আলো_থেকে_অন্ধকার পর্ব ৯+১০

#আলো_থেকে_অন্ধকার

৯.
-সকাল সকাল আমি সুমির ঘরে গেলাম। সুমি সুমি কি কর?
– এইতো নামাজ পরে বসে আছি। তুমি এত সকাল সকাল?
– আরে সারারাত তো ঘুমাতে পারিনি। তাই তো সকাল সকাল তোমার ঘরে চলে আসছি।
– কেন? কোনো সমস্যা?
– আরে না সমস্যা না। আমি না চিন্তা করছি একটা বিজনেস করব। মানের আমরা কাজ শিখে একটা দোকান দিব। তারপর সেখানে ব্যবসা করব কাপুরের আর আমরা নিজেরা জামা কাপর তৈরি করব। আস্তে আস্তে আমাদের ব্যবসাটা অনেক বড়ো হবে। অনেক টাকা পয়সা হবে আমাদের। কি বল?
– এত চিন্তা ভাবনা তুমি করে ফেলেছ?
– হুমম কেন তোমার এমন ইচ্ছে হয় না?
– হুমম হয়ত নিজে ঘরে বসে পর্দার সাথে কিছু করি। যাতে আমি নিজেও ইনকাম করতে পারি আর সাথে আমার মত আরো মেয়েদের সাখানে কাজ দিতে পারি। গরিব দুঃখিদের সাহায্য করতে পারি।

– আচ্ছা যাই হোক তোমার স্বপ্ন আর আমার স্বপ্ন মিলিয়ে এক করে পুরুন করব কি বল?
– হুমম সেটা না হয় পড়ে দেখা যাবে আগে তো আমরা কাজ টা শিখি।

– হুমম। টেনশন নিও না। শিখে যাব।
– তা তোমার ঐ বন্ধুর সাথে কথা হইছে?
– হুমম সে বলছে ৩-৪ পর জানাবে।
– ওকে।

অনেক ক্ষন সুমির সাথে কথা বলে আমি সুমির ঘর থেকে চলে যাই। মনে আমার সারাদিন এই কথাই ঘুর পাক খাচ্ছে তুহিন কতো ভালো আমাকে নিয়ে কত টেনশন ছেলেটার। আসলেই ও আমার ভালো বন্ধু।
আচ্ছা তুহিন কে আমার প্লান এর কথা জানালে কেমন হয়। ও আমাকে আরো ভালো বুদ্ধি দিতে পারবে৷ এখন তাহলে ফোন দিব। না থাক কয়েকদিন পড়ে না হয় এ বিষয় বলব।
তারপর নিজের কাজে মন দিলাম।

________

-সুমি দেখ তুই তোর ভাবির কথায় নাচিস না। আমার কেমন যেন ভালো লাগে না।
– মা তুমি শুধু শুধু টেনশন কর ভাবি অনেক ভালো হয়ে গেছে।
– প্রয়োজনে তোকে ব্যবহার করছে।
-মা বাদ দেও না। ভাবি তো তোমার মেয়ের মত যা হইছে ভুলে যাও তো মা। মনে মনে এই রকম খারাপ ধারণা পোষণ করে রেখ না।
-তুই তোর বাবার সাথে একটু কথা বলে দেখতি তোর বাবা কি বলে।
– মা দেখ বাবা কে তো পরেও জানানো যাবে তাইনা? এখন কিছু বল না বাবা আবার এটা নিয়ে অতিরিক্ত জিজ্ঞেসাবাদ করবে তারপর শেষে যেতেও দিবে না আরো বকাঝকা করবে।
– আচ্ছা তুই যা ভালো বুঝ তাই কর। কিন্তু লিমাকে এই প্রজেক্ট শুরু হইছে এর কথা কে বল্ল?
– মা ভালো কথা মনে করছ। সবই ঠিক আছে কিন্তু আমার মনেও এই একই প্রশ্ন।
– বুঝলাম না। এত না পেচিয়ে সোজা করে বল।
– মা যে এই খবর দিছে সে একজন ছেলে। সে নাকি ভাবির বন্ধু আর ভাইয়াও এ বিষয় কিছু জানে না।
– কি বলিস তোর ভাবির ছেলে বন্ধু?
– হ্যা মা,,, আর তাদের কথা শুনে মনে হয় তাদের মধ্যে আগে কোনো সম্পর্ক ছিল।
– তোকে আগেই বলেছিলাম ওর ভিতরে কোনো গন্ডগোল আছে। ওর ভিতর সাপের বিষের মত। ও আমার ছেলেটাকে শেষ করে দিছে আমার ছেলে আর আগের মত নাই। এখন তোকেও শেষ করতে চায়।
– ওফফ মা কি শুরু করলা?
– মা রে মা তুই ওর সাথে আর যাস না। কথায় আছে
____সৎ সংঙ্গে সর্গ বাস
_____অসৎ সংঙ্গে সর্বনাশ

তুই তোর ভাবিকে বিশ্বাস করিস না করের মেয়ে ঘরে থাক তোর কিছু হলে তোর বাবা আমাকে মেরে ফেলবে। তোর জন্য ছেলে দেখতাছে হঠাৎ করে দেখবি তোর বিয়ে হয়ে গেছে। তুই ওর সাথে মিশিস না।
-মা শুধু শুধু টেনশন কর না তো। কিছু হবে না। কাজ শিখব আর ঐ ছেলে কে আর ভাবির সাথে কিসের সম্পর্ক সব আমাকে জানতে হবে। ভাবি যদি খারাপ হয় তাহলে তো ভাইয়া শেষ হয়ে যাবে।

সুমির চিন্তা ভাবনা এমন হয়ে পরে যে ভাবি এখন যাই করুক আগে কাজটা শিখি ভালো কাজ পারলে সার্টিফিকেট সেলাই মেশিন সবই তো পাব। ভাবি তো আর কোথাও চলে যাচ্ছে না। কাজ টা শিখে ভাবিকে ধরব। ভাবির ব্যপারে ভাইয়ার কাছে সব পরে জানাব।

-কিরে কি ভাবছিস?
– মা তুমি টেনশন করো না। কিছু হবে না। আর ভাবির উপর খেয়াল রাখা দরকার। সুতরাং এখন ভাবির ছায়া হয়ে থাকতে হবে।
– আচ্ছা তাও মা তুই সাবধানে থাকিস। দোয়া করি আল্লাহ তোর মনের আশা পুরন করুন ( আমিন)

_______

– আচ্ছা ভাবি কিছু জানতে পেরেছ?
– হুমম ৩-৪ দিন পরেই শুরু হবে।
– সবাইকে নিবে?
– সেটা গেলেই জানতে পারব।

তারপর সুমির সাথে আমার অনেক ক্ষন কথা হয়। মায়ের ডাকে সুমি রান্না ঘরে চলে যায় আমিও এই সুজুকে তুহিন কে ফোন দেই।
– হ্যালো তুহিন
– হুমম লিমা বল।
– কবে থেকে কাজ শিখানো হবে?
– ১তারিখ থেকে।
– ওহ্হ আচ্ছা তাহলে তো ৪ দিন পর তাহলে আমার অনুমান ঠিক আছে। আচ্ছা কতদিনের কোর্স এটা?
– ৩ মাসের কোর্স।
– ওহ্হ আচ্ছা।
– তুমি কি তোমার জামাইকে বলছিলে তোমার এই কাজের কথা?
– না বলিনি।
– বল দেখ কি বলে।
– কি বলবে? যেতে দিবে না।
– কেন? দিবে না সে তোমার সব কথা শুনতে বাধ্য।
– আরে না কয়েক দিন ধরে কেমন যেন একটু পরিবর্তন আসছে।
– মানে কি?
– মানে সে আগের মতই আচরণ করে। কয়েকদিন আগে আমাকে বলে লিমা আমার যেন কেমন কেমন লাগে আমার মনে হয় আমি স্বাভাবিক না। আর নামাজেও কেমন যেন অমনোযোগী হয়ে গেছি।
আর তার মধ্যে সেই আগের মত স্বাভাবিকতা ফুটে উঠে।
– কি বল এসব আচ্ছা তুমি কি সেই তাবিজ ভিজিয়ে পানি পড়া খাওয়াও না?
– কয়েকদিন আমার খাওয়াতে মনে নেই।
-উফফ ডেম তুমি আজকে থেকে আবার শুরু করো।
– আচ্ছা মাই ডিয়ার।
_____

জানিস মিম আমি আগে সত্যি তুহিন কে অনেক ভালোবাসতাম আর তুহিন আমাকে ভালোবাসত আমি মনে করতাম ইউসুফ জুলেখার প্রেম এর মত। আর তুহিনের সাথে যোগাযোগ হওয়ার পর ওকে বন্ধু ভাবতাম কিন্তু জিবীন শেষ হবে বুঝতে পারিনি।

-আচ্ছা লঘিমা ইউসুফ জুলেখা কি আসলেই প্রেম করেছিল?
– আরে মিম না। এটা একটা মিথ্যা ধারনা। আমি অবশ্য সব কিছু হারানোর পর জানতে পারি। কিন্তু পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট এর ব্যাখা আছে।

– আচ্ছা লঘিমা কি ব্যাখা আছে একটু ক্লিয়ার কর তো।
– ওকে তাহলে শোন_____

“যারা প্রেমের রেফারেন্স এ ইউসুপ, জোলাইখা কে টানেন তাদের জন্য এই রেফারেন্স।

ইউসুফ আঃ কেন কারারুদ্ধ হলেন? কারণ তিনি তো ছিলেন নিরপরাধ?

এটা আছে পবিত্র কুর’আনে>>

(Yusuf 12:32)

قَالَتْ فَذَٰلِكُنَّ ٱلَّذِى لُمْتُنَّنِى فِيهِۖ وَلَقَدْ رَٰوَدتُّهُۥ عَن نَّفْسِهِۦ فَٱسْتَعْصَمَۖ وَلَئِن لَّمْ يَفْعَلْ مَآ ءَامُرُهُۥ لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُونًا مِّنَ ٱلصَّٰغِرِينَ

(আযীযের স্ত্রী যুলাইখা) বললো> এই সেই (ইউসুফ) যার সম্বন্ধে তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করেছ! আমি তো তার কাছে যৌন-মিলন কামনা করেছি; কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে! আমি তাকে যা আদেশ করি, সে যদি তা না করে, তাহলে অবশ্যই সে কারারুদ্ধ হবে এবং লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(অধ্যায় ১২,, সুরা ইউসুফ,, আয়াত ৩২)

এই আয়াত থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, মূলত আযীযের স্ত্রী #যুলাইখার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় তার আক্রোশের কারণেই #ইউসুফ আঃ #কারারুদ্ধ হয়েছিলেন!

এছাড়াও ইউসুফ আঃ দোয়া করেছিলেন ★

(Yusuf 12:33)

قَالَ رَبِّ ٱلسِّجْنُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِمَّا يَدْعُونَنِىٓ إِلَيْهِۖ وَإِلَّا تَصْرِفْ عَنِّى كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُن مِّنَ ٱلْجَٰهِلِينَ

ইউসুফ আঃ বলেছিলেন>>হে আমার প্রতিপালক! এই মহিলারা আমাকে যার প্রতি আহ্বান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার কাছে অধিক প্রিয়! আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তাহলে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। [১]

[১] ইউসুফ (আঃ) মনে মনে উক্ত দু’আ করেছিলেন। কারণ বিপদ-আপদে মুমিনের জন্য দু’আ একটি হাতিয়ার! হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে>> “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা ৭ ব্যক্তিকে তাঁর আরশের ছায়ার নিচে স্থান দেবেন! তাদের মধ্যে একজন হ’ল সেই ব্যক্তি, যাকে একজন সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত নারী কু-কর্ম করার জন্য আহ্বান করে। কিন্তু সে তাকে এই বলে উত্তর দেয় যে, আমি আল্লাহকে ভয় করি (৩) যেটা অত্র সুরার ২৩ নাম্বার আয়াতেই আছে। এবং আল্লাহ তা’আলা তাকে কারাগৃহ থেকে স্ব-সন্মানে মুক্তও করেন যেটা ১০০ নাম্বার আয়াতে উল্লেখিত আছে।

ইনশাআল্লাহ ইউসুফ আঃ কিয়ামতের দিন তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন যাঁরা মহান আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে স্থান পাবেন।

(৩)
সহীহ আল-বুখারী হা/৬৬০
সহীহ মুসলিম হা/১০৩১
সুনান আত-তিরমিযী হা/২৩৯১
মুসনাদে আহমাদ হা/৯৬৬৫

#বিঃদ্রঃ ইউসুফ আঃ এর সাথে জুলেখার বিয়ে হয়ে ছিলো এটা মিথ্যাচার। আর সঠিক নামটি হবে #যুলাইখা ,, জুলেখা নয়! তবে বাংলাভাষীরা #জুলেখা নামেই জানে! কিন্তু আমি নামটি #যুলাইখা ব্যবহার করলাম! কারণ আমি পবিত্র কুর’আন ও বিশুদ্ধ তাফসীর উপেক্ষা করে নামের বিকৃতি ঘটাতে পারিনা।

আশাকরি ইউসুফ জুলেখা নিয়ে যে বানোয়াট ধারনা চিল কিছু ভন্ড বেহায়া প্রেমিকদের কাছে তার কিছুটা হলেও অবসান হবে।

– ওহ্হ আচ্ছা আমিও তো এতে দিন ভুল জানতাম।

– আচ্ছা তারপর কি হয়েছিল?

আমি জায়েদ সাহেব কে রাতে আবার সরবত করে তাবিজ ভিজিয়ে পানি পড়া খাইয়ে দেই। তখন সে আমার দিকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,,,,,,,

( আসসালামু আলাইকুম। এখন থেকে রেগুলার গল্প দিব ইনশাআল্লাহ। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)


#আলো_থেকে_অন্ধকার
Part:-10
Writer:#Esrat_jahan_Esha

– আচ্ছা লিমা তুমি এরকম প্রতিদিন সরবত করে দাও আবার ঝগড়াও কর।
– মানে কি বলতে চান?
– আরে তুমি রাগ করছ কেনো আমি বলতে চাইছি যে তুমি সব সময় আমাকে চোখ গরমে রাখ যাই যা হয়ে যাগ কিন্তু সরবত খাওয়াতে ভুল না।

আমি ভ্রু কুঁচকে ওনার দিকে তাকালাম।
– আপনি শুধু আমার রাগারাগি টাই দেখলেন ভালোবাসা দেখলেন না। আপনি বাড়িতে আসার সাথে সাথে আমার মন অস্থির হয়ে উঠে আমি সাথে সাথে আপনাকে সরবত বানিয়ে দেই। সারাদিন কত খাটাখাটি করেন যাতে একটু হলেও ক্লান্তি দূর হয়।
আর আপনি আমাকে এমন ভাবে প্রশ্ন করেন যেন আমি আপনাকে বিষ দিতাছি।
– তা নয়। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাস তার জন্যই তো তুমি আমাকে ঝগড়া করার পর আবার ভালোবাস।
– হুমম বুঝতে হবে। বলেই আমি কান্না শুরু করে দিলাম। রাগের মাথায় কি বলি না বলি সেটা আপনি ধরে রাখেন।
– কি হলো এখন আবার কান্না শুরু করলে কেন?
– জানি না।
– মহা মুশকিল তো। কান্না থামাও প্লিজ।
– হুমম থামাব তবে একটা কথা আছে যদি রাখেন
– কি কথা বল
– আমি সেলাইয়ের কাজ শিখতে চাই।
– ওহ্হ এটা তো অনেক ভালো কথা।
-আপনি তাহলে যেতে দিবেন?
– যেতে দিব মানে? আমি তোমাকে মহিলা টিচার রেখে দিব সে এসে শিখাবে।
– নাহ ঐ খানে সেলাইয়ের কাজ শিখানো হবে ফ্রিতে আমি সেখানে যাব।
– নাহ ঘরে বসে শিখ।
– আমি যাব এটাই শেষ কথা।
– আচ্ছা।

জায়েদ আর কোনো কথা বাড়ালো না। সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

আজ ১ তারিখ সুমিকে নিয়ে আমি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেলাম। সুমি তো প্রশ্নের পর প্রশ্ন ভাবি আমি কি চান্স পাব। ভাবি তুমি তার সাথে কথা বলেছ?

– আরে হ্যা আমি কথা বলেছি। পাব মনে হয়।
– জানিনা ঐখানে গেলে কি হবে আজ। কত স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছি কাজ শিখতে।
– আমিও রে

– এ যে তোমরা এসে গেছ?
– হুমম তুহিন আমরা এসে গেছি। এখানে সব রেডি?
– হুমম সব ঠিক আছে। তোমরা ২ জনেই শিখতে পারবে। তবে অনেক কষ্ট হইছে ম্যানেজ করতে।
– ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের উপকার করার জন্য। এখন ঋনি আপনার কাছে। (সুমি)
– শুকনো ধন্যবাদে হবে না। (তুহিন)
-আচ্ছা আচ্ছা হইছে এখন চলো তো। (লিমা)
– আচ্ছা ভাবি এখানে ছেলে মেয়ে সবাই মিলে কাজ করবে? আমার কেমন জেন আনইজি লাগছে।
– তোমরা ২ জনের একজন কোনো টেনশন করো না। কেউ কিছু বল্লে আমাকে বলবে। আমি তো আছি নাকি। তোমরা মন দিয়ে কাজ শিখ।

এভাবে ১০ দিন ভালো মতই কাজ শিখি। বাড়িতে বসে ননদ ভাবি মিলে কাজ শিখি। আমি না পারলে সুমি দেখিয়ে দেয়। আর সুমি না পারলে আমি দেখিয়ে দেই।
সবই ঠিক ছিল। আবার তুহিন মাঝখানে এসে সব পেচ পাকিয়ে দিল।
– লিমা তোমার কাজ কেমন আগাচ্ছে?
– হুমম ভালোই।
– লিমা আজকে কাজ শিখা লাগবে না।
– চলো আজকে একটু ঘুরে আসি।
– কি বল? সুমি দেখলে বাড়িতে বলে দিবে।
– কিছু বলবে না। তুমি কাজ শেখার মাঝে বলবে আমার অনেক পেটে ব্যাথা বাড়ি যেতে হবে। তারপর সুমি আসতে চাইবে তুমি কিছু একটা বুঝিয়ে ওরে রেখে চলে আসবে। আমি ঐ বট গাছের নিচে অপেক্ষা করব।

– আচ্ছা চেষ্টা করে দেখি।

আমি তুহিনের কথামতই কাজ করলাম।

– সুমি এই সুমি।
– কি হইছে ভাবি বল।
– আমার পেট ব্যথা করছে আমি বরং বাড়ি যাই তুমি কাজ শিখ। তুমি ভালো করে শিখে আসো আমি তোমার থেকে শিখে নিব।
– আচ্ছা ভাবি যাও।

তারপর আমি ঐখান থেকে ছুটি নিয়ে চলে যাই তুহিনের সাথে।
– কি আসছ? আমি জানতাম তুমি আসবে।
– হুমম এসেছি। যা বলার বল।
– এখানে নয়। চলো অন্য কোথাও যাই লোকজন কি বলবে।
– হুমম তাও ঠিক চলো তাহলে।

তুহিন কে নিয়ে ঐদিন আমি অনেক ক্ষন ঘুরাফিরা করি। সুমি বাড়িতে যাওয়ার আগে আমিই বাড়িতে চলে গেলাম।

-সুমি তুমি এসেছ?
– হুমম ভাবি। তোমার পেটের ব্যথা কমছে?
– হুমম কমছে।
– কমলেই ভালো। আমি তো ভাবছি হটাৎ কেন ব্যথা হলো।

তারপর দুজনে মিলে ঘরের কাজ শেষ করে নিলাম। চোরের মনে সব সময় পুলিশ পুলিশ থাকে আমার অবস্থাও তেমন হলো। বার বার খালি ভাবছি যদি আমার বিষয় সবাই জানতে পারে তখন কি হবে? তাই কেউ যেন সন্দেহ না করে সব সময় সুমির সাথে আর শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করতাম।

এখন আমি প্রায় প্রায় তুহিনের সাথে দেখা করতে যাই। ওর সাথে অনেক ঘুরাঘুরি করি।

★★★
– লিমা আমার ছেলে কে কি খাওয়ালো? ধুর আমি ও শুধু শুধু টেনশন করছি সরবতি তো দিচ্ছে। হুমম সরবত কিন্তু হাতে ঐটা কি? সরবত এর মধ্যে ওটা ভিজানোর কি দরকার ছিলো?
সুমিকে কথা টা বলতে হবে ৷ বউয়ের মধ্যে কিছু তো একটা গন্ডগোল আছে।

– সুমি তুই কি কখনো খেয়াল করেছিস।
– কি?
– তোর ভাবি প্রতিদিন তোর ভাইয়াকে সরবত করে খাওয়ায়?
– সরবত খাওয়ায় এখানে দোষের কি মা? ভাই সারাদিন কত কাজ কর্ম করে আসে ভাবি ভাইয়াকে ভালোবেসে সরবত করে দেয় তা নিয়ে তোমার টেনশন
– চুপ থাক কথা না শুনে এত কথা বলিস না। তোর ভাবি সরবত দেওয়ার আগে কি একটা যেন তোর ভাইয়ার সরবতের মধ্যে টি ব্যাগ এর মত ভিজিয়ে রেখে আবার উঠেয়ে ফেলে।
– কি বল মা?

– হুমম তাই। আমার আগে থেকেই সন্দেহ হত। আমার বড় খোকা কখনোই এমন ছিল না৷ ওর আচার আচরণ সব কিছু অস্বাভাবিক।
– মা কালকে ভাইয়া আসলে খেয়াল করতে হবে৷

আজকে সুমি জায়েদ আসার সাথে সাথে ওদের উপর নজর রাখে। ঠিকি তো ভাবি সরবত করে আবার টি ব্যাগ এর মত এটা কি ভিজাচ্ছে?
লিমা আবার ঐ জিনিসটা জায়েদের বালিসের নিচে রেখে দিল।

সুমি ওর মায়ের কাছে সব ঘটনা খুলে বলে।
– তার মানে ঐ শাঁকচুন্নি আমার ছেলেকে বস করে রাখছে?
– মা সেটাই তো মনে হয়।
– কাল সকালেই আমি হুজুরের কাছে যাব।
– মা তার আগে আমরা যখন কাজ শিখতে যাব তুখন তুমি আমাদের নেমে যাওয়ার পর ভাইয়ার রুমে যাবে আর সব কিছু ভিতরে গিয়ে দেখবে। তাবিজ গুলো বেড় করে আনবে তারপর বিকালে আমি তুমি মিলে যাব হুজুরের কাছে৷
– আচ্ছা সেটাই হবে।

পরবর্তী দিন সুমি লিমা দুজনে কাজে শিখতে চলে গেল। সেই সুজুকে জায়েদ এর মা পুরু ঘর ভালোভাবে দেখে৷ তারপর জায়েদের বালিশের মধ্যে ২ টা তাবিজ পায় একটা বালিশের নিচে আরেকটা বালিশের ভিতরে।
★★★

আমি আর সুমি বাড়িতে চলে আসি। যখন আমি রান্নাঘরে গেলাম দেখি সুমি আর শ্বাশুড়ি মা দুজনেই গভির ভাবে আলোচনা করছে। আমি যাওয়াতে তারা থেমে গেল।
– ভাবি তুমি এসেছ? এই নাও ভাইয়া লাল শাখ এনেছে এগুলো কুটো।
– হুমম দাও আমার কাছে।

আজকে সুমিকে খেয়াল করলাম বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে মনে হয় আমাকে কখনো দেখেনি সেই ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
– সুমি তুমি বারবার এভাবে আমাকে কি দেখছ?
– সুমি লাফিয়ে উঠে। না ভাবি আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তাই তোমাকে দেখছি।
– পাগল ( হি হি হি)
– আচ্ছা ভাবি তোমার গলায় ঐটা কিসের তাবিজ?

কথাটা শুনে আমি চমকে গেলাম। কি বলব না বলব বুঝে উঠতে পারছি না।

– নাহ আসলে বাবু হওয়ার সময় আমার মা আমাকে দিয়েছিল যেন কোনো বদ নজর না লাগে।
– ওহ্হ ভাবি। তা তুমি তো আমাদের কখনো বলনি।
– সুমি এতো কথা বলিস না। ওর মা দিছে থাক বিয়ান হয়ত মেয়ের ভালোর জন্যই দিছে।

– মা আমি একটু ঘর থেকে আসি।
– আচ্ছা যাও।
ঘরে এসে আমি ২-৩ গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম। মনেহয় কলিজার পানি শুকিয়ে গেল।

বিকালে সুমি ওর মাকে নিয়ে হুজুরের কাছে গেল। তার হাতে ঐ তাবিজ ২ টা দিল আর সকল ঘটনা খুলে বলল।
– হুমম আপনাদের ধারনা ঠিক আছে এটা হল বসি করন তাবিজ যার জন্য আপনার ছেলের আচরণ আগের মত না।
– হুজুর তাহলে আমরা এখন কি করতে পারি।
– আপনি রুকাইয়া করেন। আর আমি এই তাবিজ নষ্ট করে দিচ্ছি।
– রুকাইয়া কি?( সুমি)
– কুরআন এর আয়াত দ্বারা সকল প্রকার জাদু টোনা বদ নজরের চিকিৎসা।
– ওহ্হ আচ্ছা। কিন্তু হুজুর তাবিজ দুটো আজকে সন্ধায় ভাবি না পেলে তো সন্দেহ করবে।
– সমস্যা না। আমি ভিতরের সব কিছু নষ্ট করে দিচ্ছি। আপনার এই তাবিজ আবার জায়গা মত রেখে দিবেন।
– আচ্ছা।

সুমি আর সুমির মা দুজনেই চলে আসে ঘরে। এসে দেখে লিমা আলিফ কে ঘুম পাড়াচ্ছে।

– সুমি ভাবি আলিফ কি ঘুম পড়ছে?
– হুমম এইতো ঘুমালো। কেন কিছু বলবে?
– নাহ আসলে মা তোমাকে ডেকেছিল। তারাতারি যেতে বলছে। আমি ততক্ষণ আলিফের পাশে বসি।
– আচ্ছা ঠিক আছে।

লিমা বেড় হওয়ার পরই সুমি তাবিজ গুলো জায়গা মত রেখে দিল।
আমার কাজ শেষ ভাবি। তুমি এবার তোমার জালেই ধরা পড়বে।

– মা আপনি আমাকে ডেকেছেন?
– হুমম আজকে এই ফুলের কাথাটা এঁকেছি। আসো ২ জনে মিলে এটা সেলাই করি।
– এই জন্য আমাকে ডাকা লাগে ভাবছি একটু ঘুমাবো এই বুড়ি এখান আমাকে দিয়ে কাঁথা সেলাই করাবে। যত্তসব। ( মনে মনে)
– কি হলো?
– আচ্ছা চেষ্টা করছি।
_______

৫-৬ দিন পর তুহিনের সাথে ঘুরতে যাই আজ সেটা সুমি জেনে গেছে। আজকে হয়ত বাড়িতে একটা তুলকালাম ঘটনা ঘটবে।

– ভাবি এই তুহিন কে? আর প্রতিদিন তুমি এর সাথেই দেখা করতে যাও কাজ না শিখে মিথ্যা বলে এখান থেকে চলে যাও। সেদিন জলিল চাচা আর সেলিম চাচা ২ জনই বলছে তোমার কথা। তুমি নাকি এই ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যাও। আবার রেহানা ভাবি সেও বলেছিল যে তোমার সাথে হয়ত কারো সম্পর্ক আছে৷

আজকে তো নিজের চোখে দেখলাম। এতটা নিচ তুমি হলে কিভাবে ভাবি?

– সুমি আসলে তুমি যা ভাবছ তা না।
– আমি কি ভাবছি সেটা বাসায় চলো তাহলে বুঝতে পারবে। চলো বাড়িতে আজ।

এদিকে সব কথা জায়েদ কে জায়েদ এর মা খুলে বলে। জায়েদ সব শুনে যেন চুপ হয়ে গেল।
আর হাউমাউ করে মায়ের পা ধরে ক্ষমা চাইল।
মা আমি এতদিনের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাই। আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিয়ে কথা বলিনি।

আর লিমা এতটা জঘন্য কিভাবে হলো আল্লাহ ও কেন এমন করল আমার ছেলের কি কোনো ভবিষ্যৎ নাই।

জানিস মিম এখান থেকেই আমার সব শেষের দিকে আমি এতটাই খারাপ ছিলাম যে পরবর্তী কথা গুলো শুনলে হয়ত তুইও আমাকে ঘৃর্না করতে শুরু করবি।

– কি বলিস এগুলো তুই কি এমন করেছিস?
,,,,,,,

,,,,,

বাড়িতে যাওয়ার পরই সবাই আমাকে একের পর এক প্রশ্ন শুরু করে। কি বলব কোনো উওর আমার কাছে নাই। নিজেকে তো যেভাবে হোক বাচাতে হবে।শেষ চেষ্টা করে দেখি।

তাই আমি সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিলাম।

– কি সমস্যা সবাই আমার সাথে এমন করছ কেন? আমি কি করেছি? আমি নাকি খারাপ বার বার খালি ঐ ছেলেটা কে কি সম্পর্ক এগুলো জিজ্ঞেস করছ? আমি ঐ ছেলেকে চিনি না। সব সুমি জানে সুমি আমাকে ঐ ছেলের ফোন নম্বর দিছে। মাঝে মাঝে ও কথা বলত। সুমি কে জিজ্ঞেস করো কে ঐ ছেলে।

এর জন্যেই তো আগে ঘরে অশান্তি হয়েছে। সুমি আমার ফোন দিয়ে কথা বলত সেটা আমি ধরে ফেলি আর সুমি আমাকে বলতে বাড়ন করে তাই আমি কিছু বলেনি। আমি নিজে দোষ মাথায় নিছি ওর জন্যই তো ঘরে এত অশান্তি।

– ভাবি???
– চুপ কর আর একটা কথাও বলবে না আজকে তোমার সব কুকির্তি ফাঁস করে দিব। আজ আর কিছু লুকিয়ে রাখতে যাব না।

– এগুলো সব মিথ্যা।
– সব মিথ্যা তাহলে এই ছবি গুলো কি মিথ্যা??????

চলবে,,,,,,,,,

( আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী পার্টে শেষ করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ)

আগের পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here