#আরশি
#Part_22
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার বেশি। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। মাঝে মধ্যে নিস্তব্ধতাকে অতিক্রম করে ভেসে আসছে দুই একটা কুকুরের ডাক। কেমন গা ছমছম পরিবেশ। আমি সাইডে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি। এত রাত অব্দি কখনোই আমার বাইরে থাকা হয়নি। যার জন্য নিজের মধ্যেই কেমন অস্বস্তি কাজ করছে। সাদ বাইক পার্ক করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
— এনি প্রবলেম?
আমি মাথা দুলিয়ে বলি,
— না! তুমি একটু অহনাকে নামিয়ে দিবে। রাত হচ্ছে অনেক বাসায় ফিরতে হবে।
— আমার মত অভাগার বাসস্থানে আপনার চরণ পড়িলে তা বুঝি কলঙ্কিত হয়ে যাবে?
আমি সাদের কথা শুনে গোলগাল চোখে ওর দিকে তাকাই। ওর কথার অর্থ বুঝার চেষ্টা করছি। কিন্তু মস্তিষ্কে থাকা হাজারো চিন্তা-ভাবনার ভীড়ে এই প্রশ্নটা নিজের স্থান গড়ে তুলতে পারলো না। অতি নগণ্য প্রমাণিত হয়ে উত্তরবিহীন এক ফলাফল স্বরূপ বেরিয়ে আসে৷ তাই আমি জিজ্ঞেস করে উঠি,
— মানে?
— মানে আমাকে একটু মেহমানদারি করার সুযোগ দাও। বাসার নিচ পর্যন্ত এসে চলে যাবে তা খারাপ দেখায়। তার উপর তোমার বাসায় রাতের রান্নাটাও করাও নেই তা রাতের খাবারটা খেয়েই না হয় যাও। আই প্রমিস, পরে আমি নিজে গিয়েই তোমাদের দিয়ে আসবো নে।
সাদের কথা শুনে আমার অস্বস্তি ভাবটা দৃঢ় হয়ে আসে। আমি কোন মতে বলি,
— না! না! না! সেসবের দরকার নেই। এইভাবেই অনেক রাত হয়েছে। তাই তুমি প্লিজ অহনাকে নামিয়ে দিয়ে যাও।
কথাটা বলে চুপ হয়ে যাই। আপন ভাবনায় বিভোর হয়ে গেলাম। এত রাতে কোন ছেলের বাসায় যাওয়া কখনোই আমাদের সমাজে ভালো দৃষ্টিতে দেখে না। তার উপর নিজেরই তো বিবেকে বাঁধে। এই রাতে-বিরাতে নির্জন পরিবেশে একটা ছেলেকে এতটা বিশ্বাস করা উচিৎ? বিপদের তো হাত-পা নেই। না চাইতেও মনের মধ্যে অপ্রীতিকর চিন্তা ভাবনাগুলো জাগ্রত হয়ে যায়। হঠাৎ চিন্তা-ভাবনার মাঝে এক অচেনা আওয়াজ কানে এসে বারি খায়৷ সাথে সাথে আমি চমকে যাই। সতর্ক দৃষ্টিতে সামনে তাকাই। দেখি সাদ কল লাউড স্পিকারে রেখে আমার সামনে এসে কথা বলছে। ফোনের অপাশ থেকে বলছে,
— তুই কই?
— বাসার নিচেই। মা আরশি নিচ থেকেই চলে যেতে যাচ্ছে কি করবো?
— ওমা এ কেমন কথা? নিয়ে আয় বাসায়। সারাদিন হাসপাতালে ছিল মেয়েটা। নিশ্চয়ই ওর উপর দিয়ে দখল গিয়েছে। রান্না করা আছেই, দুই মুঠো ভাত খেয়ে যেতে বল৷
— আচ্ছা! অহনা কোথায় মা?
— আমার রুমে ঘুমিয়ে আছে। একটু আগেই ঘুমিয়েছে। তা তুই কিন্তু মেয়েটাকে নিচ থেকে যেতে দিবি না।
— আচ্ছা! আচ্ছা!
এই বলে সাদ ফোট করে ফোনটা কেটে দেয়। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
— মনের সংশয় কি এখনো আছে নাকি দূর হয়েছে? কেউ একজন ঠিকই বলেছে, “মেয়েদের মধ্যে প্যাঁচ বেশি।” ভালোকে তারা খারাপ জানবে আর খারাপকে ভালো।
শেষের কথাটা সাদ একটু ব্যঙ্গ করেই বললো। আমি সাদের কথা শুনে চমকে উঠি। মনে মনে ভাবি, “সে কিভাবে বুঝল আমার মনে কথা?” কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলি,
— তেমন কিছুই না।
— তা কেমন শুনি?
— কিছু না।
— ওয়েল! এখন বাসায় চলো। মা কিন্তু তোমার সামনেই বলেছে তোমায় নিয়ে যেতে। দেখ এখন না গেলে মা কষ্ট পাবে৷ সো আই ইন্সিস্ট চলো।
শেষের কথাটা সাদ অতি নরম কন্ঠেই বললো৷ আমি তখন চেয়েও আর ওকে না বলতে পারলাম না। সেই সাথে মনের সংশয়ও কিছুটা দূর হয়েছিল। তাই রাজি হয়ে যাই।
_____________________
দরজায় কড়া আঘাত করতেই এক মধ্যবয়স্ক মহিলা দরজা খুলে দেন। আমার আর সাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি এক হাসি দেন। আমি সালাম দিতেই সে উৎফুল্ল সুরে তার উত্তর দেন। অতঃপর বিনয়ী সুরে ভিতরে আসার আমন্ত্রণ জানান। আমি ভিতরে ঢুকতেই তিনি আমায় ড্রয়িং রুমে নিয়ে যান। আর সাদ চলে যায় নিজের রুমে। আমায় সোফায় বসিয়ে দিয়ে সে দ্রুত গিয়ে আমার জন্য একগ্লাস পানি নিয়ে আসেন। তা দেখে আমি বলি,
— আন্টি প্লিজ ব্যস্ত হবেন না। আমি ঠিক আছি।
আন্টি আমার হাতে গ্লাসটা ধরিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসেন। অতঃপর বলেন,
— চেহেরা দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতটা ক্লান্ত তুমি। নিশ্চয়ই খিদে পেয়ে তোমার। পানিটা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি খাবার দিচ্ছি৷
আমি কিছু না বলে স্মিত হাসলাম। মহিলাটার ভাষা বেশ শুদ্ধ। পরনে পোশাকও বেশ পরি-পাটি। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। চেহেরায় কঠোর কঠোর এক ভাব আছে। ঠিক যেমন শিক্ষকের চেহেরায় থাকে। কিন্তু সে আদৌ শিক্ষক কি না তা আমার জানা নেই। আমি পানিটা খেয়ে নিচু কন্ঠে জিজ্ঞেস করি,
— অহনা কোথায়?
— আমার রুমে ঘুমাচ্ছে৷ চল নিয়ে যাই।
অতঃপর আন্টি চললেন নিজের রুমে। পিছে পিছে আমিও গেলাম। রুমে আসতেই দেখি অহনা বিছানার মধ্যখানে শুয়ে আছে। গায়ে তার কাঁথা জরানো৷ ওর নিষ্পাপ মুখখানিটা দেখেই শত চিন্তার মাঝে এক প্রশান্তি হাওয়া বয়ে যায়। “সন্তানের স্নিগ্ধ মুখখানি যথেষ্ট সকল মায়ের ক্লান্তি দূর করার জন্য।”– কথাটা যে শতভাগ সত্য। আমি অহনার দিকে যেতে নিয়েও থেমে যাই৷ মস্তিষ্ক জানান দেয়, “তুমি সারাদিন হসপিটালে থেকেছ৷ কতশত জীবাণু শরীরে বইছে কে জানে? এই শরীর নিয়ে অহনাকে ছোঁয়া ঠিক হবে না। আগে ফ্রেশ হও।” আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আন্টিকে জিজ্ঞেস করি,
— আন্টি ওয়াশরুমটা কোথায়?
— ওই যে ওয়াশরুম। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি গামছা দিচ্ছি। দাঁড়াও!
অতঃপর আন্টি আমায় গামছা ধরিয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে যান। আমিও মুহূর্তে ফ্রেশ হয়ে আসি৷ জামাটা চেঞ্জ করা দরকার ছিল কিন্তু এইখানে তো করা আর সম্ভব নয়। সে যাই হোক! আমি অহনার কাছে চলে গেলাম। আলতো হাতে ওর মাথা বুলিয়ে দিলাম। এমন সময় আন্টি রুমে বলে,
— আসো ভাত খাবে।
আমি আন্টির দিকে তাকিয়ে বলি,
— অহনা খেয়েছে?
— শত বলেও খাওয়াতে পারলাম না। ও নাকি মাকে ছাড়া খাবেই না। দুপুর আর সন্ধ্যায় তো ঠিকই আমার হাতে খেয়েছিল কিন্তু রাতে কিছুতেই খেতে চাইলো না।
আমি মুচকি হেসে বলি,
— ও রাতে আমাকে ছাড়া কখনো খায় না। যত যাই হোক না কেন। আমি না খায়িয়ে দিলে সারারাতেও কিছু খাবে না।
— মেয়েটা দেখিছি পুরাই মা ভক্ত। তা অ..
কি যেন বলতে বলতে তিনি থেমে গেলেন। আমি সেইদিকে তোয়াক্কা না করে আগের কথার রেশ ধরে বলি,
— হ্যাঁ!
অতঃপর আমি ধীর কন্ঠে বলি,
— মামণি! মামণি উঠো। দেখ আম্মি এসে গিয়েছে৷
প্রথম ডাকে অহনা সাড়া না দিলেও দ্বিতীয় ডাকে সে উঠে যায়। ঘুমে ভার হওয়া চোখগুলো বুঝে বুঝে আসতে থাকে৷ অতঃপর ভালো মত তাকিয়ে যখন আমায় দেখলো তখন কিছু না বলে উঠে আমার গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। আমি মুচকি হেসে ওর পিঠ বুলিয়ে দিতে দিতে বলি,
— বাসায় গিয়ে ঘুমিও। এখন উঠো।
______________________
খাওয়া-দাওয়ার পর্বশেষে যখন বিদাই নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। কিন্তু সাদের আসার নাম নেই৷ অহনা ওয়াশরুম যাবে বলে আন্টি তাকে নিয়ে গিয়েছেন। আমি সোফায় বসে তাদের অপেক্ষা করছি। মাথায় ঘুরছে মামার টেনশন। বিল পে করা হয়েছে কিন্তু এখন প্রেসক্রিপশনের ঔষধ গুলো আগে কিনতে হবে। কালকের মধ্যে সব কিনতে হবে। হঠাৎ টনক নাড়ে,” প্রেসক্রিপশনটা কোথায়?হসপিটালে তো আমার কাছেই ছিল।এরপর? ওইটা ছাড়া ঔষধ কিনবো কিভাবে?” কথাটা মাথায় আসতেই আমি বিচলিত হয়ে যাই। মস্তিষ্কে জোর দেই বিষয়টা মনে করার জন্য। অতঃপর মনে পড়ে প্রেসক্রিপশনটা সাদের কাছে দেওয়া হয়েছিল। আমার সাথে পার্স ছিল না বিধায় হসপিটাল থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইলটা সাদকে দিয়েছিলাম রাখার জন্য। ওর থেকে এখন প্রেসক্রিপশনটা নিতে হবে। নাহলে পড়ে ভুলে যাব। আমি চারদিকে ওকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু পাই না। তাই কিছু না ভেবে ওর রুমের দিকে চলে যাই। তখন বাসায় ঢুকার সময় ও যখন রুমে ঢুকছিল তখন আমি ওর রুমটা দেখেছিলাম। তাই এখন চিনতে অসুবিধা হলো না। আমি ওর রুমের সামনে এসে দেখি দরজা খুলা। ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখি কেউ নেই। তাও আমি একবার গলা ঝেড়ে বলি,
— সাদ আছো?
সাথে সাথে উত্তর না আসলেও একটু পর উত্তর আসলো। সে হয়তো বা বারান্দায় ছিল। সাদ রুমে এসে বলে,
— এখনই যাবে? আর বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন ভিতরে আসো।
আমি ভিতরে ঢুকতেই একটা বোটকা গন্ধ নাকে এসে বারি খায়। বুঝতে দেরি নি এইটা কিসের গন্ধ। সিগারেটের গন্ধ। সাথে সাথে আমি ওড়না দিয়ে মুখ চেপে নেই৷ এই গন্ধটা আমি সহ্য করতে পারি না। গন্ধটা শুকলেই আমার মাথায় ঘুরায় সাথে বমি আসে। দম বন্ধ হয়ে আসে। সাদ পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরে কেবলাহাসি দিয়ে বলে,
— সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারো না?
আমি জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাই৷ যার অর্থ না। সাদ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
— সরি! ওয়েট এখনোই ঠিক করে দিচ্ছি৷
এই বলে সাথে সাথে এয়ার ফ্রেশনার নিয়ে সারা রুমে ছিটিয়ে দেয়। আর মুখে চুইংগাম পুরে নেয়। এতে গন্ধটার কমে আসে। আমি নিজের ওড়না মুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেই অতঃপর বলি,
— প্রেসক্রিপশনটা দাও। হসপিটালের বাইরে তোমায় দিয়েছিলাম।
— হায় আল্লাহ!
বলেই সাদ এক দৌড় দেয় ওয়াশরুমের দিকে। আর আমি ওর এই এহেন কান্ডে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রই সেইদিকে। বুঝার চেষ্টা করি ঘটনা কি। কিছুক্ষণের মাঝেই সাদ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে বিশ্ব জয় করা হাসি দিয়ে বলে,
— বুঝলে আমার ভাগ্য ভালো, বালতিতে পানি ছিল না আজ। নাহলে সর্বনাশই হয়ে যেত।
আমার আর বুঝতে দেরি নেই কাহিনী কি। ও নিশ্চয়ই জামা কাপড় ধোঁয়ার জন্য ওয়াশরুমের বালতিতে রেখে এসেছিল। বালতি আজ শুকনো ছিল বলে জামা কাপড় কিছু ভিজে নেই সাথেই প্রেসক্রিপশনটাও৷ যার জন্য ও এমন বলছে। আমি একবার রাগ করতে গিয়েও ফুঁসে যাই। দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলি,
— দাও!
অতঃপর ও প্রেসক্রিপশনটা এগিয়ে দিতেই আমি সেটা খুলে একবার চেক করে নেই। সব ঠিকই আছে। আমি সাদের দিকে তাকিয়ে বলি,
— দেরি হচ্ছে। তুমি কি আমাদের দিয়ে আসবে?
— হ্যাঁ। দাঁড়াও ফোন নিয়ে নেই। আর তোমার ফোনও কিন্তু আমার কাছেই। দাঁড়াও দিচ্ছি।
সাদের কথায় মনে পড়ে তখন ফোনটাও ওর কাছেই দিয়ে দিয়েছিলাম আমি। কিন্তু সেটার কথা মনেই ছিল না। সাদ নিজের বেড সাইড টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। হয়তো ওইখানেই ফোন রেখেছে। আমিও সেইদিকে তাকাই। তখন চোখে পড়ে টেবিলের উপর একটা ফটোফ্রেম রাখা। তারমধ্যে সাদ আর একটা মেয়ের ছবি রাখা। মেয়েটি গাল ফুলিয়ে আছে আর সাদ তার নাক টেনে দিচ্ছে। ছবিটা সাধারণ কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো মেয়েটা দেখতে খানিকটা অহনার মতই। হাসি আর চোখ দুইটিতে বেশ মিল আছে দুইজনের। গায়ের রঙটাও কাছাকাছি। আমি ছোট ছোট চোখ করে সেইদিকে তাকিয়ে থাকি৷ সাদ আমার ফোনটা নিয়ে এসে আমার দিকে এগিয়ে দেয়। কিন্তু সেই দিকে আমার খেয়াল নেই। সাদ আমার দৃষ্টি অনুসরণ পিছে তাকাতেই দেখে আমি ছবিটা দেখছি। সাদ তা দেখে স্মিত হেসে বলে,
— আমার ওয়াইফ তিন্নি।
সাদের কথা শুনে আমি চকিতে তাকাই৷ অতঃপর মিষ্টি হাসি দিয়ে বলি,
— ভারী মিষ্টি মেয়েটা।
সাদ কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললো,
— হুম! তা চলো যাওয়া যাক।
— হুম
_____________________
যখন বেরিয়ে আসতে যাব তখন আন্টি বলে উঠে,
— তোমার তো মনে হয় বেশ কয়েকদিন হসপিটালেই দৌড়াদৌড়ি করতে হবে তা বলছি কি হসপিটালে যাওয়ার সময় অহনাকে এইখানে দিয়ে যেও। বেশ মায়া জন্মে গিয়েছে ওর উপর। সারাদিন একাই থাকি। তা একজন সঙ্গী পেলাম খেলার।
“সারাদিন একা থাকি,” কথাটা শুনে টনক নাড়ে। মনের মাঝে কোন প্রশ্ন যেন আসতে নিয়েও আসলো না। এত শত চিন্তার মাঝে নতুন কোন চিন্তা মস্তিষ্কে জাগ্রত হচ্ছে না বলে আমি সেই বিষয় আমলে নিলাম না। স্মিত হেসে বলি,
— আপনাকে আর কষ্ট দিতে চাই না আন্টি। আজকে এতটুকু করেছেন তাই অনেক।
— একদম এইভাবে বলবে না। আমি তো আর তোমায় পর ভেবে এইসব বলছি না। আপন ভেবে বলছি। তাই মানা করার কোন সুযোগ নেই। তুমি কালকে ওকে দিয়ে যেও। আর কোন কথা শুনতে চাই না আমি।
আমি তার এমন কড়া শাসনযুক্ত কন্ঠে উপরে কথা বলতে পারলাম না। হেসে সম্মতি জানালাম। তা দেখে তিনি বললেন,
— অহনাকে আসতে বলেছি বলে এই না যে তোমাকে আলাদা করে বলতে হবে। তুমিও আসবে কেমন?
— আচ্ছা। আপনি সময় সুযোগ হলে আমাদের বাসায় যাবেন কিন্তু।
— হ্যাঁ যাব।
অতঃপর আন্টি অহনার গালে একটা চুমু খেলেন। ক্ষণেকের মাঝেই আমরা বেরিয়ে পড়ি।
_______________________
আরশি আর অহনাকে বাসায় দিয়ে এসে সাদ সবে মাত্র বিছানায় গা এলিয়েছে। এমন সময় সাদের মা শোভা এসে সাদের পায়ের পাশে বসেন। হাতে তার দুধের গ্লাস। সাদ তার মাকে দেখে উঠে বসে তারপর বলবে,
— কিছু বলবে?
— নে দুধটা খেয়ে নে। ভালো লাগবে।
সাদ কিছু না বলে দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে খেতে থাকে৷ শোভা কিছুক্ষণ সাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
— অহনা একদম তিন্নি মত না দেখতে?
সাদ নিরলস ভাবে বলে,
— হুম।
— মায়া জমে গেছে বাচ্চাটার উপর৷
সাদ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
— বেশি মায়া ভালো না। এই ভূবণে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। না মানুষ, না সম্পর্ক।
শোভা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
— আচ্ছা সে কথা ছাড়। তা তুই আমাকে অহনা ও আরশির সামনে অহনার বাবার কথা তুলতে মানা করেছিলি কেন? তখন মুখ ফোসকে কথা বেড়িয়ে আসছিল৷
— আমি যতটুকু জানি, আরশি আর তার হাসবেন্ডের সেপারেশন হয়ে গিয়েছে। মানে ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। আরশি সিঙ্গেল মাদার। তাই মানা করেছিলাম। তুমি তো জানোই যখন সিঙ্গেল মাদার বা পিতৃহীন বাচ্চার সামনে তার বাবার কথা তুলা হয় তখন তার কেমন লাগে।
শোভা কথাটা শুনে বলে,
— তুই কিভাবে জানলি কথাটা?
সাদ আড়চোখে শোভার দিয়ে তাকিয়ে বলে,
— ভুলে যেও না আরশি আমার অফিসেই কাজ করে। সাথেই আমি ওর বস। ওর ইনফরমেশন চেক করার সময় দেখেছি।
— কারণ জিজ্ঞেস করেছিস নি তো আবার?
সাদ মুখ চোখ কুঁচকে বলে,
— খেয়ে দেয়েও আমার বহুত কাজ আছে আম্মাজান।
— হুম! তা ওর প্রতি তুই রাফ না তো? দেখ সিঙ্গেল মাদারদের কিন্তু কষ্টে শেষ নেই।
সাদ স্মিত হেসে বলে,
— জানি! সচক্ষে দেখা আছে এইসব। ভুলি নি কিছু। তাই বুঝি কষ্টটা। এর জন্যই তো আরশিকে আমি কাজে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। নিজে যতটুকু পেরেছি বিভিন্ন ভাবে হ্যাল্প করার ট্রায় করেছি৷
শোভা সাদের কথা শুনে গর্বের সহকারে বলে,
— আজ গর্ব করে বলতে পারি, আমার শিক্ষায় তাহলে কোন ত্রুটির ছিল না।
— আমার মায়ের কোন কিছুতে কি ত্রুটি থাকতে পারে? আমার মা খাঁটি সোনা বুঝলে।
— হয়েছে বদমাশ! আর ফুলাতে হবে না আমায়। দে গ্লাসটা দে।
সাদ গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
— হু! নাও। তা মা আরশির কিছু আরেকটা পরিচয় আছে।
— কি?
সাদ কিছু না বলে শুধু বাঁকা হাসে৷ সাথে সাথে তার ডান গালে ভেসে উঠে এক গভীর গর্ত।
#আরশি
#Part_23
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
দেখতেই দেখতে ২ মাস কেটে গেল। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই আমার বেড়ে গেল দায়িত্ব ও কর্তব্য। সাথেই বাড়ে চাপ। একা হাতেই সামলে উঠতে হলো সবকিছু। কিন্তু এর মধ্যেও এক জোড়া হাত ছিল যা সবসময় আমায় সাহায্য করে গিয়েছে। আর সেই হাত জোড়ার মালিক হলো সাদ। এই দুইমাসে সে আমার সকল পরিস্থিতিতে আমার পাশে ছিল। পাশে ছিল সাদের মাও। সেই মামাকে হসপিটাল নেওয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত। মামাকে যখন ডিসচার্জ দেওয়া হয় তখন ক্ষণিকের জন্য ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আনমনে শুধু ভাবছিলাম একা হাতে কিভাবে সবকিছু সামলাবো। সেইসময় সাদই আমার পাশে দাঁড়ায়। বিভিন্ন ভাবে হ্যাল্প করে। বিশেষ করে আমাকে বাসা থেকে কাজ করার সুযোগটা দেয়। যার ফলে আমি একা হাতেই সব সামলে উঠতে পারি। প্রায়ই সন্ধ্যার পরে সাদ এসে সকলের সাথে আড্ডা দিয়ে যেত। মাঝে মধ্যে সাদের মাও এসে দেখা করে গিয়েছেন। দেখতেই দেখতে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে আমাদের মাঝে। আমি এক সপ্তাহ বাসা থেকেই কাজ করেছিলাম। এরপর যখন ভাইয়া ভাবী ফিরে আসলেন তখন সব শুনে ছুটে আসেন। অতঃপর প্রায় দুই সপ্তাহ আমাদের সাথেই ছিলেন। মামা আর আমার দেখাশোনার জন্য। তারা ছিল বিধায় আমি নিশ্চিন্তে জবটা কান্টিনিউ করতে পেরেছিলাম। সাদকেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম তাদের সাথে। ভাইয়ার সাথে বেশ ভাবও জমে গিয়েছিল ওর। অতঃপর মামা বেশখানিকটা সুস্থ হয়ে উঠতেই তারা চলে যান। তখন থেকে একাই সব সামলে নেওয়া শিখে গিয়েছিলাম।
অতীতের কিছু কথা ভেবে দীর্ঘ নিশ্বাস নেই। ফ্রিজ থেকে পুডিং এর প্লেটটা বের করে টেবিলে রাখতে রাখতে অহনাকে ডেকে উঠি।
— মামণি! মামণি! কোথায় তুমি?
কিন্তু কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। তাই আমি অহনাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসলাম নিজের রুমে। এসেই দেখি ও বিছানায় “হাতের খড়ি” বইটা নিয়ে বসেছে। ‘ক খ’ লিখছে সম্ভবত। দুই সপ্তাহ আগেই তাকে বইগুলো কিনে দিয়েছিলাম। লেখাপড়ায় সে বেশ পিছিয়ে গিয়েছে তাই সেই দিকে এখন বেশ জোর দিচ্ছি। অহনার ব্রেন অবশ্য ভালো। একবার দেখিয়ে দিলেই সে চট করে তা শিখে ফেলে। তাই ভাবছি পরের বছর প্লে ভর্তি না করে একবারে নার্সারিতে ওকে ভর্তি করিয়ে দিব। কথাটা ভেবেই দীর্ঘ নিশ্বাস বেড়িয়ে আসে। আমি দুই এক পা করে ওর দিকে এগিয়ে যাই। ওর পাশে গিয়ে বসি৷ আলতো কন্ঠে বলি,
— আমার মামণি বুঝি পড়ালেখা করছে?
অহনা মুখ তুলে বলে,
— আম্মি তুমি কি নানার মত হয়ে যাচ্ছ?
আমি ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে বলি,
— নানার মত হয়ে যাচ্ছি মানে?
— মানে নানার মত কি চোখে কম দেখা শুরু করেছ নাকি? দেখতেই তো পাচ্ছ পড়ালেখা করছি তাও তুমি আমায় জিজ্ঞেস করছ। তোমাকে কালকেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। তার আগে চকলেট আঙ্কেলকে বলতে হবে।
আমি অহনার নাক টেনে বলি,
— ওরে দুষ্টু রে! দিন দিন বড্ড দুষ্টু হচ্ছ তুমি। আগে তো এতটা ছিলে না। তা কে শিখালো এত দুষ্টুমি?
অহনা দাঁত বের করে একটা মিষ্টি হাসি দেই। সেই সাথে দুই গালের মাঝে ফুটে উঠে ছোট ছোট গর্ত৷ হাতে থাকা পেন্সিল ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
— আর কে? চকলেট আঙ্কেল।
— ওহ! তাহলে এই দুষ্টুমির মূল আপনার চকলেট আঙ্কেল তাই না। দাঁড়াও আসুক আজকে৷ খবর নিচ্ছি আমি।
অহনা মিটিমিটি হেসে বলে,
— খবর তো তুমি টিভিতেই নিতে পারবে। চকলেট আঙ্কেল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।
আমি সরু চোখে অহনার দিকে তাকাই। এই সাদ নামক বাঁদরের সাথে থেকে মেয়ে আমার ওর মতই হচ্ছে। কিন্তু তাও করছেও আমাদের জন্য কম না। তাই আমি সেই কথা বাদ দিয়ে বলি,
— তোমার জন্য পুডিং বানিয়েছি। খাবে?
অহনা দ্রুত মাথা দুলিয়ে বলে,
– হাম! হাম! খাব।
এই বলে দৌড়ে যায় ডাইনিং এর দিকে। আমি মুচকি হেসে ওর পিছু পিছু যাই। অতঃপর ওকে পুডিং দিয়ে বসিয়ে চলে যাই রান্নাঘরে। একটা পাত্রে সুপ ঢেলে নিয়ে হাটা দেই মামার রুমের দিকে। রুমে এসে দেখি মামা চোখ বুঝে শুয়ে আছেন। আমি তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলি,
— ঘুমিয়ে আছ নাকি?
আমার কন্ঠ মামার কর্ণধার পর্যন্ত পৌঁছাতেই সে চোখ খুলে আমার দিকে তাকায়। অতঃপর স্মিত হেসে কিছু না বলে উঠে বসার চেষ্টা করে। আমি সুপটা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে মামাকে সাহায্য করি উঠতে। এখনো সে দূর্বলতা তার পিছু ছাড়ে নি। বেশি দূর্বল না হলেও কিছুটা দূর্বল। তাই তো এখনো আমি তাকে দোকানে যেতে দেয় নি। দুইদিন পর পর ম্যানেজার এসে সবকিছু দেখিয়ে টেখিয়ে কাগজপত্র ঠিক করে নিয়ে যায়। আমি মামাকে বসিয়ে দিয়ে মিষ্টি হাসি৷ মামা তা দেখে বলে,
— তুই কষ্ট করে খাবার আনতে গেলি কেন? ডাক দিলেই তো হতো। টেবিলে গিয়ে খেতাম।
— আমি না থাকলে খাও এই তো। যেহেতু আমি আছি সেহেতু কষ্ট করার কোন দরকার নেই৷
— ওই আরকি একবেলাই৷ এতে আর কি কষ্ট। এইভাবে তুই আমার অভ্যাস খারাপ করছিস। বিছানায় বসিয়ে রেখে রেখে একরোখা বানাচ্ছি।
— বেশ করছি।
কথাটি বলে আমি সুপের প্লেটটা এগিয়ে দেই। মামা তা দেখে নাক ছিঁটকে বলে,
— আবার সুপ!
— হ্যাঁ আবার সুপ। এখন বেশি কথা না বলে তারাতাড়ি খাও।
— একটু পোলাও মাংসও তো খাওয়াতে পারিস৷ তা না কিসব কুখাদ্য খাওয়াস।
আমি মামার দিকে সুরু চোখে তাকিয়ে বলি,
— হ্যাঁ খাওয়াবো নে। পরে যখন কলেসট্রোল বাড়বে আর হসপিটালের বেডে চ্যাপ্টা হয়ে পড়বে তখন ভালো হবে তাই না? চুপচাপ যা দিয়েছি তা খাও।
মামা মুখ কাঁচুমাচু করে সুপ গেলা শুরু করে। আমি মামার এমন মুখ দেখে হালকা হেসে বলি,
— সুপে তো মুরগি দেই। তাও বুঝি মন ভরে না।
— ধুর! এইটার কোন স্বাদ আছে নাকি? পানসে খাবার।
— হ্যাঁ এইটা তো পানসেই। রসালো খাবার তো বেশি মসলা আর ঝাল ওয়ালা হয়।
কথাটা একটু কড়া ভাবেই বললাম। মামা আর কিছু না বলে সুপ খাওয়ায় মন দিলেন। হঠাৎ মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি কন্ঠে বললেন,
— তোকে না আজ আমার মায়ের মত লাগছে। মাও এইভাবেই শাসন করতো আমায়।
কথা শুনার সাথে সাথে আমি নরম হয়ে যায়। আমি হালকা হেসে বলি,
— বড়রা বাচ্চামো করলে ছোটদেরকেই বড় হতে হয়,বুঝলে! এখন খাওয়া শেষ করো। সকালে ঔষধ আছে কিন্তু তোমার।
— হুম।
______________________
গোধূলির লগ্ন পেরিয়ে আঁধার ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। কিছুক্ষণ আগেই আমি অফিস থেকে এসেছি। ফ্রেশ হয়ে মামার ঘরে একবার উঁকি দিলাম। সে বসে বসে বই পড়ছে। আমি রান্নাঘরের যাওয়ার আগে একবার অহনাকে দেখে নেই। সে টিভিতে ডোরেমন দেখছে। রান্নাঘরে এসে চুলায় রাতের রান্না বসিয়ে দিলাম। কিছু থালাবাসন ছিল সেগুলো ধুয়ে নিলাম। সব গোছগাছ করছি এমন সময় কলিং বেজে উঠে। আমি হাত ধুঁয়ে চলে যাই দরজার দিকে। দরজা খুলতে একজনের হাস্যজ্জ্বল চেহেরা ভেসে উঠে। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই পিছন থেকে অহনা উৎফুল্ল সুরে চেঁচিয়ে উঠে,
— চকলেট আঙ্কেল!!
কথাটা বলেই সে সাদের দিকে দৌড়ে আসে। তা দেখে আমি মুচকি হাসি। আমার বুঝতে দেরি নি অহনা কলিং বেল এর আওয়াজ শুনে টিভি দেখা রেখে ছুটে এসেছে। এই মেয়েটাও না সাদ বলতে পাগল। যখনই সাদ এই বাসায় আসে অহনা সারাক্ষণ ওর সাথে আঠার মত চিপকে থাকে। অবশ্য পাগল হওয়ারই কথা। সাদ তো ওকে কম ভালবাসে না। বলতে গেলে মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসে। প্রচন্ড আদরও করে। আর এইভাবেও কথায় আছে, “বাচ্চারা তো তার কাছেই বেশি যায়, যার কাছে সে বেশি ভালবাসা পায়।” অহনার বেলায়ও তাই।
অহনা সাদের দিকে দৌড়ে আসতেই সাদ ওকে কোলে তুলে নেয়৷ ওর নরম তুলতুলে গালে এক চুমু একে দিয়ে বলে,
— আমার অহুপরী টা কেমন আছে?
— অনেক ভালো। কিন্তু আমি তোমার সাথে রাগ করেছি।
শেষের কথাটা অহনা গাল ফুলিয়ে বলে। সাদ তা দেখে অবাক হওয়ার ভাণ করে বলে,
— ওমা তাই নাকি! তা এই অধমটা কি এমন অকেজো কাজ করেছে যে আমার পরীটা আমার থেকে রাগ করেছে।
অহনা আদো আদো গলায় বলে,
— এতদিন আসো নি কেন? সেই কবে এসেছিলে।
সাদ মিষ্টি হেসে বলে,
— কাজ ছিল তো তাই আসতে পারি নি। কিন্তু এই যে দেখ, কাজ শেষ হতেই এসেছি। সাথে তোমার জন্য চকলেট আর আইস্ক্রিমও এনেছি।
কথাটা বলেই ডান হাতে থাকা পলিথিনের ব্যাগটা উঁচিয়ে ধরে সে। তা দেখে অহনা খুশি হয়ে সাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
— থেংক ইউ!
— ওয়েলকাম।
আমি এইবার ওদের কথার মাঝে ফোঁড়ন দিয়ে বলি,
— বাইরে দাঁড়িয়েই কি সকল কথা শেষ করবে নাকি ভিতরেও আসবে?
সাদ একটু পার্ট নিয়ে বলে,
— জায়গায়টা আসল না বুঝলে, কথা বলাটাই আসল।
কথাটা শুনে আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেই। এই ছেলের কিছু হবে না। অতঃপর সাদ কিছু না বলে ঢুকে পড়ে। আর হাতে আমার দুইটা ব্যাগ ধরিয়ে দেয়৷ একটাতে কিছু ফলমূল আরেকটাতে চকলেট ও আইস্ক্রিম। সাদ যতবারই বাসায় আসে ততোবারই অহনার জন্য চকলেট আর মামার জন্য ফল-টল নিয়ে আসে। এইটা যেন ওর অভ্যাস। আমি সেগুলো নিয়ে দরজা দিয়ে ওদের পিছে পিছে আসি। পিছন থেকেই সাদকে উদ্দেশ্য করে বলি,
— এইসব আনার কি দরকার ছিল? প্রতিবারই কি আনতে হবে তোমার এইসব?
সাদ আমার দিকে ঘুরে বলে,
— তোমার এত জ্বলে কেন বন্ধু? তোমার জন্য কিছু এনেছি নাকি? সো জাস্ট স্টোপ ইউর পকপক।
আমি কিছু না বলে কটমট দৃষ্টিতে তাকাই। সাদ সেটা তোয়াক্কা না করে অহনাকে নিয়ে চলে যায় মামার রুমের দিকে। যাওয়ার আগে বলে যায়,
— এই যে মিস দর্পণ! শুনছেন?
আমি চকিতে তাকাই তার দিকে। তারপর বলি,
— থাক শুনা লাগবে না। বুঝেছি আমি। মিনিট দশকের মধ্যে চা পেয়ে যাবে।
— এই চায়ের টানেই এইখানে বার বার আসা। এত ভালো চা খাওয়ার লোভ কি সহজে সামলানো যায়? তাও আবার আমার মত চা খোর এর পক্ষে? ইম্পসিবল!
এই বলে সে ভূবণ ভুলানো হাসি দেয়। তারপর চলে যায় মামার রুমে। আর আমি বিরবির করতে করতে রান্নাঘরের দিকে যাই।
__________________
ভ্যাপসা গরমের দিনে স্বচ্ছ নীল আকাশের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে কুঞ্জ কুঞ্জ মেঘের ভেলা। নিরবে স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। কিছুক্ষণ আগেই গোধূলির প্রহর শুরু হয়েছে। দুপুর একটা দিকে বাসা থেকে বের হলে নিউ মার্কেট এসে পৌঁছেছি এখন। মূলত এইখানে আসা অহনা ও মামার জন্য কিছু মার্কেটিং করতে। অফ সিজন হলেও মার্কেটে ভীড় ভালোই আছে। আমি একেক দোকান ঘুরে ঘুরে দেখছি। কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে ছোট বাচ্চাদের ড্রেসের একটা শপে দাঁড়াই আমি। অহনার জন্য জামা দেখতে থাকি। তখন সামনের দিকে নজর যেতেই আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। নয়ন দুইটি হয়ে যায় স্থির। চোখের সামনে ভাসতে থাকে এক অনাকাঙ্ক্ষিত চেহেরা। এই অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটির মুখখানি যে আমার খুব চেনা একজন। খুব! এর সাথেই তো প্রায় ১০ টা বছর ছিলাম আমি। ১০ টা বছর! ভেবেই বুক চিরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসে। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই তার নামটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, ফাহাদ!
#চলবে
কালকে ব্যস্ত ছিলাম বলে রাতে গল্পটা আপ দিতে পারি নি। এর জন্য দুঃখিত!
পর্বটা তারাহুরো করে লিখা। রি-চেক করার সময় হয়ে উঠেনি। বানানে ও বাক্যে অজস্র ভুল থাকতে পারে। সেগুলো নিজ দায়িত্বে একটু বুঝেন নিবেন।
#চলবে
তারাহুরো করে লিখেছি। রি-চেক করা হয়নি। তাই ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।