আমার_পূর্ণতা #রেদশী_ইসলাম পর্বঃ ৬

#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ৬

” প্রাচুর্য এভাবে টানছিস কেনো? কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস? ছাড় আমাকে।”

শেষের কথাটা খানিকটা ধমক দিয়ে বললেন উনি। ওনার ধমক খেয়ে দাড়িয়ে পরলাম আমি। সাথে সাথে হাতটা ও ছেড়ে দিলাম। তারপর ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম —

” কোচিং আছে আমার। মা বলেছে আমাকে পৌঁছে দিতে আবার আসার সময় নিয়ে আসতে। ”

” তো এই কথাটা মুখে বললেই হয়। নাকি বোবা তুই? ধুর তোর জন্য গেঞ্জি টা ও চেঞ্জ করতে পারলাম না। বাসার গেঞ্জি পরেই বের হতে হবে এখন।’__বিরক্তি নিয়ে বললেন উনি।

” অলরেডি লেট হয়ে গেছে তাফসির ভাই। এখন আর চেঞ্জ করার সময় নেই। তাড়াতাড়ি চলুন।”

আমার কথায় তাফসির ভাই ফোন বের করে সময় চেক করলেন তার আমার হাত মুঠোয় পুরে বললেন— ” চল ”

” বিধি বাম ” বলে একটা কথা আছে জানেন তো? ভাগ্য খারাপ থাকলে সব দিক দিয়েই হয়। তখন প্রাচুর্য এতো প্লান করলো তাফসিরকে বিভ্রান্তিতে ফেলানোর কিন্তু হলো তার সম্পুর্ন উল্টো। তখন গাড়ি নিয়ে বের হতেই বেজায় খুশি ছিলো প্রাচুর্য। কারন বাড়ির সামনের রাস্তায় পানি না উঠলেও কিছু দুর সামনে যেয়ে পানি বাঁধবে এটা সিওর ছিলো প্রাচুর্য। কিন্তু তাফসির সে রাস্তা দিয়ে তো গেলোই না উল্টো কোন রাস্তা দিয়ে গেলো তা চেনেই না প্রাচুর্য। রাস্তা টা বড় রাস্তার মতো নয়। একটু চিপা। বাইরে তখন আবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো তখন তাই মানুষ ও ছিলো না। এটা ছিলো তাফসিরের জন্য প্লাস পয়েন্ট। তাই অনায়াসেই গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারলো।
কিন্তু প্রাচুর্যের প্লানে পানি ঢেলে দেওয়ায় সে হতবাক হয়ে গেলো। ভেবেছিলো কি আর হলো কি। তাই পুরো রাস্তায় সে একটা কথাও না বলে নির্বাক ছিলো।

———————

আজ রবিবার। দু’দিন টানা বৃষ্টির পর মিটিমিটি রোদ উঠেছে। সকালের মিষ্টি রোদে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাড়ালো প্রাচুর্য। প্রাকৃতিক সতেজ বাতাসে প্রান জুড়িয়ে গেলো তার। তারপর ফুলের গাছ গুলোর দিকে তাকালো সে। বাগান বিলাস গাছ টা বড় হয়েছে বেশ। তার ছোট বেলকনিতে এটা রাখা যাবে না আর। আজই ছাদে নিয়ে যেতে হবে। যদিও ছাদে আরও কিছু বাগান বিলাস গাছ আছে। কিন্তু তা ভিন্ন ভিন্ন রঙের। পাশের গোলাপ গাছে আবার গোলাপ ধরেছে কিছু। লাল নয় গোলাপি গোলাপ। তার বেলকনিতে লাল গোলাপ গাছ নেই। তাই মনে মনে ভাবলো আজ কলেজ থেকে আসার সময় লাল গোলাপের চারা কিনে আনবে সে।

কলেজের জন্য রেডি হয়ে বের হতেই সামনে হাঁটতে লাগলো প্রাচুর্য। কিন্তু আজ একটা রিকশা ও মিলছে না। সে বাড়ির গাড়ি করে যায় না। তার ভালো লাগে না গাড়িতে যেতে। প্রতিদিন রিকশা করে যায় আবার রিকশা করেই আসে। মাঝে মাঝে আবার হেটেও আসে। রিকশার টাকা বাচিয়ে সে সারা রাস্তা এটা ওটা কিনে খায়। চৌধুরী বাড়ির মানুষ ভোজনরসিক কি না। তেমন হয়েছে সেও। তাই সারাদিন এটা ওটা খেতেই থাকে। সে দেখতে মোটেও শুকনো পাটকাঠির মতো নয়। বরং সে গুলুমুলু ধাঁচের। আবার বেশি মোটা ও নয়। আদুরে বলা যায় তাকে। তাই কলেজে যেতেই প্রথমে গাল ধরে টানে প্রিয়তি। এতে প্রথম প্রথম প্রাচুর্য বিরক্ত হয়ে নিষেধ করলেও প্রিয়তি শুনতো না। তাই এখন কিছু বলাই ছেড়ে দিয়েছে। প্রিয়তি মেয়ে টা ঘার ত্যাড়া কিনা।
.
.
.
প্রাচুর্যের কলেজ শেষ হতে হতে দুপুর হলো। আজ যেহেতু কোচিং নেই তাই সোজা বাড়ির পথ ধরলো সে। প্রিয়তির বাড়ি উল্টো পথে। তার ছোটো চাচ্চু এসে প্রতিদিন নিয়ে যায় তাকে। তাই প্রিয়তির একা একাই যেতে হয়। যেহেতু সকালে ডিসিশন নিয়েছিলো গোলাপ গাছ কিনবে দুটো তাই আর রিকশা ধরলো না। রিকশার টাকা বাচিয়ে গাছ কিনবে সে। কারন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় গাছের টাকা আনতে বেমালুম ভুলে গিয়েছে।

হঠাৎ কিছু পথ হাটার পর পেছনে কারো উপস্থিতি অনুভব করলো সে। দুপুর সময় বলে রাস্তা ঘাটে মানুষ নেই তেমন। আর যারা আছেন তারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত। প্রাচুর্য প্রথমে সেদিকে পাত্তা না দিলেও হাঁটার শব্দ ক্রমশ বাড়তে থাকে। আচমকা তার হাত ধরে উঠলো কেউ। সে চমকে পাশে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেলো। মুহূর্তেই হাত ঝারা দিয়ে ছিটকে গেলো দুরে। পাশের ব্যক্তি তা দেখে মুচকি হাসলো। মনে মনে প্রাচুর্য ভয়ে শিটিয়ে গেলেও প্রকাশ করলো না তা। মুখ যথাসম্ভব কঠোর করে চিল্লিয়ে বললো—

” তুই? তোর সাহস কি করে হয় ওই বিশ্রী হাত দিয়ে আমার হাত ধরার। ”

” তোকে ধরতে গেলে আমার সাহসের দরকার পরে না প্রাচুর্য। ”

” থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দেবো তোর। কতোবার বলেছি রাস্তা ঘাটে বিরক্ত করবি না আমাকে। ”

” বেশ করবো না বিরক্ত। প্রপোজাল টা একসেপ্ট করে ফেল। প্রমিজ আর একটুও বিরক্ত করবো না। ”

” তোর মতো কাঁচড়ার সাথে কে রিলেশন করবে? ”

কাঁচড়া শব্দটা শুনেই চোয়াল শক্ত করে ফেললো তানভির। ক্ষিপ্ত গতিতে চোয়াল শক্ত করে ধরলো প্রাচুর্যের। যেনো গালের হাড্ডি তৎক্ষনাৎ ভেঙে যাবে। প্রাচুর্যের ফরসা মুখে পাঁচ আঙুলের টকটকে লাল দাগ বসে গেলো। সাথে বসলো নখের দাগ। যার থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলো। ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে কেঁদে উঠলো প্রাচুর্য। নিজের হাত দিয়ে সরাতে চেষ্টা করলো তানভিরের হাত কিন্তু গায়ের শক্তির সাথে পেরে উঠলো না প্রাচুর্য। তানভির পাত্তা দিলো না সেদিকে। তার মাথায় শুধু ঘুরছে কাঁচড়া শব্দ টা। ওইযে কথায় বলে না? ” চোরের মায়ের বড় গলা ” তানভিরের অবস্থা ও তাই। কাঁচড়া কে কাঁচড়া বলতেই ক্ষেপে উঠলো সে। প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো—

” রুপের অনেক অহংকার তাই না মেয়ে? যদি এসিড মেরে তোর এই সুন্দর মুখটা ঝলসে দি? কেমন হবে তখন? তোর বাপের অনেক টাকা বলে আমাকে কাঁচড়া বলছিস? তোর এই অহংকার শেষ করে দেবো আমি। ”

তার মধ্যেই রাস্তার কিছু লোক এগিয়ে আসলো ওদের দিকে। লোক জন এগিয়ে আসতেই প্রাচুর্য কে ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেলো তানভির। সেখানেই কাঁদতে কাঁদতে বসে পরলো প্রাচুর্য। তখন একজন মাঝ বয়সী লোক এসে বসলো প্রাচুর্যের পাশে। জিজ্ঞেস করলো ” কি হয়েছে? ” কিন্তু প্রাচুর্য বলতে পারলো না কিছু। প্রাচুর্যের অবস্থা দেখে লোকটি আর কিছু বললো না। প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে বললো—

” আচ্ছা তোমার কিছু বলতে হবে না মা। তুমি ওঠো এখন। ইশ জামা কাপড়ে তো ময়লা লেগে গেছে একদম। দেখি বাড়ি যাও এখন। একা যেতে পারবে নাকি আমি এগিয়ে দিয়ে আসবো? ”

লোকটির কথা শুনে প্রাচুর্য কোনো মতে বললো—

” যেতে পারবো আঙ্কেল। একটা রিকশা ডেকে দিবেন প্লিজ। ”

প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে লোকটির মায়া হলো খুব। হাত দিয়ে একটি রিকশা ডেকে উঠিয়ে দিলো তাতে। সাথে বললো দেখেশুনে ভালো করে বাড়ি পৌছে দিতে।

সারা টা রাস্তা প্রাচুর্য কান্না করলো। বাড়িতে ঢুকেই এক দৌড়ে ওয়াশরুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো সে। ঝর্ণা ছেড়ে তার নিচে বসে পরলো। এখন আর কাঁদছে না সে। থম মেরে বসে আছে।
.
.
শাহানা আরা বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন আর কাজ করছেন। এই মুহুর্তে ডাইনিং রুমে সবাই খেতে বসেছেন। চিন্তা হচ্ছে তার মেয়েকে নিয়ে। এখন ঘড়িতে ৩:৩০ বাজে। প্রাচুর্যের কলেজ ছুটি হয় ২ টা ৩০ মিনিটে। আসতে আসতে আধা ঘন্টা লাগে। সর্বোচ্চ গেলে ৪৫ মিনিট তার বেশি নয়। কিন্তু আজ মেয়ের এখনো খোঁজ নেই।

প্রাচুর্য বাড়িতে ঢুকলেই ঠিক পাই সবাই। সে বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতেই চিল্লিয়ে শাহানার কাছে সরবত চান এক গ্লাস। সেটি খেয়ে তারপরেই ঘরে যায় প্রাচুর্য। নিয়মের একদিনও মিস নেই। তার মানে এখনো আসে নি প্রাচুর্য।

শাহানা স্বামীর দিকে তাকালেন এবার। ইনসাফ চৌধুরী মন দিয়ে খাবার খাচ্ছেন। অন্যদিকে খেয়াল নেই তার। শাহানা আরা খানিক বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলেন না। স্বামীর পাশে গিয়ে দাড়ালেন। নিচু গলায় চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন—

” শুনছো প্রাচুর্যের বাবা? তোমার মেয়ে তো বাড়িতে ফিরলো না এখনো। ঘড়িতে ৩:৩০ বাজে। এতোক্ষণে তো চলে আসার কথা। ”

স্ত্রীর কথায় তৎক্ষনাৎ খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো ইনসাফের। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে খানিকটা জোরে বললেন—

” এখনো ফিরে নি মানে? কি বলছো তুমি?”

ইনসাফের কথায় খাওয়া থেকে মুখ তুললো তাফসির। সে ইনসাফ চৌধুরীর পাশেই বসা ছিলো। তার বাবার সাথে পত্তাই না পরলেও মেজো বাবা ও ছোটো বাবার সাথে সখ্যতা বেশ। তাফসির হাত ঘড়িতে সময় টা দেখে নিলো একবার। পরপরই শাহানার দিকে তাকিয়ে বললেন—

” প্রাচুর্য এখনো ফেরে নি ছোট মা?”

তাফসিরের কথায় শাহানা আরা দুদিকে মাথা নারালেন। যার অর্থ না এখনো ফেরে নি। ওনার কথায় কপাল কুচকে ফেললো তাফসির। ফের জিজ্ঞেস করে বললেন—

” তুমি শিওর ছোট মা? ”

” ফিরলে তো আগে আমাকে ডাকতো।”

” তাও একবার দেখা দরকার এসেছে নাকি। সাদনান যা তো দেখে আয় প্রাচুর্য এসেছে নাকি। যদি আসে তাহলে ডেকে আনবি। ”

তাফসিরের কথায় সাদনান গেলো প্রাচুর্যকে ডাকতে। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে বললো—

” ভাইয়া প্রাচু আপু ঘরেই আছে। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। খুলতে বললাম তা ও খুললো না। তবে পানির আওয়াজ আসছিলো। হয়তো গোসল করছে।”

সাদনানের কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সবাই।

প্রায় ঘন্টা খানিক পর বের হলো প্রাচুর্য। চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। প্রাচুর্য যেয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলো। একদিকে গালে ব্যাথা অন্যদিকে মাথা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে তার। সেই মুহুর্তে দরজায় নক করলেন শাহানা। কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না প্রাচুর্য। সেই অবস্থায় থেকে বললো—

” বিরক্ত করো না মা। ঘুমাচ্ছি আমি।”

মেয়ের কথায় উত্তর দিলেন শাহানা। শান্ত গলায় বললেন — খাবার এনেছি তোর জন্য। উঠে খেয়ে নে। সেই কোন সকালে খেয়েছিস। তাড়াতাড়ি ওঠ মা। খেয়ে তারপর ঘুমা।”

” এখন খাবো না মা। সন্ধ্যায় উঠে খাবো। যাও তুমি। ”

তখন সন্ধ্যায় উঠে খাওয়ার কথা বললেও সারাদিনে উঠলো না আর প্রাচুর্য। সবাই এসে ডেকে গেলেও বিভিন্ন বাহানায় তাড়িয়ে দিলো। তবুও দরজা খুললো না। বিষয়টা আর কারোর খটকা না লাগলেও তাফসির আর শাহানা আরার খটকা লেগেছে ঠিকই কারন মেয়ে এসে আজকে ডাকলো না তাকে আবার এখন খেলোও না দরজাও খুললো না। কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার বিভিন্ন চিন্তা করে ভুলে গেলেন সব।

——————

রাত তখন ২ টা বেজে ৪৫ মিনিট। চৌধুরী বাড়ি নিস্তব্ধ। গভীর ঘুমে সবাই। তাফসির ল্যাপটপ বন্ধ করে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দারালো। উদ্দেশ্য বেলকনিতে যেয়ে কিছুক্ষন বসে তারপর ঘুমিয়ে পরা। বাংলাদেশে এসেও শান্তি নেই তার। ল্যাপটপের মাধ্যমে অফিসের কিছু কাজ সারতে হচ্ছে। এতোদিনের পেন্ডিং মেইল গুলো চেক করছিলো সে। যদিও আপাতত ছুটিতে আছে তবুও এখন ফ্রি আছে যখন কাজ এগিয়ে রাখা ভালো।
সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো বেলকনির দিকে। স্লাইডিং ডোর খুলে বেলকনিতে পা রাখতেই কারো ফোঁপানির আওয়াজে থমকে দাড়ালো সে।

চলবে

[ আপনারা নাইচ নেক্সট না লিখে একটু সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করলেও তো পারেন। না মানে আপনাদের সুন্দর মন্তব্য দেখলে মন ভালো হয়ে যায় আমার।

কাঁচড়া= এখানে কাঁচড়া বলতে সেসব ছেলেদের বোঝানো হয়েছে যারা রাস্তা ঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে ও বিভিন্ন প্রকার মাদকাসক্ত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here