আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব -২৪+২৫

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_24

কপি নিষিদ্ধ ❌

ঐশী এবার সিয়ামের দিকে তাকায় সিয়ামও ঐশীর দিকে তাকায়,ঐশী কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে,
ভাইয়া আপনি কি রোজাকে ভালোবাসেন?

ঐশীর কথায় সিয়াম থতমত খেয়ে যায়।

আহাদ ঐশীর দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।

কি হলো ভাইয়া কথা বলছেন না কেন?

সিয়াম এখনো চুপ করে বসে আছে।

বলুন ভাইয়া আপনি কি রোজাকে ভালোবাসেন?

সিয়াম ইতস্তত হয়ে বলে,
ম্যাম আসলে,

ভালোবাসেন কি না?

আসলে ম্যাম,

হ্যাঁ বা না।

হ্যাঁ আমি রোজাকে ভালোবাসি।

আহাদ অবাক হয়ে বলে,
কি তুমি রোজাকে ভালোবাসো!

সিয়াম মাথা নিচু করে বলে,
জ্বী স্যার।

রোজাও তোমাকে ভালোবাসে?

জানি না।

ঐশী বলে,
রোজাও আপনাকে ভালোবাসে।

সিয়াম অবাক হয়ে ঐশীর দিকে তাকায়,ঐশী মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়।
আহাদ কিছুই বুঝতে পারছেনা কেবল ফ্যালফ্যাল করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

ভাইয়া আপনি কি ওকে বিয়ে করবেন?

হ্যাঁ অবশ্যই।

ঠিক আছে,পরশুদিন আপনি রোজাকে বিয়ে করবেন।

জ্বী!

হ্যাঁ,গতকাল রোজাকে দেখতে এসেছিলো ছেলের ওকে পছন্দ হয়েছে তাই ওনারা বলেছে পরশুদিন এসে কাবিন করবে,রোজার এ বিয়েতে মত নেই।
ও আপনাকে ভালোবাসে আপনাকেই বিয়ে করবে আর যদি তা না হয় তবে ও সু’ই’সা’ই’ড করবে,এখন আপনি বলুন আপনি কি ওকে বিয়ে করবেন?

হ্যাঁ বিয়ে করবো,রোজা শুধু আমার,আমিই ওর বর হবো অন্য কেউ না।

গুড,আপনি ভালো মতো রাজি হয়েছেন খুশি হয়েছি,
যদি রাজি না হতেন তবে আপনাকে জোর করে রোজার সাথে বিয়ে দিতাম,আমার বেস্টুর সুখের জন্য আমি সব করতে পারি।

ঐশীর কথায় ওরা দুজন ঢোগ গিলে।
সিয়াম মনে মনে বলে,
স্যারের বউ একদম স্যারের মতোই,
বাবারে কি ডে’ঞ্জা’রে’স।

আহাদ ঢোগ গিলে মনে মনে ভাবে,
বাবারে আমার ভিতু বউ তো পুরো বাঘিনী হয়ে গেছে
আমার সামনে সিয়ামকে ঠ্রে’ড দিচ্ছে,এখন তো দেখছি আমাকেও ভয় পায়না উল্টো আমার ওর কথাতে ভয় লাগছে,অবশ্য ঠিকই আছে আমার বউ তো আমার মতোই হবে।

ঐশী বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”চলুন”।

ওরা দুজন বলে,”কোথায়”!

কোথায় আবার শপিংমলে,পরশু বিয়ে।
বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে না।

ঐশী টেবিল থেকে পার্স উঠিয়ে হাতে নিয়ে হাঁটা শুরু করে,ওরা আর কি করবে দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে।

ওরা গাড়িতে উঠে বসে,সিয়াম এবং ড্রাইভার সামনের সিটে বসে আর ঐশী,আহাদ পেছনের সিটে বসে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ওরা শপিং মলে চলে আসে।
ওরা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে যায়।

রোজা শাড়ী সামলাতে পারে না তাই ঐশী ওর জন্য লেহেঙ্গা পছন্দ করেছে।
ঐশী সিয়ামের জন্য শেরওয়ানি পছন্দ করেছে।
সিয়াম রোজার ড্রেস ঐশী পছন্দ করেছে।
ঐশী সিয়ামকে ওদের ড্রেস পছন্দ করতে বলেছিলো কিন্তু সিয়াম ওকেই ড্রেস পছন্দ করতে বলে।
ওরা শপিং শেষ করে গাড়িতে উঠে বসে।
চলতি পথে রোজা ঐশীকে কল দেয়,ঐশী কল রিসিভ করে।

হুম বল।

রোজা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”দোস্ত”।

আহহা কাঁদছিস কেন?

দোস্ত একটু আগেও আম্মু আমাকে বিয়ে কথা বলে গেছে,আমি যতই বিয়ের কথা ভাবছি ততই আমার ভয় লাগছে,আমি ওনাকে বিয়ে করবো না।

আরে বাবা এতো কাঁদার কি আছে বললাম তো বিয়ে তোর ভাইয়ার সাথেই হবে অন্য কারো সাথে না।

হুম কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে।

ভয়ের কিছু নেই,আচ্ছা আমি পরে কথা বলবো।
ঐশী কল কেটে দেয়,লুকিং গ্লাসে সিয়ামের ফেস দেখতে পায় সিয়াম যে রেগে আছে তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে ঐশী।
অবশ্য রাগবে না কেন রোজা তো একটি বারের জন্যও ওর বিয়ের কথা সিয়ামকে জানায়নি ও যে সিয়ামকে ভালোবাসে সেটাও বলেনি।

ভাইয়া।

জ্বী ম্যাম।

রোজার উপর রেগে আছেন?

না ম্যাম।

আমাকে মিথ্যে বলতে হবে না।

ঐশীর কথায় সিয়াম চুপ করে রয়।

আমি জানি রোজা আপনাকে ওর বিয়ের কথা না বলায় আপনি কষ্ট পেয়েছেন।

আচ্ছা ম্যাম আপনিই বলুন ওর কি কথাটা আমাকে বলার প্রয়োজন ছিল না,ও যে আমাকে ভালোবাসে সেটাও তো বলেনি।

আপনিও তো বলেননি।

আমি তো ওকে হারানোর ভয়ে বলিনি।

রোজাও হয়তো সে কারণেই আপনাকে বলেনি।
কিন্তু হ্যাঁ বিয়ের কথাটা না বলে রোজা ভুল করেছে বিয়ের কথাটা আপনাকে বলার প্রয়োজন ছিল।
আমার কাছে রোজাকে সা’য়ে’স্তা করার এবং বিয়ে ভা’ঙ্গার একটা প্ল্যান আছে।

প্ল্যান!।

হুম,শুনুন তবে ………………….
বুঝছেন আপনারা।

ওরা দুজনই “হুম” বলে।

ঐশী হেসে বলে,
বিয়ের দিন আমরা রোজাকে চমকে দিবো।

__

রাত ৩ টায়,
ঐশী আহাদের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আহাদ ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আহাদ।

হুম জান।

সিয়াম ভাইয়া মানুষটা কেমন ওনাকে ভালোবেসে রোজা ঠ’কবে না তো?

সিয়াম অনেক ভালো,আমি ওকে অনেক ভালো ভাবে চিনি ও যে রোজাকে কখনো ঠ’কাবে না আমার ওর উপর সে বিশ্বাস আছে।

না ঠ’কালেই ভালো,সব মেয়ে জীবনে এমন একজন মানুষকে চায় যাকে নিয়ে সে সারাটা জীবন হাসি মুখে কাটাতে পারবে,ভালোবাসতে পারবে,বিশ্বাস করতে পারবে,আমি চাই ভাইয়া আর রোজা যেন একসাথে হাসি খুশি ভাবে সারাটা জীবন কাটাতে পারে।

আমিও তাই চাই।

ঐশী আহাদের দিকে তাকিয়ে আহাদকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে।
__

রোজা ওর রুমে বসে কাঁদছে,খাটের উপর বেনারসিটা দেখা মাএই ওর কান্নার মাএা দিগুণ বেড়ে যায়।

কেউ দরজায় নক করাতে রোজা চোখ মুছে ফেলে।
নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে,দরজা খুলে দেয়।
রোজার মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কি হয়েছে তোমার চোখ মুখ ফুলা লাগছে কেন?

অনেক্ক্ষণ ঘুমিয়েছি তো তাই হয়তো চোখ মুখ ফুলা লাগছে।

ওহ,যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দেই।
মায়ের কথা মতো রোজা ওয়াশরুমে চলে যায়,ফ্রেস হয়ে বের হয়,ওর মা ওকে সুন্দর করে শাড়ী পড়িয়ে দেয়,মেয়েকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক এবং চোখে কাজল পড়িয়ে দিয়ে গহণার বক্স থেকে গহণা বের করে গহণা পড়িয়ে দেয়।
রোজার বাবা রোজার মাকে ডাকলে রোজা মা রুম থেকে চলে যায়।

রোজা আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখছে,ওকে বউ সাজে অনেক সুন্দর লাগছে,কিন্তু ও কার জন্য বউ সাজছে,ও তো সিয়ামের বউ হতে চেয়েছিল কিন্তু আজ যে ওর অন্য কারো বউ হতে হবে,ও না তো মা বাবাকে
কিছু বলতে পারছে না তো সিয়ামকে কিছু বলতে পারছে,ও কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
রোজার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।

রোজা ঐশীকে কল দেয় কিন্তু ঐশীর ফোন বন্ধ বলছে,
ও বার বার কল দিচ্ছে কিন্তু বরাবরের মতো ফোন বন্ধ বলছে,রোজার মনে সিয়ামকে হারানোর ভয় হচ্ছে।
রোজা সিয়ামের নাম্বার ডায়াল করে কল দেয়।
সিয়ামের ফোন বাজচ্ছে কিন্তু সিয়াম কল রিসিভ করছে না।

প্লিজ সিয়াম কল রিসিভ করুন।
রোজা বারবার কল দিচ্ছে কিন্তু সিয়াম কল রিসিভ করছে না।

রোজা রাগে কষ্টে ফোনটা দেয়ালে ছু’ড়ে মা’রে মুহূর্তের মধ্যে ফোনটা ভে’ঙে চু’রমা’র হয়ে যায়।
রোজা ওর মাথা চেপে ধরে।

কি করবো আমি ঐশীর ফোন বন্ধ বলছে সিয়ামও কল রিসিভ করছে না কিছুক্ষণের মধ্যে ছেলে পক্ষের লোকজন চলে আসবে এখন আমি কি করবো,
আমি ঐ লোককে বিয়ে করবো না কিছুতেই না।

বেশ কিছুক্ষণ পর রোজার চাচী এবং খালামনি রোজার রুমে আসে,ওনারা রোজার মাথায় ঘোমটা দিয়ে দেয়।
চলো মা।

রোজা ওনাদের বারণ করতে পারছে না।
ওনারা রোজার হাত ধরে রোজাকে লিভিং রুমে নিয়ে আসে,রোজা ভদ্রতার খাতিরে সবাইকে সালাম দেয়,
সবাই ওর সালামের উওর দেয়,ছেলের মা রোজাকে ছেলের পাশে বসিয়ে দেন।
বাহ আমার বউমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।

রোজা ওনার কথার উওরে হাসার চেষ্টা করে।

রোজা না তাকিয়েও বুঝতে পারছে ছেলেটা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

একটুপর কাজি সাহেব চলে আসেন,উনি চা নাস্তা খেয়ে
খাতায় লেখালেখি শুরু করে,কাবিন নামায় রোজার এবং ছেলেটার সব তথ্য লিখে কিছুক্ষণ পর উনি ছেলেকে কবুল বলতে বলেন ছেলেটা নিরদ্বিধায়
কবুল বলে দেয়,কাজি সাহেব এবার রোজাকে
কবুল বলতে বলে।
রোজা থম মে’রে বসে আছে ওর মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে ও আর এ সব স’হ্য করতে পারছে না।
“আমি ওনাকে বিয়ে করবো না আমি সিয়ামকে ভালোবাসি বিয়ে করলে উনাকেই করবো
অন্য কাউকে না।”
কথা গুলো রোজার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু ওর যে হাত পা বাঁ’ধা ও ওর বাবা মাকে সবার সামনে অ’পমান করতে পারবে না কিন্তু ও যে এ বিয়ে মেনে নিতেও পারবে না ও কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না রোজা দোটানায় পড়ে গেছে।

সবাই রোজাকে কবুল বলতে বলছে কিন্তু রোজা মাথা নিচু করে থম মে’রে বসে রয়েছে।
যখন ওনারা কবুল বলার জন্য রোজাকে বলছিলো তখনই ওনারা শুনতে পায়।
”থামুন এ বিয়ে হবে না।”

#চলবে#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_25

কপি নিষিদ্ধ ❌

”থামুন এ বিয়ে হবে না।”

ঐশী এ কথায় সবাই দরজার দিকে তাকায়,ঐশীকে দেখা মাএই রোজার মনের ভয় কেটে যায়,সবাই ঐশীকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়,বাদামী রংয়ের শাড়ীর কুঁচি ধরে আলতো পায়ে হেটে হেটে ভেতরে আসছে ঐশী।
ঐশীর পিছনে আহাদ এবং সিয়াম আসছে আর ওদের পিছনে ব’ন্দু’ক হাতে নিয়ে গার্ডরা আসছে।

আহাদকে দেখা মাএই বরের এবং বর পক্ষের লোকেদের ঘাম ছুটে যায়,ওনারা ওদের দেখে ভয় পেয়ে যায়।

ঐশী ভেতরে আসতেই রোজার বাবা মা অবাক হয়ে বলে,তোমরা!

ঐশী মুচকি হেসে উওর দেয়,
জ্বী আন্টি,আমার বেস্টুর বিয়ে আর আমি আসবো না তা কি হয়,আপনি তো আমায় দাওয়াত দিলেন না তাই আমি নিজেই চলে এসেছি।

আসলে আমরা ভেবেছি অনুষ্ঠান করলে তোমায় জানাবো,আজ তো শুধু ঘরোয়া কাবিন হবে।

হ্যাঁ হবে তো,কিন্তু ওনার সাথে না আমার দেবরজ্বী সিয়ামের সাথে।

রোজার বাবা মা চমকে বলে,কিহ!

ঐশীর কথায় সেখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়।

জ্বী আঙ্কেল।

রোজার বাবা রেগে বলে,
কি যা তা বলছো।

কোনো যা তা বলছি না যা সত্য তাই বলছি।

ঐশী এবার বরের কাছে আসে।
কি বিয়ে করতে এসেছেন,কিন্তু আপনার সাথে তো রোজার বিয়ে হবে না।

কেন বিয়ে হবে না রোজাকে আমিই বিয়ে করবো।

উহুম আপনার সাথে তো রোজার বিয়ে হবে না।

এসব বলার আপনি কে,যেখানে এ বিয়েতে আমার ফ্যামেলি এবং রোজার ফ্যামেলি উভয় রাজি সেখানে আপনি বাধা দেওয়ার কে।

আমি কে তাই তো।
কথাটা বলে ঐশী ওর কোমড়ে গুঁজে রাখা রি’ভ’ল’বা’র’টা বের করে বরের কপালে ধরে বাঁকা হাসি দেয়,বর ঘা’বড়ে যায় ওর পরিবারের মানুষও ভয় পেয়ে যায়,ঐশী বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
আমি কে সেটা আপনার জানতে হবে না,আপনার সাথে রোজার বিয়ে হবে না আপনি এখন আসতে পারেন।

রোজাকে বিয়ে না করে আমি কোথায় যাবো না।

ঐশী হেসে বলে,
আপনি তো যাবেনই সাথে আপনার পরিবারের মানুষও যাবে।
ঐশী হাতের ইশারায় গার্ডদের ডাক দেয়।
এই আবর্জনাদের বাসা থেকে বের করো আর হ্যাঁ যদি বেশি তিড়িংবিড়িং করে তবে সােজা উপরে পাঠিয়ে দিবে।
ঐশীর বলতে দেরি কিন্তু গার্ডদের নিয়ে যেতে দেরি নেই,গার্ডরা ওদের নিয়ে যাচ্ছে,ছেলেটা যেতেই চায়নি কিন্তু গার্ডরা ওকে টেনে হিঁ’চ’ড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ওরা যেতেই ঐশী সোফায় বসে পড়ে ওর পাশের সোফায় আহাদ সিয়ামও বসে পড়ে।
ঐশী রোজার বাবা মাকে বসতে বলে।
রোজার বাবা রেগে বলে,
তুমি এটা কি করলে কেন ওদের তাড়িয়ে দিলে তুমি কি ওর বান্ধবী নাকি শ’ত্রু।

ঐশী হেসে বলে,
বান্ধবী বলেই ওনাদের তাড়িয়েছি।

এই মেয়ে তুমি তখন থেকে কি যা তা বলছো হ্যাঁ,তুমি কি জানো তুমি আমার কতো বড় স’র্ব’না’শ করেছো।

রোজার বাবাকে ঐশী উপর চেঁচাতে দেখে আহাদের রাগ উঠে যায় ও পকেট থেকে রি’ভ’ল’বা’র বের করে সামনের টবটায় গু’লি করে,মুহূর্তের মধ্যে টবটা ভে’ঙে চু’র’মা’র হয়ে যায়,গু’লির শব্দে সবাই ভয় পেয়ে যায়।

ঐশী আহাদকে শান্ত করার জন্য বলে,
আহহা কি শুরু করলেন,গু’লি ছুড়ছেন কেন?

উনি তােমার উপর চেচাচ্ছে কেন?

আমরা যা করেছি চেঁচাবে না তো কি করবে আপনি একটু শান্ত হন আমি কথা বলছি।

ঐশী এবার রোজার মা বাবার দিকে তাকায়,তাদের মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে।
আঙ্কেল আন্টি আমি আপনাদের কিছু কথা বলতে চাই আশা করি আপনারা মনযোগ দিয়ে শুনবেন।
আমি এখন যা করেছি রোজার ভালোর জন্য করেছি,
রোজার এ বিয়েতে মত ছিল না ও ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে,আপনাদেরকেও খুব ভালোবাসে শ্রদ্ধা করে তাই আপনাদের মুখের উপর কিছু বলতেও পারেনি,
ও যেমন আপনাদের কষ্ট দিতে পারবে না তেমনই ও ভাইয়াকেও ছাড়তে পারবে না,ও ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে আর ভাইয়াও রোজাকে অনেক ভালোবাসে।

রোজার বাবা খুবই বিচক্ষণ একজন মানুষ সে বুঝতে পেরেছে ঐশী বলতে চাইছে,উনি নরম গলায় ঐশীকে বলে,
তোমার কথা আমি বুঝতে পেরেছি কিন্তু,
উনি সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে,
উনার সাথে বিয়ে হলে কি আমার মেয়ে সুখে থাকবে,
উনার জীবনের কি কোনো নিশ্চয়তা আছে আমি যদি আজ আমার মেয়েকে লাল শাড়ী পড়িয়ে বিদায় আর পরদিনই যদি সাদা শাড়ী পড়তে দেখি তখন কি হবে তুমি বলো তো আমি তো তা মেনে নিতে পারবো না।

ঐশী কিছু বলার আগেই আহাদ বলে,
আঙ্কেল হায়াত-ম’উ’তের কথা বলা যায় না আমরা আজ আছি কাল নেই মৃ’ত্যুর কোনো সময় নেই।
মানুষ ম’র’ণশীল একদিন না একদিন সবাই কেই মৃ’ত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে,আচ্ছা আমি ও তো বিয়ে করেছি আমি কি ম’রে গেছি?

রোজার মা কিছুটা ভয়ে বলে,
কিন্তু আপনারা তো মা’ফি’য়া।

ওনার কথায় আহাদ হাসে।

রোজার বাবা ঠান্ডা গলায় বলে,
আমি আপনাদের কথা বুঝতে পেরেছি কিন্তু যে ছেলের বাবা মা নেই বংশ পরিচয় নেই তার সাথে মেয়ের বিয়ে দেই কি করে।

আহাদ সিয়ামের কাঁধের হাত রেখে বলে,
কে বলেছে ওর কোনো পরিচয় নেই ও শেখ বংশের ছেলে সিয়াম শেখ আমার ছোট ভাই।

রোজার মা বলে,
একজন মা’ফি’য়ার সাথে সংসার করে কি কোনো মেয়ে সুখে থাকতে পারে।

ঐশী স্মিত হেসে বলে,
তার জ’লজ্যা’ন্ত প্রমাণ আমি,আহাদের সাথে সুখে শান্তি সংসার করছি,উনাকে পেয়ে যেন আমি পৃথিবীর সব কিছু পেয়ে গেছি,উনি আমাকে অনেক ভালোবাসে,
আমার কেয়ার করে,আন্টি দেখুন আমি সুখে আছি শান্তিতে আছি,আপনি রোজাকে নিয়ে ভয় পাবেন না, ও আমাদের তিন জনের দ্বায়িত্ব থাকবে আমরা কখনো ওকে কষ্ট পেতে দিবো না আপনি আমাদের বিশ্বাস করতে পারেন।

সিয়াম এতক্ষণ কিছু না বলে বসে থাকলেও এখন আর চুপটি করে বসে থাকতে পারছে ও আসন ছেড়ে উঠে রোজার বাবার সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে সাবলীল কন্ঠে বলে,
আঙ্কেল আমি রোজাকে ভালোবাসি,আমি জানি আমি মা’ফি’য়া হওয়াতে আপনারা আমার সাথে রোজার বিয়ে দিতে চাইছেন না কিন্তু আঙ্কেল আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমার এই অন্ধকার দুনিয়ার ছায়াও রোজার উপর পরতে দিবো না,ওকে আপনি যেভাবে এতো গুলো বছর আগলে রেখেছেন আমিও বাকিটা জীবন ওকে সেভাবেই আগল৷ রাখার চেষ্টা করবো,
আঙ্কেল আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি আপনার মেয়েকে সুখে রাখবো কষ্টের ছিটেফোঁটাও ওর গায়ে লাগতে দিবো না,আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।

রোজার বাবা রোজাকে ওনার সামনে ডেকে গম্ভীর স্বরে বলে,”তুমি কি উনাকে ভালোবাসাে”।

হ্যাঁ বাবা।

উনাকে বিয়ে করতে চাও।

রোজা মাথা নাড়ায়।

রোজার বাবা মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে,
মা তুমি যদি একটি বার মুখ ফুটে বলতে তুমি ওনাকে বিয়ে করবে তাহলে আমি কখনোই অন্য কারো সাথে তোমার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতাম না,তোমাকে সুখের সাগরে ভাসানোর জন্য বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম দুঃখের ডোবায় ডু’বা’নোর জন্য না,যার কাছে আমার মেয়ে মানষিক শান্তি পাবে তার সাথেই আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিবো,মা সিয়ামের সাথেই তোমার বিয়ে হবে।
রোজা রোজার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
থ্যাঙ্ক ইউ বাবা থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।
ওর বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে স্মিত হাসে।

আহাদ হেসে বলে,
মিয়া বিবি রাজি এবার ডাকো কাজি।

আহাদ একটা গার্ডকে কাজি নিয়ে আসতে বলে।
কাজিকে বাহিরেই গাড়িতে বসিয়ে রাখা হয়ে ছিল।

ঐশী আসন ছড়ে উঠে রোজার কাছে যেয়ে বলে,
কাজি আসার আগে আমরা আমাদের বউকে সাজিয়ে নিয়ে আসি,আমাদের বাড়ির বউ আমাদের সাজে সাজবে।

ঐশী রোজাকে নিয়ে ওর রুমে চলে আসে।
রোজা ঐশীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

দোস্ত কি বলে যে তোকে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না,আমি তো ভেবেছিলাম তুই আসবি না যখন সবাই আমাকে কবুল বলার জন্য ফোর্স করছিলো তখন আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল নিজেকে শে’ষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো।

কেন আসবো না আমি তোকে কথা দিয়েছিলাম আর আমি আমার কথা রাখতে জানি,বলেছিলাম তোর সাথে ভাইয়ার বিয়ে হবে অন্য কারো সাথে না দেখ তাই হলো তোর সাথে ভাইয়ার বিয়ে হবে।
এখন যা শাড়ী পাল্টে লেহেঙ্গাটা পড়েনে আমি আমার জ্বাকে নিজ হাতে সাজাবো।

ঐশীর কথা মতো রোজা ওয়াশরুমে যেয়ে শাড়ী পাল্টে লেহেঙ্গা পড়ে বের হয়,ঐশী ওকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছে,সাজানো শেষে গহণা পড়িয়ে মাথা ওড়না দিয়ে দেয়।

মাশাআল্লাহ আমার জান্টুসকে অনেক সুন্দর লাগছে ভাইয়া চোখই ফেরাতে পারবে না।

ঐশীর কথায় রোজা লজ্জা পায়।

হয়েছে এত লজ্জা পেতে হবে না,চল এবার নিচে যাওয়ায় যাক,তোর অপেক্ষায় আমার ভাই শুকিয়ে যাচ্ছে।

ধ্যাত

হাহা চল।

ঐশী রোজাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়।

রোজার বাবা মা আহাদ সিয়ামের সাথে কথা বলছিলো,
কথার মাঝে রোজার উপর সিয়ামের চোখ পড়তেই সিয়াম থমকে যায়,ওর হার্ড খুব দ্রুত বিড করছে।
রোজাকে এই রুপে দেখে সিয়ামের এতো দিনের আশা পূরণ হয়ে যায়,ওর কল্পনার থেকেও রোজাকে বেশি সুন্দর লাগছে।

ঐশী রোজাকে সিয়ামের পাশে বসিয়ে দেয়।

রোজা মাথা তুলে সিয়ামের দিকে তাকায় সিয়াম ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল সিয়ামের সাথে চোখাচোখি হতেই
রোজা চোখ নামিয়ে মুচকি হাসে।

রোজার বাবা কাজি সাহেবকে বিয়ে পড়াতে বলেন।

#চলবে

[ আসসালামু ওয়ালাইকুম,
কেমন আছেন সবাই?
পর্বটা কেমন হয়েছে অবশ্যই সবাই কমেন্ট করে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিয়েন,ধন্যবাদ। ]

[ আসসালামু ওয়ালাইকুম,
কেমন আছেন সবাই?
পর্বটা কেমন হয়েছে অবশ্যই সবাই কমেন্ট করে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিয়েন,ধন্যবাদ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here