#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ৬
পরেরদিন বিকালে আমি যখন আবার ছাঁদ থেকে কাপড় আনতে গেলাম। আবার আমাদের ছাঁদে পায়রাদের হানা। আবার ও পায়রার পায়ে চিরকুট বাঁধা। অতএব এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমাকে আবার ও পায়রার পা থেকে চিরকুট খুলে নিতে হলো।
আবার ও আমি চিরকুট নিয়ে নিচে চলে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে আমি আমার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। আজকের চিরকুট খুলে আমি দেখলাম তাতে লিখা,
” তুমি আমার হাতের লিখা দেখ? তোমাকে চিরকুট লিখতে গিয়ে কতশত পৃষ্ঠা যে আমি নষ্ট করেছি হিসাব নেই। তোমাকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলেই আমার হাত কাঁপে। জানি না কেন! যেভাবেই লিখি না কেন! যত সুন্দর করেই লিখি না কেন। তোমার মার্জিত আচার-আচরণের কথা আমি উল্লেখ করতে পারবো না। এত নম্রতা ভদ্রতা নিয়ে কীভাবে কথা বলো তুমি?”
এই চিরকুট পড়ে আমার বেশ রাগ হলো। চেনা নেই জানা নেই একজনকে এভাবে তুমি করে কথা বলে কেউ? যে এই চিরকুট গুলো লিখছে সে নির্ঘাত পাগল! নাহলে এমন পাগলের মতো কাজকর্ম কোনো সাধারণ মানুষ করবে না।
আমি আবার ও চিরকুট লিখতে বসলাম। এবার চিরকুটে বেশি কিছু লিখিনি। শুধু লিখেছি,
” আচ্ছা আপনার হাত কী ফুট ম্যাসেজার না কি যে চিরকুট লিখতে গেলে এত কাঁপে? আগে নিজের হাতকে ঠিক করুন। ভালো মতো লিখতে শিখুন। তারপর নাহয় চিরকুট লিখবেন! ”
আমার লিখা চিরকুট পরে সেই চিরকুটের মালিকের কাছে; পৌঁছে ছিল কি না আমি তা জানি না। আমি আজ কয়েকদিন যাবত ছাঁদে যাই না। এত ঘনঘন ছাঁদে যেতে দেখে আম্মা ওইদিন খুব বকেছেন। একারণেই আর যাই না ছাঁদে।
দুপুরে জানালার খুলে জানালার সামনে বসে ছিলাম। এখন যেহেতু আর বর্ন জানালার সামনে থাকেন না। তাই ইচ্ছে করলেই আমি যখন তখন জানালা খুলতে পারি।
জানালা খুলে আমি পাঁচ মিনিট বসে ছিলাম। যখনই জানালার সামনে থেকে চলে আসছিলাম। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি সামনে কয়েকটা পায়রা! জানালার গ্রিলে বসে আছেন তারা। অবাক করার বিষয় হলো। সব গুলো পায়রার মধ্যে আজকেও একটা পায়রা-র পায়ে চিরকুট বাঁধা।
তারপর বুঝতে পারলাম চিরকুট প্রদানকারী অন্য কাউকে না। বরং আমাকে উদ্দেশ্য করেই চিরকুট গুলো লিখছেন।
আমি তাড়াতাড়ি করে চিরকুটটা পায়রার পা থেকে খুলে নিয়ে জানালা বন্ধ করে দিলাম। কী যে শুরু হলো আমার সাথে! কে চিরকুট দিচ্ছে তাও জানা নেই! জানলে অবশ্য সেই চিরকুট প্রদানকারীকে কড়া গলায় কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতাম।
আমি আজ অন্য দিনকার মতো এতটা উৎসাহের সাথে চিরকুটটা খুললাম না। বরং বেশ বিরক্তি নিয়েই চিরকুটটা খুললাম। খুলে দেখি চিরকুটে লিখা আছে,
” চিরকুট লিখার সময় আমার হাত কাঁপাটাই তুমি দেখ। কিন্তু তোমারে দেইখা যে আমার বুকটা কাইপা ফালা ফালা হইয়া যায় সেইটা তুমি দেখ না? আসোনি কেন এই কয়দিন ছাঁদে? আমার পায়রাগুলো তোমাকে না পেয়ে বারবার চিরকুট নিয়ে ফিরে এসেছে। এখন কিন্তু আগের থেকে হাতের লিখা বেশ ঠিক হয়েছে আমার। হাত যদিও এখন ও কাঁপে তোমাকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে। কিন্তু তবুও চেষ্টা করি সুন্দর করে লিখতে। ”
আমি আসলেও দেখলাম চিরকুট প্রদানকারীর হাতের লিখা;আগের থেকে বেশ সুন্দর হয়েছে। লিখাও ঠিকঠাক বোঝা যায়। আর বানান ও ভুল হচ্ছে না। আমি ওইদিন চিরকুট প্রদানকারীকে আর কিছু লিখলাম না। তাঁর চিরকুটের জবাব দিয়ে নতুন করে কোনো চিরকুট ও লিখলাম না।
পরেরদিন সকালে ছাঁদে গিয়ে ভালো করে দেখলাম আসলে এই পায়রা গুলো কোন ছাঁদে থাকে। আর এই পায়রা গুলোর মালিক-ই বা কে?
ঠিকমত খেয়াল করে দেখলাম বর্নদের বাড়ির ঠিক পাশের বিল্ডিংটা থেকে পায়রা গুলো আসছে। বর্ন যদিও এখন এখানে থাকেন না। তবুও বর্নদের বাড়ি থেকে পায়রা গুলো আসলে মানা যেতো। কিন্তু পায়রা গুলো আসছে বর্নদের পাশের বাসার ছাঁদ থেকে। আমি যতদূর জানি ওখানে কেউ পায়রা পোষে না।
অনেকক্ষন চিন্তা ভাবনা করে বুঝতে পারলাম এই পায়রা গুলো বর্ণের না। কারন বর্ণ যেহেতু এখানে থাকেন না। তাই তাঁর পায়রাও আমাদের ছাঁদে আসবে না। আর যদি এগুলো বর্ণের পায়রা হয়েও থাকে তবে বর্ণদের বাড়ির ছাঁদ থেকে না এসে;বর্ণদের পাশের বাড়িটার ছাঁদ থেকে কেন আসছে? নাহ! সবটাই কেমন যেন গোলমেলে লাগছে! একটা বিরাট ধাঁধার মধ্যে আঁটকে গেছে আমার জীবনটা। কিন্তু ধাঁধা যেহেতু আছে তাঁর উওর ও সেহেতু আছে। তাই আমার এখন উচিত তাঁর উওর খুঁজে বের করা।
বসে বসে বিরক্ত হচ্ছিলাম। তাই ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে পড়লাম। ফেসবুকে যারা আমার সাথে এড আছে সবাই আমার আত্নীয় স্বজন। তবুও আমি তেমন কারো সাথেই কথা বলি না। অন্যদের মতো খুব বেশি সময় ফোন হাতেও থাকে না আমার। ফোন বেশিক্ষন ইউজ করতে দেখলেই আম্মা রাগারাগি করেন। তাই ফোন খুব কমই ইউজ করা হয়। মানে প্রয়োজন ব্যতীত আমি ফোনে হাত দেই না।
ফেসবুকে কারো সাথে কথা যেহেতু বলি না। সেহেতু অন্যের আইডিতে ঘুরাঘুরি ছাড়া ফেসবুকে আর কোনো কাজ নেই আমার। টুং করে ফোন থেকে একটা নোটিফিকেশন আসার আওয়াজ পেলাম আমি। চেক করে দেখি কে যেন ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছে। আমি অপরিচিত কোনো মানুষের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করি না। তাই ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টটা ডিলিট করে দিলাম।
এমনি ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করার সময়, আমাকে কয়েকটা আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠানোর জন্য রিকমেন্ড করা হলো। আমি দেখছিলাম এখানে আমার পরিচিত কেউ আছে ; কি না যাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দেওয়া যায়। কিন্তু আমি নিরাশ হলাম। নাহ, এখানে আমার পরিচিত কেউ নেই। কিন্তু হঠাৎ দেখি একটা আইডি যেখানে বর্ণের ছবি দেওয়া। আইডিটা হয়ত বর্ণেরই।
আমি বেশ কৌতুহলের সহিত বর্ণের আইডিতে ঢুকলাম। ভেবেছিলাম হয়ত ওনার প্রোফাইল লক করা থাকবে। কিন্তু না এমন কিছুই না৷ ওনার আইডি লক করা ছিল না।
এরপর আমি আরামসে বর্ণের আইডি ঘুরতে লাগলাম। আইডিতে ওনার নানা রকমের পোজে ছবি আপলোড করা। আরও অনেকের সাথেই ছবি তুলে আপলোড করেছেন তিনি। কিন্তু আমি ওখানের কাউকেই চিনি না। আচ্ছা আমি তো বর্ণকেও ঠিক মতো চিনি না। আসলেই চিনি কী? না চিনি নাহ! চেহারার চেনা কখনোই আসল চেনা হতে পারে না। চেহারা তো শুধু চোখের চেনা। চোখের চেনা আর মনের চেনার মধ্যে বিস্তর তফাত। আমি শুধু বর্ণকে চোখের চেনাই চিনি। মনের দিক থেকে বর্ণ এখন ও আমার কাছে অচেনা একজন মানুষ।
পরেরদিন দুপুর বেলা জানালা খুলতেই আবার আগের দিনের মতো পায়রা উড়ে বসলো। আজকে আবার ও একটা পায়রার পায়ে চিরকুট বাঁধা। আমি চিরকুটটা নিয়েই টেবিলের উপরে রেখে দিলাম। অচেনা মানুষের চিরকুট পড়তে মোটেও ইচ্ছে করছিল না আমার। তাই চিরকুটটা নিয়েই রেখে দিয়েছিলাম।
কিন্তু এই চিরকুটের জন্যই যে আবার বিপদে পড়বো তা কে জানতো?
আমি বিকালের দিকে জানালা বন্ধ করে আমার রুম থেকে; বের হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। আম্মা কখন আমার রুমে ঢুকেছেন তা আমি বুঝতে ও পারিনি। আমি যেহেতু টিভি দেখছিলাম তাই আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ টিভির দিকেই ছিল। কে কী করছিল তা খেয়াল করিনি।
আম্মা আমার রুমে ঢুকেছেন এটা যখন আমি বুঝতে পারলাম;তখন সাথে সাথে আঁতকে উঠলাম। চিরকুটটা আমি টেবিলের উপরেই ফেলে এসেছি। এখন যদি ওটা কোনো ভাবে ; আম্মার হাতে পরে তো আম্মা আমাকে আর আস্ত রাখবেন না।
আমি যখন আম্মার ভয়ে চুপচাপ বসে আছি। ঠিক তখনই আম্মা আমাকে উদ্দেশ্য করে আমার ঘর থেকে বললেন,
— এই মেহুল! তুই এখনি আমার সামনে আয়। জলদি আয়!
আমার ভয়ের মাত্রা আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারলাম আম্মা ওই চিরকুট পড়ে ফেলেছেন। আমি ভয়ে ভয়ে কোনো রকমে আমার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।
#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ৭
আমি ভয়ে ভয়ে আমার রুমে ঢুকলাম। আমাকে দেখেই আম্মা চিৎকার দিয়ে বললেন,
— কতদিন বলেছি বারান্দার দরজা খুলবি না? আর খুলেছিস যখন লাগিয়ে দিসনি কেন বারান্দার দরজা-টা? এই সময় বারান্দার দরজা খোলা রাখলে যে ঘরে মশা আসে জানিস না তুই?
আমি একটা শান্তির নিশ্বাস ফেলাম। যাক আমার হাতে ওই চিরকুটটা পড়েনি। চিরকুটটা একবার আম্মার হাতে পড়লে আমার খবর হয়ে যেত। আমি এবার আম্মার কথার জবাব দিয়ে বললাম,
— আমার মনে ছিল না আম্মা। আর হবে না কখনো।
— হুম, আর যেন না হয় এরকম। মশার কামড়ে কত রোগ বালাই হয় জানিস? ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুসহ আরও অনেক রোগ হয়। ভুলেও এই সময় বারান্দার দরজা খুলবি না।
— আচ্ছা আম্মা।
আম্মা এটা বলেই বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমার রুম থেকে চলে গেলেন। আমি এবার কোনো রকমে চিরকুটটা নিয়ে একটা ভালো জায়গায় রেখে দিলাম। সময় পেলে রাতে পড়বো। কিন্তু এখন কোনো ভাবেই সম্ভব না।
আমি সব কিছু ঠিকঠাক করে আবার ড্রয়িংরুমে চলে আসলাম। কিছুক্ষন পরে আবার রুমে গিয়ে বসতে না বসতেই হঠাৎ লাইটটা অফ হয়ে গেল। লাইটের সুইজ নিয়ে অনেকক্ষন নাড়াচাড়া করার পরও লাইট আর জ্বলে উঠলো না। বুঝতে পারলাম লাইটটা ফিউজ হয়ে গিয়েছে।
আম্মা রান্নাঘরে ছিলেন। আমি রান্নাঘরে ঢুকে আম্মাকে বললাম,
— আম্মা লাইটটা ফিউজ হয়ে গিয়েছে। আব্বাকে বলো আসার সময় ভালো মিস্ত্রি নিয়ে আসতে।যেন নতুন লাইট লাগিয়ে দিয়ে যায়।
— আচ্ছা।
আব্বা আসার সময় মিস্ত্রি নিয়ে আসলেন। মিস্ত্রি যখন ঘরে কাজ করছিল তখন আম্মা আমাকে পাশের ঘরে গিয়ে বসতে বললেন।
আমি যখন দরজা খুলে পাশের রুমটায় ঢুকলাম; তখন আমার বুকটা কেঁপে উঠল। এই ঘরে আমার কত স্মৃতি! শুধু আমার না আমাদের। কিন্তু যাঁর সাথে স্মৃতি গুলো সেই মানুষটাই নেই।
আরেকটা বার যদি তোমাকে পেতাম! তোমাকে আরেকটাবার দেখতে না পাওয়ার আফসোস আমার কখনোই যাবে না! সারাটা জীবন আমি এই আফসোসের ঘানি টানবো। জানো তো? আফসোস নিয়ে বেঁচে থাকাটা কতটা কঠিন? তোমাকে ছাড়া বাড়িটা বড্ড খালি খালি লাগে। সবাই আছে শুধু তুমিই নেই! তুমি যদি থাকতে! তোমার একটা ভুল তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দিলো। শুধু আমার না! সবার কাছ থেকেই!
আমার মনটা হুট করেই খারাপ হয়ে গেল। কারনটা আমার নিজের ও অজানা নয়। মাঝে মধ্যে খুব কষ্ট হয়। নিজেকে খুব একা একা মনে হয়। মনে হয় আমার কেউ নেই কিছুই নেই। ছন্নছাড়া মনে হয় নিজেকে।
রাতের বেলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে আসলাম। খুব সর্তকতার সাথে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম। এরপর সেই গোপন স্থান থেকে সেই চিরকুটটা বের করলাম। আজকের চিরকুটে লিখা ছিল,
” চিরকুট পড়ে অবশ্যই তাঁর জবাব হিসেবে আরেকটা চিরকুট লিখা উচিত। একটা ছোট্ট করে চিরকুট তো লিখতেই পারতে! তোমার লিখা চিরকুট গুলো আমার পড়তে যে কী ভালো লাগে তা যদি তুমি বুঝতে! আমি তোমার লিখা সবগুলো চিরকুট রেখে দিয়েছি। বারবার করে পড়ি শুধু। যতই পড়ি ততই ভালো লাগে। মনে হয় চিরকুট গুলো বাঁধিয়ে রাখি দেয়ালে। দিনে দশবার করে আয়নার মতো তোমার চিরকুট গুলো দেখব। ”
আমি চিরকুটটা পড়ে কলম হাতে নিয়ে বসে রইলাম। চিরকুটের উত্তর হিসেবে কী লিখবো তা বুঝতেই পারছিলাম না। শেষে ছোট্ট এক টুকরো কাগজে লিখলাম,
” আপনি কে তা যদি জানাতেন খুব খুশি হতাম। আমি আসলে জানি না। আপনি কে? হয়ত আপনি যাকে উদ্দেশ্য করে চিরকুট গুলো লিখছেন আমি সে না। ভুল তো হতেই পারে। আপনি দয়া করে নিজের পরিচয়টা দেবেন। ”
চিরকুটটা লিখে আমি খাতার নিচে রেখে দিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাঁদে গিয়ে চিরকুটটা ছাঁদের এক কোনায় রেখে এলাম।
বিকালে আবার যখন ছাঁদের গাছে পানি দিতে গেলাম। তখন দেখি নতুন চিরকুট হাজির। আমি খুব সাবধানে আমার ওরনার কোনায় জট বাঁধিয়ে রেখে দিলাম চিরকুটটাকে।
তাড়াতাড়ি নিচে গিয়ে চিরকুটটা খুলে দেখি তাতে লিখা,
” আমি কোনো ভুল মানুষকে উদ্দেশ্য করে চিরকুট লিখছি না। আমি তোমাকেই লিখছি। তোমার নাম তো মেহুলিকা। আর আমি এই মেহুলিকা-কেই উদ্দেশ্য করে চিরকুট গুলো লিখছি। মেহুলিকা আমি শুধু তোমাকে চিনি-ই না। আমি তোমাকে দেখেছি ও। তোমার ভাষা, কথাবলার ভঙ্গি, তোমার বুদ্ধিমত্তা, তোমার আচরন বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করে। তুমি আমার পরিচয় জানতে চাও তো? আমি অবশ্যই আমার পরিচয় দেবো। আমি নিজেও অপেক্ষায় ছিলাম কবে তুমি আমার পরিচয় জানতে চাইবে। আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ। আমি খুব শীগ্রই তোমাকে আমার পরিচয় দেবো। ”
আমি এবার বড়সড় একটা চমক পেলাম। আমি চিনি না তাঁকে কিন্তু উনি আমাকে ঠিকই চেনে। আচ্ছা, উনি কী আমার পরিচিত কেউ? হতে ও তো পারে। আমি ও তাঁকে চিনি।
অতএব এসব চিন্তা করতে করতে আমি আবার এক গোলকধাঁধায় আঁটকে গেলাম। আমি যতই এই ধাঁধার সমাধান করতে চাই। ততই ধাঁধাটির রহস্য জাঁলে আঁটকে যাই। মন চাইলো একটা গল্প লিখে ফেলতে। গল্পের নাম হবে একটা
গোলকধাঁধার রহস্য এবং আমি!
আমি আবার একটা চিরকুট লিখলাম,
” আমি চাই আপনি খুব তাড়াতাড়ি আপনার পরিচয় আমাকে দিন। আপনি কে তা জানার জন্য আমার মন খুব উদ্বীগ্ন। ”
সাথে সাথে ছাঁদে গিয়ে চিরকুটটা ছাঁদের কোনায় ফেলে রেখে আসলাম।
ছাঁদ থেকে নিচে নেমে আসার পর। আম্মা আমাকে ইচ্ছেমত বকা দিলেন। বললেন বেশি যেন ছাঁদে না যাই। আমি কোনো রকমে আম্মাকে শান্ত করে বলেছি আম্মা আর কখনো যাবো না। আম্মাকে এটাও বললাম যে, এরপর থেকে ছাঁদে গেলে আম্মার অনুমতি নিয়ে যাবো।
আমি রাতেও বসে বসে চিন্তা করলাম আসলে ওই চিরকুটের মালিক কে হতে পারে?
এসব চিন্তা করতে করতেই আনমনে জানালা খুলতেই দমকা হাওয়ায় আমার হৃদয় জুড়িয়ে গেল। ঠান্ডা বাতাস আমার মন এবং শরীর দুটোকেই শান্ত করলো। এসব ভাবতেই সামনে তাকিয়ে দেখি, পাশের বাসার ওই জানালা খোলা। এবং সেখানে বর্ণ বসা। আমার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। মাথায় তখন একটা কথাই আসলো তা হলোঃ পুরান পাগলের ভাত নাই আবার নতুন পাগলের আমদানি।
এখন আবার কিছুদিন এই জানালা বন্ধ করে রাখতে হবে। ইস! আমার হয়েছে মহা বিপদ। সব দিকেই যন্ত্রনা আমার। শান্তিই নেই কপালে!
সকালে কলেজে গিয়ে ক্লাসে ঢুকেই আরেকটা অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হলাম। আমার এক ক্লাসমেটের সাথে আরেক ক্লাসমেটের তুমুল ঝগড়া। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়ত কোনো বড় কারণেই ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু নাহ! ঝগড়াঝাটি শেষে শুনলাম এদের দুজনের ঝগড়া হয়েছেই মূলত বয়ফ্রেন্ড নিয়ে। কার বয়ফ্রেন্ড বেশি ভালো। কার বয়ফ্রেন্ড বেশি কেয়ার করে এইসবই ঝগড়াঝাটির মূল বিষয়। আমার কাছে সবচেয়ে অবাক করার মতো ঘটনা যেটা মনে হলো সেটা হলোঃ এত অল্প বয়সেই এদের বয়ফ্রেন্ড ও আছে? বয়ফ্রেন্ডের জন্য এরা আবার এত ঝগড়া ও করে? কী জানি! হয়ত সবারই বয়ফ্রেন্ড আছে। শুধু আমিই বাদে।
আমি কলেজ থেকে যদিও আম্মার সাথেই বাসায় আসি। তবুও কলেজ থেকে বের হয়ে একটা জিনিস খেয়াল করি। তা হলো গার্লস কলেজ ছুটি হলেই মেয়েরা বের হয়ে একেকজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যায়। কলেজ ছুটি হলেই বের হয়ে দেখি কমপক্ষে ৩০-৪০ জন ছেলে তো দাঁড়িয়ে আছেই। আমার কাছে প্রথম প্রথম এই ব্যাপারটা অস্বাভাবিক মনে হতো৷ কিন্তু এখন স্বাভাবিকই মনে হয়।
চলবে….
চলবে…