#আবেগময়_সম্পর্ক
#৭ম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
মেহুল অন্তরার বিষয়েই ভাবছিল এমন সময় আমিনা আক্তার তার রুমে চলে আসে। মেহুলকে দেখে বলে, “আমার বড় ননদ এসে গেছেন। তোমাকে দেখতে চান উনি। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিচে চলে এসো।”
মেহুল বলে, “জ্বি, আচ্ছা। আমি সাজগোজ করে নিচে যাচ্ছি।”
মেহুল এরপর সুন্দর করে তৈরি হয়ে নেয়। তবুও নিজেকে বারংবার আয়নায় দেখছিল। আগে কখনো নিজের প্রতি কোন বিতৃষ্ণা ছিল না মেহুলের। কিন্তু আজ তার নিজেকে নিয়ে বিতৃষ্ণা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, সে অন্তরার থেকে কম সুন্দরী এটাই তার দোষ। স্বভাব বশতই মেয়েরা তার সতীনের প্রতি হিংসাত্মক হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটে নি। তবে মেহুল নিজেকে সামলে নেয়। ভাবে, “যে এখানে উপস্থিত নেই তাকে হিংসা করে কি হবে? সৃষ্টিকর্তার তৈরি করা সবকিছুই সুন্দর। আমি আর তাই এসব নিয়ে ভাববো না।”
অন্তরা তৈরি হয়ে বাইরে আসে। আমিনা আক্তার নিজের বড় ননদের সাথে মেহুলের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, “ও হলো মেহুল। আমাদের আকাশের বউ।”
আমিনা আক্তারের বড় ননদ আফরোজা নাজনীন বরাবরই ঠোঁটকাটা স্বভাবের। তাই তিনি মুখের উপরেই বলে দেন, “ও এই তাহলে আকাশের সেকেন্ড ওয়াইফ। হ্যাঁ ভালোই আছে। কিন্তু আকাশের প্রথম বউয়ের মতো আগুন সুন্দরী নয়।”
মেহুলের মন এমনিতেই খারাপ ছিল অন্তরার ছবি দেখে এরপর আফরোজা নাজনীনের কথা শুনে তার মন আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়। মেহুল ততক্ষণাৎ সেখান থেকে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে এবং বিছানায় শুয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। মেহুল বলতে থাকে, “কেন বারবার সবাই আকাশের প্রথম স্ত্রী অন্তরার সাথে আমার তুলনা করছে? মানছি আমি তার মতো সুন্দরী নই কিন্তু আমিও তো একজন মানুষ। আমার তো খারাপ লাগে যখন কেউ এভাবে তুলনা দেয়। আমি তো নিজেই নিজেকে তৈরি করিনি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে তৈরি করেছেন। তাহলে কেন এইসব খোটা আমাকে সহ্য করতে হবে?”
এসব ভাবনার মধ্যে কেউ একজন মেহুলের মাথায় হাত রাখে। মেহুল মাথা তুলে আমিনা আক্তারকে দেখতে পায়। তখন সে খুবই সন্তপর্ণে নিজের চোখের অশ্রু মুছে নেয়। আমিনা আক্তার মেহুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, “আমার ননদের কথায় কিছু মনে করো না। উনি বরাবরই একটু ঠোঁটকাটা স্বভাবের কিন্তু ওনার মন অনেক ভালো। তুমি যে এভাবে চলে এলে এটা নিয়ে উনি অপরাধবোধে ভুগছেন। যাইহোক তুমি একটা কথা মনে রাখবে নিজেকে নিয়ে কখনো হীনমন্যতায় ভুগবে না। তোমার কাছে যা আছে যতটুকু আছে, সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে, দেখবে পৃথিবীটা অনেক বেশি সুন্দর মনে হবে।”
মেহুল বুঝতে পারে আমিনা আক্তার কি বোঝাতে চাইছে। তাই সে সাথে সাথে উঠে পড়ে এবং স্বাভাবিক হয়ে পুনরায় আফরোজা নাজনীন এর সামনে যায়। আফরোজা নাজনীন মেহুলকে দেখে বলে, “আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিও। একচুয়ালি আমি মুখের উপরেই অনেক কিছু বলে দেই।”
“ঠিক আছে, কোন ব্যাপার না।”
বাড়ির পরিবেশ স্বাভাবিক হয়। আমিনা আক্তারও আশ্বস্ত হন। আফরোজা নাজনীন দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে আবার নিজের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে ফিরে যান। তিনি যাওয়ার পর মেহুল একটু বাইরে ঘুরতে বের হয়। তখনই তার মনে পড়ে যায় রায়ানের স্কুল ছুটির সময় হয়ে গেছে। তাই মেহুল ঐদিক থেকে একেবারে রায়ানকে স্কুল থেকে আনতে যায়। রায়ানের স্কুলের সামনে উপস্থিত হয় মেহুল। কিছু সময় বাদেই রায়ানের স্কুলে ছুটির ঘন্টা বেজে ওঠে।
এক এক করে অনেক স্টুডেন্ট বেরিয়ে আসে৷ সবার সাথে রায়ানও বের হয়ে আসে। রায়ান মেহুলকে দেখতে পেয়ে ছুটে আসে তার কাছে। আশেপাশের অন্যান্য বাচ্চারা অবাক হয়ে যায়। রায়ানের এক বন্ধু তাকে জিজ্ঞাসা করে, “ইনি কে রায়ান? তোকে তো রোজ তোর মামা নিতে আসে।”
“আমার নতুন মা আজ আমাকে নিতে এসেছে।”
মেহুল রায়ানকে সাথে নিয়ে ফিরে আসতে থাকে। রায়ান মেহুলের সাথে অনেক আনন্দ করে আসার সময়। এক সময় রায়ান বলে, “নতুন মা জানো কাল আমাদের স্কুলে একটা অনুষ্ঠান হবে। সেখানে সবাই বিভিন্ন কিছু পারফর্ম করবে। আমিও একটা রেইম বলব। সবার মা-বাবা’কে নিয়ে অনুষ্ঠানে আসবে৷ তুমি আর আব্বু আসবে তো আমার সাথে?”
“আমি তো অবশ্যই যাবো তোমার রেইম শুনতে। বাট তোমার আব্বুর কথা বলতে পারছি না।”
“তুমি আব্বুকে রাজি করাতে পারবে তো নতুন মা? আমার না খুব ইচ্ছা যে, আব্বু আমার রেইম শুনবে।”
রায়ানের সরল আবেদন শুনে মেহুলের মন কেমন করে। বাচ্চারা সবসময় ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়। রায়ানও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু রায়ানের যেই বয়সে বাবা-মায়ের ভালোবাসায়, স্নেহে বড় হওয়ার কথা সেই সময় তার মা তার কাছে নেই, বাবা যেন থেকেও নেই। মেহুল রায়ানকে আশ্বাস দিয়ে বলে, “আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব তোমার আব্বুকে রাজি করানোর। বাকিটা তোমার আব্বুর ইচ্ছা।”
রায়ান খুশি হয়ে যায়। তার যেন অগাধ বিশ্বাস তার নতুন মায়ের উপর যে সে তার আব্বুকে রাজি করাতে পারবেই।
❤️
রাতে আকাশ ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরল৷ খাওয়া দাওয়া শেষে যখন আকাশ রাতে ঘরে আসল তখন মেহুল রায়ানকে প্রাকটিস করাচ্ছিল। রায়ান তার স্কুলের প্রোগ্রামে, “Johny Johny Yes Papa!” রেইমটি বলবে। মেহুল সেটারই প্রাকটিস করাচ্ছে তাকে।
আকাশ রুমে এসে জিজ্ঞাসা করে, “কিসের প্রস্তুতি চলছে?”
রায়ান উৎসাহী কন্ঠে বলে, “আমার স্কুলে কাল প্রোগ্রাম আছে। সেখানে আমি এই রেইমটা বলব।”
“ওকে৷ অল দা বেস্ট। ভালো করে প্রাকটিস করো।”
“আব্বু তুমি যাবে আমার স্কুলের প্রোগ্রামে।”
আকাশ গম্ভীর গলায় বলে, “আমার কাল অফিসে খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা মিটিং এটেন্ড করতে হবে। সো আমি যেতে পারব না।”
রায়ানের মন টা খারাপ হয়ে যায়। সে কত আশা নিয়ে ছিল যে আকাশ হয়তোবা রাজি হবে তার সাথে প্রোগামে যেতে। অন্য সবার বাবার মতো রায়ানের পারফরম্যান্স তার বাবা দেখবে কিন্তু সেসবের কিছুই হলো না।
রায়ামের মন খারাপ দেখে মেহুলের অনেক বেশি খারাপ লাগে। তাই সে আকাশকে বলে, “ছেলেটা যখন এত আশা নিয়ে তোমাকে বলেছে তখন তুমি একটু চেষ্টা করে দেখুন যদি কোন ভাবে ম্যানেজ করা যায়। মিটিং তো আসবেই যাবে কিন্তু ছেলেটার প্রোগ্রাম তো আর বারবার হবে না।”
মেহুলের কথা শুনে আকাশ রাজি হওয়ার বদলে আরো বেশি রেগে গিয়ে বলল, “আমার মিটিংটা অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। এসব ফালতু প্রোগ্রাম এটেন্ডের থেকেও।”
মেহুলের মেজাজ বিগড়ে যায়। সে বলে, “নিজের ছেলের প্রোগ্রাম তোমার কাছে ফালতু মনে হচ্ছে। কেমন বাবা তুমি?”
“এই ব্যাপারে আমি আর কিছু শুনতে চাইনা।”
“শুনতে তোমাকে হবেই। আমি তোমাকে বলছি পৃথিবী এদিক থেকে ওদিক হয়ে যাক, ঝড় তুফানে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাক পুরো পৃথিবী তবুও তোমাকে কাল তোমাকে রায়ানের প্রোগ্রামে যেতেই হবে।”
“আর যদি আমি না যাই তাহলে কি করবে তুমি? কি হলো আন্সার মি।”
“আমি নেগেটিভ কিছু ভাবতে চাইছি না। কারণ তুমি কাল রায়ানের প্রোগ্রামে যাচ্ছ এটাই ফাইনাল। আর যদি না যাও তাহলে রায়ানকে নিয়ে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তখন বুঝবে ঠ্যালা।”
আকাশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ে।
#চলবে#আবেগময়_সম্পর্ক
#৮ম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
মেহুল ও রায়ান সকালে ঘুম থেকে উঠে থেকে নিখোঁজ! আকাশ পড়ে গেছে মহাচিন্তায়। গতকাল রাতে মেহুলের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে যে আকাশ কত বড় ভুল করেছে সেটা এখন খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছে সে। আশেপাশের প্রায় সব যায়গায় ফোন করে খোঁজ নিয়েছে আকাশ কিন্তু ফলাফল শুন্য। মেহুলের কোন খোঁজ পাওয়াই যাচ্ছে না। উপরন্তু তার ফোনটাও সুইচ স্টপ বলছে৷ সব মিলিয়ে বেশ ভালোই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে আকাশ।
বাড়ির অন্য কেউ এখনো এই ব্যাপারে জানে না। আকাশও কাউকে কিছু বলতে পারছে না। আমিনা আক্তার ভাবছেন মেহুল হয়তো এখনো ঘুমাচ্ছে। এভাবে দেখতে দেখতে সকাল ৮ টা বেজে যায়। আমিনা আক্তারের মনে এবার একটু সন্দেহ হয়। তাই তিনি আকাশকে বলেন, “৮ টা বেজে গেল। রায়ানের তো স্কুলের টাইম হয়ে গেছে, তোরও অফিস যাওয়ার টাইম হয়ে এসেছে৷ রায়ান কোথায়? আর তুই বা এখনো তৈরি হয়ে নিসনি কেন? আমি যতদূর জানি মেহুলও এত বেলা অব্দি ঘুমানোর মেয়ে নয়৷ সত্যি করে বল তো কোন ঝামেলা হয়েছে কিনা।”
আকাশ আর কোন উপায় না পেয়ে আমিনা আক্তারকে সবকিছু খুলে বলে। আমিনা আক্তারের ভ্রু কুচকে যায় সব শুনে। তিনি বেশ রেগে যান।
আকাশ আমিনা আক্তারকে জিজ্ঞাসা করে, “এখন আমি কি করব আম্মু?”
“আমাকে জিজ্ঞাসা করছিস কেন? এত অশান্তি আমার ভালো লাগে না। মেহুল মেয়েটাকে ভালো ভেবেছিলাম। এরকম ছেলেমানুষি অন্তত ওর থেকে আশা করিনি। এভাবে হুট হাট কোথাও চলে গেল কাউকে কিছু না বলে। যদি কোন বিপদ হয় তখন কি হবে? তার দায়ভার কে নেবে? সাথে আবার রায়ানকেও নিয়ে গেছে। রায়ানের গায়ে একটা আঁচড় পড়লে তো ওর মামা অন্তর চৌধুরী আমাদের শেষ দেখে ছাড়বে। আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।”
আকাশ অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে। এমন সময় মেহুল রায়ানকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। আমিনা আক্তার ও আকাশ দুজনেই সেদিকে তাকায়। তাদেরকে ফিরতে দেখে দুজনেই চিন্তামুক্ত হয়। আকাশ সামনে এগিয়ে গিয়ে মেহুলকে জিজ্ঞাসা করে, “সকাল সকাল কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি? জানো আমরা কতটা টেনশনে ছিলাম? আর কোনদিন এমন করবে না।”
মেহুল কিছু বলার আগেই আমিনা আক্তার বলেন, “তোমার কাছে এটা কাম্য ছিল না৷ তোমাকে বুঝদার মেয়ে বলেই জানতাম। সেখানে তুমি এটা কি করলে। সামান্য কথা কা*টা*কা*টির জন্য ছেলেটাকে নিয়ে চলে গেলে।”
মেহুল মৃদু হেসে বলে, “আমি তো রায়ানের স্কুলে গিয়েছিলাম প্রোগ্রামের প্রস্তুতি দেখতে। সকালে গিয়েছিলাম তো তাই কাউকে বলে যেতে পারিনি। আর আমার ফোনেও চার্জ ছিলনা। দুঃখিত আপনাদের চিন্তায় ফেলার জন্য। এরপর থেকে আর এমন হবে না।”
আমিনা আক্তার আর কিছু বলেন না। মেহুল রায়ানকে নিয়ে রুমে চলে যায়। আকাশও চলে যায় তাদের পিছন পিছন। রুমে গিয়ে মেহুল রায়ানকে বলে, “তুমি আরেকবার প্রাকটিস করে নাও। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
আকাশ মেহুলের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু মেহুল আকাশকে কোন পাত্তা না দিয়ে বাথরুমে চলে যায়। আকাশ হতবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে। বিড়বিড় করে বলে, “কি হলো ব্যাপারটা? মেহুল এভাবে আমাকে ইগনোর করল কেন? ব্যাপারটা তো ঠিক হজম হচ্ছে না।”
মেহুল ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। অতঃপর রায়ানকে তৈরি করে দিয়ে নিজেও একটা সুন্দর শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে যায়। সাজগোজ পুরো কমপ্লিট হলে মেহুল রায়ানকে বলে, “চলো এখন আমরা তোমার স্কুলে যাবো।”
মেহুল আর রায়ান যেতে যাবে তখনই আকাশ তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। আকাশকে এভাবে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে মেহুল ভ্রু কুচকে তাকায়। গম্ভীর মুখ করে বলে, “সামনে থেকে সরুন তো। আপনি তো নিজে প্রোগ্রামে যাবেন না। এখন কি আমাদেরও যেতে দেবেন না নাকি?”
আকাশ অবাক হয়ে যায় মেহুলের কথা শুনে। অবাক হয়ে বলে, “তুমি আমাকে আবার আপনি করে বলছ কেন? তুমিই তো সেদিন আমায় বললে স্বামী স্ত্রীর পরস্পরকে তুমি বলে ডাকা উচিৎ। ”
মেহুল মুখ বাকিয়ে বলে, “সেটা ভালো স্বামীর জন্য। আপনার মতো স্বামীকে তুমি বলতে আমার বয়েই গেছে যে নিজের ছেলের স্কুলের প্রোগ্রামেই যেতে চায়না। হুহ”
আকাশ ঠোঁট কামড়ে হাসতে থাকে। মেহুলের এরকম কথা শুনে সে আর নিজের হাসি আটকে রাখতে পারে না৷ আকাশ রায়ানকে বলে, “চলো আমার সাথে।”
মেহুল হচকচিয়ে যায় এবং বলে, “রায়ানকে কোথায় নিয়ে যেতে চান আপনি?”
“কোথায় আবার রায়ানের স্কুলের প্রোগ্রামে। আমি কিন্তু শুধু রায়ানকেই নিয়ে যাবো৷ কারণ যারা আমাকে আপনি আপনি করে বলে তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তাই তারা যেন নিজেরা একা একাই চলে যায়।”
মেহুলও এবার হেসে দেয় এবং বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে। আপনির খেতায় আগুন। আমি তোমাকে তুমি করেই বলব। এখন তো আমাকে নিয়ে চলো।”
আকাশ রায়ান ও মেহুলকে নিয়ে একসাথে রওনা দেয়। তাদের দেখে একটি সুখী পরিবারই লাগছিল। আমিনা আক্তার তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলেন, “এমন একটা দৃশ্যের আশাতেই তো ছিলাম আমি। আমার ছেলেটা এখন তার পরিবার নিয়ে কত সুখে আছে। ছেলেটা অনেকদিন পর প্রাণখুলে হাসতে পারছে৷ সৃষ্টিকর্তার কাছে কামনা করি এই বন্ধন যেন অটুট থাকে। কখনো যেন কোন ফাটল না ধরে ওদের এই সুন্দর সম্পর্কের মাঝে।”
রায়ানের স্কুলে পৌঁছে গিয়ে গাড়ি থামায় আকাশ। সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। এরপর সবাই মিলে যায় প্রোগ্রাম এটেন্ড করতে। মেহুল ও আকাশ দর্শকের সিটে বসে ছিল। মেহুল একটা বিষয় লক্ষ্য করে যে, আকাশ বারবারই তার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখছিল এবং তাকে বেশ অধৈর্য লাগছিল। এটা দেখে মেহুলের বেশ রাগ হয়। তাই সে আকাশকে বলে, “তুমি কি এখানে ঘড়িতে টাইম দেখার জন্য এসেছ নাকি প্রোগ্রাম? এসেছ থেকে দেখছি ঘড়িতে চোখ লাগিয়ে রেখেছ। এটা কিরকম কথা বল তো আমায়।”
আকাশ উত্তরে বলে, “আমার সত্যি একটা খুব জরুরি মিটিং আছে মেহুল। তাই রাইট টাইমে আমাকে অফিসে পৌঁছাতে হবে।”
মেহুল গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। একটু পরেই রায়ান মঞ্চে উঠে কবিতা বলে। আকাশ তা শুনে এবং শেষে করতালিও দেয়। রায়ানের কবিতা বলা শেষ হওয়া মাত্রই আকাশ তড়িঘড়ি করে চলে যায়। মেহুল সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে, “যাক অন্তত ও রায়ানের কবিতা তো শুনে গেল। রায়ান এবার নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে।”
প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেলে মেহুল রায়ানকে নিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। রায়ান সত্যিই আজ অনেক বেশি খুশি৷ রায়ানের মুখ দেখেই তার খুশিটা উপলব্ধি করা যাচ্ছে। রায়ান মেহুলকে বলে, “আব্বু আজ এসেছিল। আমার রাইমও শুনেছে। আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছি।”
রাস্তায় ফুচকার দোকান দেখে মেহুল রায়ানকে বলে, “তুমি ফুচকা খাবে রায়ান?”
রায়ান তখন বলে, “না আমি ফুচকা খাই না। আমার ঝাল লাগে। তাছাড়া আব্বু বলেছে রাস্তার খাবার না খেতে।এগুলোতে অনেক ময়লা থাকে।”
রায়ানের মুখে এমন কথা শুনে মেহুল বেশ অবাক হয় এবং বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে তোমার ফেভারিট কোন আইসক্রিম এনে দিছি।”
রায়ানকে কোন আইসক্রিম কিনে দিয়ে মেহুল একা ফুচকা খেতে থাকে। প্রায় অনেকগুলো ফুচকা খেয়ে শেষ করার পর মেহুল রায়ানকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফেরে।
#চলবে