আমার আকাশ জুড়ে তুমি পর্ব ২১+২২

#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(২১)
#জেরিন_আক্তার_নিপা

আতিয়ার আজ কিছুই ভালো লাগছে না। মনটা কেমন উসখুস করছে। থেকে থেকে অস্থির লাগছে। দাদাজান চলে গেছে। নাহিল বাসায় নেই। সা’দও কোথায় গেছে বলে যায়নি। একা একা বাড়িতে বোর হচ্ছে। তার উপর নিউজপেপারে ছবি এসেছে এটা নিয়ে চিন্তায় আছে।
“-দূর! সেদিন যদি হোটেলে রুম পাওয়ার জন্য মিথ্যা না বলতাম তাহলে আজ এতো টেনশন করতে হতো না। পাপাও এবার ওভার ভালোবাসা দেখিয়ে পেপারে ছবি ছাপিয়ে দিয়েছে। হামিদ চাচা কোথায় ছিল। চাচাও কি বারণ করতে পারলো না।’
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আতিয়া।
“-হাহ! পাপা কী আর জানে, তার এই কাজে নিজের মেয়ের সংসারেই অশান্তি সৃষ্টি হবে। সা’দ,নাহিল,দাদাজান ভুলেও দেখে ফেললে আমার কথা শোনার আগেই ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। সা’দ তো একটা কথাও শুনবে না। মিথ্যা সহ্য করতে পারে না ও। আমারই সব দোষ। কাল রাতে ফোন পাবার পরই যদি সব বলে দিতাম। যাক,যা হবার তা হয়ে গেছে। আজ সা’দ বাড়ি এলে সাথে সাথে সব বলে দিব।’
ল্যান্ড লাইন থেকে আতিয়া হামিদ চাচার সাথে কথা বলল।
“-কেমন আছো তুমি,মা? ‘
“-আমি ভালো আছি চাচা। বাসায় সবাই কেমন আছে? ‘
“-ভালো।’
“-চাচা, তুমি তো জানতে আমি হারিয়ে যাইনি। আমার কিছু হয়ওনি। তবুও আমার ছবি পেপারে কেন? শুধু শুধু পুলিশ, মিডিয়া জানিয়ে লাভটা কী হলো?’
“-মা, এতে তোমার বাবার বা আমার কোন দোষ নাই। যা করায় সব তোমার ফুপু করছে। উনিই ভাইজানরে না জানাইয়া এসব করছে। ভাইজান নিজেও তো এসব দেখে অনেক রাগারাগি করছে।’
“-ফুপুকে আর কী বলব! উনার মত নীচু মনের মানুষ আমি আর দু’টো দেখিনি। এতো লোভ উনার! যাকগে, চাচা আমি কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ি আসব। তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। পাপাকে এখন কিছু বোলো না তুমি। আর ওই কালনাগিনকে আর কয়টা দিন…মানে আমি বাড়ি আসার আগ পর্যন্ত আটকে রাখো। চলে যেতে চাইলেও জোর করে রাখবে। স্পেশালি ওর জন্য আমার একটা বিশাল বড় সারপ্রাইজ আছে। ফুপু আর ঢেঁড়স সারপ্রাইজ সামাল দিতে পারলেই হলো। আমার তো মন বলছে দু’টাই একসাথে হার্ট এ্যাটাক করে মারা যাবে।’
চাচার সাথে কথা বলা শেষ করে আতিয়া নিজের রুমে চলে গেল। দুপুরে নিজেই টুকিটাকি রান্না করল। দাদাজান ফিরতে ফিরতে রাত। নাহিলও আসছে হয়তো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। তবুও কেউ বাসায় ফিরছে না দেখে রাগ লাগতে শুরু করল আতিয়ার।
“-কারো কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই! আমি একটা মেয়ে একা বাসায় আছি। সেই খেয়াল কারো নেই? আমার জামাই! বাহ, বাহ,বাহ! সে তো আরও বড় অপদার্থ লোক। সেই সকালে না বলে বেরিয়েছে। এখন পর্যন্ত একটা খোঁজ নেয়নি। আছি না মরে গেছি একবার জানবে তো বাবা! আসুক আজ। মজা বোঝাব।’
আতিয়া বিরবির করতে করতে গাড়ির শব্দ পেল। মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠল। নিশ্চয়ই সা’দ এসেছে। ছুটে আসতে নিয়েও দাঁড়িয়ে গেল। সে কেন ছুটে যাবে? রাগ করেছে সে। সা’দ এসে রাগ ভাঙাবে তবেই সে আজ কথা বলবে। চোখে, মুখে রাগ ভাব ফুটিয়ে তুলে হাঁটু ভাঁজ করে বেডে বসে পড়লো। মাতালের মত লাল চোখ নিয়ে মেইন ডোরের সামনে এসে দাঁড়াল সা’দ। দরজায় ধরে চোখ বন্ধ করে কয়েকবার শ্বাস নিল। তারপর পা বাড়াল নিজের বেডরুমের দিকে।
সা’দকে দেখে আতিয়ার মন খুশিতে লাফিয়ে উঠলেও কাচুমাচু মুখ করে বসে রইল সে। সা’দের দিকে চোখ তুলে তাকালোও না। আতিয়াকে দেখে মনে মনে হাসলো সা’দ। এই মেয়েটা এতদিন তার সাথে মিথ্যার পর মিথ্যা বলে এসেছে। আর সে বুঝতেও পারেনি। আতিয়া মনে মনে বলছে,
-সারাটা দিন আমি এই বড় বাড়িটাতে একা একা ছিলাম। আর মশাই এখন এসেছে। সন্ধ্যার সময় না এসে একেবারে রাত পার করে কাল সকালে এলেই তো হতো।’
এখনও সা’দ ভেতরে আসছে না। কিছু বলছে না। দরজার কাছে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে দেখে আতিয়া মুখ বাঁকাল।
-কি হয়েছে লোকটার? কথা টথা বলছে না কেন? শরীর ঠিক আছে তো? কিছু হয়েছে ওর। হায় আল্লাহ! আর কতক্ষণ রাগ করে থাকবো? তাড়াতাড়ি এসে রাগ ভাঙা ব্যাটা।’
সা’দের চোখের দিকে তাকিয়ে আতিয়ার বুক কেঁপে উঠলো। চোখ দু’টো এতো লাল কেন? ভেতরে এসে আতিয়ার সামনে দাঁড়াল সা’দ। একনজরে আতিয়াকে দেখে যাচ্ছে। হঠাৎ সা’দের হাতে নিউজপেপার দেখে আতিয়া পাথরের মত জমে গেল। সা’দ দেখে নিয়েছে। সব জেনে গেছে সা’দ। তাই ওকে এমন দেখাচ্ছে। ভয়ে ভয়ে উঠে দাঁড়াল আতিয়া। বেজে বেজে বলতে লাগলো,
“-সা’দ! আমার কথাটা শোনো। কাল রাতে সত্যিই আমি তোমাকে এই কথাটাই বলতে চাইছিলাম সা’দ। বিশ্বাস করো সা’দ, আমি তোমার কাছে মিথ্যা বলতে চাই নি। আমি সব বলে দিতে চেয়েছিলাম।’
এখনও আতিয়াকে সাফাই দিতে দেখে হুংকার দিয়ে উঠলো সা’দ।
“-চুপ। একদম চুপ। আর একটা কথাও বলবি না তুই। তুই একটা মিথ্যাবাদী। আমাকে দিনের পর দিন ঠকিয়েছিস তুই। তুই প্রথম দিন থেকেই আমার কাছে মিথ্যা বলছিলি।’
চোখে বেয়ে আপনাআপনি পানি বেরিয়ে এলো আতিয়ার। এই লোকটা কখনও তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে নি। আজ সেই লোকটাই তাকে তুই তুই করে বলছে!
আতিয়াকে কাঁদতে দেখে হাসতে লাগল সা’দ। হাত থেকে পত্রিকাটা ছুড়ে ফেলল। বলল,
“-আরে তোর চোখের পানিও তো আমার কাছে মিথ্যা মনে হচ্ছে। আচ্ছা কখনও তুই আমার কাছে একটা সত্য কথা বলেছিস?’
আতিয়া সা’দের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাত ধরার চেষ্টা করল। সা’দ হাত সরিয়ে নিল।
“-খবরদার আমাকে ছুঁবি না। তোর সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাধছে। আমার বিশ্বাস, আমার ভালোবাসা, আমার দেওয়া সম্মান কোনো কিছুর যোগ্য না তুই।’
চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল আতিয়া।
“-প্লিজ সা’দ, থামো তুমি। প্লিজ। মানছি আমি তোমার কাছে অনেক মিথ্যা বলেছি। তাই বলে আমার ভালোবাসা মিথ্যা না।’
“-ভালোবাসা! হা হা হা…! কিসের ভালোবাসা তোর? ‘
“-আমি তোমাকে ঠকায়নি সা’দ। তোমাকে আমি বলতে চেয়েছিলাম। সেদিন রাতে হোটেলে রুম পাচ্ছিলাম না। অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। আমি কিছুই চিনতাম না। কাউকে জানতাম না। কোথায় যেতাম আমি? মিথ্যে না বললে তুমিও আমার সাথে রুম শেয়ার করতে না। বাধ্য হয়ে সেদিন আমাকে মিথ্যা বলতে হয়েছিল।’
হাত তালি দিতে লাগলো সা’দ।
“-বাহ! ওকে। ঠিক আছে। সেদিন নাহয় রুম পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলেছিলি। দাদাজান যখন আমাদের সত্যি সত্যি বিয়ে দিতে চেয়েছিল তখন কেন সত্যি বললি না?’
“-ততদিনে তোমার প্রতি আমি দুর্বল হয়ে পরেছিলাম সা’দ। ভয় পাচ্ছিলাম সত্য বললে তুমি আমাকে ভুল বুঝতে। নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে।’
সা’দ আতিয়ার কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। রাগে তার হাত পা কাঁপছে। জীবনে এই প্রথম কাউকে বিশ্বাস করে ঠকেছে। আতিয়ার থেকে এসব সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। সা’দের হাত ধরল আতিয়া।
“-আমি প্রথমে মিথ্যা বললেও এখন তোমার কাছে মিথ্যা বলছি না। যেদিন সত্যিকারে আমাদের বিয়ে হয়েছিল সেদিনই আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম। আমি কখনও কাউকে ভালোবাসিনি। কারো সাথে পালিয়ে আসিনি। আমি তো পাপার সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছি। ফুপু জোর করে আমাকে ওর ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলেন। তাই আমি পালিয়ে এসেছি। এখানে এসে আমি তোমাকে পেয়েছি। যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পেরেছি। ভালোবেসেছি। তোমাকে ভালোবাসি বলে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম সা’দ। ভেবেছিলাম বিয়ের পর সব বলে দিব।’
“-কাউকে মিথ্যার আড়ালে রেখে কিসের ভালোবাসা হ্যাঁ? দিনের পর দিন মিথ্যা বলা এটা কেমন ভালোবাসা? ‘
“-আমার ভুল হয়ে গেছে সা’দ। তুমি আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি তোমাকে ঠকাইনি।’
কপালের দুই পাশ চেপে ধরে রেখে সা’দ কয়েক মিনিট চোখ বন্ধ করে রইল। চোখ খুলে সরাসরি আতিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলল,
“-আমি তোমাকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না আতিয়া।’
আঁতকে উঠল আতিয়া। যা ভয় পাচ্ছিল তা-ই হচ্ছে।
“-সা’দ! ‘
“-তোমাকে সহ্য করতে পারছি না আমি। তোমার দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে এতদিন আমাদের মাঝে যা ছিল সব মিথ্যা। আমার ভালোবাসা মিথ্যা। চলে যাও তুমি আমার সামনে থেকে।’
“-এমনটা বোলো না সা’দ। কি বলছো তুমি? ভেবে দেখেছ একবার! তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো?’
“-হ্যাঁ। আমার বাড়ি থেকে চলে যাও তুমি। আমি তোমার মুখ দেখতে চাই না। আমাদের মধ্যে যা কিছু ছিল সব মিথ্যা। যে সম্পর্কে কোনো সত্যতা ছিল না, আমি সেই সম্পর্ক চাই না। তোমাকে চাইলেও আর কখনও আমি বিশ্বাস করতে পারব না। তুমি সত্য বললেও আমার কাছে মনে হবে তুমি মিথ্যা বলছো। আমরা একসাথে থাকলেও তুমি সব সময় আমার চোখে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকবে। সহ্য করতে পারবে না তুমি। তুমি নিজেই চোখ তুলে আমার সাথে কথা বলতে পারবে না। তার থেকে ভালো তুমি তোমার বাবার কাছে চলে যাও।’
“-আমি যাব না। তোমাকে ছাড়া কোত্থাও যাব না আমি। শুনেছ তুমি? আমি যাব না। ‘
আতিয়াকে মুখে মুখে তর্ক করে দেখে চিৎকার করে উঠল সা’দ। আতিয়ার বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলতে লাগল,
“-চলে যাও বলছি। এই মিথ্যার জালে গড়ে ওঠা সম্পর্ক আমি রাখতে চাই না। তোমাকে দেখলে আমার রাগ লাগছে। হেসে হেসে কত সহজে মিথ্যা বলে তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছ। আমার মনে কাঁটার মত বিঁধছে তোমার প্রতিটা মিথ্যা কথা। চাইলেও নিজেকে মানাতে পারছি না।’
“-তুমি সত্যিই চাও আমি চলে যাই? ‘
“-হ্যাঁ। চলে যাও তুমি।’
“-ঠিক আছে। আজকের পর আর কখনও তুমি আমাকে এ বাড়িতে দেখতে পাবে না। শুধু এ বাড়িতে কেন তুমি এই জীবনে কখনও আমাকে দেখতে পাবে না।’
বেরিয়ে গেল আতিয়া। এতো করে ক্ষমা চাওয়ার পরও যখন সা’দ ক্ষমা করলো না। তখন আতিয়াও আর ক্ষমা চাইবে না। সা’দের উপর তার অভিমান কাজ করতে লাগল। আতিয়া এই মানুষটাকে ভালোবেসেছিল। যে লোক নিজের ভালোবাসার মানুষের ভুল ক্ষমা করতে পারে না। তার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবে না আতিয়া। সে নিজেও আতিয়াকে ভালোবাসে বলে দাবি করে। কিন্তু আজ নিজের ভালোবাসা, নিজের স্ত্রীকে চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলছে!
সা’দ দু’হাতে চুল মুঠোয় ধরে চিৎকার করতে লাগল। হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল।
“-কেন মিথ্যে বললে তুমি? কেন ঠাকলে আমাকে? কেন আগেই সব বলে দিলে না? আমার বিশ্বাস নিয়ে কেন খেলা করলে আতিয়া? কেন? ‘

নাহিল রাত আটটার দিকে বাড়ি ফিরে আসে। হলরুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে আতিয়াকে ডাকতে লাগলো সে।
“-ভাবি! ও ভাবি! কই সবাই? আজব তো! বাড়িতে কেউ নেই নাকি? ‘
কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে নাহিল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল।
“-বাড়ি খালি রেখে সবাই একসাথে কোথায় উধাও হয়ে গেল! মেইন দরজাটাও খোলা। আশ্চর্য তো।’
সা’দের ঘরের সামনে এসে নাহিল থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। কিসের কাঁচের টুকরো? কী ভেঙেছে? তাড়াহুড়ো করে ভেতরে কী হয়েছে দেখার জন্য নাহিল ঘরে ঢুকে এলো। সা’দ অস্বাভাবিক ভাবে মেঝেতে বসে আছে। মেঝেতে ঘরের সব জিনিস এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কাঁচের টুকরো দিয়ে পুরো ফ্লোর ভর্তি। নাহিল সাবধানে পা ফেলে সা’দের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। আশেপাশে ভালো করে দেখে নিয়ে বলল,
“-কী হয়েছে ভাই? ‘
নাহিল সত্যিই কিছু বুঝতে পারছে না। ঘরের এই অবস্থা কেন? কে করেছে এমন? আতিয়াই বা কোথায়? ওকেও তো দেখা যাচ্ছে না। সা’দের পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলো নাহিল।
“-ভাই, তোমার কী হয়েছে? ঘরের এই অবস্থা কেন? আতিয়া কোথায়? ‘
লাল লাল চোখে তাকিয়ে শক্ত গলায় সা’দ বলল,
“-ওই মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতকের নাম আমার সামনে নিবি না।’
“-আতিয়া কোথায় ভাই? কী করেছ তুমি ওর সাথে? ‘
“-কিছুই করিনি। ভদ্রলোকের মত ওকে শুধু এই বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছি।’
কথাটা শুনে নাহিল জোরে বলে উঠল,
“-কেন ভাই? কেন তুমি এমন করেছ? ওকে কেন বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছ? কেন?’
“-তুই জানিস না, নাহিল। ওই মিথ্যাবাদী…
সা’দকে থামিয়ে দিয়ে নাহিল বলল,
“-আমি সব জানি ভাই। সব জানি। তুমি ওকে তাড়িয়ে দিয়ে ভালো কাজ করোনি। একা একা কোথায় যাবে ও? আর নিজের বাড়ি ফিরে গেলেও… না, না। তুমি কাজটা ঠিক করোনি। আমি ওকে খুঁজতে যাচ্ছি।’
আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল নাহিল। সা’দ অবাক হয়ে বসে রইল। নাহিল সব জামতো! আর জেনেও বলছে সে ঠিক করেনি! আতিয়াকে ও খুঁজতে যাচ্ছে?
#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(২২)
#জেরিন_আক্তার_নিপা

বাঁ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে আতিয়া। সা’দ তাকে অনেক অপমান করেছে। তবুও তাকে ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে ভেবে চোখের পানি থামছে না। ভাঙা গলায় ফোঁপাতে ফোঁপাতে আতিয়া বলছে,
“-তুমি আমার একটা কথাও শুনলে না। অপমান করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে। এটাই আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা! তুমি চাইলেও আর কখনও আমি তোমার কাছে ফিরে যাব না। তুমি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছ।’
আজ যেন চোখের পানি কোন বাধা মানছে না। এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছে আতিয়া। ওর কাছে টাকাও নেই। কীভাবে বাসায় ফিরে যাবে এখন। এভাবে বাড়ি গিয়ে পাপাকে,হামিদ চাচাকে কী বলবে? কাঁদতে কাঁদতে একটা বাসে উঠে গেল আতিয়া। জানালার পাশে একটা সীটে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে সা’দের বলা কথাগুলো উল্টেপাল্টে ভাবতে লাগল। যত ভাবছে ততই কান্না আসছে।
এদিকে নাহিল পাগলের মত এখানে সেখানে আতিয়াকে খুঁজছে। বাঁ হাতে মাথার চুল মুঠো করে ঝালাকো।
“-ভাই! ভাই! কী করলে তুমি এটা? আতিয়াকে কেন বাড়ি থেকে চলে যেতে বললে?’
নাহিল তার কয়েকজন বন্ধুকে কল করলো। ভাইয়ের উপর রাগ লাগছে তার। ভাইও মাঝে মাঝে এমন সব পাগলামি করে!
“-আতিয়া মিথ্যা বলেছে তো সমস্যা কী? আমরাও তো দুধে ধোয়া তুলসীপাতা না। আমরাও মিথ্যা বলেছি। মিথ্যা বলেই তো ওকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছি। ‘
দাদাজান ফিরে আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গেছে। বাড়িতে এসে আতিয়াকে না দেখে ভেবেছে ঘুমিয়ে গেছে হয়তো। তাই রাতের বেলা আর কাউকে না জাগিয়ে দাদাজান নিজের ঘরে চলে গেলেন।
আতিয়াকে না পেয়ে নাহিলও বাড়ি ফিরে এসেছে। ভাইয়ের খোঁজ নেওয়ার জন্য সা’দের ঘরে গেল। প্রথমে অবাক হলো নাহিল। ঘর সম্পূর্ণ আগের মতন। কাঁচ ভাঙা, জিনিসপত্র এলোমেলো সব গুছানো। কিছুক্ষণ আগে যেমনটা দেখে গিয়েছিল তার কিছুই মিল নেই। যেন কিছুই হয়নি। ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে গেল নাহিল।
“-ভাই! ভাই, ঘরে আছো?’
এমন সময় দরজা দিয়ে ঢুকলো সা’দ। একদম স্বাভাবিক। নাহিলকে দেখে বলল,
“-তুমি! কিছু বলবে? ‘
“-আতিয়াকে তুমি যেতে দিলে কেন? ‘
সা’দ কোন উত্তর দিল না। ফোন বেড সাইড টেবিলের উপর রাখল।
“-ঘুমুবো এখন আমি।’
“-কাল আমি আতিয়াকে আনতে যাব।’
“-কেন? ‘
“-কেন কী ভাই? আতিয়া একা একা সব মিথ্যা বলেনি। আমরাও বলেছি। আতিয়া হোটেলে রুম পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলেছিল। আমাদের বাড়িতে আসার জন্য না। আমরাই ওকে মিথ্যা বুঝিয়ে দাদাজানের অসুস্থতার কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছি। তুমিই ওকে ভালোবেসেছিলে। আতিয়া তোমাকে জোর করেনি। আমাদের সাথে তো ওর কোন যোগাযোগই থাকত না। ও ওর রাস্তায় চলে যেত।’
সা’দ নাহিলের কোনো কথা কানে নিল না। শুয়ে পড়লো সে। নাহিল ভাইয়ের উপর বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে গেল। মাথা খারাপ হয়ে গেছে ভাইয়ের।

আতিয়া বাড়ি থেকে চলে গেছে এটা দাদাজান জানতে পেরে চিৎকার চেচাঁমেচি শুরু করে দিলেন।
“-চলে গেছে মানে? কেন চলে গেল ও? আমি বাড়ি ছিলাম না। ওকে তোমরা যেতে দিলে কেন? আটকালে না কেন ওকে? ‘
নাহিল নীরস মুখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“-ও ইচ্ছে করে চলে যায়নি দাদাজান। আপনার বড় নাতি ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে।’
কথাটা শুনে দাদাজানের চোখ কপালে উঠে গেল।
“-তাড়িয়ে দিয়েছে! কেন? কি হয়েছে আমাকে খুলে বলবে কেউ? ‘
নাহিল দাদাজানের কাছে প্রথম থেকে সবটা বলতে শুরু করলো।
সবটা শুনে দাদাজান মাথা নেড়ে বললেন,
“-কাজটা তুমি ঠিক করোনি সা’দ।’
দাদাজান সা’দের মুখের দিকে তাকালেন।
“-তুমি আজই ওকে এবাড়িতে ফিরিয়ে আনতে যাবে। ক্ষমা চাইবে ওর কাছে। আতিয়া আসতে না চাইলে জোর করে হলেও ওকে নিয়ে আসবে। আমি কিছু জানি না। আজ রাতের আগে আমি আমার নাতবৌকে আমার বাড়িতে দেখতে চাই। আতিয়া ফিরে না এলে এবাড়িতে তোমাদেরও জায়গা নেই। অপদার্থ দু’টা। নাকের ডগায় রাগ তাদের। রাগ করে বৌকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। যেভাবেই হোক আতিয়াকে ফিরিয়ে আনবে তোমরা। আমি কিছু শুনতে চাই না। ‘
দু’জনকে ধমকাতে ধমকাতে দাদাজান রুমের দিলে এগোতে লাগলেন। নাহিল সা’দের দিকে ফিরল।
“-তুমি যাও আর না যাও। দাদাজান না বললেও আমি আতিয়াকে আনতে যেতাম। যেতাম কী? এখনই বের হচ্ছি। তুমি তোমার রাগ নিয়ে বসে থাকো। আতিয়া আমার সাথে না ফিরলে আমি ওদের বাসায় থেকে যাব। ফিরব না আর এই বাড়িতে। তুমি একাই থাকো।’
সা’দকে হতভম্ব অবস্থায় রেখে নাহিল গাড়ির চাবি দিয়ে বেরিয়ে গেল। কপালের পাশের দুই শিরা চেপে ধরে সা’দ সোফায় বসে পড়ল।
“-এখন তো বোঝা যাচ্ছে সব দোষ আমার। আমিই একমাত্র দোষী। কেউ আতিয়ার দোষ দেখছেই না। সবাই আমার পেছনে পড়েছে।’

ভোর সকালে বাসায় ফিরে এসেছে আতিয়া। কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা দিয়ে দিয়েছে। বাবা,হামিদ চাচা কারো সাথে একটা কথাও বলেনি। বাবা,হামিদ চাচা পেছন পেছন রুম পর্যন্ত এসেছে। অনেক ডাকার পরও আতিয়া দরজা খুলে নি। একটা কথার উত্তরও দেয়নি। আশরাফ চৌধুরী মেয়ের ফিরে আসায় খুশিও হতে পারছেন না। হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে কোত্থেকে চলে এলো। এসেও কারো সাথে কথা বলছে না কেন? হামিদ চাচা জানতো আতিয়া ফিরে আসবে। কিন্তু আতিয়াকে এই অবস্থায় দেখে উনিও মনে মনে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে দুই ঘন্টা পর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো আতিয়া। আশরাফ চৌধুরী আতিয়ার অপেক্ষা বসে ছিলেন। আতিয়াকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে উঠে গেলেন।
“-আতিয়া! মা,এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? আমার উপর রাগ করে এভাবে বাড়ি থেকে চলে গেলে কেন? তোমাকে ছাড়া আমার দিনগুলো কেমন কেটেছ তা শুধু আমিই জানি। কেন আমাকে এতো টেনশন দিস মা?’
“-পাপা আমার ক্ষিদে পেয়েছে।’
হাসলেন আশরাফ চৌধুরী। হামিদকে ডাকতে লাগলেন।
“-হামিদ, তোমার মা জননী খাবে। ওর জন্য টেবিলে খাবার দাও। আয় মা৷ আজ আমরা সবাই একসাথে বসে খাব। কতদিন তোর সাথে বসে খাই না। অনেক কষ্ট দিয়েছিস তুই। বাবার উপর রাগ করে আর কখনও এভাবে যাস না মা।’
আতিয়া খাচ্ছে। আশরাফ চৌধুরী এক ধ্যানে মেয়েকে দেখলেন। এই আতিয়া যেন আগের সেই চঞ্চল আতিয়া নেই। কেমন যেন পাল্টে গেছে। কিছু একটা তো হয়েছে। নাহলে আতিয়া এতো চুপচাপ বসে খাচ্ছে কেন?
“-কোথায় গিয়েছিলি মা? কার কাছে ছিলি এতদিন? ‘
আতিয়া পাপার দিকে চাইল।
“-পাপা, আমি কোথায় ছিলাম? কার কাছে ছিলাম? কীভাবে ছিলাম? তোমার কাছে কিছুই বলব না। শুধু তোমার কাছে কেন? কারো কাছেই কিছু বলব না। আমাকে তোমরা এসব নিয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করো না প্লিজ।’
“-আচ্ছা, আচ্ছা। বলতে হবে না। তুই পেট ভরে খা মা। আমি দেখি। তুই আমার সামনে বসে খা।’

সা’দ তার ঘরে আসতে পারছে না। ঘরে এলেই আতিয়ার কথা মনে পরছে। শুধু ঘরে কেন? এ বাড়ির যেখানে যাচ্ছে সেখানেই আতিয়ার স্মৃতি ভেসে উঠছে। আতিয়া এখানে এসেছিল। ওখানে বসেছিল। পাগল হয়ে যাচ্ছে সা’দ। তার উপর দাদাজান, নাহিল তার সাথেই রাগারাগি করছে। কেউ তার মনের অবস্থা বুঝতে চাইছে না। নাহিল তো ভাবির প্রতি দরদ দেখিয়ে সোজা ভাবির বাড়ি চলে গেল। সা’দ ভাবছে,
“-আমি কি আতিয়ার সাথে একটু বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি? আতিয়া একা তো মিথ্যা বলেনি। আমি নিজেও তো বলেছি। হ্যাঁ, মানছি নাহিলের পাল্লায় পড়েই বলেছি। তবুও তো, বলেছি তো।’
পায়চারি করতে করতে সা’দ অনেক কথাই ভাবছে।
“-আতিয়াকে ছাড়া তো আমি থাকতে পারব না। ওকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।’
আতিয়া বাড়ি ফিরে এসেছে শুনে আতিয়ার ফুপু আর বিশালও এসেছে। ফুপুর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছেই ছিল না আতিয়ার। বাবার ঘর থেকে উঠে চলে এলেও ফুপু পেছন পেছন ওর ঘরে চলে এলো। আতিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আবেগে গলে গিয়ে বলতে লাগলেন,
“-তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি মা? জানিস, তোর জন্য বিশাল কত চিন্তা করেছে। তোকে কত খুঁজেছে। কোথায়, কোথায় খোঁজা বাকি রেখেছে বল তুই! ছেলেটা তোর জন্য কী পাগল তা শুধু আমিই জানি।’
আতিয়া কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু হামিদ চাচা তাকে ডাকল।
“-মা, মা জননী। তোমার লগে কেউ দেখা করবার চায়।’
“-আসছি চাচা।’
আতিয়া ফুপুর সামনে থেকে কোন অজুহাতে যেতে পারলেই বাঁচে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আতিয়া বলল,
“-কে এসেছে চাচা? ‘
নাহিলকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে গেল সে। মনে মনে ভীষণ অবাক হলেও মুখে স্বাভাবিকতা বজায় রেখে একটু হেসে বলল,
“-নাহিল! তুমি?’
আতিয়াকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে নাহিল স্বস্তির হাসি হাসল।
“-তোমাকে নিয়ে যেতে… আই মিন, তোমাকে দেখতে এলাম।’
“-দাঁড়িয়ে আছ কেন? বসো।’
আতিয়া নিজে এসে নাহিলের পাশে বসলো। হামিদ চাচাকে বলল,
“-চাচা, ও আমার বন্ধু। এ কয়দিন ওদের বাড়িতেই ছিলাম।’
হামিদ চাচা নাহিলের জন্য চা পানির ব্যবস্থা করতে চলে গেলেন। নাহিলের দিকে তাকিয়ে আতিয়া বলল,
“-দাদাজান কেমন আছেন?’
“-দাদাজান আর আমাদের কথা বাদ দাও। তুমি বেশ আছো দেখছি।’
“-হুম। নিজের বাড়ির…
“-তুমি আমাকে, দাদাজানকে না বলে কেন চলে এলে আতিয়া? কাজটা কি তুমি ঠিক করেছ? দাদাজান তোমার জন্য টেনশন করে বিপি হাই করে ফেলছে। আমি সারাটা রাত পাগলের মতন কুত্তা দৌড় দৌড়েছি। রাতের বেলা একা একা তুমি কিভাবে বাড়ি ফিরবে ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল। আর তুমি দিব্যি বাড়ি ফিরে…
নাহিল কথা শেষ করার আগেই আতিয়া বলল,
“-তুমি আমার কথা ভাবলে কী হবে নাহিল? যার ভাবার ছিল, সে তো একবারও ভাবেনি। উল্টো আমাকে অপশন করে বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেছে। তুমি আমার ফ্রেন্ড, নাহিল। তুমি এসেছ এতে আমি অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু তুমি আমাকে তোমার সাথে যেতে বোলো না প্লিজ। তোমার সব কথা রাখলেও এই কথা আমি রাখতে পারব না। আমি আর কখনও ওই বাড়িতে ফিরে যাব না। তোমার ভাইয়া এলেও না। তোমার যতদিন মন চাইবে তুমি এখানে থাকো।’
“-উঁহু। তোমাকে যেতে বলেছে কে? আমি বলেছি? আরে আমি নিজেই তো আর ও বাড়িতে যাব না। তাহলে তোমাকে যেতে বলব কেন? আমি তো তোমার বাড়িতে থাকতে এসেছি। এভাবে থাকতে না দিলে ভাড়া দিয়ে থাকব। দাদাজানকেও নিয়ে আসব। ভাই ওখানে একাই থাকুক। ও একা থাকারই যোগ্য।’
নাহিল মজা করছে নাকি সত্যি সত্যিই বলছে বুঝতে পারল না আতিয়া। না। এই ছেলে মজা করছে না। ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে নাহিলও আতিয়ার মতই সা’দের উপর রাগ করেছে। হামিদ চাচা খাবার নিয়ে এলে নাহিল বলল,
“-না। এখন কিছু খাব না। অনেক দূর থেকে এসেছি। আতিয়া তুমি আমাকে আমার রুম দেখিয়ে দাও তো। আমি কোন রুমে থাকব? রুমে গিয়ে আগে হট শাওয়ার নিব। তারপর রাতে তোমাদের সবার সাথে বসে খাব।’
আতিয়া হাসতে হাসতে বলল,
“-আচ্ছা। আচ্ছা। চাচা তুমি ওর জন্য একটা রুম গুছিয়ে দাও তো। ততক্ষণ তুমি আমার রুমে এসে বসো। চলো।’
“-ওকে।’
আতিয়ার রুম দেখে নাহিল বলল,
“-বাহ! বেশ সুন্দর তো তোমার রুমটা। ছোট বাচ্চাদের রুমের মত পুতুল টুতুল দিয়ে ভরে ফেলছ।
হাসল আতিয়া।
“-ছোট বেলা রুমটা যেমন ছিল, তখনও তেমনই আছে। কিছুই চেঞ্জ করা হয়নি। মা যখন জানতে পেরেছিলেন উনার মেয়ে হবে। তখন উনি নিজেই ঘরটা এভাবে সাজিয়ে ছিলেন। মা মারা যাবার পর, আমি বড় হয়ে যাবার পরও ঘরটা এমনই আছে।’
“-হুম বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের তো ছোট থেকেই মা নেই। মা’কে কখনও দেখিইনি। মায়ের আদর পাইনি। তাই মা’কে নিয়ে, মায়ের সাথে জড়ানো কোনো কিছু নিয়েই এতো ইমোশন কাজ করে না। আসল কথা মা’র স্মৃতি জড়ানো কোন কিছুই তো আমাদের দুই ভাইয়ের কাছে নেই। কী আগলে রাখব বলো তো? ‘
আতিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। নাহিল বলেই চলছে,
“-তবে এটা নিয়ে আমার বা ভাইয়ের কখনও আফসোস ছিল না। দাদাজান আমাদের দুই ভাইকে একাই এতটা ভালোবাসা দিয়েছেন, যে মা বাবার কমতি কখনও অনুভব হয়নি। বুঝলে? ‘
মাথা নাড়ালো আতিয়া।
“-হুম।’
নাহিল এখানে এমন ভাবে আছে যেন এটা তার নিজেরই বাড়ি। সে সব সময় এখানেই থাকত। এখানের সবই তার চেনা। মানুষ গুলোও তার কত আপন।

চলবে…
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here