#আমি_ফাইসা_গেছি(২৪)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
ভোর রাত থেকে হঠাৎ করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে।সেজন্য ভীষণ ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো তোড়ার। যদিও সে কুশানের কোলের মধ্যেই চুপটি করে শুয়ে আছে তবুও তোড়া ঘুমের মধ্যেই কাঁপছিলো।
কুশান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে উঠে ফ্যানের সুইচ টা অফ করে দিলো।আর একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে তোড়াকে আবার কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
ভ্যাপসা গরমের মধ্যে এমন বৃষ্টি সবার মনে একদম প্রশান্তি এনে দিলো।ঝর ঝর করে বৃষ্টি পড়ছে,সে কি ছন্দ? টিনের চালে বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দ শুনতে কার না ভালো লাগে?কুশানের ভীষণ ভালো লাগছিলো।সে তখন আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো তোড়াকে।তবে কুশানের আর ঘুম ধরলো না।তবুও সে তোড়াকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে থাকলো।
কিন্তু তোড়ার এদিকে কোনো খেয়ালই নাই।সে একদম নিশ্চিন্তায় আরামে ঘুম পারছে।
তোড়ার এই আরামের ঘুম ভাঙলো একদম অনেক বেলায়।তবুও সে শুয়েই থাকলো।যেহেতু সে এখন তার বাবার বাড়িতে,সেজন্য কাজের কোনো চাপ নাই,আর সকালে ওঠার ও কোনো তাড়া নেই।একদম সেই অবিবাহিত মেয়ের মতো অনেক বেলা অবদি শুয়ে থাকলো তোড়া।যেমন টা সে আগে করতো।তবে মাঝেমধ্যে তার আম্মু একটু ডিস্টার্ব করতো খাবার খাওয়ার জন্য।তবুও দিনগুলো বেশ উপভোগ করেছে তোড়া।
বাহিরে এখনো বৃষ্টি পড়ছে।মনে হয় না আজ আর বৃষ্টি পড়া বন্ধ হবে?বৃষ্টি পড়া দেখে মনে হচ্ছে এখন বর্ষাকাল চলছে।
হঠাৎ কে যেনো দরজায় কড়া নাড়লো।তোড়ার যেহেতু এখনো পুরোপুরি ঘুম ভাঙেনি সেজন্য কুশান নিজে গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই চামেলি বেগম কুশানকে দেখে বললো, বাবা তুমি?
তোড়া কোথায়?
কুশান তখন বললো আম্মু ও এখনো ওঠেই নি?
চামেলি বেগম সেই কথা শুনে বললো দেখ তো কান্ড? কয় টা বাজে সে খেয়াল কি আছে তার?জামাইকে যে এখন নাস্তা খাওয়াতে হবে সেটাও ভুলে গেছে মেয়েটা।বাবা ওকে একটু ডেকে দাও না?
কুশান সেই কথা শুনে বললো আম্মু থাক না, ঘুমাতে দিন ওকে।নাস্তা ঘরেই দিয়ে যান।ও উঠলে একসাথে খেয়ে নিবো।
–ঠিক আছে বাবা।এই বলে চামেলি বেগম চলে গেলেন।
কিছুক্ষন পর চামেলি বেগম সকালের নাস্তা দিয়ে গেলেন রুমে এসে।পরোটা,সবজি,সিদ্ধ ডিম,এক গ্লাস দুধ আর নুডলস।
তোড়া সেই আগের মতোই শুয়ে আছে হাত পা ছড়িয়ে।চামেলি বেগম মেয়ের শোয়া দেখে মনে মনে হাসতে লাগলেন।আর ভাবতে লাগলেন বিয়ে যে হয়েছে তবুও তার অভ্যাস আর চেঞ্জ হইলো না।এখনো সেই আগের মতোই অভ্যাস আছে তোড়ার।
চামেলি বেগম চলে যাওয়ার সাথে সাথে কুশান তোড়াকে তার কোলের মধ্যে নিয়ে বললো, এই যে ম্যাডাম!কখন উঠবেন?বাহিরে যে কত সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে সে খেয়াল কি আছে?
তোড়া তখন তার ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি তো বৃষ্টির আওয়াজ।আমার না বৃষ্টি ভীষণ ভালো লাগে।আর বৃষ্টির দিনে কিছুতেই বিছানা থেকে উঠতে মন চায় না।
কুশান তখন বললো তা আর বলতে হবে না।নিজের চোখেই তো দেখছি।আজ মনে হয় না কেউ তোমাকে জাগাতে পারবে।
তোড়া এবার ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো আর বিছানায় উঠে বসলো।
কুশান তা দেখে বললো উঠলে কেনো?ঘুমাও।যতক্ষণ মন চায় ঘুমাও।
তোড়া তখন চোখ ডলতে ডলতে বললো,না আর ঘুমাবো না।ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
হঠাৎ তোড়ার টেবিলের দিকে চোখ গেলো।সে তখন কুশানকে বললো,আম্মু নাস্তা দিতে এসেছিলো?
–হ্যাঁ।
–তা ডাকবে না আমাকে?
–তুমি যে শান্তির ঘুম দিয়েছো কিভাবে ডাকি?
তোড়া তখন বললো,নিশ্চয় আম্মু বকাবকি করেছে তাই না?
–না তো।আম্মু আরো বললো ওর যতক্ষন মন চায় ঘুমাক আজ।
তোড়া কুশানের মুখে এই কথা শুনে বললো, জীবনেও বলবে না আম্মু এমন কথা।নিশ্চয় তুমি বলেছো এই কথা।
কুশান তখন বললো তুমি কি এখন শুধু তর্ক করেই যাবে?না আমাকে একটু নাস্তা খাওয়াবে?যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি অপেক্ষা করছি।আমি আর খালি পেটে থাকতে পারছি না।খিদেয় আমার পেট একদম চো চো করছে।
তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো, তুমি খেয়ে নাও।আমার জন্য কেনো বসে আছো?
কুশান তখন বললো আমাদের বাড়িতে তো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দুইজন একসাথে বসে খেতে পারি না।তা আজ যখন তোমাদের বাড়িতে সেই সুযোগ টা পেয়েছি তখন সেটা কেনো হাতছাড়া করবো?দুজন একসাথে বসেই খাবো।কথা না বলে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।
তোড়া সেই কথা শুনে আর দেরি করলো না। এক লাফে বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আর তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিলো।কুশান অনেক আগেই ফ্রেশ হয়েছে।
কুশান এবার তার আম্মুকে কল দিলো।আর জিজ্ঞেস করলো তার আম্মু কি করছে এখন?খেয়েছে কিনা?
কামিনী তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,এখনো খাই নি বাবা।তুই চোখের সামনে না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না।তুই কি করছিস বাবা?খেয়েছিস?
কুশান তার আম্মুকে মিথ্যা কথা বললো যে সে খেয়েছে।তা না হলে এ নিয়ে আবার কামিনী বকাঝকা শুরু করে দিতো।
কামিনী এবার কুশানের আসার কথা জিজ্ঞেস করলো।
কুশান তখন বললো আম্মু আজ তো বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টি পড়া কমে গেলেই সাথে সাথে রওনা দিবো।
–ঠিক আছে বাবা।তাড়াতাড়ি আসিস।তোর মুখ খান আজ দেখি নি মনে হয় কত বছর ধরে দেখি না।
–ঠিক আছে আম্মু।এই বলে কুশান কল কেটে দিলো।তবে কামিনীর কথা শুনে ভীষণ মন খারাপ হলো কুশানের।তার আম্মু যে তাকে না দেখলে ভীষণ কষ্ট পায় তা সে নিজেও ভালো করে জানে।
তোড়া ফ্রেশ হয়ে আসার পর পরই দুইজন একসাথে বসে নাস্তা করে নিলো।তবে কুশান কিন্তু তার হাত দিয়ে কিছু খেলো না আজ।সে আজ পুরো খাবার তোড়ার হাতেই খেলো।
খাওয়াদাওয়া শেষ হলে তোড়া প্লেট বাটি গুলো রান্না ঘরে রেখে আসলো।
এদিকে চামেলি বেগম ওদের জন্য আবার কফি রেডি করছে।তোড়াকে দেখামাত্র চামেলি বেগম বললো,মা কফির মগ দুইটা মনে করে নিয়ে যাস।
তোড়া এদিক ওদিক তাকিয়ে তার দাদীকে দেখতে পেলো না।তখন তোড়া তার আম্মুকে বললো আম্মু দাদীকে দেখছি না যে?
চামেলি বেগম তখন বললো তোর দাদী স্বর্ণাদের বাড়িতে গেছে।
তোড়া তখন কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললো এই বৃষ্টির মধ্যে কেনো গেছে ওখানে?যদি পড়ে যেতো?
চামেলি বেগম তখন তোড়ার হাতে কফির মগ দুইটা দিয়ে বললো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,তাড়াতাড়ি নিয়ে যা। আর তোর দাদী কি শখে গেছে ওই বাড়িতে?আজ ও তোর চাচা চাচীর মনে হয় ঝগড়া লেগেছে। এজন্য গেছে।
এই দুইজন লোক মনে হয় জীবনেও ভালো হবে না।এই বলে তোড়া কফির মগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।রুমে গিয়ে দেখে কুশান ঘরের জানালা খুলে দিয়ে বেডে বসে বৃষ্টি পড়া দেখছে।কারণ তোড়ার রুমের জানালা টা বেডের সাথেই।
তোড়া তখন কুশানের কোলে গিয়ে বসে কুশানের হাতে একটা আর তার নিজের হাতে একটা কফির মগ নিলো।তারপর চুমুক দিতে দিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো বৃষ্টি পড়া।
এমন ঘণঘোর বর্ষায়, কবির সেই মর্মবাণী মনে রেখে স্মৃতির সেই দিনে ফিরে গেলো তোড়ার মন।
তোড়ার কাছে বৃষ্টি যেনো এক আবেগের নাম।
আকাশ কালো করে চারদিক ভাসিয়ে নেয়া ঝমঝম বৃষ্টি তোড়ার খুবই পছন্দের । সেই পিচ্চকাল থেকেই অনেক মজাদার আর স্বপ্নীল স্মৃতি জড়িয়ে থাকার কারণেই হয়ত বৃষ্টির প্রতি তার এতো ভালোলাগা । যখন একেবারেই পিচ্চি ছিলো তোড়া তখন থেকেই বৃষ্টিস্নাত ঘনকালো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে অন্যরকম একটা অনুভূতি হতো তার। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতো ঝড়ো হাওয়ায় ভীষণ জোড়ে দুলতে থাকা গাছগুলোর দিকে ।তোড়ার কাছে মনে হত গাছগুলো যেন মনের আনন্দে নাচছে, আর সেও মনের আনন্দে গাছনৃত্য দেখতে দেখতে হারিয়ে যেতো তার মনের স্বপ্নরাজ্যে । কত আকাশকুসুম কল্পনাই না করতো ঐগুলো দেখতে দেখতে । যদিও মাঝে মাঝে বিদুৎচমকানো কে সে ভীষণ ভয় পেতো।
আজও সেই একই পরিবেশ।
তবে আজকের অনুভূতি টা সম্পূর্ণভাবে আলাদা।
আজ আর বিদুৎ চমকানো দেখে একটুও ভয় লাগছে না তোড়ার।কারণ আজ যে তার কাছে তার মনের মানুষ টিও আছে।
কুশানের কোলের মধ্যে চুপটি করে বসে আসে তোড়া।আর সেই আগেকার মতোই জানালার কাছে বসে বৃষ্টি পড়া দেখছে।বৃষ্টির দিনগুলো তো এমনিতেই ভালো লাগে তার, তারমধ্যে আজ আবার মনের মানুষ কাছে আছে।
এ যে এক অন্যরকম অনুভূতি।যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আকাশে ঘন মেঘ,বাতাসে জলের ছোঁয়া, গাছের পাতায় পাতায় একটা আশ্চর্য তরতাজাভাব, সব মিলিয়ে তোড়া আর কুশানের রোমান্স যেন উপচে পড়ছে আজকের দিনে। এই মৌসুমে আলাদা করে রোমান্টিক পরিবেশ তৈরির জন্য কোনো পরিশ্রমই করতে হয় না।
বাইরে ঘন বৃষ্টি, ঠান্ডা আবহাওয়া আর তোড়া কুশান দুইজনের হাতেই এক কাপ ধূমায়িত পানীয়, অসাধারণ ভালো লাগার একটা মুহুর্ত! হাতে গরমাগরম হট কফির কাপ নিয়ে তোড়া খুলে বসেছে গল্পের ঝাঁপি।কুশানের সাথে ছোটোবেলার নানারকম কথা শেয়ার করছে সে।কুশান নিজেও চুপ নেই।সেও তার কিছু ভালোলাগার স্মৃতির কথা তোড়াকে বলছে।আজকের এই মুহূর্তটা সারাজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে তাদের দুইজনের কাছে।
কফির- ধোঁয়া উড়ছে আর দুইজন প্রেমিক প্রেমিকা একসাথে জড়াজড়ি করে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছেন। বিষয়টি ভাবতেই মন জুড়ানো অনুভূতি আসে।
কিছুক্ষন পর হেনা বেগম আসলো তোড়ার রুমের সামনে।আর তোড়া তোড়া বলে ডাকতে লাগলেন।তোড়া তার দাদীর কন্ঠ শোনামাত্র কুশানের কোল থেকে বের হয়ে গেলো।দরজা খুলেই দেখে তার দাদী তেল মাখানো মুড়ি, সাথে পেঁয়াজ আর মরিচ কাটা, আর সাথে বাদাম চানাচুর দিয়ে একদম মেখে এনেছে।
তোড়া কিছু বলার আগেই দাদী বললো নাতি জামাইকে খেতে দে এগুলো।আর কখন কি খেতে চায় একটু কষ্ট করে বাহিরে এসে তোর মাকে বলে যাস।তোর মা বার বার এভাবে আসতে চায় না।
এই বলেই দাদী চলে যেতে ধরলো।
এদিকে কুশান দাদীর কন্ঠ শুনে নিজেও চলে এলো।আর বললো দাদী রুমে এসো।আগেই যাচ্ছো কেনো?এসো একসাথে বসে গল্প করি।
দাদী তখন হাসতে হাসতে বললো আমি সাথে থাকলে যে তোদের রোমান্স করা হবে না।কাবাবের হাড্ডি হওয়ার শখ নাই ভাই।তোরা এনজয় কর।এই বলে দাদী চলে গেলো।
কুশান তখন বললো দাদী আমাদের বড়ই রোমান্টিক।
কিন্তু তার নাতনী হইছে সম্পূর্ণ আলাদা।খালি ঝগড়া আর তর্ক করে।
রোমান্টিকের র ও বোঝে না।
তোড়া তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো এতো বুঝে লাভ নাই।এই বলে সে মুড়ির বাটিটা নিয়ে আবার জানালার কাছে গিয়ে বসলো।
এখনো বৃষ্টি পড়ছে।তোড়া আর কুশান জানালার পাশে বসে হেনা বেগমের সেই স্পেশাল মুড়ি মাখা খাচ্ছে আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এখনো বৃষ্টি পড়া দেখছে।মাঝেমধ্যে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা তাদের শরীর স্পর্শ করে যাচ্ছে।হঠাৎ তোড়ার খুব ইচ্ছে করতে লাগলো বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা হাত দিয়ে স্পর্শ করতে,আর সেই অনুভূতি টা নিতে।কিন্তু এই ইচ্ছার কথা যে সে কখনোই কাউকে বলতে পারবে না।কারন তাকে যে কেউই বৃষ্টির পানিতে ভিজতে দেবে না।তার যে একটু ভিজলেই জ্বর টা ফ্রি থাকে সবসময়।তোড়া তবুও সাহস করে কুশানকে বলেই ফেললো,কুশান!চলো না আজ একটু বৃষ্টি তে ভিজি?
কুশান তোড়ার কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠে বললো,পাগল হইছো তুমি?বৃষ্টি তে ভেজা আর সাথে সাথে তোমার জ্বর চলে আসা।তখন কি হবে?
তোড়া তখন বললো প্লিজ কুশান।প্লিজ।এটা না আমার অনেক দিনের একটা স্বপ্ন।যে তোমার সাথে আমার বিয়ে হলে প্রথম যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিন দুইজনে আমরা একসাথে ভিজবো।দেখো ভাগ্যের কি পরিহাস!আজকেই বৃষ্টি পড়ছে।সুতরাং এখন আমাদের ভিজতেই হবে।
কুশান অবাক হয়ে বললো,সত্যি তুমি এইরকম কোনো ইচ্ছা করেছিলে?কই আমাকে তো একদিনও বলো নি?
তোড়া তখন বললো কথাটা আমি আমার মনের মধ্যেই রেখেছিলাম।আর এসব কথা আগেই বলা হয় না কাউকে।
কুশান তখন বললো তুমি তাহলে একটা চরম লেভেলের মিথ্যাবাদী মেয়ে।
তোড়া এই কথা শুনে কুশানের কোল থেকে উঠে বসলো।আর বললো,মিথ্যাবাদী মানে?
–হ্যাঁ তুমি একটা মিথ্যাবাদী। এরকম যদি ইচ্ছা তুমি করেই থাকো তাহলে বিয়ের দিনই তো আমাদের বৃষ্টি তে ভেজার কথা।সেদিন রাতেও তো বৃষ্টি হয়েছিলো।
তোড়া তখন বললো,তখন তো তোমার উপর আমার প্রচন্ড রাগ জমে ছিলো।সেদিন তো ইচ্ছা করছিলো তোমাকে নিজের হাতে খুন করে ফেলি।সেদিন কি আর বৃষ্টিতে ভেজার মুডে ছিলাম নাকি?
কুশান সেই কথা শুনে তোড়ার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বললো,
এখন তাহলে কিসের মুডে আছো তোড়া?
–বৃষ্টিতে ভেজার।এই বলেই তোড়া কুশানের হাত ধরে টেনে পিছন দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো বাহিরে।কারন বাড়ির কেউ দেখলে ভীষণ রাগ করবে।তাকে কখনোই বৃষ্টি তে ভিজতে দেবে না।
তোড়া বাহিরে গিয়েই হাত দুটি মেলে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটার অনুভূতি নিতে লাগলো।আজ খুব খুব খুব বেশি ভালো লাগছে তোড়ার।প্রিয় মানুষ টির সাথে সময় কাটানো যে কত টা আনন্দের যারা এরকম দিন উপভোগ করেছে তারাই বুঝবে এর মর্ম।
তোড়া এবং কুশান দুইজনই ভিজে একাকার।তোড়া বৃষ্টির ফোঁটার সাথে খেলা করছে আর কুশান শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে তোড়ার দিকে ।তোড়ার এইরকম রুপ টা সে আগে কখনো দেখেনি।একদম ছোটো বাচ্চাদের মতো বৃষ্টি উপভোগ করছে তোড়া।আজ আবার নতুন করে তোড়ার প্রেমে পড়ে গেলো কুশান।ভেজা চুলে তোড়াকে অনেক বেশি সুন্দর আর আকর্ষণীয় লাগছিলো।প্রকৃতির সাথে যেনো মিশে যাচ্ছে তার এই সৌন্দর্য। কুশান তোড়ার দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হরিনী ডাগর কালো চোখ দুটি যেনো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করছে।এ ভালোবাসা যেনো শেষ হবার নয়।
হঠাৎ কুশান এসে জড়িয়ে ধরলো তোড়াকে।তারপর তাকে এক ঝাটকায় কোলে তুলে নিলো।আর ঘরের দিকে এগোতে লাগলো।
তোড়া তা দেখে বললো,এই? আরেকটু থাকি না?বৃষ্টি তে ভিজতে তো ভালোই লাগছিলো।
কুশান তখন তোড়ার চোখে চোখ রেখে বললো হাজব্যান্ডের চোখ দেখে যদি তার স্ত্রী বুঝতেই না পারে সে এখন কি চায় তাহলে সে কখনো উত্তম স্ত্রী হতেই পারে না।
তোড়া কুশানের কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে
বললো,কুশান এখন কিন্তু ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে আগে।তুমি না বলো ভেজা পোশাকে আমি অসুস্থ হয়ে যাবো?
–সেই জন্যই তো কোলে ওঠালাম।তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে তোমার।আর তুমি চেঞ্জ করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।আমি করে দিলে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
এই বলে কুশান তোড়াকে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে গেলো।
আর তোড়া লজ্জায় কুশানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
এমন রোমাঞ্চকর মুহুর্ত কে না চায়?এই রকম মুহুর্ত সবাই ধরে রাখতে চায় সারাজীবন।এমন সৌভাগ্য কিন্তু সবার হয় না।ভাগ্যগুনে দু একজনের কপালে এরকম সুখ লেখা থাকে।
আজ পুরো পৃথিবী যেনো থেমে আছে তোড়া কুশানের এরকম ভালোবাসার কাছে।কারন একজনের প্রতি আরেকজনের ভালোবাসা যে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।তাদের জীবন এখন একই সুঁতোয় বাঁধা।এই ভালোবাসা আর হারিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনায় নাই।
বৃষ্টির সঙ্গে তোড়া আর কুশানের রোমান্স তো হচ্ছেই আরো যে ব্যাপারটা জুড়ে রয়েছে, তা হল খাওয়া-দাওয়া।সেটাও কিন্তু থেমে নেই।তোড়া আর কুশান তো একদম পুরোদমে উপভোগ করছে আজকের এই বৃষ্টির দিন টা।অন্যদিকে বৃষ্টির দিনে যে খিচুড়ি ছাড়া চলে না তা চামেলি বেগম ভালো করেই জানে।তিনি বৃষ্টির সঙ্গে মিল রেখে খিচুড়ি রান্না শুরু করে দিলেন।সঙ্গে মাংসের ভুনা,ইলিশ মাছ ভাজা,বেগুন ভাজা আর শুটকি মাছ ভর্তাও করছেন।
দুপুর পার হয়ে যাচ্ছে।কুশান আর তোড়া রোমান্টিক সময় পার করে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেরাও জানে না।
অন্যদিকে চামেলি বেগম দুপুরের খাবার রেডি করে
তোড়া আর কুশানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে স্বর্নাদের বাড়ি চলে গেলো।তিনি আর ডাক দিলেন না তোড়াকে।বার বার ডাক দিলে যদি মেয়ে আর মেয়ের জামাই বিরক্ত হয়ে যায় এজন্য।অন্যদিকে গোলাপ সাহেব এখনো ফেরে নি বাসায়।হেনা বেগম তো আবার স্বর্নাদের বাড়ি চলে গেছে।
বৃষ্টি এখনো পড়ছে।বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ ই নেই।
হঠাৎ কে যেনো আবার দরজা ধাক্কাতে লাগলো।বৃষ্টি পড়ার ঝুপঝাপ শব্দের সাথে দরজা ধাক্কানোর শব্দটা বেশ বিরক্তিকর ঠেকছে তোড়ার কাছে।কারন কুশান আর তোড়া যে এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
তোড়া দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে ধীরে ধীরে কুশানের কোল থেকে বের হয়ে আসলো।এদিকে এখনো কেউ একজন দরজা ধাক্কাতেই আছে। অনেকক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে তোড়া অতিষ্ঠ হয়ে চিৎকার করে বললো,
যাচ্ছি বাবা।দরজার কাছে তো যেতে হবে?
তোড়া চিৎকার করে বলার পর দরজা ধাক্কানোর শব্দ থেমে গেলো।
তোড়া দরজা খুলতেই দেখে একদল মহিলা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।এদিকে তোড়ার চোখ থেকে এখনো ঘুম চলে যায় নি।
তোড়া যদিও তাদের দেখে নি কোনো দিন?তবুও সকল মহিলাদের দেখে বললো, ভালো আছেন সবাই?
–হ্যাঁ মা ভালো আছি।আমাদের কে চিনছো মা?
তোড়া তখন বললো না।
তখন মহিলাগুলো বললো,আমরা তোমাদের গ্রামেরই।তোমার আম্মু আর দাদী আমাদের ভালো করেই চেনে।বৃষ্টির দিনে কোনো কাজকর্ম নাই বিধায় ভাবলাম একটু ঘুরে আসি।
শুনলাম তুমি এসেছো এজন্য দেখতে আসলাম তোমাকে আর তোমার জামাই কে।
তোড়া তখন বললো উনি তো ঘুমাচ্ছে।
–একটু ডেকে দাও না।দেখে যাই একটু।আর কবে আসবে না আসবে?আমরাও তেমন একটা সময় পাই না।
তোড়া সেই কথা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগলো কেমন মহিলা এরা?ঘুমাচ্ছে শুনেও ডাকতে বলছে।
তোড়া তো এখন পড়ে গেলো মহা বিপদের মধ্যে।তার আম্মু বা দাদী থাকলে হয়তো পড়ে আসতে বলতো।কিন্তু সে কিছু বলতে পারলো না।সে বরং মহিলা গুলোকে বললো,আচ্ছা,আপনারা একটু বসেন।আমি ডেকে দিচ্ছি ওকে।এই বলে তোড়া কুশানকে ডাকতে গেলো।
কিন্তু কুশানকে ডাক দিতে ভীষণ মায়া লাগলো তোড়ার।কারণ কুশান একদম মনের শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।
তবুও এক প্রকার বাধ্য হয়েই ডাক দিতে হলো তাকে।কারণ এই মহিলারা কুশান কে না দেখা পর্যন্ত যাবেও না।
তোড়া কুশানের গা ধরে টেলা দিতে দিতে বললো, কুশান?একটু উঠবে?
কুশানের কোনো সাড়াশব্দই নাই।
তোড়া আবার ডাক দিলো, এই কুশান?একটু উঠবে?
চলবে,
আমি ভীষণ অসুস্থ যার কারণে গল্প টা ঠিক সময়ে দিতে পারছি না।তবুও কষ্ট করে লিখলাম এইটুকু।#আমি_ফাইসা_গেছি(২৫)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
ঘুমন্ত কুশানকে একদম টেনে এনেই মহিলাগুলোর সামনে দাঁড় করালো তোড়া।কিন্তু কুশান কিছুতেই চোখ মেলে তাকাতে পারছিলো না।তার এতো বেশি ঘুম ধরেছে যে চোখ বন্ধ করেই সবাইকে সালাম দিলো সে।
মহিলাগুলো তখন হাসতে হাসতে বললো, বাবা এবার একটু চোখ খোলো।আমরা তোমার দূর সম্পর্কের শাশুড়ী হই।তোমার সাথে পরিচিত হতে আসলাম।
কুশান সেই কথা শুনে চোখ ডলতে ডলতে বললো,জ্বি।ঘরের ভিতর এসে বসুন আপনারা।
জামিলা বেগম সেই কথা শুনে বললো, না বাবা থাক।শুধু এক নজর দেখতে এসেছিলাম তোমাকে।যাও বাবা তুমি এখন ঘুমাও গিয়ে।তোমার ঘুমটা নষ্ট করার জন্য দুঃখিত।
–না,না সমস্যা নেই।আপনারা বসুন না?
তখন জামিলা বেগম বললো,হ্যাঁ বাবা বসছি আমরা।আমরা তোড়ার সাথে কথা বলছি এখন।আরেকদিন ভালোভাবে কথা বলবো তোমার সাথে।যাও তুমি এখন।
কুশান মনে মনে ভাবলো এতো করে যখন বলছে তাহলে যাওয়াই যাক রুমে।এই ভেবে কুশান রুমে চলে গেলো।আর আবার গিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়।কারণ তার আজ কেনো জানি ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
আজ কুশান সেই সকাল বেলা উঠেছে ।অন্যদিকে আজকের আবহাওয়া টাও ঘুমানোর জন্য একদম পারফেক্ট।বৃষ্টি পড়ার কারণে শীতকালের মতো ফিলিংস আসছে তার।ইচ্ছে করছে একটা কম্বল গায়ে মাথায় জড়িয়ে শান্তির একটা ঘুম দিতে।তোড়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালেও অবশ্য মন্দ হতো না।কিন্তু এখন তো তাকে ডাকা যাবে না।যেহেতু মহিলাগুলো গল্প করছে তোড়ার সাথে।
এদিকে তোড়া এই মহিলার ব্যাপারস্যাপার কিছুই বুঝতে পারছে না।যাকে সে চেনেই না, দেখেই নি কোনোদিন।অথচ এমন ভাবে কথা বলছে মনে হয় কত দিনের চেনা পরিচিত তিনি।আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই মহিলা টি শুধুমাত্র এইভাবে এক নজর দেখার জন্যই কুশানকে ঘুম থেকে তুলতে বললো?
কুশান রুমে চলে যাওয়ার পর মহিলাগুলো এবার তোড়ার সাথে গল্প করতে লাগলো।বিশেষ করে জামিলা বেগম একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো তোড়াকে।
তার কোথায় বিয়ে হয়েছে?হাজব্যান্ড কি করে?শশুড় শাশুড়ী কেমন এসব জিজ্ঞেস করতে লাগলো।তোড়াও কোনো কিছু নিজের থেকে জিজ্ঞেস না করে জামিলা বেগমের প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো।
হঠাৎ হেনা বেগম আর চামেলি বেগম বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে বললো,
কে এসেছে রে তোড়া?স্বর্ণার আম্মু বললো অনেকগুলো মহিলাকে ঢুকতে দেখলেন তিনি বাড়ির ভিতর?
তোড়া তার মায়ের কন্ঠ শোনামাত্র দৌঁড়ে গেলো গেটের সামনে আর বললো,আম্মু দেখো তো রুমে গিয়ে, চেনো নাকি মহিলাগুলোকে।আমি তো কোনো দিনই দেখি নি।তারা কোনো পরিচয় দিচ্ছে না,শুধু বলছে তোমার আম্মু চেনে আমাদের। তুমি চিনবে না আমাদের।
চামেলি বেগম তোড়ার কথা শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে রুমের ভিতর চলে গেলো।
চামেলি বেগম মহিলাগুলোকে দেখার সাথে সাথে চিনে ফেললো।আর হেসে হেসে তোড়াকে বললো,মা এনারা সবাই তোর আন্টি হয়।আর জামিলাকে দেখিয়ে বললো ইনি হলেন তোর জামিলা আন্টি, যার কাছে আমি কাপড় কাটিং আর সেলাই শিখছি।
তোড়া সেই কথা শোনার সাথে সাথে বিস্ময়ভরা মুখ নিয়ে বললো,
আসসালামু আলাইকুম আন্টি।সরি আমি আপনাকে চিনতে পারি নি আন্টি।আপনিও তো নিজের থেকে কিছু বলেন নি?আম্মুর মুখে আপনার অনেক প্রশংসা শুনেছি।তা আন্টি আপনি ভালো আছেন?
জামিলা বেগম সেই কথা শুনে বললো হ্যাঁ মা ভালো আছি।ভাবি তো আর দাওয়াত দেয় নি আমাদের,একা একা মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।সেজন্য নিজেই দেখতে আসলাম জামাইকে।
চামেলি বেগম সেই কথা শুনে বললো বিশ্বাস করেন ভাবি হঠাৎ করেই বিয়েটা হয়েছে।দেখতে এসে সেদিনই বিয়ে।এজন্য কাউকে বলতে পারি নি।আর অনুষ্ঠান তো এখনো করা হয় নি।আমার জামাই বাবার নানা শশুড় হজ্জে গিয়েছেন।উনি ফিরলেই ধুমধামে অনুষ্ঠান করবে।
জামিলা বেগম সেই কথা শুনে বললো ভাবি এমনি ইয়ার্কি করলাম একটু।আসলে আপনাদের গ্রামের কিছু স্টুডেন্ট কিছুদিন যাবত যাচ্ছে না ক্লাসে আর টাকা পয়সাও দিচ্ছে না।সেই খোঁজখবর নিতে এসেছিলাম।তা ভাবলাম আপনার সাথে একটু দেখা করে যাই।তখন কিছু মহিলা বললো আপনার মেয়েটার নাকি বিয়ে হয়েছে। আর জামাই ও এসেছে। এজন্য দেখতে আসলাম।তাছাড়া তোড়াকেও তো এই ফাস্ট দেখলাম।ওর শুধু নামই শুনেছি।এজন্য দেখার ভীষণ ইচ্ছা হচ্ছিলো।
চামেলি বেগম তখন বললো আপনি কোনদিন ফ্রি থাকবেন বলেন সেই দিন আপনাকে সাথে করে নিয়ে তোড়ার শশুড় বাড়িতে যাবো।
জামিলা বেগম সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো আমার কি আর সময় আছে ভাবি?একা হাতে সবকিছু সামলায় বোঝেনই তো?আপনি যে বললেন এটাই অনেক।দোয়া করি আপনার মেয়েটা তার স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাক।এই বলে জামিলা তোড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
জামিলা বেগম তার নিজের বাড়িতেই একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।সেখানে তিনি কাপড় কাটিং আর সেলাই শেখান গ্রামের মহিলাদের।চামেলি বেগম ও ওনার কাছেই সেলাই শেখেন।সেই সুবাদে ভালোই সম্পর্ক দুইজনের মধ্যে।জামিলা বেগমের স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে।দুইজনের মধ্যে বনিবনা ছিলো না যার কারণে একটা মেয়ে হওয়ার পর পরই সম্পর্কের ইতি টানতে হয়েছে তাকে।তার স্বামী অন্য জায়গায় বিয়ে করলেও জামিলা বেগম এখনো বিয়ে করেন নি।একমাত্র মেয়েকে বুকে আগলিয়ে বেঁচে আছেন।জামিলা বেগমের একটাই মেয়ে।যার নাম জারা।বিয়েও দিয়েছেন মেয়ের।তবে জামাই বেশি একটা সুবিধার না।দিন রাত নাকি নেশা খেয়ে বেড়ায় আর রাত দিন জারাকে অপমান করে কথাবার্তা বলে।
জামিলি বেগমের বাবা মার তেমন একটা অর্থ সম্পদ ছিলো না।যার কারণে ডিভোর্সের পর বাপের বাড়িতেও তার ঠাঁই হয় নি।তিনি এখন যে বাড়িতে আছেন সেটা তার নানার বাড়ি ছিলো।একমাত্র মেয়ে জারাকে নিয়ে নানার বাড়িতে আসার পর তিনি প্রথমে দর্জির কাজ শুরু করেন।পরে ধীরে ধীরে একটা প্রতিষ্ঠান ই গড়ে তোলেন।যেখানে তিনি দর্জির কাজের পাশাপাশি গ্রামের মহিলাদের সেলাই এর কাজ শেখান।এখন মোটামুটি তিনি বেশ স্বচ্ছল। তবে মেয়েটাকে নিয়ে সারাক্ষন দুশ্চিন্তায় ভোগেন।
🖤
বিকাল চার টা বাজে।কুশান এখন পর্যন্ত ঘুম থেকে ওঠে নি।তোড়া বুঝতে পারছে না কিছু।আজ কুশান এতো ঘুমাচ্ছে কেনো?পরে আবার ভাবলো বৃষ্টির দিন দেখে বুঝি এরকম ঘুমাচ্ছে।এদিকে বৃষ্টির দিন বলে চামেলি বেগম শখ করে জামাই এর জন্য যে ভুনা খিচুড়ি রান্না করেছেন তা এখন পর্যন্ত খায় নি কুশান।কুশান উঠছে না দেখে তোড়াও খায় নি।
এদিকে চামেলি বেগম আর হেনা বেগম আবার জামাই এর জন্য নারিকেল দিয়ে পিঠা বানাচ্ছে।তোড়া তা দেখে নিজেও পিঠা বানাতে বসলো।আগে রান্নাবান্নার নাম শুনলেই তার বিরক্ত লাগতো আর এখন রান্নার কথা শুনলে সে বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখে রান্না টা।কারণ তাকে যে এখন নিজেকেও রান্না করতে হয়।একটা নতুন পদ শিখলে সেটা শশুড় বাড়িতে গিয়ে সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে পারবে।এই বার বাড়ি এসে তোড়া তার মায়ের কাছে অনেক কিছুই শিখেছে।সে কিন্তু ইউটিউব এ সারাক্ষণ রান্নাবান্নার ভিডিও দেখে এখন,আগে শুধু মুভি,নাটক,বিভিন্ন সিরিজ দেখে সময় পার করলেও,এখন ওসবে তার তেমন একটা আগ্রহ নেই।
হঠাৎ হেনা বেগম বললো কুশান এখনো ওঠে নি?দেখতো ভালো করে ছেলেটার আবার শরীর খারাপ করলো নাকি?আজ এতো ঘুমাচ্ছে কেনো?
তোড়া তার দাদীর কথা শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে আবার ঘরে চলে গেলো।কারণ কুশান তো আজ তার সাথে বৃষ্টি তে ভিজেছে।যদি সত্যি সত্যি তার জ্বর আসে?
তোড়া কুশানের গায়ে হাত দিতেই বিদুৎ এর শক এর মতো একটা ঝটকা খেলো।কারণ কুশানের পুরো শরীর একদম জ্বরে পুরে যাচ্ছে।তোড়া তখন কুশানের পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
এই কুশান?এই?তোমার গায়ে তো প্রচন্ড জ্বর।
কুশানের কোনো সাড়াশব্দ নেই।সে তোড়াকে জড়িয়ে ধরা দেখে আরো বেশি ডুবে গেলো তার মাঝে।কারণ তার এতে বেশ আরাম লাগছিলো।জ্বর আসার কারণে কুশান ভীষণ ঠান্ডা অনুভব করছিলো,সেজন্য তোড়ার উষ্ণ শরীর পেয়ে আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরলো সে।
তোড়া তখন নিজেও কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকলো কুশানকে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর কামিনী কল দিলো কুশানকে।কুশান কেনো এখনো আসছে না বাড়িতে এই টেনশনে কামিনী আবার শেষ হয়ে যাচ্ছেন।
তোড়া তখন ফোন টা হাতে নিয়ে কুশানকে বললো,
এই কুশান?কথা বলো আম্মুর সাথে।আম্মু কল দিয়েছে।
কুশানের শরীর ভালো না থাকায় তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।সেজন্য সে তোড়াকে বললো,তুমি একটু কথা বলো।
তোড়া সেই কথা শুনে কল টা রিসিভ করলে কামিনী বললো,তুমি ধরেছো কেনো?কুশান কই?
তোড়া কামিনীর এমন কথা শুনে কুশানের হাতে ফোন টা দিয়ে বললো,
আম্মু তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে কুশান।
কুশান সেই কথা শুনে ফোন টা কানে নিয়ে বললো,হ্যালো আম্মু।
কুশান হ্যালো বলতেই কামিনী সাথে সাথে বললো,
বাবা কুশান!তোর কন্ঠ এরকম শোনা যাচ্ছে কেনো বাবা?
কুশান তখন বললো আম্মু আমি একটু ঘুমাইছিলাম।এজন্য এমন শোনা যাচ্ছে।
কামিনী সেই কথা শুনে বললো এখন কয় টা বাজে বাবা?এটা কি ঘুমানোর সময়?বাবা তোর শরীর কি ঠিক আছে?
–হ্যাঁ আম্মু ঠিক আছে।তুমি অযথা চিন্তা করো না তো?
কামিনী তখন বললো তুই চোখের সামনে না থাকলেই আমার এমন দুশ্চিন্তা হয় বাবা।তা আসবি কখন বাবা?বৃষ্টি তো থেমে গেছে এখন।
কুশান তখন বললো আম্মু এখানে তো এখনো বৃষ্টি পড়ছে।এই বৃষ্টির মধ্যে কি করে যাবো?
–কি বলিস কি?এখনো বৃষ্টি পড়ছে?তাহলে থাক আজ আর আসার দরকার নাই।তবে কাল কিন্তু সকাল বেলা রওনা দিবি।
–আচ্ছা আম্মু।এই বলে কুশান রেখে দিলো কলটা।
এদিকে তোড়া অনেক আগেই বিছানা থেকে উঠে গেছে।কুশানের জ্বর দেখে সে তার ফোন টা হাতে নিয়ে গোলাপ সাহেব কে কল করে বললো বাবা তোমার জামাই এর ভীষণ জ্বর এসেছে।তাড়াতাড়ি একটু ঔষধ পাঠিয়ে দাও।
গোলাপ সাহেব শোনামাত্র বললো, আচ্ছা মা ঠিক আছে।গোলাপ সাহেব এবার সায়ক কে কল করে জানালো।আর তাকে বললো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে একটু ঔষধ নিয়ে যা সায়ক।আমাদের জামাই বাবাজির নাকি প্রচন্ড জ্বর এসেছে।
সায়ক তা শুনে মনে মনে বললো,ঠেকা পরেছে আমার, ওর জন্য আমি ঔষধ নিয়ে যাবো?যাকে আমি দুচোখে দেখতেই পারি না।শালা বলদ একটা।কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।
–কি রে কথা বলছিস না কেনো?
সায়ক তখন বললো চাচা আমি তো বাহিরে আছি।এখন কিভাবে ঔষধ নিয়ে যাবো।
গোলাপ সাহেব সায়কের কথা শুনে দোকান বন্ধ করে নিজে গিয়ে কুশানের জন্য ঔষধ নিলো আর বাসায় চলে গেলো।
🖤
এদিকে জ্বরের কারণে কুশান ভুল বকাবকি শুরু করে দিলো।তার চোখ একদম লাল হয়ে গেছে।তোড়া কুশানের মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলো।তার পাশাপাশি কুশানের সারা গা মুছে দিলো।
প্রথমে একটি হাত মুছলো, এরপর আরেকটি হাত, এরপর একটি পা ও তারপর আরেকটি পা।এইভাবে পুরো শরীর মুছলে জ্বরের মাত্রা অনেক টা কমে যায়।
কিন্তু কুশানের কিছুতেই জ্বরের মাত্রা কমছে না।
তোড়ার এবার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।শুধু তোড়া না বাড়ির সবাই ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।
চামেলি বেগম এবার তোড়াকে ডেকে বললো, কি রে জামাই আবার বৃষ্টিতে ভিজেছে নাকি?এভাবে হঠাৎ করে তার এতো জ্বর আসলো কেনো?
তোড়া তার আম্মুর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই হেনা বেগম বললো,
নাতি জামাই তো ঘর থেকেই বের হয় নি।বৃষ্টি তে ভিজলো কখন?
চামেলি বেগম সেই কথা শুনে বললো বৃষ্টি তে না ভিজলে বা ঠান্ডা না লাগলে হঠাৎ তো এভাবে জ্বর আসার কথা নয়।আর আমার তোড়াকে বিশ্বাস হয় না।ও নিশ্চয় চুপি চুপি জামাইকে নিয়ে বৃষ্টি তে ভিজেছে।
হেনা বেগম সেই কথা শুনে বললো তোমার শুধু আজাইরে কথা।ওরা বৃষ্টি তে ভিজলে আমরা দেখতাম না।তাছাড়া তোমার মেয়ের তো জ্বর আসে নি।ওর জ্বর আসলে বিশ্বাস করতাম।কারণ তোড়ার তো নরমাল পানি একটু বেশি ধরলেই সর্দি লাগে,আর জ্বরও আসে।
হেনা বেগম চামেলি বেগমের সাথে তর্ক করতেই তোড়া হঠাৎ একটা হাঁচি দিলো।
তা দেখে দুইজনই হা করে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে।
তোড়া তখন বললো ওভাবে কি দেখছো আমার দিকে?আজ বৃষ্টির দিন না? সেজন্য হাঁচি পড়ছে।আমি কিন্তু বৃষ্টি তে ভিজি নি।শুধু শুধু সন্দেহ করবা না আমাকে।
চামেলি বেগম তখন তোড়ার কপালে হাত দিয়ে বললো আম্মা দেখো ভালো করে।এর ও তো শরীর গরম।আমার ধারণাই ঠিক।এরা দুইজনই বৃষ্টি তে ভিজেছে।
হেনা বেগম তখন নিজেও তোড়ার কপালে হাত রাখলো।আর বললো, এই তোড়া?তোর ও তো জ্বর এসেছে।তুই নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু কুশানের চিন্তা করছিস?কুশানকে ঔষধ খাওয়ালি শুধু তুই তো খাইলি না?
তোড়া তখন বললো আমার চিন্তা বাদ দাও দাদী।আমার যা হবার হবে।আজ রাতের মধ্যে কেমনে কুশানের জ্বর ভালো হবে সেই চিন্তা করো। কুশানের জ্বর যদি কালকেও ভালো না হয় তাহলে সে বাড়ি যাবে কেমন করে?আর কাল বাড়ি না গেলে কামিনী তো একদম রেগে আগুন হয়ে যাবে।আমি তো সেই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি।
চামেলি বেগম সেই কথা শুনে বললো তাই বলে তুই নিজের যত্ন নিবি না?আম্মা ওরেও ঔষধ খাইয়ে দেন।তা না হলে কিন্তু খাবে না ও।
হেনা বেগম সেই কথা শুনে তোড়াকেও ঔষধ খাইয়ে দিলো।তারপর তোড়াকেও শুয়ে থাকতে বললো কুশানের সাথে।তোড়ার এখনো বেশি একটা জ্বর আসে নি।কেবল জ্বরের লক্ষন দেখা দিয়েছে।সেজন্য তোড়া নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে সারারাত কুশানের খেয়াল রেখেছে।টেনশনে সারারাত তোড়া দু চোখের পাতা এক করতে পারলো না।সে যে নিজেও অসুস্থ সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।কুশানের টেনশনে সে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
🖤
পরের দিন সকাল বেলা কিছুটা সুস্থ হলো কুশান।কাল সারাদিন ঘুমানোর ফলে আজ সকালেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে তার।কিন্তু আজ আবার তোড়ার জ্বর টা বেড়েছে।আর অনবরত হাঁচি পড়ছে তার।কুশান তোড়াকে হাঁচি দিতে দেখে বললো,
আরো বেশি করে ভেজো বৃষ্টি তে।নিজেও মরলে আর আমাকেও মারলে।
তোড়া কুশানের কথা শুনে চোখ বন্ধ করেই হাসতে লাগলো।কুশান তখন তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমার হাসি পাচ্ছে তোড়া?আমার কিন্তু রাগ উঠতেছে।এখন আজ এই অবস্থায় তোমাকে নিয়ে বাড়ি যাবো কেমন করে?
তোড়া তখন বললো তুমি না হয় একাই যাও কুশান।পরে আমি যাবো।
কুশান তখন বললো, তোমাকে এই অবস্থায় রেখে একা একা বাড়ি গিয়ে সারাদিন টেনশনে থাকতে চাই না আমি।তাছাড়া আমার শরীর এখনো সুস্থ হয় নি।আম্মু আমার চেহারা দেখেই বুঝে ফেলবে আমি অসুস্থ।তারচেয়ে বরং আম্মুকে আজ অন্য আরেকটা অজুহাত দেখায়।
তোড়া তখন বললো আজ আবার কি বলবে?
–সেটাই তো ভাবতেছি।আজ কি বলা যায় বলো তো?
তোড়া আর কুশান দুইজনই ভাবতে লাগলো।অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিলো তারা আজ কামিনী কে বলবে যে হঠাৎ করে তোড়ার দাদী অসুস্থ হওয়াই আজ আর তাদের যাওয়া হলো না।
🖤
কাল তোড়া কুশানের সেবা করেছে।আর আজ কুশান করছে তোড়ার সেবা।বৃষ্টি তে ভিজে দুইজনই একসাথে অসুস্থ হওয়াই তারা হা হা করে হাসছে।
চামেলি বেগম ঘরের মধ্যে সকালের নাস্তা দিয়ে গেলো।আর কুশান তোড়াকে নাস্তা খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো।
কিছুক্ষন পর স্বর্নার কন্ঠ শুনতে পেলো তোড়া আর কুশান।স্বর্না কলেজ যাবে।এজন্য রেডি হয়ে তোড়া আর কুশানের সাথে দেখা করতে এসেছে।
স্বর্নার কন্ঠ শোনামাত্র তোড়া বললো,
আয় ভিতরে আয়।
স্বর্না যখন দেখলো কুশানই সুস্থ আর তোড়াকেই অসুস্থর মতো দেখা যাচ্ছে তখন সে বললো ব্যাপার কি?সবকিছু এমন উল্টাপাল্টা দেখা যাচ্ছে কেনো?
তোড়া তা শুনে বললো,কিসের উল্টাপাল্টা?
স্বর্না তখন হাসতে হাসতে বললো,শুনলাম আমাদের দুলাভাই অসুস্থ।এখন দেখি আপু নিজেই অসুস্থ।
কুশান তখন বললো, ঠিকই শুনেছো আর এখন যেটা দেখছো সেটাও ঠিক।কাল আমি অসুস্থ ছিলাম আর আজ তোমার বোন আমার সেবা করতে করতে আজ উনি অসুস্থ হয়ে গেছে।
স্বর্ণা কুশানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,আহারে!এ তো দেখি একদম টুরু লাভ!তোমাদের কি কপাল!একসাথে অসুস্থ হয়ে গেছো।
তোড়া সেই কথা শুনে স্বর্ণাকে মারার জন্য হাত তুললো আর বললো অসুখে মরে যাচ্ছি আমরা,আর তুই বলছিস কপাল ভালো আমাদের।
–হ্যাঁ কপালই তো।
হঠাৎ বাহির থেকে সায়ক চিৎকার করে ডাকতে লাগলো স্বর্ণাকে।
স্বর্ণা!দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।তাড়াতাড়ি বের হ রুম থেকে।
সায়কের তাড়া পেয়ে স্বর্ণা বললো এ আপু আমি আসছি।কলেজে যেতে লেট হচ্ছে।এই বলেই স্বর্ণা দ্রুত ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
স্বর্ণাকে দেখামাত্র সায়ক বললো,
জানিসই তো,তোর রেডি হতে সময় লাগে, তাহলে সকাল পাঁচটা থেকে রেডি হতে পারিস না? নিজেও লেট করিস। আমাকেও লেট করাস?
এই বলে সায়ক তার হোন্ডাতে বসলো।
স্বর্না তখন নিজেও হোন্ডার পিছনের ছিটে বসলো আর বললো,আমি তো অনেক আগেই রেডি হয়েছি।তোড়া আপু অসুস্থ এজন্য একটু দেখতে গিয়েছিলাম।
–তোড়া অসুস্থ?আমি না শুনলাম ওই বলদ টা অসুস্থ?
–বলদ?তুই দুলাভাইকে বলদ বললি ভাইয়া?
–তাছাড়া আর কি।এই বলেই সায়ক হোন্ডা স্টার্ট দিলো।
স্বর্ণা তখন চিল্লায়ে বললো, ভাইয়া আগেই না।আমাকে ভালোভাবে বসতে দে।
স্বর্ণার চিল্লানি শুনে সায়ক বললো তাড়াতাড়ি কর না?কয়টা বাজে দেখেছিস?
ঠিক সেই সময়ে কুশানও আসলো সেখানে।সায়ক কুশানকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকলো।কিন্তু স্বর্ণা বললো,দুলাভাই বের হলেন যে?কোথাও যাবেন নাকি?
কুশান স্বর্ণার কথা শুনে বললো, একটু ঔষধের দোকানে যাবো।তোড়ার জন্য আরো কিছু ঔষধ আনতে হবে।
সায়ক কথা না বললেও কুশান সায়ককে দেখে বললো, ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
সায়ক কুশানকে কথা বলা দেখে ওর দিকে একবার তাকালো।কিন্তু কিছু বললো না।
স্বর্ণা তখন সায়ককে বললো,কি হলো ভাইয়া?কথা বলছিস না কেনো?
সায়ক কোনো উত্তর না দিয়ে হোন্ডা স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।এদিকে স্বর্ণা পিছন দিক থেকে হাত নেড়ে নেড়ে বললো গুড বাই দুলাভাই।
কুশান নিজেও হাত নাড়লো।
কুশান ফার্মেসী তে যেতেই কামিনী আবার কল দিলো।কুশান ভালো করেই জানে তার আম্মু কি জন্য কল দিয়েছে সেজন্য সে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো কিভাবে মিথ্যা কথা টা বলবে।
কিন্তু কুশান রিসিভ করতেই দেখে তার বাবার কন্ঠ।তার বাবা কুশানকে বললো, বাবা তোর আম্মু হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি বাসায় আয় বাবা।কামিনীর অসুস্থতার কথা শুনে কুশান আর না করলো না।সে যেতে রাজি হয়ে গেলো।কিন্তু কুশান যে পরিকল্পনা করেছিলো হেনা বেগমের অসুস্থতার কথা বলে আজকের দিনটাও থাকবে সেটা আর বলতে পারলো না কুশান।
চলবে,