আষাঢ়ে প্রেমের গল্প পর্ব -০৪+৫

#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ৪

জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বর্ণ আর আমি একটা বুদ্ধি বের করলাম।

সকালে আব্বার সাথে স্কুলে গিয়ে ক্লাস করলাম। কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পর আজকে আর কোচিং করলাম না। শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে বাড়ি চলে আসলাম। বাড়ি আসার পথেই বর্ণের সাথে দেখা হলো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন উনি। আমাকে দেখেই কালকে যে-ই বইটা আমাকে দেবেন বলেছিলেন ওটা এগিয়ে দিলেন। আমি তাড়াতাড়ি করে ওনার হাত থেকে বইয়ের প্যাকেটটা নিয়ে বললাম,

— ধন্যবাদ, আপনি একন বইটা না দিলে আমার এখন বইটা পড়াও হতো না। কবে আমি বড় হতাম আর কবে বইটা পড়তাম।

— হাহা, ওয়েলকাম। এরপরের বার আপনার সাথে দেখা হলে আপনাকে আরও বই গিফট করবো।

— হিহি, আচ্ছা আমি যাচ্ছি। বিদায়, ভালো থাকবেন।

— জি আপনিও।

এরপর বর্ণ বর্ণের মতো চলে গেলেন। আর আমি আমার মতো চলে আসলাম।

আমাকে এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে দেখে আম্মা বললেন,

— কীরে মেহুল আজকে এত তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিলো?

আমি কোনো রকমে ভয়ে ভয়ে আম্মাকে বললাম,

— আম্মা আজকে আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। তাই চলে এসেছি।

— কেন কী হলো আবার তোর হঠাৎ?

— আজকে যে-ই গরম সকাল থেকে তাই গরমে মাথা ঘোরাচ্ছে।

— আচ্ছা যা তুই বিশ্রাম কর। আমি তোকে একটা প্যাকেট স্যালাইন বানিয়ে দিচ্ছি। শরীরটা ভালো লাগবে তাহলে।

— জি আম্মা।

আমি আমার রুমে ঢুকে দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলাম। এরপর ব্যাগটা টেবিলের উপরে রেখে ব্যাগটা খুলে বইয়ের প্যাকেটটা হাতে নিলাম। বইয়ের প্যাকেটটা খুলে দেখি প্যাকেটের ভেতরে তিনটা বই। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার তিনটাই একই লেখকের বই। মানে তিনটা বই-ই হুমায়ূন আহমেদের লিখা। প্রথম বইটার নাম অপেক্ষা। পরের বইটার নাম তোমাকে। আর তাঁর পরের বইটার নাম অনীশ।

আমি খুব যত্ন সহকারে আলমারিতে বইটা লুকিয়ে রাখলাম। কারন আম্মা কোনো ভাবে বই গুলো দেখে ফেললেই; আমাকে আবার বকাঝকা করা শুরু করবে।

এরপর ওইদিন রাতে জানালা খুলে আমি আর বর্ণকে দেখতে পেলাম না। বুঝতে পারলাম বর্ণ আসলেই চলে গেছেন। বর্ণ চলে যাওয়ার কথাটা মনে হতেই আমার একটু মন খারাপ হলো বটে। তবে আম্মা হুট করে জানালা খুললে বর্ণকে দেখতে পাবেন না। এই কথাটা মনে হতেই একটু শান্তির নিশ্বাস ফেলেছি।

বর্ণের দেওয়া বই গুলো শেষ করতে আমার ১০ দিনের মতো লেগেছিল। আম্মা যখন আশেপাশে থাকতেন না। তখন লুকিয়ে লুকিয়ে বই গুলো পড়তাম। এখন গল্পের বই পড়ার নেশাটা যেন আরও একটু বেড়ে গেছে।

এইসবের পর আমি জানালা খুললেও বর্ণকে দেখিনি।হয়তো বা বর্ণ আর এখানে আসেন ও নি।

আমি ভেবেছিলাম হয়তো বর্ণ আবার এভাবেই আসবেন। কিছুদিন পরেই চলে যাবেন। তবে আমার ধারণা বরাবরের মতোই ভূল প্রমাণিত হলো। বর্ণ আর আসেননি।

এরপর আমি আবার আমার নিজের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বর্ণ নামক ব্যাক্তিটাও আমার জীবন থেকে সরে গেল। এরপর আমি S.S.C পরীক্ষা দিলাম। পড়াশোনায় মনোযোগী থাকায় রেজাল্ট ও বেশ ভালো হলো।

এরপর আমি একটা ভালো কলেজে চান্স পেলাম। আব্বা আম্মা খুব খুশি হলেন আমাকে এত ভালো একটা কলেজে চান্স পেতে দেখে। আব্বা খুশি হয়ে আমাকে একটা টাচস্ক্রীনের মোবাইল কিনে দিলেন। আমি খুব আগ্রহে সেটা নিয়ে চালানো শুরু করলাম। মাঝখানে অমালিকা আপা বাসায় এসেছিল তখন আপা আমাকে একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিয়েছিল। প্রোফাইল পিক আর কভার পিক দেওয়া হলো আমাদের বাসার ছাদের ফুলের পিক। আমি চেনা পরিচিত কিছু আত্মীয় স্বজনকেই রিকুয়েষ্ট দিয়েছিলাম। তারা একসেপ্ট ও করেছিল।

প্রথমদিন যেদিন কলেজে গেলাম ওইদিন ভয় লাগছিল খুব। এরপর আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হতে শুরু করল। কলেজে ভর্তি হওয়ার এক মাসের ভেতরই আমাদের কলেজে নবীন বরন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা শুনলাম। নবীন বরন অনুষ্ঠানের কথা শুনে আমি আর আমার বান্ধবী মনিরা অনেক পরিকল্পনা করলাম। আমরা ওইদিন কী পড়বো না পড়বো এইসবই ছিল আমাদের পরিকল্পনার মুখ্য বিষয়।

মনিরার সাথে আমার বন্ধুত্বটা মূলত প্রথম দিন থেকেই। প্রথম দিন কলেজে আসার পর থেকেই মনিরা সঙ্গে আমার খুব ভালো ভাব হয়ে গিয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা আম্মা ও আমাকে মনিরার সাথে মিশতে কোনো বাঁধা দেননি। উল্টো কলেজ ছুটি হলে নিচে এসে দেখতাম আম্মা আমাকে নিতে এসেছে কিনা। তখন দেখতাম আম্মা আর আন্টি মানে মনিরার আম্মু ওনারা দুজন একসঙ্গে বসে গল্প করছে। আম্মার সাথে আন্টির খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। একারণেই হয়ত আমাকে মনিরার সাথে মিশতে মানা করেন না।

আমি আর মনিরা মিলে ঠিক করলাম আমরা নবীন বরন অনুষ্ঠানের দিন একই রকম শাড়ি পড়বো। আম্মাকে এটা বলার পর আম্মা আমাকে আর মনিরাকে একই রকম শাড়ি কিনে দিলেন।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আব্বা আমার আর মনিরার জন্য ফুলের ক্রাউন আনতে গেলেন।শুধু ক্রাউন না ফুলের গহনা ও আছে সাথে। আমি আব্বাকে বলে কাল রাতে ফুল ওয়ালাকে বানাতে বলেছি।

আম্মা আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন। চুল বেঁধে দিলেন। ফুলের গহনা গুলো ও পড়িয়ে দিলেন। এরপরে সাজগোজ আমি একাই করেছি।

আমার সাজগোজ করা শেষ হওয়ার পর আম্মা আর আমি বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলাম। মনিরার ফুলের গহনা গুলো একটা প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতরে নিয়ে নিয়েছি। কলেজে গিয়েই ওকে দিয়ে দেবো।

কলেজে গিয়েই মনিরাকে ওর ফুলের গহনা গুলো দিয়ে দিলাম। আমি মনিরাকে সুন্দর করে ফুলের গহনা গুলো পরতে সাহায্য করলাম। এরপর আমাদের আসল অনুষ্ঠান শুরু হলো। আমি আমার নতুন ফোন দিয়ে ছবি তুললাম। ফোনের ক্যামেরাটা দারুন। খুব ভালো ছবি তোলা যায় ক্যামেরাটা দিয়ে। যেহেতু আমাদের কলেজটা গার্লস কলেজ। সেহেতু এখানে আমরা সবাই মেয়ে।তাই আমরা আমাদের ইচ্ছেমত আনন্দ করেছি।

বাসায় আসার পর আমার রুমে গিয়ে দেখি রুমের জানালা, বারান্দার দরজা সব খোলা। পরে হঠাৎ মনে পড়লো সকালে যখন আম্মা আমার রুমে এসেছিলেন; তখন আম্মাই দরজা, জানালা গুলো খুলেছিলেন।

আমি ক্লান্ত ছিলাম তাই শাড়ি গহনা খুলে একটু বিশ্রাম নিতে চাচ্ছিলাম৷ তাই বারান্দার দরজা বন্ধ করে যখন জানালা বন্ধ করবো। তখন জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আমি একজনকে দেখলাম। সে আর কেউ না। বর্ণ! বর্ণ আমাকে দেখার আগেই আমি জানালা বন্ধ করে দিলাম ❝সব সময় সব মানুষকে দেখা ভালো না। এতে দুরত্ব কমলেও মমত্ব বাড়ে❞

এর কয়েকদিন পরেই সকালে কলেজে যাবো। তাই ঘুম থেকে উঠেই জানালা বন্ধ করছি। এমন সময় আবার বর্ণের দেখা পেলাম।

বর্ণ আমাকে দেখলেন আমিও খেয়াল করেছি বর্ণ আমাকে দেখেছেন। তবুও আমি বর্ণকে না দেখার ভান করে চলে এসেছি। হয়ত আমি বর্ণের দিকে তাকালে বর্ণ নিজে থেকেই কথা বলতেন। কিন্তু দরকার কী কথা বলার? কী বা বলার থাকতে পারে? আমি তো ঠিকমত চিনি না ওনাকে এতটা। তাই কথা শুরু করবোই বা কী বলে?

কলেজ ছুটি হওয়ার পর বাসায় এসে চিন্তা করেছিলাম একবার ছাঁদ থেকে ঘুরে আসবো৷ কিন্তু আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কয়েকদিন ধরেই ছাঁদে যাব যাব বলে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। আব্বাকে বলেছি কালকে নতুন কয়টা ফুল গাছের চারা নিয়ে আসতে। জানি না আব্বার মনে আছে কি না। মনে না থাকলে আজ আবার মনে করিয়ে দিবো। ছাঁদে ফুল গাছ না থাকলে ছাঁদটা বড্ড খালি খালি লাগে। হয়ত ছাঁদটাও আমাদের মানুষদের জীবনের মতো। জীবনে প্রিয় মানুষ না থাকলে যেমন জীবনটা খালি খালি লাগে হয়ত ছাঁদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।
#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ৫

রাতে আব্বা আম্মার সাথে এক সাথে খেতে বসার সময়, আব্বাকে মনে করিয়ে দিলাম নতুন গাছের চারা আনার কথা। আব্বা আশ্বাস দিলেন উনি কালকেই এনে দিবেন।

পরদিন কলেজ থেকে এসেই দেখি আব্বা অনেক গুলো গাছের চারা এনে রেখেছেন। চারা গুলো একটু পরে ছাদে রেখে আসতে হবে। আব্বা নতুন গাছের চারা গুলো মাত্রই এনেছেন। তাই আর ছাদে রাখতে পারেননি। অতএব আমি আর আব্বা মিলে একটু পরে গাছের চারা গুলো ছাঁদে রেখে আসবো। যদিও গাছের চারা গুলো বারান্দায় ও রাখা যায়। কিন্তু, বারান্দায় না রেখে ছাঁদে রাখলে ঠিকমত সূর্যের আলো পাবে চারাগুলো। আর ঠিকমতো সূর্যের আলো পেলে চারা গুলো বড় হতে বেশি সময় লাগবে না।

আব্বা আর আমি খাওয়া দাওয়া করে ছাঁদে এক এক করে গাছের চারা গুলো রেখে এলাম। আব্বা যখন নিচে নামবেন তখন আমাকেও তাঁর সাথে ছাঁদ থেকে নিচে নামতে বললেন। কিন্তু আমি আব্বাকে বলেছি আমি পাঁচ মিনিট পরে আসছি। পাঁচ মিনিটের কথা বলে দশ মিনিট থাকার চিন্তা করলাম আমি। ওমা ছাঁদে কিছুক্ষন থেকে যখনই নিচে নেমে যাবো। ছাদে এক গাদা পায়রা হাজির। পায়রা গুলো কেন যে ওই ছাঁদ থেকে বারবার আমাদের ছাঁদে আসে কে জানে! আর কোনো বাসার ছাঁদ কী পায়রা গুলোর চোখে পড়ে না! শুধু আমাদের ছাঁদেই উড়ে আসা লাগে এদের?

তখন যেহেতু দুপুর সেহেতু আশেপাশে বাসার সবাই কম বেশী ঘুম। দুপুরের এই সময়টাতে মোটামুটি একটু নিরব নিস্তব্ধতা বিরাজমান থাকে। আমি পায়রাগুলোকে নিয়ে কিছুক্ষন মাতামাতি করার পর;ছাঁদ থেকে নিচে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। হঠাৎই কারো গলার স্বর আমার কানে এলো। খুব গভীর গলায় কেউ আমাকে পেছন থেকে বললো,

— এভাবে চেনা অচেনার মধ্য গন্ডিতে কাউকে ফেলা উচিত না। হয়ত চেনা নাহলে অচেনা। কিন্তু চেনা অচেনার মধ্য অবস্থায় কাউকেই রাখা উচিত নয়।

আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম বর্ণ। কথাটা বর্ণ আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন কি না জানি না। হয়তো আমাকে বলেছেন নয়তো অন্য কাউকে। যাকেই বলুক না কেন আমি কোনো জবাব দিলাম না। কী দরকার শুধু শুধু একজনের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলার? ❝কিছু কিছু মানুষের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলা মানেই মায়ার মোহজালে আঁটকে যাওয়া। আর এই মায়ার মোহজাল ভেঙে বের হওয়ার ও কোনো উপায় নেই। অপ্রয়োজনীয় এই মানুষগুলোর প্রতি মায়া গুলো কষ্ট ব্যতীত আর কিছুই দেয় না❞

রাতে যখন ঘরটা ঠান্ডা হওয়ার জন্য মাত্র জানালাটা খুলেছি। তখনই জানালা খুলে দেখি বর্ণ দাঁড়িয়ে। আমি অবাক হয়েছি ওনার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাতে।

— এই যে ম্যাডাম! মনে আছে আমাকে?

আমি আরেকটু অবাক হলাম। বেশ অসস্তি নিয়েই জবাব দিলাম,

— জি।

— আমার নাম জানেন আপনি? বলুন তো আমার নাম কী?

— আপনার নাম বর্ণ।

— আপনি আমার নাম জানলেন কীভাবে? আমার তো আপনার নাম মনে নেই!

— জি, আপনি একদিন আমাদের বাসায় এসেছিলেন। তখন আপনার নাম শুনেছি।

— বাহ্ খুব সুন্দর করে মনেও রেখেছেন দেখছি। আপনার নামটা যেন কী?

— আমার নাম মেহুলিকা।

— আপনার নামটা খুব সুন্দর।

— জি ধন্যবাদ।

— আপনি যেন কীসে পড়েন?

— জি, ইন্টার ফাস্ট ইয়ার।

— আপনার সাথে কথা বলার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই এমন হুট করে এত প্রশ্ন করে ফেললাম। বিরক্ত হলে মাফ করবেন।

— না না সেরকম কিছু না। আমি বিরক্ত হইনি মোটেও।

— হুম তাহলে ভালো। আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইবেন না?

— আমার এত কৌতূহল নেই তবে আপনার যদি বলতে ইচ্ছে হয় তাহলে বলতে পারেন।

— আপনি যদি জানতে না চান তাহলে আমার বলে কী লাভ?

— না আপনি বলুন সমস্যা নেই।

— নাহ থাক, যেদিন আপনার মনে হবে আসলেই আমার সম্পর্কে কিছু জানার দরকার। সেদিন বলবো সব।

এরপর আমি কথা না বাড়িয়ে জানালা লাগিয়ে দিয়েছি সাথে সাথে। রাগে আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। এটা কেমন আচরণ? আগ বাড়িয়ে এত কথা বলার কী দরকার?

অতএব বর্ণকে আমার ব্যাক্তিত্ব হীন একটা মানুষ মনে হলো। ছেলে মানুষ কথা বলবে কম। এটা কেমন ছেলে যে বকবক করছে তো করছেই।

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর এই জানালাটা কখনো খুলবো না। বর্ণ চলে গেলে আবার খুলবো। তবে এখন আর খুলবো না জানালাটা।

আমি বেশ কিছুদিন আর জানালাটা খুলিনি। জানালা খুললেই বর্ণ কথা বলতে আসবে এই ভেবে। আর ছাঁদে ও যাইনি এরপরে। ছাঁদে গেলেও বর্ণকে দেখতে হবে তাই আর যাইনি।

একদিন হুট করে জানালা খুললাম৷ ভেবেছিলাম বর্ণ হয়তো চলে গেছেন। কিন্তু না জানালা খুলে দেখি, বর্ণ তখন ও সেখানে। তারপর সঙ্গে সঙ্গেই আমি জানালা বন্ধ করে দিয়েছি।

তারপর একদিন জানালা খুলে দেখলাম বর্ণ আর নেই। এরপর আবার আগের মতো সব ঠিক হয়ে গেল। জানালা, বারান্দার দরজা খুলতে শুরু করলাম আবার।
কিন্তু আমার সাথে আস্তে আস্তে একটা আজব ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। যেমন বিকালে আমি যখনই ছাঁদে যাই। তখনই আমি যাওয়া মাত্রই একটা পায়রা আসতো। শুধু একটা না কয়েকটা পায়রা আসতো। পায়রা গুলোর পায়ে কী যেন একটা বাঁধা দেখতাম সব সময়। একদিন সাহস করে একটা পায়রার পায়ের থেকে বাঁধনটা খুলে দেখি; ওখানে একটা ছোট্ট কাগজকে কী যেন লিখা।

কাগজটা পায়রার পা থেকে খুলে নিয়েই নিচে নেমে গেলাম আমি। রুমে গিয়ে গেট লাগিয়েই ওটা পড়তে বসলাম। কাগজটা পড়তে গিয়ে আমার চোখ শেষ প্রায়। এটাকে কাগজ বলা যায় কিনা জানি না। আমার জানামতে এটাকে চিরকুট বলে। চিরকুটটা যে লিখেছে তাঁর হাতের লিখার তারিফ করতেই হয়। কাক বকের ঠ্যাং এর মতো হাতের লিখা। আঁকাবাঁকা কাটা ছেঁড়া করে লিখা। কে লিখেছে কে জানে! চিরকুটে লিখা ছিল,

” তোমায় দেখে মুগ্ধতা-রাও মুগ্ধ জানো? কী প্রণয়ে ফেললে আমাকে? তোমার আচার-আচরণ ব্যবহার খুব সুন্দর। তোমার ব্যবহার দেখেই আমি মুগ্ধ। কী সুন্দর কথাবার্তা। চালচলন কত মার্জিত তোমার!কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আমি তোমার পানে চাই বন্ধু কিন্তু তুমি আমার পানে একবার চাইয়াও দেখ না।”

চিরকুট পড়ে আমি বুঝতে পারলাম এই চিঠি যে লিখেছে সে বড়ই মুগ্ধতা নিয়ে লিখেছে। কিন্তু এতটুকু মুগ্ধতা যদি লিখাটাতে এত ব্যবহার করা হতো তবে আরও ভালো হতো। কারন লিখাটা কাঁটা, ছেড়ায়,ভুলে পরিপূর্ণ। যাই হোক এই চিরকুট কার জানি না। হয়ত এটা আমার জন্য লিখা না। অন্য কারো জন্য লিখা হয়ত। কিন্তু চিরকুটটা যে লিখেছে তাঁকে একটা কথা বলা দরকার।

এরপরের দিন বিকালে ছাঁদে গাছে পানি দেওয়ার নাম করে। আমি একটা ছোট চিরকুট লিখে ছাঁদের এক কোনে ফেলে রেখে এলাম। কতক্ষন পরে ছাঁদ থেকে কাপড় নিয়ে আসার নাম করে ;ছাঁদে গিয়ে দেখি ওমা আমার চিরকুট হাওয়া!

কে নিয়ে গেল কে জানে! হয়ত কালকের ওই চিরকুটটা যে লিখেছে তিনিই নিয়েছেন। তবে উনি যদি চিরকুটটা খুলে দেখেন। তবে অবশ্যই চমকাবেন।

চিরকুটে আমি সেই আগের চিরকুট প্রদানকারীকে উদ্দেশ্য করে লিখেছি,

” যতটা সময় নিয়ে চিরকুটটা লিখেছেন ততটা সময়; বানান আর লিখার দিকে দিলে ভালো হতো। হাতের লিখা পড়তে গেলে যে কেউই দাঁত ভাঙবে। এবং বানানের কথা তো বাদই দিলাম। মুগ্ধতা বানান দুইবার ভুল করেছেন। অতএব এইসব চিরকুট লিখে সময় নষ্ট না করে আগে হাতের লিখা ঠিক করুন।”

চলবে…
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here