আবছায়া
writer::প্রিয়া
৫
দুইদিন পর আইজান দের পুরো পরিবার ইনায়াদের বাড়িতে আসে।
ড্রইংরুমে বসে আছে ওরা কাজের মেয়ে সবাইকে ড্রিংক আর কিছু নাস্তা দিয়ে গেলো।
ওরা এসেছে প্রায় ১০মিনিট এখন পর্যন্ত বাড়ির কারো আসার নাম নেই।
আইজান বিষণ লজ্জা পাচ্ছে বাড়ির লোকদের কাছে।
এরমধ্যে ইনায়ার বাবা আর দুই ভাই আসলেন।
সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে সোফায় বসলেন।
ইনায়ার বাবা প্রথমে কথা শুরু করলেন।
-কাজের কথায় আসা যাক।আমরা এখানে একসাথে জড়ো হওয়া যে কারণে।
ফুফি-সেটা তো অবশ্যই বেয়াই সাহেব।
আমাদের ছেলে আইজানের বিয়েতে আমরা কোনোকিছুর কমতি করতে চাই না।
-আইজানের ফ্যামিলি তো আপনাদের বাড়ির আশ্রিতা।আশ্রিত ছেলের জন্য এতো কিছু করার কি দরকার।
‘বুঝলাম না বেয়াই সাহেব আইজান আশ্রিত মানে কি বুঝাতে চাইলেন।
-আমরা সবই জানি মেয়ের বিয়ে দিবো আর খোঁজ নিবো না তা কি করে হয়।
ধামাচাপা দেয়ার দরকার নেই সত্য বলে দেয়াই উত্তম।
‘যেহেতু জানেন তাই আর তর্কে জড়াতে চাই না।
আইজানের বাবা আমার নিজের রক্তের ভাই না এইটা ঠিক তবে আইজান আমার নিজের ছেলের চাইতে ও বেশি আপন।
আর আমার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বলতে কেবলই আমার মেয়ে।
ওর যা আছে আমার সম্পত্তি ওর লাগবে না তাই সবকিছু আমার এই ছেলে আইজানের হবে।
-সম্পত্তি দিয়ে আমি মানুষ হিসেব করিনা।
ছোট মুদি দোকানির যদি চরিত্র ভালো হয় তবে সেই প্রকৃত মানুষ আমার দৃষ্টিতে।
‘তো আপনি কি বুঝাতে চাইছেন আমার আইজানের চরিত্র খারাপ।
-সেটা তো আপনিই জানেন।যাই হোক আমার মেয়ে যদি সংসার করতে পারে আমাদের আপত্তি নেই।
‘কাজের কথায় আসি।আমি আইজানের বিয়ে ধুমেধামে দিতে চাই।
-সেটা আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু আমরা দুঃখিত বিয়ে আমরা পারিবারিক ভাবে কেবলি একজন কাজী ডেকে কবুল বলিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করতে চাই।
‘তবে তাই হোক।আগামী শুক্রবার আমরা কাজী আর রেজিস্টার নিয়ে আসবো।
মেয়ে নিয়ে যাবো পরেরদিন রিসিপশন আমাদের মন মতোই হবে।
-মেয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আপনাদের যা খুশি তাই করবেন আমাদের আপত্তি নেই।
‘এখন কি মেয়েকে দেখতে পারি।
আইজানের ফুফির কথার উপর আর কেউ কথা বলেনি।
-তা তো অবশ্যই ইকরাম যাও তোমার মা কে বলো ইনায়া কে নিয়ে আসতে।
ইকরাম ভিতরের রুমে গেলো কিছুক্ষণ পর ইনায়াকে সাথে নিয়ে ওর মা আসলেন।
ইনায়া প্রতিদিনের মতোই আজ ও ড্রেস পড়েছে আইজান ভেবেছিলো আজ অন্তত শাড়ি পড়বে।
ইনায়া কে দেখে আইজানের বড্ড রাগ হলো।তাই আর ইনায়ার দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।
আইজানের ফুফি ইনায়াকে পাশে এনে বসান।
-মাশাল্লা বরাবরের মতোই আমার আইজানের পছন্দ বেষ্ট।
বিয়ে করার ক্ষেত্রে ও একদম বেছে মেয়ে পছন্দ করেছে।
ইনায়া চুপ করেই আছে।
-দেখি মা হাতটা দাও।
আইজানের ফুফি নিজের হাতের আংটি খুলে ইনায়া কে পড়িয়ে দিলেন।
ডায়মন্ড রিং।ইনায়ার হাতে বেশ মানিয়েছে।
আইজান আড়চোখে তাকাচ্ছিলো।ইনায়ার মুখটা কালো চোখগুলো ফোলা ফোলা।
পুরোরাত কেঁদেছে মেয়েটা আইজান বেশ বুঝতে পারছে।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছে কখনোই ইনায়া কে কাঁদতে দিবে না।
আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে উনারা চলে যান।
ইনায়া একবার ও আইজানের দিকে তাকায়নি।
আইজানের বুকে ঝড় বইছে ইনায়ার কেনো এমন করলো।
চুপটি করেই সোফার মধ্যে বসে আছে ইনায়া।
ইনায়ার মা পাশে এসে বসলেন।
-আরেকটিবার ভেবে দেখ মা বিয়ে হয়ে গেলে কিন্তু আর কিছুই তোর হাতে থাকবে না।জীবন তোর সিদ্ধান্ত তোর।
‘মা
-আমি জানি তোরে পেটে কোনো বাচ্চা নেই।বাচ্চা হতে গেলে যে কয়টা লক্ষণ কিছুই তোর মাঝে নেই।মিথ্যা বলে মায়ের চোখ ফাঁকি দিতে পারবি না।
‘মা আমি আইজান কে ভালোবাসি ওকে চাই সারাজীবন নিজের করে পেতে চাই।
-তোর বাবা সেদিন ও আইজান কে দেখেছেন একটা মেয়েকে নিয়ে হোটেলে ঢুকতে।
উনি মন থেকে আইজান কে মেনে নিতে পারবেন না।
‘মা বাবার বয়স হয়েছে কাকে থেকে কাকে দেখেছেন আইজান ভেবে বসে আছেন।
-তুই প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছিস রে মা তোর আর বোধশক্তি কিছুই নেই।
মা চলে গেলেন।ইনায়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
উফফ সবাই মিলে পাগল করে দিচ্ছে শুধু জ্ঞান আর জ্ঞান।
আইজান বাসায় ফিরে ইনায়া কে ফোন দিলো।
-এই কি সমস্যা তোমার আমার দিকে তাকালে না কেনো।
‘কে বলেছে তাকায়নি।কালো শার্ট কালো প্যান্ট দেখতে বেশ লাগছিলো।এভাবে গাল ফুলিয়ে রেখেছিলে কেনো।
-তুমি শাড়ি পড়লে না কেনো।আজ প্রথম ফুফি দেখলেন তোমায়।
‘যেদিন বিয়ে করে নিয়ে যাবে সেদিনই পড়বো।
অনেকক্ষণ কথা বলার পর ইনায়া ফোন রেখে দিলো।
ইনায়া ভাবছে আইজান কে ওর ফ্যামিলির অপছন্দের অনেক কারণ আছে ওরা কেবলি ওর খারাপ গুণ দেখেছে ভালো কিছু দেখেনি।
প্রথম প্রথম ইনায়া ও আইজান কে বাজে ছেলে ভাবতো।দেখলেই রাগে চোখ ফিরিয়ে নিতো।সবসময় মারামারি করতো আইজান।
অনার্সের ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ক্লাসে যেতো ইনায়া।আর প্রতিদিনই আইজান একটা না একটা বিষয় নিয়ে মারামারি করতো।
ইনায়া ভাবতো আইজান ওর সিনিয়র কিন্তু যেদিন কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে আইজান বক্তৃতা দেয় সেদিনই ইনায়া জানে আইজান ওর জুনিয়র তা ও দুই ক্লাস।
আরো রাগ বাড়ে আইজানের উপর এতো ছোট ছেলে বড় বড় ভাইদের সাথে মারামারি করে।
অনুষ্ঠান শেষ করে ইনায়া ফিরছিলো রাস্তায় আইজানের সাথে দেখা।
-হায় ইনয়া বেবি।
-এই অভদ্র ছেলে তুই আমায় সম্মান দিয়ে কথা বলবি।
‘মানে কি এরকম তুইতোকারি করছো কেনো।
-কারণ আমি তোর সিনিয়র।
‘সিনিয়র হাউ ফানি।
-এই ছেলে আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ার আর তুই ইন্টার।
‘তো কি হয়েছে।
-বড় আপুদের সম্মান দিতে হয় জানিস না।
‘তা কি রকম সম্মান।
-দেখলে সালাম দিবি ভদ্র ভাষায় কথা বলবি।
‘ওহ রিয়েলি সুইটহার্ট।
-আবার অভদ্রতা।
‘বাবু তোমায় রাগলে তো লাল টমেটোর মতো লাগে।
ইচ্ছে করে সালাদ বানিয়ে খেয়ে ফেলি।
-তোকে জুতা খুলে মারতে মন চাইছে।
‘প্লিজ জুতা না হাত দিয়ে মারো।
ইনায়া ঠাসস করে চড় মেরে বসে আইজানের গালে।
থাপ্পড়ের শব্দে অনেকে দুজনের দিকে তাকায়।
চলবে।