আমার গল্পে আমি খলনায়িকা
পর্ব—২০
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
ঠিক তখন রুমের দরজার সামনে রোদেলা এসে উপস্থিত হয়।লক্ষ্য করলাম ও আমাদের দুজনকে ঘ নি ষ্ঠ অবস্থায় দেখে কিছুটা ভরকে গেলো।
—একি দোয়েল আপু তুমি এখানে?কখন এলে?
—একটু আগেই।
—সবকিছু ঠিক আছে তো?
—হ্যাঁ,সবকিছুই ঠিক আছে।কিন্তু তুমি আসবে এটা তো আগে ইনফর্ম করতে পারতে?
—আপনিও তো কিছুই বলেননি আমায়।আমি ভাবলাম আজ…
—কি আজ…?
—দাঁড়ান দেখাচ্ছি।প্রত্যয় এদিকে এসো তো?
রোদেলা প্রত্যয়কে নিয়ে গিয়ে বিছানার ওপরে বসালো।আমি পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।রোদেলা তারপর নিজের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা শুকনো গোলাপ ফুল আর একটা ডায়েরী বের করলো।আমি বুঝতে পারছি না কি ঘটছে চোখের সামনে।রোদেলা আমার দিকে তাকিয়ে প্রত্যয়কে উদ্দেশ্য করে বললো :
—প্রত্যয় আজকে কতো তারিখ বলো তো?আজ ০৮ই নভেম্বর।মনে হচ্ছে আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে এই ডায়েরীটা তুমি আমায় দিয়েছিলে,আর সাথে একটা গোলাপ।যদিও ফুলটার অবশিষ্ট কিছুই নেই আর,ডাঁটাটা বাদে।
—রোদেলা তুমি এগুলো কেনো নিয়ে এসেছো এখন….কি করতে চাইছো এগুলো দিয়ে?
—তেমন কিছু না।ব্যস আমি এটাই মনে করাতে এসেছি প্রত্যয়কে দুবছর আগে এই দিনে প্রত্যয় আমাকে প্রথম প্রোপোজ করেছিলো।
রোদেলার কথা শুনে আমার আর কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না ও ঠিক কেনো এসেছে এখানে।নিজের চোখের সামনে এই দৃশ্যগুলো দেখে আমার গায়ের র ক্ত যেনো টগবগ করে ফুটতে লাগলো।আমি এই পৃথিবীতে সবকিছু সহ্য করতে পারি,কিন্তু প্রত্যয়ের সাথে কারোর ঘনিষ্ঠতা সহ্য করতে পারি না।কেনো জানি না তখন নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে আমার।হয়তো এটা কোনো অসুস্থতা,আর সেই অসুস্থতাই বারবার টানে আমায়।এ এক আশ্চর্য রকমের অনুভূতি যা বলে বোঝানোর সক্ষমতা আমার নেই।
—প্রত্যয় রোদেলা কি বলছে এসব,তুমি ওকে প্রোপোজ করছিলে?
আমার কথা শুনে প্রত্যয় আমতা আমতা করতে লাগলো।ও স্পষ্ট করে কিছুই বলতে চাইছে না।তবে কোনো দোটানার দোলাচল চলছে ওর মনের ভেতরে যেটা আমি উপলব্ধি করতে পারছি।
—কি হলো কিছু বলছো না কেনো?
—প্রত্যয় তুমি চুপ করে আছো কেনো,দোয়েল আপুকে বলো আজকের দিনেই তুমি আমায় প্রোপোজ করেছিলে।আমাদের ভালোবাসা এই দিনেই পরিণতি পেয়েছিলো!
—আমি তোমায় প্রোপোজ করিনি কখনোই,তুমি বিষয়টা বেশীই সিরিয়াসলি দেখছো?
—তাহলে কি এই ফুল ডায়েরী সবকিছু মিথ্যে…?
—না,কোনোটাই মিথ্যে না।আমি তোমাকে এগুলো দিয়েছিলাম ঠিকই।তোমার প্রতি তখন আমার একটা ভালোলাগা কাজ করতো,সেই ভালোলাগা থেকেই দিয়েছিলাম।
—তো এখন কী আর ভালো লাগে না?দোয়েল আপু একটু বোঝাও প্রত্যয়কে।তুমি তো ওর ভাবী,আমি জানি তুমি বোঝালে ও ঠিক বুঝবে!
—আমি কি বোঝাবো,প্রত্যয়ের যেটা মনে হচ্ছে তাই বলছে।ও কোনো শিশু নয়,যে বোঝাতে হবে আমায়!
রোদেলা এগিয়ে যায় প্রত্যয়ের দিকে।তারপর বলতে লাগলো।
—ঠিক আছে মানছি,তুমি আমায় প্রোপোজ করোনি।তবে এটা তো ঠিক তোমার আর আমার ভেতরে একটা ভালো সম্পর্ক ছিলো।আমরা কি সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি না?
—হ্যাঁ,নিশ্চয়ই পারি।তুমি চাইলে নিশ্চয়ই পারি।
প্রত্যয় আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।আমি জাস্ট এই দুজনের না ট ক আর নিতে পারছিলাম না।তবুও সবটা মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে।
—আমি জানতাম তুমি ঠিক আমায় একসেপ্ট করবে।দেখো আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা যেখানে শেষ হয়েছিলো আবারো সেখান থেকে নতুন করে শুরু করি।আর যেদিন সব ঠিক হয়ে যাবে তোমার দোয়েল ভাবীর সামনে আমায় প্রপোজ করবে তুমি,কথা দাও….?
রোদেলার হাসিমুখে বলা প্রত্যেকটা শব্দ ছু রি র মতো বিঁধছে আমায়।আমার মনে হচ্ছে ও ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে দুজনের মাঝখানে টেনে আনছে।শুধুমাত্র আমায় মানসিক য ন্ত্র না দেবার জন্য।ও কোথাও আন্দাজ করতে পারেনি তো প্রত্যয়ের প্রতি আমি দূর্বল।যদি তাই হয়ে থাকে ওর চ্যাপ্টার যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে হবে আমায়।তার জন্য যদি কোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে হয় আমি দুবার ভাববো না।প্রত্যয়কে ওর থেকে আ লা দা করার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত আমি।আমার আর ইচ্ছে করছে না এই দুজনের সামনে এইভাবে থার্ডপার্সণ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে।তাই প্রত্যয়কে উদ্দেশ্য করে বললাম।
—-প্রত্যয় আমি আসি,তুমি থাকো।
—এক্ষুণি চলে যাচ্ছো,আরেকটু সময়।
—কেনো,আমার বিশেষ কেনো প্রয়োজন আছে কি এখানে?এমনিতে রোদেলা চলে এসেছে।আশা করি তোমার সময়টা ভালোই কাটবে।
—দোয়েল আপু আরেকটু সময় থেকে যাও না।একসাথে বের হই আমরা।
আমি রোদেলার কথার আর কোনো উত্তর না দিয়ে রুম থেকে আসলাম।তারপর সোজা নিজের বাসায়।আসার পথে সারাটা সময় একটা কথাই চিন্তা করছিলাম কিকরে এই রোদেলা নামক কাঁটাটা উপড়ে ফেলা যায়।অনেক ভেবেচিন্তে একটা উপায় খুঁজেও পেয়েছি আমি।যদিও তার ফলাফল কি বেরোবে আমি জানি না,কারণ আমার সেই উপায়টা অনেক বেশী ভ য়া ন ক আর অদ্ভুত।তারপরেও এই শেষ চেষ্টাটা করতেই হবে আমায়।হতে পারে তার মাধ্যমে আমি নিজের লক্ষ্যের কোনো নতুন দিশা খুঁজে পাবো।
–
–
–
–
–
–
–
রাতের বেলা।প্রত্যুষ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।আমি একটা চায়ের কাপ নিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালাম।ওর সাথে মনখুলে কথা বলা হয় না বহুদিন।আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে একটা চুমুক দিলো।আমি ওকে প্রশ্ন করি :
—চা’টা কেমন হয়েছে প্রত্যুষ?
—হ্যাঁ,ভালোই হয়েছে।
কথাটা বলে পরক্ষণেই প্রত্যুষ যেনো চমকে উঠলো।আমার মুখে ও নিজের আসল নামটা শুনে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।প্রত্যুষ আগে থেকেই জানতো আমি ওর আসল পরিচয় জেনে গিয়েছি,কিন্তু ওর সামনে সেটা স্বীকার করবো ও হয়তো ভাবতে পারেনি।
—কি,কি বললে তুমি?
—কেনো ভুল কিছু কি বললাম।আর কেউ না জানলেও আমি তো জানি তুমি প্রত্যয় নও,তুমি প্রত্যুষ।
প্রত্যুষ হাত থেকে চায়ের কাপটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার দিকে ছুটে এলো।তারপর ঝাপটে ধরলো আমাকে।
—এই তুমি,চাইছো টা কি বলবে?আমার সাথে আবার কোন নাটক শুরু করেছো?
—আমি তোমার সাথে নাটক করছি,নাকি তুমি এতোদিন ধরে নাটক করে আসছো আমার সাথে?প্রত্যয় সেজে আমায় বিয়ে করেছো, আমার ওপর নিজের স্বামীর অধিকার ফলিয়েছো সেগুলো কি না ট ক ছিলো না?
আমার কথা শুনে প্রত্যুষ চুপ হয়ে গেলো।কারণ ওর বলার মতো আর কিছুই নেই।আমি ওকে আবারো বললাম।
—না না,ভয় পেয়ো না।আমার সেকারণে তোমার ওপর এখন কোনো অভিযোগ নেই।আর না আমার কোনোপ্রকার রা গ বা ক্ষো ভ আছে তোমার ওপর।
—এটাও বিশ্বাস করতে হবে আমায়,তোমায় আমার থেকে কেউ ভালো চিনে না।আমি তোমার এতো এতো স র্ব না শ করেছি।আমার ওপর কোনো ক্ষো ভ নেই তোমার?
—একসময় ছিলো,কিন্তু এখন আর নেই!
—মানে,কি বলতে চাইছো?
—আমি আর তুমি কি এক হতে পারি না।দেখো আমি কিন্তু চাইলেই যেকোনো সময় ফাঁসিয়ে দিতে পারি তোমায়।কারণ তোমার কোনোকিছুই অজানা নয় আমার কাছে।কিন্তু আমি সেটা করবো না,যদি তুমি আমার কথা শোনো।
—আমি ভয় পেয়ে তোমার কথা মেনে নেবো,এটা ভুলেও চিন্তা করো না।তবুও কৌতূহলবশত জানতে চাইছি কী এমন কাজ করতে বলছো তুমি আমায়,
—আমার পথের একটা ছোটো কাঁ টা,সেটাকে
উ প ড়ে ফেলতে হবে।তুমি আর আমি মিলে সেই কাজটা করবো।বলো স ঙ্গ দিবে আমার?
আমার কথা শুনে প্রত্যুষ একটা হাসি দিলো।আমি বুঝতে পারলাম ওর আমার প্রস্তাবটা পছন্দ হয়েছে!
চলবে…….