#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(১৯)
#জেরিন_আক্তার_নিপা
বিয়ের পর এই বাড়িতে আতিয়ার এক সপ্তাহ কেটে গেল। যতই দিন যাচ্ছে সে যেন সা’দকে আরও ভালো করে বুঝতে পারছে। ভালোবাসতে শুরু করেছে। বলতে গেলে এই বাড়ির প্রতিটা লোকের মায়ায় পড়ে গেছে আতিয়া। নিজের দাদা,দাদী ছিল না। মা মারা যাবার পর নানা, নানীর সাথেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দাদাজানের ভালোবাসা পেয়ে আতিয়া কতটা খুশি তা বলে বুঝানো যাবে না। নাহিল! সে তো আতিয়ার দেবর না। নিজের ভাই যেন। সা’দের কথা আর নতুন করে কী বলবে সে? সেই প্রথম দিন হোটেলে দেখা হবার পর থেকেই তো লোকটা তার খেয়াল রেখে আসছে। এখন তো আতিয়ার প্রতি তার কেয়ার শতগুণ বেড়ে গেছে। আতিয়া এখন ভেবেই ভয় পায়, সা’দ যদি তার মিথ্যা জেনে তাকে ভুল বুঝে। তাহলে কী করবে সে?
পাপা,হামিদ চাচাকে এখনও কিছু জানায়নি আতিয়া। সা’দকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে তবেই পাপাকে সব বলবে। তার আগে সা’দকে সবকিছু বুঝিয়ে বলতে হবে। পাপাকে নিয়ে তার টেনশন নেই। কিন্তু সা’দ কী করবে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আতিয়া। মানুষটা যতটা শান্তশিষ্ট ঠিক ততটা রাগীও। সেদিনই তো কার সাথে যেন রাগ করে আতিয়ার উপর রাগ দেখাচ্ছিল। সাথে সাথে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়েছিল। তবুও আতিয়ার এখন ভয় লাগে।
“-আতিয়া! আতিয়া আমার ঘড়িটা কোথায়? ‘
সা’দের ডাকে ধ্যান ভাঙলো আতিয়ার। ছুটে রুমে চলে এলো। ড্রয়ার থেকে ঘড়ি বের করে সা’দের দিকে এগিয়ে ধরল। এক গাল হেসে সা’দ বলল,
“-আমার অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছ তুমি। নিজের একটা জিনিসও খুঁজে পাই না এখন। আগে সব কাজ একাই করতাম। এখন তোমাকে ছাড়া আমার কিছুই হয়না।’
আতিয়া সা’দের হাতে ঘড়ি পরিয়ে দিতে দিতে বলল,
“-তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই।’
আতিয়ার কোমরের পেছনে হাত পেঁচিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে সা’দ বলল,
“-বলো না। কবে থেকেই তো শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছি।’
“-দূর! মজা না। সিরিয়াস কথা বলার আছে।’
“-বলো।’
“-এখন না।’
“-তাহলে? আচ্ছা, আজ রাতে আমরা বাইরে ডিনারে যাব। সেখানেই নাহয় বোলো।’
“-হুম।’
সা’দ চলে গেলে আতিয়া রুমে কিছু টুকটাক কাজ করলো। নাহিলের ঘরে এসে নাহিলকে ঘরে না পেয়ে বেরিয়ে গেল। ফোন কানে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে আসছিল নাহিল। আতিয়াকে দেখে ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,
“-কথা আছে তোমার সাথে। রুমে এসো একটু।’
“-হ্যাঁ।’
নাহিল আগের মতই ফোনে কথা বলতে বলতে চলে গেল। আতিয়া ভাবতে লাগল,নাহিল আবার কী কথা বলবে?
রুমে এলে নাহিল আতিয়ার দিকে ফিরে মৃদু হেসে বলল,
“-এসো। হাতে সময় আছে? বসো।’
“-কি বলবে?’
“-তোমাদের বিয়ের তো অনেক দিন হয়ে গেল। ভাইয়াকে নিয়ে তোমাদের বাসায় যাচ্ছ কবে? ‘
“-যাব। তোমার ভাইকেও আজ এই কথাই বলছিলাম।’
“-ওহ। তোমার বাসা কোথায়? বেশি দূর না হলে ভাবছি আমিও যাব তোমাদের সাথে।’
“-ঢাকায়। তুমিও চলো। তিনজন গেলে ভালোই হবে।’
নাহিল আনমনে বলল,
“-ঢাকা, না?’ আতিয়া বুঝতে পারল না,নাহিল হঠাৎ এসব কথা জিজ্ঞেস করছে কেন? কেনই যেন এখন মিথ্যে বলতে ভয় লাগে আতিয়ার। আগের মত বিনা দ্বিধায় ঝরঝর করে মিথ্যা বলতে পারে না। মুখে বাধে।
সা’দ সন্ধ্যার আগে অফিস থেকে ফিরে এলো। আতিয়াকে রেডি হতে বলে নিজে যেন কোথায় বেরিয়ে গেল। আতিয়া আজ শাড়ি পরেছে। তার কাছে যতগুলো শাড়ি আছে সবগুলোই দাদাজানের দেওয়া। দাদীজানের যত গহনা, শাড়ি ছিল। দাদাজান সব আতিয়াকে দিয়ে দিয়েছে। আতিয়া এসব নিতে চায়নি। দাদাজান জোর করে গছিয়েছে। গাঢ় লাল রঙের একটা জর্জেট শাড়ি পরলো আতিয়া। ম্যাচিং ব্লাউজ। চুল খোলাই রাখল। ঘড়ির দিকে দেখল আতিয়া।
“-সা’দ আবার কোথায় গেল? বাড়ি ফিরেই আবার বেরিয়েছে। আমি রেডি অথচ তার আসার খবর নেই।’ বলতে বলতেই সা’দ ঘরে এসে ঢুকলো। আয়নায় আতিয়াকে দেখে মুগ্ধ নয়নে এগিয়ে এলো।
“-বেশ লাগছে তোমাকে!’
মুখ বাকিয়ে আতিয়া বলল,
“-আমি জানি। কিন্তু তুমি কি এই সুরতেই যাবে? এতক্ষণ কোথায় ছিলে?’
“-আমার বউটা এত রাগ করে কেন? কাজেই তো বেরিয়েছিলাম বাবা।’
“-তোমার কাজ আমার জানা আছে। এই জন্যই আমার ইচ্ছে ছিল,একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করব। সে তার সবটা সময় আমাকে দিত। কাজ কাজ বলে বাহানা দিত না।’
আতিয়ার পেছনে এসে দাঁড়াল সা’দ।
“-তাই! ‘
“-হুম।’
“-তাহলে ঠিক আছে। আমিও কাল থেকে বেকার হয়ে যাব। বাসায় থেকে সারাক্ষণ তোমার আগেপিছে ঘুরঘুর করব। তখন কিন্তু বিরক্ত হতে পারবে না।’
উঠে দাঁড়িয়ে সা’দের দিকে ফিরলো আতিয়া। মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,
“-মিষ্টি কথা তো ভালোই বলতে পারো। তবুও কেন গার্লফ্রেন্ড পটাতে পারলে না! যাকগে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও না বাবা। আমাকে দেখ, আমি রেডি হয়ে তোমার জন্য কতক্ষণ বসে থাকব?’
সা’দ ভালো করে একবার আতিয়াকে দেখে নিয়ে বলল,
“-তুমি রেডি? উম…না। এখনও পুরোপুরি রেডি হওনি। কয়েকটা জিনিস বাকি আছে।’
সা’দ আতিয়ার দিকে ঝুঁকে এসে হাত বাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে কানের দুল নিল। আতিয়ার কানে পরিয়ে দিতে দিতে বলল,
“-একা একা দেখছি কিছুই পারো না। আমার জন্য গলা, কান খালি রেখেছিলে? আমি নিজ হাতে পরিয়ে দিতে! ‘
আতিয়া হালকা লজ্জা পেল। এই লোক মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই আতিয়াকে লজ্জায় ফেলে।
“-ইশ! আমার যেন আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই। তোমার হাতে রেডি হতে আমার বয়েই গেছে। তুমি নিজে গিয়ে রেডি হও, যাও।’
এতক্ষণে সা’দ আতিয়ার গলায় ছোট্ট পাথরের হারটা পরিয়ে দিল। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“-তোমাকে এতো সুন্দর করে রেডি হতে দেখে কি ইচ্ছে করছে জানো? ইচ্ছে করছে, এক্ষুনি তোমার সব সাজগোজ এলোমেলো করে দেই।’ কথাটা বলে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো সা’দ। আতিয়া চোখ পাকিয়ে চেয়ে লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলল।
“-তুমি বড্ড অসভ্য। যে তোমাকে চেনে না, সে এখনও দুধের শিশু। সেদিন তোমার ইনোসেন্ট মার্কা ফেস দেখে হোটেলে তোমার সাথে রুম শেয়ার করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। তখন কে জানত, জনাব চেহারায় ভদ্র লোক হলেও তলে তলে এতদূর যেতে পারেন।’
সা’দ আতিয়ার দুই হাত মুঠোয় বন্দী করে কোমরের পেছনে আটকে ধরলো। নিজের সাথে আতিয়াকে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
“-নিজের বৌয়ের সাথে যতদূর যেতে পারি। তাতে কোনো মানা নেই। তবে সেদিন কিন্তু তোমার ব্যাপারে অন্য কোন চিন্তা কল্পনাতেও আনি নি।’
“-হুম। আর সেজন্যেই তো তোমার বৌ হিসেবে নাটক করতে দু’বারও ভাবিনি। জানি তুমি আর যাই করো,কোনো মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিবে না। আর আমার অসম্মান হবে এমন কাজ জীবনেও করবে না। তোমাকে চিনতে আমি কখনও ভুল করিনি।’
“-ভুল করো নি! কিন্তু আমাকে কি এখনও পুরোপুরি চিনে উঠতে পারোনি? আমাকে বুঝতে কি আরও সময় লাগবে তোমার? আমরা কি এখনও ভালো বন্ধু হতে পারিনি? একজন আরেকজনকে বুঝতে শিখিনি? তবুও কেন এই দূরত্ব? তুমি আমার কাছে আরও সময় চাও? এখনও কি আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ হতে পারব না আতিয়া?’
শেষের কয়েকটা কথা কেমন যেন করুণ শোনাল। আতিয়া ফ্যালফ্যাল চোখে সা’দকে দেখছে। সা’দের চোখে দিকে তাকিয়ে ওর মনের কথা বুঝতে পারছে সে। সা’দ এই মুহূর্তে ঠিক কি চাইছে? তাকে কি বুঝাতে চাইছে, সব বুঝতে পারছে আতিয়া। সা’দের চোখের এই আকুতি ভরা আবেদন ফিরিয়ে দিতে পারবে না সে। এই মুহূর্তে সা’দকে ফিরিয়ে দেবার সাধ্য তার নেই। সা’দের বুকে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলল আতিয়া,
“-তোমার এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর ফিরে এসে দেই?’
মৃদু হেসে সা’দ বলল,
“-আরও অপেক্ষা করতে বলছো?’
“-উঁহু। একটু সময় চাইছি শুধু। তুমি যা চাইছো তা পেতে আর বেশি অপেক্ষা করাব না,কথা দিচ্ছি। হয়তো যা চাইছো আজই তা পেতে পারো। আজই তোমার অপেক্ষা শেষ হবে। কিন্তু তার আগে আমার কয়েকটা কথা তোমাকে শুনতে হবে।’
আতিয়া মুখ তুলে মুচকি হাসি দিয়ে সা’দ বলল,
“-সত্যি!’
“-হুম। ‘
“-ঠিক আছে। এমনটাই যদি হয়,তাহলে তোমার কয়েকটা কথা কেন? হাজার, হাজার কথা শুনতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তোমার কথা শুনে যেতে চাই।
রেস্টুরেন্টের কর্নারের একটা টেবিলে দু’জন সামনাসামনি বসে আছে। আতিয়া কথাগুলো সা’দকে কীভাবে বলবে তা মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছে। সা’দ খাবার অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। আতিয়াকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
“-কী বলবে বলছিলে?’
“-বলব। দাঁড়াও একটু।’
“-উঁহু। এখন দাঁড়াতে পারব না। বসে আছি। যা বলার বলো। বসে বসেই শুনতে পারব।’
আতিয়া চোখ পাকাল। সা’দ আতিয়াকে সহজ করার জন্য বলল,
“-কি এতো ভাবছো বলো তো। তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে।’
“-ওই একটু…
খাবার এসে গেল। ওয়েটার খাবার দিয়ে চলে গেলে আতিয়া বলল,
“-তোমাকে নিয়ে আমার বাসায় যাব। পাপার সাথে তোমার দেখা করাব।’
“-এই কথা বলতে তুমি এতো ভাবছিলে! শ্বশুর মশাইয়ের সাথে দেখা করব, এটা তো আমার ভাগ্য। উনি আমার উপর বেশি রেগে না গেলেই হয়। তুমি টেনশন নিও না।’
“-সে কথা না সা’দ। পাপাকে নিয়ে আমারও কোনো টেনশন নেই। পাপাকে ম্যানেজ করতে আমার বেশি সময় লাগবে না। পাপার সামনে যাবার আগে তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।’
“-হুম। বলো না। শুনছি তো আমি।’
“-আসলে সা’দ… আমি তোমার কাছে
বলতে পারছে না আতিয়া। বুকের ভেতর ধুকপুক করে কাঁপছে। আতিয়া এতদিন তার সাথে মিথ্যে বলে এসেছে, কথাটা জানলে কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে সে? ক্ষমা করে দিবে? নাকি রাগ দেখিয়ে চলে যাবে?
সা’দের ফোন বেজে উঠল। বিরক্ত কন্ঠে সা’দ বলল,
“-এখন আবার কে?’
“-দেখো কে। হয়তো বাড়ি থেকে কেউ। দাদাজান বা নাহিল।’
ফোনের স্ক্রিনে সোহেলের নাম দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“-এই শালা এখন আবার কেন? ‘
“-কে?’
“-সোহেল!’
আতিয়ার বুকে ছ্যাত করে উঠলো। সোহেল কেন সা’দকে কল দিয়েছে? না,না। সা’দ অন্য কারো মুখ থেকে জানার আগে ও নিজেই সব বলে দিবে।
“-হ্যাঁ বল।’
“-দোস্ত, কোথায় তুই?’
“-বৌকে নিয়ে জাহান্নামে ডিনার করতে এসেছিলাম। তুই আমাদের সেখানেও ছাড়লি না।’
“-হা হা! শোন শালা, তোর সাথে ভীষণ ভীষণ ভীষণ জরুরি একটা কথা আছে।’
নিরুৎসাহী গলায় সা’দ বলল,
“-বলে ফেল।’
“-ফোনে না। তুই কি কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা আসবি?’
“-আসতে পারি।’
“-আচ্ছা। আসলে তাহলে আমার সাথে দেখা করবি।’
“-কেন সেটা তো বল।’
“-এখন কিছুই বলা যাবে না দোস্ত। রাখি। দেখা হলে অনেক কথা বলব।’
সোহেল ফোন রেখে দিলে সা’দ ছোট একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“-শালা প্যারা দেওয়ার মাঝে এক্সপার্ট।’
আতিয়া এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল।
“-কী বললো? ‘
“-বলেনি কিছুই। দেখা হলে নাকি বলবে।’
তারপর আতিয়া আর একটা কথাও বলেনি। চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়েছে। সা’দ অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেও আতিয়ার কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। হঠাৎ করে মনের মধ্যে অজানা একটা ভয় কাজ করতে শুরু করল। ভয়টা সা’দের বিশ্বাস হারানোর। সবার ভরসা ভেঙে দেবার। এক সময় মজার ছলে তার বলা কিছু মিথ্যা এখন গলায় ফাঁস হয়ে আটকেছে।
রুমে এসে আতিয়া ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখল কিছুক্ষণ।
“-নাহ। যা কিছুই হয়ে যাক। আজ সা’দকে সবটা বলেই শান্তি পাব। রিল্যাক্স আতিয়া! রিল্যাক্স! তুই অনেক সাহসী। সা’দের সামনা করতে পারবি তুই। এতটা সাহস তোর আছে। কাম অন আতিয়া। চল বাইরে গিয়ে ফরফর করে সা’দকে সব বলে দিবি। একদম ভয় পাবি না। সা’দ তোকে ভালোবাসে। তোর যেকোনো অন্যায় সে ক্ষমা করে দিবে। নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখ।’
সা’দ ওয়ারড্রোবে তার একটা দরকারি কাগজ খুঁজছিল। হাত লেগে হঠাৎ আতিয়ার জামাকাপড় পড়ে গেল। কী যেন একটা শব্দ হলো! সা’দ নিচু হয়ে বসে দেখল,একটা ফোন। কপাল কুঁচকে দুমিনিট তাকিয়ে রইল সা’দ। কার ফোন এটা? তার তো না। তাহলে আতিয়ার? না,আতিয়াকে তো সে নতুন ফোন কিনে দেয়নি। তার নিজের ফোনটাও নাকি ওই ছেলে নিয়ে গিয়েছিল। তাহলে এটা কার। ফোন হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল সা’দ। বেশ দামী সেট। আতিয়া যদি সত্যিই মধ্যবিত্ত পরিবারের হয়,তাহলে তার বাবার পক্ষে মেয়েকে এতো দামী ফোন কিনে দেয়া সম্ভব না। আতিয়ার কাছে মোবাইল ফোন আছে অথচ আতিয়া তার কাছে মিথ্যে বলেছে? কিন্তু কেন? আতিয়া এই কথা লুকালো কেন?
আতিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলে সা’দ তার দিকে ফোনটা ধরে জিজ্ঞেস করল,
“-আতিয়া,এটা কার?’
আতিয়া দু সেকেন্ড কিছু বলতে পারল না। দম আটকে সা’দের হাতে ধরা তার ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। সা’দ আবার বলল,
“-ফোনটা কার আতিয়া?’
#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(২০)
#জেরিন_আক্তার_নিপা
(যারা যারা গল্প পড়েন, কষ্ট করে ছোট করে হলেও একটা কমেন্ট করে যাবেন। আপনাদের উৎসাহ না পেলে লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি😑)
.
দুমিনিট সা’দের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে স্বাভাবিক গলায় বলতে চেষ্টা করল আতিয়া।
“-আরে এটা তো আমার ফোন। তুমি এটা কোথায় পেলে? ‘
না। যতই সে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক ভেতরে ভেতরে ঠিকই অস্থিরতা কাজ করছে।
“-আমি কত খুঁজেছি। শেষে খুঁজে না পেয়ে ভেবেছি ওই শয়তানটা হয়তো নিয়ে গেছে। এখন দেখি ফোনটা তোমার হাতে! কোথায় পেলে?’
“-ওয়ারড্রোবে। তোমার কাপড়ের ভেতরে ছিল।’
হাসার চেষ্টা করল আতিয়া। কিন্তু হাসি এলো না।
“-ভালোই হয়েছে। ফোনটা আমার ভীষণ প্রিয়। আমার বার্থডেতে পাপা গিফট করেছিল।’
এই প্রথম আতিয়ার কোন কথা মন থেকে মেনে নিতে পারছে না সা’দ। যতই বার্থডে গিফট হোক আর যাই হোক। কোচিং করিয়ে মেয়ের জন্মদিনে এতো দামী ফোন কোত্থেকে দিবে? কম করে হলেও ফোনটার দাম আশি হাজার তো হবেই।
“-তোমার পাপা তোমাকে দিয়েছিল? ‘
“-হুম। কেন বলো তো? ‘
“-কিছু না। ‘
আতিয়া মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। যাক সা’দ সন্দেহ করেনি। নিজেকে গালি দিচ্ছে আতিয়া। তার বোকামির জন্য সা’দ তাকে সন্দেহ করতো। বেডের উপর ফোন রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিচ্ছিল সা’দ। পেছন থেকে আতিয়া ডাকল।
“-কোথায় যাচ্ছ?’
“-আসছি একটু। তুমি শুয়ে পড়ো।’
“-সা’দ…
বেরিয়ে গেল সা’দ। আতিয়া বুঝতে পারল ওকে সন্দেহ না করলেও মনে মনে খটকা লেগেছে ঠিকই। আতিয়া সা’দের অপেক্ষা করে বসে রইল। আজ সবটা বলে তবেই শুতে যাবে। চল্লিশ মিনিট পরেও সা’দ এলো না। আতিয়ার এবার একটু একটু রাগ হচ্ছে।
“-ডিনারে যাবার আগে কত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিল। বাসায় এসে সব ভুলে গেছে। আমি ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছি। আর ও কোথায় গিয়ে কী করছে আল্লাহই জানেন। আসুক শুধু, একটুও ধরা দিব না ওর হাতে। এখন থেকেই এতো ভাব। আরও এক বছর অপেক্ষা করিয়ে রাখব। আমাকে তো চিনে না।’
সা’দ রুমে এসে আতিয়াকে আলো জ্বেলে বসে থাকতে দেখে বলল,
“-ঘুমাওনি? ‘
মনে মনে রাগে ফেটে পড়ল আতিয়া। চেহারায় তা ভাসতে না দিয়ে বলল,
“-তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’
“-ওহ।’
আতিয়া উঠে এসে সা’দের সামনে এসে দাঁড়াল।
“-কি হয়েছে তোমার? ‘
“-কিছু না।’
“-তাহলে এমন করছো কেন? ফোনের ব্যাপারটা নিয়ে রাগ করেছ? আমি সত্যিই জানতাম না ওটা…
“-রাগ করিনি আতিয়া।’
আতিয়া সা’দের গলার পেছনে দুই হাত নিয়ে ওর কাছাকাছি চলে এলো। সা’দের চোখের দিকে চাইল। ভেবেছিল সা’দ তার চোখের ভাষা বুঝে নিবে। কিন্তু সা’দ উল্টো কথা বলল,
“-অনেক রাত হয়েছে। এবার শুয়ে পড়া দরকার।’
বুকের ভেতর অভিমান উথলে উঠলেও মুখে কিছু বলল না। কিছুক্ষণ অর্থহীন দৃষ্টিতে সা’দের মুখের দিকে চেয়ে থেকে অভিমান চেপে রেখে বলল,
“-বাইরে যাবার আগে তুমি কিছু বলছিলে…’
সা’দ বুঝতে পেরেও আতিয়ার কথা পুরোপুরি এড়িয়ে গেল। গলা থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“-ক্লান্ত লাগছে আতিয়া। তুমিও নিশ্চয়ই টায়ার্ড ফিল করছো। লাইট অফ করে দিচ্ছি। এসো শুয়ে পড়ো।’
ঠাই দাঁড়িয়ে রইল আতিয়া। এবার অপমানবোধ করল সে। একটু আগে সা’দই কত আকুতি মিনতি করছিল ওর সামনে। আর এখন সা’দই তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে! আতিয়া তো নিজে থেকে লোকটার কাছে যেতে চায়নি। সে নিজেই তো এমনটা চাইছিল। তাহলে এই কয়েক ঘন্টার মধ্যে এতটা পরিবর্তন কেন এলো? আতিয়াকে যেন তার কাছ থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে চাইছে।
“-কই এসো।’
আতিয়া বেডে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। অন্য দিনের মত সা’দের উপর হাত পা তুলে দিল না। অন্য পাশে মুখ করে পাথর হয়ে শুয়ে রইল। সা’দ ঠিকই বুঝতে পারছে আতিয়া রাগ করেছে। কষ্টও পেয়েছে। তবুও তার এখন কিছু করার নেই। আগে সবটা বিষয়ে ক্লিয়ার হতে হবে। সোহেল একটু আগে ওসব কী বলছিল! আতিয়ার কাছে মোবাইল ফোন পেয়েছে তা নিয়ে সা’দের কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু সোহেলের আকার ইঙ্গিত সে একদমই সহ্য করতে পারছে না। মাথায় যা আসছে তা-ও মেনে নিতে পারছে না। কালই ঢাকা যাবে সে। সোহেলকে সামনে বসিয়ে খোলাখুলি ভাবে কথা বলবে।
সকাল সকাল সা’দ কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। আতিয়া তখনও ঘুমেই। রাতে ঘুম আসছিল না। ফজরের আজানের একটু আগে আগে চোখ দু’টো লেগে এসেছে। সা’দও তাকে ডাকে নি। জেগে গেলে নানান প্রশ্ন করবে। কোথায় যাচ্ছ? কেন যাচ্ছ? গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সা’দ।
আতিয়ার ঘুম ভাঙতে ভাঙতে আজ একটু বেশিই দেরি হলো। নিচে এসে দেখে দাদাজান ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছেন। নাহিলও বেরিয়ে গেছে।
“-দাদাজান, গুড মর্নিং।’
মৃদু হাসলেন দাদাজান।
“-এসো। আমার পাশে বসো।’
“-কী করছিলেন দাদাজান?’ আশেপাশে একবার দেখে নিয়ে বলল,
“-নাহিল কোথায়? ‘
“-নাহিল,সা’দ দু’জনই বেরিয়েছে। আমি তোমার জন্যই বসে ছিলাম। হজুকে নিয়ে আমি আমাদের অনাথাশ্রমে যাচ্ছি। প্রতি বছরই নিজে গিয়ে একবার দেখে আসি। এবার এখনও যাওয়া হয়নি। তাই ভাবছিলাম আজ যাব।’
“-একা যাবেন? নাহিল, আপনার বড় নাতি…
“-আরে না, না। হজু সাথে যাচ্ছে তো। রাতের আগেই ফিরে আসব। বাচ্চাদের জন্য কিছু জামাকাপড় আর খাবার নিয়ে যাচ্ছি।’
“-আচ্ছা।’
“-তুমি একা একা বাসায় থাকতে পারবে তো?’
“-কেন পারব না? খুব পারব। আপনি আমার জন্য একদম টেনশন করবেন না। সাবধানে গিয়ে ঘুরে আসুন।’
হাসলেন দাদাজান।
“-তাহলে যাবার আগে এক কাপ চা খাওয়াও তো। আর আজকের নিউজপেপারটা আমার হাতে দিয়ে যাও।’
“-আপনি বসুন। আমি দুমিনিটে চা বানিয়ে আনছি। ‘
চা নিয়ে এসে দেখে দাদাজান খবরের কাগজ হাতে নিয়ে বসে আছেন। চা এনে উনার সামনে রাখল আতিয়া। দাদাজান চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে বললেন,
“-ঘর থেকে আমার চশমাটা এনে দিবে? চোখের বয়স হয়েছে, এখন আর চশমা ছাড়া কিছু দেখে না।’
মিষ্টি হেসে আতিয়া উঠে দাঁড়াল।
“-আনছি।’
আতিয়ার হাত থেকে চশমা নিয়ে চোখে পরে খবরের কাগজে চোখ বুলালেন দাদাজান। মাঝে মাঝে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। আতিয়া দাদাজানকে কিছু বলতে যাচ্ছিল। হঠাৎ তার চোখ খবরের কাগজে গেল। দাদাজান যেভাবে কাগজটা ধরে রেখেছে ঠিক তার উল্টো দিকেই আতিয়ার বড় একটা ছবি দেখা যাচ্ছে। মনে মনে চমকে উঠল আতিয়া।
-পাপা এটা কি করেছে! নিউজপেপারে আমার ছবি দিয়েছে? হায় আল্লাহ! দাদাজান দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। সা’দ! নাহিল ওরা কেউ দেখে নি তো? পাপা, কেন তুমি এমনটা করলে! ওহ গড!’
হাত পা কাঁপছে আতিয়ার। কাঁপা গলায় বলল,
“-দাদাজান…
তার বলার আগেই হজু এসে দাঁড়াল। মাথা নীচু করে রেখে বলল,
“-সাহেব, গাড়িতে সবকিছু তুলে ফেলছি। কখন বের হবেন? ‘
“-এইতো চা-টা শেষ করে নিই।’
খবরের কাগজ রেখে দিলেন দাদাজান। আতিয়া মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হজুকে ধন্যবাদ দিল। ঠিক টাইমে আসার জন্য। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে দাদাজান উঠে দাঁড়ালেন।
“-আসি তাহলে। তুমি সাবধানে থেকো। আর নাহিলকে আমি তাড়াতাড়ি চলে আসতে বলব। সা’দও দুপুরে চলে আসবে।’
জোর করে হাসল আতিয়া।
“-আপনিও সাবধানে যাবেন দাদাজান।’
দাদাজানকে বিদায় দিয়ে ফিরে এলো আতিয়া। এই খবরের কাগজ পুড়িয়ে ফেলবে সে। কারো চোখে পরতে দিবে না। নাহিল খবর টবর নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। কিন্তু সা’দ যদি অফিসে… না, না। ভাবতেই মাথা চক্কর দিচ্ছে আতিয়ার। কাল রাতে ফোন পাওয়ার পর থেকেই সা’দ যেন কেমন করছিল। আজ তার ছবি নিউজপেপারে দেখলে সব খোলাসা হয়ে যাবে। আতিয়া এমন ভাবে তার সত্য সামনে আনতে চায় নি। এভাবে সা’দ তাকে ভুল বুঝবে। সে নিজে সা’দকে বলতে চেয়েছিল।
প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে জ্যামে আটকা পড়ে বসে আছে সা’দ। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে আসছে। যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় পৌঁছুতে চায় সে। ঘড়ি দেখল সা’দ। না। এভাবে আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না। সকাল সকাল বেরিয়ে এসেছে। আজকের পেপারটাও পড়া হয়নি। অফিস থেকে বের হয়ে তাড়াহুড়োয় পত্রিকাটা পেছনের সীটে রেখে দিয়েছিল। ঘাড় ফিরিয়ে ওটা হাতে টেনে নিল। বাইরের দিকে আরেকবার দেখে নিয়ে পত্রিকায় মনোযোগ দিল সা’দ। ধুর! সব চুরি, বাটপারি, ধান্দাবাজির নিউজ ছাপানো হয়। মানুষের কি আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই? জমি নিয়ে ঝগড়া করে কে মারামারি করে রে বাবা! অসহ্য হয়ে সা’দ নিউজপেপার পাশের সীটে রেখে দিল। হঠাৎ তার চোখ একটা ছবির উপর আটকে গেল। আতিয়ার ছবি নিউজপেপারে ছাপানো হয়েছে! না। সা’দের চোখের ভুল হতে পারে। ভালো করে দেখার জন্য সা’দ আবার পেপার হাতে নিল। সত্যি সত্যিই আতিয়ার ছবি। সা’দের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। পাথর হয়ে দুমিনিট ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল সে। হাসি হাসি মুখে আতিয়ার ছবিটা দেখে চিনতে একটুও ভুল হচ্ছে না তার। নিচের লেখাগুলো পড়তে শুরু করল সা’দ। পড়তে পড়তে চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। থমকে বসে রইল সা’দ। অস্পষ্ট স্বরে বলল,
“-না। আতিয়া আমার সাথে এমনটা করতে পারে না।’
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিটা আবার দেখল।
‘আতিয়া চৌধুরী। বাবার নাম, আশরাফ চৌধুরী। বাবা ঢাকার স্বনামধন্য বিজনেসম্যান। গত এক মাস ধরে মেয়েটাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাবার সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। প্রতিবার দু’দিনেই ফিরে এলেও এবার আসছে না। কেউ…
আর পড়তে পারল না সা’দ। চোখ বন্ধ করে বারকয়েক দম নিল। আগুনের মত লাল চোখ করে আতিয়ার ছবিটাকে পুড়িয়ে দিতে চাইল।
“-বিশ্বাসঘাতক। চিটার। আমার সাথে এভাবে চিট করতে পারল! ওকে একটা বারের জন্যও অবিশ্বাস করিনি। কখনও ভাবতেও পারিনি ও এভাবে আমাকে ঠকাবে। প্রথম দিন থেকে ওর বলা প্রতিটা কথা চোখ কান বন্ধ করে বিশ্বাস করে এসেছি। অথচ আতিয়া সেই প্রথম থেকেই মিথ্যা বলছিল। বয়ফ্রেন্ড, ভালোবেসে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসা,বাবা স্কুল টিচার, মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে… সব মিথ্যে ছিল। সব! এই মেয়ে এতটা সহজ ভাবে কীভাবে এতগুলো লোককে ঠকাতে পারল? কীভাবে এতগুলো মিথ্যা বলতে পারল! দাদাজান, নাহিল এমনকি আমার সাথে পর্যন্ত মিথ্যা বলে এসেছে। এখন তো মনে হচ্ছে ওর বলা একটা কথাও সত্য না। সব মিথ্যে বলেছে।’
রাগ সামলাতে না পেরে চিৎকার করে উঠল সা’দ।
“-ছাড়বো না। এতো সহজে এই মেয়েকে আমি ছাড়ব না। আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলা করেছে ও। অপমান করেছে আমাকে। নাহিদ, দাদাজান সবাইকে ঠকিয়েছে। আশ্রয় পাওয়ার জন্য এতকিছু করেছে মানলাম। কিন্তু আমাকে সত্যি সত্যিই বিয়ে করল কেন? তখনও কেন সবকিছু বলব না? বিয়ের পর একটা সপ্তাহ কেটে গেছে। তবুও আমাকে সত্য জানানোর প্রয়োজন মনে করো না!’
কাল রাতের কথা ভাবছে সা’দ। আতিয়া তার প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল।
“-ছি! এই মেয়েকে আমি কখনও ক্ষমা করব না। কখনোই না।’
সা’দ গাড়ি ব্যাক করল। বাসায় ফিরে যাচ্ছে সে। সোহেলের সাথে আর কথা বলতে হবে না। সোহেল যা বলার জন্য ডেকেছিল তা সে জেনে নিয়েছে। সোহেল বিয়ের দিনই সন্দেহ করছিল। কিন্তু সে নিজে একবার ভাবলো না মেয়েটার পরিচয় জেনে নেওয়া দরকার। ভালোবাসায় এতটা অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিছুই তার চোখে পড়েনি!
“-আমি তোমাকে আর কখনও বিশ্বাস করতে পারব না আতিয়া। তুমি কোনো ভাবেই আমার যোগ্য নও। মিথ্যাবাদী তুমি। তুমি নিজের স্বার্থের জন্য এতদিন আমাকে ইউজ করেছ। ভালোবাসোনি তুমি আমাকে।’
রাগে ফুঁপিয়ে উঠে জানালার কাঁচে কয়েকটা ঘুসি মারল সা’দ। তাতেও রাগ কমছে। নিজেকেই শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। ছোট থেকে কখনও এভাবে ঠকেনি সে। পাগলের মত ড্রাইভ করে যাচ্ছে। আশেপাশের কিচ্ছু খেয়াল করছে না। বাসায় গিয়ে ওই মিথ্যাবাদীর সামনে দাঁড়াতে চায় সা’দ। তার প্রশ্নের জবাবে আর কী কী মিথ্যা বলবে মেয়েটা তা দেখতে চায়।
চলবে…
চলবে…