আমায় রেখো প্রিয় প্রহরে পর্ব -০২+৩

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_২
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা

স্তব্ধ, তটস্থ, ভয়াতুর চোখে অভিকের দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও চোখ নিচে নামিয়ে রাখলো সুজানা।

অতিরিক্ত ভয়ভীতির কারণে ইতোমধ্যে ঘাম দিয়েছে কপালে। অভিকের সূক্ষ্মদৃর্ষ্টি তখন সুজানার দিকে উত্তরের অপেক্ষায়।
নিজেকে প্রস্তুত করে সুজানা স্বাভাবিক গলায় বলার চেষ্টা করে বলল..

মেহুল? কে মেহুল? আমি তো ওই নামে কাউকে চিনিনা।

অভিকের তীর্যক অবলোকন তখনও তারদিকে। যেন কিছু একটা ভালো করে ঠাহর করতে পারছে সে।

না, এই জায়গায় মেহুল নামের কারো থাকার কথা ছিল নীল শাড়ি পড়ে। ঠিক এরকম যেমনটা আপনি পড়ে আছেন।

সুজানা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল

আমি এখানে অন্য কাজে এসেছি। আপনার মেহুল বোধহয় অন্য কেউ। আমি আসি। হ্যা?

বলেই শাড়ির আঁচল টেনে কপাল ছুঁয়ে ঘাম মুছলো সে। বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে। কেন জানি মনে হচ্ছে ভীষণ সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটা । এখনি ডাকবে। থামতে বলবে। সে বাজেভাবে ধরা পড়বে।

কিয়ৎক্ষণ পার হতেই হাতের পার্সে ‘ র ভেতর বেজে উঠলো ফোন। মেহুলের ফোন ভেবে ফোনটা তুলতেই সুজানা দেখলো ‘ Ovik Fardin ‘ নামে সেইভ করা। সাথে সাথে ঘাড় ঘুরালো সে। লোকটার ঠোঁটের কোণায় তখন ক্রুর হাসি। হাতে ধরা ফোন। ইশারায় সুজানাকে ফোনটা তুলতে বলল অভিক।

সুজানা ফোনটা রিসিভ করে কানে লাগালো ।

এই লোকটার নাম কি তবে অভিক ফারদিন? হ্যা উনি সেটাই তো বললেন কিছু আগেই। এত চালাক লোক। আর মেহুল কিনা বলল এই লোক সাদাসিধা?

তরতরিয়ে ঘাম দিল তার সারামুখে। এমন পরিস্থিতিতে সে কভু পড়েনি। অভিকের অন্তর্দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে সে পিছু করে দাঁড়ালো। ফোন ধরা হাতটা কাঁপছে ঠিক তখনি ফোনের ভেতর থেকে বাতাসের হিসহিস শব্দের সাথে ভেসে এল…

আপনি ধরা পড়ে গেছেন সুজানা। আমি বুঝে গিয়েছি আপনি আমার জন্যই এখানে এসেছেন? এখন বলুন আমি আপনার কাছে যাব নাকি আপনি নিজেই এখানে আসবেন?

সুজানা ধরা পড়া অপরাধীর মতো অসহায় হয়ে ফিরে তাকালো। তার বুকের মতো এখনো ঢিপঢিপ করছে। এই মুহূর্তে তার ঠিক কি করা উচিত তা সে বুঝে উঠতে পারছেনা। কি করবে এখন সে?

অভিক নিজেই এগিয়ে এল।

সুজানা অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ভেতরকার উদ্রেক তখন হু হু করে বেড়েই চলেছে।

এত লুকোচুরি কেন সুজানা? আমাকে সত্যিটা বলতে পারেন।

সুজানা মুখ খোলার আগেই অভিক তর্জনী দেখালো তার মাথার সিঁথির দিকে। সুজানা সে ইশারায় মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা টের পেয়ে ভয়ে হাত নামিয়ে নিল। চোখেমুখে ত্রাস। কি ওটা?

অভিক হাত বাড়িয়ে কোনো স্পর্শ ছাড়াই বস্তুটি নিয়ে সুজানার সামনে ধরলো। ইশারায় আকাশমণি গাছটা দেখিয়ে দিয়ে বুঝালো এটা আকসশমণি গাছের ফুল।

সুজানা স্বস্তি পেল। দম ফেলে কিছু বলার আগেই অভিক বলল…

মেহুলের ফোন আপনার কাছে? তারমানে আপনাকে মেহুল পাঠিয়েছে?

সুজানা সাহস সঞ্চয় করে বলল..

আপনি বুঝলেন কি করে আমি মেহুল নই?

অভিক ফোনের স্ক্রিনে সুজানার দিকে ফিরিয়ে বলল

দেখুন তো এটা মেহুল কিনা।

মেহুলের মুখের একটা পাশ দেখা যাচ্ছে যেটা সে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েছিল। এই লোক তো ধুরন্ধর চালাক।

আপনি আমাকে সত্যিটা বলবেন সুজানা?

সুজানা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। সত্যিটা সে বলে দ্রুত প্রস্থান করবে এখান থেকে। তার মানসম্মান সব ধুলোয় মিশে গেল আজ অজানা অপরিচিত একটা ছেলের সামনে।

ধীরস্থির গলায় বলা শুরু করলো সে।

মেহুলের অন্য এক জায়গায় সম্পর্ক আছে। ও এই বিয়েতে রাজী না। সে আজ আসতে পারছেনা তাই আমাকে পাঠিয়েছে। আশা করি বুঝেছেন আমি কি বলতে চাইছি।

বুঝেছি।

সুজানা চোখের পলক তুলে আবার নিচে নামিয়ে নিল। বলল

তাহলে বলবেন যে মেহুলকে আপনার অপছন্দ। আপনি এই সম্বন্ধে রাজী না। মেহুলের সাথে অন্য কারো যে সম্বন্ধ এটা বলবেন না প্লিজ।

পুরোটা এক নিঃশ্বাসে বলে হাঁপিয়ে উঠলো সুজানা।
তাড়া দেখিয়ে বলল

আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

বুঝেছি।

তাহলে আসি।

পা বাড়াতেই অভিক তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

সুজানা। সত্য বলার জন্য থ্যাংকস। মেহুলের ব্যাপারটা এখানেই শেষ। আপনি যেমনটা বলেছেন আমি তেমনটাই বলব। বাট আপনার ব্যাপারটা এখানেই কিন্তু শুরু। আবারও দেখা হবে সুজানা। বাই।

সুজানাকে যেতে হলো না।

বরঞ্চ অভিক নিজেই কথাটা বলে হেসে পিছু হাঁটতে হাঁটতে প্রস্থান নিল। সুজানা বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।

_________________________

কান ধরে কয়েকবার উঠবস করলো মেহুল। শান্তা গুনতে গুনতে বলল

দোস্ত দশ হয়নাই। জানু দেখ ও চোরামি করে।

সুজানা তখন মলিন মুখে বেঞ্চির উপর বসে রয়েছে। কাগজ ছিঁড়ে বেঞ্চি মুছতে মুছতে শান্তা আবারও চিল্লিয়ে উঠলো

পাঁচ হয়ছে মাত্র। আরও পাঁচ। ওই মরছোস নাকি জানু?

তোরা চুপ করবি? মেহুল আমার সামনে থেকে সর। ভালো লাগছেনা আমার।

মেহুল অপরাধীর ন্যায় অনুতপ্ত হয়ে সুজানার কাছে এসে হাঁটুমুড়ে বসলো। বলল

সরি রে তোরা যে আগে থেকে পরিচিত ছিল আমি কি জানতাম নাকি?

হোয়াটসঅ্যাপে যে ছবি দিয়ে রেখেছিস খেয়াল ছিল না?

মেহুল বিস্মিত হয়ে বলল

হোয়াটসঅ্যাপ? কিন্তু উনার সাথে তো আমার হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়নি।

কথা হয়নি তো কি হয়েছে। লোকটা কিরকম চালাক তুই নিজেই জানিস না। কাউকে বোকা ভাবার আগে দশবার ভেবে নিবি। কয়টা বাজে দেখ। টিউশনিতে যেতে হবে। মাথাটা খারাপ হয়ে গেল।

শান্তা তারপাশে ধপাস করে বসে পড়ে বলল

এই তোরে পোলাটা চিনে কেমনে? নাকি তলে তলে কিছু চলে?

চুপ থাক। ফালতু কথা বলিস না। কয়টা বাজে দেখতে বলছি।

মেহুল হাতের ঘড়ি দেখে বলল…

তিনটা চৌদ্দ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে।

আর আমাকে এখন বলছিস? তোরা না আমাকে বুঝতেই চাস না। আজকে প্রথম দিন দেরী হলে কি হবে বুঝতে পারছিস? আজকের পুরো দিনটাই খারাপ যাচ্ছে।

মেহুল তার পাশে বসে গিয়ে শান্তাকে বলল

তুই আরেকটু যা না।

শান্তাকে সরে বসলো। মেহুল আরাম করে বসে সুজানাকে জড়িয়ে ধরলো।

আমি সরি রে দোস্ত। আর কখনো এমন হবে না। এখন ওই মানুষটা বাড়িতে গিয়ে তুই যেমনটা বলেছিস তেমনটা বললেই হলো। আমার উপর রেগে থাকিস না প্লিজ।

সুজানা দাঁড়িয়ে পড়লো। পার্স নিয়ে বলল

রাগ করিনি। বাড়ি যাহ। আমি টিউশনি শেষে বাড়ি ফিরব।

শান্তা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল

তুই এতদূরে টিউশনি নিলি কেন?

টাকা বেশি তাই।

তাই বলে,,

এর চাইতে ভালো পেলে ছেড়ে দেব।

তাহলে তো ভালো। সাবধানে যাস।

সুজানা কিছুদূর যেতেই মেহুল ডাকলো।

জানু!

সুজানা ঘাড় ঘুরাতেই মেহুল দু’হাতে কান ধরলো।

সরি রে দোস্ত।

সুজানা চলতে শুরু করলো আবার। হাসিটুকু দেখালো না তাদের।

_____________________

রিকশা থেকে নেমে বাড়িটির গেইটের দিকে তাকালো সুজানা। নবকুঠির লেখা আছে। ভাড়া মিটিয়ে গেইট ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দু’জন একজন মহিলা আর একজন লুঙ্গি পড়া লোকের দেখা মিললো। মহিলাটি এগিয়ে এল। জানতে চাইলো…

কে গো তুমি?

আমি? আমি সুজানা।

কোন জানা সেটা তো জানতে চাইনি বাপু। ক্যান আইলা এই বাড়িত?

লোকটা এগিয়ে এল। গলার একপাশে গামছা ঝুলিয়ে বলল

সর তো। অপরিচিত মানুষের সাথে সুন্দর কইরা কথা বলতে পারোস না?

তুমি কারে চাও মা?

আমি অনা আর আবিদকে পড়াতে এসেছি কাকা। উনারা আছেন?

হ হ আছে। ওহ আইচ্ছা বড় সাহেব এর কথা বলছিলেন। আসো আসো। আমরা তোমার পথ চাইয়্যা বইসা আছি। আসো।

এই জমিলার মা ওনারে ভেতরে নিয়া যা।

মহিলা মাথা দুলালো।

আইচ্ছা। এই মাইয়্যা আসো।

বাড়ির ভেতর পা রাখতে না রাখতেই ড্রয়িংরুমের সোফায় পশ্চিমুখী হয়ে বসে থাকা দু একটা পুরুষের মাথা দেখা গেল। সুজানাকে জমিলার মা নিয়ে গেল অন্যদিকে। তারপর ডাকাডাকি করতেই
সেই বাড়ির বড় বউ আনিকা এগিয়ে এল।

সুজানা আপনি এসেছেন? আমি আরও আপনাকে ফোন দিতে যাচ্ছিলাম।

আনিকাকে দেখে সুজানার চিনতে ভুল হলো না ইনিই অনা আর আবিদের মা।

হ্যা আমার একটু দেরী হলো।

সমস্যা নেই। ওরা মাত্রই ঘুম থেকে উঠলো।

রান্নাঘর থেকে কোন একটা মহিলার চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসছে। আনিকা ম্লান হেসে বলল

উনি আমার চাচীশ্বাশুড়ি। মর্জিনা খালাম্মার সাথে চেঁচামেচি করছেন। অন্য কিছু না।

সুজানা মাথা নাড়ালো।

ওই ওখানে আবির বাবা, আর দাদারা বসে আছে। ওদের সাথে পরে পরিচয় করিয়ে দেব। চলুন আপনাকে ওদের রিডিং রুমে নিয়ে যাই।

সুজানা মাথা দুলালো।

তারা দোতলায় যাওয়ার মধ্যিপথে পেছন থেকে একটা ছোট বাচ্চার ডাকে থেমে গেল।

টিচার টিচার আসসালামু আলাইকুম।

আনিকা হাসলো।

ও আবিদ।

সুজানা হেসে সালামের উত্তর দিল। বলল

কেমন আছেন আপনি?

খুুব ভালো টিচার।

আপনার বোন কোথায়?

পাপার ভালো মিয়ে ওখানে টিচারের জুন্য বসি আছে।

আনিকা ঠোঁট টিপে হাসলো।

অনাকে পাপার ভালো মেয়ে বলে।

সুজানা হেসে বলল

কেন আবিদ কি ভালো না?

পাপা অনাকে বিশি ভালো মিয়ে বলে।

বলতে বলতেই চেহারাটা তার মলিন হয়ে এল।

সুজানা গাল টেনে দিয়ে বলল

আচ্ছা। আবিদকেও ভালো ছেলে বলবে। আমরা অনার কাছে যাই?

আনিকা বলল

আবি টিচারকে রুমে নিয়ে যাও। আমি এক্ষুণি আসছি ওকে?

ওকে আম্মু। টিচার কাম উইথ আবি।

সুজানা মিষ্টি হেসে মাথা দুলালো। কি সেয়ানা ছেলেরে বাবা। পড়ায় সেয়ানা হবে কি না কে জানে?

সুজানার আঙুলটা ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে একসময় আবিদ থেমে গেল। প্যান্টের মধ্যিখানে চেপে ধরে বলল

উফফ আবির সুসু পেয়েছে টিচার। আম্মুর কাছে যাব।

আচ্ছা আমাকে আগে অনার কাছে নিয়ে যাও।

আবিদ ইশারায় লিভার কাঠের দরজা দেখিয়ে দিল। বলল…

ওখানে পাপার ভালো মিয়ে আছে। টা টা টিচার। আবি এখুনি আসবে।

বলেই একদৌড় দিল সে।

সুজানা হাঁফ ছেড়ে এগিয়ে গেল। দু তিনবার দরজার সিলভার নব ঘোরালেও দরজা খুললো না। আরেকবার ঘোরাতেই দরজা খুললো নাকি ওপাশ থেকে দরজা খুলে দিল সেটা বুঝা গেল না। তবে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ অবয়বটি দেখে দু তিনবার চোখ পিটপিট করলো সুজানা। শুকনো ঢোক গিলে দু পা পিছু সংকোচে জড়সড় হয়ে দাঁড়ালো। আজকের দিনটা সত্যিই তার খারাপ। নইলে শুধু এই লোকের সামনে পড়ছে কেন সে বারবার?

কেমন নির্বাক অসহায় অবলার মতো ভীতু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো সুজানা। অভিক বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো। হেসে বলল…

আজকের দিনটা ভালোই যাচ্ছে।

সুজানা আমতাআমতা করে কিছু বলার আগেই অভিকের পেছন থেকে একটা ছোট পুতুলের মতো বাচ্চা মেয়ে উঁকি দিল।
সুজানাকে আগাগোড়া দেখে বলল

আসসালামু আলাইকুম টিচার।

সুজানা নির্বাক তাকিয়ে থাকলো।

মেয়েটা দুগালে হাত রাখলো।

ওয়াও টিচারকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে । অভি অভি তোমার কি টিচারকে পছন্দ হয়েছে?

অভিকের ইশারায় থেমে গেল অনা। ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে থেমে গেল।

সুজানা বড় বড় চোখে তাকালো।

ওরে বাপরে এগুলা কি? কাদের পড়াতে এসেছে সে? কি পাকা পাকা কথা বলে।

অভিক দরজার সামনে থেকে সরে পড়লো।

সুজানাকে ভেতর ঢোকার জন্য বলতেই সুজানা পা রাখলো। অভিক তারপরেই বেরিয়ে পড়লো। অনাকে বলল

ভালো করে পড়ুন আম্মি। ঠিক আছে? টা টা।

ওকে মাই সান তুমি আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবে। কেমন?

অভিক নাড়লো।

ঠিক আছে মাদার। মিস সুজানা ওদের ভালো করে পড়াবেন। পড়া ভালো হলে আরও একজন আপনার কাছে পড়তে আগ্রহী।

সুজানা ভেতরে ভেতরে বিড়বিড় করলো

কাল থেকে আসবই না আমি। হুহ।

অনা ভুরু কুঁচকে একবার অভিক আরেকবার সুজানার দিকে তাকালো। আঙুল দিয়ে অভিককে নিচু হতে বললো।

অভিক মাথা নিচু করে কান রাখলো অনার মুখের সামনে। অনা কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল..

অভি অভি তুমি টিচারের কাছে পড়তে চাও?

অভিকও ফিসফিস করে বলল

যদি তোমার টিচার রাজী হয়।

অনা মুখে হাত দিয়ে খিকখিক করে হাসলো।

সুজানা আড়ঁচোখে চাচা ভাইঝির ফিসফিসানি চেয়ে রইলো। কাল থেকে সে আসবেনা মানে আসবেনা।

চলবে…….

ভালো লাগলো শেয়ার করবেন। মতামত জানাবেন। 😊🥰#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৩
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা

চারটার ঘরে ঘড়ির কাঁটা পৌঁছে গিয়েছে। অনা আর আর আবিদ তখন অ্যালপাবেট স্কেচবুকে ঘষাঘষি করছে পেন্সিল দিয়ে। দুজনেই এতক্ষণ বকবক করে মাথা খেয়েছে তার। মাথাটা ঝিমঝিম করছে সেই তখন থেকে। আজ বাড়িতে গিয়ে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়বে সে। বৃষ্টিতে ভেজায় গায়ে তাপমাত্রার লক্ষ্মণ বুঝা যাচ্ছে। উফফ একদিনে এত চাপ নেওয়া যায়?
আনিকা তখনি নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে এল। ট্রেবিলের উপর ট্রে রাখলো। তিন চার প্রকার নাশতার আইটেম আর চায়ের পেয়ালা। সুজানা বলল…

এসব কেন করতে গেলেন? আমার চলে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।

এত তাড়া কিসের? সন্ধ্যা হলেও সমস্যা নেই। আপনাকে গাড়িতে তুলে দিলে হয়ে যাবে। নিন মিষ্টি খেয়ে নিন। অনা কাল রাতেই তার বাবাকে টিচারের জন্য বালুসাই মিষ্টির আনার কথা বলেছে। টিচারকে নাকি প্রথমদিন মিষ্টি খাওয়াতে হয়।

সুজানা অনার দিকে তাকাতেই
অনা মাথা তুলে চোখ পিটপিট করে চাইলো। সুজানার সাথে মিষ্টি করে হাসলো।

আর আবিদ বলল টিচারের জন্য ছানার পায়েস। না খেলে ওরা টিচারের উপর খুব রেগে যাবে। চায়ে চিনি কম না বেশি।

মাঝামাঝি হলেই চলে।

আচ্ছা আমি সেভাবেই দিয়েছি। খেয়ে নিন।

আবিদ পেন্সিল রেখে চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে পড়লো। আনিকা বলল

এই এই কি হচ্ছে আবি?

টিচারকে মিষ্টি খাওয়াবু না?

সুজানা ঠোঁট টিপে হাসলো। আনিকা বলল

টিচার খেতে জানে। তুমি বসো।
আমি যাই সুজানা। ওদের বেশি লাই দেবেন না কিন্তু। একদম মাথা চিবিয়ে খাবে। পরপর চারজন টিচার পালিয়েছে ওদের বাঁদরামির জন্য। বকুনি দেন। এই মন দিয়ে পড়ো তোমরা।

আনিকা চলে যেতেই সুজানা আবিদের দিকে মিষ্টির প্লেট ঠেলে দিল। বলল

মিষ্টি খাওয়াবেন না?

আবিদ প্রচন্ড খুশি হলো। খপ করে হাত দিয়ে বালুসাই গালের ভেতর পুরোটা দিয়ে আরেকটা খপ করে তুলে নিয়ে সুজানার দিকে বাড়িয়ে দিল। সুজানা বড় বড় চোখ করে কিছু বলার আগেই টেবিলের উপর উঠে সুজানার গালের ভেতর পুরোটা মিষ্টি পুরে দিল।

তারপর নিজের গালের ভেতর থেকে মিষ্টিটা বের করে একটু একটু করে খেতে লাগলো। অনা রেগেমেগে বলল

আবি পঁচাআআআআ।

আবিদ চোখ গরম করে চাইলো। খেতে খেতে বলল

বালু মোজা নাই।

সুজানা বলল

এই এই কোনো ঝগড়া না।

দুজনেই এবার শান্ত হলো।

সুজানা তাদের হোমওয়ার্ক দিয়ে উঠে পড়লো। আজ পড়ায়নি কিছু। কথা বলতে বলতে সময় কেটে গেছে।

সুজানার সাথে সাথে দু’জন নিচে গেল। সেখানে সবাই মিলে বেশ গল্পগুজব চলছে। গল্পের বিষয়বস্তু মেহুল নামের কাউকে নিয়ে।

মেয়ে তো পেটে ধরিনি তাই বলতে পারিনা আজকালকার মেয়েদের রঙঢঙ। নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা আছে ওই মেয়ের মধ্যে নইলে অভি কি এমনি মানা করে দিয়েছে ? যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।

সুজানাকে দেখে সালমা বেগম চুপ করলেন বটে তবে ভুরু কুঁচকে চেয়ে রইলেন। আনিকা বলল

সুজানা আসুন সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।

আজ থাক না।

আরেহ থাকবে কেন? আসুন আসুন।

সুজানা ম্লানমুখে হাসলো। আজাদ সাহেব আর আজীম সাহেব দু-ভাই তাদের দু ছেলের সাথে বসেই গল্পগুজব করছিলেন। সুজানাকে দেখে তাদের খোশগল্পে নীরবতা নেমে এল। আনিকা বলল

উনারা ওদের বড় আর ছোট দাদাভাই। আর উনি ওদের বাবা আর উনি চাচ্চু। উনারা দু’জন আমার শ্বাশুড়ি। ওদের দাদু আর ছোট দাদু।

সুজানা সালাম দিতেই আজাদ সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে বললেন

ওয়ালাইকুমুস সালাম। তোমার বাবার নাম কি? কি করে?

আমার বাবার মরহুম সিরাজুল ইসলাম। তিনি গ্রামের পাঠশালায় পড়াতেন। করিমগঞ্জে সিরাজ মাস্টার নামেই পরিচিত ছিলেন এখনও আছেন। আজ আসি তাহলে।

পিনপতন নীরবতা শেষে মাথা দুলালেন আজাদ সাহেব।

বৌমা নাশতাপানি দিয়েছ মাস্টারকে।

আনিকা মাথা নেড়ে বলল

হ্যা বাবা। অল্পই খেয়েছে।

চেনাজানা হয়নি তাই হয়ত । আব্দুলকে বলো যাতে রিকশায় তুলে দেয়। একা ছেড়ো না। সন্ধ্যা নেমে গেছে।

জ্বি বাবা।

সুজানা আনিকার সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শুনলো কিছু কথোপকথন।

আজওয়াদ মুফতি সাহেব হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভি। উনারা এলাকায় বেশ নাম আছে উনাদের । উনার মেয়ের নামে যথেষ্ট পজিটিভ ফিডব্যাক এসেছে।
মেহুলকে তোমার অপছন্দ হওয়ার কারণটা কি? তোমার কি এর চাইতে স্মার্ট মেয়ে পছন্দ?

আবিদ ততক্ষণে তার কোলের উপর উঠে বসেছে। সে আবিদের সাথে দুষ্টুমিতে মত্ত।

উত্তর না দেয়ায় সালমা বেগম হায়হায় করে উঠে বললেন

খোদা খোদা বিলেতে গিয়ে শয়তানে ধরেছে আমার সাদাসিধা ছেলেটাকে। ছোট ছোট জামাকাপড় পড়া মেয়েগুলোর দিকে নজর গিয়েছে মনে হয়। আমি মরে গেলেও ওরকম মেয়ে ঘরে তুলবো না অভি। মনে রাখিস তুই। হ্যা বলে রাখলাম।

কেউ উনার কথা বিশেষ আমলে নিল মনে হলো না সুজানার। তবে কথাগুলোই ভীষণ হাসি পেল তার।

__________________

রিকশা কিছুদূর যেতে না যেতেই সুজানা রিকশার পেছন থেকে ডাক শুনলো।

আপা? এই আপা?

সুজানা গলা বাড়িয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলো সায়েম। সাইকেল দ্রুত চালাচ্ছে। সুজানা রিকশা থামাতে বললো। ভাড়া মিটিয়ে বলল

চলে যান মামা। আমি আমার ভাইয়ের সাথে যাব।

সায়েম সাইকেল থামিয়ে ঘাড় ঘুরালো।

বাড়িটা না চিনে আমি তার পরের বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেক্ক্ষণ।

সুজানা তার মাথায় চাটি মেরে বলল

পাগল! নবকুঠির বলেছিলাম না?

ওইটাই তো মনে নেই। আম্মা ফোন দিয়ে চিল্লাপাল্লা করছে।

সুজানা সাইকেলের পেছনে বসে বললো।

আজ দেরী হলো। আর কখনো হবে না। চল।

ভাইবোন বাসার কাছাকাছি আসতেই দেখলো একটা যুবক এদিকওদিক পায়চারি করতে করতে কথা বলছে।

সায়েম সাইকেল নিয়ে চলে গেল। সুজানাকে দেখে যুবকও তাকালো। সুজানা বলল,,

সাইফ ভাই কথা আছে।

যুবক হাত দেখিয়ে অপেক্ষা করতে বললো। কথা বলা শেষ করে ভুরু কুঁচকে এগিয়ে এল।

সব ঠিকঠাক?

কি টিউশনির খোঁজ দিলে বাবারে বাবা। কি পাকনা পাকনা কথা বলে দুটো। আমাকে বলে কিনা টিচার টিচার তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তোমার নামটা খুব কিউট।

সাইফ ফোকলা হাসলো। বলল

তুই সামাল দিতে পারবি।

পারব না। আমার জন্য অনেক টাফ ওই বিচ্ছগুলোকে পড়ানো।

আচ্ছা আপাতত পড়া। আরও বেটার ফেলে তোকে বলব। এখন কোথাথেকে টিউশনি দেব তোকে?

আচ্ছা।

তোকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ঘরে যাহ।

সুজানা পা বাড়াতে গিয়ে আবার থেমে গেল। বলল

ওই বাড়ির ছোট ছেলের সাথে মেহুলের বিয়ের কথাবার্তা চলছে।

সাইফ মাথা নাড়লো ধীরেধীরে। বলল…

আচ্ছা।

সুজানা যেতে যেতে ভাবলো

এমা, কোনো প্রতিক্রিয়া নেই?

_________

মেহুলের ফোঁপানির শব্দে সুজানা নিজেই ভড়কে গেল। চুপ করে থাকার কিয়ৎক্ষণ পর বলল

শান্ত হ।

হব না।

আমি আজকে যেখানে পড়াতে গেলাম ওটাই উনার বাড়ি। দেখ তোর জন্য খুব ভালো হবে। খুবই সুন্দর পরিবার। মানুষগুলোকে সাদামাটাই মনে হলো। বিয়ে যে এখনই করতে হবে সেটা তো তোকে বলছেনা।

তুই যা শিখিয়ে দিয়েছিস উনি কি তা বলেনি?

বলেছে। উনার কথা হয়ত কেউ বিশ্বাস করছেনা। ভাবছে নিজের মর্জিমতো বলছে। সবাই তোর নামে ভালোই বলেছে। অপছন্দ হওয়ার কিছু নেই।

মেহুল আবারও ফুঁপিয়ে উঠলো।

না না। আমি পারব না। মা আর বাবা বলল ওই বাড়ি থেকে উনারা আসবেন।

আচ্ছা শান্ত হ।

সুজু এগুলোরে তোর বড় আন্টিকে দিয়ে আয় তো। সাইফ খেতে পছন্দ করে।

সুজানা উপুড় হয়ে শোয়া ছিল। ঘাড় ঘুরিয়ে বলল

কি আম্মা?

ঝাল পিঠা বানিয়েছিলাম। তোর বড়আন্টি সকালেই নাশতা পাঠালো। এই বাসায় উঠেছি পর্যন্ত মানুষটা কম তো আর সাহায্য করলো না। আমি তেমন কিছুই দিতে পারিনা। ধর এগুলো দিয়ে আয়। সাইফকে দেখলাম বাড়িতে আছে। চলে গেলে খেতে পারবেনা। যা তো।

সুজানা দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল

আচ্ছা যাচ্ছি।

সাজেদা বেগম চলে গেলেন।

ওপাশ থেকে মেহুল বলল

ও ঘরে আছে?

সাইফ ভাইয়ের কথা বলছিস?

হ্যা।

মানে আমি যেটা ভাবছি সেটাই কি?

জানিনা। ওকে ফোনটা দিবি।

এমনটা হয় নাকি? উনি আমার অনেক সিনিয়র। আমি ভয় পাই।

আমি পাই না। ফোন দিবি মানে দিবি।

সুজানা নাশতার প্লেটটা নিয়ে দোতলায় নামলো। কলিং বেল বাজাতেই সাইফ দরজা খুলে দিল। কি এনেছিস?

ধরো ফোনটা ধরে তো। প্লেটটা গরম।

সাইফ ফোনটা ধরলো। সুজানা প্লেটটা নিয়ে ভেতরে চলে গেল। সুজানার পেছন পেছন রোজা পেছন পেছন ছুটে বলল

ওমা সুজানা আপু তুমি। কি এনেছ?

নাশতা এনেছি। খাবি আয়।

সাইফ ফোনটা টেবিলে রাখবে এমন সময় ফোন থেকে পরিচিত ফোঁপানির শব্দ ভেসে আসতেই স্ক্রিন লাইট করলো সে। মেহুল নামটা দেখতেই বুকটা কেমন ছ্যাঁত করে উঠলো।

মেহুল ওপাশ থেকে বলল

তোমার ফোনে আজও চার্জ নেই?

চার্জে দিয়েছি।

মেহুল নাক টানছে এখনো।

কেন কাঁদছ? কোনো সমস্যা?

আমি শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে কথা বলব।

আম্মা জানে তো মেহু।

মিথ্যে বলছো।

সত্যি বলছি।

তুমি আজকাল আমাকে বেশি মিথ্যে বলো।

বলেই আবার ফুঁপিয়ে উঠলো সে। সাইফ ধীরগলায় বলল,

আচ্ছা আচ্ছা। এখন কি করলে কান্না থামবে?

কথা বলতে দিলে।

আম্মার সাথে?

হু।

ওকে।

মেহুলের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

সত্যি?

হুমম।

সুজানার সাথে কথা বলছিল রাশেদা বেগম। সাইফ সুজানাকে ডাকলো।

সুজু ফোনটা মাকে দে তো।

সুজানা বিস্ময় নিয়ে তাকালো। ফোনটা রাশেদা বেগমকে দিয়ে বলল

মেহুল।

রাশেদা বেগম হাসলেন। ভাতটা সুজানাকে দেখতে বলে মোড়া টেনে বসে শাড়ির আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে বলল..

ওয়ালাইকুমুস সালাম। ওমা ক্যান কাঁদো আম্মা?

আমি কখন থেকে বলছি আপনাকে ফোনটা দিতে। ও দেয় না। একটা বললে আরেকটা করে।

আচ্ছা ওরে কানটা মলে দিমু।

না।

তো কি করব?

ঘর থেকে বের করে দিন।

আইচ্ছা। আমি তোমার মা বাপের লগে কথা বলুম নিজেই তোমার শ্বশুর আব্বারেও নিয়া যামু। কোনো চিন্তা নাই। কাইন্দো না আর।

মেহুল বলল

সত্যি?

হ।

আচ্ছা।

সুজানা ফোনটা কেড়ে নিল। কেটে দিয়ে বলল,

খেলব না। কেউ আমাকে এতদিন কিছু বলেনি। তলে তলে এতদূর?

রাশেদা বেগম হাসলেন।

আমার বাবু যারে পছন্দ করছে তারে আমারও পছন্দ। মেয়েটা তো ভালেই বল।

খুব খুব। আমার বান্ধবী না? বিয়ে কবে খাব বলোনা।

আগে তোরে দিমু বিয়া।

সুজানা হেসে উঠলো।

আমি চাকরি করবো আন্টি। বিয়ে আমার জন্য না।

মেয়ে যখন হয়েছিস বিয়ে হবেই।

সুজানা চিন্তিত গলায় বলল

আচ্ছা? তাহলে আমার মা ভাইকে খাওয়াবে কে?

__________________

কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে সুজানাকে দেখতে পেয়ে মর্জিনা হাসলো।

ওহ তুমি আইছো। আসো আসো।

সুজানা দেখলো সোফায় মহিলারা বসে আছে। আজ বাড়ির কোনো পুরুষ মানুষ নেই। যাক শান্তি। নইলে অস্বস্তিতে পড়ে সে।

সুজানা সালাম দিতেই সালাম নিলেন উনারা। আনিকা এগিয়ে এসে বললো

সুজানা আপনি এসেছেন? ওরা পড়তে বসেছে এখন। পড়ায় বসিয়ে দিয়েছি। আর বলেছি টিচার আসছে।

আচ্ছা আমি যাই।

পা বাড়াতেই সালমা বেগম ডাক দিলেন।

শোনো মেয়ে।

সুজানা ঘাড় ঘুরালো।

জ্বি।

মেহুল জান্নাত মেয়েটা তোমার বান্ধবী?

জ্বি।

ওর বাবা সরকারি স্কুলের হেড মাস্টার না?

জ্বি।

ওই মেয়েটার স্বভাব চরিত্র কেমন?

জ্বি ভালো।

কোনো চারিত্রিক দোষ আছে?

না।

আচ্ছা যাও।

সুজানা চলে গেল। তবে প্রশ্নগুলো কেন করা হলো তা নিয়ে খচখচানি গেল না।

সিঁড়ি পার হতেই দেখলো রেলিঙ ধরে নিচের দিকে ঝুঁকে আছে অভিক ফারদিন নামের লোকটা। অস্বস্তি আবারও ঘিরে ধরলো তাকে। দ্রুত পা চালাতে গিয়ে মনে হলো লোকটা তার কথাগুলো শুনছিল এতক্ষণ। তাতেই বা কি? সে তো মিথ্যে কিছু বলেনি।

পড়ার রুমে যেতেই দেখলো অনা চেয়ারে বসে আছে আর আবিদ তার চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে আঙুল টিপে টিপে। সুজানাকে দেখেই লম্বা করে সালাম দিল

টিচার আসসালামু আলাইকুম।

ওয়ালাইকুমু সালাম।

আজকে আবি টিচার।

সুজানা হাসলো।

আচ্ছা?

আচ্ছা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়বেন?

আবিদ মাথা দুলালো। অনাও আবিদের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়া শুরু করলো। একসময় পড়া থামিয়ে বলল

টিচার তোমাকে নাইচ লাগছে।

থ্যাংকিউ। পড়ুন ম্যাডাম।

আবিদ বলল

টিচার টিচার তোমাকে সুজান ডাকি?

সুজানা চোখ বড় বড় করে বলল

কিহ?

ওকে সুজান ডাকি। সুজান তুমি পড়া শুরু করো।

সুজানা আরেকদফা চমকালো।

দুজনেই চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে পড়া শুরু করলো। সুজানা কানের ভেতর আঙুল দিয়ে বসে রইলো। আবিদ পা তুলে টেবিলের উপর উঠে এল। সুজানা বলল

কি করছ তুমি?

আবিদ কান্না গলায় বলল

আবি এখানে পড়বে।

সুজানা তার কাঁদোকাঁদো চেহারা দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

আচ্ছা আচ্ছা। পড়েন।

আবিদকে দেখে অনাও টেবিলের উপর উঠে বসলো। দুজনেই টেবিলের উপর বসে পড়তে লাগলো। আনিকা চায়ের ট্রে আনতেই দুজনকে এই অবস্থায় দেখে থমকে গেল। হায় আল্লাহ এসব কি?

সুজানা অসহায় চোখে তাকালো।

না এভাবে না পড়তে না দিলে, পড়বেনা ম্যাডাম। তাই এই অবস্থা। থাক পড়লেই হলো।

আনিকা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে চলে গেল। সুজানা চেয়ারে বসে রইলো। ওরা দু’জন টেবিলের উপর বসে চিল্লিয়ে পড়তেই আছে।

সুজানা কানের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে বসে রইলো। চা’টা শেষ করতেই দেখলো সামনেই একটা কফির মগ রাখা। কে রেখেছে সেটা দেখার জন্য পাশে তাকাতেই অভিককে দেখে শিউরে উঠলো।

কফিটা খেতে পারেন সুজানা। ভালো বানাতে পারি।

কিন্তু আমি এখন চা খেয়েছি।

দু’টোই খাওয়া যায়। আমার চায়ে তিন চামচ চিনি লাগে তাই মা ছোটবেলায় আমার চা খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ডায়াবেটিসে ধরবে বলে। খান।

সুজানা মগটা হাতে নিল। অভিক মগে চুমুক দিতে দিতে আবিদ আর অনাকে টেবিলের উপর পড়তে দেখে নিঃশব্দে হাসলো। দুজনেই জিনিয়াস।

সুজানা ঢকঢক করে কফিটা খেয়ে খালি করতেই অভিক বলল

সুজানা বড্ড তেঁতো। রাইট?

সুজানা মাথা নাড়ালো।

ইয়েস। কেউ মুখে দু’রকম কথা বললে ঠিক এমনটা তেঁতো ঠেকে।

সুজানা চোখ পাকিয়ে তাকালো।

অভিক হাসলো।

অনা মুখ তুললো।

অভি অভি! মাই সান তুমি টিচারের বুন্ধু হতে চাও?

অভিক আঁড়চোখে সুজানার দিকে তাকালো। তারপর মগটা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় বলল

সুজানা মেহুলের অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে এটা আপনি মিথ্যে বলেছেন।

মিথ্যে?

হ্যা মিথ্যে।

এর শাস্তি কি হতে পারে বলুন তো।

সুজানা চুপ করে থাকলো।

কেন বলেছেন উত্তরটা আজ জানতে চাইবো না। তাড়া নেই। তবে রোজ তেঁতো কফি আপনাকে খেতেই হবে।

না।

ইয়েস। এটাই পানিশ।

আবিদ বলল

অভি অভি তুমি টিচারকে সুজান ডাকো। সুজান তুমি ওকে অভি ডাকো।

সুজানার ইচ্ছে হলো গালটা টিপে দিতে জোরে। অসভ্য দুটো।

চলবে…….

শেয়ার করবেন। মন্তব্য জানাবেন। ধন্যবাদ 🥰😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here