আসক্তি ২ পর্ব ৬+৭+৮

#আসক্তি২ (আ জার্নি অব্ এডিকশান)
পর্বঃ০৬
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

প্রতিটা মানুষের জীবনেই অতীত থাকে।আর সেটা কখনোই সুমিষ্ট হয় না;হয় তিতা। জীবনের প্রতিটা মূহূর্তে মানুষ সেই অতীতকে ভুলতে চায়।কিন্তু সত্যিই কি একেবারে ভোলা সম্ভব!না।

রাত হয়েছে অনেক আগেই।ইনায়াহ্কে খাইয়ে ঘুমিয়ে দিয়েছে পাখি।পাখিকে জড়িয়ে ঘুমানোর অভ্যেস হয়ে গেছে আজকাল।গত কয়েকদিন ধরে পাখির সঙ্গ পেয়ে শানের সাথে ইনায়াহ্’র একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে।এই যেমন শানের সাথে ঘুমায় না, খায় না।সারাক্ষন পাখির সাথেই থাকে ইনায়াহ্।

শান প্রতিদিনকার মতো ল্যাপটপে কয়েকটা কাজ সেড়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতেই হঠাৎ ইনায়াহ্’র মুখটা মানোষপটে ভেসে ওঠে।
“থাক কাল সকালে দেখবো,”ভেবে আবার চোখ বন্ধ করতেই ইনায়াহ্কে দেখতে পায়।মুখে মুচকি হাসির রেখা টেনে দ্বিধায় পরে যায় শান।
“রাত বাজে ১২ টা। এতো রাতে ইনায়াহ্ নিশ্চই ঘুমে।আর ও তো এখন একা না।মেয়েটা আছে ওখানে।যাওয়াটা কি উচিত হবে?”
শানের কাছে ব্যপার টা কেমন দোটানার তৈরী করে ফেললো মূহূর্তেই।
“কি হয়েছে আমার বাড়ি, আমার সব।এ বাড়ির প্রতিটা কোণায় যেকোন মূহূর্তেই যাবার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে আমার।”,ভাবতেই শানের চোখে মুখে দাম্ভিকতার রূপ ভেসে ওঠে।এগিয়ে যায় ইনায়াহ্’র ঘরের দিকে।

পাখির ঘুম আসছে না আজ।ইনায়াহ্’র জড়িয়ে ধরা হাতটা আলগোছে সরিয়ে বিছানার উপর হাঁটু মুড়ে বসে জীবনের অতীত খাতার হিসেব কষছে সে।
“কি পেলাম!কি’ই বা আর পাওয়ার বাকি আছে! আজ অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে আছি অথচ কতো সম্পদের মালকিন আমি;যার কোনকিছুই আর আমার নয়।”,ভাবতেই চোখ ভরে আসে পাখির।কেন জানে না আজ চোখের অবাধ্য পানিগুলোকে আটকাবার ইচ্ছে করছে না পাখির।পড়ুক না কিছু পানি অঝোড়ে তাতে যদি মনটা হালকা হয়।মাঝে মাঝে কাঁদতে হয়। কাঁদলে নাকি মন মস্তিষ্ক ভালো থাকে।

নাকে আসা পানিটা ওড়নার আঁচলে মুছে আয়ানের কথা মনে ওঠে।
“একদিন আয়ান নিজ হাতে এই চোখের পানি মুছে বলেছিলো’আজ থেকে তোকে আর কাঁদতে দিবো না রে পাখি।আমি এসেছি তো’
সবটাই তোমার নাটক ছিলো আয়ান ভাই!”,বিড়বিড় করে বলতেই কান্নার বেগ বেড়ে যায় পাখির।
নাক ছিচকানো শব্দে ইনায়াহ্ একটু নড়েচড়ে যায়।পাখি সেদিকে চেয়ে চোখ মুখ মুছে ইনায়াহ্’র মাথাটা হালকা করে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।ইনায়াহ্ ঘুমের ঘোরেই বলে,”মুন সাইন”
“বেবি,এইতো আমি”,ইনায়াহ্’র কপালে উড়ে আসা অবাধ্য চুল গুলোকে সরিয়ে একটা গাঢ় চুমু এঁকে বলে পাখি।পাখির সংস্পর্শ পেয়ে ইনায়াহ্ পূনরায় ঘুমিয়ে পরে।

🌸🌸

বিছানার সংস্পর্শ আজ পাখির বড্ডো বিরক্ত লাগছে।এপাশ ওপাশ ফিরেও নিজেকে বিছানার সাথে অভ্যস্থ করতে পারছে না আজ।কেমন যেন বুকটা কান্নায় ভারী হয়ে আসছে।আবারও হাঁটু মুড়ে বসে একহাতে ইনায়াহ্’র মাথা বুলিয়ে ভাবে,”কতো অদ্ভুত আমার জীবন।চিনি না জানি না অথচ আজ তুমি কতো আপন।আত্মার টানে আজ তোমার মুন সাইন হয়ে গেলাম ”
না চাইতেও ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস চলে আসে।মূহূর্তেই শানের খারাপ আচরন মনে আসতেই মুখ চেপে কেঁদে ফেলে পাখি।কষ্টের কথা গুলো মনে আসলে কোন কষ্টই সেদিন আর বাদ থাকে না।জীবনের আনাচেকানাচে জমানো সব কষ্টই এক হয়ে ধরা দেয়।
“একটা মানুষ কি’ই ভাবেই না অপমান করতে পারে বিনা কারনে”,চাপা চাপা স্বরে একা একাই বিড়বিড় করে পাখি।হঠাৎ চোখ ঝলসানো আলোতে ঘর ভরে যায়।ভরকে যায় পাখি।চারিদিকে চেয়ে বুঝতে পারে ঘরের লাইট জ্বলে উঠলো।লাইটের সুইচের দিকে তাকাতেই শানকে দেখতে পায় পাখি।তড়িৎগতিতে মুখ ফিরিয়ে দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।

“এখনো জেগে!কি করছিলো?কান্না?তাই তো মনে হচ্ছে,”শান পাখির দিকে সরুচোখে তাকিয়ে আনমনে ভাবতে থাকে।এরপর এগিয়ে আসে বেডের কাছে।পাখি ততোক্ষনে উঠে বিপরীত দিকে মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শানের পায়ের আওয়াজে বুঝতে পারে এদিকে আসছে শান।ভ্রুকুচকে ভাবতে থাকে,”উনি আজ এতো রাতে?এ ঘরে?”

ভেবেই নিজের অজান্তে গায়ের ওড়নাটা ভালো করে গায়ে সেট করে নেয়।শান সেদিকে একবার কটাক্ষের চোখে চেয়ে পাশ কাটিয়ে ইনায়াহ্’র মাথার কাছে বসে।পাখি বিপরীত মুখে দাঁড়িয়ে কয়েক হাত দূরে সরে যায়।ফ্যানের হালকা বাতাসে কপালের উপর উড়ন্ত পাতলা চুলগুলো সরিয়ে শান পরপর কয়েকটা চুমু দেয় ইনায়াহ্’র কপালে।আবার কিছুক্ষন ইনায়াহ্কে দেখে মুচকি হেসে দুই গালে চুমু দেয় শান।পাখি আড়চোখে সেসব দেখে চলে।আর ভাবে,”নিজের সন্তান না অথচ এতো ভালোবাসেন তিনি ইনায়াহ্কে। কেন?”

শান উঠে এক পা আগাতেই থেমে যায়।পিছন ঘুরে গলায় দু’বার শব্দ করে। পাখি ভ্রুকুচকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।কিছুক্ষন পর বুঝতে পারে শান তাকে কিছু বলতে যায়।কুচকানো ভ্রুজোড়া সোজা করে পাখি ডানে সামান্য বাঁকা চোখে তাকায়।পাখির তেড়ামিতে শান বিরক্ত হয়ে বলে,”আগেও বলেছি একবার, কারো….”
“ব্যাক সাইড দেখে কথা বলার ইন্টারেস্ট নেই আপনার,তাই তো?”,শানের কথাকে থামিয়ে বলে পাখি।শান কোন প্রতিউত্তর করতে পারে না।কারণ সত্যিই সে এটা বলতেই উদ্যত হয়।
শানকে চুপ থাকতে দেখে পাখি বিপরীতমুখী হয়ে আবার বলে,”আর আপনার মুখ দেখে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে না।”

পাখির কথায় শান অবাকের থেকেও অপমানিত বোধ করে বেশি।রাগে দাঁতে দাঁত চেপে যায়।হাতের মুঠি শক্ত করে আবার ছেড়ে দেয়।চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা লম্বা কতোকগুলো নিঃশ্বাস ছেড়ে রাগকে নিয়ন্ত্রন করার আপ্রান চেষ্টা করে।কারণ শান এতো রাতে কোন খারাপ পরিস্থিত সৃষ্টি করতে চায় না। যাতে ইনায়াহ্’র ঘুম ভেঙ্গে যায়।রাগকে কোনমতে আয়ত্তে এনে পাখিকে কিছু বলতে উদ্যত হতেই পাখি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পা আগায়।শান ওর বাম হাত টা ধরে ফেলে।পাখি অবাক হয়ে সামনে চেয়ে থাকে।

শান এবার চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,”আমি কিছু বলব।যতোক্ষন না বলা শেষ হবে এক পা ও নড়বে না। গট ইট!”
পাখি ঠাঁয় দাঁড়িয়েই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে।কিন্তু মুখে কোন কথা বলছে না।
“থ্যাংকস “, শব্দ শানের মুখ থেকে বেরিয়ে আসতেই থমকে যায় পাখি।ঢোক গিলে আবার হাত মুচড়ানো শুরু করে। পাখির অবস্থা দেখে শান রেখে গিয়ে টেনে সামনে এনে দাঁড় করায় পাখিকে।চেপে ধরে রাখা হাতটা উপরে তুলে ধরে।সেদিকে একবার চেয়ে শান পূনরায় বলে, “সরি”
“সরি!কেউ চায় না আপনার সরি। আচ্ছা সরি টা কিসের জন্যে শুনি একবার?আর আগে যেন কি বললেন, থ্যাংকস।সেটা কিসের জন্যে?”,হাত টা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতেই বলে পাখি।

শান এতোক্ষনে পাখির দিকে ভালো করে তাকায়।হরিণটানা চোখ দুটো ফুলে উঠে একাকার।চোখের পাতা এখনো ভেজা।রাগে চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারন করেছে পাখির।শান বুঝতে পারে এতোক্ষন অন্ধকারে বসে কাঁদছিলো পাখি।পাখির চোখ থেকে চোখ সরিয়ে কম্পনরত ঠোঁটজোড়ার দিকে নজর পড়ে শানের।তিলটা নজরে আসার পূর্বেই চাহনী ফিরিয়ে নির্লিপ্ত চোখে জবাব দেয়,”থ্যাংকস ফর টেকিং গুড কেয়ার অব্ মাই ইনায়াহ্। এন্ড সরি ফর নট হেল্পিং দ্যাট ডে”

পাখি রেগে গিয়ে জবাব দেয়, “সরি মাই ফুট।জুতো মেরে গুরু দান করার কোন প্রয়োজন নেই।কে বলেছে সেদিন হেল্প করেন নি!না করলে আমি এখানে কি করে বলুন তো।ভাগ্যিস আপনার গাড়িটা সেদিন আমায় তাড়ায় নি।গাড়িটার প্রান না থাকুক হয়ত মনুষ্যত্ব ছিলো।যা অনেক প্রানীর নেই।আর থ্যাংকসের কোনই প্রয়োজন নেই।আমি আমার ভালোবাসা থেকে ইনায়াহ্’র যত্ন নিচ্ছি আপনার থ্যাংকসের জন্যে না।”

রাগে এবার শানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড পর আবার চোখ খুলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”এতো এটিটিউড কাকে দেখাচ্ছ তুমি?সরি বললাম বলে আসমানে উড়ো না।সেদিন তোমার বিপদ ছিলো আমি জানতাম না।বুঝতে পারি নি তাই হেল্পও করি নি।তোমার জায়গায় কোন ছেলে থাকলে অভিয়াসলি হেল্প করতাম।তোমার দূর্ভাগ্য কি জানো?তুমি একটা মেয়ে।এন্ড আই হেইট দ্য হোল উইমেন।”

“হেইট উইমেন হলে এসব কি?নাকি রাতের আঁধারে সুযোগ খুঁজছেন?নাকি এটা ধরেই নিয়েছেন বাড়ির সাথে সাথে বাড়িতে অবস্থানরত মানুষগুলো আপনার”, চেপে রাখা হাতটার দিকে কথা ইশারা করে বলে পাখি। হাতটা ঝটকা মেরে ছেড়ে দেয় শান।রাগে চোখের পাতা কাপছে শানের।তর্জনি আঙ্গুল উচিয়ে বলে, “নেভার ডেয়ার টু শো মি ইওর চিপ টাইপ ফা** এটিটিউড।ট্রাই দিজ সামওয়ান ইল্স।গট ইট!”

পাখি ব্যথাসূচক অনুভূতিতে হালকা চেঁচিয়ে উঠে হাতটা ডান হাতে চেপে ধরে।শান পিছন ফিরে চলে যেতেই পাখি বলে,”আজ আমার অতীত সম্পর্কে জানলেন বলে করুনা হচ্ছে?তাই সরি বলতে এসেছেন।না জানলে তো কখনোই নিজের দোষ স্বীকার করতেন না”
শান ধীরভাবে আবার পিছন ফিরে বলে,”আড়িপাতা ব্লাডি উইমেনদের স্বভাব;সুপুরুষদের নয়।তোমার অতীত সম্পর্কে জানার জন্যে তোমার আর চাচির কথায় আড়িপাতার দরকার পরে নি আমার।নিজ গরজে জেনেছি।”
মুখে কটাক্ষ ভাব এনে শান পূনরায় বলে,”হাহ্,তোমার কী মনে হয়?তোমার মতো একজন অজানা, অচেনা মেয়েকে এমনি এমনি বাড়িতে রাখব?সবথেকে বড় কথা ইনায়াহ্’র টেইক কেয়ারের জন্যে রাখব?”

পাখি ছলছলে তাকিয়ে হাত টা ডান হাতে চেপে তাকিয়ে থাকে শানের দিকে।শান পাখির মুখের দিকে সামান্য এগিয়ে বলে,”ডোন্ট বি অভার কনফিডেন্ট। তোমার কি এমন পরিচয় আছে যে তোমায় না জেনেই রেখে দিবো এই আহমেদ ম্যানশানে?তোমার ব্যপারে সব ডিটেইলস জেনে তবেই মনঃস্থির করেছি তোমায় রাখতে।”
বলেই শান দু কদম এগিয়ে আবার পিছন ফিরে বলে,”ওয়ান মোর থিং,মাথায় ঢুকিয়ে রাখো।স্টিল নাউ ইউ আর স্ট্যান্ডিং মাই হাউজ।তাই আমার সাথে নো এটিটিউড ”

চলে যায় শান।পাখি তার যাওয়ার দিকে চেয়ে চোখের গভীরে আটকে রাখা জল টা ছেড়ে দেয়।বুক ভেসে যায় মূহূর্তেই।কোথাও গিয়ে দাঁড়াবার মতো জায়গা তার নেই। নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সহায়হীন মানুষ মনে হয় তার।
“একটা মানুষ এতোটা জঘন্য কি করে হতে পারে?”,ভাবতেই রাহেলার কথা মনে আসে পাখির।অবিশ্বাসের স্বরে বলে,” তিনি আদৌ কোন ভালো মানুষ নয় চাচি।এই মানুষের আগা-গোড়াই অহঙ্কারে পরিপূর্ণ।”
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে চেপে ধরে রাখা স্থানটায় ছিটে ছিটে রক্তের দাগ।পুরুষালী হাতের পাঁচটা আঙ্গুলের স্পষ্ট দাগ।
“আদ্যোপান্ত মনুষ্যত্বহীন একজন নিকৃষ্ট মানুষ তিনি।যার বিবেকবোধ বলতে কিচ্ছু নেই”,বিড়বিড় করে বলতে বলতে পাখি বিছানায় ধপ করে বসে পরে।

হাত টা বেশ জ্বলছে।চেপে ধরে রেখে বুঝতে পারছে না কি করবে।কি করলে জ্বলুনি টা কমবে।উপায়ান্তর না পেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পানির নিচে হাত টা ধরে।কিছুক্ষন পর বের করলে পূর্বের থেকে আরো বেশি জ্বলতে থাকে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে পাখি।এভাবে ঘন্টাখানিক পর হাত টা একটু স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসলে পাখি চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ঘরে চলে আসে।তোয়ালেতে মুখ টা মুছতে মুছতে ইনায়াহ্’র দিকে চোখ ফেলে বুঝতে পারে ইনায়াহ্ ঘমন্ত অবস্থায় পাশে হাতরিয়ে তাকে খুঁজছে।পাখি দ্রুত তোয়ালে টা সোফায় ছুড়ে এগিয়ে গিয়ে ইনায়াহ্কে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পরে।ইনায়াহ্ মুচকি হেসে পাখিকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরে।পাখি ইনায়াহ্’র হাতে চুমু খেয়ে বলে,”আই’ম সরি বেবি।আমায় মাফ করে দিও।এতো কষ্ট, এতো অপমান সহ্য করে তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।তাই কাল যা সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি তা যেন সবার জন্যেই ভালো হয়।”.

ইনায়াহ্কে বুকে জড়িয়ে বলে,”হয়ত তোমার আমার সম্পর্কের পথটা এটুকুই ছিলো”
কখন ঘুমিয়ে পরে বুঝতে পারে না।

শান নিচ থেকে বোতলে পানি ভরে নিজের ঘরে যাবার সময় দরজাটা খোলা বুঝতে পারে।সাথে সাথে পাখির ব্যবহারের কথা মনে ওঠে শানের।রাগ চরমে উঠে যায় মূহূর্তে।ভেড়ানো দরজার আড়াল থেকে দেখা যাচ্ছে পাখি বাম হাত ছড়িয়ে ডান হাতে ইনায়াহ্কে বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছে।শানের নজর গিয়ে ঠেকে পাখির বাঁ হাতের কব্জিতে কালশীটে দাগটার উপর।কপালে ভাঁজ ফেলে বোঝার চেষ্টা করে সেটা কি।পরোক্ষনে নিজের করা আচরনের জন্যে বেশ অপরাধবোধ জেগে ওঠে।শান বুঝতে পারে নি চেপে ধরা টা এতোটাই জোড়ে ছিলো যে হাতের পাঁচ আঙ্গুল কালো হয়ে ভেসে উঠেছে।

দ্রুত নিজের ঘর থেকে ঔষধ টা এনে ইনায়াহ্’র ঘরে পা রাখতেই এলোমেলো ভাবে পাখিকে শুয়ে থাকতে দেখে শান। নজর সরিয়ে নেয় ।কি করবে বুঝতে না পেরে দরজার পাশে ওয়ারড্রবের উপর মেডিসিন টা রেখে লাইট অফ করে চলে যায়।
#আসক্তি২ (আ জার্নি অব্ এডিকশান)
পর্বঃ০৭
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“আই বেগ ইউ।স্টে হেয়ার “,অনুভূতিহীন চাহনীতে চেয়ে বলে শান।পাখি অবাকের তুঙ্গে নিজেকে রেখে ভাবে,”এই মানুষ কাল রাতেও তো কতো কথা বলল আমায়?আর আজ?”
পাখিকে সর্বচ্চভাবে অবাক করে দিয়ে শান হাতজোড় করে পাখির সামনে।
“প্লিজ!”
পাখি নজর এদিক সেদিক করে নিজেকে ধাতস্থ করে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে।
সরাসরি শানের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেসা করে, “আমার কিছু জানার আছে ইনায়াহ্’র ব্যপারে”
“কি জানতে চাও বলো!”
পাখি ভাবতেও পারে নি শান এতো সহজে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইবে।শানের আচরনে বুঝা যায় একপাশে পৃথিবী অন্যপাশে ইনায়াহ্’কে রাখলে শান ইনায়াহ্’কে বাছাই করবে।

“কি হলো বলো, কি জানতে চাও?”
“ইনায়াহ্’র কি রোগ?ইনায়াহ্ আপনার কি হয়?সে যে আপনার মেয়ে নয় তা আমি জানি।তাহলে ইনায়াহ্ কে?,” শানের চোখে সরাসরি চোখ রেখে কাটকাট গলায় প্রশ্ন করে পাখি।
শান সোজা দাঁড়িয়ে বলে,”আজ অবধি কোন মেয়ের সাহস হয় নি এই ফয়সাল আহমেদ শানের চোখে চোখ রেখে কথা বলবার যা তুমি করছো”
শানের কথায় পাখি চোখ নামিয়ে অন্যদিকে চেয়ে থাকে।
“ইনায়াহ্’র অসুস্থ্যতার এডভান্টেজ নিও না।ফল ভালো হবে না।”,স্বগতোক্তি করে শান চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
“আমি কোন এডভান্টেজ নিচ্ছি না।আমি যেহেতু ওর গভারনেস হিসেবে থাকব সেহেতু ওর ব্যপারে সব কথা জানার অধিকার আমার আছে।আর এটা যদি এডভান্টেজ হয় তো হবে”,শেষের কথাটা কাপা কাপা স্বরে বলে বুকে দুহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে পাখি।

কিছুক্ষন আগে…🌸🌸

খুব ভোরবেলা উঠে পাখি ফ্রেশ হয়। রুমে ঢুকে ইনায়াহ্’র পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে স্বরে বলে,”খুব অল্প সময়ে তোমার বাঁধনে বাঁধা পরেছি সোনা।কিন্তু কি করব বলো নিজের আত্মসম্মানটাকে খোয়াতে যে পারব না। তোমার সান সাইনের চোখে পৃথিবীর প্রতিটা মেয়েই এক। আমিই বা বাদ থাকি কী করে!তাই তো কারণে -অকারণে আমায় হেয় করতে তার বাঁধে না।”
নিজের হাতটার দিকে চোখ রেখে বলে,”আঘাত দিতেও ভাবে না”
এরপর দুচোখের পানি মুছে বলে,”আমি জানি না আমি কোথায় যাব।শুধু এটুকু জানি এ বাড়ি আমার জন্যে না।হয়ত এই পৃথিবীটাই আমার জন্যে না।সরি মা।আমি আসছি।আমায় ভুল বুঝো না ”

বলেই ইনায়াহ্’র কপালে চুমু এঁকে উঠে দাঁড়ায়।দুহাতে চোখের জল মুছে পাখি সিদ্ধান্ত নেয় এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে সে।ভাবনা অনুযায়ী সন্তর্পণে পা বাড়িয়ে দেয় চৌকাঠের বাহিরে।
“মুন সাইন”
ইনায়াহ্’র কথায় বাহিরে রাখা পা টা থমকে যায় মূহূর্তেই।চোখ বন্ধ করে ফেলে পাখি।
“সান সাইন তোমায় খুব বকে, তাই না?”,কাঁদো কাঁদো স্বরে কথাটা বলে ইনায়াহ্।
ইনায়াহ্’র গলার কান্নার স্বরে পাখি পিছন ফিরে তাকায়।বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ইনায়াহ্ তার বলা প্রত্যেকটা কথাই শুনেছে। খেয়াল করে দেখে ইনায়াহ্ কাঁদছে।দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে পাখি ইনায়াহ্’র মাথাটা বুকে জড়িয়ে বলে,”কাঁদছো কেন?তুমি না আমার স্ট্রং বেবি।কাঁদে না মা।ঘুমের ভান করে আমার সব কথা শুনছিলা না?”

ইনায়াহ্ কোন প্রতিউত্তর ছাড়াই শব্দহীন কেঁদে চলে।ওর মায়াবি মুখটা যেন পাখিকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে ওর মায়ায়।
“আমার কথা শুনো মা, এভাবে কেঁদো না।আমি যা বলি মন দিয়ে শুনবা।কোনরকম হাইপার হবা না কেমন?”,দুহাতে ইনায়াহ্’র চোখ মুছে বলে পাখি।
“তোমার হাতে কি হয়েছে?দেখি দেখি?”,হন্তদন্ত হয়ে পাখির হাত দেখতে চায় ইনায়াহ্
পাখি আমতা আমতা করে বলে,”ওও ককিছু না মা। এমনিই কালো হয়েছে”
“এটা তো কারো হাত।ঐ যে পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ দেখা যায় মুন সাইন”,মুখে হাত দিয়ে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে ইনায়াহ্।
পাখি চায় না ইনায়াহ্’কে মিথ্যে বলতে।আবার সত্যিটা বলাও অসম্ভব।তাই উপায়ন্তর না পেয়ে বলে,”কাল রাতে একটা বিশাল দেহের ভ্যাম্পায়ার এসেছিলো আমার ইনায়াহ্ বেবিকে ধরতে। পরে আটকে দিলাম।ব্যাস আমার হাত চেপে ধরলো।দেখো না কি করেছে”,বলতে বলতে পাখি ঠোঁট উল্টিয়ে কান্নার ভান করে।
পাখির আচরন দেখে খিলখিলিয়ে ওঠে ইনায়াহ্।পাখি বুঝতে পারে এটাই মূখ্যম সময় ইনায়াহ্কে সবটা বুঝনোর।ও নিশ্চই বুঝবে।

“আমি তোমায় এখন কিছু কথা বলব বেবি।মন দিয়ে শুনবা, হুমমম?”
“হুম”
“আমি আজ তোমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছি।তুমি তো জানো আমি তোমায় কতো ভালোবাসি। কিন্তু তোমার সান সাইন চায় না আমি এ বাড়িতে থাকি।আমায় একটুও দেখতে পারে না সে।আমি কি করব বলো?তোমার সান সাইনের কথায় আমি অনেক হার্ট হয়ে যাই।খুব কষ্ট হয় তোমার সাথে থাকতে।তাই আমি চলে যাই।আমি রোজ তোমার সাথে কথা বলব।মাঝে মাঝে চলে আসব তোমায় দেখতে।তুমি বুঝেছ তো আমি কি বললাম,”বলেই পাখি ইনায়াহ্’র প্রতিক্রিয়া বুঝার চেষ্টা করে।ওতোটুকু মাথায় কি ঢুকল কে জানে।স্থির দৃষ্টি মেলে বললো,”তোমার তো যাওয়ার কোন জায়গা নেই।তুমি কোথায় যাবে?”
“আমি ঠিক আমার বাড়ি চলে যাব সোনা।”
পাখির কথা শুনে ইনায়াহ্ একবাক্যে বলে ওঠে, “না।আমি তোমায় কোত্থাও যেতে দিবো না।দরকার পরলে আমি সান সাইনকে বকবো।তবু তোমায় যেতে দিবো না”

পাখি চিন্তিত মুখে ভাবতে থাকে,”কি করে, কি করব আমি”
“একটু বুঝার চেষ্টা করো মা।এভাবে আমার পক্ষে থাকা টা একেবারেই অসম্ভব।”,ইনায়াহ্’র হাত দুটো হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে পাখি।
“আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না।তোমার কোথাও যাওয়া হবে না”,ইনায়াহ্’র একরোখা জবাবে পাখি থম মেরে বসে পরে।
ইনায়াহ্ আবার বলে,”তোমার কোথাও যাওয়া হবে না,হবে না, হবে না।গট ইট!”
বলেই এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।মূহূর্তেই চোখ মুখ উল্টে আসে ইনায়াহ্’র।
“ইনায়াহ্, বেবি।কি হলো বাবা এমন করছো কেন?”,ঘাবড়ে গিয়ে পাখি ইনায়াহ্কে জড়িয়ে নেয়।মূহূর্তেই ইনায়াহ্’র সারা শরীর দরদর করে ঘামতে থাকে।এক দৃষ্টে চেয়েই ইনায়াহ্’র ডান পা টা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে।অবস্থা বেগতিক দেখে পাখি জোড়ে জোড়ে ইনায়াহ্ বলে চিৎকার করে।

গত রাতে ঘুমাতে দেড়ি হওয়ায় শানের ঘুম এখনো ভাঙ্গছে না।ঘুমের মাঝে পাখির গলার তীব্র আওয়াজে বিছানায় টিকতে পারে না শান।উঠে বসে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টার করে।”
“ইনায়াহ্” নামটা কানে আসতেই সমস্ত ঘুমের ঘোর কেটে যায় শানের।একপ্রকার দৌঁড়ে ছুটে আসে এ ঘরে।
“ককি হয়েছে? ইনায়াহ্,মাম্মাম”,গলার স্বর নিচু হয়ে আসে শানের।দ্রুত এগিয়ে পাখির থেকে ইনায়াহ্’কে ছড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয় শান। মূহূর্তেই ইনায়াহ্’র সারা শরীরে প্রবল ঝাঁকুনি শুরু হয়ে যায়।শানের বুঝতে বাকি থাকে না ইনায়াহ্ এ্যাটাক্ড।
দ্রুত পাল্স ধরে ফেলে শান।পাখি ইনায়াহ্’র অবস্থা দেখে ঘাবড়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

শান ধমকে বলে, “কি বলেছো তুমি ওকে? ”
পাখি কিছু বলার আগেই শান আবার বলে,”ঘড়ি?ঘড়ি কোথায়? ঘড়ি ধরো?”
শানের হুংকারে পুরো বাড়ি সমেত কেঁপে ওঠে পাখি।তাড়াতাড়ি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে।
দুই মিনিট অতিক্রম হবার পর ইনায়াহ্’র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।পিটপিট করে চোখ খুলে বলে,”পানি, পানি খাবো ”
পাখি দ্রুত জগ থেকে পানি ঢেলে ইনায়াহ্’র মুখের কাছে ধরে।ঢকঢক করে পানিটা শেষ করে ইনায়াহ্।এরপর পাখি ওকে আবার শুয়ে দিতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয় ইনায়াহ্’র দু’চোখ।

শান বিছানায় বসে হাটুঁতে কনুই গেড়ে দুইহাতে মুখ চেপে বসে থাকে।পাখি এতোক্ষনে হাফ ছেড়ে সরে আসতেই শান ঐ অবস্থা থেকেই জানতে চায়, “ইনায়াহ্’কে কী বলেছো?”
পাখি দাঁড়িয়ে পরে।কোন কথার উত্তর দেয় না।শান এবার ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,”ইনায়াহ্’কে এমন কী বলেছ যার জন্যে ও এতো হাইপার হলো?”
“কোন রকম ঘুরানো প্যাচানো ছাড়াই কথা বলবা।বলো কি বলেছো?”
শানের চোখের দিকে তাকিয়ে পাখি দারাজ কন্ঠে বলে,”আমি আপনার বাড়িতে আর এক মূহূর্তও থাকব না মি.শান।”
শান কয়েক মূহূর্তের জন্যে চোখ বন্ধ করে। বোধগম্য হতে দেরি হয় না পাখি ইনায়াহ্’কে কি বলতে পারে।

চোখ খুলে বলে,”সেদিন কেন এই কথা বলো নি যেদিন চোরের মতো ডিকিতে করে আমার বাড়ি এসছিলে?”
“সেদিন বুঝতে পারি নি আপনি কতোটা জঘন্য।আপনার মন মস্তিষ্ক কতোটা নোংড়া”,দাঁতে দাঁত চেপে নির্ভয়ে জবাব দেয় পাখি।
“শাট ইওর মাউথ আপ।”,পাখির দিকে তেড়ে এসে রাগি কন্ঠে বলে শান।
পাখি অপরিবর্তিত থেকেই জবাব দেয়,”মেইনটেইন ডিসটেন্স।”
শান অবাক হয়ে যায়।ভাবতেও পারে নি পাখি তার কথা তাকেই ফিরিয়ে দেবে।বুকের দিকে চেয়ে দেখে আর মাত্র ইঞ্চি কয়েকের দূরত্ব তাদের মাঝে।তবুও শান দাঁড়িয়ে থাকে পাখির সামনে।
“সামনে থেকে সরুন।আমায় যেতে দিন।আর এক মূহূর্ত এ বাড়িতে না “,বলেই পাখি শানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই নিজেই দুই পা সরে যায়।চেয়ে দেখে শান নিজের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়ে নি।এদিকে নিজের অবস্থা দেখে ভাবে,”কি গন্ডার একটা!একটু নড়লোও না!আমিই সরে গেলাম!”

শান ওর দিকে সামান্য ঘুরে বলে,”ডু ইউ হ্যাভ এ্যানি আইডিয়া,হাউ মাচ ইনায়াহ্ লাভস ইউ!হুমম?
পরপর দুইদিন সে এমন হলো তাও তোমার জন্যে।এটাকে কি ছেলেখেলা মনে করো তুমি?”
শানের কথায় পাখি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে কিন্তু মনে মনে ভাবে,”সত্যিই তো আজ নিয়ে দুইদিন ইনায়াহ্ এমন হলো।সেটাও আমার জন্যে।কিন্তু কেন?কি এমন কারণে এমন হয় ইনায়াহ্? আজকে এই সুযোগে সবটা জানতে হবে আমায়।”

পাখির বাহ্যিক ভঙ্গিমা বলছে সে আজ কারো কথা শুনবে না;চলে যাবেই।
“কিন্ত আমার মাম্মাম!ও তো একে ছাড়া থাকতেই পারবে না”,ভাবতেই মুখটা অন্ধকারে ঢেকে যায় শানের।
পাখির সামনে অসহায় হয়ে পরে মূহূর্তেই।
“যাই করা লাগে করব তবু আমার ইনায়াহ্’র জন্যে ওকে যেতে দেব না আমি।”
ভেবেই পাখিকে অনুভূতিহীন চোখে বলে, “আই বেগ ইউ।প্লিজ স্টে হেয়ার”

🌸🌸

“এপিলেপসি।ইনায়াহ্ এপিলেপসি রোগে আক্রান্ত ;মানে শুদ্ধ বাংলায় যেটাকে আমরা মৃগী বলি।খুব বেশি জিদ বা রাগ বা ওর ব্রেইন যখন কোন কিছু মানতে চায় না তখন এই সমস্যা দেখা দেয়।অনেক লম্বা সময় ধরে এই রোগের ট্রিটমেন্ট চালাতে হয়।ওরও ট্রিটমেন্ট চলছে।এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোন ফল পাচ্ছি না।তুমি আসার পর পরপর দুইদিন এমন হলো।যেটা মোটেও ভালো লক্ষন নয়।এবার বুঝতে পেরেছ ইনায়াহ্ তোমায় ঠিক কতোটা ভালোবেসেছে?”,স্বাভাবিকভাবে বলে শান।

শানের মুখে ইনায়াহ্’র রোগের কথা শুনে থমকে যায় পাখি।কিচ্ছু বলার মতো খুঁজে পায় না।নিজেকে কেমন যেন দোষী লাগে তার।

“আমার অবর্তমানে এমন হলে ওকে কোন প্রকার জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করবে না।পারলে ওর আশপাশে থেকে সমস্ত বিপদজনক জিনিস সরিয়ে রাখবে।আর ওকে শুইয়ে দিবে।এই ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি সাধারনত দুই মিনিটের বেশি থাকে না।আর যদি কোনও ভাবে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে তবে ইমিডিয়েট আমায় কল করবে নয়ত আব্দুল্লাহ্ চাচাকে নিয়ে মেডিকেলে পৌঁছে যাবে। “,শান কথাগলো বলে পাখির প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করে।
পাখি অবাক বিষ্ময়ে মনোযোগ দিয়ে শানের কথা গুলো শুনে বিড়বিড় করে বলে,”ইন শা আল্লাহ্, আজকের পর থেকে আর কোনদিন ইনায়াহ্’র এই অবস্থার পূনরাবৃত্তি হবে না।”

“কিছু বললে?”
“নাহ”,মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে নির্লিপ্ত চোখে চেয়ে জবাব দেয় পাখি।
“ওকে”,বলেই শান বিপরীত দিকে ঘুরে চলে যেতেই পাখি আবারও বলে,”আমার সেকেন্ড প্রশ্নের উত্তর? ”
শান একরোখা জবাব দেয়,”ওটা তোমার এখতিয়ারের মাঝে পড়ে না।”
“তবুও আমার জানতে চাই!”,ফিরতি উত্তর জানায় পাখি।
“নইলে,নইলে আমি থাকব না”,এলোমেলো ভঙ্গিতে স্বগতোক্তি করে পাখি।
শান কটাক্ষ করে হেসে বলে,”এই নাকি তোমার ভালোবাসা হ্যাহ?যে কিনা নিজের জিঘাংসা পূরনের জন্যে ছোট্ট একটা অবুঝ শিশুর নাজুক অবস্থাকে কাজে লাগায়;এডভান্টেজ নেয়!”

“বলেছি না, এডভান্টেজ হলে সেটাই।তবুও আমি জানতে চাই ইনায়াহ্ আপনার কে হয়?”,নাছোড়বান্দার মতো প্রশ্ন করে পাখি।
শান বিরক্ত হয়ে বলে,”ভাগ্নি।আমার ভাগ্নি হয় ও।একমাত্র আদরের ছোট বোন টিনার একমাত্র মেয়ে ও ।যাকে ঘিরে আমার পূরো পৃথিবী আবর্তিত।ওর বয়স যখন আঠার মাস তখন ওর মা মারা যায়।মাম্মামের জন্মের সময় কিছু জটিলতার কারণে আজ ও এপিলেপসি রোগের রোগী।আর এখন ও আমার মেয়ে।পুরো দুনিয়া জানে ও আমার মেয়ে।আর এটাই ওর পরিচয়”

পাখি ভাবতেও পারছে না কেউ নিজের ভাগ্নিকে এতো আদরে নিজের মেয়ের পরিচয়ে বড় করে তুলতে পারে।পাখির সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,”তোমার আরো কিছু জানতে চাই?”
মুখ টা হা করা অবস্থাতেই পাখি মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়, “না”
“তবে কিছু বলার আছে।”,পূনরায় বলে পাখি।শান ভ্রুকুচকে চেয়ে থাকে।প্রশ্ন করে, “কী?”

“আমি আপনার বাড়িতে গভারনেস হিসেবে থাকব।যেমনটা অন্য গভারনেসকে বেতন দিতেন আমাকেও অনুরূপ দিতে হবে।মানে বেতনভুক কর্মী হিসাবে রাখবেন।তবে, তবে মাস শেষে যে টাকাটা আমায় দেবেন সেটা নিজের কাছেই রেখে দেবেন।আপনার বাড়িতে থাকা, খাওয়া,কারেন্ট বিল,পানি বিল ইত্যাদি আনুষাঙ্গিক খরচ হিসেবে সেটার পুরোটাই কেটে রাখবেন।এটুকুই বলার ছিলো।তবুও আমায় হেয় করে কোন আচরন করবেন না।কিংবা আমায় কোনভাবে অপমান করার চেষ্টাটিও করবেন না।আপনার জীবনে কোন মেয়ের কি অবস্থান ছিলো আমি জানি না;জানতে চাইও না।তবে আমায় সম্মান করে কথা বলতে হবে।মনে রাখবেন পৃথিবীতে সব মানুষ এক নয়”,এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে দম নেয় পাখি।

শান কিছু না বলে রাগিচোখে পাখির দিকে চেয়ে থাকে।পাখির এই কথাগুলো মেনে নেয়া ছাড়া তার কাছে কোন দ্বিতীয় অপশন নেই।

“সান সাইন”,ইনায়াহ্’র ডাকে দুজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়। পাখি দ্রুত গিয়ে বসে পরে মাথার কাছে।
“এখন কেমন লাগছে মা?”,
“ভালো “,অস্ফুট স্বরে জবাব দেয় ইনায়াহ্।
শান দ্রুত গিয়ে ইনায়াহ্’র পায়ের কাছে বসে বলে,”আর ইউ ওকে মাম?”
ইনায়াহ্ মুখ ফিরিয়ে গাল ফুলিয়ে থাকে।শান ভ্রুকুচকে বলে, “কি হলো?এতো রাগ করেছে কেন আমার জান টা”
ইনায়াহ্ মুখ ফুলিয়ে বলে,”তুমি খুবই পচা।তুমি আমার মুন সাইনকে হার্ট করো। আমি তোমার সাথে কথা বলব না”
“ওকে বাবা ।আর করব না”,শেষের কথাটা পাখির তাকিয়ে বলে শান।
ইনায়াহ্ পাখিকে দেখিয়ে বলে, “সরি বলো”
“পরে বলি?”,শান মুখে মিথ্যে হাসির রেখা টেনে বলে।
ইনায়াহ্ কঠিন স্বরে জবাব দেয়, “নো, রাইট নাউ।”
“ওকে ওকে মাম,বলছি”
“হুম বলো”
শান পাখির দিকে তাকিয়ে দেখে রাজ্যজয়ের ভাব তার চোখে মুখে বিরাজ করছে।পাখি ডান ভ্রু টা সামান্য উচিয়ে ভাব নিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।
শান সেদিকে একবার চেয়ে বলে,”সরি”

“বলো আর কখনো তোমায় হার্ট করব না।বলো?”,দ্বিতীয় হুংকার দেয় ইনায়াহ্।
শান ইনায়াহ্’র বলা কথাটার দ্বিরুক্তি করে পাখির দিকে দাঁত কটমট করে বলে,”আর কখনো তোমায় হার্ট করব না”
“এবারে ঠিক আছে,”বলেই ইনায়াহ্ শানের গলা জড়িয়ে ধরে।
শান ওকে জড়িয়ে পাখির দিকে চেয়ে বলে,”তুমি খুশি তো মাম?”
“হ্যাএএএ,অনননেক”

শানের চাহনীতে পাখির বোঝার বাকি থাকে না শান কি বোঝাতে চাইলো।এটাই যে ইনায়াহ্’র খুশির জন্যে সে সবকিছু করতে রাজি।
#আসক্তি২ (আ জার্নি অব্ এডিকশান)
পর্বঃ০৮
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

শান তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে।আজ একটা জরুরী মিটিং পরে গেছে।সকাল সকাল রাফি ফোন করে জানায় সে ভীষণ অসুস্থ্য। বাধ্য হয়ে তাকে আজ ছুটি নিতে হয়।ফোন রাখার আগে রাফিকে বলে কষ্ট করে যেন গাড়ির চাবিটা বাড়িতে দিয়ে যায়।শান ডায়নিং এ বসে আপনমনে নাস্তা করেই চলছে সাথে বার বার ফোনের স্ক্রীন স্ক্রল করছে।পাখি ইনায়াহ্’র হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।চোখে পড়ে ডায়নিং এ খাওয়ারত শানের দিকে।

“চাচি ইনায়াহ্’র খাবার দাও।মেডিসিনের দেরি হয়ে যাচ্ছে “,এক প্রকার জোড়ে কথাটা বলে পাখি।মূহূর্তেই রাহেলা ছুটে আসে ডায়নিং এ।পাখির চিল্লিয়ে বলা কথাটা শানের কর্ণগোচর হতেই চোখ বন্ধ করে সে। আপন মনে বিড়বিড় করে বলে,”ম্যানারলেস”
চোখ জোড়া খুলে পাখির দিকে তাকাতেই থমকে যায় শান।হার্টের কয়েকটা বিট যেন মিস হয়ে যায় ।পলকহীন চোখে চেয়ে দেখতে থাকে হাতের বাঁ পাশে দাড়ানো লাল জামা পরিহিতা পাখির দিকে।পাখি অপ্রস্তুত হয়ে যায় ভীষণভাবে।অনুভূতিগুলো এলোমেলো ভাবে ডানা ঝাপটানো শুরু করে।এদিক সেদিক নজর ঘুরিয়ে আবার শানের দিকে চেয়ে দেখে এখনো অপরিবর্তিত অবস্থাতেই চেয়ে আছে সে।

“শান বাবা…শান বাবা”
রাহেলার কথার দ্বিরুক্তিতে নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই খুব সাবধানে দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয় শান।কাউকে বুঝতে দেয় না সে খানিক পূর্বেও কি অবস্থায় ছিলো।আবারও ফোনটা স্ক্রল করতেই বুঝতেই পারে স্ক্রীনের আলো নিভে গেছে।
“ত্রিশ সেকেন্ডের স্থায়িত্ব স্ক্রীনের আলোটার।তারমানে!নাথিং,”আনমনে ভেবেই চোয়াল শক্ত করে শান।

শানের অবস্থা রাহেলার চোক্ষুর অগোচর হতে পারে নি।তার চোখেও ধরা পরে পাখির দিকে তাকানো শানের নিষ্পলক চাহনী।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই রাহেলা বলে ওঠে,”বাবা আর একটা রুটি দিই?”
শান ফোনের উপর রাখা বাম হাত টা উচিয়ে সামান্য নাড়িয়ে না সূচক অর্থ বোঝায়।রাহেলা সরে গিয়ে আরেকটা চেয়ার টেনে বের করে ইনায়াহ্’কে উদ্দেশ্য করে বলে,”বসো দাদু ভাই”
ইনায়াহ্’র দুই কাঁধের উপর তখনো পাখির দুই হাত ঝুলানো।
চট করে পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি কখন খাবে মুন সাইন?”
“হ্যা মা, তুমিও বরং বসো।আর কখন খাবে?”,ইনায়াহ্’র কথার সাথে সহমত পোষণ করে বলে রাহেলা।
শান ওদের কথায় পাখির মুখের দিকে তাকায়।পাখি সেদিকে চেয়ে ঠোঁটে সুচকি হাসির রেখা এলিয়ে বলে, “আমি একটু পরে খাবো চাচি”

“ভাইয়া, আসব?”,পুরুষালী গলার স্বরে সবাই সদর দরজার দিকে তাকায়।দরজায় দাঁড়িয়ে ভিতরে ঢোকার অনুমতি চায় রাফি।
শান একবার সেদিকে চেয়ে আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,”হু”
রাফি ভিতরে ঢুকে চাবিটা রেখে বলে,”ভাইয়া এই যে চাবিটা”
“নাস্তা সেড়ে যা।”,খেতে খেতে বলে শান।
রাফি নাকোচ করে বলে,”আমি খেয়েছি ভাইয়া।এখন আর কিছু খাবো না”
“মেডিসিন নিয়েছিস?”.
“জ্বি ভাইয়া”

পাখি চোখ বন্ধ করে ভাবে,”কন্ঠটা চেনা চেনা লাগছে ;সাথে ফেসটাও।কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কথাও বলেছি। সবটাই কেমন যেন ধোঁয়াশা লাগছে।”
রাফি ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে বোঝার চেষ্টা করে কে ও!
মূহূর্তেই রাফিকে চিনে ফেলে পাখি।কটমট চোখে তাকিয়ে বলে,”আপনি সেদিনের ড্রাইভার না যে আমায় একটুও হেল্প করে নি”
পাখির কথায় শান খাওয়া রেখে সরুচোখে তাকিয়ে পাখির পরবর্তী স্টেইপ বোঝার চেষ্টা করে।
রাফি শুকনো ঢোক গিলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।বুঝতে বাকি থাকে না কে ও!
“কি হলো বলুন”,দ্বিতীয় কথাটা বেশ দাপুটের সাথে বলে পাখি।
রাফি রিনরিনে কন্ঠে জবাব দেয়,”জ্বি আমি”
পরোক্ষনে রাফি ভাবতে থাকে, “ঐ মেয়ে এখানে কী করে এলো?”
“জানো চাচি সেদিন কতো করে বললাম আমায় একটু হেল্প করেন।করলোই না।”,রাহেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে পাখি।
রাফি শানের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার কী দোষ,ভাইয়াই তো….”
শান মাথা তুলে তাকাতেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায় রাফির কথা।

পাখি তেড়ে এসে বলে,”কে জানত আপনারা উভয়ই অপরোপকারী মানুষ।জানলে তো সাহায্যই চাইতাম না”
“অপরোপকারী আবার কি?বলেন যে স্বার্থপর”,জীবনে প্রথম পরোপকারীর বিপরীত অপরোপকারী শুনে থতমত খেয়ে বলে রাফি।
পাখি হাত নাড়িয়ে বলে,”হ্যা হ্যা ঐ স্বার্থপর আরকি।”
তীক্ষ্ণ চোখে রাফির দিকে তাকিয়ে পূনরায় বলে,”ভাগ্যিস আপনাদের গাড়িটার মনুষ্যত্ব ছিলো তাই ডিকি থেকে আমায় ধাক্কা মারে নি।”
“গাড়ির আবার মনুষ্যত্ব”,ঠোঁটের ডগায় বিড়বিড় করতেই রাফির মাথা ভনভন করে ওঠে,”মানে সেদিনন ডিকিতে এসেছেন? “?
চোখ কপালে তুলে বলে রাফি।
“তো আর কি করব বলুন!আপনারা তো….. ”
এতোক্ষন পাখি আর রাফির পুরো ককথোপকথন নিঃশব্দে শুনে চলেছে শান।এবার একপ্রকার রাগ দেখিয়ে বলে, “স্টপ দিজ ননসেন্স।রাফি বাড়ি চলে যা ”

পরিবেশ পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়ে যায় মূহূর্তেই।শান গ্লাস থেকে পানি টা খেয়ে গ্লাসটা শব্দ করে টেবিলে রাখে।চাবিটা নিতে পাখির মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

🌸🌸
সারাদিন গড়িয়ে যায় পাখি আর ইনায়াহ্’র দুষ্টু মিষ্টি খুঁনসুটিতে।সন্ধ্যার কিছু পরে শান চলে আসে।পাখি ইনায়াহ্’কে নিয়ে পড়তে বসেছে।শান নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।রাহেলা এসেছে রাতের রান্না টা সেড়ে দিতে।রান্না শেষ করে চলে যায় রাহেলা।আজ বাসায় একটু তাড়া আছে তার।ডিনারের সময় হলে শান নিচে নামতে নামতে ইনায়াহ্’কে হাঁক ছাড়ে,”মাম্মাম খেতে আসো”
পাখি মাথা তুলে ঘড়িতে চেয়ে দেখে নয়টা বাজে।বইপত্র গুছিয়ে রেখে ইনায়াহ্’কে সাথে করে নিচে নেমে আসে।
শান ততোক্ষনে খাবার বারতে শুরু করে দেয়।পরপর দুটো প্লেটে খাবার রেডি করে ইনায়াহ্’কে চোখে ইশারা করে বসতে বলে।
“মুন সাইনের প্লেট কোথায়?”,ইনায়াহ্ গমগমে স্বরে বলে।শান ওর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু বলে না।
পাখি পরিস্থিতিতে বুঝতে পেরে ইনায়াহ্’র দু বাহু ধরে বলে,”আগে তোমায় খাইয়ে দেই তারপর আমি খাবো”
ইনায়াহ্ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

“আরেকটু ভাত নেই মা?”
“ওকে”
পাখি ইনায়াহ্’র জন্যে ভাতের চামচ ধরতেই শানও চামচে হাত রাখে।চমকে চোখ তুলে তাকায় পাখি।ফোনে কারো কল আসায় শান রিসিভ করে কানে নেয়।আরেক হাতে ভাতটা নিতে চেষ্টা করে কিন্তু বাম হাতে কিছুতেই নিতে পারছে না।পাখি সেদিকে চেয়ে ভাত তুলে শানের প্লেটে দিতেই শান ফোনে কাউকে বলে,”আই’ল কল ইউ ব্যাক”
এরপর পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার নিজের কাজ আমি নিজে করতে পারি।এতো আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না”
পাখি কটমট চোখে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

“উফ, সান সাইন তুমি আবারও মুন সাইনকে বকছো?”
শান ভাত নাড়তে নাড়তে ইনায়াহ্’র দিকে তাকায়।
“আজ তোমার পানিশমেন্ট আছে ”
“বেবি হা করো।”,
ইনায়াহ্’র মুখে ভাতের লোকমা টা দিতে দিতে পাখি বলে,”কিছু কিছু জিনিস আছে যারা কোনদিন সোজা হয় না।তাই চেষ্টাও করতে নেই বাবা”
পাখির কথার মানে শানের বুঝতে অসুবিধা হয় না।পারে তো মূহূর্তেই পাখিকে কাচা গিলে ফেলবে।
“উহু, আজ পানিশমেন্ট হবেই হবে”,বলে ওঠে ইনায়াহ্।
শান মাথা নিচু করে খাবারে মনোযোগ দেয়।
ইনায়াহ্ পূনরায় বলে,”আজ আমাদেরকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যেতে হবে।এন্ড ইট’স ফাইনাল।কোন কথা হবে না সান সাইন”
শান চট করে মাথা তুলে বলে,”তোমার ঠান্ডা লাগবে।আজ না অন্যদিন”
ইনায়াহ্ রাগিচোখে বলে,”আজ খাবারের পরেই।হ্যা অথবা না তে জবাব দাও”
শান উপায়ন্তর না পেয়ে পাখির দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “ওকে ডান”
কারণ সে জানে এই মূহূর্তে ইনায়াহ্’কে নাকোচ করা আর পরিস্থিতি নিজেই খারাপ করা একই কথা

🌸🌸
শান গাড়ি ড্রাইভ করে পাখি আর ইনায়াহ্’কে সাথে নিয়ে চলে আসে রেসন্টুরেন্টে।একদম কর্ণারের একটা টেবিল বুক করে শান এদিক ওদিক তাকিয়ে ওয়েটারকে ডাকে।
“আরে ভাইয়া আপনি? “,ঠোঁটের হাসি প্রসস্ত করে বলে ওয়েটার।
শান সৌজন্যমূলক হেসে বলে,”কি খেতে চায় নিয়ে আসো”
ওয়েটার পাখির দিকে তাকিয়ে চোখ ইশারা করে চাপা স্বরে বলে, “ভাবি!”
শান চমকে গিয়ে তাকায়।” না” বলতেই কিছু একটা ভেবে ঠোঁটে হাসি রেখে চুপ থাকে।মানে হ্যা।

ওয়েটার আর শানের কথা পাখির কর্নগোচর হতেই অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে শানের দিকে।পাখির নজর উপেক্ষা করে শান।
“কি আইসক্রিম খাবে বলো”,ইনায়াহ্’কে উদ্দেশ্য করে বলে শান।
“ভ্যানিলা আইসক্রিম, তুমি কি খাবে মুন সাইন?”
পাখি মুচকি হেসে বলে, “আমি কিছু খাবো না।তুমি খাও”
ইনায়াহ্ মুখ ফিরিয়ে ওয়েটারকে বলে,”আঙ্কেল তিনটা ভ্যানিলা আইসক্রিম দিন”
শান ফোন স্ক্রল করতে করতে বলে,”আমি খাবো না মাম।”
“যাঃ বাবা,কেউ খাবে না!”,গাল ফুলিয়ে বলে ইনায়াহ্
শান মাথা তুলে বলে,”ওকে,ও যা বলে তাই নিয়ে আসো”

ওয়েটার চলে যেতেই পাখি শানের দিকে তাকিয়ে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,”ওয়েটারকে কি বললেন আপনি?”
শান ওকে ইগনোর করে পূর্বের ন্যায় ফোন স্ক্রল করছে।
“আমি কিছু বলছি”
“কান আছে”,আগের মতো থেকেই বলে শান।
“আপনি…..”,পাখির কথার মাঝেই ওয়েটার প্লেট তিনটা টেবিলে রেখে মুচকি হেসে চলে যায়।সে হাসি ধরিয়ে দিয়ে যায় পাখির গায়ে অদৃশ্য আগুন।
“তোমরা এখানেও ঝগড়া করবা?”,অবাক হয়ে বলে ইনায়াহ্।
পাখি চুপচাপ নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে চামচ নাড়াচাড়া করে।
“হুমমম, সবাই খাও”,উচ্ছোষিত কন্ঠে বলে ইনায়াহ্।

🌸🌸
“আরে শাআআন যে!”,চেনা কন্ঠস্বরে নিজের নাম শুনে শান মাথা তুলে তাকায়।মুচকি হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়।
“হোয়াট আ সারপ্রাইজ ম্যান!এই জন্যে তাড়াতাড়ি চলে গেলে আজ”

পাখি ইনায়াহ্ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। মানে তারা কিছুই বুঝতে পারছে না।
“সেরকম টা নয় স্যার।মাইগ্রেনের পেইন টা বেড়ে গেছিলো।তাই আরকি!”
শানের কথা শুনে পাখি বুঝতে পারে ভদ্রলোক শানের সিনিওর কেউ।
“বসো বসো।সমস্যা নেই। তোমরা খাও”,বলেই ভদ্রলোক শানকে বসতে ইশারা করেন।
পাখির দিকে একনজর তাকিয়ে মুচকি হেসে ভ্রু উচিয়ে ইশারা করে বলে,”কী?জিএফ নাকি?”
“আসলে স্যার…”
“আরে বুঝি বুঝি। বেশ মিষ্টি মিষ্টি আছে।এনজয় ইয়াংম্যান।তোমাদেরই তো সময়”,আস্তে আস্তে বলে লোকটা।
ভদ্রলোকের কথা শেষ হতেই পাখি উঠে দাঁড়িয়ে সুমিষ্ট স্বরে বলে,”আপনার ভুল হচ্ছে। আমি উনার কেউ হয় না।আমি ইনায়াহ্’র গভারনেস”
পাখির কথায় ভদ্রলোক ভ্রুকুচকে শানের দিকে তাকায়।শান হতভম্ব বনে যায়।মুচকি হেসে বলে, “প্লিজ বসুন না স্যার”
শানের কথাকে এড়িয়ে ভদ্রলোক ঘড়ি দেখে বলে,”আমি যতদূর জানি গভারনেসরা রাত ১১ টার পর মালিকের সাথে ডেইটে আসে না”
পাখির মুখটা পরোক্ষনে চুপসানো বেলুনের মতো হয়ে যায়।শান রাগি চোখে তাকিয়ে থাকে পাখির দিকে।
লোকটা হেসে বলে,”বুঝতে পেরেছি তোমাদের ঝগড়া চলছে”
বলেই শানকে তড়িঘড়ি বিদায় জানায় লোকটা। কারো ডাকে সাড়া দিয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়।

পাখি ধপ করে বসে পরে চেয়ারে।শান দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”ঠিক এই প্রসঙ্গ টা এড়িয়ে চলতেই আমি ওয়েটারের কথাতেও চুপ করে ছিলাম”
ইনায়াহ্ একবার শানের দিকে আরেকবার পাখির দিকে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি নিয়ে ঝগড়া চলছে তাদের।
শানের কথায় পাখি চামচটা রেখে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে।
শান পূনরায় বলে ওঠে,”বাড়িতে আশ্রিত গভারনেসের থেকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে প্রেটেন্ড হওয়া অনেক সম্মানের”
“চলো মাম্মাম”,বলে শান উঠে দাঁড়ায়।শানের কথায় পাখির গা রি রি করে ওঠে।দুহাতে টেবিলে ভর দিয়ে বলে,”আপনার মতো লোকের গার্লফ্রেন্ড হিসেবে নিজেকে দাঁড় করতে আমার রুচিতে বাঁধে।চলো বেবি”
হনহন করে পাখি ইনায়াহ্’র হাত ধরে চলে যায়।দুজনে গিয়ে বসে গাড়ির ব্যাক সিটে।

শান হা করে ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে ভাবে, “এই মেয়ের এতো এটিটিউড আসে কোত্থেকে!”

শান খাবারের বিল দিয়ে গাড়ির কাছে আসে।গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে যায় বাড়িতে।বাড়ি পৌঁছে আর কোন টু শব্দ না করে ইনায়াহ্’কে কোলে নিয়ে রুমে চলে যায় পাখি।

🌸🌸
“একটা কথা বলি শান বাবা!”
“হুমম”,
“মেয়েটা অনেক ভালো। ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্টে বড় হয়েছে”
“জানি”
“জানো?”
“হুম।তারপর বলো?”
“কি করে জানলে তুমি?”
শান খাওয়া রেখে বলে,”আমি ওর ব্যপারে সমস্ত খোঁজ নিয়েছি চাচি।এবার বলো কি বলবে?”
শানের কথায় রাহেলা অবাক হয়ে যায় মুচকি হেসে আনমনে ভাবে,”তারমানে আল্লাহ্ রহমত করেছে তাহলে!”
“বলি যে বাবা, মেয়েটাকে তুমি আর ভালো মন্দ বলে কষ্ট দিও না।ছোটবেলায় মা বাবা চলে গেছে।চাচির সংসারে বড় হয়েছে। তারাও খাটিয়েছে।বড় হয়ে ওই ভাইয়ের প্রতারনা। মেয়েটা খুবই ভালো।মানে বলছিলাম যে অপমানজনক আর কিছু বলো না।আরেকটা কথা বলি কি বাবা,সবাই তো আর এক হয় না”

রাহেলার কথায় শান খাওয়া থামিয়ে পাখির কথা ভাবতে থাকে, “সত্যিই তো! আমি কি খুব রড হয়ে গেছি ওর উপর!অকারণে কাউকে হার্ট করছি না তো!”

চলবে…..
চলবে….
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here