আমার_সংসার
.
.
Part:18
.
.
Writer :Mollika Moly
.
.
সিফাত আরো বাকি সবাই সিনহার কেবিনে প্রবেশ করলো।সিনহার ঘুমিয়ে আছে। চোখ মুখে কালো ছাপ ওর।সিনহার এমন অবস্থা দেখে সিফাতের কলিজার ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।অনেক কষ্ট হয়েছে সিনহার যার ছাপ ওর মুখে ফুটে উঠেছে। সিনহা কে অপলক ভাবে তাকিয়ে দেখছে সিফাত।হঠাৎই চোখ যায় সিনহার পাশে শুইয়ে রাখা ছোট্ট ছোট্ট হাত পায়ের ছোট্ট শরীরের একটা প্রান।খুশিতে সিফাতের চোখদুটো চিক চিক করে উঠলো।সে ছুটে চলে গেলো বাচ্চাটার কাছে।কোলে তুলে নিয়ে বাচ্চাটাকে অসংখ্য চুমু দিতে লাগলো পাগল প্রায় খুশিতে।আত্মহারা হয়ে গেছে সে।সন্তান বাবা মায়ের কাছে বিধাতা কর্তক শ্রেষ্ঠ উপহার।আজ তারা সেই উপহার পেয়েছে অনেক খুশি সিফাত।
.
সিনহা এখনো ঘুমে আছে।সবাই দেখে চলে গেলেও সিফাত হসপিটালে থেকে গেছে। কিছু ওষুধ কিনতে সে ফার্মেসিতে গেছে। আর এদিকে সিনহা জেগে পেলো।আস্তে আস্তে চোখ দুটো খুললো।পাশ ফিরে তাকালো তার মিষ্টি বাচ্চাটার দিকে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।কপালে আলতো করে ছোয়া দিলো।আজ আমার ছুটি।তোকে পৃথীবিতে নিয়ে আসা পর্যন্ত আমার কাজ ছিলো রে সোনা।আজ তুই পৃথীবিতে এসেছিস আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।তোর বাবার আর আমাকে প্রয়োজন হবে না।তুই মা পাবি,আমি তোকো গর্ভে রেখেছি তবুও আমি তোর মা হতে পারলাম না।তুই জারার মেয়ে হবি।তোর বাবা আর জারা তোর মা,বাবা হবে।আমি তোর কেউ না রে মা।তোর সাথে আমার রক্তের টান কিন্তু ঠিকই থাকবে।আমি যে তোর গর্ভধারিণী মা আমায় মনে রাখিস। ভুল বুঝিস না কখনো আমি যে পরিস্থিতির শিকার সোনা।তোর ভাগ্য হয়তো খারাপ যার কারনে মা,বাবার সাথে থাকতে পারলিনা।তাতে কি তোর বাবা তোকে অনেক ভালোবাসবে আর জারাও বাসবে।আমি যে তোর মা এটা তুই জানতেই পারবি না।তুই তো জানবি জারা তোর মা।ভালো থাকিস মা আমার দোয়া সর্বদা তোর সাথে থাকবে।কথাগুলো বলে সিনহা বাচ্চাটার কপালে চুমু দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বের হয়ে চলে গেলো।
.
সিফাত মেডিসিন নিয়ে কেবিনে ঢুকে দেখে সিনহা নেই। ভেবেছে হয়তো ওয়াশরুমে গেছে তাই সে ওষুধ গুলো রেখে বাচ্চার কাছে যেতেই দেখে বাচ্চার পাশে ছোট্ট একটা চিরকুট।কৌতুহল নিয়ে সিফাত চিঠি টা খুলে পড়লো।চিঠিতে যা লেখা ছিলো সেটা দেখার জন্য সিফাত মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
.
প্রিয়,
সিফাত। চিঠিতে আসলে কি লিখবো সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।কিন্তু কিছুতো লিখে রাখতেই হবে। বেশি কিছু লিখবো না শুধু এটুকুই আমি চলে যাচ্ছি।কোথায় যাচ্ছি সেটা বলছি না আমাকে খোজার চেষ্টাও করেন না কাভ হবে না।আমি সবার ধোরা ছোয়ার বাহিরে চলে যাচ্ছি । চিন্তা করবেন না আমি ভালো থাকবো।আপনিও ভালো থাকবেন আমার সন্তান আর জারা কে নিয়ে।আমার সময় ছিলো বাচ্চা পৃথীবিতে নিয়ে আসা পর্যন্ত নিয়ে এসেছি আমার কাজ শেষ দুদিন পর আপনি আমাকে ডিভোর্স দিতেন বাট তার আগেই আমি চললাম নিজ গন্তব্যে। আমার সন্তানকে দেখে রাখবেন।সুখে থাকুন আপনারা।মেয়ের নামটা জান্নাত রাখবেন প্লিজ,শেষ অনুরোধ।
ইতি,
সিনহা।
.
চিঠিটা পড়া মাত্র সিফাত নিজেকে সামলাতে পারলো না।ওর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।সিনহা কি করলে এটা তুমি কেনো চলে গেলে আমায় একা ফেলে।আমিতো তোমাকেই ভালবাসি,।আমি তোমাকে নিয়ে আমাদের সন্তান কে নিয়ে সুখে থাকতে চাই।আমি সুখে থাকবো না সিনহা। কোন সুখের আশায় তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে জানি না।কিন্তু তোমায় ছাড়া আমি ভালো থাকবো না।তোমায় আমি খুজে বের করবোই সিনহা। আমি জানি তুমি তোমার ভালবাসার মানুষের হাত ধরে চলে গেছো।আমাকে আর সন্তানকে ফেলে।আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি তবুও তুমি আজ যা করলে এটা ঠিক করলে না।সিফাত চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ফেললো।রাগে তার চোখদুটো লাল হয়ে গেছে।সিনহা কে কাছে পেলে মনে হয় এখুনি খুন করে ফেলবে এমন অবস্থা। সিনহা তুমি যেখানেই থাকো আমি তোমাকে খুজে বের করবোই আর তোমার সেই প্রেমিক পুরুষটাকে খুন করবো।ভালো থাকতে দিবো না আমি তোমায়।কখনো না একবার তোমার খোজ পাই আমি।তারপর দেখো তোমার লাইফ কিভাবে হেল করে দেই।
.
বাচ্চাকে কোলে করে নিয়ে সিফাত মন মরা হয়ে বাড়ি ফিরলো।ওর বাবা মা ছুটে এলো। ওকে একা দেখেই ওর বাবা মা মুখ কালো করে রইলো।
– “সিনহা কোথায় সিফাত?
ওর মা প্রশ্ন করলো।
সে কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলো।পিছনে ওর বাবা মাও গেলো।
– “কি রে বলছিস না কেনো সিনহা কোথায়,ওকে কোথায় রেখে এলি?
– ” উফ চুপ করোতো,ওর নাম আর মুখে নিবা না।কখনো ওর কথা জানতে চাইবে না।
– “কেনো কি হয়েছে সেটাতো বলবি?
– ” কিছু হয়নি বললাম তো যাও এখন এখান থেকে।আমায় একা থাকতে দাও প্লিজ।আর কখনো ওর কথা মুখে নিয়ে আসবে না আমার সামনে বলেই টেবিলের ওপর থাকা সিনহার ছবিটা আছাড় দিয়ে ভেংগে ফেললো।ওর মা কেপে উঠলো।পাশে গিয়ে বসে সিফাতের মাথায় হাত দিতেই সিফাত ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।
– “সিফাত কি হয়েছে বাবা বল আমায়, এভাবে কাঁদছিস কেনো?
– ” মা সিনহা আমাকে আর আামাদের সন্তান কে ছেড়ে চলে গেছে।
– “কিহহ,কেনো?
– ” জানি না মা আমি।সে অন্যকাউকে ভালোবাসে আমাকে নয়।
– “চুপ কর সিফাত কিসব আজে বাজে কথা বলছিস?
– ” ঠিকই বলছি আমি মা।ও অন্যকাউকে ভালোবাসতো।
– “সিনহাও এমনটা করতে পারলো আমাদের সাথে।ওকে তো অনেক ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম।কতো ভালবাসতাম ওকে শেষে কি না সেও আমাদের ঠকালো।মানুষ চিনতে আমরা এতো ভুল করলাম। না না এটা হতেই পারে না তোর কথাও ভুল হচ্ছে। সিনহা এরকম না ও অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না।হয়তো তোর ওপর অভিমান করে গেছে আবার ফিরে আসবে দেখেনিস।
– ” নাহ মা, সে আর ফিরবে না চিঠিতে সব জানিয়ে গেছে সে।
– “কিছু ভালো লাগছে না আমার। কি হচ্ছে এইসব আমাদের সাথে।আল্লাহ কখনোই কও আমরা একটু ভালো থাকতে পারবো না।
কথাটি বলেই মা চলে গেলো।সিফাত চোখের জল গড়িয়ে পড়লো।মেছেতে পড়ে আছে সিনহার ছবি আর ভেংগে যাওয়া কাঁচের টুকরো গুলো।কাঁচের টুকরো গুলো সড়াতে সিফাতের হাতে ঢুকে গেলো কাচের টুকরো। রক্ত ঝড়ছে ব্যাথা করছে সেদিকে তার খেয়াল নেই আজ যে সে অনেক বেশি ব্যথা পেয়েছে।এই সামান্য ব্যাথা তার কাছে কিছুই না।সিফাত ছবিটা তুলে হাতে নিয়ে দেখতে থাকলো একনজরে।পলক পড়ছে না ওর।সিনহা কেনো এতো বড় শাস্তি দিলে আমায়।প্লিজ ফিরে এসো সিনহা।আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না।আমাদের সন্তান বাবা মায়ের একত্রিত ভালবাসাকে বঞ্চিত কেনো করলে সিনহা।ঐ নিষ্পাপ শিশুটির মুখ দেখে তুমি কি করে পারলে ওকে ছেড়ে চলে যেতে।আমার জন্য না হোক ওর জন্য তো থাকতে পারতে।কেনো চলে গেলে সিনহা প্লিজ ফিরে এসো। ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলো সিফাত।
.