিস তোর সালিকা কিন্ত তোর পক্ষে

_” জি না আমি আপুর পক্ষে তবে আপুকে যদি কেউ সত্যি ভালোবাসে তাকে আমি সম্পূর্ণ সাপোর্ট করবো কিন্ত আপুকে কষ্ট দেওয়া যাবে না

_” ওকে আমার বোনটি কিন্ত তোমার আপুকে এখন কিছু বলতে পারবে না প্রমিজ

_” ওকে জিজু প্রমিজ

_” বাই দা বাই এই টা তোমার আপুর জন্য আমি দিলে ত অনেক প্রশ্ন করবে তুমি চুপিচুপি গলায় পরিয়ে দিবে

_” আমি কেনো আপনি পড়িয়ে দেন ?

_” সেই উপায় থাকলে তো (মাথা চুলকিয়ে )

_” আমি ব্যাবস্থা করছি আসো

জয় আরহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঈশার পিছনে যায় । নিশাত গার্ডেনে বসে ছিল ঈশা পিছন থেকে গিয়ে চোখে হাত দেয়। নিশাত রেগে বলে

_” ইসু এটা বাসা না ছাড়

_” না আপু তোর জন্য একটা গিফট আছে চোখ খুলার চেষ্টা করবি না

_” আরে

নিশাত কে বলতে না দিয়ে ঈশা আরহান কে ইশারা করতেই আরহান চুপিচুপি এসে নিশাতের গলায় একটা পাথরের চেন পড়িয়ে দেয় । নিশাত কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চুপ ছিল । আরহান চেনটা পড়িয়ে দিয়ে মাথায় একটা ভালোবাসা দিয়ে চলে যায় । ঈশা আস্তে আস্তে হাত সরাতেই নিশাত চারিদিকে দেখতে থাকে

_” আপু কি খুঁজছিস ?

_” এখানে কেউ ছিলো আমি ফীল করেছি

_” তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই

_” আমি বলছি ছিল

নিশাত চারিদিকে খুঁজতে থাকে আর ঈশা বেকুব এর মত তাকিয়ে থাকে । নেহা এসেই চিল্লিয়ে বলে

_” এই তোরা এখানে কি করছিস সবাই ঐদিকে নৃত্য পরিবেশন করছে আর তোরা

কথাটা বলে ঈশা আর নিশাত কে টেনে নিয়ে যায় । গিফট এর কথা নিশাতের মাথা থেকে বেরিয়ে আসে ।

চেয়ারে বসে সবাই স্টুডেন্টের নৃত্য দেখছে কিন্ত নিশাত এর চোখ বার বার কাউকে খুঁজছে কিন্ত পাচ্ছে না । নিশাত নেহার কানে কানে বলে

_” নেহ্ন ওদের তো দেখছি না ?

_” তুই আবার কাদের খুঁজছিস নাচ দেখনা কি সুন্দর ক্লাসিকাল ড্যান্স করছে

নিশাত বিরক্তি নিয়ে বসে আছে । কিছুক্ষণ পর পাশে তাকাতেই দেখে ঈশা চকোলেট খাচ্ছে । নিশাত অবাক হয়ে বলে

_” এই তুই চকোলেট কোথায় পেলি? তোর কাছে তো কোনো টাকা নেই

_” ভাইয়া দিয়েছে

_” ভাইয়া মানে কোন ভাইয়া ? যে খুশি যা খুশি দেবে আর তুই খেয়ে নিবি কই সেই ভাইয়া (রেগে )

ঈশা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে পিছনে তাকিয়ে দেখ । ঈশার কথা মত নিশাত পিছনে তাকিয়ে শকড খায়

নিশাত দের পিছনে আরহান আর ওর ফ্রেন্ডরা বসে আছে । নিশাত কে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরহান বলে

_” আসসালামুয়ালাইকুম (মুচকি হেসে )

নিশাত আরো শকড খায় । হা করে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে ঝুঁকে বলে

_” চকোলেট ফুরিয়ে গেলে বলো । তোমার বোন তো কিছু খাওয়াবে না আমি ভাই হয়ে কিছু না করলে কি হয়

_”ভাই মানে ?

আরহান কলার ঝাড়া দিয়ে বলে

_” ঈশা আমার ছোট বোন

_” কবে থেকে ?

_” আজ থেকে এমন মিষ্টি একটা বোনের এমন বোন কি করে হয় (নিশাতের দিকে তাকিয়ে )

নিশাত এবার রেগে ঈশার কাছ থেকে চকোলেট নিয়ে আরহান এর মুখে পুরে দিয়ে বলে

_” এইভাবে হয়

কথাটা বলে নিশাত উঠে যায় আর আরহান আয়েসে চকোলেট খাচ্ছে প্রিয় মানুষের হাতের বলে কথা পছন্দ না করলে ও কি ফেলে দেওয়া যায় ।

নিশাত আরহান কে বকতে বকতে অনেক গুলো চকোলেট এনে ঈশা কে দেয়

_” নে যত পারিস খা । আমার বোনকে আমি খাওয়াতে পারবো নতুন কোনো ভাই দরকার নেই

আরহান সেটা দেখে বাকা হেসে বলে

_” ঈশা এইসব ফেলে দে না জানি কি মিশিয়ে আনছে তোকে তো আনতে চাইছিল । এখন দেখা যাবে এর মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো

নিশাত রেগে আগুন কিছু বলার আগেই ঈশা বলে।

_” ঠিক কথা আমি খাবো না

_” তুই খাবি তোর জামাই ও খাবে

নিশাত রেগে চকোলেট ঈশার মুখে জোর করে দিতে গেলে নেহা বলে

_” এই তোরা একা একা খাচ্ছিস কেনো ?আমাকে দে আমার মত মানুষ কি তোর চোখে পড়ে না

পাশ থেকে জয় বলে উঠে

_” পিপঁড়া কে তো কেউ দেখতে পায়নি এই কেউ দে

নেহা চোখ বাকিয়ে তাকাতেই জয় অন্য দিকে ঘুরে যায় ।নেহা জয়ের মত করে বলে

_” এত হাতি থাকলে তার মধ্যে কি আমাকে দেখা যায়

_” বাবা মা কি খেতে দেয় না নাকি কিপটামি করে বাবা মার টাকা বাচাছে

_” দেখুন

_” এখন দেখতে চাই না হোয়াটসঅ্যাপ এ ছবি পাঠিয়ে দিও ভালো করে দেখবে নিবো

জয় আর নেহাকে ঝগড়া করতে দেখে আরহান বলে

_” যেমন ইনি তেমন তার বান্ধবী এর মধ্যে আমার বোনটা থাকলে এদের মত হয়ে যাবে

নিশাত এবার রেগে পিছনে না তাকিয়ে বলে

_” তো আপনার সাথে থেকে কি শিখবে সিগারেট খাওয়া মানুষকে অপমান করা

_” আমার মধ্যে অনেক খারাপ গুন আছে কিন্ত কেউ এই খারাপ মানুষকে ভালো বানাতে চাইছে?

খারাপ হয়ে কেউ জন্মায় না পরিস্থিতি মানুষকে খারাপ বানিয়ে দেয়

আরহান এর কথা নিশাতের বুকে গিয়ে লাগলো । নিশাত কিছু বুঝে উঠার আগেই ফিহা আরহান কে নিয়ে চলে গেলো । নিশাত এক দৃষ্টিতে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে

কি একটা ভেবে নিশাত ও উঠে যায় । চারিদিকে তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে হটাৎ পিছন থেকে কথা আসছে শুনে নিশাত সেইদিকে চলে যায়

নিশাত গিয়ে দেখে আরহান আর ফিহা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে । নিশাত মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসে

আরহান ফিহা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ফিহার গালে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় । ঘটনা এত তাড়াতাড়ি হওয়ায় ফিহা কিছু বুঝতে পারে না

আরহান রেগে বলে

_” তোমার খেলা শেষ এখন থেকে আমার খেলা শুরু
#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১২||

ফিহা অবাক হয়ে আরহান কে দেখছে হটাৎ কি কারণে আরহান রেগে গেলো সেটা ফিহার অজানা। ফিহা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে

_” নিজেকে খুব চালাক ভাবো তাই না কিন্ত কি জানো কনফিডেন্স ভালো কিন্ত অভার কনফিডেন্স ভালো না

_” বেবি তুমি এই সব কি বলছো ? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না

_” বুঝতে পারছো না তাই না তাহলে এটা কি

আরহান কথাটা বলে ফোনে ভিডিও অন করলো । ভিডিওটা দেখে ফিহা আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা

ভিডিও টে ফিহা একটা ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে । ফিহা কাপা কাপা গলায় বলে

_” এ এ এই ভিডিও তুমি কোথায় পেলে ?

_” কেনো আমার কি পাওয়ার কথা ছিল না খুব ভুল হয়ে গেছে ভিডিও টা পেয়ে তাই তো

_” আর আর হান বিশ্বাস করো

_” বিশ্বাস আর তোমাকে হা সেই জায়গা তুমি নিজেই নষ্ট করেছো । কি ভেবেছো আমি কিছু জানতে পারবো না আর তুমি আমাকে ঠকিয়ে যাবে

_” আরহান ভিডিও টা মিথ্যে বিশ্বাস করো এডিট করা কেউ ইচ্ছে করে আমার কাছ থেকে তোমাকে কেরে নিতে চাইছে (জড়িয়ে ধরে )

আরহান জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ফিহা কে ফেলে দেয় । ফিহা টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায় । ফিহা অবাকের পর অবাক হচ্ছে এ কোন আরহান কে দেখছে একটা শান্তি ছেলে হটাৎ এই রকম হলো কি করে । আরহান এর এই রূপ ফিহা মেনে নিতে পারছে না ফিহা কিছু বলার আগেই একটা লোক হাত তালি দিতে দিতে আসে

ফিহা এবার শকড খায় । লোকটা আরহান এর পাশে এসে দাড়াতেই আরহান বাকা হেসে বলে

_” কি একে চিনতে পারছো তো ? নাকি এই লোক ও নকল তোমার মত

ফিহা কিছু বলছে না চুপ করে আছে । ফিহা কে চুপ করে থাকতে দেখে আরহান বলে

_” ভুলটা আমার ছিল যে মেয়ে আমি এত খারাপ কাজ করার পর ও আমাকে একবার বারণ করে না সে আমাকে কি ভালোবাসবে । ভালোবাসলে অন্য কারোর সাথে সহ্য করা যায় না সেখান তুমি

ফিহা এবার জোড়ে বলে

_” আমি তোমাকে সত্যি ভালবাসতাম তাই তো কখনো বাধা দেয়নি ।

আরহান কিছু বলার আগেই পাশে থাকা ছেলেটা বলে

_” বাহ ওকে যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে আমি কে ? আমার সাথে এই দিন কি করেছো ?

ফিহা কে কিছু বলতে না দিয়ে আরহান বলে

_” অত কাহিনীর দরকার নেই আসল কথায় আসি সো তোমার প্রশ্ন আমি ভিডিও কোথায় পেলাম আর একে না কোথায় পেলাম তাই তো ? ওকে দেন বলছি সেদিন ভোরবেলায় যখন আমি বাসায় যাচ্ছিলাম তখন তোমাকে একটা হোটেল থেকে বের হতে দেখি ওতো ভরে তোমাকে ওমন একটা হোটেল থেকে বের হতে দেখে কেমন লাগলো । তোমাকে প্রশ্ন করবো তার উপায় ছিল না তাই হোটেলে খোজ নিয়ে দেখি তুমি প্রায় আসো । তোমার ব্যাপারে আমি যত টুকু জানি তোমার আব্বু আম্মু বিদেশে থাকে আর তুমি একা এখানে থাকো বিষয় কেমন লাগলো তাই না ।হোটেলে খোজ নিয়ে তোমার প্রেমিক শাওন মানে আমার পাশে যে দাড়িয়ে আছে তার সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি তোমার আর ওর বিয়ে বাড়ি থেকে ঠিক করে রেখেছে কথাটা শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি কারণ ঢাকা শহরের সবাই জানে তুমি আমার ওয়ুড বি ওয়াইফ। পরে শাওন আমাকে তোমাদের কিছু রোমান্টিক মুহুর্তের পিক দেখায় ।তোমার ব্যাপারে ওকে সব বললে তোমাদের কিছু ভিডিও আমাকে দেয় । শাওন এর সাথে কথা বলে আমার মাথায় একটা কথা আসে যদি তুমি ওকে ভালোবাসো তাহলে আমার সাথে কেনো এতদিন আছো কারণটা নে শুধু টাইমপাস সেটা আমার মনে হয় না এখন আসল কারণটা তুমি আমাদের বলবে

ফিহা রীতিমতো ঘামতে শুরু করছে জয় আসতে আসতে বলে

_” ভাই আমার মনে হয় না এত সহজে বলবে

_” না বললে ওর শাস্তি দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হবে কি বলো (শাওন এর দিকে তাকিয়ে )

শাওন চোখ সরিয়ে বলে এইসব মেয়েদের জন্য সব মেয়েদের বদনাম হয় । ঘৃনা হচ্ছে আমার নিজের প্রতি এই মেয়েকে আমি একদিন ভালোবেসেছিলাম

ফিহা এবার শাওনের সামনে যেয়ে হাত জোড় করে বলে

_” এমন বলো না আমি যা করেছি জেদের বশে করেছি কিন্ত তোমাকে ভালোবাসা কোনো মিথ্যা ছিল না । যখন আব্বু আম্মু তোমার ছবি দেখায় তখন থেকে মনে মনে তোমাকে একটা জায়গা দিয়েছি তাই তো তোমার এক কথায় আমি তোমার সাথে রাত কাটাতে চলে যাই প্লীজ আমাকে ভুল বুঝ না আমি সব বলছি কিন্ত তুমি আ

ফিহা আর কিছু বলার আগেই আরহান কানে আঙ্গুল দিয়ে বলে

_” এইসব ড্রামা পরে হবে আগে আসল কথায় আসি তুমি কি নিজে স্বীকার করবে নাকি

ফিহা কিছু বলতে যাবে শাওন ফিহার মুখ টিপে বলে

_” তুই কি নিজে থেকে সব স্বীকার করবি নাকি তোর আব্বু আম্মু কে ফোন করতে হবে

_” না না আব্বু আম্মু কে কিছু বলো না প্লীজ আমি সব বলছি (কান্না করতে করতে ) আরহান আবরার আমার ভাই কে খুন করেছে সেই জন্য আমি ওর থেকে প্রতিশোধ নিতে এসেছিলাম

আরহান বাকা হেসে বলে

_” জয় তোর মনে আছে ক্লাস ৮ এ থাকতে জিহাদ নামে আমাদের এক ফ্রেন্ড ছিল

_” হা মনে আছে পড়ালেখা তেমন পারতো না তুই আর ও নকল করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলি অন্য একটা ছেলের কাছে । জিহাদ সেই ছেলে কে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ছেলেটা মারা যায় পরে জিহাদ কে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়

_” হুম ফিহা জিহাদের বোন । এতদিন আমার সাথে ছিল শুধু মাত্র আমার ক্ষতি করার জন্য কারণ আমার আব্বু জিহাদ কে জেলে পাঠায় আর আমি,তুই মিলে সাক্ষী দিয়েছিলাম। জিহাদ কে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কয়েক বছর পর জিহাদ পালালোর চেষ্টা করার ফলে জীবন হারায় আর ওর এই নষ্টা বোন আমার সাথে থেকে আমার বিশ্বাস অর্জন করে ক্ষতি করতে চেয়েছিল কি তাই তো

শাওন ফিহার গালে চর মারে

_” ছি তোর ওই খুনি ভাইয়ের জন্য তুই এত বড় গেম খেললি আমার ভালোবাসা ,বিশ্বাস নিয়ে খেলা করলি তোর মুখ দেখতে আমার ঘৃনা লাগছে

_” বিশ্বাস করো এই জয় আর আরহান মিলে মিথ্যা কথা বলছে আমার ভাই মোটেও ওমন কিছু করেনি এই আরহান মেরেছিল সেই ছেলেকে কিন্ত ফাঁসিয়ে দিয়েছে আমার ভাই কে আমার ভাই কিচ্ছু করে নি

_” ও রিয়েলি তোর ভাই কিছু করেনি সেই প্রুফ তো পুলিশের কাছে আছে ওখানে গিয়ে না হয় বাকিটা জেনে নিস

_” তোদের কাইকে আমি ছাড়বো না দেখে নিস । ফিহা ঝড়ের মত আসার আগে সব কিছু শান্ত কিন্ত চলে যাওয়ার পর বুঝা যায় কি ক্ষতি হয়েছে

_” এই ছিনেমার কথা জেলে গিয়ে দিস যা পরি মনির মত হাওয়া খেয়ে আয়

জয় কথাটা বলে চলে যায় । আরহান দাড়িয়ে শুধু ফিহা কে দেখছে একে বলে ভালোবাসা ফিহার মত মেয়ে শাওনের পা ধরে কান্না করছে কিন্ত শাওন নিজের মন শক্ত করে দাড়িয়ে আছে ।

_”কোনো মানুষ তো চাইবে না তার ভালোবাসার মানুষ একজন চরিত্র হিন হোক তাহলে কী নিশা পাখি ও আমাকে ফিরিয়ে দেবে একবার কি দেবে না ভালো হবার সুযোগ

মনে মনে কথা গুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। একটু পর জয় পুলিশ নিয়ে আসলো । ফিহা পুলিশ দেখে ভয়ে পিছিয়ে যেতে থাকে তার আগে শাওন ধরে ফেলে

_” তোমার সকল কাজ আমি শুধরে নিতে পারতাম কিন্ত তুমি তো একটা খুনি । নিজের ভাইয়ের মতো তোমাকে আমি আর কি ভালো করবো তোমার শাস্তি তোমার ভাইয়ের মতো হবে

শাওন কথাটা বলে ফিহা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ফিহা কান্না মাখা চোখে শাওনের দিকে তাকায় কিন্ত আজ শাওন চোখ তুলে তাকালো না

_” অফিসার নিয়ে যান ওকে আর দেখবেন যেনো পালিয়ে যেতে না পারে

ফিহা চিল্লিয়ে বলে

_” আমি কি করেছি যে আমাকে নিয়ে যাবে

আরহান চুলের মুঠি ধরে বলে

_” কি করেছিস তোর মত মেয়ে কে যা বলা হয় সব কম হয়ে যায় । আমাকে মারা পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্ত আমার আব্বু কে এটা তো আমি সহ্য করবো না

_” মানে

ফ্ল্যাশ ব্যাক

নিশাত কে চেন পড়িয়ে দিয়ে আরহান আর জয় গল্প করছে তখন আরহান এর ফোনে মেসেজ আসে । আরহান তাড়াতাড়ি স্টোর রুমে চলে যায় । সেখানে কম্পিউটারে দেখতে থাকে ফিহা কি করছে

_” কাল যদি ক্যামেরা না লাগাতাম তাহলে আজ এত বড় প্রফ হাতে পেতাম না

জয় পাশ থেকে বলে উঠে

_” ফিহা এটা কি করছে ?

আরহান ভালো করে দেখে ফিহা প্রিন্সিপাল এর রুমে ঢুকে ক্যারেন্টের তার ছিঁড়ে রাখছে যাতে কেউ হাত দিতেই শকড খেয়ে মরে যায় ।

এইসব দেখে আরহান আর জয় রেগে নিজেদের হাত মুঠ করে নেয় । আরহান রেগে যেতে গেলে জয় আটকিয়ে দেয়

_” না এখন না সঠিক সময় এর জন্য অপেক্ষা কর

আরহান জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নেয় ফিহা যেতেই জয় প্রিন্সিপালের রুমে ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে সব ঠিক করে আসে আর প্রিন্সিপাল কে ও সব বলে দেয় । প্রিন্সিপালের মাধ্যমে আজ অনুষ্ঠান শেষে ফিহা কে ধরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই আরহান রেগে ফিহার খেলা শেষ করে দেয় ।

বর্তমান

আরহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

_” আমি জানলাম কি করে জানো ? তোমার কানে যে রিং আছে সেটার মাধ্যমে আমি সব শুনতে পেয়েছি । তোমাকে ওটা দেওয়ার আসল কারণ ছিল প্রুফ জোগাড় করা আর সেটা এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি যাই হোক এখন আমাকে যেতে হবে বাকিটা তুই সামলে নিস (জয়কে ইশারা করে )

আরহান যেতেই জয় কিছু বলার আগেই ফিহা সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়। শাওন ছুটে যেতে গিয়ে ও যায়নি জয় বাকা হেসে বলে

_” এত গুলো শকড এক সাথে নিতে পারেনি কেউ নিয়ে যা এই ময়লা থুক্কু মহিলা কে

মেয়ে কনেস্টবল এসে ফিহা কে নিয়ে যায় । জয় শাওনের সাথে কথা বলে চলে যায় ।

আরহান নিশাত কে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছে কিন্ত পাচ্ছে না ।

_” উফফ নিশা পাখি কোথায় গেলো ? আজ কে এত খুশির দিন আর তুমি সাথে নেই । আজ সব বাধা শেষ এখন থেকে আমি তোমার মনের মত চলব খুব ভালোবাসি তোমায় নিশা পাখি (মনে মনে )

আরহান খুঁজছে কিন্ত এত মানুষের ভিড়ে পাচ্ছে না । নিশাত এর নাম্বার থাকায় ফোন দিতে গিয়েও দেয়নি হটাৎ দেখে নিশাত আর নেহা কথা বলতে বলতে আসছে । আরহান খুশি হয়ে ওদের কাছে যায় । আরহান কে থেকে দুইজন রীতিমতো অবাক নিশাত পাশ কাটিয়ে যেতে গেলে আরহান বলে।

_” কি ব্যাপার ঈশা কই ?

_” আসলে ভাইয়া ও তো ছোট মানুষ তাই ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হইছে সন্ধ্যা হতে গেলো স্যার দের ভাষণ শুরু হইছে তাই

_” আমার সাথে দেখা করে গেলো না

নেহা কে বলতে না দিয়ে নিশাত বলে

_” আমার বোন যার তার সাথে দেখা করে না

কথাটা বলে নিশাত চলে যায় পিছন পিছন নেহা ও । আরহান হাবলার মত তাকিয়ে আছে

_” কিহলো হটাৎ এমন রেগে গেলো কেনো ? বেশি জ্বালিয়ে ফেলছি নাকি (মাথা চুলকিয়ে )


ফাংশন প্রায় শেষের দিকে নিশাত চুপচাপ বসে আছে । আর কারোর সাথে কথা বলেনি জয় আর আরহান অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু নিশাত বলে নক এড়িয়ে গেছে ।

খাওয়া দাওয়া করে সবাই বাড়ির দিকে যাবে তখনই আরহান সামনে এসে দাঁড়ায়

_” আমাদের সাথে চলো তোমাদের বাসায় পৌঁছে দি

নিশাত কড়া গলায় বলে

_” কোনো দরকার নেই আমরা একা যেতে পারবো

_” আচ্ছা তাহলে সামনে এগিয়ে দি

নিশাত কাউকে পাত্তা না দিয়ে নেহা কে নিয়ে বেরিয়ে যায় ।

আরহান যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে জয় কাধে হাত দিয়ে বলে

_” এখন থেকে তোর আসল পরীক্ষা শুরু । যে করে হোক নিশাতের মনের মত হতে হবে । কাল যেভাবে ফিহার আমাকে সব বলেছিস সেই ভাবে সব বলবি

_” হুম আমি রেগে গেলে তুই আমার ভুল ধরিয়ে দিবি

জয় আরহান এর হাত ধরে আশ্বাস দেয়।

নিশাত বাসায় যেয়ে কলিং বেল দেওয়ার আগেই দরজা খুলে যায় । হটাৎ এমন হওয়ায় নিশাত কিছুটা ভাবনায় ডুবে যায় । সব ভাবনা বাদ দিয়ে ভিতরে ঢুকতে পা দিতে চিল্লানির আওয়াজ আসে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here