আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব -২৬+২৭

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_26

কপি নিষিদ্ধ ❌

রোজার বাবা কাজি সাহেবকে বিয়ে পড়াতে বলেন।

ধর্মীয় রীতিমতো ওদের বিয়ে সম্পূর্ণ হয় সবাই ওদের দোয়া করে।

রোজার মা আহাদদের জন্য নাস্তার আয়োজন করে,
সবাই নাস্তা খেতে খেতে কিছু কথা বলে।

আহাদ রোজার বাবাকে বলে,
আঙ্কেল আজ আমরা রোজাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো আর আগামীকাল আমাদের বাড়িতে সিয়াম রোজার বউভাতের অনুষ্ঠান করবো।

সে কি আমি তো ভেবেছিলাম আপনারা আজ শুধু কাবীন করবেন,আমি তো আমার মেয়ের ধুমধাম করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।

ধুমধাম করেই হবে কিন্তু সেটা আমাদের বাসায় আপনাকে কিছু করতে হবে না।

এ কি বলছেন।

জ্বী আঙ্কেল আপনাদের একমাত্র মেয়ে আপনাদের প্রাণকে নিয়ে যাচ্ছি আর কি চাই।

রোজার বাবা মুচকি হাসে,উনি মনে মনে ভাবে,
না সিয়ামের সাথে বিয়ে দিয়ে ভুল করিনি মেয়ে আমার সুখেই থাকবে।

আহাদ আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
আঙ্কেল আমাদের যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন।

রোজার বাবা রোজার কাছে আসে।
বিদায়ের কথা শুনে রোজার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে আজ নিজের আপন বাড়ি আপন মানুষদের ছেড়ে যেতে হবে,বিদায়ের কষ্ট কেবল একটি মেয়েই অনুভব করতে পারে।
মেয়ের চোখে জল দেখে বাবারও মন খারাপ হয়ে যায়,
উনি রোজার চোখের জল মুছে রোজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
কাঁদে না মা সব মেয়েকেই তাদের বাবার ঘর ছাড়তে হয়,আজ থেকে তোমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো,আজ তুমি এক বাবার মেয়ে থেকে এক স্বামীর স্ত্রীতে পরিণত হয়েছো,আজ থেকে ঐটাই তোমার আসল বাড়ি তোমার আসল জায়গা,ভয় নেই তোমার বাবা মা সবসময় তোমার পাশে আছে যখন ইচ্ছে হবে আমাদের কাছে চলে আসবে।

রোজা ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

রোজা বাবাকে ছেড়ে মায়ের দিকে তাকায় রোজার মা নীরবে চোখের জল ফেলছেন রোজা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে উনিও মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।

রোজার বাবা সিয়ামের হাতের উপর রোজার হাত রেখে বলে,
বাবা আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিলাম,
বাবা কখনো ওর অমর্যাদা করো না,ওকে কষ্ট দিও না,
আমার ফুলের মতো মেয়েকে কাটার আ’ঘা’ত পেতে দিও না,আমার মেয়েকে আগলে রেখো।
বাবা যদি কোনো দিন তোমার আমার মেয়েকে অপ্রয়োজনীয় মনে হয় তবে নিরদ্বিধায় আমার মেয়েকে আমার কাছে দিয়ে যেও তোমার আমার মেয়েকে প্রয়োজন না হলেও আমাদের মেয়েকে আমাদের প্রয়োজন,ওর জন্য সবসময় এ বাড়ির দরজা খোলা থাকবে।

সিয়াম রোজার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
বাবা আপনি চিন্তা করবেন না আজ থেকে রোজার সম্পূর্ণ দ্বায়িত্ব আমার,আমার প্রাণ থাকতে আমি কখনো ওকে ছেড়ে যাবো না মৃ’ত্যু’র আগ পর্যন্ত ওর পাশে থাকবো,এ হাত যখন একবার ধরেছি মৃ’ত্যু’র আগ পর্যন্ত এভাবে এ হাত ধরে রাখবো এ হাত কখনো ছাড়বো না,কখনো ওর অমর্যাদা করবো না,ওকে কষ্ট দিবো না,সারাটা জীবন রোজাকে আমার বাহুডোরে আগলে রাখবো।
সিয়ামের কথায় মুগ্ধ হয়ে রোজার বাবা সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে।

রোজাকে ওর বাবা মা গাড়িতে তুলে দেয়,রোজা ওর মা বাবার দিকে তাকিয়ে কাদঁছে ওর বাবা ওকে অনেক বুঝিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বিদায় দেয়।

সিয়াম আহাদ ঐশী ওনাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে,আহাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়।

রোজা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে মা বাবাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
হঠাৎই নিজের গালে কারো ছোঁয়া পেতেই পাশ ফিরে তাকায় রোজা,সিয়াম স্বযত্নে রোজার চোখের জল মুছে দিচ্ছে রোজা সিয়ামকে মুগ্ধ নয়নে দেখছে।
মিররে ওদের এই সুন্দর মুহূর্ত দেখে ঐশী মুচকি হাসে।

ওরা বাড়িতে চলে আসে।
আহাদ ঐশী গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।

সিয়াম গাড়ি থেকে নেমে রোজার হাত ধরে রোজাকে গাড়ি থেকে নামায়,রোজা চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় আহাদ মেনশন অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
সিয়াম রোজার হাত ধরে সামনের দিকে হাটা শুরু করে,
আহাদ ঐশী ওদের জন্য সদর দরজায় দাড়িয়ে ছিল।
সিয়াম রোজা আসতেই ওরা ওদের নিয়ে ভেতরে আসে।

ঐশী রোজাকে ওদের রুমে নিয়ে আসে।
দরজা খুলতেই রোজা থমকে যায়,ও পাশ ফিরে ঐশীর দিকে তাকায়।
কি জানু পছন্দ হয়েছে?

ভিষণ।

রোজা কাঁচা ফুলগুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।

আমি নিজ হাতে তোদের বাসর ঘর সাজিয়েছি আজ থেকে এই ঘর তোদের।

থ্যাঙ্ক ইউ ইয়ার।

আর কতো ধন্যবাদ দিবি।

রোজা ঐশীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
সারাজীবন থ্যাঙ্ক ইউ দিলেও কম পরে যাবে তুই আমার জন্য যা করেছিস তার কাছে তো আমার থ্যাঙ্ক ইউ কিছুই না আমি তোর কাছে ঋণী হয়ে গেলামরে তোর ঋণ যে আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না।

আর একবার এসব কথা বললে মা’র খাবি,তোর জন্য করবো না তো কার জন্য করবো আর হ্যাঁ এতো সেন্টি খেতে হবে না।

ঐশী রোজাকে খাটে বসিয়ে মাথায় বড় করে ঘোমটা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

লিভিংরুমে আহাদ সিয়ামের সাথে কথা বলছিলো।
স্যার এখন আমরা বাসায় চলে যাই।

এটাই তো তোমার বাসা।

কি বলেন স্যার আমি আমার বাসাতেই ভালো আছি।

প্রয়োজন পড়লে আমার বাসাতে খারাপ থাকবে তবুও তোমাকে আর তোমার বাসায় যেতে দিবো না আজ থেকে তুমি আর রোজা আমাদের সাথে এ বাসাতেই থাকবে।

না স্যার তা হয় না।

ঐশী ওদের কাছে আসতে আসতে বলে,
কেন হয়না।

আসলে ম্যাম।

ভাইয়া এখন তো এই ম্যাম ট্যাম বাদ দিন,আমরা আঙ্কেলকে কি বলেছিলাম আপনি আহাদের ছোট ভাই আমার দেবর,দেবর কি ভাবিকে ম্যাম বলে ডাকে নাকি,
আজ থেকে আহাদকে ভাইয়া এবং আমাকে ভাবি বলে ডাকবেন স্যার ম্যাম বলবেন না আর হ্যাঁ আপনারা এ বাড়িতেই থাকবেন আমি আমার দেবর জ্বাকে অন্য বাড়িতে থাকতে দিবো না।

কিন্তু,

আহ ভাইয়া এতো কিন্তু টিন্তু না করে আপনার বউয়ের কাছে যান আপনার বউ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

সিয়াম কিছু বলবে তার পূর্বেই ঐশী আহাদের হাত ধরে সিড়ি বেয়ে রুমে চলে যায়।

ঐশী দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে আহাদ ভেতরে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
ঐশী কোমড়ে গুঁজে রাখা রি’ভ’লবা’রটা আহাদের হাতে দেয়।
নিন আপনার রি’ভ’ল’বা’র।

রি’ভ’লবা’রটা ধরতে তোমার ভয় করেনি।

ভয় কেন করবে আমি তো আর কাউকে শু’ট করিনি।

আমার জান আস্তে আস্তে সাহসী হতে শুরু করেছে।

আহাদ শেখের বউকে সাহসী তো হতেই হবে।
ঐশী কথাটা বলে যেতে নিলে আহাদ রি’ভ’ল’বা’রটা বিছানায় ছুঁ’ড়ে মে’রে ঐশীর হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

আহা কি করছেন?

এখনো তো কিছু করলামই না আগে করি তারপর বলো।

উফফ ছাড়ুন তো কিছু করতে হবে না।

উহুম ছাড়বো না।

ছাড়ুন না।

আহাদ ঐশীর হাত ধরে ঘুরিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস বলে,
জান আজ তোমাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে,
তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে,তোমাকে আমার ভালোবাসার রঙে রঙিন করতে ইচ্ছে করছে।
আহাদের ফিসফিস করে বলা কথা গুলো ঐশীর কানে পৌঁছাতেই ঐশী কেঁপে উঠে।

আহাদ ঐশীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে গালে হাত রেখে ঐশীর ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয় ঐশী আহাদের পিঠে হাত রেখে আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
___

রোজা সিয়ামের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বোর হয়ে গেছে,ও বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় চলে যায়।
আজকের চাঁদটা একটু বেশিই সুন্দর লাগছে রোজা গ্রিলে হাত রেখে একমনে আকাশের চাঁদটা দেখছে
আর কিছু একটা ভাবছে।
ও ভাবনার মাঝে দরজা খোলার শব্দ শুনতে পায় রোজা বারান্দায় দাঁড়িয়েও বুঝতে পেরেছে কে এসেছে।
সিয়াম দরজা খুলে ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে পিছনে ঘুরতেই ঝড়ের গতিতে রোজা ওর কাছে এসে ওকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।

#চলবে
#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_27

কপি নিষিদ্ধ ❌

সিয়াম দরজা খুলে ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে পিছনে ঘুরতেই ঝড়ের গতিতে রোজা ওর কাছে এসে ওকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।
সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে রোজার শান্তি লাগছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব শান্তি যেন সিয়ামের বুকেতেই মিলছে কিন্তু রোজার এ শান্তি সিয়ামের স’হ্য হলো না ও নিজের থেকে রোজাকে ছাড়িয়ে হন হন করে বারান্দায় চলে যায়।

“কি হলো উনি এভাবে চলে গেল কেন?”
কথাটা ভেবে রোজা বারান্দায় চলে যায়।

সিয়াম হাত ভাজ করে উল্টো দিকে ঘুরে ছিল।
রোজা সিয়ামের পিঠে হাত রেখে বলে,
কি হয়েছে এভাবে এখানে চলে আসলেন কেন?

সিয়াম রোজার কথার উওরে কিছু বলে না।

এই কি হলো কথা বলছেন না কেন?

সিয়াম এবারও চুপ।

সিয়ামকে কথা বলতে না দেখে রোজা এবার সিয়ামের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সিয়ামের গালে হাত রেখে বলে,
কি হয়েছে আমার সাথে কথা বলবেন না?

কেন বলবো?

মানে।

কেন কথা বলবো তুমি কি একটি বারও তোমার বিয়ের কথা আমাকে বলেছিলে।

এর জন্য রেগে আছেন।

আমি কারো সাথে রাগ করিনি।

হুম সেটা তো দেখতেই পারছি,সরি আমি আপনাকে কথাটা না জানিয়ে ভুল করেছি আমাকে এবারের
মতো মাফ করে দিন,কথা দিচ্ছি ভবিষ্যতে কখনো এমনটা হবে না,প্লিজ মাফ করে দিন।
রোজাকে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে কথা বলতে দেখে সিয়াম হেসে দেয়,সিয়াম এতক্ষণ রাগ করে থাকার অভিনয় করছিলো কিন্তু রোজাকে এভাবে কথা বলতে দেখে সিয়াম আর অভিনয় করতে পারলো না।

সিয়াম রোজাকে বুকে টেনে নেয়।
রোজা এবারের মতো তোমাকে মাফ করলাম কিন্তু এমনটা আর কখনো করো না,কখনো আমার কাছ থেকে কোনো কিছু লুকিয়ে রেখো না।

ঠিক আছে।

__

বারান্দায় এক চাদরে জড়িয়ে আছে রোজা সিয়াম।
সিয়াম কিছুক্ষণ পর পর রোজার উন্মুক্ত পিঠে,ঘাড়ে,
গোলায় ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে,রোজাও তা আবেশে গ্রহণ করছে।
রোজা ক্লান্ত হয়ে সিয়ামের বুকে মাথা রেখে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে।

কিছুক্ষণ পর রোজা সিয়ামের বুক থেকে মাথা তুলে সিয়ামের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলে,
আজকে চাঁদটা অনেক সুন্দর লাগছে তাই না।

আমার চাঁদের থেকে বেশি সুন্দর না।
সিয়ামের কথাতে রোজা লজ্জা পায়।

সিয়াম রোজার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
প্রিয়তমা তুমি কবে থেকে আমাকে ভালোবাসো?

ঐশীর বিয়ের পর থেকে যখন আমরা আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করি,একজন আরেক জনের সাথে মিশতে শুরু করি,তখন থেকে আস্তে আস্তে আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করি।

আমি তোমাকে কবে থেকে ভালোবাসি জানো?

কবে থেকে?

যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকে।

সেদিন থেকে!

হুম,ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় একটা মেয়ের সাথে স্বজোরে ধা’ক্কা লাগে আমি তাল সামলাতে পারলেও মেয়েটি পারে না,সে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে আমি তাকে ধরে ফেলি,মেয়েটির মুখের ওপর থেকে চুল সরে যেতেই আমি থমকে যাই একটা মানুষ যে এতোটা সুন্দর হতে পারে তা আমার জানা ছিল না মেয়েটির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
মেয়েটি চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে আমাকে দেখামাএই চটজলদি আমার কাছ থেকে সরে আসে,সেদিন সময়ের স্বল্পতা থাকার কারণে আমি তার সাথে বেশি কথা বলতে পারিনি,আমার কি হলো আমি জানি না সেই মেয়েটিকে একপলক না দেখলে আমি শান্তি পেতাম না তাই প্রতিদিন রাতে একবার করে তার বাড়ির সামনে যেতাম মেয়েটি প্রতিদিন ১০ টার দিকে
এককাপ কফি নিয়ে বারান্দায় আসতো আমিও
সে সুযোগে তার অগোচরে তাকে মন ভরে দেখে
আমার চোখের তৃষ্ণা মেটাতাম।
আস্তে আস্তে মেয়েটিকে আমি ভালোবাসতে শুরু করি ভালো না বেসে উপায় কি সে যে আমার প্রাণ ভোমরা আমার প্রিয়তমা আমার রোজা।

সিয়ামের কথা শুনে রোজার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে,উহুম এটা দুঃখের নয় সুখের কান্না, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু পাওয়ার সুখ।

সিয়াম রোজার চোখের জল মুছে দিয়ে রোজার মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে জড়িয়ে ধরে,
ভালোবাসি প্রিয়তমা,তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

রোজাও সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে,
আমিও আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

পরদিন ধুমধাম করে রোজার বউভাত করা হয়,ওদের অনুষ্ঠানে সবাই এসেছিলো,অনুষ্ঠান শেষে রোজার বাবা মা রোজা সিয়ামকে ওনাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।
আহাদ ঐশীকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ওরা যায়নি।

সিয়াম রোজা বাবা বাড়িতে ২ দিন থেকে বাসায় চলে আসে।

এরই মাঝে কয়েকদিন কেটে যায়।

রোজা সিয়াম গতকাল কালে কক্সবাজারে গিয়েছে,
ঐশী ওদের কক্সবাজারের হানিমুন টিকেট গিফট করেছে।
__

রাত ১০ টার দিকে আহাদ অফিস থেকে বাসায় আসে।
আহাদ রুমে এসে দেখে ঐশী পুরো রুম অন্ধকার করে রেখেছে,ও রুমের লাইট জ্বালাতেই ঐশীকে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখে,ঐশী ঘুমিয়ে আছে ভেবে আহাদ ওকে ডিস্টার্ব না করে কাবার্ড থেকে টিশার্ট, প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ পর আহাদ টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে।

ঐশীকে এখনো কাঁথা মুড়িয়ে শুইয়ে থাকতে দেখে আহাদ ভাবে,
“কি ব্যাপার জান এখনো শুয়ে আছে ওর ঘুম তো এতো গভীর না রুমে কেউ পা রাখলেও ওর ঘুম ভেঙে যায় তাহলে আজ শুয়ে আছে কেন,ঘুম কি ভাঙ্গেনি?
আচ্ছা অসুস্থ নয় তো?
রাতে খেয়েছিলো?
না ও তো আমাকে রেখে কখনো একা খায় না,
না খেয়েই শুয়ে আছে?”

আহাদ টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিয়ে ঐশীর পাশে বসে আস্তে আস্তে ঐশীকে ডাকছে ঐশীকে উওর দিতে না দেখে আহাদ ওর মুখের ওপর থেকে কাঁথা সরিয়ে ফেলে,চুলে হাত বুলানোর জন্য মাথা হাত দিতেই বুঝতে পারে ঐশীর জ্বর এসেছে,ঐশীর অনেক জ্বর এসেছে জ্বরে গা পু’ড়ে যাচ্ছে।

আহাদ এবার ঐশীর চুলে হাত বুলিয়ে ঐশীকে ডাকে,
জান,শুনছো জান,খুব বেশি খারাপ লাগছে কি,মাথায় পানি দিয়ে দিবো,রাতে কিছু খেয়েছিলে,জান বলো না খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।

আহাদ বসা থেকে উঠতে নিলে ঐশী পাশ ফিরে আহাদের পায়ের উপর মাথা রেখে অনেক কষ্টে আধো আধো গলায় বলে,
চলে যাচ্ছেন কেন,আমার পাশে বসলে কি খুব বেশি ক্ষ’তি হয়ে যাবে।

না জান কিসের ক্ষ’তি হবে এইতো আমি তোমার পাশেই বসে আছি।

তাহলে উঠছিলেন কেন?

জান তোমার গায়ে তো অনেক জ্বর মাথায় পানি দিলে তোমার ভালো লাগবে।

মাথায় পানি দিতে হবে না আপনি আমার সামনে বসে থাকুন।

কিন্তু জান মাথা পানি দিলে ভালো লাগবে।

বললাম তো দিতে হবে না আপনাকে বসে থাকতে বলেছি চুপচাপ বসে থাকবেন আর একটা কথা বললে আমি কিন্তু কান্না শুরু করে দিবো।

আচ্ছা আচ্ছা আমি আর একটা কথাও বলবো না তোমার পাশেই বসে থাকবো তবুও তুমি কান্না করো না।

মাথা ব্যাথা করছে আমি ঘুমাবো চুলে হাত বুলিয়ে দিন।

ঐশীর কথা মতো আহাদ ঐশীর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,ঐশী আহাদের আরো কাছে এসে ওর পেট জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

ঐশীর শরীর ক্লান্ত থাকায় এবং চোখে ঘুম থাকায় চুলে হাত বুলানোর ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে।

ঐশীকে ঘুমাতে দেখে আহাদ খুব সাবধানে ওর কোল থেকে ঐশীর মাথা তুলে বালিশের উপর রেখে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়।

আহাদ সিড়িঁ দিয়ে নিচে এসে রান্নাঘরে চলে যায়।
ঐশীর জন্য হালকা পাতলা কিছু রান্না করতে হবে,
জ্বরের মুখে ভারী খাবার খেতে পারবে না।

বাড়িতে কোনো সার্ভেন্ট নেই,রাত হলেই ঐশী সব সার্ভেন্টদের তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
যেহেতু সার্ভেন্টরা কেউ বাসায় নেই সেহেতু আহাদকেই রান্না করতে হবে,আহাদের রান্নার হাত বেশ ভালো,ও এর আগেও ঐশীকে কয়েকবার রান্না করে খাইয়েছে।
আহাদ ভাবে একটু স্যুপ আর দুটো স্যান্ডউইচ বানাবে,
এগুলো হালকা খাবার,খেলেও ক্ষুধা মিটে যাবে,
জ্বরের মুখে খেতে ভালোই লাগবে।
তো যা ভাবা তাই কাজ আহাদ ওর কাজে লেগে পড়ে।

আহাদ ট্রেতে করে খাবার নিয়ে রুমে এসে টেবিলের উপর ট্রে রেখে ঐশীর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে ঐশীকে ঘুম থেকে তুলে দেয়।
ঐশীর পিঠের পিছে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে বসায়।
আহাদ স্যুপের বাটিটা হাতে তুলে চামুচে করে স্যুপ নিয়ে ঐশীর মুখের সামনে তুলে ধরে,ঐশী হা করতে যেয়েও থেমে যায় ও আহাদকে প্রশ্ন করে,
আপনি কিছু খেয়েছেন?

তুমি খাও।

বুঝেছি কিছু খাননি আপনি আগে খান তারপর আমি খাবো আর হ্যাঁ একটা কথাও বলবেন না।

আহাদ আর কি করবে বউয়ের কথা তো শুনতেই হবে ও চামচের স্যুপটুকু খেয়ে নেয়।
আহাদ এবার চামচে করে স্যুপ নিয়ে ঐশীর মুখের সামনে তুলে ধরে ঐশী বিনাবাক্য ব্যয়ে চুপটি করে স্যুপটুকু খেয়ে নেয়,আহাদ ঐশীর দিকে তাকিয়ে ভাবে,
“কি অদ্ভুত তুমি অসুস্থ শরীরে জ্বরের ঘোরেও আমার খাওয়ার কথা তোমার ঠিক মনে আছে,আমার স্বাস্থ্যের প্রতি তোমার কতো খেয়াল তুমি আমার কতো যত্ন করো,সত্যি তুমি খুব ভালো,আমি বড়ই ভাগ্যবান।
ভাগ্যবান নাহলে কি তোমায় পেতাম।”

#চলবে

[ আসসালামু ওয়ালাইকুম,
কেমন আছেন সবাই?
পর্বটা কেমন হয়েছে অবশ্যই সবাই কমেন্ট করে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিয়েন,ধন্যবাদ। ]
[ আসসালামু ওয়ালাইকুম,
কেমন আছেন সবাই?
পর্বটা কেমন হয়েছে অবশ্যই সবাই কমেন্ট করে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিয়েন,ধন্যবাদ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here