#আলো_থেক_অন্ধকার
Part:-12 (শেষ পর্ব)
writer:-#Esrat_jahan_Esah
– বাবা মা কিছু বলবে?
– নাহ আমরা আর কি বলব। কখনো ভাবিনি সমাজে এমন একটা পরিস্থিতে আমাদের দ্বারাতে হবে। (মা)
– মা রে তুই কেন তোর ভাবির সাথে গেছিলি? তুই বলতি কাজ শিখবি আমি তোকে একজন প্রশিক্ষক রেখে দিতাম। ফ্রি-তে স্বপ্ন দেখলে এমনি হয়। আমাকে তুই একটা বারের জন্য বলতি।
– বাবা আমার ভুল হয়ে গেছ। আমাকে মাফ কর বাবা আমাকে মাফ কর।
– সব ভুল তো আর ভুল না মা তুই বুঝবি না লোকে সব সময় এটা নিয়ে হাসি তামাশা করবে।
– দেখ বাবা আপু তোমরা এইভাবে বল না। তোমরা যদি আপুর সাথে এমন কর আপু কই যাবে।
– মা বাবা দেখ লিমা আসলে দোষী কিনা সেটাও দেখা উচিৎ।
– তুই এখনো তোর বউয়ের সাফাই গাইছিস। সামনে আমার মেয়ের বিয়ে দিব এখন মেয়ের একটা কলংক বসিয়ে দিল। (মুখে কাপর দিয়ে কেঁদে উঠে জায়েদের মা)
– আচ্ছা সবাই এখন শোনো। আসলে আপু দোষী কিনা সেটা বের করতে হবে।
আল্লাহ কুরআনে বলেন________
وَالَّذِیۡنَ یَرۡمُوۡنَ الۡمُحۡصَنٰتِ ثُمَّ لَمۡ یَاۡتُوۡا بِاَرۡبَعَۃِ شُہَدَآءَ فَاجۡلِدُوۡہُمۡ ثَمٰنِیۡنَ جَلۡدَۃً وَّلَا تَقۡبَلُوۡا لَہُمۡ شَہَادَۃً اَبَدًا ۚ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ۙ
যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফারমান।
—আন নূর – ৪
ভাইয়া আমি ছোট কিন্ত বর্তমান বিষয়ের উপর কিছু হলেও জানা আছে আর আমার এক সিনিয়র ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে সে বলছে একজনের চেহারার উপর ফেইজ এডিট করে লাগানো যায়। হতে পারে তেমন কিছু একটা হয়েছে।
হতে পারে ঐটা অন্য কোনো মেয়ের ছবি সেখানে আপুর ফেইজ এডিট করে লাগানো হয়েছে।
আর এটাই মনে হয় সত্যি হবে আর আপু যেহুতু বলছে সে কারো সাথেই এমন ছবি তুলেনি।
– বাবা মা ভাইয়া তোমরা সবাই বিশ্বাস কর আমি এমন কোনো ছবি কারো সাথে তুলেনি।
আর ভাইয়া ভাবিকে বল কুরআনে যেভাবে সাক্ষী আনতে বলছে সেইরকম স্বাক্ষী আনতে। আর আপু বলছে ঐ ছেলেকে সে তেমন চিনে না ভাবি চিনে আর ভাবির ফোনে যেমন তার ছবি আছে তাহলে ছেলেকে সে নিশ্চুই চিনে?
– হুমম ভাইয়া ভাবি বলছে তার নাকি বন্ধু। অনেক আগে থেকেই পরিচয়।
জায়েদের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। না পারছে কাউকে বলতে না পারছে লিমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে। শুধু মনে মনে এটাই ভাবছে একটু চিৎকার দিয়ে বলতে পারতাম আমার সাথে কেন এমন হলো? লিমা কি একটি বাড়ের জন্য ছেলের কথা ভাবল না?
– ভাইয়া মনকে শক্ত করো। জানি তোমার খারাপ লাগছে কিন্তু কিছু করার নাই বোনকে বাচাতে হলে ভাবির মুখুশ খুলতে হবে।
আর বাবা মা তোমরা তো জান আপু এ কাজ করতে পারে না। তোমরা আপুর সাথে খারাপ ব্যবহার করো না।
সয়ং আল্লাহ নিজে বলেছেন________
لَوۡلَاۤ اِذۡ سَمِعۡتُمُوۡہُ ظَنَّ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتُ بِاَنۡفُسِہِمۡ خَیۡرًا ۙ وَّقَالُوۡا ہٰذَاۤ اِفۡکٌ مُّبِیۡنٌ
তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?
—আন নূর – ১২
তোমরা আপুকে ভুল বুঝো না। হে আপু ভুল করছে বাবা কে না জানিয়ে একটু লোভে পড়েই ভাবির সাথে গিয়েছে। কিন্তু তাই বলে এটা তো মানা যায় না। তোমরা শক্ত থাকবে কাল সকাল হলেই দেখবে প্রতিবেশি ভাবিরা আবার আসবে তোমাদের খোচা দিতে।
সুমি আবার কান্না শুরু করে। হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। এ কোন পরিক্ষায় ফেল্লে আমায় আমাকে তুমি ধৈর্যধারন করার তৈফিক দাও।
– শোন মা তুই তোর নিজের সার্টিফিকেট নিজেই দিতে পারবি। তাই কে কি বলল সেদিকে কান দিস না। মনে মনে তুই নিজেকে ফ্রেশ রাখ। (মা)
– তুমি স্বাভাবিক ভাবেই ভাবির কাছে যাও আর ভাবিকে বল ঐ ছেলেকে হাজির করতে। ঐ ছেলের মূখেই শুনব আসলে ভাবি সঠিক না আপু।
আর ভাবির টাচ ফোন তুমি নিয়ে আসো। কাল ঐটা নিয়ে আমি আমার সিনিয়র ভাইয়ের কাছে যাব।
– আচ্ছা।
______
– লিমা তুমি ঐ ছেলেকে ফোন দিয়ে বল আসতে ওর কাছেই জানতে পারব সুমির সাথে ওর কেমন সম্পর্ক?
– আমি বার বার ঢোক গিলতে থাকি। তুহিন কে এখানে আনলে তুহিন যদি আমার কথা বলে দেয়। তাহলে আমার মান সম্মান তো কিছু থাকবে না। ( মনে মনে) কেন আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন?
– নাহ কিন্তু লিমা
– কোনো কিন্তু না। আমি যা বলছি তাই সত্যি আর আমি আপনার মূখে একটা কথাও শুনতে চাই না। আমি আর এদের সাথে থাকব না। আলাদা বাসা নিয়ে থাকব অনেক ভালো ব্যবহার করছি। আর আপনি ভাবলেন কিভাবে আমি আমার বাচ্চা কে রেখে অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলব। তাহলে কি আমি এতদিন ঘরে থাকতাম ঐ ছেলের সাথেই চলে যেতাম। আর আপনি যদি আমাকেই সন্দেহ করেন তাহলে বলেন আমি চলে যাব আলিফকে নিয়ে আপনাকে মুক্ত করে।
কথাটা শুনার পর জায়েদের কলিজা মনে হয় ভেংগেচুরে যাচ্ছে। সে লিমাকে বড্ড ভালোবাসে। সে চায় না কখনো লিমাকে হারাতে।
– লিমা দেখ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তবে সুমি তো আমার বোন।
– তো জান বোনকে গিয়ে শাসন করেন। আমাকে কেন বলছেন। সেই টাচ মোবাইল দিছেন পর থেকে একটার পর একটা সমস্যা। নেন চালাব না এই মোবাইল। বলেই লিমা জোরে মোবাইলটা আছার দেয় মাটিতে।
আমি তাকে অনেক ভাবে বুঝাই। আর বলি দেখুন আমি অনেক সহ্য করছি কিন্তু আর না। আপনি তাদের বলেন আমরা কোথাও ভাড়া থাকব আলাদা ভাবে। আর না হয় আমি নিজেই চলে যাব।
– আচ্ছা ঠিক আছে আমরা অন্য কোথাও চলে যাব।
সকাল বেলা সাকিল জায়েদ এর কাছে মোবাইল নিতে আসে।
– ভাইয়া ভাবির মোবাইলটা দাও।
জায়েদ নিচের দিকে তাকানোর জন্য ইশারা করে। সাকিল তাকিয়ে দেখে মোবাইল ভেংগে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
– এখন তাহলে কি হবে?
– কি হবে যা হওয়ার হইছে ভাবছি তোর ভাবিকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাব তাহলে আর অশান্তি হবে না।
সাকিল কিছু না বলে ওখান থেকে চলে যায়। তবে সাথে করে মেমোরি কার্ড টা নিয়ে আসে। তারপর সাকিল কাউকে কিছু না বলেই ঘর থেকে চলে গেল।
সকালে আবার প্রতিবেশি দের গঞ্জনা ব্যঞ্জনা শুরু হয়েছে। আজকে অনেক ভাবি চাচির ঘরে পান চুন জর্দা নাই সবাই জায়েদের ঘরে পানে চুনের খোজে আসছে আর ২ চারটে কথা শুনচ্ছে।
সুমির মা চুপচাপ শুনছে কোনো উওর দেওয়ার মত ভাষা নাই। কারন ঘরের সত্রু যখব বিবিসন হয় তখন বাহিরের লোক আর কি তারা তো বলবেই।
জায়েদ ঘর থেকে বেড় হলে আমি তুহিনকে ফোন দেই আর বলি তুহিন তুমি তো এত দিন বলেছিলে আমার ১০ টা সন্তান হলে তুমি আমাকে চাও তাও আমাকে ভালোবাসো।
– হ্যা লিমা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকেই চাই তুমি আমার সব। তোমার জন্যই তো আমি বিবাহ করি না।
– তাহলে আমাকে তুমি নিয়ে যাও। আমি তোমার কাছে থাকতে চাই।
– আহহা মেঘ না চাইতেই জল। হে তুমি আসবে লিমা?
– হে তুমি আজ রাতে বাড়ির পিছনের আম গাছের কাছে থাকবে আমি ঐ খানে আসব।
– আচ্ছা।
আজকে আমার বাবা মা কে খবর দেওয়া হয়েছে বিচার করার জন্য। মা আমার গালে একটা চর দেয় আর বলে
– ঘরের কথা ঘরে মিটানো যেত বাইরে বল্লে কেন। কেন মেয়েটাকে সমাজে ছোট করলি।
– তোমরা আসছ আমাকে শাসন করতে। শোনো মা তারা আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিছে। তারা আমাকে দোষ দিছে আমি নাকি বাইরে ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। মা আমার একটা ছেলে আছে। আর সংসার আছে কেন আমি বাইরে যাব আর মা বাবা তোমরা এদের কথা বিশ্বাস করো না। আমি প্রমানো দিয়েছি।
– হুমম ভাবি কালকেই সব ক্লিয়ার হবে কে আসলে খারাপ।
– কিভাবে?
– আমার এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে ঐ ছবি গুলো দিয়ে আসছি কাল সে সব বেড় করতে পারব।
– কাল সকাল পযন্ত আমাকে পেলে হয় ( মনে মনে)
তোমরা যাই যা করো কখনো প্রমান করতে পারবে না। আর এটাই সত্যি যে ঐটা সুমি।
অনেক কথা কাটাকাটি হয়। সবাই কালকের অপেক্ষায় আছে।
এদিকে সুমি নামাজের বিছানায় আল্লাহর কাছে বার বার ফরিয়াদ করছে। হে আল্লাহ তুমি আমাকে কলংক মুক্ত কর। সুমির মাও নামাজে মেয়ের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছে।
________
– জায়েদ পাগলের মত উঠানে আলিফ কে নিয়ে লিমা বলে চিৎকার দেয় কিভাবে পারলে ছেলেটাকে ফেলে রেখে জেতে তোমার কি একটাবারও ছেলের জন্য মায়া হয় নাই। তুমি নিষ্ঠুর লিমা তুমি খারাপ মহিলা তুমি মা নামে কলংক।
বাড়ির সবাই জায়েদ কে এইভাবে দেখে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে থাকে। পড়ে জায়েদ এর হাত থেকে জায়েদ এর মা আলিফ কে নিয়ে গেল। সাথে একটা চিঠি।
সেখানে এইটুকু লেখা ছিল।
তুহিন কে আমি ভালোবাসি অনেক আগে থেকে। তাই জায়েদ সাহেব আপনাকে আর আমাদের সন্তান কে মেনে নিতে পারতাম না। আর সুমির কাছে ক্ষমা প্রার্থী ওর সাথে অন্যায় করার জন্য।
আমি সুমির কলংক থেকে ওরে মুক্ত করলাম আর আমার ভালোবাসার কাছে আমি ফিরে গেলাম
ইতি
লিমা।
আমি ঐ রাতেই তুহিনের হাত ধরে পালিয়ে যাই আর এখন আমি এই বস্তিতে আছি তোর সাথে মিম। ভুল আমার সোনার সংসার নষ্ট করে দিয়েছি আমি চলে এসেছি অন্ধকার একটা অবস্থানে
– তুই তাদের খোজ নিয়েছিলি?
– হুমম।
– কি অবস্থা এখন?
– তিনি একজন কে বিয়ে করেছেন সেই ঘরেও একটা কন্যা সন্তান আছে। আর সে নাকি অনেক ভালো আমার ছেলেকেও অনেক ভালোবাসে।
সুমির ও বিয়ে হয়েছে অনেক ভালো জায়গায় সবাই সুখে আছে। আমার শ্বাশুড়ি নাকি মাঝখানে স্ট্রোক করেছিলেন এখন মোটামুটি আছেন।
– তুহিনের কি হয়েছিল।
– আর তুহিন আমাকে আনার ১ মাস পড়েই একটা মেয়েকে ধর্ষন করে। পরে সুজুক বুঝে মেয়েটা ওকে খুন করে। আর শরিরে ব্লেট দিয়ে কেটে লিখে দেয় ধর্ষক। মেয়ে টা এখন আপাতত জেলে আছে।
তবে ইচ্ছে করে মেয়েটাকে জরিয়ে ধরে বলতে বোন তোমাকে সেলুট। যে তুমি তোমার প্রতিশোধ নিতে পারছ সমাজ কখনো ওকে শাস্তি দিত না।
সবাই ভালো আছে শুধু অন্ধকার জগৎ থেকে আমি আসতে পারলাম না। কখনো আর আসাও হবে না।
তখন হাত থেকে লিমা একটা ঘুমের ঔষধের খোসা বেড় করে মিমের হাতে দিয়ে বলে ভালো থাকিস বিদায়।
– তুই এটা কি করলি কেন আত্মহত্যা করলি? আত্মহত্যা মহা পাপ।
লিমার আর কোনো শব্দ পাওয়া যায় নি৷ জাহান্নামের সার্টিফিকেট নিয়ে লিমা দুনিয়ার মায়া ভালোবাসা ত্যাগ করে বিদায় নিল।
এরকম ঘটনা হয়ত কারো জিবন থেকে লেখিনি কিন্তু এরকমি ঘটনা সামনে দেখেছি আর শুনেছি।
বিবাহ ব্যতিত সকল প্রেম হারাম আর বিবাহের পর যারা প্রাক্তন কে মনে করে কাঁদেন তাদের বলে রাখি শয়তান মনের ভিতর আপনাকে ধংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে। তাই বিয়ের আগে যাই করেন বিয়ের পর নিজের স্বামী আর সন্তান কে ভালোবাসুন। ভালোবাসা দিয়ে ঘরে একটা জান্নাত তৈরি করুন। আর ভাইয়ারা কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে কখনো তার সাথে আর যোগাযোগ কইরেন না। যে চলে গেছে তাকে যেতে দিন আর সূখে থাকতে দিন। নিজেও ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করুন। আর সমাজে অনেক মেয়ে আছে যারা অন্যায় না করলেও মাথায় কলংকের বোঝা বইতে হয় তাই সবাই সত্য কে যাচাই করুন না জেনে কাউকে দোষারোপ করবেন না।
(আসসালামু আলাইকুম। কেমন হইছে জানাবেন। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। শেষ পার্টটা লিখতে অনেক কষ্ট হইছে কিভাবে শেষ করব । তাও চেষ্টা করছি সাজিয়ে লেখার। দোয়া করবেন পরের গল্প গুলো যেন আরো ভালো করে লিখতে পারি )