#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়িকা
পর্ব—১২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
বয়স্কা মহিলাকে পালিয়ে যেতে দেখে আমি বেশ অবাক হলাম।উনি এভাবে পালিয়ে গেলো কেনো বুঝতে পারছি না।মাকে জিজ্ঞেস করলাম:
—মা আপনি ওনাকে কি চিনেন?
—কই নাতো,মনে পড়ছে না।আগে কখনো দেখেছি বলেও মনে হয় না।
—তাহলে উনি এভাবে পালিয়ে গেলেন কেনো,
—কি জানি,অন্য কোনো কারণও হতে পারে।
—না আমি স্পষ্ট দেখলাম উনি আপনাকে দেখে কেমন জানি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন,ঠিক তারপরেই সরে পড়লেন।কাহিনীটা কি?
—আমি সত্যি একে চিনি না,আগেও কখনো দেখেছি বলে মনে হয় না।আর দেখে থাকলেও মনে নেই।
—আমারও তাই মনে হয়,কিছু তো একটা ব্যপার আছে।তা না হলে এরকম চমকে যাবেন কেনো উনি,
—তো আমরা এখন কি করতে পারি দোয়েল?
—আগে চলুন ভেতরে যাই।তারপর আমাদের অথোরিটির সাথে কথা বলতে হবে।অনেক কিছু জানার আছে আজ।
—হুম তাই চলো।
আমি আগে থেকেই হাসপাতাল অথোরের অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে রেখেছিলাম।জানি না উনি কেনো মহিলা কন্ঠ শুনতেই আমাদের হেল্প করার জন্য রাজি হয়ে গেলেন।তবে যাই হোক না কেনো আমাদের ভালোই হলো,ওনার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারলে অনেক রহস্যের সমাধান হবে আজ।
অথোরের সাথে দেখা করতে যাবার সময়ে প্রত্যয়ের একটা ফোনকল এলো আমার কাছে।প্রথমে ভেবেছিলাম রিসিভ করবো না কিন্তু ও আবার উল্টোপাল্টা সন্দেহ করতে পারে এই ভেবে ফোনটা রিসিভ করলাম।
—হ্যাঁ,হাসপাতালে পৌঁছেছো তোমরা?কতোদূর হলো?
—এইতো এলাম এই মাত্র,
—মানে এই মাত্র হাসপাতালে পৌঁছেছো,ডাক্তার দেখাবে কখন আর বাড়ি ফিরবে কখন?
—আর বলো না ভয়ংকর জ্যাম ছিলো রাস্তায়,এখানে আবার লম্বা সিরিয়াল দিতে হয়েছে।ফিরতে রাত হতে পারে।
—আচ্ছা আমি কি আসবো,কোন হাসপাতালে আছো তোমরা সেটা তো বললে না?
—না না,আসতে হবে না।খুব দরকার হলে আমি ফোন করে নেবো তোমায়,এখন বাই।আর একদম টেনশন করো না আমাদের নিয়ে।
—ওকে সাবধানে থেকো,
—ঠিক আছে।এখন রাখছি।আর শোনো আমার ফোনে চার্জ নেই খুব একটা,যখন তখন অফ হয়ে যেতে পারো।আমরা কাজ শেষ হলেই বাসায় পৌঁছে যাবো।অযথা টেনশন করো না।
যেভাবে হোক প্রত্যয়কে ম্যানেজ করে হসপিটল অথোরের কক্ষে গেলাম।আমরা গিয়ে একটু ওয়েট করতেই উনি চলে আসলেন।না ফোনে কথা বলে যেরকম মনে হয়েছিলো লোকটা মোটেও সেরকম নয়।তিনি নিজে থেকেই আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন।
—আপনারা এসে গেছেন?অনেকক্ষন বসিয়ে রাখলাম মনে হয়।
—না আমরাও এইমাত্র এলাম,
—বেশ,তা তোমার নামটা কি যেনো মা।আর সাথে ইনি কে হন?
—আমার নাম দোয়েল চৌধুরী,আর ইনি আমার শ্বাশুড়ি মা।কেনো ফোনে তো আপনাকে….
—তুমি ফোনে আমার সাথে কথা বলোনি,আমার সহকারির সাথে বলেছো।
—ওহ আচ্ছা।
এতোক্ষণে আমার মনের খটকা দূর হলো।তার মানে আমি ওনার সহকারীর সাথে কথা বলছিলাম,তাই সবকিছু গন্ডগোল লাগছিলো।
—তো এবার বলো কি সাহায্য করতে পারি তোমাদের?
—হ্যাঁ সেই বিষয়েই কথা বলার জন্য এসেছি আমরা।এই যে দেখতে পাচ্ছেন আমার শ্বাশুড়ী মা,আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে ওনার এই হাসপাতালেই ডেলিভারী হয়েছিলো।
—এতো বহুদিন আগের কথা,
—আমি জানি বহুদিন আগের কথা।তবে আমাদের কিছু ইনফরমেশন দরকার,
—কেমন ইনফরমেশন?
—এই ধরুন,সেদিন মায়ের অপারেশন কার হাতে হয়েছিলো,সাথে নার্স কারা ছিলো।তাছাড়া ঐদিন হাসপাতালে আরোও কোনো ডেলিভারী হয়েছিলো কিনা,
—আপনারা দুজন সত্যি এগুলো জানার জন্য এতোদূর এসেছেন?
ভদ্রলোক বেশ অবাক হয়ে আমাদের প্রশ্ন করলেন।
—হ্যাঁ,আমাদের এগুলো জানা খুব জরুরী।প্লিজ হেল্প করুন আমাদের।
—দেখুন আপনারা এভাবে হাসপাতালের তথ্য জানতে চাইতে পারেন না,আর তাও এতো বছর পর।তাছাড়া আপনারা কেউ আইনের লোক নন,আমরা বাধ্য নই আপনাদের কাছে আমাদের হাসপাতালের নিজস্ব তথ্য শেয়ার করতে।
—আমরা আইনের লোক নই ঠিক আছে,যদি আইনের লোক এসে সত্যি এই একই প্রশ্নগুলো করে তখন কো অপারেট করবেন তো?
—নিশ্চয়ই করবো,
—তাহলে প্লিজ আমাদের কিছু তথ্য দিয়ে হেল্প করুন।দেখুন এই তথ্যগুলো আমার একান্তই প্রয়োজন তাই আপনার সাথে পার্সোনাল রিকুয়েস্ট করতে আসা।যদি আইনের আশ্রয় নেওয়ার থাকতো আপনাকে জানিয়ে আসতাম না নিশ্চয়ই।প্লিজ হেল্প করুন আমাদের।অন্তত সেইদিন মায়ের ডেলিভারির সময়ে কোন নার্স বা ডাক্তার ছিলেন এইটুকু জানিয়ে সাহায্য করুন আমাদের।আমাদের অন্যের কোনো ইনফরমেশন দিতে হবে না,ব্যস এইটুকুই।
—বিশ্বাস করুন যদি আগে বুঝতাম কখনোই আসতে বলতাম না আপনাদের,
—অনেক আশা নিয়ে এসেছি।নিরাশ করবেন না প্লিজ।
—কিন্তু এটা তো নিয়মের বিরুদ্ধে কিকরে হেল্প করি আপনাদের বলুন,আপনাদের এখানে আসতে বলেই বিপাকে পড়েছি আমি।
অবশেষে আমার দীর্ঘ অনুনয় বিনয়ের পরে হসপিটল অথোর আমাদের সাহায্য করার জন্য রাজি হলেন।সেদিন মায়ের ডেলিভারী হয়েছিলো যে ডাক্তারের হাতে তিনি এখন আর দেশে থাকেন না।ওনার সাথের সহকারী হিসেবে যারা ছিলেন তাদের অ্যাড্রেস দেওয়া হলো আমাদের।আমি সিদ্ধান্ত নিলাম হাসপাতাল থেকে সবথেকে কাছে যার বাসা আগে তার কাছেই যাবো।হসপিটল অথোরকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আর মা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসলাম।গেট পার করে রাস্তায় বের হতেই প্রত্যয়ের আবারো ফোনকল এলো আমাদের কাছে।ইতিমধ্যে ঘন্টা দুইয়ের মতো পার হয়ে গেছে।আমি ফোনটা রিসিভ করলাম না।জানি প্রত্যয়ের সন্দেহবাতিক মন প্রশ্নে জর্জরিত করে দেবে আমায়।ফোনটা কেটে রোদেলার কাছে নম্বরে কল দিলাম।একটু পরেই ও রিসিভ করে।
—হ্যাঁ,দোয়েল আপু বলুন।
—তুমি বলেছিলে না আমায় হেল্প করবে?
—বুঝলাম না কি বলতে চাইছেন আপনি?
—এখন এতো বুঝতে হবে না।আমি যা বলছি তাই করো,
—কি করতে হবে?
—প্রত্যয়কে মানে ফেইক প্রত্যয়কে যেকরে হোক আটকাও,ওকে তোমার কাছে নিয়ে গিয়ে ব্যস্ত রাখো।যাতে বাইরে কোথাও না যেতে পারে।
—কি হয়েছে আমায় একটু বলবেন।
–আমি একটা জায়গায় এসেছি,প্রত্যয়কে মিথ্যে বলে এসেছি।ফিরতেও অনেকটা দেরী হবে।
জানোই তো ওকে,ও আমার কাজে বাঁধা সৃষ্টি না করতে পারে সেই কারণে তুমি ওকে ব্যস্ত রাখো,যাতে আমাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগ না পায়।
—এবার বুঝলাম,কিন্তু আমি ওকে কীকরে আটকাবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।ও কি শুনবে আমার কথা,
—তুমি তো প্রত্যয়কে ভালোবাসতে তাই না?ও তোমার ভালোবাসাকে শেষ করে দিয়েছে,কেনো ভুলে যাচ্ছো?যদি সত্যিই ওর পতন চাও তবে এটা তোমাকেই করতে হবে।কোনো বাহানা দেখিয়ে ওকে তোমার কাছে নিয়ে ব্যস্ত রাখো।আর হ্যাঁ,আমার এদিকের কাজ শেষ হলেই জানিয়ে দেবো তোমায়।
—আমি আপ্রান চেষ্টা করবো,
—শুধু চেষ্টা করলে হবে না তোমাকে এই কাজটা করতে হবে।আর ধরে নাও তুমি যে সত্যি ওর সঙ্গী নও সেটা প্রমাণ করার এটাই সুযোগ তোমার।
এই বলে ফোনটা কেটে দিলাম।আমি আর মা এতোক্ষণে সেই নার্সের বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি।কলিংবেল প্রেস করতেই ভেতরে থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে আসলো।মেয়েটা আমাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।
—আপনারা কারা ঠিক চিনলাম না তো?
—আমরা সিটি হাসপাতাল থেকে এসেছি,সাগরিকা চক্রবর্তী কি এই বাসাতেই থাকেন?
—হ্যাঁ,এখানেই থাকে।
—তিনি কী আছেন বাসায়,আর তুমি কে হও তার?
—উনি আমার মা হন,উনি বাসাতেই আছেন।
—আমরা তোমার মায়ের সাথেই একটু কথা বলতে এসেছিলাম,
—আচ্ছা আপনারা ভেতরে এসে বসুন,আমি ডেকে দিচ্ছি।
মেয়েটা আমাদের নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসালো।ফাঁকে জেনে নিয়েছি ওর নাম প্রত্যাশা।মা মেয়ে দুজন মিলেই এখানে থাকে।বাবা নেই।আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে প্রত্যাশার মা এসে ভেতরে ঢুকলো।ওনাকে দেখে আমরা বেশ অবাক হয়ে গেলাম।গল্পের পরবর্তী সকল পর্ব সবার আগে পেতে ভিজিট করুন
‘প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ’পেজ।এতো সেই ভদ্রমহিলা, যার সাথে হাসপাতালের গেটের ধাক্কা লেগেছিলো আমার।ভারী অদ্ভুত ব্যপার তো!মা যে আমার থেকেও বেশী অবাক হলো।তিনি ভদ্রমহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
—আপনি সাগরিকা চক্রবর্তী?হ্যাঁ এবার চিনতে পেরেছি প্রত্যয়ের ডেলিভারির দিন আপনিও ওটিতে ছিলেন।
ভদ্রমহিলা নিজেও বেশ অপ্রস্তুত হলেন আমাদের দেখে।মিথ্যে বলে এক প্রকার ফেঁসে গিয়েছেন উনি।আমি তাকে বললাম।
—ওহ,তারমানে এর আগেও আপনাদের দুজনের দেখা হয়েছে।কিন্তু ম্যাম আপনি তখন সেটা অস্বীকার করলেন কেনো,আর ওভাবেই ছুটেই বা আসলেন কেনো?
—আমি এসবের উত্তর পরে দিচ্ছি,আগে বলো এতোবছর পরে তোমরা কেনো এসেছো আমার সাথে দেখা করতে?
—আমাদের মনের সংশয় দূর করতে।
—সংশয়,কিরকম সংশয়?
—দেখুন ম্যাম,আমি প্রত্যয়ের স্ত্রী।আর ওনাকে তো চিনতেই পারছেন।আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে আপনার সামনে আমার হাসবেন্ডের জন্ম হয়।সবাই না জানলেও আমি ভালো করেই জানি সেইদিন এমন কিছু ঘটেছিলো যা আমার শ্বাশুড়ী মা জানে না,এমনকি কেউ জানে না।তবে সেটা আপনিও জানেন,
—তুমি কি বলছো এগুলো আমি তো বুঝতে পারছি না।
—ম্যাম আমাদের কাছে সকল প্রমাণ আছে।আমরা প্রমাণ ছাড়া আসিনি আপনাদের কাছে।
—কীসের প্রমাণের কথা বলছো তুমি?
আমি তারপর ব্যাগ থেকে ডিএনএ রিপোর্টটা বের করে সাগরিকা ম্যামকে দেখালাম।
—এটা একটা ডিএনএ রিপোর্ট তবে এটা প্রত্যয়ের নয়,অন্য কারো।আমার শ্বাশুড়ী মায়ের বড়ো ছেলের মৃত্যু হয়েছে ছয়মাস আগে।আর তার ছোটো ছেলে প্রত্যয়ও বেঁচে নেই।তাহলে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সাথে মায়ের ডিএনএ ম্যাচ করলো কীকরে আপনিই বলুন?
ডিএনএ রিপোর্টটা দেখে সাগরিকা ম্যাম অদ্ভুত ব্যবহার শুরু করলেন।তিনি যেনো কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না এটা।
—কি হলো ম্যাম কিছু বলুন।চুপ করে থাকবেন না।দেখুন বলতে খারাপ লাগছে তারপরেও বলছি আপনি আমাদের সত্যিটা না জানালেও আইন তার উপায়ে কিন্তু ঠিক জেনে নেবে।
—না এটা হতে পারে না কিছুতেই,এই ডিএনএ রিপোর্টটা ভুল।এটা কে বানিয়েছে?
—ডিএনএ রিপোর্ট কেনো ভুল হতে যাবে?বলুন সেদিন হাসপাতালে আমার মায়ের জমজ সন্তানের ডেলিভারি হয় নি?আর আপনাদের ভেতরের কেউই কোনো একটা সন্তানকে সরিয়ে দিয়েছেন।
—না,এরকম কিছুই ঘটেনি।যদি সত্যিই এরকম কিছু ঘটতো,আমি এতোটা অবাক হতাম না।
—মানে,তাহলে কি ঘটেছিলো সেদিন?
—তোমরা যা ভাবছো তার সম্পূর্ণ বিপরীত কিছু,আমি বললে বিশ্বাস করতে পারবে তো?
—হ্যাঁ,বলুন আপনি।যা জানেন সব বলুন।
—সেইদিন আসলে তোমার শ্বাশুড়ী কোনো জীবিত সন্তানের জন্মই দেননি।একটা মৃত মেয়ে পাই তার গ র্ভে আমরা।এরপর ঐদিনে হাসপাতালে জন্ম নেওয়া অন্য কারোর একটা সুস্থ বাচ্চা লুকিয়ে ওনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিলো….!
ভদ্রমহিলার কথা শুনে মা ধপ করে সোফার ওপরে বসে পড়লো,আমি মূহুর্তেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
চলবে……
পেইজের রিচ কমে গেছে অনেক সবাই বেশি বেশি কমেন্ট করুন প্লিজ