আড়ালে_ভালোবাসি পর্ব ৯+১০

#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৯

কাব্য নামের সেই ভাইয়াটা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে আম্মুর সাথে উপরে চলে যায়।আমি আর সুজন ভাইয়াও কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি সাথে সাফাও আছে।সাফা আমার এক বছরের জুনিয়র মানে সাফা ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে আর আমি সেকেন্ড ইয়ারে।আর ভাগ্যক্রমে তিনজন একই কলেজে পড়ি,আমরা তিনজন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছি গাড়ির জন্য।ড্রাইভার গাড়ি বের করছে গ্যারেজ থেকে।গাড়ি গেটের কাছে আসতেই আমরা গাড়িতে উঠে বসব এমন সময় চোখ যায় ড্রাইভিং সিটে।ড্রাইভিং সিটে বসা মানুষটাকে দেখে আমি ত খুব অবাক,পাশে তাকিয়ে দেখি সুজন,সাফা দুজনেও বেশ অবাক হয়েছে।সুজন ভাইয়া অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে,,,

“ভাইয়া তুই আজ গাড়ি নিয়ে বের হলি?তুই ত বাইকেই চলাচল করিস,আজ হঠাৎ গাড়ি!বুঝলাম না কিছু।”

সাদাফের সোজাসাপটা উত্তর,,,

“ইচ্ছে হয়েছে তাই গাড়ি নিয়েছি,চুপ করে এবার গাড়িতে বস সবাই।”

সাফা এবার চিল্লিয়ে বলে উঠে,,,

“মানেহ?তুমি আমাদের কলেজে নিয়ে যাবে?”

“এত অবাক হওয়ার কী আছে?আমি কী তদের কলেজে নিয়ে যেতে পারব না নাকি?এবার বেশি কথা না বলে গাড়িতে বস।”

এতক্ষণ আমি নিরব দর্শক হয়ে সবটা দেখছিলাম।সাদাফের কথায় সাফা আর সুজন গাড়িতে উঠে।সুজন সাদাফের পাশে বসতে নিলে সাদাফ বলে উঠে।

“তুই পিছনে বস সাফার সাথে।আর সাবিহা এখানে এসে বসো।”

সাদাফের কথায় সুজন মুচকি হেঁসে পিছনে সাফার পাশে বসে।সাফা এবার সুজন ভাইয়াকে খোঁচা মেরে বলে উঠে।

“তোর কী আক্কেল নাই হুম!ভাইয়ার পাশে ভাবিকে বসতে না দিয়ে নিজে বসতে যাচ্ছিলি।”

“সরি রে কথাটা একদমই মাথায় ছিল না।”

আমি ওদের সব কথাই বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে শুনছি।কিন্তু গাড়িতে উঠছি না,এবার সাদাফ আমার দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে উঠে।

“দাঁড়িয়ে আছো কেন?তোমাকে কী দাওয়াত দিতে হবে গাড়িতে বসার জন্য!”

আমি উনার কথায় তাড়াতাড়ি মাথা দুই পাশে নেড়ে না বুঝাই।তারপর উনার পাশে গাড়িতে বসি,আমি বসতেই উনি বলেন সিট বেল্ট লাগাতে।আমি উনার কথায় সায় দিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে নেই আর উনি গাড়ি স্টার্ট দেন।

বেশ কিছুক্ষণ পর কলেজ ক্যাম্পাসে এসে উপস্থিত হই আমরা।গাড়ি থামতেই আমি সিট বেল্ট খুলতে থাকি।ততক্ষনে সুজন ভাইয়া আর সাফা গাড়ি থেকে নেমে পাশে দাঁড়িয়ে আছে।সাদাফ এবার গাড়ি থেকে মাথা বের করে সুজন ভাইয়াকে বলেন।

“তরা যা সাবিহা একটু পর আসছে।”

সাফা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুজন সাফার মুখ চেপে ধরে হেঁসে বলে উঠে।

“আচ্ছা ভাইয়া আমরা যাচ্ছি,আর বউমনি তোমার ক্লাস শেষে আমাকে কল দিও।”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলে সুজন ভাইয়া সাফাকে টেনে নিয়ে চলে যায়।আর সুজন তৃপ্তির হাসি হেঁসে মনে মনে বলে উঠে।

“ভাইয়ার আচরনে মনে হল ওদের সম্পর্কটা আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।দোয়া করি ভাইয়া যেন ভাবিকে মেনে নিয়ে সুখে সংসার করতে পারে।”

______________________________________

গাড়িতে বসে হাত কচলাচ্ছি,আর ভেবে চলেছি উনি আমাকে এভাবে আটকে কেন দিলো?কিছু বলবেন উনি?কিন্তু কী বলবেন?এই প্রশ্নটা উনার দিকে ফিরে যেই করতে যাব তখন উনিই বলে উঠেন।

“কাব্য আমার মামাত ভাই,সবসময় আমার জিনিসে হাত দেয়া অর স্বভাব।তুমি আমার স্ত্রী ত আমি চাই না কাব্য ভুল করেও তোমার সাথে কিছু করুক।তাই স্বামী হিসেবে তোমাকে একটা অনুরোধ করছি কাব্যর থেকে দূরে থাকবে।কোন কথা বলবে না অর সাথে,আর বিয়ের পর আমাদের মধ্যে যা হয়ে এসেছে তা যেন বিন্দুমাত্র কাব্য জানতে না পারে।অয় এসব জানতে পারলে আমাদের মাঝে ঝামেলা করতে পারে।”

উনি একসাথে কথাগুলো বলে থামলেন।আর আমি উনার সব কথা মন দিয়ে শুনছিলাম।উনার মুখে আমার স্ত্রী শুনে মনের ভিতরে সুখের বাতাস বয়ে গেলো।

“আমার এই অনুরোধটা কী তুমি রাখবে?”

উনার কথায় আমি হাতে ইশারায় বলি।

“এভাবে অনুরোধ কেন করছেন?আপনি আমার স্বামী আদেশ করবেন।সে অধিকার আপনার আছে তাই এভাবে অনুরোধ করবেন না।”

“বুঝি নি কী বললে!”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ব্যাগ থেকে খাতা বের করে লিখলাম।

“আপনি আমার কোন কথাই বুঝতে পারেন না।এখন মনে হচ্ছে আমার সবসময় একটা খাতা আর কলম হাতে রাখতে হবে আপনার সাথে কথা বলার জন্য।”

লিখে খাতাটা উনার দিকে এগিয়ে দিলাম তাতে উনি একটু হাসলেন।হাসিটা কেমন অস্বাভাবিক ছিল মনে হল জোর করে হেসেছেন।

“আর কয়টা দিন তারপর আর তার প্রয়োজন হবে না।”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি হকচকিয়ে উঠেন।

“মানে আর কয়টা দিন এভাবে একটু মেনেজ করো ততদিনে আমি শিখে নিব তোমার ইশারায় বলা কথাগুলো।”

বিনিময়ে আমি হাসলাম,উনি আবারও বলে উঠেন।

“বললে না ত আমার অনুরোধটা রাখবে কী না!”

আমি এবার উনার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে লিখলাম।

“আপনি এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না আমি কাব্য ভাইয়ার থেকে দূরেই থাকব।উনি কিছু জানবেন না গত কয়দিনে আমাদের মধ্যে কী হয়েছে।আর আপনি আমাকে এভাবে অনুরোধ না করে আদেশ করবেন।আপনি এভাবে অনুরোধ করলে নিজের কাছে বড্ড ছোট মনে হয় নিজেকে।”

লিখে উনার দিকে এগিয়ে দেই,লেখাটা পড়ার পর উনার ঠোঁটের হাসি প্রসারিত হয়।সেটা দেখে আমারও ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।উনি এবার আমার খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বলেন।

“যাও এবার।”

আমিও খাতাটা নিয়ে ব্যাগে ভরে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যাই।

আর সাদাফ গাড়ির সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বাঁকা হেঁসে বলে উঠে।

“মেয়েটা বড্ড বেশি বোকা,যা বুঝালাম তাই বুঝল।অবশ্য এর পিছনে আমার এমন নিখুঁত অভিনয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
কাব্যর থেকে লুকানোর জন্যই এসব নাটক করা।ভাগ্য ভালো গতকাল মামা বিকালে ফোন করে জানিয়েছে কাব্য আমাদের বাড়িতে আসছে আজ।নয়ত আমি জানতেও পারতাম না কাব্য আসছে আমাদের বাড়িতে।আর কাব্য এসে যদি দেখত আমি সাবিহার সাথে এমন খারাপ আচরন করি তবে আমি রাতারাতি ভিলেন হয়ে যেতাম।আর সেটা কাব্য নিজে করত।মিডিয়া যেমন হিরো বানিয়েছে তেমনি মিডিয়া আমাকে ভিলেনও বানিয়ে ফেলত।কোন দুঃখে যে কাব্যটা সাংবাদিক হতে গেলো।এই কাব্যর জন্য এখন এই বোবা মেয়ের সাথে স্বামী স্ত্রীর ন্যাকা অভিনয় করতে হচ্ছে।বিরক্ত লাগছে এসবে তবে যাই হোক কাব্য আর জানবে না যে আমার আর সাবিহার সম্পর্ক অস্বাভাবিক।সাবিহার মুখও কী সুন্দর করে বন্ধ করে দিলাম।
উফফ সাদাফ তোর কত্ত ট্যালেন্ট,তুই বিজনেস না করে নায়ক কেন হলি না?এমন অভিনয় করে ত সারা বাড়ি এওয়ার্ড দিয়ে ভরিয়ে ফেলতে পারতি।”

শেষের কথাটা আফসোসের সাথে বলে সাদাফ গাড়ি স্টার্ট দেয়,উদ্দেশ্য অফিস যাওয়া।

____________________________________

পাঁচটা ক্লাস করে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসি আমি আর আমার বান্ধবী তামান্না।তামান্না আমার মাথা খেয়ে ফেলছে একদম,হঠাৎ করে বিয়ে করে ফেললাম ওকে দাওয়াত দেই নি কেন?দাওয়াত না দিলেও জানাতে পারতাম।জানাই নি কেন?
এমন নানা প্রশ্ন করে মাথা খাচ্ছে বাঁচাল মেয়েটা।
আসলে আমার বিয়েটা এমনই হুট করে হয়েছে যে কাউকেই জানানো হয় নি।কবুল বলে আর রেজিস্ট্রি পেপারে সই করেই বিয়ে হয়েছে আমাদের।এর বেশি কিছু হয় নি,না হয়েছে গায়ে হলুদ আর না এসেছে কোন আত্মীয় স্বজন।কথাগুলো ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটা গাছের নিচে বসি আমি।তখন তামান্না হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠে।

“দোস্ত আইসক্রিম,খাবি?”

আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম।খুব গরম লাগছে আর এখন আইসক্রিম হলে মন্দ হবে না।

“তবে উঠ আইসক্রিম খাব।”

আমি হাতের ইশারায় বলি।

“গরম লাগছে খুব এখন রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে না।তুই বরং নিয়ে আয় আমি এখানেই আছি।”

তামান্না আমার ইশারা বুঝতে পেরে আমাকে আর জোড় করল না,তামান্না চলে যায় আইসক্রিম আনতে।আর আমি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে লক খুলছিলাম তখন পাশ থেকে হঠাৎ কেউ কানের কাছে মুখ নিয়ে চিল্লিয়ে উঠে।
ভয়ে আমার হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে যায়।আমি ভয় পেয়ে পাশে তাকিয়ে যাকে দেখি তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ।
#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১০

সাদাফ অফিসের কাজ সেরে বিকাল বেলা বাড়িতে ফিরে।ড্রয়িং রুম পেরিয়ে নিজের ঘরের যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে পিছন থেকে মিসেস রোজা বলে উঠেন।

“কী রে তুই বাড়িতে ফিরে এলি যে?কাব্যর সাথে যাস নি ঘুরতে?”

“কাব্যর সাথে ঘুরতে কেন যাব আমি!আমার কী আর কোন কাজ নেই?”

পিছন ফিরে বিরক্ত হয়ে বলে সাদাফ।মিসেস রোজা সাদাফের কথার প্রতিউওরে বলে উঠেন।

“তুই দিনদিন বড্ড বেশি বদমেজাজি হয়ে যাচ্ছিস।”

কথাটা বলে উনি সোফার উপর থেকে ফোন নিয়ে কাউকে কল লাগায়।আর সাদাফ তার মায়ের কথায় আর কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার জন্য পা বাড়ায়।তখন তার মায়ের একটা কথা শুনে থেমে যায় সাদাফ।

“সুজন,সাবিহা আর সাফাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসিস।সন্ধ্যা হয়ে যাবে একটু পর,ত তাড়াতাড়ি চলে আসিস।”

কথাটা শুনে সাদাফ বুঝতে পারে কাব্য সাবিহাকেও সাথে নিয়ে গেছে।সাদাফের মনে ভয় জাগে এই বুঝি সাবিহা কাব্যকে সবটা বলে দিবে।আর তার আসল রূপ সবাই জেনে যাবে।কথাটা ভেবেই সাদাফ পিছন ফিরে দৌড় লাগায়।
মিসেস রোজা ফোনে কথা বলার মাঝেই দেখেই সাদাফ দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।উনি সাদাফকে পিছন থেকে ডেকেও কোন সারা পায় না।

______________________________________

সাদাফ একহাতে গাড়ি চালাচ্ছে আরেক হাতে ফোন দিয়ে ক্রমশ সুজনকে কল দিচ্ছে।সুজন ফোন ধরছে না তাই বাধ্য হয়ে সাফাকে কল দেয়।একবার রিং হতেই সাফা কল রিসিভ করে বলে।

“হ্যালো ভাইয়া।”

“হ্যা তরা কই আছিস?”

“আমরা ত এখন হাতিরঝিল আছি।”

কথাটা শুনেই সাদাফ সাফাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ফোনটা কেটে দেয়।ওপাশ থেকে সাফা হ্যালো হ্যালো করতে করতে ফোন কান থেকে নামিয়ে দেখে কেটে দিয়েছে।সাফাকে এভাবে হ্যালো হ্যালো করতে দেখে সুজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।

“কী রে কী হয়েছে?”

“আরে বড় ভাইয়া ফোন দিল,জিজ্ঞেস করল কই আছি ত সেটা বলার সাথে সাথে ফোন কেটে দিল।বুঝলাম না কী হল!”

“হয়ত এমনি জানতে কল দিয়েছে।”

“হতে পারে।”

🍁

আমি আর কাব্য ভাইয়া পাশাপাশি হাতিরঝিলের ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে আছি।আমার দৃষ্টি ব্রিজের নিচে থাকা পানির মধ্যে।সাফা আর সুজন ভাইয়া আমাদের থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে থেকে ছবি তুলছে।
কলেজে তখন কাব্য ভাইয়াই এসেছিল,উনাকে দেখে আমি চমকে গেছিলাম ঠিকই।কিন্তু পাশে সুজন ভাইয়াকে দেখে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম।কাব্য ভাইয়া নাকি ঘুরতে যেতে চায় তাই কলেজে এসেছিল আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।আমি যেতে মানা করলে সবাই অনেক রিকুয়েষ্ট করে তাই আসা।সাদাফকেও বলেছিল কাব্য ভাইয়া আসার জন্য সে মানা করে দেয়।তাই আমরাই আসি,কিন্তু এখানে এসে আমার মন একদমই টিকছে না।সাদাফ আজ সকালেই মানা করেছে কাব্য ভাইয়ার সাথে বেশি কথা না বলতে।আর আমি তার সাথেই ঘুরতে এসেছি,উনি জানতে পারলে খুব রাগ করবে।কথাগুলো ভেবে খুব চিন্তা হচ্ছে আমার।
আমার ভাবনার মাঝেই কাব্য ভাইয়া হঠাৎ করে বলে উঠেন।

“তোমার কী মন খারাপ?”

কাব্য ভাইয়ার কথায় আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাই আর হাতের ইশারায় প্রশ্ব করি।

“আপনার এমন কেন মনে হল ভাইয়া!”

কাব্য ভাইয়া আমার হাতের ইশারায় বলা কথাগুলো বুঝতে পারেন।এখনও আমার বলা কথাটা উনি বুঝতে পেরে মৃদু হেঁসে বলে উঠেন।

“একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো,হাসছো না।তাই জিজ্ঞাসা করলাম যে মন খারাপ কী না!সাদাফ আসে নি বলে কী তোমার মন খারাপ?”

আমি মাথা নেড়ে না বুঝাই,কাব্য ভাইয়া আর কিছু বলে না কিন্তু একটু পর হঠাৎ করেই উনি বলে উঠেন।

“তোমাকে খুব কষ্ট দেয়,সেটা আমি জানি শুধু প্রমানের অপেক্ষা।”

কাব্য ভাইয়ার হঠাৎ এমন কথার মানে বুঝলাম না আমি,আমি উনাকে কিছু বলব তার আগেই কেউ আমার হাত টেনে ধরে।আমি পাশে তাকিয়ে দেখি সাদাফ রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।সাদাফ একবার কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে আসে সেখান থেকে।

অন্যদিকে সাদাফ যেতেই কাব্য বাঁকা হেঁসে বলে উঠে।

“মিশন সাকসেসফুল,এবার বাড়িতে গিয়ে বাকি ইপিসোড দেখব।”

_____________________________________

সাদাফ আমাকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে নিজে উঠে বসে,আমি চুপ করে বসে আছি।অনেকক্ষণ পর আমরা বাড়িতে পৌঁছাই,উনি আমাকে একই ভাবে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসে।উনি রেগে আছেন সেটা উনার চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি।হয়ত আমি ওখানে কাব্য ভাইয়ার সাথে গিয়েছি তার জন্যই এমন রেগে আছেন।কথাটা ভেবে আমিও কিছু বলি নি কারন আমি দোষ করেছি উনার কথা শুনি নি।

উনি ঘরে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।আমি পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে দাঁড়িয়ে রই।উনি এবার দরজা বন্ধ করে আমার সামনে এসে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
আমি গালে হাত দিয়ে চোখে পানি নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি এবার আমার গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।

“তোকে সকালে সুন্দর করে বলেছি কাব্যর থেকে দূরে থাকতে।তুই দূরে থাকিস নি,ড্যাং ড্যাং করে ঘুরতে চলে গেছিস ঐ কাব্যর সাথে।ছেলেদের সঙ্গ তোর খুব ভালো লাগে হ্যাঁ!”

উনি এবার আমার গাল ছেড়ে দিয়ে পাশে থাকা ফুলদানিটা মাটিতে ফেলে ভেঙ্গে দেয়।আমি দুই পা পিছিয়ে যাই,উনি নিচ থেকে ভাঙ্গা একটা টুকরো তুলে আমার সামনে এসে গলায় হালকা চেপে ধরে।আমি হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে ফেলি,উনি ধমকে বলে উঠে।

“এই তরে বলি নাই বিয়ের পর তোর সাথে কী করেছি না করেছি সেটা কাব্যকে না বলতে!বলেছি তকে কথাটা?”

আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই মাথা নাড়াই,উনি তখন ফুলদানির ভাঙ্গা অংশটা গলায় আরেকটু চেপে ধরে।আমার চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে তখন।উনি রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“তারপরও তুই কাব্যকে সবটা বলে দিয়েছিস,তোর সাহস হল কী করে এসব কাব্যকে জানানোর!
কাব্য যাতে এসব না জানে তার জন্য তকে মেনে নেয়ার নাটক করলাম তোর সাথে।আর সেই তুই কী না কাব্যকে সবটা বলে দিলি?আজ তকে মেরেই ফেলব আমি।আমার মানসম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলি তুই,তোর বাঁচার কোন অধিকার নাই।”

উনি সেই ভাঙ্গা অংশটা আরেকটু চেপে ধরতে গেলে আমি উনার হাত ধরে ফেলি।আর উনার হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে ঠাস করে উনার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেই।
এতক্ষণ নিজের দোষ ভেবে চুপ করে ছিলাম।কিন্তু উনি ত,আমি কিছু ভাবতে পারছি না।আমার পাগল পাগল লাগছে,উনি কী বলল এসব!আমার সাথে নাটক করেছে,আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছেন উনি।কথাগুলো মাথায় ঘুরে চলছে প্রতিনিয়ত।আমার শরীর কাঁপছে রাগে,আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।অতিরিক্ত রাগ হচ্ছে আমার,তার সাথে বুকের ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে।
উনি আমার সাথে নাটক করেছে,আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছে কথাটা আবারও মাথায় আসলে আমি উনার কাছে গিয়ে রেগে আবারও উনার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেই।আমার এখন রেগে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে উনাকে,,,

“আপনি একটা অমানুষ,আপনার মত মানুষকে ২য় সুযোগ দিয়ে খুব বড় ভুল করেছি আমি।আপনি আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছেন।নিজের দোষ ঢেকে হিরো সেজে থাকার জন্য আমার সাথে নাটক করেছেন।আপনি যদি আমাকে এমনিই একবার বলতেন কাব্য ভাইয়াকে এসব না বলতে আমি বলতাম না।এমন নাটক করার কোন প্রয়োজন ছিল না।আপনাকে আমি কখনও ক্ষমা করব না,কখনও না।”

এমন হাজারও কথা বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি বলতে পারছি না।কেন আল্লাহ কেন তুমি আমার কথা বলার ক্ষমতা কেড়ে নিলা তুমি।কথাগুলো ভেবেই হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।

আর সাদাফ গালে হাত দিয়ে রেগে তাকিয়ে আছে সাবিহার দিকে।সাদাফ সাবিহার দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে তখন হাত তালির শব্দে পিছন ফিরে সাদাফ।তাকিয়ে দেখে হাতে ক্যামেরা নিয়ে কাব্য দাঁড়িয়ে।

#চলবে,,,
#চলবে,,,

(আমাকে কেউ বকো না আমি কিছু করি নাই কিন্তু,সব সাদাফ করছে😜।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here