আমার গল্পে তুমি পর্ব -৪৩ ও শেষ পর্ব

#আমার_গল্পে_তুমি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#৪৩_পর্ব
,
কিহ তুমি আমায় রিজেক্ট করলে আর্দ্র চৌধুরী কে রিজেক্ট করলে ?? জীবনের প্রথম কোনো মেয়েকে প্রপোজ করলাম সেও আবার আমার বউ সেই তুমি আমায় রিজেক্ট করলে এখন আমি কী করবো,, তবে ব্যাপার না আমি দেখতে এতোটাও খারাপ নয় এখনো আমি ইচ্ছে করলে মেয়েদের লাইন লাগিয়ে দিতে পারি।

কিহ এতো বড় সাহস আপনার? নিজের আপন বউ এর সামনে দাঁড়িয়ে অন্য মেয়কে প্রপোজ করার কথা বলছেন, আর আমি আপনার প্রপোজ একসেপ্ট করবো কীভাবে অলরেডি বাচ্চার মা বানিয়ে দিয়ে এখন ঢং করে বলছে তুমি কি আমার বাচ্চার মা হবে??

এই এক মিনিট এক মিনিট তুমি কি বললে বাচ্চার মা মানে??

আপনি তো দেখছি বড্ড বোকা এখনো বুঝতে পারেন নি আমি কি বলছি,, সত্যি! বাবা হতে চলছেন তাও এখনো বুঝতে পারছেন না,, কি হলো এমন হাঁদার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো আরে কি হলো বাবা হওয়ার কথা শুনে কি রোবট হয়ে গেছেন নাকি??

আর্দ্র কিছু বলছে না শুধু ফ্যালফ্যাল করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে, যেনো ও কোনো ঘোরের মধ্যে আছে চারপাশে কি হচ্ছে কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না, তারপর যখন ওর হুশ ফিরলো তখন যলদি করে ইয়ানা কে জড়িয়ে ধরে পাশে থাকা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল৷, আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না মনে হচ্ছে যেনো স্বপ্ন দেখছি, আমি বাবা হবো?? রিয়েলি?? এটা ভাবতেই কেমন একটা লাগছে নিজের মধ্যে ওহ ইয়ানা তুমি আজকে তো আমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ দিয়েছো আমি ভেবেছি আজকে আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো কিন্তু তুমি তো আমাকে জীবনের সব চেয়ে বড় সারপ্রাইজ দিলে আমাকে বাবা হওয়ার সুখ দিয়েছো,, ইয়ানার কপালে চুমো দিয়ে বলল,,এক মিনিট আচ্ছা তুমি আমাকে আগে বলোনি কেনো??

আরে আমিই তো জানতে পেরেছি কয়দিন আগে ভেবেছি আমাদের সিক্স মান্থ বিবাহ বার্ষিকিতে আপনাকে বলে সারপ্রাইজ দেবো,, আর এই খবরটা আমি আপনাকে কীভাবে দেবো বিয়ের ছয় মাসের মধ্যেই আমায় পেগনেন্ট করে দিয়েছেন এটা বলা যায় লজ্জা লাগেনা বুঝি।

ওলে বাবা আমার বউয়ের দেখি লজ্জা ও আছে, কই আগে তো জানতাম নাহ।

এই একদম মজা নেবেন না,, আর দেখেছেন কত রাত হয়ে গেছে চলুন বাড়ি যায় আমার শীত লাগছে।

ওহ তোমার শীত লাগছে আগে বলবে তো, আহারে আমার বেবিটারও তো মনে হয় শীত লাগছে দাঁড়াও,, এই বলে আর্দ্র নিজের গায়ের থেকে কোটটা খুলে ইয়ানাকে পরায়ে দিলো এখনো কি শীক করছে??

বাবা বেবি না আসতেই বেবির প্রতি এতো ভালোবাসা তাহলে তো বেবি বাইরে আসলে আমাকে চিনতেই পারবেন না,, আর শুনুন বেবি না আমার পেটের মধ্যে ভালো আছে আর ওতো এখনো কেবল একটা ছোট ব্রুণ মাএ বয়স কেবল কয়েক দিন হয়েছে ওর কীভাবে শীত লাগবে??

তবুও ব্রুণ তো লাগতেও পারে তুমি বুঝবে নাকি যে ওর শীত লাগছে কি লাগছে না, আমি ওর বাবা তাই আমি বুঝতে পারি ওর শীত লাগছে, দাঁড়াও আমি ওকে জিগাস করি, এই বলে আর্দ্র ইয়ানার পেটের সাথে কান লাগিয়ে কিছু শুনতে চেষ্টা করলো,, ইয়ানা অবাক চোখে আর্দ্র কে দেখছে যে মানুষ টা এতো শক্ত সব সময় মুডে চলে সে আজকে এতো ছেলে মানুষ হয়ে গেলো, সত্যি একটা ছেলে যখন শোনে যে সে বাবা হবে তখন যে নিজেই ছেলে মানুষ হয়ে যায় বাচ্চামি করে, এখন ওনাকে না দেখলে বুঝেই পারতাম না। হঠাৎ ইয়ানার পেটের মধ্যে গুড়গুড় শব্দ করে উঠলো আর্দ্র খুশি হয়ে অনেকটা উত্তেজিত হয়ে বলল,, এই ইয়ানা দ্যাখো বেবি পেটের মধ্যে থেকে কেমন শব্দ করছে ও বুঝতে পেরেছে যে ওর বাবা ওর সাথে কথা বলতে চাইছে তাই ও এমন শব্দ করছে।

বাবা হওয়ার খুশিতে আপনার মাথা গেছে ওটা বেবির শব্দ না আমার খিদে পেয়েছে তাই পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে বুঝেছেন , খুশিতে বুদ্ধি সুদ্ধি সব গরু চড়াতে গেছে।

ওহ তোমার খিদে পেয়েছে?? সরি সরি গো আমার মনেই ছিলো না দাঁড়াও আমি এখনি ব্যাবস্হা করছি,, তারপর আর্দ্র নিজের হাতে ইয়ানাকে খাইয়ে দিলো,, খাওয়া শেষে ইয়ানা বলল, আচ্ছা রাততো অনেক হয়েছে এবার আমাদের বাড়ি যাওয়া উচিত নয়ত সবাই চিন্তা করবে।

নাহ কেউ চিন্তা করবে না আমি সবাইকে বলে দিয়েছি, এসো আমার সাথে, না না তুমি থাকো আমি আসছি এই সময় তোমায় বেশি হাঁটলে চলবে না যদি পড়ে যাও, এই বলে আর্দ্র ইয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির দিকে গেলো,, সারাক্ষণ ইয়ানা শুধু আর্দ্রকেই দেখে যাচ্ছে একটা ম্যাচিউর ছেলে হঠাৎ করেই কেমন বাচ্চামো করছে। আর্দ্র ইয়ানাকে নিয়ে ওদের বাড়ি চলে আসলো তারপর ইয়ানাকে কোলে করে নিঃশব্দে বাড়ির মধ্যে চলে আসলো আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ইয়ানাকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেঁয়ে ওদের রুমে চলে গেলো, বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে , ইয়ানা রুমে গিয়ে তো হা হয়ে গেলো কেননা পুরো রুমটা সুন্দর করে সাজানো যেনো আজকে ওদের বাসর রাত ঠিক তেমন করে। রুম সাজানো দেখে ইয়ানা অবাক হয়ে চারিদিকে দেখতে দেখতে বলল এসব কখন করলেন??

যখন আমি আর তুমি বাইরে ছিলাম তখন,, আমি ভাইয়া আর আকাশ কে বলেছিলাম যেনো আমাদের রুমটা সাজিয়ে রাখে তাই ওরা এসব করেছে,, চলো তাহলে শুরু করা যাক।

কি???

কেনো আমাদের বাসর, আর বেবি তুমি কিন্তু চোখটা অফ করে রাখবে কেননা বাবা এখন তোমার মাম্মাম কে আদর করবে তো তাই, তুমি লক্ষিটি হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো ওকে সোনা,, কথটা বলে আর্দ্র ইয়ানার পেটে একটা চুমো দিলো। ইয়ানা অবাক হয়ে আর্দ্র কে প্রশ্ন করলো আপনি কাকে বলছেন কথাগুলো??

কেনো আমার বেবিকে, ও তুমি বুঝবে না এটা আমাদের বাপ বেটির কথা,, তারপর আর্দ্র ইয়ানাকে কোলে নিয়ে খাটের দিকে গেলো।

আরে এসব কি করছেন?? জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো ইয়ানা।

মাথাটা কি একেবারেই গেছে মাঝ রাতে এভাবে চিৎকার করছো কেনো?? চুপচাপ থাকো।

আর্দ্রর ধমক শুনে ইয়ানা ঠোঁটে আঙু্ল দিয়ে চুপটি করে থাকল আর আর্দ্র ইয়ানাকে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিলো।
,,,,,,,,,,,,
২ বছর পর,,,,

সেকি তোমরা এখনো রেডি হওনি ওদিকে তো বিয়ে শুরু হয়ে যাবে, আর আপনার মুখে গায়ে এসব কি,, আমি আপনাকে বলেছিলাম আরশি কে রেডি করাতে আপনি তা না করে নিজে ভূত সেজে বসে আছেন কেনো??

আরে আমি কি করবো আমি তো ওকে রেডি করাতেই এসেছিলাম কিন্তু মাঝখান থেকে তোমার মেয়ে আমায় ভূত সাজিয়ে দিলো।

এই দুই বাপ বেটি মিলে আমায় পাগল করে দেবে,, বেশি নাহ বিশ মিনিট সময় দিচ্ছি জলদি ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি আরশিকে রেডি করায়ে দিচ্ছি।

ওমমম তুমি জানো না আমি একা রেডি হতে পারি না তাই তুমিও চলো আমার সাথে ওয়াশ রুমে,, আরশি মা আমার তুমি এখানে একটু বসো ওকে আমি তোমার মাম্মামকে রেডি করায়ে আনি এই বলে আর্দ্র ইয়ানাকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আর আরশি ফোকলা দাঁতে বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা মিস্টি হাসি দিলো। পরশ তার কিউটিপাই কে ডাকতে এসে দেখলো আরশি বিছানার উপর খেলনা দিয়ে খেলছে আর হাসতেছে, কেনো যেনো পরশের সেই হাসিটা পছন্দ হলো না ভ্রু কুঁচকে আরশির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো পরশকে দেখে ছোট্ট আরশি তার ছোট ছোট ইঁদুরের মতো দাঁত গুলি বার করে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো,, পরশ আরশির হাসি দেখে একটু বাঁকা হাসি দিয়ে আরশির হাতে একটা চিমটি কাটলো ওমনি আরশির হাসি হাসি মুখটা কান্নায় রুপান্তর হয়ে গেলো,, ফোলা ফোলা গাল বেয়ে পানি পড়তে লাগল সাথে চিৎকার করে ফুঁপিয়ে কান্না তো আছেই,, আরশির এভাবে কান্না করা দেখে পরশের গম্ভীর মুখে হাসি ফুটে উঠল। মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনে আর্দ্র ইয়ানা দুজনেই ওয়াশরুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসলো,, ইয়ানা মেয়েকে কোলে নিয়ে তার কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগল,,, চাম্প আরশি কাঁদছে কেনো ওকি পড়ে গিয়েছিলো??

না তো চাচ্চু।

তাহলে ও কাঁদছে কেনো??

কি জানি,, চাচ্চু তোমাকে আর কিউটিপাই কে জলদি নিচে ডাকছে বিয়ে শুরু হতে চলছে আমি গেলাম, পরশ যাওয়ার আগে আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলো ইয়ানার বুকের সাথে মিশে আছে আর থেকে থেকে ফুঁপিয়ে উঠছে, সাদা ফর্সা মুখটা কেমন লাল হয়ে গেছে পরশ ইয়ানার দিকে এগিয়ে গিয়ে আরশির গালে সুন্দর করে একটা পাপ্পি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
,,,,,
রোজা বধূ বেশে বসে আছে অনেক্ক্ষণ হলো সেই একি ভাবে বসে আছে কিন্তু আকাশের আসার কোনো খরবই নেই,, হ্যাঁ আজকে রোজা আর আকাশ এর বিয়ে ছিলো,, রোজা চলে আসার কিছু মাস পর ওর বাবা মা এসে ওকে মানিয়ে নিয়ে যায় তার কিছু দিন পর আকাশ রোজাকে প্রপোজ করলে রোজাও তা একসেপ্ট করে নিছিলো কেননা রোজাও তো মনে মনে আকাশ কে ভালোবাসত, তারপর অনেক ঝড় ঝাপ্টা পেরিয়ে অবশেষে ওদের বিয়েটা হলো। দরজা খোলার শব্দে রোজার হুশ ফিরলো দেখলো আকাশ দৌড়ে রুমে ঢুকল।

বাবা বড় বাঁচা বেঁচে গেছি এগুলা মেয়ে নাকি এক একটা লেডি গুন্ডা পকেট টা পুরোই ফাঁকা করে দিয়েছে,, আমার একটা ভাইও আমাকে সাহায্য করলো না সব কটা একেকটা মীর জাফর। কথাগুলো বলে আকাশ রোজার কাছে আসল তারপর বিছানায় বসে রোজার হাত ধরে বলল জানোতো জান শুভ কাজে দেরি করতে হয় নাহ।

মানে??

ওহ বুঝতে পারছো না আসো বুঝিয়ে দিচ্ছি,,।

আচ্ছা আমরা এখানে আসলাম কেনো আরশি তো রুমে একা আছে।

তাতে কি আমরা কি দূরে নাকি আমরাও তো ব্যালকণিতে বসে আছি,, জানোত ইয়ানা আমার না আজকে আমাদের বাসরের কথা মনে পড়ছে সেই ঝগড়া বাহ তবে যায় বলো তুমি কিন্তু অনেক ঝগড়ুটে।

কিহ মোটেওনাহ আমি অনেক ভালো মেয়ে, আপনার মতো খবিশ নাহ ।

ওমমম এই মিষ্টি মেয়েটাই তো আমার একমাত্র বউ, অনেক ভালোবাসি তোমায় মিসেস বকবক।

আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি মিস্টার আর্দ্র,,, আর্দ্র ঘাড়ে মাথা রেখে বলল ইয়ানা। আর এখানেই শেষ হলো ওদের দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসা,, এই ভালোবাসা চির জীবনের জন্য থাকবে আমৃত্যু।

,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,

অবশেষে গল্পটা শেষ হলো আর সবাইকে অনেক ভালোবাসা, ধর্য্য সহকারে এতোদিন ধরে আমার গল্পটা পড়ার জন্য,, এর পরের গল্পে মাহি মেহরাব আর আর্দ্র ইয়ানা দুই জুটিই থাকবে 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here