আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -৩৯

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(39)

কাশ্মীর। নাম শুনলেই সবুজ প্রকৃতির দিকে মন চলে যায়। হৃদয়ে হিল্লোল তুলে মুগ্ধ করা আবেশের। প্রাণে প্রাণে বাজে প্রেরণার সুর। আহ্, কি সুন্দর করে সাজিয়েছেন এ প্রকৃতি। এ যেন প্রভুর হাতে গড়া সুন্দর, মনোরম আর নয়নজুড়ানো ভুবন ভুলানো দৃশ্য।

কাশ্মীরের প্রকৃতি নিয়ে কত কবি কবিতা লিখেছেন। কত গল্পকার লিখেছেন শত শত পৃষ্ঠার রচনা। সাজিয়ে তুলেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের লেখাগুলো পড়ে পড়ে কাশ্মীরে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা হৃদয়ে বারবার উঁকি দিত। উদ্বেলিত হতো প্রাণ।

কাশ্মীরের প্রকৃতির প্রেমে পড়েছিল নূর, মূলত সেই অনেক আগে থেকেই। অবশেষে সে প্রেমকে কাছ থেকে অনুভব করতে প্ল্যান মতো বেরিয়ে পড়লো। কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে যখন রুম থেকে বের হয় হৃদয়ে অন্যরকম এক অনুভূতি খেলে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এ সময়টির প্রতীক্ষায় ছিল নূর।

স্টেশনে বসে অপেক্ষা করতে বিরক্ত লাগছিল৷ অপেক্ষা জিনিসটা এমনিতেও বিরক্তিকর৷ কিন্তু কি আর করার! সামনে তো বিরাট আনন্দ অপেক্ষা করছে। তাই হালকা বিরক্তি সহ্য করে নিতে কোনো কষ্ট হচ্ছে না। ট্রেন আসার কথা ছিল সন্ধ্যে ৬টায়। কিন্তু এসে পৌঁছাল রাত ৩টায়৷ সময়টা খুবই বাজে কেটেছিল৷ না পারছে ঘুমাতে, না ঠিকমতো রিলেক্স করতে৷ অবশেষে আদিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে কাঁধে মাথা এলিয়ে দিল নূর। আদিলও একহাতে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়তমাকে।

কিছুক্ষন পেরোতেই নূরের ভারী ভারী নিঃশ্বাসের শব্দে হালকা হাসলো আদিল। স্টেশনের বেঞ্চে পিঠটা আরোও কিছুটা এলিয়ে দিয়ে কাঁধ থেকে টেনে নিলো নূরের মাথা। আলতো করে মাথাটা গিয়ে থাকলো সুঠামদেহি পুরুষের বুকে। হৃদস্পন্দনের ওঠানামার সাথে সাথে নড়েচড়ে উঠলো নূর। ঘুমের ঘোরেই বুকে নাক ঘষে বেঘোরে ঘুমিয়ে পড়লো। ভাবটা এমন যেনো এতক্ষন কিছুই হয়নি।

কাশ্মীর যেতে হলে ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক বিমানে প্রথম যেতে হবে দিল্লি ইন্ধিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। অথবা ঢাকা থেকে কলকাতা। পরে সেখান থেকে ডোমেস্টিক বিমানে জম্মু অথবা শ্রীনগর বিমানবন্দরে যাওয়া যাবে। কলকাতা থেকে সরাসরি শ্রীনগরে কোনো ফ্লাইট নেই। তাই, দিল্লি হয়ে যেতে হয়। তবে,ঢাকা-কলকাতা-দিল্লি-শ্রীনগর এভাবে ভেঙে ভেঙে গেলে খরচ কম হয় তুলনামূলকভাবে। এছাড়া অন্তত এক মাস আগে টিকেট বরাদ্দ করে রাখতে পারলে কম খরচেই বিমানে ভ্রমণ করা সম্ভব। কলকাতা বা দিল্লি থেকে বাস বা ট্রেনযোগে যাওয়া যায়। কলকাতার ট্রেন ৪১-৪৫ ঘণ্টায় নামিয়ে দিতে পারে জম্মুতে। জম্মু থেকে মাত্র ২৫ মিনিট বিমানে পৌঁছাবে শ্রীনগর।

দু’পাশে সারি সারি পাহাড়৷ আঁকা-বাঁকা রাস্তা।পুরোটা পাহাড় বরফে ভরপুর৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যেন আঁখিযুগল কেড়ে নিচ্ছিল৷ এর আগে ফটোতে কাশ্মীরের প্রকৃতি অনেক দেখলেও তখন ভাবনা ছিলো হয়তো এডিট করা। কিন্তু বাস্তবে যে আরও শতগুণ সুন্দর তা হয়তো না আসলে অজানাই থাকত৷ গাড়ি যখন মূল পয়েন্টে পৌঁছাল তখন বৃষ্টির মতো বরফ পরছিল৷ অনুভূতিটাই ছিল অন্যরকম৷ বরফে ওপর হাঁটাচলা করা, স্কাইডিং করা, স্বচ্ছ বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলা তাদের আনন্দকে আরও দ্বিগুণ করে দিচ্ছিল৷

আজ তিনদিন পেরিয়েছে কাশ্মীরে আসার। প্রথম দিন বেশি ক্লান্ত হওয়ায় শ্রীনগরের বিখ্যাত, সুসজ্জিত আর মনকাড়া মোগল গার্ডেন, পরীমহল, ডাল লেক আর হজরত বাল মসজিদ ঘুরেই আর যেতে দেয়নি আদিল। এমনিতেই প্রেগন্যান্সিতে বেশ মোটাসোটা হয়ে গেছে নূর। নিজেরও বেশ কষ্ট হচ্ছে, তাই চুপচাপ আদিলের কথায় সায় জানিয়ে ফিরে যায় হোটেলে। পরের দিন বেরিয়ে পড়েছিলো গুলমার্গের উদ্দেশ্যে। সেখানে গন্ডলায় রাইড করতে চাইলে আদিলের বাধায় তা আর হয়না। গুলমার্গ থেকে বেরিয়ে পড়ে সোনমার্গের উদ্দেশ্যে। যেতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। প্রাইভেট গাড়ি থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি। পথে পড়ে অপরূপ সিন্ধু নদ আর শেষে সোনায় মোড়ানো সোনমার্গ। নূরের জেদের কাছে হার মেনে অপরূপ সুন্দর এই জায়গায় থেকে যেতে হয় একটা রাত।

খুব ভোরে উঠে দুজনে বেরিয়ে পড়ে ২০০ কিলোমিটার দূরের কার্গিল শহরে। পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র আর এ এক অন্য রকম কাশ্মীর। সেখান থেকে বেরিয়ে যায় কাশ্মীরের সত্যিকারের স্বর্গের শহর পেহেলগামে। যেখানে আছে অসহ্য সুখের আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি, মিনিসুইজারল্যান্ড, পাগল করা লিডার নদী, পাইনের অরণ্য আর হাজারো ঝর্ণা একই সঙ্গে। এখানে একদিন থেকে মন ভরবেনা তাই গাইডের সাহায্যে কাছাকছি এক ভালো রিসোর্টে রুম বুক করে নেয় আদিল। পুরো কাশ্মীরের মধ্যে পেহেলগামটা হলো এককথায় পাগল করা বা অপার্থিব!

“নূরপাখি!”

এই ডাকে আজও হার্টবিট বেড়ে যায় নূরের। অত্যন্ত আবেগী ডাকে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা সত্ত্বেও সাড়া না দিয়ে পারেনা নূর। অবশ্য আগে এতো রাগ বা জেদ কোনোটাই নূরের ছিলোনা। প্রেগন্যান্সির সাথে সাথে রাগ আর জেদের পরিমাণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে অভিমানটাও। কিছু হলেই মুখ ফুলিয়ে বসে পড়ে। আদিলও ব্যাস্ত হয়ে পড়ে থাকে নূরের মুখ ফোলানো ঠিক করতে।

“নূরপাখি কাম ফাস্ট। ঘুমাবে আসো। রাত অনেক হয়েছে, বেশি রাত জাগতে বারণ করেছি না?”

হালকা হেঁসে আদিলের দুই বাহুর মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেললো নূর। পরম শান্তিতে আদিলের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আদিল একহাতে নূরের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।

জানালার কাঁচ ভেদ করে শীতের সকালের মিষ্টি রোদ মুখে পড়তেই ঘুম ভেংগে যায় নূরের। আড়মোড়া ভেঙ্গে হালকা হাতে আদিলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যায় রুফটপের দিকে। এখান থেকে পাহাড়ের ভিউ দেখতে ভীষণ ভালো লাগে নূরের। সকালের স্নিগ্ধ রোদ গায়ে মেখে শরীরে জড়ানো সোয়েটারটা আরো খানিকটা গায়ের সাথে লেপ্টে নিয়ে উঁচু পেটে হাত রাখে। চারমাসে খুব একটা উঁচু না হলেও বেশ খানিকটা বোঝা যায়। একহাতে আলতো করে আদর করে দেয় পেটে।

সকাল থেকেই মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে নূরের। পেহেলগাম শহরের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে খারাপ মনও সহজে ভালো হয়ে যাবে। এই সৌন্দর্য্য যেমন স্নিগ্ধ তেমনই মনোরম। চোখ জুড়ানো এই সৌন্দর্য্যের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূর। রিসোর্টের মধ্যে বেশ খানিকটা দূরে কিছু লোক বনফায়ারের আয়োজন করছে। সম্ভবত রাতে পিকনিকের ব্যাবস্থা করেছে কেউ সেজন্য এই আয়োজন। এদিক ওদিক তাকাতেই একজায়গায় চোখ আটকে যায় নূরের। বরফের ছোটো ছোটো গোলা বানিয়ে ছোড়াছুরি করছে দুজন। পরনের শাড়ীর সাথে কাশ্মিরী সোয়েটারের কম্বিনেশন, কপালে সিঁদুর আর দুই হাত ভর্তি চুড়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য বিবাহিতা তারা। সম্ভবত ইন্ডিয়ান। দুজনের দুষ্টুমি দেখে ঠোঁটে এক চিলতে হাঁসি ফুটে উঠলো নূরের। ঘাড় ঘুরিয়ে রূমের দিকে তাকাতেই ঘুমন্ত আদিলকে দেখে তৃপ্তির হাঁসি হাসলো। নীচে তাকাতেই আবারো চোখে পড়লো তাদের খুনসুঁটি। বেশ মনোযোগ নিয়ে নূরের পর্যবেক্ষণের মাঝে কারোর শক্ত হাতের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় চমকে উঠলো। কানের পাশে আদিলের দেওয়া ছোট্ট চুমুতে লাজুক হাসলো।

“এতো বিমগ্ন হয়ে দিন দুনিয়া ভুলে কি দেখছো এত?”

ঘাড়ের কাছে নাক ঘষতে ঘষতে বলা আদিলের কথায় সুড়সুড়িতে ঘাড়টা হালকা সরিয়ে নিলো নূর।

“আঃ কি করছেন বলুন তো।”

“কেনো তুমি জানোনা কি করছি?”

“নীচের দিকে দেখুন কি সুন্দর……”

“হুশ। আমি এখন শুধু আমার বউকে দেখছি। আমার বউ সামনে থাকলে আমি আর কিছুই দেখতে পাইনা জানোনা?”

“এই এই এই প্লিজ না। সুরসুরি লাগছে। আদিল এটা ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু।”

আদিলও কম যায়না, নূরের পিঠের চুলগুলো একহাতে সরিয়ে গলায়, ঘাড়ে সমানে নাক ঘষে যাচ্ছে।

“এমন ভুল তো আমি সবসময় করতে চাই বউ।”

_______________

জমকালো শীতের মধ্যে অফহোয়াইট জ্যাকেটের সাথে কালো জিন্স, চাঁপ দাড়িগুলো হালকা বড়ো হয়ে খোঁচা খোঁচা হয়ে আছে। রিসোর্টের জানালা থেকে বেশ খানিকটা দূরের এক রিসোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে সে।

“তোমার শহরে আমার প্রবেশ ঘটেছে, কিন্তু সাথে তুমি নেই। দুজনের তো একসাথে হতে হাত বেঁধে আসার কথা ছিলো এই ভূমিতে, তবে কেনো শূন্যহাত আজ? বুকপকেটে তোমার দেওয়া গোলাপ রাখার কথা ছিলো যে, কিন্তু দেখো ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এই বুকপকেট দায়িত্বের বেড়াজালে ঠাসা।

প্রতিটি মুহূর্ত যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে, যখন শুনি পুরনো দিনের সেই গানগুলি, যা কখনো আমরা দুজনে গেয়েছিলাম একসাথে। হৃদয়ে জমা হয়ে আছে আহত স্মৃতির ভিড় । তবুও তোমাকেই খুঁজেছি আমি; এখনো চাই তোমাকেই। জানি ফিরবেনা তবুও বুকের বামপাশের জমির অধিকার শুধুই তোমার। শুধুই তোমার।”

ভাবনার মাঝে কারোর ডাকে পিছন ঘুরে তাকায় সেই ব্যাক্তি। হালকা হেঁসে একহাত এগিয়ে দেয় সামনের ব্যাক্তিটির দিকে। গরম ধোঁয়া ওঠা কফিটা একহাতে নিয়ে আবারো তাকায় সামনের দিকে।

“কিরে কখন থেকে ডাকছি, কি ভাবছিস এত মনোযোগ দিয়ে?”

“তুই তো জানিস প্রতিবছর আমি এখানে আসি শুধু তারই টানে। তার স্বপ্নের ভূমিতে আমি তাকে খুঁজে পাওয়ার লোভ সামলাতে পারিনা।”

“যে তোর নয় কেনো তার জন্য নিজের জীবনটা শেষ করছিস বলতো? কতো মেয়ে তোর এক নজর দেখা পাওয়ার জন্য মরে আর তুই কিনা একটা মেয়ের জন্য কারোর দিকে তাকাস পর্যন্ত না। অথচ সে তো দিব্বি সুখেই আছে। তোর কথা ভুলেও হয়তো মনে করেনা। এতগুলো বছরেও তোকে বোঝাতে পারিনি, জানি আজও পারবোনা।”

“এভাবেই ভালো আছি আমি। ”

“ওইযে দেখ সামনের রিসোর্টে এক কাপল কিভাবে রোম্যান্স করছে দেখ। আরে ভাই এটা হলো এনজয় করার বয়স, রোম্যান্স করার বয়স। আর তুই কিনা বেরসিকের মতো কোন আদ্যিকালের ভালোবাসার কল্পনায় ডুবে আছিস। ভালোয় ভালোয় বলছি রাতে যদি আমাদের সাথে নিচে না জইন করিস তো তোর খবর আছে।”

“আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে যা এখন রাতের সবকিছু ঠিকঠাক কর।”
_________________

উঁচু পেট নিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে অরুনিকা। হাঁটতে কষ্ট হলেও দেওয়াল ধরে ধরে আস্তে আস্তে হাটার চেষ্টা করছে। প্রেগনেন্সির আট মাস চলছে, শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি এসে ফুলে গেছে। পাগুলো পরিমাণের থেকে বেশীই ফুলেছে। আদাভানের কড়া চোখ রাঙানিতে একদমই হাঁটাহাঁটি করতে পারেনা অরুনিকা। মূলতঃ অরুনিকার কোনোরকম কষ্ট যেনো না হয় তাই একদমই বেশি চলাফেরা করতে দেয়না। এদিকে সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে অরুনিকা। একটু চলাফেরা না করলে শরীরে জং ধরে যাবে, এসব চিন্তা ভাবনা করে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আদাভানের অনুপস্থিতিতে হাঁটাহাঁটি করছে।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে যায় অরুনিকা। নিজেকে ফুটবলের থেকে কম কিছু লাগছেনা তার। উঁচু পেটের দিকে আঙুল তাক করে বলে,

“তোর জন্য কত্তো মোটা হয়ে গেছি আমি দেখ। পুরো ফুটবল। গোলগোল একদম। এবার যদি তোর পাপ্পা আমাকে ভালো না বসে তো দেখে নিবি। সব বকা তোকেই দেবো বলে দিলাম।”

পরক্ষনেই উঁচু পেটের উপর পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিতেই বাচ্চার লাথিতে আঃ করে ওঠে।

“দুষ্টু হয়েছিস একদম পাপ্পার মতো তাইনা? দুই বাপবেটা মিলে আমাকে জালিয়ে মারছিস দেখি। এদিকে তোর পাপ্পা আমাকে শান্তিতে থাকতে দেয়না ওদিকে তুই। কি পেয়েছিসটা কি আমাকে বলত।”

“কি ব্যাপার কার সাথে এত রাগ দেখাচ্ছো শুনি?”

অরুনিকাকে পিছন থেকে আলতো হতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে প্রশ্ন করে আদাভান।

“কাকে আবার আপনার দুষ্টু বেবীকে।”

“বেবি বুঝি অনেক জ্বালাতন করছে মাম্মামকে?”

“হু অনেক।”

“শুনুন না!”

“বলো প্রাণপাখি।”

“আমাকে আর ভালো লাগেনা তাইনা?”

“এসব কি বলছো তুমি?”

“এইতো দেখুন কত মোটা হয়ে গেছি আমি। একটুও ভালো লাগছেনা দেখতে। গালগুলো কেমন ফুলে গেছে, মুখটা কেমন যেনো হয়ে গেছে। হাত পা সব ফুকে গেছে। কেমন বাজে দেখতে হয়ে গেছি আমি।”

“হুশ। প্রাণপাখি, আমি তোমাকে তখন থেকে ভালোবাসি যখন তোমার মধ্যে রুপের ছিটেফোঁটাও ছিলোনা। ভালোবাসি ঠিক তখন থেকেই যখন তোমার যৌবনে পদার্পন করতে ছিলো ঢের বাকি।”

“মানে?”

অরুনিকার প্রশ্নে হালকা হাসলো আদাভান। আলতো হাতে অরুনিকাকে ধরে এনে বেডে বসিয়ে ড্রয়ার থেকে বের kor আনলো তেলের বোতল। দুই হাঁটু ভাঁজ করে নিজেও বেডে উঠে গিয়ে বসলো অরুনিকার একদম পিছনে।

“কি করছেন বলুন তো”

“আমার প্রাণটার একটু যত্ন নিচ্ছি।”

দুইহাতে তেল নিয়ে হালকা হাতে চুলে ম্যাসাজ করতে করতে টুপ করে অরুনিকার ডান গালে চুমু খেয়ে আবারো নিজের মত কাজ করতে শুরু করে আদাভান।

“এই এই এইটা কি হলো? খালি লুচ্চামি তাইনা?”

“হা হা হা। আচ্ছা একটা কাহিনী শুনবে? একটা ছোট্টো পরির কাহিনী।”

“হু”

“ছেলেটা ছিলো কলেজ স্টুডেন্ট। ফ্রেন্ডের থেকে নোটস কালেক্ট করতে গেছিলো তার বাড়িতে। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে এমন সময় দুইদিকে ঝুটি করা, হাঁটু পর্যন্ত ফ্রক পরা এক বাচ্চা মেয়ের কান্না দেখে অবাক হয়ে যায় সে। এসব মেয়ে জনিত কারণে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় কি করবে বুঝতে না পেরে থতমত খেয়ে যায় সে। এদিকে মেয়েটা তো কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। ছেলেটা কিনবে না করবে ভাবতে ভাবতেই হটাৎ করে বাচ্চাটা এসে বসে পড়ে তার কোলে। তারপর সে কি বায়না, তাকে নাকি বিনুনি করে দিতে হবে তার আপুর মত। এদিকে মেয়েটার ছোটো ছোটো চুলে বিনুনি তো কোনোভাবেই সম্ভব নাহ, চারিদিক থেকে খুলে যাবে। তাও ছেলেটা বহু কষ্টে বিনুনি করতেই ফোলা ফোলা গালে খেলে গেলো একরাশ হাঁসি। এদিকে ছেলেটা তো ভয়ে শেষ। কারণ বেনুনির চারপাশ থেকে চুল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছে ইতিমধ্যে। হঠাৎ মেয়েটা টুপ করে গালে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে পালায়।”

“তারপর”

“প্রথমবার কোনো নারী ছোঁয়ায় চোখ বড়ো বড়ো তাকিয়ে প্রণয়ের ঢেউ অনুভব করলো হৃদয় জুড়ে। কলেজের এত সুন্দর সুন্দর নারী ছেড়ে জড়িয়ে পড়লো এক পিচ্চির প্রেমে। মাঝে মধ্যেই ছুটে আসতো এক নজর দেখার জন্য সেই প্রণয়িনীকে। বেসামাল করা প্রেমের ঢেউ দিন দিন বাড়তেই টিথাকলো শুধু। অথচ সেই পিচ্ছি কখনও বুঝতেই পারলোনা তার প্রথম আলিঙ্গনে মত্ত কেউ, তার উষ্ণ ঠোঁটের পবিত্র ছোঁয়ায় আটকে পড়েছে কেউ, তার বেখেয়ালি আলগোছা চেহারায় আটকে পড়েছে কেউ। বয়সের সাথে বাড়তে থাকলো সেই প্রণয়িনী। জানতে পারলাম তার মেলায় পছন্দ হাওয়া একটা রিং নিয়ে নিয়েছে তার আপু। সেদিনই ঠিক করেছিলাম, আমার প্রণয়িনীর সব চাওয়া পূর্ণ করবো আমি। ছোটো থেকে বড়ো সব চাওয়া পাওয়া হবে শুধু আমার হাত ধরেই। তাইতো জীবনের প্রথম রোজগারে বানিয়ে ফেললাম সেই একই রকম স্বর্ণের রিং।”

কান্নায় আওয়াজে ধ্যান ভঙ্গ হয় আদাভানের। এতক্ষন কোনো এক ঘোরের মধ্যে দিয়ে বলছিলো গল্পটা। অরুনিকাকে কাঁদতে দেখে ঝটপট সামনে এগিয়ে যায় আদাভান। ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় আদাভানের।

“এই প্রাণপাখি কাঁদছো কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার? পেটে ব্যাথা করছে? হসপিটালে নিয়ে যাবো? কি হচ্ছে বলো প্লিজ আমাকে।”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here