আমার_পূর্ণতা #রেদশী_ইসলাম পর্বঃ ৪

#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ৪

তখন মধ্যরাত। ঘড়িতে হয়তো ৩ টা বা ৩:৩০ বাজবে। সবাই গভীর ঘুমে। কিন্তু ঘুমাতো পারলাম না আমি। মাথার মধ্যে ঘুরছে রাতের কথা গুলো। তাফসির ভাইয়ের দেওয়া থ্রেড। সাথে বাড়ছে মৃদুলের উপর ক্ষোভ। তাকে কে বলেছিলো আমার আর তার ছবি আলাদা করে ছাড়তে? আবার ক্যাপশন দিয়েছে উইথ জিএফএফ।
উফফ যতোবারই এইসব কথা ভাবছি ততোবারই রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। পরের দিন কলেজে যায় একবার শুধু। তারপর ওর একদিন কি আর আমার একদিন।

তখন তাফসির ভাই ফোন ঘেটে মৃদুল আর আমার একসাথে একটা ছবি দেখিয়েছিলেন। যেটা গতকাল দুপুরে কফি-শপে তুলেছিলাম আমরা। শুধু তো আমি একা না। সবাই ই তো এমন আলাদা-আলাদা অনেক ছবিই তুলেছিলেন। কিন্তু না। তাফসির ভাই তো সেটা দেখবেন ই না। দেখবেন তো শুধু আমার ছবি। আমি তো ওনার শত্রু লাগি। তাই আমাকেই দেখবেন সব জায়গা তে।
তখন উনি ফোন নামিয়ে গম্ভীর ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ” তোকে ছোট বাবা কলেজে পাঠাই ছেলেদের সাথে ঘেঁষা ঘেঁষি করে ছবি তুলতে? ”

ওনার কথা শুনে রীতিমতো হতবাক হয়ে গেলাম আমি। এটা মোটেও ঘেঁষা ঘেঁষি করে তোলা ছবি নয়। আমাদের মাঝে যথেষ্ট ডিস্টেন্স আছে এটা চোখে বিঁধছে না ওনার? তবুও কিছু বললাম না। দেখে বোঝায় যাচ্ছে উনি হয়তো রেগে আছেন প্রচুর। তাই মাথা নিচু করে চুপ করে থাকলাম। উনি আবার বলতে শুরু করলেন—

” উত্তর দিচ্ছিস না কেনো? বল ছোটো বাবা কি তোকে এইসব করতে কলেজে পাঠাই? তোর লজ্জা করে না এই বয়সে প্রেম পীরিতি করতে? ”

ওনার কথা শুনে বুঝতে পারলাম যে আমাদের ছবি দেখে ভুল বুঝেছেন উনি। তাই সাহস যুগিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম—

” আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। আমি প্রেম করি না তাফসির ভাই। ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। ”

আমার কথা শুনে বসা থেকে হুট করে দাঁড়িয়ে গেলেন তাফসির ভাই। তারপর ফুঁসে উঠে বললেন—

” ও তোর জাস্ট ফ্রেন্ড? আচ্ছা মানলাম ও তোর ফ্রেন্ড। কিন্তু তোর ছেলে ফ্রেন্ড কেনো থাকবে? এ বাড়িতে আর কোনো মেয়ের ছেলে ফ্রেন্ড আছে? তাহলে এটুকু বয়সে তোর কেনো থাকবে? ছোট বাবাকে যেয়ে বলি? যে তার মেয়ে কলেজে যেয়ে ছেলেদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেরাচ্ছে? তার মেয়ের সাথে ছবি তুলে ছেলেরা আপলোড ও দিচ্ছে। আবার বলছে জিএফএফ। বাহ মেয়ের কি উন্নতি।”

ওনার কথা শুনে আতঙ্ক ঘিরে ধরলো আমাকে। সত্যি তো। এ বাড়ির অন্য মেয়েদের তো ছেলে ফ্রেন্ড নেই। বড় বাবা এসব পছন্দ করেন না বলে কেউই স্কুল বা কলেজে ছেলে ফ্রেন্ড বানায় নি। ছেলেদের ক্ষেত্রে ও তাই। এ বাড়িতে বড় ছেলে বলতে একমাত্র তাফসির ভাই ই আছেন। আর সামি-সাদনান তো এখনো ছোটো। কিন্তু কখনো তাফসির ভাইকে নিয়ে মেয়ে ঘটিত কোনো কথা কানে আসে নি। বিদেশে যেয়ে কি করেন সে কথা আলাদা তবে এখানে তো এমন কথা কখনো শুনি নি। বড় বাবার কথা অনুযায়ী একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো ফ্রেন্ড হতে পারে না। ওনার এই ধারণা কেনো তার কারন জানি না। সেই জন্যই উনার কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে এ ব্যাপারে। আর সেখানে আমার এই ছবি দেখলে তো সবাই হাড্ডি গুড়ো গুড়ো করে ফেলবেন আমার। আর বাবার কানে যাওয়া মানে বড় বাবার ও কানে যাওয়া। তাই ভয়ে ভয়ে তাফসির ভাইয়ের দিকে তাকালাম। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম—

” বাবাকে বলবেন না তাফসির ভাই। আমি এমন করবো না আর প্রমিস। ওদের সাথে কথায় বলবো না আর দরকার পরলে। তবুও আপনি বাবাকে বলবেন না এ কথা।”

আমার কথা শুনে মুখভঙ্গি পরিবর্তন হলো ওনার। ভাবলেন কিছু একটা। তারপর পুনরায় আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,

” সত্যি বলছিস তুই? আর করবি না তো এমন?”

ওনার কথা শুনে তাড়াতাড়ি উপর নীচ মাথা ঝাঁকালাম। ব্যস্ত কন্ঠে বললাম,,

” একদম সত্যি কথা বলছি তাফসির ভাই। বিশ্বাস করুন আর কখনো কোনো ছেলের সাথে কথা ও বলবো না।”

” বেশ করবো তোকে বিশ্বাস তবে একটা শর্তে।”

ওনার কথা শুনে ভয় টয় ভুলে গেলাম। কপাল কুচকে বললাম—

” এর মধ্যে আবার কি শর্ত তাফসির ভাই?”

উনি সেই চেয়ারে বসে পড়লেন আবার আগের স্টাইলে। বাম পায়ের ওপর তোলা ডান পা টা নাড়াতে নাড়াতে বললেন—

“আজকে থেকে আমার সব কথা শুনে চলতে হবে তোর।”

ওনার কথা শুনে মেজাজ চটে গেলো আমার। মানে এখন উনি সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে চাইছেন তাইতো? ওই যে কথায় আছে না? ‘ হাতি কাদায় পরলে পিপড়া তে ও লাথি মারে ‘ ব্যপার টা হচ্ছে তাই। কিন্তু মনে মনে ঠিক করলাম দমে যাওয়া যাবে না কিছুতেই। তাই কন্ঠে ঘোর বিরোধিতা এনে বললাম—

” পারবো না আপনার সব কথা শুনে চলতে। আপনার যা ইচ্ছা করুন”

যদিও বললাম কথাটা কিন্তু মনে মনে ঠিকই ভয়ে কাঁপছিলাম। আমার কথা শুনে পা নাড়ানো টা বন্ধ করলেন উনি। আমার দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন—

” ভেবে বলছিস তো প্রাচু? ছবি কিন্তু ডিলেট করি নি ”

এতোক্ষণ যাবত সঞ্চার করা সাহস ফুস করে নিভে গেলো। বুঝতে পারলাম আর কোনো উপায় নেই। তাই ওনার কথা মেনে নিয়ে থমথমে গলায় বললাম—

” ঠিক আছে। আপনি যা বলবেন তাই হবে। শুনবো আজ থেকে আপনার সব কথা। ”

উনি উঠে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে সবগুলো দাঁত বের করে হাসলেন। উচ্ছাসিত কন্ঠে বললেন ” গুড গার্ল” তারপর বেরিয়ে যেতে লাগলেন ঘর থেকে। কিন্তু দরজার সামনে যেয়েও থেমে গেলেন। পেছনে ঘুড়ে তড়িৎ বেগে এসে ডান হাত দিয়ে শক্ত করে গাল টিপে ধরলেন আমার। দাঁত খিচিয়ে বললেন—

” আর যেনো কোনোদিন কোনো ছেলের আশেপাশে ও না দেখি। যদি তোকে নিয়ে কখনো কোনো কথা আমার কানে আসে তবে পা কেটে রেখে দেবো মনে রাখিস। কলেজ, কোচিং এ যাবি ঠিক আছে তবে সেখান থেকে সোজা বাড়িতে আসবি। অন্য কোথাও যেনো না দেখি”

কথাটা বলে গাল ছেড়ে দিয়ে গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। আর আমি বিস্ফোরিত হয়ে ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
.
.
.
.
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সকাল আজ। সকাল শুরু হতে না হতেই বাইরে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। পানিতে ভরে গেলো রাস্তাঘাট। আজ শুক্রবার বিধায় কলেজ, কোচিং এর হাত থেকে বেচে গেলাম। তাফসির ভাইয়ের কাজিন রা ফিরে যান নি এখনো। তবে উনার মামা-মামী, এবং খালা মনি ও খালু ফিরে গিয়েছেন। তিশা আপু দের ফিরে যাওয়ার কথা আজকে থাকলেও সকাল থেকে ননস্টপ বৃষ্টি পরার কারনে যাওয়া ক্যানসেল হলো। তাতে বেশায় খুশি হলাম আমরা। সবাই মিলে প্লান করলাম বড় মা’কে যেয়ে বলবো দুপুরে খিচুড়ি ও খাসির মাংস রান্না করার কথা। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি সাথে গরম গরম খিচুড়ি। আহ ভাবতেই এখনি জিভে পানি আসছে।

তাই প্লান অনুযায়ী সবাই মিলে চলে গেলাম নিচে। প্রথমে রান্না ঘরে উঁকি দিতেই দেখলাম বড় মা নুডলস সিদ্ধ করছে। আর মা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কাটা কাটি করে দিচ্ছে। মেজো মা অুপস্থিত এখানে। আমি পেছন ফিরে আবার সবার দিকে তাকালাম। ওরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আবার সামনে তাকালাম। আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে বড় মা’র পেছনে গিয়ে দাড়ালাম। আমার দিকে তাকিয়ে মা পেঁয়াজ কাটছেন। মা হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমি কোনো ধান্ধা নিয়ে এসেছি তাই সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। কিন্তু সেদিকে বিশেষ পাত্তা দিলাম না আমি।
বড়মা কে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে উৎসাহিত কন্ঠে ডাক দিলাম— ” বড় মা ”

আচমকা পেছন থেকে ঝাপটে ধরায় বড় মা ভয় পেলেন খানিকটা। যা দেখে খিল-খিলিয়ে হেসে উঠলাম আমি। তৎক্ষনাৎ পাশ থেকে চেচিয়ে উঠলো মা। রাগী কন্ঠে বললেন,,

” তুই কি দিন দিন ছোটো হয়ে যাচ্ছিস প্রাচু? এভাবে আচমকা কেউ ধরে? দেখলি না বড় আপা ভয় পেয়েছে?”

” আহ শাহানা! মেয়ে টা কে বকছিস কেনো? ছোট মানুষ ও” পরপরই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন—” প্রাচু? আম্মু কি লাগবে তোর? এসেছিস নিশ্চয়ই কিছু বলতে?”

মায়ের কথা শুনে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। কিন্তু বড় মার কথায় হঠাৎ মনে পরলো প্লানের কথা। তাই আদুরে গলায় বললাম,,

” বড় মা খিচুড়ি আর খাসির মাংস খেতে ইচ্ছা করছে অনেক। দুপুরে একটু বানিয়ে দেবে প্লিজ?”

মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই বড় মা বলে উঠলেন,,

” কেনো দেবো না? এ আর এমন কি? খেতে চেয়েছিস আর আমি কি না দিয়ে পারি?”

বড় মা’র কথা শুনে আনন্দে নেচে উঠলো মন। ফের বড় মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম ” বড় মা তুমি বেস্ট।”

এর মধ্যেই রান্না ঘরের দরজায় হাজির হলেন তাফসির ভাই। রান্না ঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়ালেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললেন—” কি ব্যাপার? কি হচ্ছে এখানে?”

ওনাকে দেখে চমৎকার করে হাসলেন মা। আমার আর বড় মায়ের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন— ” দেখ না বাবা ওরা মা মেয়ে দুজন দুজনকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে। দেখছিস না একে অপরকে কিভাবে সাপের মতো পেচিয়ে আছে? ”

মা’র কথায় বড় বড় কদম ফেলে মা’র কাছে এগিয়ে গেলেন তাফসির ভাই। পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,

” তাতে কি হয়েছে ছোটো মা? এইতো আমি আছি তোমার হয়ে। কানাডা তে তোমাদের কতো মিস করেছি জানো? প্রতিটা মুহুর্তে কোনো কাজ করার সময়ই মনে পরতো তোমাদের কথা। তোমাদের অভাব খুব অনুভব করেছি আমি।”

ওনার কথায় মন খরাপ হয়ে গেলো মা’র। বড় মা কেঁদে ফেললেন আঁচলে মুখ ঢেকে। বড় মা’র কান্না দেখে তাফসির ভাই মা’কে ছেড়ে বড় মায়ের কাছে এসে দাঁড়ালেন। দু’হাতের মধ্যে বড় মায়ের মুখ নিয়ে উপরে তুললেন। নরম কন্ঠে বললেন— ” কাঁদছো কেনো মা? এই দেখো এখন তো তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি। ”

কান্নার দাপুটে কথা বলতে পারছিলেন না বড় মা। তবুও থেমে থেমে বললেন— ” এখন এসে জিজ্ঞেস করছিস কাঁদছি কেনো? এতোদিন তো একবারও পাত্তা দিস নি। কখনো জানতে চেয়েছিস তোকে ছাড়া কেমন আছি আমি? এতো অভিমান তোর? ”

” সরি মা। আর কখনো এমন করবো না। এই দেখো কান ধরছি। উঠ-বস করবো? বলো মা। তবুও কান্না করো না তুমি প্লিজ।

ওনার কান ধরার ভঙ্গিতে হেসে ফেললেন বড় মা। তা দেখে হেসে ফেললাম আমরা ও। সত্যি তাফসির ভাই আমার সাথে যায় করেন না কেনো বড় মা কে বড্ড ভালোবাসেন উনি।

________

রান্না ঘর থেকে বাইরে আসতেই দেখলাম ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছেন সবাই সাথে রাদিয়া আপু আর আবির ভাইয়া ও আছেন। আমাকে দেখে রিয়া আপু ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন কাজ হয়েছে কি না। আমি মুচকি হেসে মাথা ওপর নিচ নাড়াতেই লাফিয়ে উঠলো সবাই।

চলবে

(বিঃদ্রঃ যেহেতু আমি নতুন লেখিকা তাই অনেক জায়গায় ভুল থাকতে পারে। আপনারা পারলে দেখিয়ে দিবেন সেই ভুল ত্রুটি গুলো। আমি তা শুধরে নেবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here