আমার গল্পে আমি খলনায়িকা
পর্ব—২১ এবং শেষ
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
আমার কথা শুনে প্রত্যুষ একটা হাসি দিলো।আমি বুঝতে পারলাম ওর আমার প্রস্তাবটা পছন্দ হয়েছে!
—কি আমার প্রস্তাবে রাজি তো?আমি জানতাম তুমি ঠিক আমার প্রস্তাবে রাজি হবে।
আমার কথা শোনামাত্র প্রত্যুষের মুখের হাসি মূহুর্তেই ম্লান হয়ে যেতে লাগলো।আমি বুঝতে পারলাম নিশ্চয়ই অন্য কিছু ঘটতে চলেছে।আমার ধারণা পুরোপুরি ভুল।ঠিক তাই হলো,আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রত্যুষ আমার গালে সপাটে একটা চ ড় মে রে মেঝেতে ফেলো দিলো।তারপর আমার কাছে এসে বলতে লাগলো।
—-সাহস হয় কিকরে তো র,আমাকে নিজের জালে ফাঁ সা তে এসেছিস।তবে শুনে রাখ আমি তোর থেকেও বড়ো খেলোয়াড়।আমি শুধুমাত্র সেটাই করবো যেটা আমার মন চায়,আমি তোর কথায় কেনো কাজ করতে যাবো!
—দেখো তুমি ভুল বুঝছো আমায়,আমি তোমায় ফাঁ সা তে চাইছি না।আমি যা বলেছি তাতে তোমারই মঙ্গল।
—আমার ভালো মন্দের চিন্তা তোকে করতে হবে না।এবার নিজেকে কিকরে বাঁচাবি সেটা দেখ।
—মানে,কি বলতে চাইছো তুমি?আমি কি ক্ষতি করেছি তোমার?তোমার সাথে যদি কেউ অ ন্যা য় করে থাকে সেটা কল্লোলের পরিবার করেছে, আমি তো কিছু করিনি।তাহলে আমাকে কেনো শা স্তি দিতে চাইছো তুমি?তুমি আমার স্বামীকে খু ন করেছো এটা জেনেও আমি কাউকে কিছুই বলি নি।
প্রত্যুষ আমার কথা শুনে আবারো হাসতে লাগলো।তারপর আমার কাছে এসে আবারো বলতে শুরু করে:
—কি,কি বলেছিস আরেকবার বল?কল্লোলকে আমি খু ন করেছি?সত্যিই তাই….
—হ্যাঁ,তুমি করেছো।
—আমার সাথে না ট ক করে কোনো লাভ নেই।কল্লোলের সাথে সেদিন কি ঘটেছিলো আমি সবটা জানি।আর আমি এটাও ওর চূড়ান্ত পরিণতি আমার হাতে নয়,ওর নিজের স্ত্রীর হাতে হয়েছিলো।
—কি যাতা বলছো তুমি,এতো কিছু জানলে কিকরে শুনি?
–সেদিন কল্লোলকে গু লি করার পরে আমি ঐ জায়গা ত্যাগ করিনি।আমি পেছনেই ছিলাম আর পেছন থেকে দেখেছি কিকরে তুই ওকে একের পর এক ছু রি র আঘাতে নিঃচিহ্ন করে দিয়েছিস।আমি সেই রাতে সবটা নিজের চোখে দেখেছি।
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না প্রত্যুষ আমার ব্যপারে সব জানে।ও নিশ্চয়ই সেদিন প্রত্যয়কে আমার কথাই বলতে গিয়েছিলো।আমি গন্ডগোল পাকাতে কিছুই বলতে পারেনি।হয়তো তারপর ভুলে গিয়েছিলো সবটা।প্রত্যয়কে আর যাই হোক এই সত্যিটা কখনোই জানতে দেওয়া যাবে না।আমি ভয়ে ভয়ে প্রত্যুষকে জিজ্ঞেস করি।
—তুমি যখন সবটাই জানো আমি আর কিচ্ছু লুকোবো না তোমার কাছে।আমি যাই করি না কেনো কল্লোলকে প্রথম আ ঘা ত টা কিন্তু তুমিই করেছিলে।ও তাতে মা রা যায়নি সেটা তোমার সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য।যাই হোক না কেনো।
—আমাকে কোনো মিষ্টি কথা দিয়ে ভোলাতে পারবে না তুমি।এবার আমার যেটা করা উচিত তাই করবো।
—আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে?
—কি প্রশ্ন?
—তুমি এতোকিছু জানলে কিকরে,তোমাদের দুই ভাইকে জন্মের সময়ে আলাদা করে দেয়া হয়েছিলো সেটা জানলে কিকরে তুমি?
—ঐ হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে সব বলেছে।ওনার বড়ো ছেলে ক্যা ন্সা রে মারা যায়।তারপর থেকেই অনুশোচনাবোধ কাজ করতে থাকে হয়তো সেইদিনের করা সেই অন্যায়ের কারণেই ওনাকে ঈশ্বর এমন শাস্তি দিয়েছেন।তারপরে উনি নিজের পাপের প্রায়শ্চিত করার জন্য আমাকে খুঁজে বের করেন,আমার সাথে হওয়া সকল অন্যায়ের কথা স্বীকার করেন।কল্লোলের বাবা সেদিন আমার সাথে আমার ভাইকে আলাদা করে দিয়েছিলো,শুধুমাত্র নিজের স্ত্রীর কোল আলোকিত করার জন্য।তুমিই বলো এই অপরাধের শাস্তি কি হতে পারে।আমি এরপর ওদের পরিবারকে খুঁজে বের করি,প্রত্যয় কিছুই জানতো না তাই আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম,তারথেকেও বড়ো কথা ও আমার নিজের ভাই।আমি ওকে।সত্যিই খুব ভালোবাসি।আমি ওর কোনো ক্ষতি করতে চাইনি।ওকে মা রা র ভয় দেখাতাম যেনো আমার কথা মেনে চলে শুধুমাত্র সেই উদ্দেশ্যে।আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি কথা বলতে বলতে প্রত্যুষের চোখজোড়া জলে ভিজে এসেছে।
—আমি বুঝতে পারছি,তোমার সাথে অনেক বড়ো অ ন্যা য় হয়েছে,তোমার কষ্টটা অনুভব করতে পারছি আমি।
—আমার কষ্ট তোমাকে অনুভব করতে হবে না।আর তুমি আমার ভাইকে ঠ কা তে পারবে না একদম।আমি জানি ও কল্লোলকে আমার থেকেও বেশী ভালোবাসে।ও যদি একবার আসল সত্যিটা জানতে পারে তোমায় ভালোবাসা তো দূর শুধুই ঘৃ না ই করে যাবে।
—প্লিজ তুমি এটা করো না আমার সাথে,তোমার পায়ে পড়ি।দেখো তুমি তো আমায় ভালোবাসো না,না আমি তোমায় ভালোবাসি।আমাকে বাকি দিনগুলো তোমার ভাইকে সাথে নিয়ে বাঁচতে দাও।তুমি সরে যাও আমার পথ থেকে।
—আমি তো সরে যাবোই,যার দুজন পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন হয়ে গেছে সে আবারো নতুন কাউকে চাইছে,তোমাকে চ রি ত্র হী ন বললেও সেই শব্দটার অপমান করা হবে।
—আমি চ রি ত্র হী ন নই,আমি শুধু প্রত্যয়কে ভালোবেসেছিলাম আর কাউকে না।শুধু প্রত্যয়কে।
—আমি কিন্তু তোমার থেকে দূরেই থাকতে চেয়েছিলাম,তোমায় স্পর্শ পর্যন্ত করতে চাইনি তুমিই জোর করে প্রথমে আমার ওপর স্ত্রীর অধিকার ফ লি য়ে ছো,ভুলে যেও না।কারণ আমি যেরকমই হই না কেনো তোমার মতো চ রি ত্র হী ন নই।আমি কখনোই এরকম কিছু করতে চাইনি তোমার সাথে।
—জানি,সবটা জানি আমি।কারণ আমি তখন তোমাকে প্রত্যয় ভাবতাম।যা করেছি প্রত্যয় ভেবে করেছি।এখন তো সবটা জানি,বলো।
—আমি প্রত্যয়কে সবটা বলে দেবো।আজকেই বলে দেবো।তারপরে দেখি ও কিকরে মেনে নেয় তোমায়।
—না,প্লিজ তুমি এটা করতে পারো না।আমার কথা শোনো।
—তোমার কথা শোনার প্রশ্নই আসেনা।দেখতে থাকো জাস্ট কি কি করি তোমার সাথে।তোমার কৃতকর্মের শা স্তি পাওয়া এখনো বাকি।
এই বলে প্রত্যুষ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিত এই মূহুর্তে আমার।প্রত্যুষ প্রত্যয়কে সবটা বলে দিলে আমার হাতে আর কিছুই থাকবে না।যেকরেই হোক আটকাতে হবে প্রত্যুষকে।তাতে যদি আমাকে আবার আবার দোয়েল হতে হয় আমি প্রস্তুত।আর কিছু না ভেবে বাসা থেকে একটা ধা রালো ছু রি কাপড়ের আঁচলে গুঁজে বেরিয়ে পড়লাম।তারপর প্রত্যুষকে ফলো করতে থাকি।জানি ও প্রত্যয়ের বাসার দিকেই যাচ্ছে।তখন রাত প্রায় দশটা।কোনো কারণে ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়েছে,সেই কারণে শহর প্রায় অন্ধকারে ঢেকে আছে।
প্রত্যুষের গাড়ি প্রত্যয়ের বাসার সামনে এসে থামলো।আমিও ওর পিছু নিলাম।প্রত্যুষ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যায়।আমিও সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে গেলাম।তারপর অন্ধকারে এগোতে লাগলাম।অমনি কেউ একটা আমার হাত টেনে ধরলো।ঘুরে তাকাতেই দেখতে পাই আমার সামনে প্রত্যুষ দাঁড়িয়ে আছে।ও আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো :
—এভাবে চোরের মতো কোথায় যাচ্ছো,কেনো এসেছো এখানে?
—কেনো এসেছি জানতে চাও।দেখো তবে…
এই বলে আমি ছু রি টা বের করে প্রত্যুষের বুক বরাবর চালিয়ে দিলাম।আমার ওকে এইভাবে মা রা র কোনো প্ল্যান ছিলো না,কিন্তু উত্তেজনাবশত কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারি নি।মূহুর্তেই প্রত্যুষ লু টি য়ে পড়লো আমার চোখের সামনে।ওর র ক্তে সারা মেঝে ভেসে যাচ্ছে।আমি গিয়ে ওর মুখটা চেপে ধরলাম,যাতে গো ঙা নী র শব্দ অন্য কারোর কানে না যায়।একটু পরেই বিদ্যুৎ চলে আসলো।পুরো জায়গাটা আলোকিত হয়ে উঠলো।প্রত্যুষের শরীর ততোক্ষণে নিথর হয়ে এসেছে।আমি ওর মুখ থেকে হাতটা সরাতেই একটা চিৎকারের শব্দ শুনতে পাই,আমার সামনে প্রত্যয় দাঁড়িয়ে আছে।নিজের ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে ওর সারা শরীর ভয়ে কাঁ প।তে লাগলো।ইতিমধ্যে চি ৎ কা রে র শব্দে ঘটনাস্থলে কিছু লোকজন জড়ো হয়।আমার আর কিছু করার রইলো না।চুপ করে প্রত্যুষের লা শে র সামনে বসে রইলাম।এরপর সকালবেলা পুলিশ আসে।আমায় থানায় নিয়ে যাওয়া হলো।
–
–
–
–
–
–
এর পাঁচবছর পরে…..
আজ আমার মুক্তি পাওয়ার দিন।এই পাঁচ বছরে রোদেলা মাঝেমধ্যেই দেখা করতে এসেছে আমার সাথে।প্রত্যয়ও এসেছিলো কয়েকবার।ওরা দুজনে উচ্চ আদালতে আপিল করে আমার সাজা কমানোর ব্যবস্থা করে।আদালতে আমি নিজের সমস্ত কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেছিলাম,কিভাবে কল্লোলের আমার হাতে মৃ ত্যু হয়,কিভাবে প্রত্যুষের মৃ ত্যু হয়।আমি নিজেও জানি না আদালত এতোকিছুর পরেও কেনো ছেড়ে দিলো আমায়।হয়তো সবটা নিজের মুখে স্বীকার করেছি সেই জন্য।রোদেলা যখন দেখা করতে আসতো আমার সাথে ওকে একটা কথাই বলতাম যেনো প্রত্যয়কে বিয়ে করে নেয় ও।এরপর কয়েকমাস পরে রোদেলা একদিন দেখা করতে আসে আমার সাথে,ও জানায় ওর অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে গেছে।স্বামী একটা প্রাইভেট কোম্পানীর মালিক।যাই হোক,আজ আমি সাজা থেকে মুক্তি পেলাম।কারাগার থেকে বেরিয়ে দেখি আমার জন্য প্রত্যয় দাঁড়িয়ে আছে।ওর মুখে এক টুকরো মলিন হাসি।আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে ও।আজ যদি আমার কিছু চাওয়ার নেই,প্রত্যয়কে পাওয়ার উচ্চাকাঙ্খা কাজ করে না মনের ভেতরে।এ যেনো এক নতুন আমি।জীবনে যতো পা প করেছি তার শাস্তি হয়তো এখনো পাওয়ার বাকি আমার,মাত্র পাঁচ বছরে কা রা দ ন্ড আমার জন্য কিছু নয়।প্রত্যয়ের হাত ধরে আমি ওর বাড়িতে ফিরে গেলাম।সবার সম্মতিতে বিয়ে হলো আমার।এই পাঁচটা বছর প্রত্যয় অপেক্ষা করে গেছে আমার জন্য,ও বিয়ে করেনি।আজ জীবনের এই প্রান্তে এসে মনে হচ্ছে হয়তো কখনো কোথাও ভুল করে হলেও পূন্যকর্ম করেছিলাম,নয়তো প্রত্যয়কে আবার ফিরে পাবো এটা আমার জন্য স্বপ্নের থেকে কোনো অংশে কম নয়।কল্লোলের আর ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।ও হয়তো সত্যিই আর বেঁচে নেই।বেঁচে থাকলে এই পাঁচবছরে ঠিক ফিরে আসতো।
–
–
–
–
আমাদের বিয়ের পরে আরোও একটা বছর কেটে গেলো…..
ছয় মাসের অ ন্তঃ স্ব ত্ত্বা আমি।প্রত্যয়ের সন্তান বড়ো হচ্ছে আমার গ র্ভে।আজ বাড়িতে কেউ নেই।আমি কারাগারে থাকাকালীন মায়ের মৃ ত্যু হয়।প্রত্যয় তার কবর যিয়ারত করতে গিয়েছে।বাড়িতে আমি একা।কিছুই ভালো লাগছিলো না।সারাবাড়ি এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলাম।প্রত্যয়ের ঘরে খুব একটা আসা হয়না।আমরা দুজন বিয়ের পর থেকে কল্লোলের ঘরেই থাকি।প্রত্যয় মাঝে মধ্যে ওর ঘরে আসে।ঘরের ভেতরে পায়চারি করতে করতে একটা কথা খেয়াল আসলো,সারা ঘরে ধূলো জমে আছে।একটু পরিষ্কার করে নিলে ভালো হয় ব্যপারটা।একটা কাপড় নিয়ে দেয়ালে টানানো ছবিগুলো মুছতে লাগলাম।তারপর বুকশেলফটা পরিষ্কার করার জন্য হাত দিলাম।কাজ করতে করতে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখে আমার চোখজোড়া আটকে গেলো।
আরে,এতো সেই ডায়েরীটা।যেটা আমার কাছেই ছিলো।কারাগার থেকে ফিরে আসার পরে ডায়েরীটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।ডায়েরীটা হাতে নিয়ে একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলাম।আগের মতোই আছে,কোনো পরিবর্তন নেই।একেবারে শেষ প্রান্তে আসতেই নিজের চোখের সামনে যা দেখতে পেলাম নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার।চারপাশটা ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো।নিজেকে সামলে নিয়ে ডায়েরীর দিকে মনোযোগ দিলাম।
পৃষ্ঠার সাথে আটকানো আমার সেই ছবির ওপরে একটা লাল ক্রস চিহ্ন আঁকা।আর তার নিচের লেখাগুলো পড়ে আমার কাছে সবটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যেতে লাগলো।আমি যার সাথে সংসার করছি,যার সন্তানের মা হতে চলেছি সে প্রত্যয় নয়,সে প্রত্যুষ!প্রত্যয়ের আজ থেকে ছয় বছর আগে আমার হাতেই খু ন হয়েছে!ডায়েরীর লেখাগুলো আমার চোখজোড়া উদগ্রীব হয়ে পড়তে লাগলো :
“আজ আমি তোমার সামনে প্রত্যয়,একজন ভালো স্বামীর ভূমিকা পালন করেছি।কিন্তু তুমি জানো তো,আমরা এই পৃথিবীতে যাই অন্যায় করি না কেনো,শাস্তি হয়ে আবারো ফিরে আসে আমাদের মাঝে।সেদিন রাতে আমার পিছু পিছু তুমি প্রত্যয়ের বাসাতে এসেছিলে ঠিক।কিন্তু তুমি যার বুকে ছু রি চালিয়েছিলে সেটা প্রত্যুষ ছিলো না প্রত্যয় ছিলো।তুমি এতোটাই নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলে অন্ধকারে প্রত্যয় আর প্রত্যুষের ফারাক বুঝতে পারোনি।নিজের ভালোবাসাকে নিজের হাতেই শেষ করে দিলে, যার জন্য এতো কিছু করলে নিজের হাতে তার সমাপ্তি রচনা করলে।আমি কিন্তু সবটা জানি,তবে এতোকিছুর পরেও আমি তোমাকে ক্ষমা কেনো করেছি জানো?তোমার সাথে মিথ্যে সংসার করতে করতে কখন যে তোমায় ভালোবেসেছিলাম নিজেও জানি না।সেই কারণে তোমায় বহুবার মা র তে গিয়েও মা র তে পারিনি,অল্প হলেও সাজা পাইয়ে আবারো নিজের করে নিলাম।আমি জানি তুমি যেমনই হও না কেনো,কেবল প্রত্যয়কেই ভালোবাসো,ওকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসা তোমার পক্ষে অসম্ভব।তাই আমি প্রত্যয় রুপেই তোমার ভালোবাসা পেতে চাই।এমনকি আমি নিজের কোমড়ে একটা ইচ্ছাকৃত দাগ ও বানিয়ে রেখেছি যাতে কেউ সন্দেহ না করতে পারে আমায়।প্রত্যয়ের থেকেই জেনেছিলাম দাগের ব্যপারে।যদি কোনোদিন এই ডায়েরীটা তোমার হাতে পড়ে,সবটা জেনে যাও তুমি।তোমাকে কিন্তু সেই চুপ করেই থাকতে হবে।কারণ তুমি নিজের ভালোবাসাকে নিজের হাতে শে ষ করেছো।আজ তুমি আমাকে ভালো না বেসে কোথাও যেতে পারবে না।আমার কাছে বাঁধা পড়ে গেছো তুমি দোয়েল।বিশ্বাস করো আমি ভালোবাসি তোমায়।আমায় প্রত্যুষ ভেবে না হয় প্রত্যয় ভেবে জীবনের বাকিদিনগুলো ভালোবেসে যেও।আর আমিও আমার প্রানপ্রিয় ভাইকে নিজের এই মুখোশের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে পেরে একটু হলেও শান্তি পাচ্ছি।ওকে হারানোর যন্ত্রণা সারাজীবন বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে আমায়,জানি এই লেখাগুলো পড়ার পরে তোমার মনের মাঝে যে দহন যন্ত্রণার উৎপত্তি হবে,অন্তের আগ পর্যন্ত তার সমাপ্তি ঘটবে কিনা!জ্ব ল তে থাকো,নিজের কৃতকর্মের আ গু নে জ্বলতে থাকো দোয়েল,এটাই তোমার শাস্তি।তবে এই ডায়েরীটা যেনো তোমার হাতে না পড়ে আমি তাই চাইবো।আমি চাই না তুমি আর কোনো কষ্ট পাও।যতো যাই হয়ে যাক না কেনো তোমায় ভালোবাসি,সত্যিই ভালোবাসি।”
লেখাগুলো পড়ে আমার চোখজোড়া জলের ভারে ভারী হয়ে আসে,এরমধ্যে কয়েক ফোঁটা গিয়ে ডায়েরীর পাতার ওপরে লেখাগুলো ঝাপসা হয়ে গেলো!
—হায়রে জীবন!শেষ পর্যন্ত আমার গল্পে আমি খলনায়িকাই হয়ে রইলাম।আজ থেকে আমার অনুশোচনার এক নতুন অধ্যায় শুরু,না আমি নিজেকে শে ষ করে দেবো না।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজেই নিজেকে অনুশোচনার আ গু নে দ গ্ধ করতে থাকবো,কারণ এই শা স্তি টা আমার প্রাপ্য।এটা না পেলে আমার নিজের সাথেই নিজের অন্যায় করা হবে।তবে এতোকিছুর ভেতরেও এইটুকুই প্রাশান্তি-যে কেউ আছে যে কিনা আমায় মন থেকে ভালোবাসে।তার সাথে আর নিজের সন্তানকে নিয়ে বাকি অভিশপ্ত জীবনটা না হয় কাটিয়ে দেবো!
(🥀💙সমাপ্ত💙🥀)