#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_২৫||
আরহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_” এই মেয়ে কখনো সোজা হবে না।এত ঘাড় তেড়া
আরহান দরজার কাছে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে।নিশাতের কোনো সাড়া না পেয়ে বলে
_” নিশা আমি জানি তুমি এখানে আছো।দরজা খুলো নাহলে আজ তোমার কপালে অনেক দুঃখ আছে। নিশা ওপেন দা ডর!
আরহান আরো কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে সরে আছে। একটু পিছিয়ে জোড়ে ধাক্কা দেওয়ার আগে নিশাত দরজা খুলে ।আরহান টাল সামলাতে না পেরে নিশাতকে নিয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।
এভাবে পড়াতে নিশাত অনেকটা ব্যাথা পায়।আরহান সে তো আরামে নিশাতের উপর আছে।নিশাত ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলে আরহানের হুস আসে।নিজে উঠে নিশাত কে উঠতে বলে।নিশাত কোনো মতে উঠে দাড়িয়ে আরহানের দিকে তাকায়।
চোখে পানি চিকচিক করছে ব্যাথাটা জড়সড় লেগেছে।আরহান বাকা হেসে বলে
_” ভালোই ভালোই খাবারটা খেলে এই অবস্থা হতো না কিন্ত না নিজের জেদ তো দেখাতে হবে।এত জেদ কই থেকে আসে
নিশাত ব্যাথার জন্য কান্না করার মতো অবস্থা তবুও দাতেদাত চেপে বলে
_” আমার জেদ থাকুক আর না থাকুক সেটা তোমাকে দেখতে হবে না।নিজের লিমিটে থাকো।ওভাবে দৌড়ে আসার কি দরকার নিজেকে কি ফিল্মের হিরো মনে করো।
_” ফিল্মের হিরো মনে করার দরকার নেই ।আমি এমনি ফিল্মের হিরোর মত দেখতে
ভাব নিয়ে কথাটা বলে। নিশাত একটু এগিয়ে গিয়ে পানির গ্লাস এনে আরহানের মুখে ছুড়ে মেরে বলে
_” এখন একদম ঠিক লাগছে।লাইক এ জোকার
নিশাত পাশ কেটে চলে যেতে গেলে আরহান হাত ধরে দেয়ালে চেপে ধরে। নিশাত ছাড়ার জন্য চেষ্টা করছে কিন্ত আরহান চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।
_” খুব সাহস! অনেক সাহস দিয়ে ফেলেছি তাই না? নো প্রব্লেম আই উইল হ্যান্ডেল ইট!
_” সাহস কেউ দেয় না সেটা ভিতর থেকে আসে।আর আমার যে বরাবরই সাহস বেশি সেটা তো তোমার অজানা নয়।এখন ছাড়ো আমাকে।লাগছে আমার
নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে নিশাত।আরহান আরো জোড়ে চেপে।নিশাতের খুব কান্না পাচ্ছে একে তো মাজায় ব্যাথা পেয়েছে তার উপর এভাবে হাত ধরাতে খুব লাগছে।
_” লাগছে তাইনা! খুব লাগছে।লাগুক আমার ও লেগেছিল যখন তুমি আমাদের ভালোবাসার চিন্হ কে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে।সেদিন যদি জয় একটু দেরি করে যেতো তাহলে কত কিছু হয়ে যেতো।
নিশাত অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো।আরহানের কথায় নিশাত আরহানের দিকে তাকায়।
আরহান চিৎকার করে বলে
_” হা জয় এতদিনের প্রতিটা কথা আমাকে বলেছে।সব জানি আমি।তুমি এতটা নিচে নেমে গিয়েছ যে নিজের সন্তান কে মেরে ফেলতে একবারও ভাবলে না ছি।রাগটা আমার উপর তাই বলে আমার সন্তান কে
আরহান নিশাতকে ধাক্কা দিয়ে অন্য দিকে ফিরে যায় । নিশাত নিরবে কান্না করছে
_” তুমি এতদিনে আমাকে চিনলে না।সবাই তোমাকে যা বুঝিয়েছে তুমি তাই বুঝে নিজের মনের মত কাহিনী বানিয়ে এত সব করলে।তুমি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভালোই করছিলে মরে গেলে ভালো হতো একলিস্ট তোমার ঘৃনা নিয়ে তো বাঁচতে হতো না।এত ঘৃনা আমার প্রতি।একটু বিশ্বাস নেই নিজের ভালোবাসার প্রতি
আরহান কথাটা বলে চলে যায়।নিশাত এবার চিৎকার করে বলে
_” কাকে বিশ্বাস করবো তোমাকে।যে মেয়েদের মন নিয়ে খেলতে পছন্দ করে।আর মারার কথা বলছ সেদিন আমি ধাক্কা দিয়েছিলাম কিন্ত তোমার হাত ধরেছিলাম তুমি ছেড়ে দিয়েছিলে। আমি আমার বাচ্চাকে মারতে চাইনি আমি নিজে বুঝতে পারছিলাম না
নিশাত পিছনে তাকিয়ে দেখে আরহান নেই। ওখানে বসে কান্না করতে থাকে।
আরহানের একটা ফোন আসাতে আরহান বাইরে যায়। কথা বলা শেষ করে এসে দেখে নিশাত ঐভাবে বসে কান্না করছে আর কিসব বিড়বিড় করে বলছে ।
আরহানের খুব ইচ্ছা করছে নিশাতকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি মুছে দিতে কিন্ত মাঝে মাঝে কাছে আসার জন্য একটু দূরে যেতে হয়।
আরহান ওখানেই দাড়িয়ে ধমক দিয়ে বলে
_” এখানে বসে নাটক না করে খেতে চলো।আমার বাচ্চা কি না খেয়ে থাকবে
নিশাত চোখ মুখ মুছে উঠে দাঁড়াতেই আরহান নিশাতকে কলে তুলে নেয়। নিশাত চোখ দুটো বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।
আরহানের কোনো হেলদোল নেই সে সামনের দিকে হাটা ধরছে। নিশাত হা করে দেখছে আগের থেকে কালো হয়ে গেছে।পারফেক্ট সব কিছু চাই যার সে আজ এত অগোছালো। চুল গুলো উস্কখুস্ক হয়ে আছে।মুখে দাড়ি হয়েছে আগের থেকে অনেক গাঢ়।
আরহান নিশাতকে টেবিলে বসিয়ে মুখে খাবার পুড়ে দেয়।নিশাত হা করে আছে।আরহান চোখ রাঙিয়ে খেতে বলতে নিশাত চুপচাপ নিজে হাতে খেয়ে নেয়।
নিশাতের খাওয়া শেষ হলে আরহান ব্যাথার স্প্রে করে ।রেস্ট নিতে বলে চলে যায়।
আরহান একটা বাড়িতে সামনে এসে গাড়ি থামাতেই দুর থেকে জয়কে দেখা যাচ্ছে । আরহান মুচকি হেসে ভিতর গিয়ে বসে ।
জয় চিন্তিত হয়ে বলে
_”কেউ দেখেনি তো তোকে ?
আরহান মুখের মাস্ক খুলতে খুলতে বলে
_” না মাস্ক পড়া ছিল তো কেউ দেখতে পারেনি।আর দেখলেও কি
_” হুম বুঝলাম নিশাতের কি খবর?রেগে উল্টা পাল্টা বলিস নি তো? সব বুঝিয়ে বলেছিস
আরহান বাকা হেসে বলে
_” নিশাত ঠান্ডা মাথায় শুনার মত মেয়ে?ওকে ভালো ভাবে কোনো কিছু বলা যায়। ও যা করেছে তার শাস্তি ওকে পেতে হবে
_” দেখ তুই নিজে ভেবে দেখ নিশাতের তখন মাথা ঠিক ছিল না সবাই যা বলছে তাই বুঝে
_” চুপ তুই একদম কথা বলবি না। ও আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে পারতো না যে ঈশার সাথে কি হইছে।ওর বোকামির জন্য আমাকে ঈশা আজ আমাদের মধ্যে নেই।সব কিছুর জন্য নিশা দায়ী।আমাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।আমার ভালোবাসা কে খুন করেছে
_” দেখ তুই ঠান্ডা মাথায় কাজ কর নিশাত
_” আমি ঠান্ডা মাথায় কাজ করছি ওকে শাস্তি পেতেই হবে।সেদিন যদি আমি ওর হাত না ছাড়তাম তাহলে দুইজনে এক সাথে মারা যেতাম।ওর জন্য সব করেছি আর ও আমাকে এখনো ভুল বুঝছে।থাক ওর মতো ওকে আমার ভালোবাসা বুঝানোর কোনো ইচ্ছা নেই।ওর জীবন বাঁচাতে প্ল্যান করে আবার ওকে বিয়ে করে এখানে আনছি।
_” আচ্ছা ঠান্ডা হো এখন বল তোর শরীর কেমন আছে ।সেদিন একটুর জন্য তোকে ফিরে পেয়েছি।সেদিন তুই ব্রিজের উপর থেকে পড়ার কথা শুনে আমরা ছুটে যাই।সবাই নিশাতকে নিয়ে হসপিটালে যায় তখন আমি লোক লাগিয়ে তোকে খুজে বের করি।একটু দেরি হলে কি হতো আল্লাহ জানে।তোর সেন্স ফেরার পর তোর কথা মত কাউকে বলিনি তোর বাচার কথা।তোর সুস্থ হওয়া পর্যন্ত নিশাতের খেয়াল রাখছিলাম।
আরহান সোফা ছেড়ে জয়কে জড়িয়ে ধরে বলে
_” তুই আমার নিজের ভাইয়ের মতো কাজ করলি। তুই না থাকলে আজ হয়তো আমি এখানে থাকতে পারতাম না আর না আমার স্ত্রী সন্তান থাকতো।খুব তাড়াতাড়ি আসল অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে। আরহান আবরার কে খুন করার চেষ্টা করেছে এত সহজে তো ছেড়ে দেবো না।তাদের দ্বিগুণ কষ্ট ফেরত দেবো সে যেই হোক না কেনো
আরহানের চোখ মুখ লাল হয়ে যায় মুহুর্তেই।জয় চুপ করে বসে আছে হটাৎ জয়ের ফোন বেজে উঠে
জয় ধরতেই ওপাশ থেকে কথা শুনে জয় আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে
_” সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে
_” তাহলে কার জন্য অপেক্ষা করছিস চল এখুনি
জয় কে আর কিছু বলতে না দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায় পিছন পিছন জয় ও যায়।
নিশাত ব্যাথার জন্য উঠতে পারছে না ।অনেকটা ব্যাথা পেয়েছে ।এই বাড়িতে কেউ নেই যাকে নিশাত বলবে ।যাওয়ার সময় আরহান দরজা আটকিয়ে গেছে ।
নিশাত পানি খাওয়ার জন্য পাশে হাত দিতে দেখে হট ওয়াটার ব্যাগ রাখা ।নিশাত সেটা হাতে নিয়ে মাজায় দেয়। এখন একটু ভালো লাগছে
নিশাত শুয়ে শুয়ে ঘরটার দিকে চোখ বুলাচ্ছে
_” আচ্ছা ওই বাড়িতে না গিয়ে এখানে আসলো কেনো?আব্বু আম্মু তো আমাকে একবার বলল না আরহান বেচে আছে নাকি ওরা জানেনা।এই সব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে আমাকে ?
নিশাত এইসব ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে।কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পরে।
আরহান সিগারেট খাচ্ছে।অলরেডী এক প্যাকেট শেষ করে ফেলছে।পাশে জয় একের পর এক কাউকে ফোন করছে ।সিগারেট এর শেষ টান দিয়ে আরেকটা ধরানোর আগেই জয় বলে
_”আর কত খাবি? আমরা যতটা সহজ ভাবছিলাম তত সহজ না।আগে থেকে কেউ জানত সিসিটিভি চেক করা হবে তাই তো নষ্ট করে দিয়েছে।
আরহান চোখ লাল করে বলে
_” যতই চালাক হোক না কেনো আমার হাত থেকে নিস্তার নেই।i will kill them । আমার জীবনটা যারা নষ্ট করে দিয়েছে তাদের সবাইকে কঠিন থেকে কঠিন মৃত্যু দেবো
গাড়ি ড্রাইভ করে জয়কে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে।আরহান নিজের বাসায় দিকে রওনা দেয়। রাস্তায় নিশাতের জন্য ওষুধ কিনে নেয় ।
বাসায় এসে আরহান রুমে গিয়ে দেখে নিশাত গুটি মেরে বসে শুয়ে আছে ।এসির পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে আরহান নিশাতের মাথার কাছে বসলো।
নিশাত এর চোখের কোণায় পানি জমে দাগ হয়ে আছে।আরহান আলতো করে ছুয়ে দেয়।চোখের দুই পাতায় চুমু খায়।
_” একটু যদি বিশ্বাস করতে তাহলে আজ গল্প এমন হতো না।তুমি তো আমাকে ভালোবেসেছিলে কেমন ভালোবাসা তোমার যে অল্পতেই ভেঙ্গে গেলো।আমি আর তোমার পিছন ঘুরবো না তবে তোমাকে মুক্তিও দেবো না।
আরহান
নিশাত পিটপিট করে চোখ খুলতেই আরহান সোজা হয়ে বসে পড়ে।গম্ভীর কণ্ঠে বলে
_”আমার বাচ্চা কে এতক্ষণ না খাইয়ে রাখছো কোন সাহসে? এই অধিকার তোমায় কে দিয়েছে
নিশাত এর ব্যাথা অনেকটা কমে গেছে।উঠে ওয়াশরুমে যায়।আরহান ধরতে গেলে নিশাত হাত দিয়ে বলে
_”কোনো খুনীর স্পর্শ আমার চাই না
আরহানের হাত মুঠ হয়ে যায়।নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে খাবার আনতে যায়।
নিশাত বেরিয়ে দেখে আরহান নেই।তোয়ালে ভালো করে জড়িয়ে আলমারির কাছে যেতেই আরহান দরজা খুলে রুমে ঢুকে পড়ে।
নিশাত ড্রেস নিয়ে তাকাতেই আরহান কে দেখে করে চিৎকার দেয় ।
_” অসভ্য লোক একটা
কথাটা বলে নিশাত বাথরুমে চলে যায়।আরহান ওখানেই দাড়িয়ে হাসছে ।
নিশাত বাথরুমে গিয়ে আরহানকে বকতে লাগলো।
নিশাত রেডী হয়ে বের হয়ে আরহান কে বলে
_” দরজা লক করে আশা যায় না।অসভ্য লোক একটা যখন তখন রুমে চলে আসবে
_”দোষ তো তোমার দরজা বন্ধ করে ঢুকতে পারনি? আর এমন করছো যেনো প্রথমবার
আরহান মাথা চুলকিয়ে কথা বলে।নিশাত বোতল ফেলে মারে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই মারছে।
আরহান বাচার জন্য বালিশ ধরে রাখছে।নিশাত মারতে মারতে আরহানের কাছে যেতে গেলে পা বেঁধে পড়ে যেতে নিলে
চলবে #আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_২৬||
নিশাত পড়ে যেতে নিলে নিজেকে সামলে নেয়। আরহান এক ছুটে নিশাতের কাছে এসে ধমকের শুরে বলে
_”এত লাফালাফি করার কি দরকার।তুমি কি বাচ্চা নাকি? আর একটু হলে কি হতে যাচ্ছিল তোমার কোনো আইডিয়া আছে ইউ স্টুপিড!
নিশাত কিছুটা ভয় পেয়ে ছিল।আরহানের এমন কথায় ভয় উধাও হয়ে গিয়ে বলে
_”আমি স্টুপিড হলে তুমি কি?অসভ্য একটা লোক সব তোমার জন্য হইছে। নক করে ঢুকতে কি হতো।নিলজ্জের মত যখন খুশি যেখানে খুশি চলে আসবে।দূরে যান তো
আরহান একইভাবে দাড়িয়ে বলে
_”এত দিন তো দূরে ছিলাম আর পারছি না।আর শুনো আমি তোমার জন্য আছি না আমি আমার সন্তানের জন্য।নাহলে তোমার সাথে থাকার কোনো ইচ্ছা আমার নেই যে নিজের সন্তান কে মারতে চায়।
শেষের কথাটা আরহান চোখ লাল করে বলে।নিশাতের কাছে এই কথাটা যেনো অসহ্য লাগছে। বুকে তীরের মত লাগলো।
_”সত্যি কি আমি এত খারাপ যে নিজের সন্তান যে মারতে চাইবো?
নিশাত আনমনে কথাটা বলে।আরহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে।নিশাত চোখ সরিয়ে বলে
_”আমার খুদা লাগছে আর আমার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে আসবেন না।আর যাই হোক নিজের বোনের খুনীর মুখ দেখতেও চাই না
আরহান টেবিলে লাথি দিয়ে চিৎকার করে বলে
_”এক কথা আর কতো বার বলবে?লজ্জা আমার করছে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি।যে আমাকে বুঝেনি,আমার প্রতি কোনো বিশ্বাস নেই সে আমাকে কি ভালোবাসবে।ভালোবাসা খুব ছোট শব্দ কিন্ত এর গভীরতা অনেক সেটা যারা সত্যি ভালোবাসে তারাই বুঝবে।কাকে কি বলছি ? যার কাছে নিজের বোনের কোনো দাম নেই।
নিশাত অবাক চোখে তাকায় ।আরহান দেয়ালে ঘুষি দিয়ে বলে
_”ঈশা মারা গেছে শুধু তোমার জন্য। ইয়েস তোমার বোকামির জন্য।না তুমি রাগ করে যেতে না আমি তোমার পিছন যেতাম আর না হসপিটালে আগুন লাগতো।একবারও কি খোজ নেওয়ার চেষ্টা করছো আগুন কিভাবে লেগেছিল?তুমি কেনো নিবে তুমি তো নিজের এগো নিয়ে থাকো।বোন বোন করে তো মাথা খারাপ করে দিয়েছিলে একবারও কি ভেবে দেখেছো শুধু ঈশার কেবিনে কেনো আগুন লাগলো?অন্য কেবিনে লেগেছে কিন্ত তেমন একটা না।খোজ নিয়েছো?ঈশার লাশ মাটি দেওয়া হইছে কি না জানো?
আরহানের কথায় নিশাত ভাবতে থাকে
_”সত্যি তো আমি তো জানিনা ঈসাকে কোথায় মাটি দেওয়া হইছে।তাহলে আরহান সব জানে (মনে মনে)
আরহান ধমক দিয়ে বলে
_”কিহলো বলো উত্তর নেই ?থাকবে কি করে তুমি তো একটা সেলফিশ।নিজেকে ছাড়া কাউকে চিনো না।এক বছর থেকে তুমি আমাকে এই চিনছো?এই তোমার ভালোবাসা ছি
নিশাত আরহানের সামনে হাত জোড় করে বলে
_”প্লীজ আমাকে ইসুর ব্যাপারে বলো আমি সত্যি ভুল করছি ।শেষ বারের মত একটা বারের জন্য দেখে পারলাম না। আম্মু তো বলেছিল আমার সেন্স ছিল না তখন মাটি দেওয়া হইছে তাহলে কি বেচে আছে আমার ঈশা বলো না
নিশাত কান্না করতে করতে আরহানের পায়ের কাছে বসে পড়ে।আরহান দুই হাত ধরে নিশাতকে তুলে বলে
_”ঈসাকে যারা খুন করেছে আমি তাদের শাস্তি দেবো।এত ভয়ংকর মৃত্যু দেবো যে তাদের রুহ কেপে উঠবে।
নিশাত অবাক হয়ে বলে
_”খুন ?আমার ঈশা কে কিসের জন্য খুন করতে যাবে?তুমি তো ঈশার
নিশাত কে বলতে না দিয়ে আরহান বলে
_”সময় আসলে সব জানতে পারবে।বিশ্বাস তো আমার উপর নেই তবে বলবো শেষ একবার বিশ্বাস করো।
আরহান নিশাতের হাতে একটা ফোন দেয়।নিশাত ফোনটা হাতে নিয়ে বলে
_”এটা তো ঈশার ফোন।তুমি পেলে কোথায়?এটা তো ঐবাড়ি ছিল তুমি
_”চেক করে দেখো
কথাটা বলে আরহান বেরিয়ে যায় নিশাত ফোনটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে নিশাত।চোখে মুখে অনুতপ্তের ছাফ।আকাশের প্রাণে চেয়ে আছে নিরবে চোখের পানি ফেলছে নিশাত ।
_”এত বড় ভুল আমি কি করে করলাম?এই ভুলের কোনো ক্ষমা নেই নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে আমার (মনে মনে)
আকাশ পানে চেয়ে কথাগুলো ভাবছে নিশাত।পিছন থেকে কারোর গম্ভীর কণ্ঠে কেপে উঠে নিশাত।
পিছনে তাকিয়ে দেখে আরহান পকেটে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ।
আরহান আবার বলে
_”কিহলো ? খাবার না খেয়ে এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো ?দেখো তোমার ডায়েট ফায়েট করতে ইচ্ছা হলে করবে কিন্ত আমার বাচ্চা কে না খাইয়ে না।আমার বাচ্চার কিছু হলে আমি তোমাকে
বাকিটা বলার আগেই নিশাত বলে
_”তাহলে তুমি ঈশার হেল্প করছিলে?
আরহান কোনো জবাব দেয় না নিশাত আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে
_”ঈশা কে কেউ ব্ল্যাকমেইল করছিলো ?সেটা তুমি আমাকে কেনো বলনি আর ঈশা বা কেনো আমাকে মিথ্যা বলেছিলো ?
আরহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_” হুম ঈশা কাউকে কিছু বলেনি।একদিন অফিসে থাকাকালীন আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন করে বলে ঈশা কে নাকি হোটেলে যেতে দেখেছে সেটা শুনে আমি বাসায় ফোন করে জানতে পারি ঈশা নেই।অনেকটা অবাক হই ঈশা তো এমন মেয়ে না।অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সোজা হোটেলে যাই গিয়ে দেখি ঈশা কান্না করছে আর একটা ছেলে বসে আছে। ঈশার কাছ থেকে জানতে পারলাম ছেলেটা নাকি ওর পিক পেয়ে সেটা খারাপ বানিয়ে ছাড়তে চাইছে ঈশা বারণ করে তখন ছেলেটা ঈসাকে হোটেলে দেখা করতে বলে। সেখানে ছেলেটাকে মার ধোর করে বাসায় নিয়ে আসি।একদিন রাতে বসে কাজ করছিলাম তখন ঈশা আমাকে ফোন করে বলে ওই ছেলেটা আবার ব্ল্যাকমেইল করছে ।ঈশা অনেক ভয় পেয়েছিল তুমি জানতে পারলে যদি ওকে ভুল বুঝো তাই কাউকে বলতে বারণ করছিলো। আমি ভেবেছিলাম তোমাকে বলবো কিন্ত সময় পাইনি।আমার লোক লাগিয়ে ছেলেটার কাছ থেকে সব ছবি নিয়ে ডিলেট করে দি।ছেলেটাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দি।তার পরে ঈশা কেনো সুইসাইড এর চেষ্টা করলো এটা আমার মাথায় আসছে না।
নিশাত জোড়ে জোড়ে কান্না করে দেয়।আরহান এতক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছিলো হটাৎ নিশাতের এমন কান্না নিশাতের দিকে ঘুরে বলে
_”তুমি যদি একটু বিশ্বাস রাখতে আমার এর নিজের বোনের উপর তাহলে আজ ঈশা আমাদের মধ্যে থাকতো।ঈশা কে আমি নিজের বোনের মতো দেখেছি
নিশাত কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না আরহান আবার বলতে শুরু করে
_”তোমাকে এখানে নতুন করে বিয়ে করে আনার কারণ তুমি আর আমার বেবি যাতে সেফ থাকো।সেদিন আমি
আরহান কথাটা শেষ করতে পারলো না তার আগে
আরহানের ফোন আসে। আরহান ফোন হাতে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে থাকে।
নিশাত এর এখন নিজের গালে কয়েকটা চর মারতে ইচ্ছা করছে এত বড় ভুল কি করে করলো।
_”সত্যি আমি একটা গাধা।নিজের ভালোবাসা কে চিনতে পারলাম না আর না নিজের বোনের কষ্ট বুঝতে পারলাম।ইসু আমাকে মাপ করে দে তোর আপি খুব খারাপ খুব খুব।আল্লাহ আমার ইসু কে ফিরিয়ে দাও
নিশাত কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে।আরহান কথা বলে নিশাতের কাছে এসে দেখে নিশাত মাটিতে শুয়ে আছে ।
নিশাত কে কোলে তুলে রুমে নিয়ে শুয়ে দেয়।
_”কিহলো আবার ? উফফ কি করবো আমি ?
আরহান ডক্টর কে ফোন দিয়ে নিশাতের পাশে বসে ।
_”কেনো এভাবে আমাকে মারছো?পারছি না আমি।নিজের ভালোবাসার মানুষের চোখে ঘৃনা দেখার চেয়ে মরে গেলে ভালো হতো।খুব ভালোবাসি তোমাকে কিছু হতে দেবো না কিছু না ।
ডোর বেল বাজাতেই আরহান দৌড়ে দরজা খুলে।
ডক্টর নিশাতকে দেখছে পাশে নিশাতের এক হাত ধরে বসে আছে আরহান।
ডক্টর আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে
_”উনার এতো চাপ কিসের?অতিরিক্ত চাপে আর শরীর দুর্বল থাকার কারণে সেন্স হারিয়ে ফেলেছে। ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি পারলে স্যালাইন দেওয়ার ব্যাবসা করেন।উনাকে একটু টেনশন ফ্রী রাখার চেষ্টা করুন নাহলে মা বাচ্চা দুইজনের ক্ষতি হতে পারে ।বার বার সেন্স হারানো ভালো লক্ষণ না
আরহান মাথা নিচু করে বলে।
_”এবার থেকে খেয়াল রাখবো ।
ডক্টর যেতেই আরহান নিশাতের পাশে এসে জড়িয়ে ধরে ।
একটু পর নিশাত পিটপিট করে চোখ খুলে।পাশে আরহানকে দেখে তাকিয়ে আছে ।
কাপাকাপা কণ্ঠে বলে।
_” আ আ আ র র র হা হান
নিশাতের ডাকে আরহান নিশাতের গলা থেকে মুখ সরিয়ে তাকায় ।অস্থিয়ে হয়ে বলে
_”তুমি ঠিক আছো তো ? কষ্ট হচ্ছে?কেমন লাগছে এখন
নিশাত একবার চোখ বন্ধ করে আস্তে বলে
_”পানি খাবো
আরহান তাড়াতাড়ি নিশাতকে পানি দেয়। পানি খেয়ে নিশাত চোখ বন্ধ করে রাখে ।আরহান কে অনেক কিছু বলতে চায় কিন্ত শরীর দুর্বলের জন্য কিছু বলতে পারছে না ।
আরহান খাবার এনে নিশাত কে খাইয়ে দেয়।মুখ মুছে দিয়ে বলে
_”তুমি একটু ঘুমাও আমি যাবো আর আসবো।একা থাকতে পারবে তো ?
নিশাত চোখের পলক ফেলে বুঝিয়ে দেয় পারবে।আরহান ছোট করে কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায়।
আরহান যেতেই নিশাত ভাবতে থাকে কিভাবে আরহানের কাছে মাপ চাইবে।ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
আরহান গাড়ি থেকে নেমে একটা পার্কের বাইরে দাড়ায়।ভিতরে যাবে কি না ভাবতে ভাবতে জয়ের ফোন। ফোনে কথা বলতে বলতে ভিতরে যায়।
দূর থেকে জয় হাত নাড়ছে।জয়ের সাথে আরো কিছু লোক আছে ।
আরহানে সেখানে গিয়ে বলে
_”খবর পেয়েছো? কোথায় আছে এখন?
জয়ের পাশে থাকা লোকটা বলে
_”এক মাস আগে যশোরে একটা টিকিট কেটেছে কিন্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক গাজীপুর দেখাচ্ছে ।
আরহান বাকা হেসে বলে
_”নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করে কিন্ত আরহান আবরার এর সাথে পাঙা নেওয়া ঠিক হয়নি ।এর ফল হারে হারে পাবে ।জয় ?
জয় বুঝতে পেরে বলে
_”তুই যাবি নাকি আমি যাবো ?
আরহান চিন্তিত হয়ে বলে
_”যেতে তো আমি চেয়েছিলাম কিন্ত নিশাতের শরীর ভালো না এখন ওকে একা রেখে যেতে চাইছি না।অবশ্যই আমার জন্য ওর শরীর খারাপ দেখি কি করি।তোকে আমি কালকে সকালে জানাচ্ছি ।
আরহান আরো কিছুক্ষন কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
নিশাত এর ঘুম ভেঙেছে অনেকক্ষণ হলো।চুপচাপ বসে আরহানের অপেক্ষা করছে ।
রাত হতে গেলো এখনো আরহান আসেনি। এইদিকে নিশাতের খুদা লেগেছে।উঠতে ও পারছে না।
রাত ৮টায় আরহান বাসায় এসে তাড়াতাড়ি নিশাতকে খাইয়ে দেয়। দেখে মনে হচ্ছে খুব তারায় আছে ।নিশাত চুপচাপ খাচ্ছে ।
খাওয়া শেষে দুটো নার্স কে এনে স্যালাইন এর ব্যাবস্থা করে ।নিশাত শুধু অসহায় মুখ করে আরহানের দিকে তাকিয়ে আছে ।
আরহান পাশে দাড়িয়ে সবটা দেখছে যেই ক্যানেল লাগাতে যাবে সাথে সাথে নিশাত চিৎকার করে উঠে
_” বাঁচাও আমাকে মেরে ফেললো।আমি লাগাবো না
নার্স দুটো আরহানের দিকে তাকিয়ে আছে ।আরহান কাছে গিয়ে বলে
_”কি হচ্ছে চিৎকার করছো কেনো? দেখো এটা তোমার শরীর ভালো রাখার জন্য।না খেয়ে তো নিজের আর আমার বাচ্চার ক্ষতি করছো ।আমি কিন্ত আমার বাচ্চার কষ্ট সহ্য করবো না ।
আরহান রেগে কথাগুলো বলে।নিশাত বিড়বিড় করে বলে
_”শুধু বাচ্চা আর বাচ্চা।বাচ্চার মা কে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই
আরহান ভ্রু কুচকে বলে
_”কিছু বললে ?
নিশাত ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়। আরহান চোখে হাত দিয়ে রাখে আর নার্স কে বলে স্যালাইন লাগাতে।
নার্স লাগিয়ে চলে গেলে আরহান নিজের হাত সরিয়ে নেয়। নিশাত চোখ খুলে বলে
_”কিহলো?
_”কিছু না।
আরহান গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে।নিশাত অপলক নয়নে আরহান কে দেখছে।আরহান ঘুমিয়ে যায়।সারাদিন ক্লান্ত থাকায় এক পলকে ঘুম চলে আসে।
নিশাত স্যালাইনের দিকে নজর না সে তো আরহান কে দেখতে ব্যাস্ত।কত দিন পর তার প্রিয় মানুষকে এভাবে দেখছে ।
রাত ১০টা
নিশাত এখনো আরহান কে দেখছে আর আরহান সে তো ঘুমিয়ে আছে ।হটাৎ ডর বেল বেজে উঠে
_”এত রাতে কে এলো? আমি তো উঠতে পারবো না
নিশাত আরহান কে ডাকতে চায় না কিন্তু এত বার বাজার জন্য ডাকতে বাধ্য হলো।আরহান তো ঘুমিয়ে আছে ।
নিশাত এক হাত বাড়িয়ে গ্লাস নেয় ।গ্লাসের পানি টুকু জোড়ে আরহানের শরীরে ফেলে ।
আরহান ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।বুঝার চেষ্টা করে কি হলো নিশাতের দিকে চোখ পড়তে দেখে নিশাত হাতে গ্লাস নিয়ে অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে ।
আরহান ভ্রু কুচকে বলে
_”তুমি আমার শরীরে পানি ফেললে কেনো?জ্বালিয়ে শান্তি হচ্ছে না ?
নিশাত কাচুমাচু হয়ে বলে
_”তুমি তো উঠছিল না তাই আর অনেকক্ষণ ধরে কেউ নক করছে তাই
আরহান কিছু বলতে গেলে আবার ডোরবেল বেজে উঠে ।আরহান বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে যায়।
চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে দেখে জয় দাড়িয়ে আছে ।
_”তুই এত রাতে?
জয় ভিতরে এসে বলে
_”তুই বললি নিশাতের শরীর ভালো না আর একটা খবর দেওয়ার জন্য আসলাম তোর ফোন বন্ধ পেলাম।
আরহান মাথা চুলকিয়ে বলে
_”চার্জ নেই হয়তো।আয় ভিতরে আয়
সোফায় বসতে গেলে নিশাতের চিৎকার কানে আসে। জয়, আরহান ছুটে যায় ।
চলবে