আমাদের গল্প সকল পর্ব

আমাদের অরিয়েন্টেশন ক্লাসে প্রথম যে ছেলেটির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল? ওর নাম ‘মৃন্ময়’। নামটা সুন্দর, সাথে সুন্দর ছেলেটাও। মনকাড়া ছিল ওর প্রতিটি বাচনভঙ্গি। আমাদের পরিচয় হলো সেদিন। নাম বিনিময়,টুকটাক কথার পর আস্তেধীরে একে অন্যের ভালো বন্ধু হয়ে উঠলাম। ধীরে ধীরে এই বন্ধুত্ব নাম পেল ” বেস্টফ্রেন্ড”। আমরা ঘনিষ্ঠ ছিলাম,একে অন্যের এমন কোনও কথা বাদ পরেনি, যা ভাগাভাগি করিনি। অথচ কলেজ শুদ্ধ লোক ভাবতো আমাদের মধ্যে সুগভীর প্রেম। মৃন্ময়ের সৌম্যদর্শনে কলেজের প্রায়সংখ্যক মেয়ে পছন্দ করতো ওকে। আমাদের হলে ওর নাম ছিল “ক্রাশ বয়”। এমনকি বান্ধুবিরা আমাকেই বেছে নিতো ঘটকালির জন্যে। নম্বর চাইতো ওর। আবার আমাকে দিয়েই চিঠি পাঠাত মৃন্ময়ের জন্যে। ঠিক যেদিনই চিঠি নিতাম, মৃন্ময় দুনিয়া কাঁপিয়ে ধমকে উঠত। সেই ক্ষনে রুহ উড়ে যেত আমার । মৃন্ময় চিঠি টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ঘোষণা করতো,
” পরেরবার এসব আনলে তোর খবর আছে মিষ্টি!”

শান্ত ছেলেরা রেগে গেলে ভয়ানক হয়। ওর রাগ দেখেই চুপসে যেতাম। শপথ নিতাম আর হবেনা। কিন্তু, আমার বান্ধুবি গুলো শুনলে তো!
অথচ মৃন্ময় কোনওদিন কোনও মেয়ের প্রতি আগ্রহ দেখায়না। কখনও চিঠি খুলে ওকে পড়তেও দেখিনি। ওর বন্ধুরা এ নিয়ে মজা করে বলতো ,
” মেয়েদের ভালো লাগেনা? তবে ছেলেদের সাথে প্রেম কর।”
সংখ্যাতীত মানুষ সন্দেহ করতো মৃন্ময় আর আমার মধ্যে কিছু রয়েছে। কেউ কেউ তো জিজ্ঞেস করেই বসতো,
” মৃন্ময় প্রোপোজ করেছে তোকে? ভালোবাসি বলেছে?”
আমার উত্তরটা বরাবর ‘না’। সত্যিই মৃন্ময় আমাকে এমন কিছু কোনওদিন বলেনি। এমনকি বাঁকা চোখে তাকায়নি পর্যন্ত । আমি পাশে থাকলে ওর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হতো আমি কোনও মেয়েই নই।

সেবার ট্রুথ আর ডেয়ার খেলার সময় মৃন্ময় ডেয়ার নিলো। বন্ধুরা হৈহৈ করে উঠল আনন্দে। এতদিনে মৃন্ময়ের গলাচেপে ধরার দারুন সুযোগ লুফে নিতে বলল,
” কোনও মেয়েকে প্রপোজ করে দেখা।”
মৃন্ময় আপত্তি জানাল । কিন্তু ছাড় সে পাবেনা। ডেয়ার নিয়েছে তো নিয়েছেই। নিয়মের দোহাই দেখিয়ে রাজি করানো হলো ওকে। আমিও সবার সাথে তাল মিলিয়ে উপভোগ করছিলাম সেসব। হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে মৃন্ময় আমারই সামনে হাটুগেড়ে বসে পরল। ক্যাম্পাসের গাছ থেকে ছিড়ে আনা তাজা গোলাপটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
” ভালোবাসি মিষ্টি!”

প্রথম দফায় ভড়কে গেছিলাম। পরমুহূর্তে বুঝতে পারলাম, মৃন্ময় আমি ছাড়া কোনও মেয়ের সাথে মেশেনা বলেই এরকম করেছে। বাকীরা এ নিয়ে রঙ্গ তামাশা,জল ঘোলা করলেও আমি স্বাভাবিক, সুস্থির।

কিন্তু সেদিনের পর থেকে মাঝেমধ্যে লক্ষ্য করতাম মৃন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। দীর্ঘ বকবক করতে করতে যখন ওর দিকে তাকাই, ও তখন নিষ্পলক চেয়ে। আমি ফেরা মাত্রই সে দৃষ্টি সরাতে ব্যস্ত হতো। আর আমি অপ্রতিভ হতাম,অভিপ্রায় লুকোতাম।

দেখতে দেখতে চারটে বছরে পা রাখল আমাদের বন্ধুত্ব। ফার্স্ট ইয়ার থেকে ফাইনাল ইয়ারে উঠলাম। বড় হয়েছি,পরিবার থেকে অল্পস্বল্প বিয়ের তোড়জোড় শুরু হতে থাকল। ভালো ছেলে পেলে বিয়ে দেবে এমন ঘোষণা মা বহুবার দিয়েছেন আমার কানের কাছে । আমি আমার কোনওকিছুই মৃন্ময়ের থেকে আড়াল করিনি। হিসেব মতো এ কথাও জানালাম ওকে। সেদিন প্রথম খেয়াল করলাম মৃন্ময়ের প্রানবন্ত হাসিটা মুছে গেল। চটজলদি বিলীন হলো ওর ফুরফুরে মেজাজ। আমাকে জিজ্ঞেস করল,
” তুই রাজি?”
” সবাই রাজি থাকলে আমি কেন না বলব?”
আমার কথায় মৃন্ময়ের কি হলো জানিনা, হঠাৎই বসা থেকে উঠে দাঁড়াল ও। ব্যাস্ততা দেখিয়ে বলল,
” একটা কাজ পরেছে,যেতে হবে। আসি।”
পেছন থেকে আমার হাজারটা ডাক অবজ্ঞা করে মৃন্ময় এগিয়ে যায়। আমি বিভ্রান্ত হয়ে চেয়ে রইলাম। ওকে কেমন অন্যরকম লাগল না?

তারপর থেকে আমাদের আড্ডা খুব একটা জমেনা। ক্লাশ শেষে এক জায়গায় বসলেও মৃন্ময়ের হু, হা ব্যাতীত উত্তর নেই। যেন কাঠের পুতুল! আমার বিরক্ত লাগতো। কতবার জিজ্ঞেস করেছি ‘ কী হয়েছে বল! ‘
কিন্তু না। ছেলেটা পণ করেছে মুখ খোলা বারন। শুধু অদ্ভূত ভাবে তাকাতো। দৃষ্টিতে যেন কতশত ব্যাকুলতা। আমি প্রশ্ন করতাম,
” কিছু বলতে চাস?”
মৃন্ময় প্রত্যেকবার মাথা দোলাতো। কিছু বলার নেই ওর।

তারপর পাত্রপক্ষ দেখতে এলো আমায়। মৃন্ময়কে বলে ছিলাম আগেই। পছন্দ হলে আংটি পরিয়ে যাবেন। মৃন্ময় নিশ্চুপ ভাবে শুনেছে। ফেরার আগে শুধু বলেছিল,
” বেস্ট অফ লাক!”
ওর কন্ঠস্বর কাঁপছিল। তিরতির করে নড়ছিল অক্ষিপল্লব। আমি সেদিনও জিজ্ঞেস করলাম,
” তুই কিছু বলতে চাস?”
সেবারেও মৃন্ময় মাথা নাড়ল।

ঐদিন হঠাৎ ওর নম্বর থেকে ভিডিও কল দেখে চমকে গেলাম। আমরা মেসেজে কথা বলেছি,কলে বলেছি। কিন্তু আজ প্রথম বার মৃন্ময় ভিডিও কল দিয়েছে আমায়। ঠোঁটে হাসি টেনে রিসিভ করলাম। ওপাশের অগোছালো মৃন্ময়টাকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে বললাম,
” এরকম দেখাচ্ছে কেন তোকে?”
মৃন্ময় উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করল,
” সাজিসনি কেন?”
” এইতো বসব। তা হঠাৎ ভিডিও কল?”
মৃন্ময় দুর্বোধ্য হেসে বলল,
” দেখতে চাইছিলাম, অন্যের জন্যে সাজলে তোকে কেমন লাগে!”

তারপর খট করে লাইন কাটলো ও। আমি হাজারবার কল করলেও ধরেনি। ঠিক তার দুদিন পর ভার্সিটি গেলাম। মৃন্ময়ের সাথে দেখা হলো। আমার চেহারার দিক না দেখে ও আগে তাকাল আমার অনামিকায় দখলকৃত স্বর্নের আংটির দিকে। আমি পরিষ্কার দেখলাম ওর পানসে চেহারা, কাঁপতে থাকা পুরো,কৃষ্ণবর্ন পোড়া ঠোঁট। মৃন্ময়
সময় নিয়ে আমার দিকে তাকাল। ক্ষীন হেসে বলল,
” কংগ্রাচুলেশনস! ”
” থ্যাংক্স! ফোন ধরিস না কেন তুই? ”
মৃন্ময় কথাটা সম্পূর্ন অগ্রাহ্য করে বলল,
” বিয়ে কবে?”
” ফাইনাল পরীক্ষার পরপরই।”
” ছেলে কী করে?”
” আর্কিটেকচার! ”
মৃন্ময় ছোট করে বলল ” ওহ।
আমি দীর্ঘ হেসে বলল ” হ্যা। ভালোই হবে বল!”
মৃন্ময় নির্নিমেষ চেয়ে রইল কিছুক্ষন। নিপুন মনোযোগে আমার হাসি দেখে ঢোক গিলে বলল,
” হয়ত৷”

দেখতে দেখতে আমাদের ইয়ার ফাইনাল ঘনিয়ে আসে। পুরো দমে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে লেগে পরলাম সকলে। ঠিক পরীক্ষার আগে আগেই শুনলাম, মৃন্ময় পরীক্ষায় বসবেনা এবার৷ আমি অবাক হলাম। পুরো ভার্সিটিতে ওকে খুঁজে বেড়ালাম। অপেক্ষা করলাম, ও আসেনি। শেষমেষ অধৈর্য হয়ে হামলা দিলাম ওদের বাড়িতে। আন্টি-আঙ্কেল আমায় আগে থেকে চিনতেন। এই ক বছরে আমরা একে অপরের বাড়িতে বহুবার গিয়েছি।

আন্টির থেকে শুনলাম মৃন্ময় বাগানে হাঁটাহাঁটি করছে। আমি ত্রস্ত পায়ে রওনা হলাম সেদিকে। ভাগ্যবশত মহারাজকে পেয়েছি। গাছের সাথে হেলান দিয়ে সিগারেট ফুঁকছে। আমি দ্রুত এগিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঠোঁট থেকে আধপোড়া সিগারেটটা টেনে নিয়ে ফেলে দিলাম মাটিতে। রেগেমেগে বললাম,
” পরীক্ষা কেন দিবিনা, কী সমস্যা তোর?”
মৃন্ময় পরপর কতগুলো হোচট খেল। আমার একেকটা কাজে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল কিছুক্ষন। আমাকে এখানে একদমই আশা করেনি সে। পরের দফায় ধাতস্থ হয়ে আরেকদিক চেয়ে বলল,
” ভালো লাগছেনা তাই।”

কণ্ঠস্বর ভারি, ভাঙা। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
” এটা কেমন কথা হলো মৃন্ময়?
তুই এতো ব্রাইট স্টুডেন্ট, তুই পরীক্ষা দিবিনা তাও ভালো লাগছেনা তাই?”

মৃন্ময় তাকাল।
” হ্যা, তাই।”

” তোর হয়েছেটা কী বলবি একটু?”
” তুই কে,যে বলতে হবে?”
আমি মুখ কালো করে বললাম
” আমি তোর কেউনা?”
মৃন্ময় মুখের ওপর বলে দিলো
” না।”
কাঠখোট্টা জবাবে ভীষণ কষ্ট পেলাম আমি। কিন্তু দমে যাবনা।
উলটে জেদ দেখিয়ে বললাম,
” তুই বললেই হবে? আমি জানি আমি কে! একটা কথা পরিষ্কার শুনেনে মৃন্ময়,তুই পরীক্ষা দিচ্ছিস ব্যাস।”
মৃন্ময় স্থির চাউনীতে চেয়ে বলল,
” কীসের এত অধিকার বোধ তোর?”
আমি জোর গলায় বললাম
” বন্ধুত্বের।”
মৃন্ময় হাসল। বিড়বিড় করে অনীহ কন্ঠে বলল ” বন্ধুত্ব মাই ফুট!”
আমার রাগ হলো খুব। ইচ্ছে করল কষে এক থাপ্পড় লাগাতে।
মৃন্ময় হঠাৎ নিজে থেকেই বলে ওঠে,
” আমি চাকরি করব।”
আমি হা করে বললাম,
” চাকরি করবি মানে? তুইতো পাশই করিসনি। কে দেবে চাকরি? ”
” জানিনা। চাকরি করব, নিজের পায়ে দাঁড়াব। যাতে বেকার বলে কেউ আমার হাত ধরতে ভয় না পায়।”

আমার মেজাজ খারাপ হলো।
” তোর মাথা ঠিক আছে? তুই না বলেছিলি তোর চাকরি-বাকরি ভালো লাগেনা৷ করলে ব্যাবসা করবি? তাহলে এখন উল্টোপাল্টা বলছিস কেন?”

শান্ত থাকা মৃন্ময় আচমকা ক্ষেপে গেল৷ রাগে আগুন হয়ে বলল,
” হ্যাঁ, আমিতো উল্টোপাল্টাই বলি। আর তুই,তুই কী করছিস মিষ্টি? চারটে বছর ধরে তোর সঙ্গে ছায়ার মত আমি ছিলাম। তোর সাথে যা ঘটতো,হোক ভালো বা খারাপ,সবার আগে আমাকে জানাতি। তুই অভিমান করলে পেছন পেছন ঘুরে তোর রাগ ভাঙিয়েছি আমি, এক্সাম হলে তোর হাত ব্যাথা করলে নিজের লেখা ফেলে তোকে লিখে দিয়েছি আমি, তোর মন খারাপ হলে মাঝরাতে ছাদে গিয়ে গান শুনিয়েছি আমি, তোর আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করলে সব কাজ ফেলে এক ছুট্টে গিয়ে আইসক্রিম এনেছি আমি,তুই অসুস্থ হলে যত রাত হোক,হলের নিচে ওষুধ দিয়ে এসেছি আমি। প্রত্যেকটা মুহুর্ত তোকে নিয়ে ভেবেছি। তোর জন্যে কোনও মেয়ের দিকে তাকাইনি অবধি। আর সেই তুই? তুই কীনা শেষমেষ আমার এত যত্ন, এত ভালোবাসা পায়ে ঠেলে অন্য কাউকে বিয়ে করতে যাচ্ছিস? বাহ, মেয়ে মানুষ বাহ!

মৃন্ময় হাততালি দিলো। আমি স্তব্ধ হয়ে বললাম,
” তুই আমায় ভালোবাসিস?”
মৃন্ময় থমকাল খানিক। দৃষ্টি এড়াতে আরেকদিক তাকাল। থমথমে কণ্ঠে বলল,
” বাসলেও বা! তাতে তোর কী? ”

” কখনও তো বলিসনি ভালোবাসিস!”
” তুই কখনও জানতে চেয়েছিস?”
” হাজারবার তো জিজ্ঞেস করেছি,কিছু বলবি কী না! কেন মাথা নাড়তি তখন? ”
” কিছু বলব কী না,আর ভালোবাসি কী না, দুটোর মধ্য আকাশ-পাতাল তফাৎ। যদি তোর বোধশক্তি থাকতো এসব আলাদা করার,তবে আজ নাঁচতে নাঁচতে বিয়ের পিড়িতে বসতে যেতে পারতিনা। যাকগে,
তুই এই মুহুর্তে আমার সামনে থেকে চলে যা মিষ্টি। গিয়ে ঝুলে পর তোর ওই আর্কিটেকচারের গলায়। আমার সামনেও আসবিনা। আমি কোনও সিনক্রিয়েট করার আগে ভাগ এখান থেকে।”

কথাটায় আমার প্রতি মৃন্ময়ের প্রচন্ড রাগ ঝরলেও আমি শব্দ করে হেসে ফেললাম। মৃন্ময় তাজ্জব বনে তাকাল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
” তোর হাসি পাচ্ছে?”

আমি হাসি থামালাম খুব কষ্টে। বললাম,
” পাবেনা? তোর মত গর্দভ যার জীবনে থাকবে তাকে তো সারাজীবন কেঁদেকেটে ভাসাতে হবে। তাই আগেভাগে হেসে নিচ্ছি।”
মৃন্ময় চোখ- মুখ গুছিয়ে তাকাল। এই মুহুর্তে আমাকে যে ভীষণ বিরক্ত লাগছে ওর, তা চেহারায় স্পষ্ট। আমি একটু এগিয়ে গেলাম। আস্তে করে বললাম,
” বুদ্ধু! আমার বিয়ে টিয়ে কিচ্ছু ঠিক হয়নি। ”
মৃন্ময় চকিতে তাকাল।
” তবে যে বললি…”
” মিথ্যে বলেছি।”
মৃন্ময় আকাশ থেকে পরল।
চোখ পিটপিট করে বলল ” তাহলে এই আংটি…”
” আমি কি তোকে একবারও বলেছি এটা পাত্রপক্ষ দিয়েছে? এটা থার্ড সেমিস্টারে ভালো রেজাল্ট করায় মা গড়িয়ে দিয়েছেন আমাকে। ”
তারপর মিটিমিটি হেসে বললাম,
” আমি আগে থেকেই জানি তুই আমায় ভালোবাসিস। শুধু দেখতে চাইছিলাম তুই কী করিস! কতবার চেয়েছি নিজে মুখ ফুঁটে বল ভালোবাসার কথা। কিন্তু না,তুইতো প্রতিজ্ঞা করেছিস, মুখে কুঁলুপ এঁটে থাকবি। তাইজন্যেই না ঝুড়ি ভর্তি এত এত মিথ্যে বানিয়ে বলতে হলো আমায়।”

মৃন্ময় কতক্ষন তব্দা খেয়ে চেয়ে থাকল আমার দিকে। আমি ভেবেছিলাম,বিয়ের এই মিথ্যে নাটকের কথা জেনে খুশি হবে ও। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে সে কটমটিয়ে বলল,
” মিষ্টি,তোকে আমি…..”
মৃন্ময়কে তেড়ে আসতে দেখেই ভয় পেয়ে দৌড় লাগালাম আমি। আর ও রীতিমতো ছুটল আমার পেছনে৷
নরম ঘাসের ওপর ভেসে আসছে আমার পায়ের নূপুরের ঝুনঝুন শব্দ, সাথে খিলখিল করে হাসছি আমি। পেছনে ধাওয়া করছে মৃন্ময়। পুরোনো বাগান জুড়ে চলছে আমাদের বিচরন। আমি ছুটতে ছুটতে পেছনে তাকাই। মৃন্ময়ের কোকড়া চুল বাতাসে দুলছে। অবিন্যস্ত শার্টের ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে ফর্সা বুক। সাথে চোখ রাঙিয়ে সতর্ক করছে,
” পালাবি না একদম। দাঁড়া বলছি…”

আমি থেমে নেই । ছুটছি তাও। খুব করে চাইছি, এই সময়টা এখানেই থেমে যাক। মৃন্ময় এভাবেই ছুটুক আমাকে ধরতে। আর আমি মিছে মিছে পালিয়ে বেড়াব। তারপর ঠিক এইভাবেই রচিত করব আমাদের গল্প৷ খুব কি খারাপ হবে ব্যাপারটা?

(সমাপ্ত)

#আমাদের_গল্প
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
অনুগল্প।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here