আবেগময় সম্পর্ক পর্ব -০৫+৬

#আবেগময়_সম্পর্ক
#৫ম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

মেহুল তার মায়ের হাতে আমিনা আক্তারের দেওয়া শপিং ব্যাগ গুলা তুলে দিয়ে বলে, “নাও এগুলো আমার শাশুড়ি দিয়েছেন তোমাদের’কে।”

সিতারা বেগম ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে বলে, “যাক তাহলে তোর শশুর বাড়ির সব লোক ভালোই আছে। আমাদের আর কোন চিন্তা রইল না। গুছিয়ে সংসার কর৷ সৃষ্টিকর্তা তোর মঙ্গল করুক।”

“আপাত দৃষ্টিতে দেখতে গেলে সবকিছু ঠিকই আছে আম্মু। কিন্তু তুমি ভেবে দেখেছ যদি আকাশের প্রথম স্ত্রী কখনো ফিরে আসে তারপর কি হতে পারে? আমি তখন কি করবো? আমার কি আদৌ স্থান হবে ঐ বাড়িতে?”

সিতারা বেগম আতংকিত হয়ে পড়েন। আমতা আমতা করে বলেন, “এত চিন্তা করিস না। অন্তর চৌধুরী আমাদের আশ্বাস দিয়েছে তার বোনের ফেরার আর কোন চান্স নাকি নেই।”

“এই একই কথা উনি আমাকেও বলেছেন। আমার শাশুড়িও এই কথা বলেছেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ওনারা এই বিষয়ে এত সিউর কিভাবে হতে পারছেন। তাহলে কি ওনারা কি লুকাতে চাইছেন আমাদের কাছে? কি রহস্য লুকিয়ে আছে এসবের মাঝে?”

“সে যেই রহস্য থাক তুই এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে যাস না মেহুল। বিয়ে যখন হয়ে গেছে মন দিয়ে সংসার টাই কর। সেটা তোর কাজে লাগবে।”

“তুমি যাই বলো তার তাই বলো, আমাকে সব কিছু জানতে হবে। আমি বুঝতে পারছি আমার অজানা রয়েছে অনেক বড় সত্য। আর এই সব কিছুর মূলে রয়েছে রায়ানের মা অন্তরা। যাকে ঘিরে সব প্রশ্ন জালের মতো ছড়িয়ে আছে।”

❤️
মেহুল দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে স্বভাব বশতই ভাতঘুম দেয়। ঘুম থেকে উঠে রায়ানকে নিয়ে একটু বাইরে ঘুরতে যায়। পিহুও যায় তাদের সাথে। সবাই মিলে একটি পার্কে ঘুরতে আসে।

রায়ান একটি দোলনায় বসে মেহুলকে বলে, “আমায় একটু দোল দাও না নতুন মা। আমার দোলনায় চড়তে খুব ভালো লাগে।”

মেহুল রায়ানকে দোলনায় দোল দিতে থাকে। পিহুর সেরকম ভালো লাগছিল না এখানে। তাই সে ফোন টিপতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ কারো গলা কানে আসতে সে চোখ তুলে তাকায়। কেউ একজন বলছিল, “তোমরা এখানে!”

পিহু সামনে তাকিয়ে খুব সুদর্শন একজন যুবককে। তাকে দেখেই পিহুর ভালো লেগে যায়। সে আনমনেই বলে ওঠে, “দারুণ। এমন কাউকেই তো আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে চাই।”

মেহুলও দোলনায় দোলানো থামিয়ে দিয়ে সামনে তাকায়। অন্তরকে দেখে মুখটা গম্ভীর করে নেয়৷ কেন জানি এই লোকটাকে একদম সহ্য হচ্ছে না মেহুলের। হয়তো এই লোকের জন্যই বিয়েটা করতে হচ্ছে জন্য।

মেহুল অন্তরকে দেখে তার সাথে কথা বলতে বিন্দু মাত্র আগ্রহী ছিল। কিন্তু অন্তরই আগ বাড়িয়ে এগিয়ে আসে। রায়ান অন্তরকে দেখে তার কাছে ছুটে চলে যায়। অন্তর রায়ানকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, “তোমরা এখানে কি করছ রায়ান?”

“আমি নতুন মা আর পিহু আন্টির সাথে এখানে এসেছি। এখানকার দোলনায় দোল খেতে অনেক মজা লাগছে। তুমি আমায় দোল দিতে পারবে?”

অন্তর রায়ানকে কোল থেকে নামিয়ে দোলনায় নিয়ে গিয়ে দোল দিতে থাকে৷ পিহু মেহুলের পাশে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করে, “আপি ইনি কি রায়ানের মামা? মানে আব্বুর অফিসের বস।”

“হুম।”

“ওহ, দারুণ দেখতে তো।”

মেহুল বাঁকা চোখে পিহুর দিকে তাকায়। মেয়েটার মতিগতি তার ভালো লাগে না। অথচ এই বয়সটাই আবেগের। পিহু সবেমাত্র ১৮ তে পা দিয়েছে। তাই তার মধ্যে এমন আবেগ কাজ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মেহুল বড় বোন হিসেবে ছোট বোনের এমন কথা তো আর এমনি সহ্য করবে না৷ তাই সে বলে ওঠে, “দেখতে সুন্দর তো কি হয়েছে? ছেলে দেখলেই তোর এত আবেগ উতলে ওঠে কেন? এসব না করে পড়াশোনায় মন দে। সামনে না তোর এইচএসসি পরীক্ষা।”

পিহু অভিমানী সুরে বলে, “উফ, আপি। তুইও না, আমি তো শুধু জিজ্ঞাসা করলাম দেখতে সুন্দর নাকি৷ এটা নিয়ে তুই কত কিছু ভেবে নিলি। এসব বাদ দে চল আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। দুলাভাই নাকি বিকেলে আসতে চেয়েছে। বাড়িতে এসে তোকে না দেখলে ব্যাপারটা তো ভালো দেখাবে না তাইনা?”

মেহুলের মনে পড়ে আকাশের আসার সময় হয়ে গেছে। তাই সে রায়ানের উদ্দ্যেশ্যে বলে, “নেমে এসো রায়ান। আমাদের ফিরতে হবে।”

অন্তর বলে, “আচ্ছা চলুন, আমি আপনাদের পৌঁছে দিয়ে আসছি।”

“তার কোন দরকার হবে না। আমরা একাই চলে যেতে পারবো। ধন্যবাদ।”

মেহুলের শক্ত জবাব। যা শুনে অন্তর কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। পিহু অন্তরের সাথে যাওয়ার এই সুযোগ মিস করতে চাইছিল না। তাই সে বলল, “এভাবে বলছিস কেন আপি? উনি যখন আমাদের পৌঁছে দিয়ে আসতে চাচ্ছেন তাহলে সমস্যা কোথায়ম আমাদেরই তো ভালো, তাড়াতাড়ি যেতে পারব। তাছাড়া উনি তো আমাদের অচেনা কেউ নন, উনি তো রায়ানের মামা। তাই রায়ানকে তো উনি নিজের সাথে নিতে চাইতেই পারেন।”

মেহুল আর কিছু বলতে যাবে তখন রায়ানও পিহুর তালে তাল মিলিয়ে বলে, “হ্যাঁ নতুন মা, চলো না আমরা যাই মামার সাথে। মামার না অনেক বড় গাড়ি আছে। আমরা এক্ষুনি পৌঁছে যাব। তাইনা মামা?”

অন্তর রায়ানের গাল টিপে বলে, “হুম একদম।”

মেহুল আর আপত্তি করতে পারল না। তাই অগত্যা বাধ্য হয়ে অন্তরের গাড়িতে করে যেতে রাজি হলো। অন্তর ড্রাইভিং সিটে বসলো। তার সাথে বসেছে রায়ান। পিহু ও মেহুল পিছনে বসল। অন্তর গাড়ি চালানো শুরু করল। পিহু লুকিং গ্লাসে ড্যাবড্যাব করে অন্তরের দিকেই তাকিয়ে ছিল। মেহুলের নজরে আসে ব্যাপারটা। মেহুল পিহুকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলে, “নিজের চোখকে সামলা নাহলে আমি আমার হাত দুটো সামলাতে পারব না।”

পিহু নিজের চোখ নামিয়ে নিল। অন্তরও লক্ষ্য করেছে পিহু তার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিছু একটা ভেবে মৃদু হাসে সে। তার মনে যে কি চলছিল সেটা একমাত্র অন্তরই বলতে পারবে।

মেহুলদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় অন্তর। এরপর বলে, “আপনাদের গন্তব্যে এসে গেছি। এখন নামুন।”

মেহুল তড়িঘড়ি গাড়ি থেকে নামে, পিহুও ধীরেসুস্থে নেমে যায়। রায়ানকে অন্তর নিজে নামিয়ে দেয়। অন্তর বলে, “আচ্ছা তাহলে আপনারা থাকুন আমি যাচ্ছি।”

পিহু বলে, “আরে যাবেন মানে কি? বাড়ির গেইট থেকে এভাবে অতিথি ফিরে যেতে আছে নাকি? চলুন আমাদের বাড়িতে চলুন।”

“আজ না। আজ আমার অনেক জরুরি একটা মিটিং আছে। অন্য কোনদিন নাহয় আসব।”

পিহু আর কিছু বলতে পারে না। কারণ মেহুল তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল। পিহু মনে মনে বিড়বিড় করে বলে, “আপি নিজে তো ভালো হ্যান্ডসাম একটা বড়, বর ঘরের বউ হয়েছে। এখন তো আমার পালা! আর আমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে। এরকম বোন থাকলে সারাজীবন সিঙ্গেলই থাকতে হবে। ধুর।”

অন্তর গাড়ি নিয়ে চলে যেতে নিবে এমন সময় আকাশের আগমন ঘটে। আকাশ এসে অন্তরকে দেখে যে খুশি হয় নি সেটা তার গম্ভীর মুখ দেখেই স্পষ্ট। অন্তর আকাশকে দেখে মুচকি হেসে বলে, “কেমন আছেন দুলভাই? নতুন সংসার, নতুন বউ ভালোই আছেন নিশ্চয়ই।”

আকাশ অকপটে বলে, “তোমার বোনের থেকে অন্তত নতুন সংসারে ভালোই আছি।”

অন্তর নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। তারপর গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। আকাশ রাসভারী গলায় মেহুলকে বলে, “ভেতরে চলো।”

আকাশের কথায় সবাই বাড়িতে প্রবেশ করে।

#চলবে#আবেগময়_সম্পর্ক
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

আকাশ আজ প্রথম শ্বশুর বাড়িতে এসে বেশ ভালোই জামাই আদর পাচ্ছে। মেহুলের মা সিতারা বেগম আকাশের সামনে হরেক রকমের পদ সাজিয়ে দিচ্ছেন। আকাশও বেশ আয়েশ করেই খাবার গুলো খাচ্ছে। কিছু একটা মনে পড়তেই আকাশ সিতারা বেগমকে জিজ্ঞাসা করে, “আচ্ছা মেহুলের বাবা কোথায়? এসেছি থেকে ওনার সাথে তো দেখা হয়নি।”

“উনি তো অফিসে আছেন। আজ নাকি অনেক ব্যস্ত। রাতের দিকে ফিরবেন। তখন তোমাদের সাথে দেখা হবে। তুমি পেট ভরে খাও বাবা। একদম লজ্জা করবে না।”

আকাশের সাথে রায়ানও খেতে বসেছে। রায়ানকে মেহুল খাইয়ে দিচ্ছিল৷ আকাশ অমিনেষ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে ছিল৷ মেহুল আর রায়ানকে দেখে কে বলবে তাদের মধ্যে কোন রক্তের সম্পর্ক নেই? বরং তাদের দেখে মনে হয় রায়ান মেহুলের নিজের সন্তান। আকাশ মনে মনে বলে, “এটাও কি সম্ভব? কেউ নিজের সতীনের ছেলেকেও মাত্র এই ক’দিনে এত আপন করে নিতে পারে? আমি তো জানতাম পারে না। মেহুল কি সত্যিই রায়ানকে মন থেকে ভালোবাসে? নাকি এর পেছনে অন্য কোন কিছু রয়েছে।”

অপরদিকে মেহুল ভাবছিল, “রায়ান আমার নিজের ছেলে না হলেও কেন জানি ওকে আমার অনেক বেশি আপন আপন লাগে। প্রথম যেদিন ছেলেটা আমায় নতুন মা বলে ডেকেছিল সেদিন থেকেই ওর প্রতি আবেগে জড়িয়ে গেছি আমি। ছেলেটার শত বায়না, জেদ সত্বেও কেন জানি আমি বিরক্ত হইনা। ওর সাথে যেন এক আবেগের সম্পর্কে জড়িয়ে গেছি আমি।”

❤️
আকাশ রাতের অন্ধকারে মেহুলদের বাড়ির ছাদে চলে এসেছে। আগে আকাশের অন্ধকার পছন্দ ছিল না। কিন্তু এখন কেন জানি এই অন্ধকারে থাকতেই তার ভালো লাগে। আকাশ নিজেই নিজেকে বলে, “যার জীবনটাই অন্ধকার হয়ে গেছে তার আবার নতুন করে অন্ধকারে ভয় কিসের। এই অন্ধকারেই যে আমাকে মানিয়ে নিতে হবে।”

“আমি যদি তোমার জীবন আলোকিত করার দায়িত্ব নেই।”

মেহুলের গলা কানে আসতেই আকাশ পিছনে ফিরে তাকায়। মেহুলকে দেখে বলে, “তুমি এখানে কি করছ? রায়ান ঠিক আছে তো?”

“হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে গেল। তারপর আলো জ্বালিয়ে বিছানায় তোমাকে দেখতে না পেয়ে ভাবলাম তুমি ছাদে আছ। কারণ তোমার তো রাতের আকাশ দেখার অভ্যাস আছে। আমাদের বাড়িতে তো বেলকনি নেই, তাই ভাবলাম ছাদে থাকতে পারো।”

আকাশ বাঁকা হেসে বলে, “তুমি খুব ইন্টেলিজেন্ট৷ আমার বরাবরই ইন্টেলিজেন্ট মানুষদের ভয় লাগে জানো৷ কারণ আমার মাথায় তেমন বুদ্ধি নেই। যখন যে খুশি আমায় সহজেই ধোকা দিতে পারে।”

“আমায় বিশ্বাস করে দেখতে পারো আমি ধোকা দিবো না।”

আকাশ অকপটে স্বীকার করে নেয়, “একটু আগে অব্দি তোমায় বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু আজ তোমার বাবার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে তোমায় বিশ্বাস করা যায়।”

মেহুল কিছু না বুঝতে পেরে প্রশ্ন করে, “মানে? আমায় কেন বিশ্বাস করতে তুমি?”

“আমি ভেবেছিলাম তুমি অন্তরের সাথে সংযুক্ত। অন্তরের পাঠানো কোন স্পাই। যে অন্তরার অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান করতে এসেছ। আমাকে যে অন্তর তার বোনের নিখোঁজের জন্য দায়ী ভাবে সেটা আমি জানি। সে তো এটাও ভাবে যে আমি অন্তরাকে মে*রে গুম করে দিয়েছি।”

আকাশের কথায় মেহুল বেশ অবাক হয়। সাথে সাথেই বলে, “তুমি বিশ্বাস করো, আমি এমন কোন উদ্দ্যেশ্য নিয়ে কাজ করছি না।”

আকাশ মৃদু হেসে বলে, “জানি আমি। আজ তোমার বাবার সাথে কথা বলে আমি সব জানতে পেরেছি যে তুমি কেন এবং কিরকম পরিস্থিতিতে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছ। তবে আমার মনে হয় অন্তর যখন তোমাকে নিজে পছন্দ করে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে, তখন এর পেছনে তার নিশ্চয়ই কোন উদ্দ্যেশ্য আছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সে তোমাকে আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারে।”

“তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। আমি তোমার বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কিছু করব না।”

“করলাম বিশ্বাস। তোমার কাছে শুধু এটুকুই অনুরোধ, আমার বিশ্বাসের মর্যাদাটা রেখো। এই ক’দিনেই তোমার সাথে একটা আবেগে জড়িয়ে গেছি। তুমি আমার আবেগ নিয়ে খেলো না। এটা আমার অনুরোধ। কারণ এর আগেও একজন আমার আবেগ নিয়ে খুব বিশ্রীভাবে খেলে, আমার জীবনটা নরকে পরিণত করে চলে গেছে। আরো একবার যদি একই পরিস্থিতি হয়, তো আমি জানি না নিজেকে কিভাবে সামলাবো। হয়তো পারব না সামলাতে।”

মেহুল আকাশের দিকে ভরসার হাত বাড়িয়ে দেয়। দুজনে একসাথে নিচে নেমে আসে। আকাশ মেহুলকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখে। আজ প্রথমবারের মতো শারীরিক ভাবে মিলিত হয় তারা।

❤️
মেহুল, আকাশ ও রায়ান আজ আবার মেহুলের বাবার বাড়ি থেকে ফিরে আসল। ফিরে এসেই আকাশ নিত্যদিনের মতো অফিসে চলে যায়। রায়ানও চলে যায় তার স্কুলে। একা মেহুলই বাড়িতে থেকে যায়।

ঘরে একা বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাওয়ায় মেহুল নিচে চলে আসে। আমিনা আক্তার রান্নাঘরে রান্না করছিল। মেহুল রান্নাঘরে প্রবেশ করে আমিনা আক্তারকে জিজ্ঞাসা করে, “আমি কি আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারি?”

আমিনা আক্তার মৃদু হেসে জবাব দেন, “তুমি তো রান্নাবান্না পারো না, তুমি একটা কাজ করো পারলে সবজি গুলো কে*টে আমায় একটু সাহায্য করো। আর একটু দেখে দেখে শিখে নেও রান্নাগুলো।”

মেহুল তাই করতে থাকে। আমিনা আক্তার আজ অনেক গুলো রান্না করছিল। যা দেখে মেহুলের একটু খটকা লাগে। তাই মেহুল জিজ্ঞেস করে, “আজ কি কেউ আসবে? মানে অনেক কিছু রান্না হচ্ছে তো।”

“হ্যা আজ আমার বড় ননদের আসার কথা। উনি বিদেশে থাকেন তাই তোমাদের বিয়েতে আসতে পারেন নি। আজ তোমায় দেখতে আসবেন। তুমি তৈরি হয়ে থেকো।”

“আচ্ছা।”

রান্নাবান্না হয়ে গেলে মেহুল নিজের রুমে চলে যায়। তারপর গোসল করে নেয়। গোসল শেষে ছাদে কাপড় রাখতে গিয়ে দেখা হয়ে যায় আশিকের সাথে। আশিক ফোনে কাউকে বলছিল, “সবকিছু প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছে তো? মনে রাখবে সবকিছু যেন আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী হয়। কোন গণ্ডগোল যাতে না হয়। উনি কিন্তু খুব চালাক কিছু বুঝে গেলে আমাদের অসুবিধা হবে।”

কথাগুলো বলে ফোন রেখে দেয় আশিক। মেহুলকে সামনে দেখে কিছুটা হচকচিয়ে যায়। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, “নতুন ভাবি তুমি। আমি ভাবলাম কে না কে। আমি নিচে যাচ্ছি। সাবধানে কাপড় শুকোতে দিও। আমাদের ছাদ কিন্তু অনেক পিচ্ছিল। পরে গেলে হাত-পা ভেঙে যেতে পারে।”

আশিক চলে যাওয়ার পর মেহুল আশিকের যাওয়ার পানে তাকিয়েই কিছু ভাবতে থাকে। কাপত দড়িতে টাঙ্গাতে টাঙ্গাতে ভাবতে থাকে,“কার সাথে কথা বলছিল আশিক? কথাগুলো কেমন রহস্যময়। না জানি আর কতো রহস্য লুকিয়ে আছে এই বাড়িতে।”

কাপড় শুকাতে দেওয়া শেষ হলে মেহুল ফিরে আসতে গিয়ে অসাবধানতা বশত পা পিছলে পড়ে যায়। পায়ে বেশ খানিকটা আঘাত পায়। হাটতেও কষ্ট হচ্ছিল তার৷ অনেক কষ্টে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নিচে নেমে আসে। নিজের রুমে গিয়ে ব্যাথার মলম খুঁজতে থাকে। ব্যাথার মলম খুঁজতে গিয়ে ড্রয়ারে একটি এলবাম খুঁজে পায়। যেখানে আকাশ, রায়ান সাথে একটি মেয়ের ছবি ছিল। ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা অপরূপ সুন্দরী। মেহুল ছবিটার উপর হাত বুলিয়ে বলে, “এই তবে রায়ানের মা অন্তরা। সত্যিই অনেক রূপবতী সে। আমি তার রূপের কাছে কিছুই না। এইজন্যই মনে হয় আশিক সেদিন বলেছিল এই কথা।”

মেহুলের হিংসা হয় মনে। তাই সে ছবিটা পুনরায় ড্রয়ারে রেখে নিজের পায়ে ব্যাথার মলম মাখতে থাকে। কিন্তু তার মনের মধ্যে যে ব্যাথা চলছে তার উপশম সে কোথায় পাবে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here