#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়িকা
পর্ব—০৫
/ প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
—আল্লাহহহ,এটা কি দেখছি।আমার একটা ছবি ডায়েরীর পাতার সাথে আটকানো।যার নিচে লাল কালি দিয়ে মোটা অক্ষরে লেখা।
—“Next Terget”
এটা দেখে হাত পা ক্রোমশ ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো আমার।আমি প্রত্যয়ের নেক্সট টার্গেট।এসবের মানে কি?তাহলে ও প্রটেক্ট করলো আমায় সবার সামনে,সেসব কি নাটক ছিলো,এই ছেলেটা চাইছেটা কি,কে আসলে ও?
এই ভাবনাগুলো আমার মাথায় চেপে বসলো।না আর বসে থাকলে চলবে না,যেরকেই হোক,আমায় সকল রহস্যের সমাধান করতে হবে।
—প্রত্যয় নিজের ভাই কল্লোলকে কেনো খুন করলো?
—ও আমাকে কেনো খুন করতে চায়?
—ওর আসলে উদ্দেশ্যটা কি?
তবে কিকরে এইসকল প্রশ্নসমূহের উত্তর মিলবে কিছুই বুঝতে পারছি না,এই মূহুর্তে মাথায় কোনো পরিকল্পনা আসছে না আমার।ডায়েরীটা সাথে নিয়ে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।এর ভেতরে আরোও কি কি আছে,এখনো পুরোটা দেখা হয়নি।প্রত্যয়ের রুমে ঢোকার সুযোগ সবসময় হয় না,যখন ও পুরোপুরি বাড়ির বাইরে থাকবে তখন এই ডায়েরীর বাকি রহস্য ভেদ করতে হবে আমায়।ডায়েরীটা উল্টাতে উল্টাতে আবারো একটা খটকার মুখোমুখি হলাম আমি।যে পৃষ্ঠায় কল্লোলকে খুনের ব্যপারে লিখে রাখা হয়েছে,তার আগের পৃষ্ঠাটা ডায়েরীতে নেই।কেউ পাতাটা ছিঁড়ে ফেলেছে,নয়তো এমনিতে বিছিন্ন হয়ে গেছে ডায়েরী থেকে।ছেঁড়া পৃষ্ঠার ছাপ দেখে মনে হচ্ছে এখানেও কারোর একটা ছবি আটকানো ছিলো, আর তার সাথে কিছু লেখা।কিন্তু সেই ছবিটাই বা কার,আমি আর কল্লোল ছাড়া প্রত্যয়ের অন্য শত্রুটা কে?যেহেতু তার ছবিটা সবার প্রথমে তার মানে প্রত্যয় ইতিমধ্যেই তাকে সরিয়ে দিয়েছে।যদিও এই সবটাই আমার মনের ভাবনা,এর সত্যতার কোনো প্রমাণ নেই আমার কাছে।এই ছেঁড়া কাগজের অংশটুকুই আমার মনের সমস্ত সন্দেহের অবকাশ ঘটাতে পারে।কোথায় আর কিকরে মিলবে সেই ছেঁড়া কাগজের টুকরো।প্রত্যয়কে যেরকে হোক বাইরে পাঠিয়ে এই ঘরটা আরো ভালো করে সার্চ করতে হবে আমায়,যদি কেউ ইচ্ছে করে পৃষ্ঠাটা না সরায় তবে ঘরের ভেতরেই পাওয়া যেতে পারে।
–
–
–
–
–
সন্ধ্যা বেলা,প্রত্যয় বারান্দায় বসে আছি।আমি একটা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ওর পাশে বসলাম।ও একটুকরো হাসি বিনিময়ের মাধ্যমে আমার থেকে কাপটা নিয়ে নিলো।আমি জিজ্ঞেস করি।
—কেমন হয়েছে চা’টা?
—হুমমম ভালোই,তবে চিনি একটু বেশী দিয়ে ফেলেছো?
—খেতে না পারলে এটা রেখে দাও,আমি নতুন করে বানিয়ে আনছি,
—না ঠিক আছে,আবার কষ্ট করে কেনো চা বানাতে যাবে তুমি….
আমার পরিকল্পনা হলো যেকরেই হোক প্রত্যয়কে ঘর থেকে বাইরে সরাতে হবে,তাই ওর সামনেই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার নাটক করলাম।ও ব্যতিব্যস্ত হয়ে এগিয়ে আসলো আমার দিকে।
—আরে কি হলো তোমার দোয়েল,শরীর খারাপ লাগছে নাকি?
—মাথাটা বড্ড ঘুরে গেলো গো,বমিও পাচ্ছে…
—সেকি,দাঁড়াও আমি রুমে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসছি।
—ঘরে ওষুধ নেই,আমি সকালেও একবার চেক করেছিলাম,
—তো কি করবো এখন?
—যদি পারোও একটু বাহির থেকে নিয়ে আসো না।প্লিজ।
—ঠিক আছে,আমি তাহলে ফার্মেসী থেকে ওষুধ নিয়ে আসি।
—হ্যাঁ,যাও।
প্রত্যয় অর্ধেক শেষ করা চায়ের কাপটা রেখে বেরিয়ে গেলো,আমি দ্রুত ওর ঘরের দিকে ছুটে গেলাম।এই সময়ে বাড়িতে মাও নেই,তাই আমার জন্য আরোও সুবিধে হলো।এই কাজটা চাইলে রাতের বেলাও করতে পারতাম,কিন্তু প্রত্যয় রাতের বেলা নিজের ঘর বন্ধ করে রাখে,তাই বাধ্য হলে এই অপশনটাই বেছে নিতে হলো।যাইহোক আমি ঘরের ভেতরে ঢুকে ভালোকরে সার্চ করতে লাগলাম।যদি কোনো ক্লু পেয়ে যাই,হঠাৎ বুকশেলফের এক পাশে যেখানে ডায়েরীটা ছিলো একটা ছেঁড়া পৃষ্ঠার দিকে আমার দৃষ্টি গেলো।পৃষ্ঠাটা অর্ধেকটার মতো পড়ে আছে,বাকিটুকু নেই।এটা দেখে যেনো আমার মনে নতুন করে আশার সঞ্চার ঘটলো।পৃষ্ঠাটা হাতে নিতেই যা দেখতে পাই আমার মাথা পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করো দিলো।এরকম কিছু দেখতে হবে স্বপ্নেও চিন্তা করা অসম্ভব।প্রত্যয় ওর নিজের একটা ছবি ডায়েরীর পৃষ্ঠার সাথে আটকে রেখেছে,আর সেই ছবিতে লাল ক্রস চিহ্ন আঁকা!যেমন চিহ্ন ঠিক কল্লোলের ছবির ওপরে ছিলো।কল্লোল তো খুন হয়েছে,কিন্তু প্রত্যয়?কেউ নিজে নিজের বিরুদ্ধে কিকরে ষড়যন্ত্র করে,নিজেকে কিকরে খুন করে?এটা সম্ভব আদৌ?
মনে হচ্ছে এই ছেড়া পৃষ্ঠাটা হাতে পড়াটাই ভুল হয়েছে,বাকি অংশটুকু কোথায় আছে আমি জানি না।সেখানে কি এমন লিখে রেখেছিলো প্রত্যয় তাও জানি না।মাথাটা ৩৬০ডিগ্রি কোণে ঘুরতে লাগলো আমার,মিথ্যে মাথা ধরার নাটক করতে গিয়ে এবার মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি মাথা ধরে যাবে।আর কিছু ভাবার মতো অবস্থায় নেই আমি,এদিকে প্রত্যয়ও ফিরে আসার সময় হয়ে গেলো।আর সময় নষ্ট না করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।।
–
–
–
–
–
মা ইতিমধ্যে বাড়িতে ফিরে এসেছেন।আমি তার ঘরের দিকে গেলাম।গিয়ে দেখি সে দাঁড়িয়ে কাজ করছে।আমায় দেখে ভেতরে আসতে বললো।
—কিছু বলবে বৌমা?
–হ্যাঁ,মা।আপনি ফ্রি আছেন?
—বলো শুনছি।
—এভাবে বলা যাবে না,আপনি কাজ সেরে বসুন আগে।
মা হাতের শাড়িটা আলনায় রেখে আমার পাশে এসে বললো।
—এবার বলো কি বলবে?
—মা,আমি প্রত্যয়ের ব্যপারে কথা বলতে এসেছি আপনার কাছে?
—প্রত্যয়ের ব্যপারে কি কথা,কিছু হয়েছে কি তোমাদের ভেতরে?
—না,অন্য একটা বিষয়।আমি আসলে ওর ব্যপারে কিছু জানতে চাই।
—কি হয়েছে আমায় খুলে বলবে,বুঝতে পারছি না আমি কিছুই।
—প্রত্যয়ের শরীরে কি কোথাও কোনো কাঁটাছেড়ার দাগ বা জন্মদাগের মতো কিছু আছে?
—তুমি এসব এখন কেনো জানতে চাইছো বলো তো,
—মা,আমার দরকার আছে।তাই তো জিজ্ঞেস করছি।প্লিজ কোনো প্রশ্ন করবেন না।যদি থেকে থাকে বলুন।
—জানি না বাপু তোমার মনে কি চলছে,তবে এটা ঠিক ওর কোমড়ে একটা বড়ো কাটা দাগ আছে,
—জন্মদাগ,তাই তো?
—নাহ,কোনো জন্মদাগ নয়।ওর একবার একটা বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছিলো,তাতেই কোমড়ের একটা জায়গায় ভাঙ্গা কাঁচ ঢুকে পড়ে।পরে অবশ্য ছোটো অপারেশনও করা হয়েছিলো।তবে সেই দাগটা রয়ে গেছে।ডাক্তার এটাও বলেছে দাগটা নাকি কখনোই ঘুচবে না।
—ও আচ্ছা।ঠিক আছে।বুঝতে পারলাম।
—এবার তো বলো আমায়,কি হয়েছে?
—এখন নয়,সময় হলে ঠিক বলবো।আপনি ভুল বুঝবেন না আমায়,আমি সবটা বলবো আপনাকে মা।সবটা বলবো।
এই বলে আমি মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।উনি হাঁ করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমার অদ্ভুত আচরণে সে বড্ড আশ্চর্য,বেশ বুঝতে পারছি।তবে এই সময়ে আসল সত্যিটা কিকরে আমি বলি তাকে?তাছাড়া প্রত্যয়ের ফেঁসে যাওয়া মানে,আমারও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া।আমিও যে কম অপরাধ করিনি,কল্লোলকে খু ন করেছি নিজের হাতে।প্রত্যয় সবার সামনে অপরাধী প্রমাণিত হলে নিশ্চয়ই আমাকে ছেড়ে দেবে না।তাই যা করার আমাকেই করতে হবে,এবং একা।
–
–
–
–
নিজের ঘরে বিছানায় শুয়ে আছি।প্রত্যয় আমার জন্য ওষুধ আর মলম নিয়ে ফিরে আসলো।যদিও অনেক দেরী করেই এসেছে।আমি আর কারণ জিজ্ঞেস করলাম না,দেরী করে এসে একদিকে উপকারই করেছে আমার।প্রত্যয় ঘরে ঢুকতেই আমি দরজাটা বন্ধ করে বললাম ওকে,ও দরজা বন্ধ করে আমার কাছে এসে বসলো।তারপর মলমটা বের করে আমার কপালে মালিশ করতে লাগলো।এদিকে আমি সুযোগ খুঁজে যাচ্ছি,যেরকেই হোক আজ প্রত্যয়কে চেক করতেই হবে।ওর কোমড়ের কাঁটা দাগটা দেখতে হবে আমায়।প্রত্যয় আমার দিকে ঝুঁকে মলম মালিশ করছে,আমি ওর হাতটা কপাল থেকে সরিয়ে আমার বুকের ওপরে রাখলাম,তৎক্ষনাৎ হাতটা সরিয়ে নিলো ও।
—একি কি হলো,হাতটা সরিয়ে নিলে কেনো?বৌএর সেবা করতে এসেছো,পুরোটাই করো।
—তুমি বলেছিলে না তোমার মাথা ব্যথা করছে,বুকে ব্যথা আবার কখন থেকে হলো?
—এখন থেকে,তোমাকে দেখে…
—মানে?
—মানে কি আবার,তোমার হাতটা একটু আমার বুকের ওপর রাখো না।ভীষণ ব্যথা করছে,বিশ্বাস করো।
—এই নাও মলম,নিজে লাগিয়ে নাও।
আমি আর এর নাটক নিতে পারছি না।এতো ক্রাইম করে বেড়ায়,হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারে না।আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রত্যয়কে নিজের ওপরে টেনে ফেলে দিলাম।ও কিছু বলতে যাবে তখন ওর ঠোঁটজোড়া আমার ঠোঁটের দখলে।একটু পরে ও নিজেকে সরিয়ে নিলো।আমার হাত ওর শরীরের বিভিন্ন অঞ্চলে অবাধ বিচরণ করছে।শিহরণে বারবার কেঁপে উঠছে প্রত্যয়।আর বাঁধা দিলো আমায়।আমি ভালো করেই জানি অবাধ্য পুরুষদের কিভাবে বশ করতে হয়।শুধু পুরুষ নয় পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকে এই একটা জায়গা থেকে কাবু করা সম্ভব,আর সেটা হলো কামনার আগুন।এই আগুন একবার জ্বালিয়ে দিতে পারলে সে সম্পূর্ণ আপনার নিয়ন্ত্রণে।আমি প্রত্যয়ের শার্টের বোতামগুলো একে একে খুলতে লাগলাম।ও লাইটটা অফ করতে যাবে আমি বাঁধা দেই।প্রত্যয়ের অর্ধ উ ল ঙ্গ দেহ আমার ওপর,ওর মুখমন্ডল আমার গলার সাথে লেপ্টে আছে,সদ্য গজানো দাঁড়ি গোফের ধারালো ছোঁয়া শিহরণের নতুন মাত্রা যোগ দিতে লাগলো।এতোকিছুর ভেতরেও নিজেকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছি আমি,যাই হয়ে যাক নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসা যাবে না।প্রত্যয় যখন আমার ওপরে ওর পুরুষত্ব কায়েম করায় ব্যস্ত আমার চোখ ওর কোমড়ের প্রতিটি ভাঁজ হন্নে হয়ে খুঁজছে।
—নাহ,কোথাও কোনো এক্সিডেন্টের দাগ নেই।কারোর শরীর থেকে এতো বড়ো একটা চিহ্ন উবে যায় কিকরে?আমার সকল সন্দেহে এবার বিশ্বাসে পরিণত হতে লাগলো।মূহুর্তেই সারা শরীর এক ঝটকায় কেঁপে উঠলো আমার,এতো কল্লোলের ভাই প্রত্যয় নয়!অন্য কেউ….!
চলবে…..