আবছায়া
writer::প্রিয়া
৯
এতো বড় আলিশান বাড়িতে বধূ সাজে বসে আছে ইনায়া।আশেপাশে অনেক মহিলা কানাঘুষা করছে।
ইনায়া প্রথমে ভাবছিলো হয়তো ওর বয়স আইজানের বয়স থেকে বেশী তাই সবাই এরকম করছে কিন্তু একটা মেয়ে ইনায়াকে শুনিয়ে বলে উঠলো।
-কি সুন্দর মেয়েটার জীবন নষ্ট করবে এই ইতরের বাচ্চাটা।
কার জীবনের কথা বললো অবাক হয়ে তাকায় ইনায়া।আবার আরেকজন মহিলা বললো।
-আইজান তো সাধু সেজেই থাকে।এরকম করে হয়তো এই মেয়েকে পটিয়েছে।
বলি মাইয়াদের লাল চামড়ার ছেলে দেখলেই ক্যান পিরিত করতে হইবো বুঝিনা বাপু।
এতোক্ষণে ইনায়া বুঝলো ওরা কেনো এরকম করছিলো।
আইজান কে সবাই খারাপ ভাবে তাই সবাই ইনায়ার জন্য আফসোস করছিলো।
ইনায়া মনে মনে আইজান কে একশো গালি দিচ্ছে।
এই ছেলে নিজের গুণ্ডামি স্বভাবের জন্য সবার চোখে খারাপ হয়ে বসে আছে।
কনে দেখা শেষ এক এক করে সবাই চলে গেলো।শুধু দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে যার চোখে ইনায়ার জন্য একরাশ ঘৃণা।
ইনায়া ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো প্রতিউত্তরে মেয়েটা মলিন হাসি দিলো।
আইজানের আম্মু এসে ইনায়ার পাশে বসলেন।
মেয়েটার উদ্দেশ্যে বললেন অজান্তা যা তো তোর ভাবির জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আয়।
ইনায়া বুঝতে পারলো মেয়েটার নাম অজান্তা।তবে মেয়েটা এ বাড়ির কে সেটা বুঝতে পারলো না।
অজান্তা ইনায়া কে বললো।
-রং চা না কি দুধ চা।
-এখন কড়া লিকারের দুধ চা হলে ভালো হয় তবে চিনি কম।
অজান্তা মুখটা বেঁকিয়ে চলে গেলো।আইজানের আম্মু ইনায়ার মাথায় হাত রাখলেন।
-খুব সুন্দর লাগছে আমার মিষ্টি মেয়েটাকে।
একটু পর তোমায় তোমার ঘরে নিয়ে যাবো।তখন ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ো।
-জ্বি আম্মু।
এরমধ্যেই মেয়েটা চা নিয়ে চলে আসলো।
-অজান্তা তুই তোর ভাবির সাথে গল্প কর।আমি একটু ওইদিক দেখছি।
‘ওকে বউমা।
আইজানের আম্মু চলে গেলেন।অজান্তা দাঁড়িয়ে আছে।
-অজান্তা আপু এখানে এসে বসো।
মুখটা কালো করে অজান্তা আমার পাশে এসে বসলো।
‘অজান্তা আপু আপনার কি মন খারাপ।
-আমি আপনার বয়সে ছোট অজান্তা বলতে পারেন।
অজান্তা তোমার চা খুব ভালো হয়েছে।
-মোটেই না,আমি কম লিকার আর চিনি বেশী দিয়ে এনেছি তুমি যেরকম বলছো তার উল্টো।
‘ইচ্ছে করে কেনো এমন করলে।
-জানিনা।
‘আচ্ছা আমাকে কখন রুমে দেয়া হবে বড্ড হাস পাস লাগছে এতো ভারি জিনিসে।
-বাসর ঘর সাজানো হচ্ছে শেষ হলে দিয়ে দিবে।
‘ওহ আচ্ছা।আইজান কোথায়।
-রাতে ভালোভাবে দেখে নিও এখন হয়তো আড্ডা দিচ্ছে ছাদে।
-ওকে।
অজান্তা আর কিছু বললো না।তখনি আইজানের ফুফি ইনায়া কে উনার রুমে ডাকলেন।
আইজানের মা এসে ইনায়াকে নিয়ে গেলো।
-বউমা বসো আমার পাশে।
‘ফুফি আমি কি আপনাকে আম্মু বলে ডাকতে পারি।
‘অবশ্যই মা তুই আমায় আম্মু ডাকিস।
আইজান তখন রুমে আসলো।উনি আইজান কে ইনায়ার পাশে বসতে বললেন
-আইজান দেখ তুই মেয়েটাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস।আমি চাইবো তুই সারাজীবন মেয়েটাকে আগলে রাখ।
‘ফুফি মাই সুইটহার্ট আমি কখনোই ইনয়া কে কষ্ট দিবো না।
-ইনায়া কিন্তু এখন থেকে আমার মেয়ে।
‘বাহ বা তাই বুঝি।
-আচ্ছা একটু বসো আমি আসছি।
আইজানের ফুফি উঠে গিয়ে নিজের ওয়ারড্রব খুললেন।সেখান থেকে একটা বক্স বের করে খাটে এসে বসলেন।
সোনার বাক্স দেখেই বুঝে যাচ্ছে।
উনি বাক্স খুলে একটা বড় সীতাহার বের করলেন।
ইনায়া মা আয় তো।
-এসব আমার লাগবে না আম্মু।
আইজানের মা আর আইজান ইনায়াকে ইশারা করে বলছে তাড়াতাড়ি নিয়ে নাও।
ওদের কান্ড দেখে ইনায়ার রাগ হচ্ছে দাঁতে দাঁত কেটে এগিয়ে গেলো। উনি হার পড়িয়ে দিলেন।
সাথে একজোড়া বালা।
আইজান আর ওর মা সে কি খুশি।
ইনায়া কে রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।
রাত ১১টা ফুল দিয়ে সাজানো বাসর ঘরে বসে আছে ইনায়া।
লজ্জা আর ভয় ঘিরে ধরেছে ওকে।
আইজান এসে দরজা লক করতেই ইনায়ার বুকে ধপাস ধপাস শব্দ শুরু হয়।
আইজান খাটের কর্ণারে এসে বসে।ইনায়া ঘোমটা দিয়ে বসা।আইজান ঘোমটা খুলতেই ইনায়া চোখ বন্ধ করে নেয়।
একধ্যানে আইজান তাকিয়ে আছে।ইনায়ার চোখের পাতা নড়ছে।
চোখমেলে তাকিয়ে ইনায়া বড্ড লজ্জা পায় বেহায়ার মতো তাকাচ্ছে আইজান।
-এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো।
‘দেখছি ভুল করে পরী আমার রুমে চলে আসছে না কি।
-ইশ কি পাম দেয়া হচ্ছে।
‘হুশ কথা বলোনা আমি আজ শুধু দেখবো।
পরে দেখো আগে সালাম করতে দাও।
ইনায়া খাট থেকে নেমে আইজান কে সালাম করলো।আইজান ওর বাহু ধরে উঠিয়ে কপালে চুমু দিলো।
-আমি খুব ভাগ্য করে তোমায় পেয়েছি ইনয়া।
,নিশ্চুপ
ইনায়ার চুলগুলো খুলে দিয়ে এলোমেলো করে নিলো আইজান।
চুলগুলো কানের দিকে গুছে নিয়ে গাল স্পর্শ করলো।
দু হাত দিয়ে গাল ধরে ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায় আইজান।
ইনায়া লজ্জা পেয়ে বারান্দায় ছুটে যায়। আইজান গিয়ে পিছন থেকে ইনায়ার কোমর জড়িয়ে চুলে নাক ডুবিয়ে দেয়।
আইজানের ডাকে সাড়া দিয়ে ইনায়া আইজানকে জড়িয়ে ধরে।
কোলে তুলে আইজান ইনায়াকে রুমে নিয়ে আসে।
দুজন ভালোবাসায় নতুন জীবনে পা রাখে।
ভোরের আলো ফুটতেই পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ইনায়ার। নিজেকে আইজানের বুকের সাথে মিশে থাকতে দেখে।
আইজানের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠে আসে ফ্রেশ হতে।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আইজান ঘুমে। তাই দরজা খুলে বাইরে আসতে গিয়ে দেখে অজান্তা দরজার পাশে ওর চোখগুলো রক্তবর্ণ হয়ে আছে।
ইনায়া কে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
-তুমি এখানে।
‘না এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম।
বলেই ছুটে পালালো অজান্তা।
ইনায়া ভাবছে অজান্তা কি কাঁদছিলো ওর গলার স্বর ভাঙ্গা ভাঙ্গা মনে হচ্ছিলো।
চলবে