আমার_সংসার
.
part:01
.
written by Mollika Moly(দুষ্টু পেত্নী)
…
নব বধু সাজে বাসর ঘরে ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে আছি।গায়ে ভারী ভারী গয়না,শাড়ী দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছে আমায়।আমি সিনহা আজ আমার বিয়ে হয়েছে,বিরাট অট্রালিকায় বিয়ে হয়েছে আমার।অনেক ধনী আমার শ্বশুর ঘরের মানুষ জন।বাড়ি দেখে আমি পুরো অবাক।বাড়ি তো নয় যেনো প্যালেস।সবকিছু কেমন জানি মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন মনে হচ্ছে । বিশ্বাস করতে পারছি না।বিশ্বাস করবোই বা কিভাবে ছিলাম তো ছোট্ট একটা কুড়ে ঘরে।এতো বড় বাড়ি এতো দামি জিনিষ কখনো চোখে দেখিনি। আজ চোখের সামনে দেখছি ছুয়ে দিচ্ছি সব যেনো কল্পনায় মনে হচ্ছে। আমি এতো বড় বাড়ির বউ আজ থেকে এসব কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।এতো বড় বাড়ির বউ হয়ে ধন সম্পদের প্রার্চুর্যের মাঝে থেকেও কি আমি সুখ খুজে পাবো
মনে হয় না।কেনো না বিয়েটা আমার অমতে হয়েছে।
.
গরিব ঘরের মেয়ে আমি। বহু কষ্টে পড়াশুনা শিখেছি।অনার্স ২য় বর্ষে আছি এখন।ইচ্ছে ছিলো বি.সি.এস এ অংশগ্রহন করার। এইসব বিয়ের বিষয় মাথায় ছিলো না।কিন্তু ভাগ্য আমার স্বপ্ন পুরনে বাধা সৃষ্টি করলো।
.
আমার শ্বশুর নিজে আমায় পছন্দ করে তার পুত্রবধু হিসেবে নিয়ে এসেছে এই বাড়িতে,অথচ তার ছেলে যিনি আমার বর তাকে এখনো দেখিনি, তিনিও দেখেনি আমাকে,এতেই বুঝতে পারছি আমায় কতোটা মুল্য দিবেন উনি,আমার মতো গরিব ঘরের মেয়ে এতো বড় বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসা একটু আশ্চর্যের বিষয় বৈ কি।আমার শ্বশুর নিজ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমার বাবা,মায়ের কাছে।আমার বাবা, মা তারাও এক কথায় রাজি হয়েছিলেন,কেনো না এতো বড় ধনী মান্যগন্য ব্যক্তি নিজে এসেছেন প্রস্তাব নিয়ে তাই তারাও প্রস্তাবটা প্রত্যাখান করতে পারেনি।
.
সেদিন আমার বাবা, মা অনেক খুশি হয়েছিল এই প্রস্তাবে, তাদের চোখ মুখের ভাষা বলে দিয়েছিল যে তারা কতো টা খুশি,আড়াল থেকে শুধু তাদের মুখের হাসি টা দেখেছিলাম, কতোদিন পর তাদের সেই হাস্যউজ্জল চোখ খানি দেখলাম,তাই সেদিন আর বিয়েতে অমত দেইনি।বাবা,মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে,তাই তাদের মুখের হাসি টুকু বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিয়েতে মত দিয়েছি অনিচ্ছা সত্ত্বেও। সেদিনের আমার মতামতের ফলশ্রুতিতে আজ আমার বিয়ে হয়েছে, গ্রামের মানুগুনী জনাব মোস্তাক আহমেদ এর একমাত্র পুত্র সিফাত আহমেদ এর সাথে, সিফাত আহমেদ এর ২য় বউ আমি।
.
মোটামুটি অনেক কিছুই বলে ফেললাম এর পরের ঘটনাগুলো গল্পের মধ্যেই পেয়ে যাবে।
.
অনেকক্ষণ যাবত বসে অপেক্ষা করছি বরের জন্য,নব বধুদের যা কাজ আর কি।নিয়ামনুসারে আমিও সেটাই করছি,কিন্তু যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে আমার বর সিফাত আহমেদ উনার আসার কোনো নিশানাও পাচ্ছি না,অনেক রাত হয়েছে ঘুমও পেয়েছে খুব, ঘড়ি কাটায় কাটায় তিন টা বেজে গেছে,বার বার হায় উঠছে আমার।ঠিক তখনি দরজা খুলার শব্দ পেলাম।এক ধাক্কায় দরজা খুলে ঢুলতে ঢুলতে রুমের ভিতর প্রবেশ করলো,শেরওয়ানি পড়া এক সুদর্শন পুরুষ।আমার বুঝতে বাকি রইলো না এই ভদ্রলোক আমার বর আর তিনি ড্রিঙ্ক করে এসেছে।এমন ভাবে হাটছে মনে হয় কখন যেনো পড়ে যাবে।আমি বিছানায় ঠায় বসে থাকলাম, ঘোমটা টা আরেকটু টেনে।উনি খুব দ্রুত আমার সামনে এসে বসে পড়লেন।এক টানে মাথা থেকে ঘোমটা সরালেন।মুখটা আমার মুখের কাছে নিয়ে এসে থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা ওপরের দিকে তুলে মুখের সামনে মুখ নিয়ে এসো বলল,,
.
–বউ নতুন বউ তুই আমার, আমার ২য় বউ বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।উনার মুখ থেকে মদের গন্ধ বের হচ্ছে, আমি নিঃস্বাস নিতে পারছি না গন্ধের জন্য,তাই এতোকিছু না ভেবে বলেই ফেললাম,,
.
–প্লিজ আপনার মুখ টা আমার মুখের সামনে থেকে সরান, আমার অস্বস্তি হচ্ছে, মদের গন্ধে।
.
–তাই নাকি রে আমার মুখ সড়াতে বললি তুই।আমার মুখের গন্ধ এটা বললি,আমায় তুই ঘৃণা করিস এতো বড় সাহস তোর,বলেই উনি আচমকা আমার ঠোটে উনার ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।কিছু বুঝে উঠার আগেই।
.
খানিকক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো,আর নেশার ঘোরে বকতে লাগলো।
.
–আমার মুখ সরিয়ে নিতে বলিস তুই সিফাত আহমেদ কে,জানিস এই সিফাত আহমেদের ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে কতো মেয়ে পিছনে ঘুরে আর তুই দু টাকার মেয়ে হয়ে মুখ সরাতে বলিস। এরো কিছু বকতে বকতে ঘুমিয়ে পড়লো।
.
আমি বিছানা ছেড়ে উঠে উনার পায়ের জুতো টা খুলে দিয়ে পা দুটো বিছানায় তুলে দিলাম।তারপর এই ভারী গয়না কাপড় খুলে সালোয়ার,কামিজ’,আর একটা ওড়না পরে ওনার পাশে খানিক টা দুরে শুয়ে পড়লাম।
.
শুয়ে শুয়ে সেলিং এর দিকে তাকিয়ে আছি।উনার ব্যবহারে আমি একটুও অবাক হইনি।উনি যে এরকম আর আমাকে পছন্দ করবেন না এটা আমি আগে থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।কেনো না যে ছেলে বিয়ের আগে পাত্রীকে দেখার আগ্রহ দেখায় না,আদৌ যে তার বিয়েতে মন নেই এটা স্পষ্ট বোঝা যায়।সেই সাথে আমি আরো কিছু বুঝলাম, আজ থেকে আমার কাঁধে অনেক বড় দায়িত্বের বোঝা পড়লো। “আমার_সংসার” আমাকেই সামলাতে হবে। সব সমস্যা সমাধান করে,এই রাগী বদমেজাজি বর টাকেও শান্ত করতে হবে।