আসক্তি ২ পর্ব ১২+১৩+১৪

#আসক্তি২
পর্বঃ১২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

সারাদিন নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষমতা ছিলো না শানের।শরীরের অবস্থা সামান্য একটু উন্নতি হয়েছে।
পাখি সামান্য হাতের কাজ গুলো সেড়ে রাতের রান্নাটা চুলায় বসায়।এক ফাঁকে উপরে গিয়ে শানের ঘরের দরজায় উকি দিতে বুঝতে পারে বুকের উপর ব্ল্যাঙ্কেট টা রেখে টিসুতে নাক মুছে নিচ্ছে বার বার।ভিতরে না ঢুকেই দরজার আড়াল থেকে শানকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে পাখি কেন জানে না আজ শানকে কিছুটা অন্যরকমই লাগছে তার কাছে।শরীরের সামান্য উন্নতি দেখে বেশ স্বস্তি পায় পাখি।চোখ আজ শানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে বেশ প্রশান্তি পাচ্ছে।কেমন যেন আজ শানের অসুস্থ্যতার কারণে একটু বেশিই বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।

আনমনেই মুচকি হেসে ওঠে পাখি।পরোক্ষনেই মুখে হাত দিয়ে ভাবে,”কি ব্যপার আমি হাসতেছি কেন?তার ব্যপারে হাসছি কেন? আজব তো!”
নজর এদিক সেদিক করে পাখি।নিজের কাছে নিজেই যেন ধরা পরে যায়।লজ্জামিশ্রিত চোখে অবনত মাথাটা সামান্য একটু তুলে শানের দিকে পূনরায় তাকাতেই শান দরজার দিকে তাকায়।
“কে, কে ওখান?”,ক্লান্তিমাখা অসুস্থ্য কন্ঠে বলে ওঠে শান।শরীর বিছানা ছাড়তে চাইছে না অথচ মন বলছে বাহিরে কে দেখতেই হবে।যেই ভাবা সেই কাজ। ধীরে ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে উঠার প্রস্তুতি নিতেই পাখি জিহ্ব কেটে ওঠে।বড় বড় চোখে আনমনে ভাবে,”দেখে ফেলল?কি হবে এবার?এতো লজ্জায় পড়ব ভাবি নি তো!”,
শান খুব কষ্টে বাম পা মেঝেতে নামাতেই পাখি দ্রুত দরজা থেকে সরে যায়।এরপর লম্বা লম্বা পা ফেলে সিঁড়িতে চলে আসে।আর সিঁড়ি থেকে একপ্রকার দৌড়ে রান্নাঘরে।

শান ধীরপায়ে এগিয়ে এসে দরজাটা পুরোটাই খুলে এপাশ ওপাশ চোখ বুলায়।ভ্রুকুচকে রিনরিনে কন্ঠে বলে,”স্পষ্ট মনে হলো কেউ দেখছে।তাহলে কোথায় গেলো?”
সাতপাঁচ ভেবে শান সিঁড়ির একদম কাছে চলে আসে।তবুও কাউকে কোথাও দেখতে পায় না।রান্নাঘর থেকে কড়াই খুন্তির আওয়াজে শানের বুঝতে অসুবিধা হয় না পাখি রান্নাঘরে।আনমনে ভাবতে থাকে,”ও তো কিচেনে তাহলে দরজায় কে ছিলো?”,
কুচকানো ভ্রুজোড়া সোজা করে শান আবার নিজের ঘরের দিকে চলে যায়।দাঁড়িয়ে থাকা একেবারেই অসম্ভব বলে।

রাত ৯ টা বেজে ২৫ মিনিট।রান্না টা মোটামুটি শেষ করে পাখি সংকোচিত চিত্তে এগিয়ে যায় শানের ঘরের দিকে।ইনায়াহ্ থাকলে এতো বিব্রত লাগত না হয়ত।
দরজায় গিয়ে নক করে পাখি।ভিতর থেকে থমথমে কন্ঠে সাড়া আসে, “কাম ইন”
পাখি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে মাথা নিচু করে ঠান্ডা কন্ঠে বলে,”খাবার রেডি”
পাখির এমন অদ্ভুত আচরনে শান অবাক হয়ে যায়।কারণ ইতোপূর্বে পাখি কখনোই শানের সামনে মাথা নিচু করে থাকে নি।যতোবার কথা হয়েছে ততোবারই পাখি চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে।এদিকে পাখি চাইলেও মাথা তুলে তাকাতে পারছে না।সে নিজেও বুঝতে পারছে না আজ এতো কিসের চক্ষুলজ্জা হচ্ছে!

“আমি কিছু খাবো না। ক্ষিদে নেই”,ফোনের স্ক্রীন স্ক্রল করতে করতেই বলে শান।পাখি লজ্জারাঙ্গা চোখে মাথাটা সামান্য তুলে শানের দিকে তাকায়।শান ফোন থেকে নজর সরিয়ে পাখির দিকে দেখতেই চট করে মাথাটা আগের মতো নিচু করে নেয় পাখি।এতে আরো বেশি বিরক্ত হয় শান।কিছু বলতে যাবে তার আগেই পাখি বলে,”রাতের মেডিসিন নিতে হবে।মিস দেয়া যাবে না”
পাখির চিকিৎসকের মতো কথায় শান ভ্রু উচিয়ে ওর দিকে তাকায়।দূর্বল চিত্তে বলে,”মনে হচ্ছে ডাক্তার আমি না তুমিই!”
শানের কথায় কেমন অপমানিত বোধ হয় পাখির।একনজর তাকিয়ে বলে,”সেটা সন্দেহ তো আমারও।কারণ ডাক্তার হয়ে কিভাবে কেউ ঔষধে এতো হেলা করতে পারে!”
শান অবাক হয়ে যায় পাখির কথায়।কেমন গিন্নী গিন্নী ভাব!
মুচকি হেসে ওঠে শান।পাখি বুঝতে পেরেও সেদিকে খেয়াল করে না।তর্জনি আঙ্গুল উচিয়ে দরজা দেখিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি নিচে আসেন।খাবার ঠান্ডা হয়ে যায়।তারপর সেডিসিন নিয়ে তবেই এসে শুইবেন”
বলে দরজাটায় শব্দ করে হনহনিয়ে নিচে চলে যায় পাখি।

শান হাসিটাকে আরেকটু প্রশস্ত করে ধীরপায়ে বিছনা ছাড়ে।এরপর অসুস্থ্য শরীর নিয়ে নিচে নামে রাতের খাবারের জন্যে।

পাখি থমথমে মুখে প্লেটে ভাত বেড়ে শানের চেয়ারের দিকে ঠেলে দেয়।আর চারদিকে সুন্দর পরিপাটি করে কয়েকপদের খাবার রেখে রান্নাঘরে চলে যায়।শান পাখির কান্ড দেখে চলছে শুরুর থেকে।খারাপ লাগছে না তার;বেশ উপভোগ করছে সে।চেয়ার টেনে বসতে যাবে তখনি চোখ আটকে যায় টেবিলের উপর।হরেক রকমের খাবারের আইটেম করেছে পাখি।তবে সবগুলোই পুরোদমে দেশি খাবার।যাকে এক কথায় বাঙ্গালি খাবারও বলে।
লাল মরিচের আলু ভর্তা যেন লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে খাবারের মালিকের দিকে।আরেক বাটিতে কাচা পেঁয়াজ দিয়ে টাকি মাছের ভর্তায় যেন জগতের সমস্ত লোভ ঢেলে দেয়া হয়েছে।এভাবে প্রত্যেকটা খাবার দেখে হেসে ফেলে শান।তবে বাহিরে সেটার রেশ আসে না।গালে লাল আভা বুঝা যাচ্ছে মাত্র।সবার শেষ চোখ গিয়ে আটকে যায় আরেকটা ছোট বাটিতে রাখা খাবারের উপর।বাটি হাতে নিয়ে শান বোঝার চেষ্টা করে এগুলো কি?কিছুক্ষণ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর উপাদান গুলোর পরিচয় জানতে পারে সে।শুকনা মরিচ কাচা পেঁয়াজের মিক্স একটা ভর্তাটাইপ কিছু।এক আঙ্গুলে একটু মুখে দিয়ে শান চোখ বন্ধ করে ফেলে।এবার বুঝতে পারে এই ভর্তায় লেবুর রস আছে সাথে গুড় বা চিনি। বেশ মুখে লেগেছে খাবার টা।তড়িঘড়ি করে প্লেটে পুরোটা ঢেলে খাওয়া শুরু করে শান।দেখতে দেখতে তিন প্লেট ভাত মূহূর্তেই শেষ করে দেয়।তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে শান ভাবে,”এত্তোটা দিন এতো ভালো ভাবে খেলাম”
রান্নাঘরের দিকে চেয়ে গলাটা সামান্য উচিয়ে বলে, “থ্যাংক ইউ”
এরপর আবার সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে চলে যায় শান।

এদিকে খাওয়া শুরু থেকে শেষ অবধি পুরোটা সময় পাখি রান্নাঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে সবটা দেখে।নিজের মাঝে অজানা ভালো লাগা ছুঁয়ে যায় পাখির।হাতে মরিচের ঝালটা তেমন আর জ্বলুনি লাগে না।ডান হাতটা উচিয়ে হেসে বলে,”তোর কাজ স্বার্থক”

🌸🌸

মধ্যরাতে পানির পিপাসায় ঘুম ভেঙ্গে যায় পাখির।ঘুমো ঘুমো চোখে সাইড টেবিল হাতরিয়ে ওয়াটার পট খোঁজে ।না পেয়ে বাধ্য হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে।এরপর জানালা ভেদ করে সড়কের ল্যাম্পপোস্টের ক্ষীণ আলোয় ধীরপায়ে উঠে যায় সুইচ বোর্ডের কাছে।লাইট জ্বালিয়ে পট খুঁজতে কানে আসে কারো গোঙ্গানির চাপা শব্দ।পাখি বুঝতে পারে না কে এভাবে অসুস্থ্য মানুষের মতো গোঙ্গাচ্ছে।মূহূর্তে শানের কথা মনে পড়ে যায় পাখির।
“উনিই কি তবে গোঙ্গাচ্ছেন? জ্বর কি বেশি হলো তবে?”,ভাবতেই অজানা আশঙ্কা গ্রাস করে ফেলে পাখির তনু মন।বোতল রেখে দ্রুত দরজা খুলে শানের ঘরের উদ্দেশ্যে ছুটে চলে পাখি।দরজায় দু তিন বার নক করেও সাড়া মেলে না।কিন্তু ভেতর থেকে শানের গোঙ্গানির শব্দ ভেসে আসছে।ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায় পাখির।এরপর জোড়ে এক ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে যায়।”তারমানে দরজা খোলাই ছিলো!”
ভেবে ভিতরে ঢুকে যায় পাখি।

শানের মাথা থেকে পা অবধি ব্ল্যাঙ্কেট জড়ানো।তা দেখে পাখি দুটো শুকনো ঢোক গিলে কাপা কাপা হাতে ব্ল্যাঙ্কেটটা সরিয়ে দেয়।শানের মুখটা উন্মুক্ত হতেই চমকে যায় পাখি।জ্বরের কারণে মুখের শ্রী’ই যেন পাল্টে গেছে।মুখের প্রতিটা লোমকূপ স্পষ্ট হয়ে জানান দিচ্ছে কতোটা অসুস্থ্য শান।

পাখি দ্রুত থার্মোমিটার এনে মুখের কাছে ধরতেই চোখ মেলে তাকায় শান।চোখ দেখে আঁৎকে ওঠে পাখি।এরপর ইশারা করে মুখ খুলে থার্মোমিটার জিহ্বার নিচে দিতে।শান বাধ্য ছেলের মতো পাখির কথা অনুযায়ী মুখটা হা করে থার্মোমিটার মুখে নেয়।কিছুক্ষন পর পাখি চিন্তিত মুখে থার্মোমিটার বের করে দেখে ১০৪ ডিগ্রী জ্বরে শানের পুরো শরীর পুড়ে যাচ্ছে।উঠে দাঁড়াতেই জ্বরের ঘোরে পাখির হাত চেপে ধরে শান।বন্ধ চোখে হাতটা চেপে রেখেই শান বলে,”প্লিজ যেও না।”
“আপনি দু মিনিট শুয়ে থাকুন আমি আসছি”,বলেই পাখি শানের হাতের উপর আরেক হাত রেখে আশ্বস্ত করে।

এরপর দ্রুত ওয়াশরুম থেকে বালতিতে করে এক বালতি পানি নিয়ে আসে। এরপর পানির পর পানি ঢালতে থাকে শানের মাথায়।কিছুক্ষন পর পর মাথায় জল পট্টি দেয়া তো আছেই।

“সারা শরীর টা মুছতে পারলে অনেকটা বেটার ফিল করতেন।এই যে শুনছেন!”,পাখি চোখেমুখে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বলে।খুবই ধীরগতিতে শান চোখের পাতা খুলে পাখির দিকে একনজর তাকিয়ে পূনরায় চোখ বন্ধ করে ফেলে।পাখি মুখে বিরক্তির শব্দ করে উঠে চলে যায়।এরপর ঠান্ডা পানিতে তোয়ালে চুবিয়ে পানিটা নিঙড়িয়ে নেয়।এরপর কিভাবে গা টা মুছে দেবে ভাবতে থাকে পাখি।ভীষণ লজ্জা আর অঅস্বস্তিতে পরে যায় সে।এদিকে শানের অবস্থা খারাপ। এক পর্যায়ে তোয়ালে টা সংকোচে কাপাকাপা হাতে শানের গলার উপর রাখে।তোয়ালে রাখতেই একপলক তাকায় শান।আবার নিভে যায় চোখের পাতা।পাখি এবার অন্যদিকে তাকিয়ে গলা ঘাড় মুছিয়ে দেয়।

ঘন্টাখানিক পর পাখি বুঝতে পারে শানের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।পাখি এবার চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে আস্তে করে ডাকে, “শুনছেন, ঘুমিয়ে গেছেন!”
ঘুম জড়ানো কন্ঠে শান জবাব দেয়,”হুহহহ”
পাখি এবার নিশ্চিত হয় শান ঘুমিয়ে গেছে।

🌸🌸
শানের সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার।গরমের তাপে তাড়াতাড়ি ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে ধরফরিয়ে ওঠে শান।হাতের বাম পাশে রাখা ফোনটা হাতরিয়ে বুঝতে পারে ঘড়িতে সকাল ১০ টা বাজে।এতোক্ষন ঘুমালো সে ভাবতেও পারছে না।পুরো ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে দ্রুত উঠতেই পুরো শরীর সুস্থ লাগে তার।আড়মোড়া ভাঙ্গতেই খেয়াল হয় পাশে খাটের উপর একহাত রেখে তারউপর মাথা রেখে নিচু হয়ে মেঝেতে বসে কেউ ঘুমিয়ে আছে। চমকে ওঠে শান।পরোক্ষনে কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।অবাকের চরম সীমা অতিক্রম করে শানের মন।অবাক হয়ে ভাবতে থাকে,”তারমানে সারারাত সে এভাবে বসে ছিলো!”

“পাখি,এই পাখি,হ্যালো পাখি”,শান পরপর কতোগুলো ডাক দেয়।তবুও সাড়া মেলে না পাখির।এবার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে কিভাবে ডাকলে পাখি উঠবে।উপয়ান্তর না পেয়ে পাখির কাঁধে ডান হাত রেখে সামান্য ঝাঁকাতেই দড়বড় করে ওঠে পাখি।

“কে কে?”,হরবরিয়ে বলে ওঠে পাখি।
শান্তস্বরে শান জবাব দেয়,”আরে আমি”
“আপনি!জ্বর কমেছে?কখন উঠলেন আপনি?আমি মাত্রই তো ঘুমাইলাম!আপনি কখন উঠলেন?”,আতঙ্কিত কন্ঠে বলে পাখি।শান ফোনটা হাতে নিতে নিতে বলে,”এতো প্রশ্ন করলে উত্তর দিবো কোনটার?”
আবার স্বগতোক্তি করে বলে,”জ্বর কমে গেছে,আমি একটু আগেই উঠলাম।আর পুরোপুরি সুস্থ এখন।কিন্তু,কিন্তু তুমি এভাবে কেন?ঘুমাওনি সারা রাত?এখানেই ছিলা?”,শেষের কথাটা বেশ জিজ্ঞাসিত কন্ঠে বলে শান।

“আমি! মানে!আসলে!ঘুমিয়েছি।না না ঘুমাই নি।না মানে ঘুমিয়েছি কিন্তু…..”
“কি সব বলছো? আগে ভাবো কি বলবে।”,পাখির কথাকে থামিয়ে বলে শান।
“কিছু না”,বলেই দ্রুত শানের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে।আর শান পাখির গমনের দিকে চেয়ে ভাবতে থাকে,”সবটাই কেমন লাগছে!আমি কি ওর খুব কাছাকাছি চলে আসছি!না না এটা আদৌ পসিবল না।আই’ম শান।যার লাইফে কোন নারীর স্থান নেই।
#আসক্তি২
পর্বঃ১৩
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

মঞ্জুরকৃত ছুটি মাত্র একদিনেরই ছিলো।ডাক্তার বলে কথা।যাদের এই যৎসামান্য সর্দি জ্বরে এতো ভেঙ্গে পরা শোভা দেয় না।এদিকে শরীরটাও অনেকটাই সুস্থ হওয়ায় শান হসপিটালের জন্যে প্রস্তুতি নেয়।পাখিও তৈরী হয় স্কুলে যাবার উদ্দেশ্যে।দুজনেই রেডি হয়ে নিচে নামে।দুইটা প্লেটে খাবার বেড়ে পাখি শানের অপেক্ষায় বসে থাকে।শান হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামতেই পাখি শান্তস্বরে প্রশ্ন করে,”খাবেন না?”
“হুমম”,তেই কথা শেষ করে শান।এরপর চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে, “থ্যাংকস”
মাথা তুলে পাখি প্রশ্নাতুর চোখে তাকিয়ে জানতে চায়, “থ্যাংকস! কিসের জন্যে?”
“কাল সারারাত আমার সেবা করার জন্যে”,স্বাভাবিকভাবে জবাব দেয় শান।

পাখি আর কিছু না বলেই নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।শান খেতে খেতে আড়চোখে পাখির দিকে তাকায়।কেমন যেন দিন দিন শানের চোখে পাখিকে অনেক বেশি মিষ্টি লাগছে;মায়াবী লাগছে।পাখির চোখে চোখ পড়তেই পরপর কয়েকবার চোখের পলক ফেলে শান।অস্বস্তি হয় পাখির।আরেকবার তাকাতেই শানের নজরে আটকে যায় পাখি।একধ্যানে শান তাকিয়ে বলে,”আজ ইনায়াহ্’র সাথে একবার কথা বলাতে পারবা?”
আমতা আমতা করে জড়তা নিয়ে পাখি জবাব দেয়,”আমার ফোন….. আচ্ছা ঠিকাছে”
অর্ধেক কথা বলে রাখে পাখি।শানের হঠাৎ খেয়াল হয়,”পাখির হাতে তো কোন ফোন নেই।বলাবে কী করে?আর কিভাবে ভুললাম সেটা!”
আনমনে ভেবে শান বলে,”আচ্ছা আমি দেখছি ”

এরপর নাস্তা সেড়ে বাড়ির চাবি আব্দুল্লাহ্’কে ধরিয়ে দিয়ে দুজন বেড়িয়ে যায় নিজেদের কাজে।গেইটের কাছে পাখি সিএনজি’র জন্যে দাঁড়ায়। শান গাড়ি বের করতে করতে ভাবে পাখিকে স্কুলে ড্রপ করে সে হসপিটালে যাবে।হাজার হোক কাল অনেক খেটেছে সে।
রাফিকে তাগাদা দিয়ে শান বলে”রাফি গাড়ি গেইটে দাঁড় করিয়ে ওকে উঠতে বল”
“আচ্ছা ভাইয়া”
শানের কথামত গাড়ি গিয়ে থামে পাখির সামনে।রাফি নেমে গিয়ে গাড়িতে উঠতে বলে পাখিকে।
“ম্যাডাম গাড়িতে উঠুন”,রিনরিনে কন্ঠে বলে রাফি।সেদিনের পর থেকে আর একটা দিনও পাখির চোখে চোখ রেখে কথা বলে নি রাফি।কেমন যেন গুন্ডি টাইপ লাগে পাখিকে।
পাখি শটান হয়ে বলে,”আমার রাস্তা পুরোই অপজিট “.
মাথা নিচে করে রাফি বলে,”স্যার বলল”
রাফির কথা শেষ হতেই পাখি ব্যাকসিটে বসা শানের দিকে তাকায়।অর্ধ্বখোলা জানালাটা পুরোটাই খুলে শান ইশারা করে গাড়িতে বসতে বলে।পাখি আর না করার সুযোগ পায় না।এদিকে ঘড়িতে সময় দেখেও ঠাঁয় দাঁড়ানো আর সম্ভব হয় না।উঠে পরে গাড়িতে।

পাখিকে স্কুলের গেইটে নামিয়ে শানও নেমে পরে সাথে সাথে। স্কুলে ঢুকে ইনায়াহ্’কে খোঁজে শান।কিন্তু পায় না।খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ইনায়াহ্ এখনো স্কুলে আসে নি।কপাল চাপড়ে মুখটা মলিন করে শান চলে যায়।পাখির বড্ডো মায়া হয় তা দেখে।শানের যাবার পথে চেয়ে ভাবে,”আমি জানি আপনি ইনায়াহ্’কে কতোটা মিস করছেন।কিন্তু মুখে বলছেন না”
শান বাহিরে যেতেই পাখিও ক্লাসে ঢুকে পরে।দূর থেকে রাখি সবটা পরোখ করে মুচকি মুচকি হেসে ওঠে।

🌸🌸
“ম্যাম আপনার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে”
“জ্বি আমার সাথে?”
“জ্বি ম্যাম”
“আমার সাথে কে দেখা করতে আসবে”,বিড়বিড় করে বলে পাখি। দারোয়ানকে বলে, “আচ্ছা আপনি যান আমি আসছি”
“ম্যাম তার নাকি কি তাড়া আছে।আপনাকে একটু জলদি যেতে বলল।ওয়েটিং রুমে আছে তিনি”
দারোয়ানের কথায় অবাক হয় পাখি।এ শহরে তার এমন কেউই পরিচিত নই যে, দেখা করতে স্কুল অবধি আসবে।তৎক্ষণাৎই আয়ানের কথা মনে ওঠে।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে পাখির।শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আমি আসছি”

রাখিকে সবটা বলাতে রাখি রাজি হয় ওর সাথে যাবে।এরপর দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে ওয়েটিং রুমে চলে আসে।পাখি দরজার আড়াল থেকে মাথা উচিয়ে ভিতরে দেখার চেষ্টা করে।
“রাফি!”,অবাক চোখে অস্ফুটস্বরে বলে পাখি।এবার গটগট করে ভিতরে ঢুকে বলে,”তুমি এখানে!”
পাখির রাগীনি চেহারা দেখে রাফি কাপাকাপা হাতে একটা বক্স এগিয়ে দেয়।জড়সড় হয়ে বলে,”স্যার এইটা পাঠিয়েছে।আপনারে নিতে কইছে”
ভ্রুকুচকে পাখি প্রশ্ন করে,”কি এটা?”
“জানি না, স্যার বলেছে আপনাকে দিয়ে তাড়াতাড়ি যেন ফিরে যাই”,সংকোচিত কন্ঠে বলে রাফি।
এমনভাবে দারোয়ানকে পাঠিয়েছো যেন তুমি কে না কে?কি ভয়টাই পাইয়েছিলে বলো?” বলে পাখি রাফির দিকে চেয়ে মুচকি হাসে।
রাফি সেদিকে চেয়ে একটু স্বাভাবিকভাবে বলে,”সরি ম্যাডাম”
পাখি হেসে দেয় শব্দ করে।এরপর বলে,”আচ্ছা যাও”

রাখি এগিয়ে এসে বক্সটা কেড়ে নিয়ে বলে,”হাউ রোম্যান্টিক?তা কি রে এইটা?যেটা তোর ডাক্তার সাহেব পাঠালো?তাও এতো প্যাকিং ট্যাকিং করে!”
পাখি ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, “বুঝতেছি না আসলে”
“বলেছি না ডাক্তার বাবু তোমার প্রেমে পরেছে””,পাখির কাঁধে হাত রেখে বলে রাখি।হাতটা সরিয়ে দিয়ে পাখি খনখনে স্বরে বলে,”ওসব কিছুই না। আগে দেখি তো কি আছে ওতে”

এরপর ধীরেধীরে পুরো প্যাকেট খুলে দুজনেই হা হয়ে যায়।একে অন্যের মুখের দিকে দেখে সমস্বরে বলে ওঠে,”ফোন!”
রাখি ভ্রু নাচিয়ে বলে,”দেখলি তো আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে”
পাখি কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পায় না।আনমনে ভাবে,”তাহলে সত্যিই কি ঐ রাগী ডাক্তার…..”
পরোক্ষনে লজ্জারাঙ্গা মুখে বলে,”না না, এসব কি ভাবছি আমি ধুর”
রাখি আরেকটু এগিয়ে এসে বলে,”কি না না করছিস বলতো।শোন আমি যা বলছি তাই’ই ঠিক।ছেলেমানুষ একটু চাপা স্বভাবের হয়।ভালোবাসবে কিন্তু বলবে না”
রাখির এই মূহূর্তের কথাগুলো পাখিকে ভীষণ বিব্রত করছে সাথে অন্যরকম এক অনুভূতির সাথে পরিচয় করাচ্ছে।অগত্যা রাখির কথা শোনা ছাড়া কোন উপায় পাচ্ছে না পাখি।

পাখির মুখে লজ্জার রেশ দেখে রাখি বলে,”এতো লজ্জা পেতে হবে না।তোর ডাক্তার যা মানুষ দেখছি তাতে তোকেই একধাপ আগাতে হবে;লজ্জা ভেঙ্গে।কিন্তু….
কথা হচ্ছে তিনি ম্যারিড, আর বাচ্চাও আছে”
শেষের কথাটা বেশ চিন্তিত কন্ঠে বলে রাখি।পাখি চট করে বলে,”ইনায়াহ্ উনার মেয়ে না, ভাগ্নি।উনি অবিবাহিত”
রাখি যেন আকাশ থেকে পড়ে যায়।এক হাত মাথার উপরে আরেকটা হাত কোমড়ে রেখে বলে,”বলিস কি?তাহলে কাগজে যে পিতার জায়গায় ডাক্তারের নাম!”
“হুমম।উনি ইনায়াহ্’কে নিজের মেয়ের পরিচয়ে বড় করতে চান”
“এইবার বুঝতে পেরেছি।তা হলে তো আর কোনই সমস্যা থাকার কথা না পাখি বেগম।হয়ে যান মিসেস শান”,বেশ রসিকতার ছলে রাখি বলে ওঠে।
রাখির কথায় কান গরম হয়ে যায় পাখির।ফোনটা রেখে বলে,”চুপ করবি।এসব কিছুই হবে না।উনি কোন দূঃখে আমায় ভালো….”
বাকিটা লজ্জায় আর শেষ করতে পারে না পাখি।

রাখি জড়িয়ে ধরে বলে,”বাসে রে বাসে।তোকেই ভালোবাসে তবে তোকে একটু এগিয়ে যেতে হবে।এই আরকি।মানে তার মুখ থেকে কথাটা জেনে নিতে হবে”
পাখি হেসে ফোনটার দিকে তাকাতেই হাসিটা গায়েব হয়ে যায়।অন্যমনস্ক হয়ে বলে,”ফোনের কারণ ভালোবাসা না রে, ফোনের কারণ ইনায়াহ্।উনি ইনায়াহ্’র সাথে কথা বলবেন”
রাখি ওকে ছেড়ে বলে,”তাই নাকি!আমার তো মনে হচ্ছে না”
“আচ্ছা পরে এ ব্যপারে কথা হবে।আগে ইনায়াহ্’র সাথে কথা বলাতে হবে ওকে”,বলেই রাখির দিকে ফোন এগিয়ে দেয় ফোনটা সেট করবার জন্যে।এরপর ফোন পুরো সেট করে শানের কাছে কল করে ইনায়াহ্’র সাথে কথা বলিয়ে দেয় শানকে।

🌸🌸

পুরোপুরি সুস্থ নয় শান।তারউপর আজ পেশেন্টের অনেক ভীড়।অল্পেতেই ক্লান্ত হয়ে যায় শানের মন মস্তিষ্ক। চেয়ারে গা এলিয়ে দিতেই দরজায় কড়া নাড়ে কেউ।চোখ না খুলেই বলে,”কাম ইন”
রিনি ভিতরে ঢুকে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে,”খুব ক্লান্ত লাগছে?হেড ম্যাসাজ করে দিবো?”
চেনা নারী কন্ঠে চোখ মেলে শান চোখের সামনে রিনিকে দেখতে পায়।ধপ করে চোখ আবার বন্ধ করে হাতদুটো মাথার পিছনে দিতে দিতে বলে,”নো নিড”
“আমি কিন্তু ট্রেইনড।ম্যাসাজ সেন্টারে তিনমাস ট্রেইনিং নিয়েছি।স্টার্ট করি দেখবে ভালো লাগছে”,অযাচিতভাবে বলে রিনি।

শান এবার চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে।টেবিলের উপরে হাতদুটো রেখে বলে,”আমি কি একবারো বলেছি আমার লাগবে?এই এতো ছ্যাচড়া কেন তোমরা মেয়েরা?শুধু শুধু কাছে ঘেঁষার বাহানা করো কিসের জন্যে?লজ্জা করে না তোমাদের?”
“আরে আমি তো তোমার ভালোর জন্যেই……”
“আমার ভালো আমি বুঝে নিবো। তোমায় বুঝতে হবে না।বেরিয়ে যাও কেবিন থেকে।”,রিনিকে থামিয়ে বলে শান।
রিনি দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,”সেটাই আরকি।বাড়িতে গভারনেস কম রক্ষিতা বেশি কাউকে পাইলে তো আর বাহিরের কাউকে লাগে না, তাই না?”
শান চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”হোয়াট দ্য …..কি বলতে চাইছো তুমি?”
“মুখে মুখে বলো মেয়ে সঙ্গ চাই না।নারীর স্থান নাকি নেই তোমার লাইফে আবার তলে তলে তো ঠিকই কাজ চালিয়ে যাচ্ছো”,তেড়ছা ভাবে বলে রিনি।
শান ধৈর্য ধরে রাখতে নে পেরে মারমুখো হয়ে এগিয়ে বলে,” মায়ের দুধ পান করা কোন ছেলে বা মেয়ে বলতে পারবে না এই শানের লাইফে কোন মেয়ে আছে”

রিনি কটাক্ষ করে বলে,”হ্যাহহহ,তাহলে এমডি স্যার কি সেদিন রাতে ভুল দেখেছিলো শান?তুমি নাকি বলেছো তোমার জিএফ।আর তোমার জিএফ বলেছে সে নাকি ইনায়াহ্’র গভারনেস। হাউ ফানি!”
হেসে দিয়ে রিনি পূনরায় বলে,”তা কতোদিনের সম্পর্ক চলছে?খোঁজ নিয়ে তো জানলাম সে তোমার বাড়িতেও নাকি থাকে।বেশ ভালোই তো চলছে।তাহলে আমাদেরকে মিথ্যে বলে কি লাভ বলো তো?এখন থেকে ডিরেক্ট বলবা তুমি লিভ ইন রিলেশনে আছো।আর যাই হোক মিথ্যে বলো না প্লিজ”

চোখ বন্ধ করে রিনির কথাগুলো পূনরায় মগজে রিপিট করছে শান।কিছুক্ষন পর চোখ খুলে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় রিনির দিকে।রিনি সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে ভ্রু নাচিয়ে বলে,”কী?মিথ্যে কিছু বললাম?”
কথা শেষ হবার সাথে সাথেই শানের ডানহাতের সাথে রিনির বাম গালের চুম্বকীয় আকর্ষন হতে সময় লাগল না।গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে যায় রিনি।ভাবতেও পারে নি শান এমন কিছু করবে।রাগি রাগি চোখে গাল চেপে বলে,”কাপুরুষ কোথাকার!লজ্জা করে না নিজের দোষ ঢাকতে অন্য মেয়ের গায়ে হাত তোলো?যে যে বলবে সবাইকে মেরেই বুঝি চুপ রাখবে?নির্লজ্জ,বেহায়া লোক।”
শান রাগে কম্পনরত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,”রিনি যা জানো না তা নিয়ে কোন কথা বলবে না।আর আমি এর থেকেও বেশি রেগে যাই তার আগেই কেবিন ত্যাগ করো”,

রিনি শানকে অগ্রাহ্য করে শানের সামনে দাঁড়িয়ে দুহাতে কলার চিপে বলে,”আমি কাছে আসলে তোমার খারাপ লাগে।আর ঐ মেয়েটা কাছে আসলে ভালো লাগে তাই না শান!আমায় দেখাবে একটু মেয়েটাকে?দেখতাম কতো সুন্দরী সে!”
শান দুহাতে রিনির হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে কলার ঝেড়ে বলে,”ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট। আগে সবটা জানবে তারপর একজন সম্পর্কে মন্তব্য রাখবে।অবশ্য তোমার থেকে এর বেশি কি’ই বা এক্সপেক্ট করা যায়! যার মন নোংড়া সে সব জায়গায় নোংড়ামি খুঁজে পায়”

বলেই শান রিনিকে বলে,”সামনে থেকে সরো।তুমি তো কেবিন ছাড়বে না।তাই আমি’ই চলে যাচ্ছি”
পথ আগলে রিনি চট করে শানকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আই লাভ ইউ শান।আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি”
শান রিনিকে দ্রুত সরিয়ে বলে,”আই হেইট ইউ।আই হেইট দিজ টাইপ উইমেন যারা অযাচিত।গট ইট?”
এরপর তাড়াতাড়ি দরজার কাছে চলে আসে।
রিনি গলা উচিয়ে বলে,”তোমার কথা আজ মেডিকেলের সবার হট টপিক হয়েছে শান।কতোজনকে এভাবে বলবে?”
একটু সময়ের জন্যে শানের পা থমকে যায়।তারপর আবার গটগট করে বাহিরে চলে আসে।

“রাফি, গাড়ি স্টার্ট কর”
“ভাইয়া এতো তাড়াতাড়ি, শরীর কি খুব খারাপ করেছে?”
শান বিরক্ত হয়ে শান্তকন্ঠে বলে, “তোকে যা বলেছি তাইই কর না রে ভাই।এতো জেরা করতে হবে না”
রাফি আর কিছু বলার সাহস করে না।চুপচাপ ড্রাইভিং সিটে বসে।

🌸🌸
কিছুক্ষনের মধ্যেই বাড়ির গেইটে গাড়ি দাঁড়ায়।পাশের দোকানে বসা কয়েকজন মুরুব্বী গোছের লোক শানের গাড়ির দেখে গাড়ির চারদিকে এসে দাঁড়ায়।শান ভ্রুকুচকে চারদিকে দেখে গ্লাস নামিয়ে দেয়।সবে মাত্র সন্ধ্যা নেমেছে।তবুও দিনের আবছা আলো এখনো রয়েছে।সেই আলোতে সবাইকে চিনতে অসুবিধা হয় না শানের।হাস্যোজ্বল মুখে সালাম জানাতেই লোকরাও সালামের প্রতিউত্তর করে শানকে বাহরে বের হতে বলে।তাঁদের কথামতো শান বের হয়।

“কিছু কি বলবেন চাচা?”,জড়তা নিয়ে বলেই শান সবার দিকে তাকায়।আশানুরূপ কোন প্রতিক্রিয়া কারো মুখে না দেখে পূনরায় শান বলে,”আমার কাছে ধার্যকৃত সকল চাঁদা বা বিল তো আমি দিয়ে….. ”
“আরে এতো আগডুম বাগডুমের কি আছে,কেউ একজন শানকে বলো সবটা”,শানের কথার মাঝেই একজন মুরুব্বী বলে ওঠেন।কপালে ভাঁজ ফেলে শান বলে,”কি ব্যপার চাচা?কি হয়েছে?সরাসরি বলুন কোন সমস্যা নেই।”
“উউহুম উউহুম, আসলে হয়েছে কি বাবা তুমি তো এই এলাকারই ছেলে।ছোটকাল থেকে বড় হয়েছো এখানেই”
“জ্বি চাচা”
“তোমার বাবাও বেশ স্বনামধন্য আর চরিত্রবান মানুষ ছিলেন।যদিও তোমরা অন্য এলাকার তবুও আমাদের সাথেই মিশে গেছো।আমাদের এলাকাটা ঢাকার মধ্যে হলেও শহুরে সভ্যতার রেশটা কম রাখার চেষ্টা করি।এখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত আদবের সাথে বড় হয়। তাই নয় কি?”
“একদম চাচা”
“হুমম,তো কথা হচ্ছে গিয়ে এলাকার নাম বজায় রাখতে তোমার বাড়িতে তুমি কারে রাখবা কারে না রাখবা এটা জানার অধিকার আমাদের আছে।আমরা চাই না আমাদের ছেলেমেয়রা এসব নোংড়ামি দেখে বড় হোউক ”

মুরুব্বীর কথায় শানের বুঝতে অসুবিধা হয় না কি ব্যপারে কথা বলতে এসেছে তারা।লম্বা লম্বা কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে শান বলে,”তা আমি এমন কি করেছি চাচা যেটাতে এলাকার বদনাম হচ্ছে?বা আপনাদের ছেলেমেয়েরা নোংড়ামি শিখছে”
শানের কথায় কয়েকজন মুরুব্বী সমস্বরে বলে ওঠে,”বুঝতেছো না যেন? ”
“নাতো চাচা”
“সবাই থামো থামো।আমারে কথা কইতে দেও।”,সবার মাঝে একজন লোক বলে উঠলেন।
“তুমি একা একটা মানুষ, তোমার মেয়েরে নিয়া থাকো।বেশ ভালো কথা তবে আরেকটা মেয়েও আছে তোমার মেয়ের গভারনেস।সেটাও বেশ ভালো কথা।তা বাবা গভারনেস তোমার বাড়িতে থাকে কেন? আবার শুনলাম তোমার মেয়ে নাকি কোথাও গেছে।তারমানে হিসেব হইলো যে তোমরা দুইটা ছেলেমেয়ে আজ দুইদিন ধরে একবাড়িতে দিন কাটাচ্ছো।এটা কি নোংড়ামি নয় বাবা?”

“চাচা, আপনারা যা ভাবছেন তা মোটেই সেরকম নয়।সবটা শুনলে……”
“ব্যাস!আর কিছু শোনানো লাগবে না।এরকম নোংড়ামো এই তল্লাটে চলবে না”,এতোক্ষন চুপ থাকার পর হাত উচিয়ে কথাটা বললেন চেয়ারম্যান সাহেব।রাগকে অনেক কষ্টে বশে এনে শান পূনরায় গাড়িতে উঠে বসে।
এরপর চেয়ারম্যান সাহেব সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,”চলো ”

🌸🌸

গাড়ি থেকে নেমে ব্লেজার টা খুলে হাতে নেয় শান।টাই টা হেচকা টানে খুলতে খুলতে বাড়িতে ঢোকে।পাখি তখন সোফায় বসে টিভি দেখছিলো।শানকে দেখে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে লজ্জামাখা মুখটা অবনত রাখে।যাতে গালের লজ্জার রংটা শানের নজরে না পড়ে।শান সেদিকে একবার শান্ত চাহনীতে চেয়ে হাতের ব্যাগ, ব্লেজার টা টাই সমেত সোফায় ছুড়ে দেয়।বুকের কাছের দুটো বোতাম খুলে ধপ করে সোফায় বসে পরে।মাথাটা পিছনে এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।

রাখির বলা কথাগুলো পাখির মনে উঠতেই লজ্জায় কুকড়ে যায় পাখি।ভাবতেও পারছি না শান তাকে ভালোবেসে ফেলেছে।

ধীরপায়ে এগিয়ে শানের দিকে চেয়ে পাখি বলে,”শরীর কি খুব খারাপ করছে?”
শান কিছু না বলে ঠাঁয় বসে থাকে।পাখি শানের কোন উত্তর না পেয়ে আমতা আমতা করে আবার বলে,”মামাথা টটিপে দেব!”
তখনো শান কিছু বলে না।শানের নিশ্চুপ ভঙ্গিকে সম্মতিভেবে পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় পাখি।দুহাত শানের মাথার উপর রেখে ধীরেধীরে ম্যাসাজ করে দেয়।চট করে শান চোখ খুলে পাখির দুহাত ধরে ফেলে।
#আসক্তি২
পর্বঃ১৪
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

হাতের কব্জিসন্ধি চেপে ধরে শান।টেনে এনে সামনে দাঁড় করায়।মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পরে সেও।
“হাউ ডেয়ার ইউ?”,রক্তচক্ষু নিয়ে দাঁতে দাঁত চিপে বলে শান।অসহায় মুখ করে পাখি ছলছলে চোখে শানের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি তাকায়।তার চোখে চোখ রেখে শান দ্বিতীয় দফা চিল্লিয়ে বলে,”হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি?”
অন্তরাত্মা সমেত কেঁপে ওঠে পাখি।আরেকবার শানের দিকে তাকায়।পাখির চোখের ভাষা পড়ে বুঝতে অসুবিধা হয় না সে কতোটা অন্ধকারে পরে আছে।কারণ সে জানেই না শান কেন তার সাথে পূর্বের ন্যায় বাজে ব্যবহার করছে।

কাপাকাপা গলায় পাখি মিনমিন করে বলে,”ককি হহয়েছে আপপনার?”
“সেটাও কি এখন তোমাকেই বলতে হবে,হুমম?”,একটু এগিয়ে বলে শান।চোখের মনি এদিক সেদিক ঘুরিয়ে পাখি বলে,”সেরকম টা নয়, আসলে যাওয়ার সময় তো…..”
“এটা আমার জীবন।আমি কখন কি মুডে থাকব সেটা আমি ডিসাইড করব নট ইউ, ওকে?”,হাতের কব্জিটা আরো জোড়ে চিপে ধরে বলে শান।ব্যথায় কুঁকড়ে আহ্ শব্দ করে পাখি হাতের দিকে তাকায়।ব্যথার চোটে দুফোটা চোখের জল পরে যায় শানের হাতের উপর।

পাখির পুরো শরীর কাপছে।হিম ঠান্ডা হয়ে গেছে গোটা দেহ।হাতের উপর দুফোটা জল গড়াতেই চট করে হাত ছেড়ে দেয় শান।নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রনের সর্বচ্চ চেষ্টা করছে সে।কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে। পাখির থেকে দুহাত সরে গিয়ে প্যান্টের দুই পকেটে হাত রেখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।তৎক্ষণাৎ রিনির বলা কথা গুলো আর সন্ধ্যায় ঐ মুরুব্বীদের কথা গুলো যেন মগজে গিজগিজ করছে শানের।চোখ বন্ধ করলেই বারোংবার সে সব ঘটনাস্থল মনে পড়ছে তার।

হাতের কব্জিটা আরেকটা হাতে ডলতে ডলতে পাখি চোখের পানি ছেড়ে দেয়।আনমনে ভাবতে থাকে,”আগে তো বড় মা, বড় বাবা কতো অত্যাচার করত, কই এতো কষ্ট তো হতো না?আজ সামান্য কব্জি চেপে ধরাতে এতো কেন কষ্ট হচ্ছে আমার”
হাতটা উঠিয়ে দেখে লাল লাল রক্তের ছিটা গুলো মূহূর্তেই দানা বেঁধে গেছে।

শান তড়িৎগতিতে পিছনে ফিরে পাখির সামনে এসে দাঁড়ায়।তর্জনী আঙ্গুল উচিয়ে বলে,”তোমার জন্যে আমার লাইফে কোন রকম প্রবলেম আমি চাই না।আমার চরিত্রের উপর আঙ্গুল উঠানোর সাহস এই অত্র এলাকা কিংবা মেডিকেল কোত্থাও কারোর নেই।অথচ আজ তোমার জন্য…….”
আধাকথায় থেমে শান চোখ মুখ কুচকে বলে,”আউট..গেট আউট ফ্রম মাই হাউজ”
পাখি অবাক চোখে শানের দিকে তাকায়।শান একবার সে চোখে তাকাতেই জগতের সমস্ত অসহায়ত্ব খুঁজে পায়।নজর সরিয়ে শান বলে,” বাড়ি থেকে চলে যাও”
অনুভূতিহীন শান্ত চাহনীতে পাখি বলে,”আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই।এ শহর আমার অচেনা।শহরের মানুষগুলো বড্ডো বেশিই অচেনা”
শেষের কথাটা শানের কানে আসতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে সে।যেন কথাটা কানে নয় বুকের বাঁ পাশের ঠিক যেখানে হার্ট বসানো সেখানেই পেরেক ঠুকে দিলো।মূহূর্তের মাঝে রাগটা যেন অভিমানে পরিনত হলো।মুখ ফুটে বলতে ইচ্ছে করলো,”আমি বাস্তবতার শিকলে বাঁধা।নতুন করে কোন নারী মায়ায় আটাকাতে পারব না”
কিন্তু সেসব আর বলা হলো না।মনের কথা রাগে পরিনত করে শান জবাব দিলো,”কোথায় যাবে, কি করবে সেটা তোমার ব্যপার।শুধু এটুকু জানি আমার বাড়ি ছাড়ো রাইট নাউ”
পাখি স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে শানের ব্যবহার গুলো পরোখ করে চলছে।স্বাভাবিকভাবে শানের দিকে চেয়ে বলে,”আপনি বড্ডো বেশিই রং পাল্টাতে পারেন ডাক্তার সাহবে।গিরগিটিও এতো তাড়াতাড়ি রং পাল্টায় না”

পাখির বলা প্রতিটা কথাই আজ একটু বেশিই ঝাঁঝালো লাগছে।ভুল তো কিছু বলছে না।তবুও শানের বুকে বিঁধছে কথাগুলো।
“আমি কোনভাবেই কারোর উপর এতোটা দূর্বল হতে পারি না।নো, ইম্পসিবল!”,ভেবেই শান পাখির হাতটা পূনরায় ধরে ফেলে।এরপর সদর দরজা খুলে ঝটকা মেরে দরজার বাহিরে রাখে পাখিকে।বজ্রকন্ঠে বলে,”চলে যাও”
এরকম কিছু হবে পাখি স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি।মূহূর্তেই মনের মাঝে একরাশ ঘৃনা জন্মে যায়।
“ভালোবাসা! এসব কি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ?”,বিড়বিড় করে ভাবতেই চোখের সামনে শানের বাড়ির দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়।দরজার শব্দে চমকে ওঠে পাখি।চোখের কোণে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুগুলোর শেষাংশ দুহাতের উল্টোপিঠে মুছে চারদিকে তাকায়।পুরো আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেঁয়ে আছে।মূহূর্তের মাঝেই বৃষ্টি নামবে হয়ত।এই সময় কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে পাখি বুঝে উঠতে পারে না।এ শহর যে তার অচেনা।

“যেখানেই যাই, এখানে তো আর নয়’ই”,ভাবতে ভাবতে গেইটের কাছে চলে আসে পাখি।দারোয়ান সালাম গেইটের কাছে নেই।হয়ত দোকানে গেছে চা টা খেতে।ধীরপায়ে বাহিরে বেরিয়ে এসে রাস্তার একপাশে দাঁড়ায় পাখি।এ রাস্তাুয় বড় যান না চললেও প্রাইভেট কার চলে।সাথে পায়ে হেঁটে চলা মানুষের আনাগোনা থাকেই।।আবাসিক এলাকা বলে কথা।
সবাই এ পাশ থেকে ওপাশ যাচ্ছে আর পাখির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।আকাশের অন্ধকারটা আরেকটু গাঢ় হতেই দমকা হাওয়া শুরু হয়ে যায়।সে হাওয়ার বেগ গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।শঙ্কা, চারিদিকে বিপদের শঙ্কা মনে হয় পাখির কাছে।কি করবে বুঝতে পারে না।

“ম্যাডাম, আপনি? এই সময় বাহিরে কেন?”,কারো ডাকে চমকে ফেরে পাখি।ততোক্ষনে একটু একটু বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।পাখি তাকিয়ে বুঝতে পারে ব্যক্তি টা রাফি।
পাখির জড়সড় অবস্থা দেখে রাফি পূনরায় বলে,”ম্যাডাম কি ব্যপার এই সময়ে এখানে কেন?একটু পরেই বৃষ্টি নামবে ম্যাডাম বাসায় চলুন”
রাফির কথায় পাখি অবাক হয়ে বলে,”আমার কোন বাড়ি নাই রাফি”
পাখির শুকনো কথায় রাফির বুঝতে অসুবিধা হয় না শানের সাথে পাখির কিছু হয়েছে।রাফি আমতা আমতা করে বলে,”তাহলে কোথায় যাবেন ম্যাডাম?”
“আমার একটা হেল্প করবে?”
“হ্যা ম্যাডাম বলুন”
“আমায় ইনায়াহ্’র প্রিন্সিপালের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে?আমি তো চিনি না এই শহর”,শেষের কথাটা বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পাখি।
রাফি হরবরিয়ে জবাব দেয়,”আচ্ছা ম্যাডাম আপনি দাঁড়ান আমি রিকশা নিয়ে আসি”

অল্প কিছুক্ষন পর রাফি একটা রিকশা নিয়ে পাখির সামনে দাঁড়ায়।এরপর দুজনে উঠে বসে রাখিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।পুরো রাস্তায় পাখি একটা কথাও বলে নি।পুরোটা সময় রাস্তার প্রতিটা মানুষকে খেয়াল করেছে,গাছপালাকে দেখেছে,আর দেখেছে প্রানহীন ঐ প্রতিটা ইট পাথরের দালানকে।রাফির মনে অনেক প্রশ্ন কিন্তু বলার সাহস হচ্ছে না;পাখির অবস্থা দেখে।তাই চুপচাপ বসে থাকে।তবে পাখির প্রতি কেমন যেন আলাদা মায়া কাজ করে রাফির।বড় বোনের মতো মনে হয় তার।

একটা সময় রিকশা এসে থামে রাখিদের বিল্ডিং এর সামনে।পাখি মাথা উচিয়ে দেখে দশ তলার বিলাসবহুল বিল্ডিং এটা।রাখি ওর মাকে নিয়ে পাঁচ তলার ফ্লাটটায় থাকে।রাফি বলে, “আপনি যেতে পারবেন না?নাকি আমি দিয়ে আসব?”
স্মিত হেসে পাখি জবাব দেয়,”এতোটা করলে আমার জন্যে এটুকুও করো।ফ্ল্যাট পর্যন্ত দিয়ে আসো”
রাফি মুচকি হেসে বলে,”আচ্ছা”

কলিংবেল টিপে অপেক্ষা করে রাফি।পরপর দুবার বেল দেয়ার পর কেউ এসে দরজা খোলে।

“পাখি!তুই!এসময়!”,দরজা খুলে পাখিকে দেখে অবাক হয়ে যায় রাখি।রাখির কথার জবাবে সামান্য হেসে রাফিকে বলে,”এবার এসো।অনেক ধন্যবাদ রাফি।”
“কি যে বলেন ম্যাডাম”
“আপু বলো ম্যাডাম বলো না”,থমথমে স্বরে জবাব দেয় পাখি।চোখের কোণে জল চিকচিক করছে তার।
পাখি স্বগতোক্তি করে বলে,”একটা অনুরোধ”
“হ্যা ম্যা..না না আপু। হ্যা আপু বলেন!”
চোখেমুখে কাঠিন্যভাব এনে পাখি বলে,”কেউ যেন না জানে আমি এখানে আছি”
রাফি অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।পাখি একবার রাখির দিকে চেয়ে বলে,”ভিতরে যাবো না?”
“আরে অবশ্যই।আয় আয়, ভিজে গেছিস তো একদম”

রাফিকে বিদায় জানিয়ে ভিতরে ঢোকে পাখি। এরপর একে একে সমস্ত ঘটনা রাখিকে বলে।কান্না করতে করতে হেচকি উঠে যায় পাখির।রাখি ওকে জড়িয়ে শ্বান্তনা দেবার চেষ্টা করে।অনুতপ্তচিত্তে বলে,”আমারই ভুল হয়েছে রে পাখি।আমি ভেবেছি ডাক্তার সাহেব তোকে ভালোবাসে।তাই ওভাবে….”
“না রে তোর কোন দোষ নাই।সব দোষ আমার এই কপালের”,ওড়নার আঁচলে চোখ মুছে বলে পাখি।
“আচ্ছা বাদ দে।তোর কোত্থাও যেতে হবে না।শালা থ্যাংকলেস পার্সন।ও জানে না আকাশ কতোটা খারাপ করেছে। এ অবস্থায় কি করে কেউ বাড়িত থেকে একজনকে তাড়িয়ে দেয়।ফালতু লোক কোথাকার”,রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলে রাখি।
এরপর পাখির চোখের পানি মুছিয়ে বলে,”আ’ম শিওর ও তোকে ভালোবাসে।হয়ত নিজের ইগোর কাছে পরাজিত হতে চাচ্ছে না।দেখবি ও তোকে নিতে আসবে।আর সেদিন তুই না গিয়ে বুঝিয়ে দিবি কষ্ট কাকে বলে!”,

“আমার ওসব কিচ্ছু চাই না আর। রাতটা এখানে থেকে সকালে সিলেট চলে যাবো।আমার কাছে টাকা নেই আর শহরটাও অচেনা।স্কুলে জয়েন করার এখনো এক মাস হয় নি তবুও রিকোয়েস্ট করব আমায় বেতন থেকে কিছু টাকা দিতে। আমি বাড়ি চলে যাব”,গড়গড় করে কথাগুলো বলে থেমে যায় পাখি।
রাখি ঝনঝনে গলায় বলে,”যেন ডাক্তারই সব;আমরা কিছুই না?এ শহরে আমি আছি পাখি।ডোন্ট ওয়ারি!”
ঠোঁটের হাসিটা সামান্য এলিয়ে পাখি বলে,”বিষাক্ত লাগছে এই নগরী”
“তো সিলেটে গিয়ে কী বেঁচে থাকতে পারবি?”,তেড়ছাভাবে বলে রাখি।
পাখি হেয়ালিমাখা উত্তর দেয়,”শান্তিতে মরতে তো পারব!”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here