#আসক্তি২
পর্বঃ২১
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
রাত হয়েছে অনেক আগে।এলাকাবাসীরা চলে গেছে নিজেদের বাড়ি বাড়ি।পাখিদের পুরোনো বাড়ির বড় লিভিং রুম টা সাজানো হয়েছে তাদের ফুলশয্যার উদ্দেশ্যে।পাখির অবর্তমানে এ বাড়িতে রায়ানের রাসলীলা চলত তা বোঝার অপেক্ষা রাখে না।চারদিকে মদের বোতল, নেশা জতীয় দ্রব্য,ইউজ্ড প্যাকেট সবই ছিলো। রানী মাসি কয়েকজন ছেলে মেয়ে সমেত বাড়িটা ঝকঝকে তকতকে করে দিয়েছে।বিয়ের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটার পর থেকে শান পাখি এখনো কেউ কারোর সামনে যায় নি।ব্যারিস্টার সুমন তার সহযোগী সহ অনেক আগেই চলে গেছে।যাওয়ার সুযোগ শানেরও ছিলো কিন্তু সে যায় নি।কেন যায় নি তার উত্তরও শানের কাছে নেই।
বাড়ির পিছনে বাগান বাড়িতে বসার মতো বেঞ্চ পাতা আছে।পাখির বাবা শৌখিন গোছের লোক ছিলেন।মাঝে মাঝে সেখানে বসতেন তিনি আর প্রকৃতি উপভোগ করতেন।সে সময়ে সিমেন্ট দিয়ে সুন্দর করে কয়েকটা বেঞ্চ পাতিয়ে নেয় বাগানে।শান সাড়া বাড়ি খুঁজেও পাখিকে পায় না।এরপর বেঞ্চের একমাথায় এসে বসে।চাঁদের আলোয় আলোকিত চারদিক।ব্যপার টা মন্দ লাগছে না শানের।
“বিয়েটা তো হয়ে গেছে কোনভাবেই হোক,চলে যাওয়ার সুযোগও ছিলো। তবে আমি থেকে গেলাম কেন?আর আমার মনে যে দ্বিধারর সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিলো তা নেই কেন?তবে কি আমিও চেয়েছিলাম বিয়েটা হোক!…..”
ভাবতে ভাবতে সামনে খানিক দূরে চোখ পড়ে শানের।বুঝতে পারে পুকুর ওটা।তবে কোন মেয়ে যে সেখানে বসা তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।ভ্রুকুচকে ভাবতে থাকে,”এতো রাতে পুকুর পাড়ে কোন মেয়ে এভাবে কেন থাকবে!”
চাঁদের আলোর সাথে পাখিদের বাড়ির গেইটের লাইটের ক্ষীন আলোয় বুঝতে পারে ওটা পাখি।মনে কেমন যেন একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।আগপিছ না ভেবে পা বাড়াতেই ফোনে কল আসে।রাহেলা বেগম ফোন করেছেন।
“হ্যা চাচি বলো! ”
“তুমি কি আজ আসবে না বাবা?”
“না চাচি, এখানে একটা কাজে আটকা পরেছি।ইনায়াহ্’কে একটু বুঝিয়ে রেখো।আমি কাল চলে আসব”
“আচ্ছা”
বলেই ফোন পকেটে রেখে দেয় শান।এরপর বাগান থেকে পুকুর পাড়ে যাওয়ার সরু রাস্তাটা ধরে রাস্তার শেষ মাথায় গিয়ে থামে।
খুব সাবধানে গিয়ে থামে পাখির পিছনে।সিমেন্টে বাঁধাই করা পুকুর পাড়।চাঁদের আলোয় পানিতে মুক্তা ঝড়ছে যেন।চারপাশটা ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে পাখির দিকে তাকায় শান।দুহাতে হাঁটু জড়িয়ে মাথা ঠেকিয়ে একদৃষ্টে চেয়ে আছে পানিতে প্রতিফলিত চাঁদের আলোর দিকে।পাখির এই বিধ্বস্ত রূপ শানের হার্টের প্রতিটা বিটকে আরো দ্রুতগামী করে তুলছে।তার এই সময় কি করা উচিত বুঝছে না সে।
“পাখির সাথে কথা বলব?কি কথা বলব?নাকি বলব না!যেভাবে এসেছি সেভাবেই চলে যাই বরং”,দোটানা মন নিয়ে শান আবার পা বাড়াতেই পাখি ডেকে ওঠে।
“দাঁড়ান”
থমকে যায় শান।ও স্বরের কাছে নিজের ইচ্ছেশক্তি কিছুই না যেন!পা বাড়ানোর ইচ্ছে করছে না আর।
“সবকিছুর জন্যে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আপনি চলে যান আমি ব্যবস্থা করছি “,শানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে খনখনে গলায় বলে পাখি।খুব শান্ত স্বাভাবিক দৃষ্টিতে শান তাকিয়ে আছে পাখির দিকে।
শানের থেকে প্রতিউত্তর না পেয়ে পাখি মাথা তুলে তাকায়।চোখে চোখ পড়তেই রাগে চোখ সরিয়ে নেয়।পাখির চোখ দেখে বোঝার বাকি থাকে না এতোসময় এখানে বসে বসে কেঁদেছে নে।কান্নার দাগ এখনো মুছে যায় নি।চাঁদের আলোয় বড় বেশি মোহনীয় লাগছে পাখিকে।নিজেকে নিজের মাঝে সংবরন করা দায় হয়ে পরছে শানের।চাইলেও আজ মনের লাগামহীন আবেগ গুলোর রাশ ধরতে পারছে না সে।পাখি সেদিকে আরেকবার চেয়ে বলে,”আমার জন্যে আপনার লাইফে কোন প্রবলেম হোক তা আমি চাই না। আপনি চলে যান এখান থেকে”
“তুমি?”,হঠাৎ প্রশ্ন করে শান।নিজের করা প্রশ্নে নিজেই অবাক হয়। ভাবতে থাকে,”আমি কি পাখিকে সাথে নিয়ে যেতে চাই?”
দাঁতে দাঁত পিষে পাখি বলে,”আপনার কাছ থেকে উপহার স্বরূপ অনেক কিছু পেয়েছি। আর কিছু চাই না আমার। এখানে যদি মরে পঁচে গলেও যাই তবু আপনার মতো মানুষের কাছে ফিরব না আর”
বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই ডান হাত ধরে হেচকা টানে পাখিকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে শান।হকচকিয়ে ওঠে পাখি। শানের বুকের এতো কাছে নিজেকে ভেবে বুকের ল্যাবডাব শব্দটা বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুন।যেন বাহিরে থেকে শোনা যাবে।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে পাখি।
শান একহাতে পাখির কোমড় জড়িয়ে আরেকটা হাত খুব সন্তর্পণে কপালের উপর লেপ্টে থাকা চুল গুলো ছুঁয়ে দেয়।কেঁপে কেঁপে ওঠে পাখির পুরো শরীর।কারো মুখে কোন কথা নেই।
শান হাত টা কপাল থেকে নামিয়ে বাম গালটা দখল করে নেয়।শুকনো দুটো ঢোক গিলে চেয়ে থাকে পাখির পিটপিট করা চোখের দিকে।খুব ইচ্ছে করছে ও চোখের পাপড়ি গুলো ঠোঁটে ছুঁয়ে দিতে।
থমকে চেয়ে থাকে জোৎস্না স্নানে ডুবে থাকা নারী মুখের দিকে।কম্পনরত চোখজোড়া খুলে পাখি শানের দিকে তাকায়।শান কোমড়ে জড়ানো হাতটা উঠিয়ে আরেক গালে রেখে মুখটা আঁজলা ভরে তুলে ধরে।শানের পরবর্তী পদক্ষেপ বুঝতে পেরে পাখি কেঁপে উঠে চট করে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। শান এগিয়ে যায় তাক করা পাখির ওষ্ঠযুগলের দিকে।
মূহূর্তে ঠোঁটের নিচের তিলটা জ্বলজ্বল করে চোখে ধরা পরে শানের।চোখের জ্বলুনি শুরু হয় তখনি।চোখদুটো বন্ধ করে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে শান।
“কি করতে চলেছি এসব? “ভাবতে ভাবতে অনুতাপের স্পষ্ট রেখা শানের চোখে মুখে ভেসে ওঠে।পাখি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে শান সরে গেছে দুই ইঞ্চি।পাখি করুন চোখে তাকাতেই শান গাল থেকে হাত সরিয়ে পিছনে ঘুরে আসতে ধরে।নিজের শার্টের কলারে টান ধরায় থেমে যায় শান।সাবধানে পিছন ঘুরে বুঝতে পারে পাখি শার্টের কলার চেপে ধরেছে পিছন থেকে।ভ্রুদ্বয়ে ভাঁজ ফেলে শান একবার পাখির দিকে আরেকবার নিজের কলারের দিকে চেয়ে দেখে।রাগত দৃষ্টিতে পাখি শানের দিকে তাকিয়ে থাকে।ভ্রু নাচিয়ে শান বলে,”কি?”
পাখি কিছু না বলে মাটিতে ভর দেয়া শানের দুই পায়ের উপর দাঁড়াতেই শান কিছুটা সরে যায়।স্বাভাবিক চাহনিতে চেয়ে পাখি শানের দিকে এগিয়ে যায়।এতোটাই কাছে চলে যায় যে পাখির মাথা গিয়ে ঠেকে শানের মুখের কাছে।চুলের সুগন্ধে মাদকতার ছোঁয়া শানকে নির্দিষ্ট স্থানেই বেঁধে রাখে।পাখি মাথা তুলে সন্তর্পনে শানের দুই গালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।দুইহাতে শানের মাথাটা নিচু করে কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে দেয়।হতভম্বের মতো পাখির কান্ড দেখে চলেছে শান।মাথার দুইপাশে হাত রেখে শানের আরো কাছে যেতেই পাখির হাতদুটো ধরে ফেলে সে।
“কি করছো এসব?”,কপোট রাগ দেখিয়ে বলে শান।পাখি শুকনো ঠোঁট দুটো জিহ্বায় ভিজিয়ে সম্মোহিত চোখে তাকিয়ে থাকে শানের দিকে।যে দৃষ্টি এড়িয়ে যাবার সাধ্য কোন পুরুষের নেই।শান নজর সরিয়ে বলে, “ঘরে চলো”
পাখি নিরুত্তর হয়ে পা দুটা উচিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে শানের।নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শান।ফুফিয়ে কেঁদে ফেলে পাখি।জড়ানো গলায় মুখ গুঁজে কেঁদে কেঁদে বলে,”আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।আমি জানি আপনিও আমায় ভালোবাসেন।কিন্তু আপনি কারণে অকারণে আমাকে তাড়ানোর পায়তারা করেণ।কেন?কারণ কি?আমি কি এতোটাই খারাপ? ”
খুব করে ইচ্ছে করছে পাখিকেও তার হাতের শক্ত বাঁধনে বেঁধে ফেলতে।কিন্তু শান নিরুপায়।হাতের মুঠি শক্ত করে নিজেকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে।পাখি আরো শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরে শানের।শরীরের দুইপাশে এলানো শানের হাত দুটো নিজের পিঠে ধরিয়ে দিয়ে আবার বলে,”আমি চাইনি এভাবে আমাদের বিয়েটা হোক।যেহেতু হয়ে গেছে আর কি করার থাকে বলুন!পৃথিবীর সবথেকে ভালো বউ হবো আমি, প্রমিজ”
শান না চাইতেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাখিকে।নিজের এতোটা কাছে পাখিকে বুঝতে পেরে আবেগ গুলো আর সংবরন করতে পারে না।মুখ গুঁজে দেয় পাখির ঘাড়ের উপর এলিয়ে দেয়া চুলের ভাঁজে।প্রতিটা স্পর্শেই নতুন এক পাখিকে আবিষ্কার করে পাখি।দুহাতে আরো শক্ত করে জড়াতেই শান সিটকে সরে আসে আরো দুহাত পিছনে।
পাখিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত চলে আসে বাড়ির পথে।পাখি সেদিকে চেয়ে নীরব অশ্রু বিষর্জন দিয়ে ভাবে,”ভালোবেসেও কেন এতো দূরত্ব আজ?কী সে কারণ যা আমার থেকে আপনাকে দূরে থাকতে বাধ্য করছে?”
চোখ মুছে বিড়বিড় করে বলে,”আপনার অনুভূতি আমি বুঝেছি ডাক্তার সাহেব, আমার অনুভূতিও বুঝিয়েছি এরপর আর দূরত্বটা সহ্য হচ্ছে না।কবে সবটা জানতে পারব! তবে কথা দিচ্ছি লুকানো যে কারণই থাকুক তা আপনার জীবন থেকে চিরতরে মুছে দেবো আমি”
এরপর রাত গভীর হওয়ায় পাখিও চলে আসে বাড়ির ভিতর।
🌸🌸
বাড়িতে ঢুকে চারপাশ তাকিয়ে কোথাও খুঁজে পায় না শানকে।কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে যায় পাখির।অজানা ভয় চেপে ধরে পাখিকে।
“আয়ান ভাই তার কোন ক্ষতি……
না না কি ভাবছি এসব?কেন খারাপ ভাবছি? ”
বলতে বলতে বাড়ির বাহিরটাও খোঁজে পাখি।কোথাও পায় না শানকে।চিন্তিত মলিন মুখটা নিয়ে ঘরে ঢুকে বিছানায় বসে ভাবে,”আমায় রেখে চলে গেলেন! ”
ভাবতেই দুচোখের কোণ ভরে ওঠে।
“হ্যা হ্যা, ওটাই করুন।আর আমি কালকেই পৌঁছাচ্ছি।নো প্রবলেম।”, পাশের ঘর থেকে শানের গলার আওয়াজে চমকে ওঠে পাখি।দ্রুত উঠে সে ঘরে যেতে বুঝতে পারে শান জানলার একদম কাছ ঘেঁষে ফোনে কথা বলছে।কথা বলা অবস্থায় পাখির দিকে একনজর তাকিয়ে পূনরায় বাহিরে তাকাতেই হঠাৎ কানেকশন ফেইল্ড হয়।মুখে বিরক্তিসূচক শব্দ করে শান বিড়বিড় করে, “ক্ষ্যাতমার্কা এলাকা,নেটওয়ার্ক নাই কিছু নাই”
শানের কথায় পাখি ফিক করে হেসে দেয়।শান ওর দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে আবারও নেটওয়ার্কের খোঁজে ফোনটা জানলার ভিতর-বাহির করে।
ব্যর্থ হয়ে দরজার কাছে চলে আসতেই পাখি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।এক ইঞ্চিও নড়ে না।শান সন্দিহান চোখে সেদিকে একবার চেয়ে আবার পাশ কাটাতেই পাখি সেপাশে সরে যায়।বুকে দুহাত গুঁজে ভ্রু নাচায় পাখি।শান বিরক্তিমাখা মুখে বলে,”সরো, যেতে দাও”
“আটকাইছি কখন।আর দানবের মতো এই শরীর আটকাবার সাধ্য আমার মতো আটান্ন কেজি মানুষের নাই।হুহহ”
শান পাখির মতিগতি বুঝতে পারছে না।হঠাৎ পরিবর্তন শানকে দোটানায় ফেলে।
একহাত দিয়ে পাখিকে সরিয়ে দিতেই পাখি ফট করে শানের বাম গুলে চুমু এঁকে দিয়ে নিজেই সরে যায়।
শান হা করে গালে হাত রেখে কিছুক্ষন বোবার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর পাখির পিছু পিছু এগিয়ে বলে,”কি করলা এইটা?”
পাখি ভাব নিয়ে ঘরের এতোদিনের পুরোনো জিনিস গুলো ছুঁয়ে দেখে।
পাখির গা ছাড়া ভাব দেখে শানের রাগ উঠে যায়।হাতটা টেনে নিজের মুখোমুখি করে বলে,”ঢং ছাড়ো। একটু আগে কি করলা এইটা?”
“কি করছি”,ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে পাখি।
“কি করছো মানে, একটু আগে আমার গা….”
বলতেই শান বন্ধ হয়ে যায়।
“গা……কি ডাক্তার বাবু?”,অবুঝ হবার ভঙ্গিতে বলে পাখি।
শান মুখটা সামান্য বাঁকিয়ে ভাবুকের ন্যায় চেয়ে থাকে।
“কি হলো বলুন!গা….কি?”,শানের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলে পাখি।
শান পিছনে মাথাটা হেলিয়ে সরুচোখে চেয়ে বলে,”কিছু না”
স্বগতোক্তি করে তর্জনী আঙ্গুল উচিয়ে বলে,”এরকম দূঃসাহস আর দেখাবে না।ফল ভালো হবে না”
“একশ বার করব, হাজার বার করব। আগে করতে পারতাম না কারণ আগে বর ছিলেন না।এখন হাজার বার করব।আমার বর, আমার অধিকার”,শানের চোখে চোখ রেখে একরোখা জবাব দেয় পাখি।সে চোখের মায়া বড্ডো বিষাক্ত লাগে শানের কাছে, যেন ও চোখে তিলে তিলে গড়ে তোলা নিজের অহমিকা ধ্বংসের আহ্বান দেখতে পায় শান।
নজর সরিয়ে বলে,”এরকম ভাবে কোন বিয়ে হয়!ধরে বেঁধে বিয়ে!আমি মানি না এ বিয়ে”
শানের কথাটা বুকের কোথাও গিয়ে লাগে পাখির।নিজেকে সংবরন করে বলে,”যেভাবেই হোক হয়েছে তো!”
শান মিছে রাগ দেখিয়ে পাখিকে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই পাখি এগিয়ে এসে বলে,”এখন আপনার চৌদ্দগুষ্টি মানবে”
“সরো,সরো বলছি “,রাগ দেখিয়ে বলে শান।
রাগত স্বরে কথাটা বললেও আগের মতো রাগ বা অপমান করার মনমানসিকতা শানের চোখে খুঁজে পায় না পাখি।সাহস যুগিয়ে বলে, “আপনি চাই মানুন,চাই না মানুন আমি আপনার স্ত্রী। কথাটা মগজে গেঁথে নিন”
বলেই সরে আসে পাখি।
🌸🌸
জোৎস্নাকে আড়াল করে বৃষ্টির আলাপন।ঝুম বৃষ্টিতে চারপাশ টিপটিপ করছে।ফুলসজ্জারর খাটে শান একা শুয়ে আছে।সাহস আর লজ্জা ভুলে শানকে জড়িয়ে ধরা বা কিস করা গেলেও সারারাত এক বিছানায় থাকার কথা ভাবতেই কেমন যেন লাগে।তাই রাতটা পাশের ঘরে থাকার চিন্তা করে পাখি।
এ ঘরে বিছানায় শুইতে ছোটবেলার হাজার স্মৃতি মানষপটে ফুটে ওঠে।স্মৃতিচারণের এক পর্যায়ে পাখি বুঝতে পারে ঝুম বৃষ্টির সাথে সাথে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।হঠাৎ বাজ পরার বিকট শব্দে পাখি জোড়ে চিল্লিয়ে কান চেপে ধরে। ভয়ে বুকটা ধকধক করে তার।পাখির আকষ্মিক চিল্লানোতে শান ছুটে আসে।হন্তদন্ত হয়ে বলে,”কি ,কি হয়েছে তোমার?”
মাথা তুলে পাখি মিনমিন করে বলে, “ককিছু না”
“তাহলে চিল্লাইলা কেন?”
“এমনি”
পাখির কথায় শান আবার ফিরে যেতে আরেকটা বাজ পরে পাখি বিছানা থেকে তিড়িং করে লাফ মেরে মেঝেতে শানের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।শানের বোঝার বাকি নেই কিসে ভয় পাচ্ছে পাখি।মুচকি হেসে নেয়।পাখি তাকাতেই সে হাসি নিজেতে মিলিয়ে নেয় শান।মাথাটা একটু নিচু করে বলে,”উইপোকা চেনো?”
পাখি বুঝতে পারে না হঠাৎ এমন প্রশ্নের কারণ কি!কোন উত্তর না করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।শান আবার বলে,”উইপোকার মুখ শক্ত থাকে আর বাম নরম।শক্ত মুখটা দিয়ে কি কি’ই না নষ্ট করে। হাতে নিয়ে দেখো ওর বাম কতোটা নরম।তুমি হচ্ছো সেই উইপোকা।মুখে বড় বড় কথা খালি”
বলে শান চলে যায় পাশের রুমে।
পাখি চোখ মুখ কুচকে বলে,”আমি উইপোকা!আমার মুখ শক্ত আর বা……”
রাগে গজগজ করে শানের ঘরে এসে বলে, “আমি মোটেও উইপোকা নই।ঠিকাছে?”
“হুম বুঝলাম।এবার লাইট অফ করে চলে যাও”
পাখি রিনরিনে স্বরে বলে, “ও ঘররে পানি পরে”
শান বেশ বুঝতে পারে পাখি কিসের ভয়ে ও ঘরে যেতে চাইছে না।
কপোট রাগ দেখিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলে,”তো তুমি কি এ ঘরে থাকার প্ল্যান করছো?”
পাখি অসহায়ের মতো মুখটা করে তাকায়।
“আর তুমি মিথ্যে বলছো কেন?কই পানি পরে।তোমার বাবা বেশ পোক্ত কাজ করেছেন; বুঝা যায়।এ ছাদ ফুটো হতে মিনিমাম আরো পঞ্চাশ বছরের দরকার”
তাই ঢং না করে ও ঘরে ঘুমাও গিয়ে।
পাখি বলার মতো কোন ভাষা খুঁজে পায় না।শান ওর দিকে তাকিয়ে বলে,”লাইট অফ করে চলে যাও। ঘুমাব আমি।কাল সকালে এখান থেকে বের হতে পারলে যেন বাঁচি”
শেষের কথাটা বিড়বিড় করে বলে শান।তবুও গিয়ে পৌঁছায় পাখির কানে।রাগে এগিয়ে এসে বলে,”কে থাকতে বলেছিলো আপনাকে?ঢং করছেন এখন”
শান আর পিছু ফিরে তাকায় না।চোখ বন্ধ করেই শুয়ে থাকে।
বিড়বিড় করতে করতে পাখি বিছানার একদম একপাশে ভয়ে ভয়ে জড়সড় হয়ে শুয়ে পরে।তড়িৎগতিতে শান বলে ওঠে,”হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ!তুমি এখানে কেন?”
“বর যেখানে, বউ সেখানেই থাকবে।আর আজ আআামাদের ফুলসজ্জা”
“তোহ!”
“তো আবার কি, আমি এখানে ঘুমাব ব্যাস”,ঝনঝনে গলায় জবাব দেয় পাখি।শান কিছু বলতে যাবে তার আগে বেড সুইচ টিপে পাখি ঘর অন্ধকার করে নেয়।
“সাহস দেখিয়ে শুয়ে তো পরলাম, যদি অধিকার ফলায়! আর ও ঘরে একা আমি পারব না থাকতে”, ভাবতে ভাবতে ঠোঁট উল্টে ফেলে পাখি।
শান কিছু বলতে চেয়েও পারে না।কারণ বেশ বুঝতে পেরেছে পাখি বজ্রপাতে ভয় পাচ্ছে।চুপচাপ পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে।
🌸🌸
সকাল সকাল শান রেডি হয় ঢাকা ফেরার উদ্দেশ্যে।খাবারের জন্যে অনেকবার জিদ করলেও রানী মাসির জিদকে রাখতে পারে না শান।আশ্বস্ত করে বলে, “পরে আসব কোন একসময়।”
শান রেডি হয়ে রানী মাসিকে বলে,”পাখি এখানে থাকুক।ওর যা যাবতীয় খরচ আমি বহন করব।আপনারা ওকে দেখে রাখবেন।আমার পক্ষে ওকে নিয়ে সাথে রাখা সম্ভব নয়”
রানী মাসি অবাক হয়ে বলে,”এ কেমন কথা? বিয়ে করলে কাল আর আজ রেখে যাচ্ছো বাবা!”
“বিয়েটা জোড় করে দেয়া হয়েছে।এতে আমার কোন ইচ্ছে ছিলো না”
“হাজার হোক, তারপরেও তো।কিভাবে দেখে রাখব ওকে আমি। তুমি আয়ানকে চেনো না তাহলে। পাখিকে জ্যান্ত মেরে ফেলবে সে”,ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে কথাগুলো বলে রানী মাসি।
শান অনেক ভেবে বলে,”কিচ্ছু হবে না। কোর্ট থেকে আমি কাগজ নিয়েই এসেছি।পাখির কিছু করতে পারবে না ওরা”,
বলেই শান আর এক মূহূর্ত দেরি না করে বেরিয়ে আসে।পাশের ঘর থেকে সম্পূর্ণ কথা শুনে পাখি চোখের জলটা মুখে বলে,”নিয়ে তো আপনি যাবেনই।আমি আপনারই সংসার করবো এটা ফাইনাল।আমার জন্যে জমানো ভালোবাসাটা একদিন আমি ঠিকই আদায় করে নিবো”
চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে পাখির।
শান দ্রুত এসে চাবি নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে সিট বেল্ট বাঁধতে পাখি রানী মাসির থেকে বিদায় নিয়ে দৌড় দেয়।গাড়ির দরজা খুলে বসে পরে সিটে।
“চলুন চলুন, তাড়াতাড়ি যেতে হবে তো”,বলতে বলতে সিট বেল্ট বাঁধার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয় পাখি।শান ভ্রু কুচকে সানগ্লাস টা নামিয়ে বলে, “তুমি!তুমি কোথায় যাচ্ছো,ড্যাম ইট?”
“ওমা, বিয়ে হয়েছে আমি স্বামীর ঘরে যাবো না।”
“পাখি দিস ইজ টু মাচ”,চোখ মুখ বন্ধ করে বলে শান।
“আমি যখন ভেবেছি যাব তখন যাবোই। কিছুদিন থেকে আবার চলে আসব”
শান বুঝতে পেরেছে একে আটকানো মানে নিজের সময় অপচয় করা।কারণ সে কোনভাবেই মানবে না কোন কথা।
স্টেয়ারিং এ হাত রেখে বলে,”যাবে ভালো কথা।কাউকে ঘূনাক্ষরেও বলতে পারবে না আমাদের বিয়ের কথা।রাজি?”
মনটা বিষিয়ে ওঠে পাখির।কোনমতে নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,”রাজি।তবে আবার যদি সবাই বাজে কথা বলে?”
“সেটা দেখার বিষয় আমার না।তুমি যদি বাজে কথা,বদনাম সহ্য করে থাকতে চাও তবে তোমার ইচ্ছে”,তেড়ছাভাবে বলে শান গাড়ি স্টার্ট করে।
পাখি হাফ ছেড়ে ঠোঁটের ডগায় বিড়বিড় করে,”আগে তো যাই তারপর দেখা যাবে।সবার মুখে টেপ মেরে দিবো”
“যা বলার জোড়ে বলো”,গাড়ি চালাতে চালাতে বলে শান।
অবাক হয়ে পাখি বলে,”শুনলেন কি করে?”
শান কিছু না বলে স্মুথলি ড্রাইভ করে চলে।
#আসক্তি২
পর্বঃ২২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
মধ্যদুপুরে আহমেদ ম্যানশনে এসে পৌঁছায় শানের গাড়ি।গাড়ি পার্ক করে রেখে শান বাড়িতে ঢোকে।গমগমে ভাব দেখে পাখি কোন কথা বলার সুযোগ পায় না।পিছন পিছন সেও বাড়িতে ঢোকে।রাহেলা বেগম শানকে দেখে নিরাশ হয়।কারণ মনের ভুলে তিনি চেয়েছিলো পাখির আগমন।নিরাশ বদনে বলে,”ফ্রেশ হয়ে নাও বাবা আমি খেতে দেই”
বলেই পাশ কাটতেই পাখি মাথা উচিয়ে রাহেলাকে গাল ভর্তি হাসি উপহার দেয়। অবাক হয়ে রাহেলা এগিয়ে এসে বলে,”তুমি!”
পাখি রাহেলাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারব না আমি। তাই চলে এলাম।”
শান ওদের দুজনের পূনর্মিলন দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উপরে চলে যায়।
“কি করে করলে এসব?শানবাবা তোমায় আনতে চাইলো?”,হরবরিয়ে প্রশ্ন করে রাহেলা বেগম।পাখি রাজ্য জয়ের হাসি মুখে অটল রেখে বলে,”চাচি, আমার নাম পাখি।আর তোমার শানবাবাকে কিভাবে কাবু করতে হয় তা আমি জানি।আগে আগে দেখো হোতা হ্যা কেয়া।”
এরপর ডেভিল হাসি ঠোঁটে রেখে বলে,”আমায় ভালোবাসার কথা যদি তার মুখ থেকে বের না করছি তো আমার নামও পাখি না”।
এক যুগেরও অধিক সময় ধরে যে এক চিন্তার বোঝা রাহেলার মাথায় ছিলো তা আজ নেমে গেলো মূহূর্তেই।
তৃপ্তির হাসি ঠোঁটে রেখে আনমনে বলে,”ম্যাডাম আমাদের কাজ মনে হয় শেষের পথে।এবার দেখার পালা শানবাবা কিভাবে আগের শানে চলে আসে”
“কি চাচি, কি ভাবছো?ক্ষিদে লাগছে খাইতে দেও।কিচ্ছু খাই নি সকাল থেকে”,নাকে কান্না করার ভঙ্গিতে বলে পাখি।পাখির কথায় ভাবনা ভঙ্গ হয় রাহেলার।পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”নিশ্চই তোমার জিদের কাছে শানবাবার এতোদিনের অহমিকা ভেঙ্গে চুড়মার হবে।তুমিই পারবে সবটা আগের মতো করতে?”
অবাক চোখে তাকিয়ে পাখি বলে,”আচ্ছা চাচি এমন কী কারণ থাকতে পারে তার এমন আচরনের?”
“সবটা জানার সময় এখনো হয় নি মা।সময়ই তোমায় বলে দিবে সবটা”,ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি রেখে বলে রাহেলা বেগম।
🌸🌸
“কি করে ইনায়াহ্ বেবি?”,রিনরিনে কন্ঠে বলতে বলতে পাখি ইনায়াহ্’র ঘরে ঢোকে।মুখ ফিরিয়ে নেয় ইনায়াহ্।থমথমে মুখে বলে ,”তোমরা আমায় ছেড়ে ঘুরতে যেতর পারলে মুন সাইন!জানো, কতোটা মিস করেছি তোমায়”
ইনায়াহ্’র গালে হাত রেখে পাখি উত্তর দেয়,”সরি বেবি,একটা কাজে আটকে গেছিলাম। তাই তোমায় জানানো হয় নি”
ইনায়াহ্ চট করে পাখির গলা জড়িয়ে বলে,”আই মিসড ইউ মুন সাইন”
পাখিও জড়িয়ে নেয় ইনায়াহ্’কে।
এর মাঝে কেটে যায় সাতটা দিন।শান এখন বেশীর ভাগ সময়েই মেডিকেলে কাটায়।বাড়িতে তেমন থাকছে না বললেই চলে।পাখিকে কথা বলার মতো সামান্য সুযোগটুকুও দেয় না।যতোক্ষন বাড়িতে থাকে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখে।
সেদিন সন্ধ্যার দিকে নাবিদকে সাথে করে আনে শান;কি একটা জরূরী কাজে।রাহেলা বেগম সহ পাখি চলে যায় রান্না ঘরে।নাবিদ নাকি রাতে খাবে এখানে।কয়েক পদের খাবার রান্না করে ডায়নিং এ সাজায় পাখি।নাবিদ আড়চোখে তাকায় শানের দিকে।টিপ্পনী কেটে ফিসফিস করে বলে,”তোদের মাঝে সবটা ঠিক আছে তো!”
ভ্রু কুচকে শান জবাব দেয়,”ওর সাথে কি হবে আমার?আর হওয়ারই বা কি আছে”
নাবিদ বেশ ভালোভাবে বুঝেছে এরা দুজনই দুজনকে ভালোবাসে অথচ বলতে পারছে না।এর পিছনে যে শানের দোষ বেশি তাও নাবিদ বুঝতে পারে
ভাবুকের মতো কিছুক্ষন ভেবে পাখির উদ্দেশ্যে বলে,”আপনার নামটা যেন কি?”
খাবার সার্ভ করতে করতে স্মিত হেসে পাখি জবাব দেয়,”জ্বি, আমার নাম পাখি”
“ওয়াও নাইস নেইম”
নাবিদের কথায় শান মাথা তুলে একবার তাকায়।
নাবিদ দেখেও না দেখার ভান করে বলে,”নামের সাথে সাথে মানুষটাও তো অনেক নাইস।সুন্দরী,মায়াবী,মনোহারিণী,হৃদয়হা…..”,
বাকি কথা শেষ করার আগেই শান দ্বিতীয় দফায় তাকায় নাবিদের দিকে।পাখি সেদিকে খেয়াল করে মুখ বাঁকিয়ে মুচকি হেসে বলে,”থ্যাংক ইউ।আপনিও অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারেন”
শান এবার চোয়াল শক্ত করে তাকায় পাখির দিকে।
“আমি নাবিদ, শানের বেষ্ট ফ্রেন্ড “,বলে হাত এগিয়ে দেয় নাবিদ।পাখি সেদিকে চেয়ে শয়তানি হাসি হেসে হাত বাড়াতেই মেঝেতে চামচের ঝনঝন শব্দ চমকে ওঠে।নিচে তাকিয়ে বুঝতে পারে শানের চেয়ারের কাছে চামচ পরে গেছে আর শান শান্ত চাহনীতে চেয়ে আছে পাখির দিকে।নাবিদ বলে ওঠে,”ওহহহো, শানের চামচ গুলো মনে হয় চাইছে না আপনার সাথে আমার ফ্রেন্ডশীপ হোক।”
বলতে বলতে নিজের খাবারে মনোযোগ দেয়।পরপর চোখের পলক ফেলে পাখি এগিয়ে গিয়ে চামচ গুলো তুলে নেয় ।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্য চামচ এগিয়ে দেয় শানের দিকে।যে ভাবটা কারো রাগের আগুনে ঘি ঢালার জন্যে যথেষ্ঠ। রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে চলে যেতেই নাবিদ গলা উচিয়ে বলে,”আপনার মতোই আপনার রান্নাটাও অনেক বেশিই সুন্দর।মিস পা খি”,
শান ঘুরে তাকায় নাবিদের দিকে।ছোটছোট চোখে চেয়ে বলে,”ফ্লার্টিং গুলো একটু বেশি হচ্ছে না?”
“তো? তুই তো বলেছিস ওর জন্যে নাকি ফিলিংস নাই তোর।তাহলে আমার রাস্তাটা ক্লিয়ার করতে হেল্প কর”,গোসতের টুকরো টা মুখে পুরে বলে নাবিদ।স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চেয়ে শান জবাব দেয়,”তাড়াতাড়ি খেয়ে বিদায় হও”
মুচকি মুচকি হেসে নাবিদ বিড়বিড় করে,”এবার তোমার ভাবটা ছুটাব বাছাধন।তোমার চোখেমুখে স্পষ্ট হিংসার ছাপ আমি দেখতে পাচ্ছি”
“কিছু বলার হলে জোড়ে বল”,স্পষ্ট জানায় শান।
নাবিদ থতমত খেয়ে বলে,”কানের পর্দা এতো শার্প!”
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর পাখি হাসি মুখে কথা বলে নাবিদের সাথে।হেলে ঢুলে তার এ কথা বলার ধরন শান দূর থেকে পরোখ করছে অনেকক্ষন ধরে।
গলা উচিয়ে বলে,”রাতটা কি এখানে থাকার প্ল্যান করেছিস?তাই হলে বেডরুমে এসে ঘুমাতে পারিস”
নাবিদ মুচকি হেসে বলে,”আসলে সামনের মানুষটার বাচনভঙ্গি এতো সুন্দর যে বাড়ি যেতেই ইচ্ছে করছে না”
স্বগতোক্তি করে এক গাল হেসে নাবিদ বলে,”আচ্ছা ভালো থেকো পাখি।খুব ভালো লাগলো তোমার সাথে পরিচয় হয়ে।আমি কিন্তু মাঝে মাঝেই তোমার রান্না খেতে আসব”
সম্মতি জানিয়ে পাখি বলে,”একদম। মন চাইলেই চলে আসবেন”
শান অবাক হয়ে যায় পাখির এমন আচরন দেখে।
দ্রুত উঠে যায় নিজের ঘরে।মেঝেতে পায়চারি করতে করতে ভাবে, “নাবিদের সাথে এমন কি কথা থাকতে পারে ওর, যে ওভাবে হেসে হেসে বলতে হলো!কেন নাবিদ ওভাবে বললো?এতো প্রশংসা করার কি আছে?”
হাজারটা দূঃচিন্তার মাঝে পাখি দরজায় এসে উপস্থিত হয়।গলায় দুইবার খাঁকারি দিয়ে পানির পট এগিয়ে বলে,”আপনার পানি”
শান সেদিকে ক্রুর চোখে তাকিয়ে থাকে ;কিন্তু কিছু বলে না।শানের কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে পাখি পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকে সাইড টেবিলে পট টা রেখে পছনে ঘরতেই ধাক্কা লাগে শানের বুকের সাথে।চোখ বন্ধ করে পাখি নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে।
“উনি তো বিছনার ঐ কোণায় ছিলেন?তারমানে এখানে এসেছেন!”
“নাবিদ কি বললো?”,শানের প্রশ্নে ভাবনায় ছেদ পরে পাখির।শানের হিংসা হিংসা ভাবটা বুঝতেই ঠোঁটের কোণে স্মিত হেসে পাখি পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চায়।হাতের কব্জি ধরে শান বলে,”এটিটিউড আমায় দেখাচ্ছো? ”
“কিসের এটিটিউড! আমি রুমে যাবো।ইনায়াহ্ অপেক্ষা করছে”
“করুক “,শান্ত চাহনীতে একরোখা জবাব দেয় শান।
পূনরায় বলে,”কি বলল নাবিদ? ”
পাখি হাতটা ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,”তাতে আপনার কি কাজ?আমার ব্যপারে তো আপনি দায়বদ্ধ নন। তাহলে কে কি বললো, কে কি করলো আমার সাথে সেগুলো আপনার না জানলেও চলবে”
শান দাঁতে দাঁত পিষে আরেকটু কাছে এনে বলে,”যা বলছি তার উত্তর আমার চাই, রাইট নাউ”
“বলব না। কি করবেন?বাড়ি থেকে বার করে দেবেন?তা আর সম্ভব না।কারণ লিগ্যালি এখন আমি আপনার ওয়াইফ”,বলেই শানকে ঠেলে দূরে আসে পাখি।
চাপা রাগে হাতটা পিছনে মুছরে ধরে পাখিকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,”নাবিদ ভালো না।প্লে-বয় ও।কি বলেছে বলো এবার”
পাখি অবাক চোখে চেয়ে থাকে শানের চোখের দিকে।ও চোখে নিজের জন্যে গভীর ভালোবাসার চাহনী দেখতে পায় পাখি।আবেশে একটা হাতে শানের গাল ছুঁয়ে বলে,”চোখ কখনো মিথ্যে বলে না ডাক্তার সাহেব।ও চোখে আমার ভালোবাসা জমানো”
পাখির কথায় তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে নেয় শান।হাত ছাড়াতে পাখি বলে ওঠে, “উহু, থাকুক না”
শান থমকে গিয়ে নজর এদিক সেদিক করে চোখের ভাষা লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে।
“আমার কাছে থাকলে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবে না পাখি।আর তোমার মাঝে এই ছ্যাচরামি স্বভাবটা বেমানান।”,স্বাভাবিক ভাবে বলে শান।
অভিমানী স্বরে পাখি বলে ,”আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।কোন একটা কারণে আমার থেকে নিজেকে দূরে রাখছেন।তবে আমার বিশ্বাস একদিন আপনিও আমায় কাছে টেনে নেবেন।আমি আপনাকে ভালোবাসি।এটা ছ্যাচরামি নয় ডাক্তার সাহেব”
“ঘরে যাও।আর নাবিদের সাথে নেক্সট টাইম কথা বলবে না। হেসে হেসে তো নয়ই”
“কেন?আপনার কি তাতে?”
আড়চোখে চেয়ে শান জবাব দেয়,”আমি চাই না তুমি ওর সাথে কোন প্রকার সো কল্ড ফ্রেন্ডশিপে জড়াও”
“দেখলেন তো, আপনার মাঝে আমায় নিয়ে কতোটা পজেসিভনেস”
পাখির দিকে চেয়ে আনমনে বলে শান,”আমি তোমাতে আসক্ত পাখি।পজেসিভনেস টা আগে থেকেই ছিলো ;এখনো বর্তমান।তবে আমি অক্ষম সেই ভালোবাসায় তোমায় জড়াতে”
🌸🌸
আজ শাড়ি পরেছে পাখি।ইচ্ছে শাড়ি পরেই স্কুলে যাবে।রাহেলার কাছ থেকে শাড়িটা নিয়ে নিজেকে রেডি করে পাখি।এরপর ইনায়াহ’কে স্কুলের জন্যে তৈরী করে নিচে নেমে আসে পাখি।ইতোমধ্যে শান টেবিলে বসেছে।সিঁড়িতে পাখিদের আগমনে সেদিকে চোখ ফেলে চোখ ছানাবড়া হয় শানের।কালো রঙ্গের শাড়িটায় পাখিকে দেখতে মোহনীয় লাগছে যেন।নজর সরানো দায় হয়ে পরেছে।ঘোর লাগা চাহনীতে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।
পাখি শানের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে ওঠে।কানের পিঠে চুলগুলো গুঁজে শানের দিকে তাকাতেই শান চোখ নামিয়ে নেয়।
খাবারে মনোযোগী হয়ে পরে শান।
পাশের চেয়ারটা টেনে ইনায়াহ্’কে বসিয়ে পাখি খাওয়ানো শুরু করে।খেতে খেতে শান বলে, “শাড়ি চেঞ্জ করে জামা পরে আসো”
পাখি অবাক হয়ে বলে,”কেন!”
“বলছি, তাই”
ইনায়াহ্’র মুখে খাবারটা তুলে দিতে দিতে বলে,”আপনি বললেই আমাকে শুনতে হবে কেন?”
শান প্লেটের উপর খট করে চামচ রেখে সামনে চেয়ে থাকে।পাখির দিকে মুখ ঘুরিয়ে পেটের দিকে আঙ্গুল ইশারা করে বলে,”রাস্তার সবাইকে সেডিউস করার ইচ্ছে আছে বুঝি!”
পাখি শানের আঙ্গুলের নিশানা বুঝতে পেরে ভীষণ লজ্জায় পরে যায়।কাপড়ের আঁচলটা টেনে নামায় তড়িৎগতিতে।
শান বুঝতে পারে পাখি কাপড় চেঞ্জ করার মানুষ না।তাই ইচ্ছেকৃত চায়ের কাপটা শাড়ির কুচিতে ফেলে উঠে দাঁড়ায়।হা করে চেয়ে থাকে পাখি।চোখ মুখ কুচকে শানের দিকে কিছু বলতেই শান দ্রুত পা বাড়িয়ে চলে যায় সদর দরজার দিকে।পাখি সেদিকে চেয়ে রাগে জ্বলে পুড়ে যায় ভিতর ভিতর।
“এই লোককে জব্দ করতে যেয়ে বার বার আমিই জব্দ হচ্ছি।তবে যাই হোক সোনার চাঁদ, একদিন এভাবেই সবটা বলাব আপনার মুখ থেকে”,ভেবে পাখি শাড়িটা বদলাবার জন্যে নিজের ঘরে চলে যায়।
🌸🌸
পাখিকে দেখে অবাক হয়ে যায় রাখি।গত দুইদিন না আসার কারণ জানতে চায়।পাখি একে একে সবটা বলে রাখিকে।বিয়ের কথাটা বলতে থমকে যায় পাখি। মনে পড়ে শানকে দেয় কথাটা।থমথমে মুখে রাখি জানতে চায়,”ডাক্তার তোকে নিয়ে আসলো?”
“আসবে না মানে, আনতে বাধ্য করেছি”,বলেই হেসে ওঠে পাখি।
“এখনো কিছু কনফেস করে নি তোর ডাক্তার?”
“উহু, তবে লুকাতেও পারছে না। আমি জানি একদিন সবটা ঠিক হবে।আর সেদিন সবথেকে সুখী মানুষ হবো আমি।”
“তোর ফিলিংস জানিয়েছিস?”,প্রশ্নাতুর চোখে তাকায় রাখি।
পাখি ওর দিকে ঘুরে বলে,”সবটা বলে দিয়েছি;অপেক্ষার ধৈর্য কুলোয় নি।আমি ভালোবাসা দিয়েই তার মনের সকল চাপা কষ্ট ঘুচিয়ে দেব”
“খুব ভালোবাসিস, না?”
“অনেননননকে টা”,টেনে টেনে বলে পাখি।
#আসক্তি২
পর্বঃ২৩
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
মায়ের মতো অনেকেই হয়ত জীবনে থাকে, তবে মা কিন্তু একজনই হয়।তার তুলনা তিনি নিজেই।মাকে ছাড়া জীবন যে কতোটা কষ্টের তা কেবল মা হারা সন্তানরাই বুঝতে পারে।
আজ পাখির খুব করে মায়ের কথা মনে পড়ছে।মাকে হারিয়েছে অনেক বছর হলো।তবুও যেন মা’র স্মৃতিগুলো আজও জ্বলজ্বল করছে।জানলার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে চুপচাপ নিচে চেয়ে আছে পাখি।তাকিয়ে দেখছে জীবনের চলমান গতি।কোথাও কোনকিছু থেমে নেই। সকাল থেকেই মায়ের জন্য মনটা খুব খারাপ করেছে তার।
কোনকিছুই ভালো লাগছে না ।ইনায়াহ্’কে স্কুলের জন্যে রেডি করে দেয়।
ইনায়াহ্ প্রশ্ন ছোড়ে,”তুমি রেডি হবা না মুন সাইন?”
শুকনো হেসে পাখি বলে,”না বেবি,আজ তুমি রাফি চাচ্চুর সাথে যাও। কাল থেকে আমি যাব।”
ইনায়াহ ঠোঁট উল্টাতেই পাখি হরবরিয়ে বলে ওঠে,”এই না না, একদম কান্না কাটি চলবে না। আমার রিকোয়েস্ট এটা। তুমি কি মুন সাইনের রিকোয়েস্ট রাখবা না? বলো বেবি?”
শেষের কথাটা একটু করূন স্বরে বলে পাখি।
খিলখিলিয়ে উঠে ইনায়াহ্ বলে,”ওকে বাবা ওকে, আর কেঁদো না।আমি যাচ্ছি তো ”
এরপর বুকে জড়িয়ে একবার আদোর করে দেয় পাখি।
নাস্তার টেবিলে বসে শান ফোনে কিছু একটা দেখছে খুব মনোযোগ দিয়ে।পাখি ইনায়াহ্’কে সাথে নিয়ে নামতে নামতে শানের দিকে তাকায়।একবার সেদিকে চেয়ে শান আবার ফোনের দিকে তাকায়।পরোক্ষনে বুঝতে পারে পাখি নরমাল ড্রেসে রয়েছে।আবার তাকাতেই পাখির চোখে চোখ পড়ে।মুখটা খুব শুকনো দেখায় পাখির।আবার নরমাল ড্রেস তারমানে স্কুলেও যাবে না।ছোট ছোট চোখ করে বোঝার চেষ্টা করে শান।
পাখি শানের দিক থেকে অনুভূতিহীন চাহনীতে নজর সরিয়ে নেয়।শানের একটা চেয়ার পরের চেয়ারটা বের করে ইনায়াহ্’কে বসায়।প্লেট রেডি করে খাবার নেয়। এর মাঝে অন্যান্য দিনের মতো একটি বারও শানের দিকে তাকায় না পাখি।ব্যপার টা কেমন যেন হজম হচ্ছে না শানের।তবুও চুপচাপ নাস্তা সেরে নেয়।
রাহেলা এসে পাখির শুকনো মুখের দিকে চেয়ে বলে,”তুমি খাবে না মা?আর রেডি হও নি যে, আজ স্কুলে যাবে না?”
পাখি ঠোঁট সামান্য প্রসস্ত করে শান্ত স্বরে বলে,”আমার ক্ষিদে নেই চাচি।”
“আর আজ স্কুলেও যাব না”,ইনায়াহ’র মুখে খাবার টা তুলে দিতে দিতে বলে পাখি।
পাখির হাবভাব আজ শানের বড্ডো ব্যতিক্রমী লাগছে।সন্দিহান চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবে,”ব্যপার কি? আজ এতো শান্ত?স্কুলেও যাবে না, সকালেও খাবে না?একটি বার তাকালোও না!হাউ ইজ দিজ পসিবল ম্যান”
“আরেকটা পরোঠা দিবো বাবা”,পরোঠার প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে জানতে চায় রাহেলা বেগম।ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে শান জবাব দেয়,”না চাচি, আর খাবো না”
উঠে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়ায় শান।পাখির দিকে অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকে যেন দৈনিক দিনের মতো ওর দিকে একটু তাকায়।কিন্তু শানকে অবাক করে দিয়ে পাখি একটি বারও শানের দিকে তাকায় না।অগত্যা শান গলায় দুইবার “উহুম,উহুম”শব্দ করে
পাখিকে উদ্দেশ্য করে রাহেলাকে জোড়ে বলে,”আমি আসছি চাচি ”
তবুও পাখি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ইনায়াহ্’কে খাওয়ায়।এবার খানিকটা নয় পুরো অবাক হয় শান।সিঁড়িতে পা রেখে আবার পাখির দিকে তাকায় শান;ব্যর্থ হয় সে।চলে যায় নিজেরর ঘরের উদ্দেশ্যে।
🌸🌸
“ইনায়াহ্ স্কুলে গেছে, দেখিস একটু।আর আমি আজ যেতে পারছি না ”
“কেন কি হয়েছে বল?”
“আরে না তেমন কিছুই না। আজ যাচ্ছি না সেটাই জানানোর জন্যে ফোন করেছিলাম”
বলেই কল কেটে দেয় পাখি।রাখি বেশ বুঝতে পারছে পাখির মন খারাপ।তারও ব্যপারটা খুব খারাপ লাগছে।কিছুক্ষন পর ইনায়াহ্ স্কুলে চলে আসলে রাখি গিয়ে জানতে চায় পাখির খবর।
“তোমার মুন সাইনের কি হয়েছে বাবু?”
ইনায়াহ্ মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে জবাব দেয়,”জানি না।শুধু বলেছে আজ স্কুলে আসবে না।”
ভাবনায় পরে যায় রাখি।
“কি এমন কারণ যে ওর মন এতো খারাপ আজ!”
শান আজ কারণে অকারণে ফোন করছে বেশি।পাখির পার্সোনাল নম্বরে ফোন করাটা কেমন যেন ইগোতে লাগে।তাই ল্যান্ডফোনে ফোন করে।আর প্রত্যেকবারই রাহেলা ধরে।
“হ্যালো কে?”
“চাচি আমি”
ফোন কানে নিয়ে রাহেলা বলে,”হ্যা বাবা বলো”
বিব্রতবোধ করে শান বলে,”ইনায়াহ্ ফেরে নি এখনো?কি করছে ও?”
“এ নিয়ে তিনবার ফোন করলে, আর একই কথা বলছো?তোমার কি হয়েছে বাবা?”,হরবরিয়ে বলে রাহেলা
“না ঠিকাছে সব, রাখছি চাচি”,বলেই ফোন কল কেটে দেয় শান।
🌸🌸
বিকেল বেলা সোফায় বসে ডোরিমন দেখছে ইনায়াহ্।রাহেলা বেগমও বসে আছে পাশেই।দরজায় কারো ডাকে দুজনেই সেদিকে তাকায়।রাখি এসেছে।
“পাখি আছে?কোথায় ও?”
সহাস্যে রাহেলা বেগম তাকে ভিতরে এনে বসতে দিয়ে বলে,”হ্যা মা পাখি তো আছে। মনে হয় ঘুমাচ্ছে।দাঁড়াও আমি ডেকে আনি”
রাহেলা চলে যায় পাখিকে ডাকতে।এদিকে রাখি ইনায়াহ্’র সাথে কথা বলে।
কিছুক্ষন পরে পাখি ঘুমু ঘুমু চোখে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।মুচকি হেসে রাখির সাথে কথা বলে।
“এই সময় হঠাৎ?”
রাখি ভ্রু নাচিয়ে জবাব দেয়,”হুহহ হুহহ,আসলাম।একটা সারপ্রাইজ আছে”
অবাক হয়ে পাখি প্রশ্ন করে, “সারপ্রাইজ!আমার জন্যে! কি সেটা?”
“আছে ম্যাম আছে।আজ আপনার মন খারাপ আমি বুঝেছি।তাই মন ভালো করে দেবো”
পাখি সন্দিহান চোখে পাশ কাটিয়ে সোফায় বসতে বসতে বলে,”কোন মন টন খারাপ না।এমনিই আজ ভালো লাগছে না কিছুই”
পাখিকে টানতে টানতে রাখি বলে,”চল তোর রুমে চল ”
“তোর ব্যাগে এগুলো কি?এতো উচু কেন ব্যাগ? “,জিজ্ঞাসু হয়ে প্রশ্ন করে পাখি।
রাখি মুচকি হেসে বলে,”উপরে চল। গেলেই বুঝতে পারবি”
পাখি ওকে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।ইনায়াহ্ও ওদের পিছু পিছু চলে যায়।আর রাহেলা রাতের খাবারের আয়োজনে রান্নাঘরে চলে যায়।
ব্যাগ থেকে একে একে রাখি খাবারের জিনিস গুলো বের করে।পাখি অবাক হয়ে বলে,”এসব কেন?”
“পার্টি হবে ম্যাম পার্টি”,ঠোঁটে ডেভিল হাসি রেখে বলে রাখি।ইনায়াহ্’র চোখেমুখে খুশি ঝলমলিয়ে ওঠে।দুহাতে তালি দিয়ে ওঠে,”ওয়াও আমরা পার্টি করব আজ!”,
“ইনায়াহ্ তুমি একটু বাহিরে যাও বেবি।দেখো তো দিদা কি করছে”,ইনায়াহ্’কে আদর করে বাহিরে যেতে বলে রাখি।এরপর লম্বা একটা বোতল বের করে পাখিকে বলে,”তাড়াতাড়ি এটা অন্য কোথাও রাখ”
চোখ ছানাবড়া পাখির। বোতল দেখে বোঝার বাকি নেই এটা কি হতে পারে!শুকনো ঢোক গিলে বলে,”এসব কি রে?তোর মাথা ঠিকাছে?ডাক্তার সাহেব জানলে ঠিক রাখবে না আমায়।তুই এসব নিয়ে যা। আমি পারব না এসব রাখতে”,
হন্তদন্ত হয়ে যায় পাখি।কলিজা শুকিয়ে আসছে তার।
রাখব বিরক্তিসূচক শব্দ করে বলে,”তোর দ্বারা কিচ্ছু সম্ভব না।তোর ডাক্তার সাহেব জানতেও পারবে না।আর এটা একটু খেলেই দুনিয়া ভুলে যাবি।টেষ্ট করে দেখ”
পাখি অবাক চোখে বলে,”কক্ষনোই না।আমি এসব কোন দিনও খাই নি।এসব ভালো জিনিস না রাখি”
“রাখ তোর ভালো মন্দ।দেখি “,বলেই বিছানার মাথার কাছে ফাঁকা যায়গায় বোতল টা রেখে দেয় রাখি।
🌸🌸
একে একে রাখি বাকি খাবারের জিনিস গুলো প্লেটে সার্ভ করে নেয়।এরপর রাহেলা বেগমকেও টেনে এনে একসাথে সবাই পার্টি করে।একটু পর রাখি ফোনে ফুল ভলিউমে গান ছাড়ে।ইনায়াহ্ গানের তালে তালে নেচে ওঠে।সবাই হাতে তালি দিয়ে হেসে দেয়।
এক পর্যায়ে রাহেলা বলে,”আমি যাই রান্নাঘরে;রাতে খেতে হবে না!তোমরা বরং মজা করো”
রাহেলা চলে যাবার পর রাখি অন্য গান ছাড়ে ফোনে।ঘর থেকে হাসতে হাসতে বের হয় রাহেলা।সন্ধ্যা পার হয়েছে অনেক আগে।সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বাড়িতে প্রবেশরত শানকে দেখতে পায় রাহেলা।দুটো ব্যাগ হাতে দ্রুত বাড়িতে ঢোকে শান।হাতের ব্যাগ দুটো রাহেলার হাতে দিয়ে বলে,”ফ্রিজে রাখো চাচি। আইসক্রিম আর চকোলেটস আছে।গলে যাবে”
আজ যে পাখির মন খারাপ ছিলো তা বোঝার অপেক্ষা রাখে না।তাই অনেক ভেবে কতোগুলো আইসক্রিম আর চকোলেটস নিয়ে আসে শান।রাহেলা হাত বাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,”আচ্ছা রেখে দিচ্ছি আমি।তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও”
সিঁড়িতে পা রাখতে শানের কানে ভেসে আসে
Lagawelu jab lipistic , hilela aara distric
Tu, lagaweli jab lipistic , hilela aara distric
Zilla top lalelu
Kamariya
kare lapa lap, Lollipop lagelu
শান চোখ মুখ কুচকে অবাক হয়ে ভাবতে থাকে, “বাড়িতে এরকম একটা গান কে বাজাচ্ছে!”
দ্রুত পা চালিয়ে উপরে চলে যেতেই ইনায়াহ্’র ঘরের কাছে থেমে যায়।কারণ গান টা এ ঘর থেকেই আসছে।ভেড়ানো দরজাটা সামান্য ঠেলে চোখ কপালে উঠে যায় শানের।
গানটার সাথে তিনজনের উরাধুরা নাচ বাড়িময় কাঁপিয়ে তুলছে যেন।অবাক হয়ে যায় শান।সে যে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের নাচ দেখছে সেদিকে কোন খেয়ালই নেই কারোরই।কিছুক্ষন ওভাবে দাঁড়ানোর পর শান চুপচাপ বুকের কাছে দুইহাত গুঁজে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।সরু চোখে তাকিয়ে আছে পাখির দিকে।নাচ দেখে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে শানের।আনমনে ভাবে,”কেমন প্রাণবন্ত তুমি।এটাই মানায় তোমার সাথে”
শানের ভাবনার মাঝেই শানের দিকে চোখ পড়ে রাখির।সন্তর্পনে মিউজিক টা অফ করে দেয়। আড় চোখে পাখির দিকে তাকিয়ে ইশারায় নাচ থামাতে বলে।পাখিও ওর চোখ অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই শানকে দেখতে পায়।লজ্জায় পর পর কতোগুলো পলক ফেলে পাখি।
“ইনায়াহ্ চলো আআমরা নিচচে যযাই”,জড়ানো গলায় বলে রাখি। এরপর পা টিপে টিপে ইনায়াহ্’র হাত ধরে শান’কে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
“আআমিও…..যাবো..”,পাখির কথা টা বলার আগেই ওরা চলে যায়।
শান ধীরপায়ে ভিতরে ঢোকে।পাখি বার বার শানের দিকে তাকাচ্ছে আর ওড়নার আঁচলে মুচরাচ্ছে।
শান একদম পাখির সামনে এসে দাঁড়ায়;কিন্তু কোন কথা বলে না।পাখি মাথা তুলে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,”ঐ রাখিই গান টা…… ”
শান ঘরের চারদিক দেখে বুঝতে পারে একটু আগে এ ঘরে সুনামি হয়েছে।পাখির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মুখ কুচকে বলে, “এতো লো স্টান্ডার্ডের গান চালাচ্ছিলে!আর কি বিশ্রী নাচ!”
পাখি এবার মাথা তুলে মুখ বাঁকিয়ে বলে,”অনেক জনপ্রিয় গান এটা….”
“জনপ্রিয় মাই ফুট”,কটাক্ষ করে বলে শান।
পাখি ওড়নার আঁচল ছেড়ে আঙ্গুল উচিয়ে বলে,”তাও ভালো আপনার মতো ক্ষ্যাতমার্কা না।রসকষহীন চুপসে যাওয়া বেলুন”
“কি বললে?”
“কোন কথা দ্বিতীয়বার বলি না আমি”,ভাব নিয়ে বলে পাখি মুখ ফিরিয়ে নেয়।
শান ওর দিকে চেয়ে বলে,”যেমন মানুষ, তেমন গান। হ্যাহহ।অবশ্য এসব ছাড়া আর কি গান পছন্দ হতে পারে!”
বলেই শান উল্টোপথে চলে যেতেই পাখি চেতে গিয়ে প্রশ্ন করে,”কি বললেন আপনি?আমি লো স্টান্ডার্ড!নিজে কি? নিজে তো হিটলারের বাপ ”
“হোয়াটেভার “,উল্টো মুখেই বলে শান ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
শানের এই ডোন্ট কেয়ার ভাবটা জ্বালা ধরিয়ে দেয় পাখির গায়ে।কটাক্ষ করে বলা কথাগুলোও রাগ উঠাচ্ছে পাখির।মনে পড়ে রাখির বলা কথাটা,”এটা খেলে দুনিয়া ভুলে যাবি”
যেই ভাবা সেই কাজ।বিছানার ওপাশে রাখা বোতলটা বের করে মুখটা খুলে নেয় পাখি।রাগে মুখের সামনে ধরলেও মুখের ভিতরে ঢালার সাহস হয় না। কেমন যেন উটকো একটা গন্ধ।সাহস যুগিয়ে নাক চেপে ধরে একটু খেতেই মুখটা কেমন ঝলসে যায় যেন।গলা দিয়ে নামছে যেন জানান দিয়ে নামছে।আরেকবার সাহস করে আরেকটু খায়।এবার আগের মতো খারাপ লাগছে না, বেটার লাগছে।এরপর বোতলে মুখ লাগিয়ে কয়েক মূহূর্তের ব্যবধানে পুরো বোতল ফাঁকা করে পাখি।লম্বা একটা ঢেঁকুর তোলে।
এর মাঝে রাখি চলে আসে ইনায়াহ্ সহ। পাখি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রাখির দিকে।
“ডাক্তার সাহেব খুব বকেছে কি?”,প্রশ্ন করে রাখি।মৃদু হেসে পাখি জবাব দেয়,”আরে না।বকবে কেন?আমি পাখি।আমায় বকে কেউই পার পায় না বুঝলি?”
পাখির কন্ঠে একটা কম্পন অনুভব করে রাখি।সেটা অগ্রাহ্য করে বলে,”আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম রে”
স্বগতোক্তি করে বলে,”নিচে বসে থাকতে থাকতে ইনায়াহ্’র ঘুম পাচ্ছিলো। আর আমাকেও বাড়ি পৌঁছাতে হবে।মা ফোন করেছিলো।তাই তোর সাথে দেখা করতে এলাম”
নেশাক্ত চোখে পাখি বলে,”রাত টা থেকে যা”
“না রে, মা একায়।মা হার্টের পেশেন্ট।ভয় করে খুব”,অপারগতা দেখিয়ে বলে রাখি।
“তাহলে খেয়ে তবেই যা”,হেসে হেসে বলে পাখি।
পাখির আচরন কেমন যেন অগোছালো মনে হয় রাখির।ঘড়ি দেখে নিতেই চমকে ওঠে রাখি।
“নয় টা বেজে গেছে! আমায় এবার যেতে হবে”বলে বেরিয়ে পরে রাখি।
ফিরে এসে বলে,”বাই দ্য ওয়ে তুই ঠিক আছিস তো?”
“একদম।ঝাক্কাস”,বলে পাখি আশ্বস্ত করে রাখিকে।
রাখি আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসে নিচে।এদিকে ইনায়াহ্ ঘুমের ঘোরে যেপাশে পেরেছে সে পাশেই ঘুমিয়ে পরেছে।পাখি এগিয়ে গিয়ে ওকে ঠিক করে শোয়ায় আর হেসে ওঠে।খানিক পরে মাথাটা দুহাতে চেপে ধরে থাকে।সবকিছু কেমন যেন ফুরফুরে লাগছে তার কাছে।চুলের খোপাটা খুলে দেয় আবার বেঁধে নেয়।আবার খুলে আবার বাঁধে।এভাবে খোলা চুলে দাঁড়িয়ে থাকে দরজায় ঠেস দিয়ে।
🌸🌸
রাতে খাওয়ার পর শান উপরে উঠে আসে নিজের ঘরের দিকে।পাখির ওমন অগোছালো ভাব দেখে ভ্রু কুচকে যায় তার।পরোক্ষনে কুঞ্চিত ভ্রুজোড়া সোজা করে নিজের ঘরে হাঁটা দেয় শান।পাখি ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি বজায় রেখে শানের পিছু পিছু চলে।পিছনে কারোর আগমন বুঝতে পেরে শান ঘরের মেঝেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।ঘুরে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে বলে,”তুমি! এখানে কেন?”
পাখি কোন জবাব না দিয়ে হাসি হাসি মুখে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে শানের দিকে।
“আবার কি শুরু করলে?এবার এটা বলো না যে বউ বলে তুমি এ ঘরে ঘুমাবে?”,সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে শান।পাখি ধীরপায়ে পিছনে ঘুরতেই শান হাফ ছাড়ে।শান ধরে নেয় পাখি চলে গেছে।বিছানার দিকে এগোতেই দরজা লক করার শব্দে চমকে যায়। পিছনে তাকিয়ে দেখে পাখি দরজাটা লক করে দুহাত পিছনে দরজায় ঠেস মেরে এলোমেলো চুলে দাঁড়িয়ে আছে।
“কি করছো এসব?পাগল হয়ে গেছো?দরজা আটকালে কেন?”,দাঁতে দাঁত পিষে বলে শান।
পাখি এলোমেলো পায়ে দুচোখ কচলে শানের দিকে আগাতে আগাতে বলে,”আপনি এমন কেন ?কেন এমন করেন আমার সাথে?আমি তো আপনাকে অনেক ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব।”
পাখির গলার জড়ানো, কম্পিত স্বরে শান অবাক হয়ে যায়।টলমল করা শরীর দেখে শান নিশ্চিত হয় পাখি উল্টা পাল্টা কিছু গিলেছে।
অবাক হয়ে ভাবতে থাকে,”কি করে সম্ভব সেটা?কিভাবে খাবে সে এসব?”
ইতোমধ্যে পাখি শানের বুকের কাছে চলে আসে।মাথাটা বুকে ঠেকিয়ে ন্যাকামির স্বরে বলে,”আমায় একটু ভালোবাসলে কি হয়?আমি তো…..”
বলতেই শান পাখির দুই গালে হাত রেখে মুখটা উচু করে ধরে।
“ছিহহহ আপনি কতো খারাপ। এখন সুযোগ নিচ্ছেন না?দেবো না আমি”,কটকটে গলায় বলে পাখি দুই পা সরে আসে।পরতে গেলে ধরে ফেলে শান।পূনরায় নিজের কাছে এনে মুখটা তুলে ধরে এবার পাখি আর কিছু বলতে পারে না।চোখ দুটো যেন ক্লান্ত হয়ে আসে।শান মুখটা আরেকটু কাছে এনে গন্ধ শুঁকে চোখ মুখ কুচকে অপর পাশে তাকায়।ঘুমু ঘুমু পাখির দুই বাহু ঝাঁকিয়ে বলে,”এসব কি পাখি?এসব কি খেয়েছো তুমি?”
“ঐ রাখি টা এনেছিলো।আমাদের দুজনের খাওয়ার জন্যে।আর আমি সবটা একাই খেয়েছি হেহেহে”,পাগলের মতো হাসতে থাকে পাখি।
মাথা চেপে ধরে আবার বলে,”আমি খাইতে চাই নি।ও বলেছিলো’এটা খেলে নাকি দুনিয়া ভুলে যাওয়া যায়’কিন্তু আপনার অপমান গুলো আমি ভুলতে চাই।তাই সবটা খেয়ে নিয়েছি।”
শান মলিন মুখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।খোলা চুলে, এলোমেলো চাহনীতে পাখিকে অন্যরকম লাগছে আজ।দূরন্ত অনুভূতি গুলো ডানা ঝাপ্টাচ্ছে। হার্টের গতি বেগতিক বুঝে পাখিকে দরজার দিকে ঘুরিয়ে বলে,”ঘঘরে যাও।ঘুমাও। কাকাল সকালে এ নিয়ে ককথা হচ্ছে”
“না, আমি এখানে ঘুমাব।বিয়ের পর তো বর বউ একসাথে ঘুমায়”,ঠোঁট কাটা হয়ে একরোখা জবাব দেয় পাখি।একটু নড়তেই পরে যায় মেঝেতে।শান হকচকিয়ে নিচু হয়ে বসে হাত ধরে টেনে তোলে পাখিকে।
“এ কোন মুশকিলে পরে গেলাম।পুরো নেশা তো মাথায় চড়ে বসেছে এর।রাখি”,ভাবতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে শানের।পাখির মলিন মুখটার দিকে চেয়ে থাকে শান।
মাথা তুলে পাখি বলে,”আজ সারাদিন মায়ের কথা বড্ডো মনে পড়ছিলো।আমার এ জগৎে আপন বলতে কেউই নাই।যে করেই হোক বিয়েটা তো হলো, সেই বর নামোক আপনি টাও আমার আপন না।খালি দূর দূর করেন।আমার কষ্টটা আমি কাউকেই বলতে পারি না।কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।আপনার জীবনে কোন মেয়ে কি করেছে আমি জানি না।আমি কিচ্ছু করব না, প্রমিজ”,গড়গড় করে কথা গুলো বলতে বলতেই চোখের কোণ বেয়ে জল ছেড়ে দেয় পাখি।শান আলতো হাতে সে জল মুছে দেয়।অভিমানে পাখি হাত সরিয়ে বলে,”লাগবে না।”
মুচকি হেসে শান এগিয়ে পাখির কপালে একটা গাঢ় চুমু দিয়ে নেয়।
কপালটা ঘষতে ঘষতে পাখি বলে,”চাই না আমার ”
“এখন যাও ঘুমাও।পরে কথা বলব আমরা “,পাখির গালে হাত রেখে বলে শান।
পাখি ঝনঝনে গলায় বলে, “না আমি এখন থেকে এখানেই ঘুমাব”
“কেমন করে বোঝাই ;ভুল হয়ে যাবে।একে তো না চাইতেও বিয়ে হয়ে গেছে। সে হিসেবে তোমায় কাছে নেয়ার পূর্ণ রাইট আমার আছে, তার উপর তোমায় ভালোবাসি;সে দূর্বলতাও রয়েছে।নিজেকে বোঝানোটা দায় হয়ে পরবে পাখি “,আনমনে ভেবে শান বলে, “আমার ঘরে ভুত আছে পাখি।আর ইনায়াহ্ও ও ঘরে একা।ভয় পাবে তো”
পাখি ভাবুকের মতো কিছু একটা ভেবে বলে, “না আমি এখানেই ঘুমাব, ব্যাস”
ভীষণ গ্যারাকলে পরে যায় শান।কোন উপায় না পেয়ে বলে,”যাও বিছানায় গিয়ে ঘুমাও”
পাখি মাথা নাড়িয়ে বলে, “না, আপনি কোলে করে নিয়ে যান”
“হোয়াট?পাগল হয়েছ?পারব না আমি। ”
“তাহলে আমিও উঠছি না”
মুখে বিরক্তির ছাপ এনে শান অগত্যা ওকে কোলে তুলে নেয়।বিছানায় শোয়াতেই টি-শার্টের কলার চেপে ধরে পাখি।ও চোখে সম্মোহনের আকুতি বুঝতে পেরে শান দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।পাখি রেগে গিয়ে আরেকটু টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে।এবার শানকে অবাক করে দিয়ে শানের অধরে জোড়পূর্বক নিজের অধর জোড়া মিলিয়ে নেয়।
চলবে……..
চলবে…..
চলবে…….