#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ- ১৩
” সে দিন আপনার থ্রেট শুনে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম।
আমার চাকরি না, যেনো চলে যায়। ”
বলেই নাছিম হাসলো। আয়শা ভ্যাবাচেকা খেলো নাছিমের কথা শুনে। এই লোকটা বড্ড দুষ্টু আর পাজি, খালি আয়শাকে লজ্জায় ফেলার চেষ্টা করে।
আয়শা মনে মনে ভেংচি কাটলো। আয়শাকে কথার তীরে খোঁচা মারা হচ্ছে।
চালুন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
” স্যার আমি একাই যেতে পারবো। ”
“আই নো। ঢাকা শহরে রাত নয়টা আহামরি রাত না। ”
নাছিম মনে মনে বললো..’ আপনাকে চাপের মধ্যে রাখার জন্য আমি আটকে রেখেছি বাড়ি আমি পৌঁছে দেবো। এটা আমার দ্বায়িত্ব মিস আয়শা। ‘
নাছিম আয়শা কে তাড়া দিয়ে বললো…
” কি হলো মিস.আয়শা উঠুন। ”
আয়শা গাড়িতে উঠে বসলো। নাছিম পাশে বসে গাড়ি স্টার্ট করে চালাতে শুরু করলো। আয়শা বাইরের দৃশ্য দেখছে। হাল্কা বাতাসে আয়শার চুল গুলো কিছুটা উড়ছে। নাছিম এক নজর আয়শার দিকে তাকালো৷ আবারো ড্রাইভিংয়ে মন দিলো।
ক্লান্ত শরীরেও আয়শার অদ্ভুত প্রশান্তি হচ্ছে খুব। অদ্ভুত এই প্রশান্তির কারন আয়শা নিয়েও বুঝতে পারছে না। পাশে বসা খারুস লোকটার দিকে আয়শা তাকালো। আয়শার মন বলছে এই লোকটাকে নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা যায়।
আয়শার ফোনটা বেজে উঠলো। নাছিম ড্রাইভ কারতে করতে বললো…
” মিস, আয়শা আমার দিকে তা তাকিয়ে নিজের ফোনটা আগে তুলুন। ”
আয়শা ব্যাগ খুলে ফোনটা নিলো, ওরিন ফোন করেছে। আয়শা দ্রুত ফোনটা রিসিভ করে বললো…
” হ্যালো আপু? ”
” হুম বল।”
“কোথায় তুমি? এতো দেরি হচ্ছে যে? বাসায় আসবে কখন?”
” একটু বেশি কাজ ছিলো। বাসায় আসছি? ”
” রিক্সায় সাবধানে বসো। আর ৫০টাকার বেশি ভাড়া দিও না। ”
নাছিম কান খাড়া করে দু বোনের কথা শুনছে,নাছিম ভাড়ার কথা শুনে হাসলো…
” ওরিন আমি রিক্সা দিয়ে আসছিনা। ”
ওরিন চিন্তাত গলায় বললো..
” তাহলে?”
” বসের সাথে, আসছি।”
” ওয়াও। আচ্ছা আপু? ”
” হুম। ”
” তোমার বস কি বুইড়া ভুড়ি টাকলু, নাকি হ্যান্সাম?”
আয়শা ফিস ফিস করে বললো…
” বস সাথেই বসে আছে। কি বলছিস এই সব।”
” বলো না আপু.. দেখতে কেমন?”
নাছিম আয়শার দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো..
” ভালো।”
“শুধুই ভালো। ”
” তোকে বাসায় এসে বলছি কেমন। ”
বলেই আয়শা ফোন টা কেটে দিলো। নাছিম ড্রাইভে করছে। নাছিমের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। আয়শা নাছিমের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
” মিস আয়শা ভালো মতো আমাকে দেখে নিন। বাসায় গিয়ে বোন কে আমার রূপের বর্ননা দিতে হবে তো?”
উহ এই খারুস টা সব বুঝে যায়। কিছু হাইড করা যায় না। এই খারুস টা গোয়েন্দা হলে তো ফেমাস হয়ে যেতো।
” কিছু বলছেন না যে?”
” আমি কেন আপমার রূপে বর্ননা দিতে যাবো?আমার খেয়ে দেয়ে কি আর কাজ নেই? ”
” সেটা আপনি ভালো জানেন, মিস আয়শা। শাহাবাগ তো চলে এলাম। ”
” বাম সাইডে, থামান স্যার। ”
নাছিম গাড়ি থামিয়ে দিলো। আয়শা গাড়ি থেকে নামলো। অর্ধ খোলা জানালা দিয়ে উঁকি মেরে বললো…
” ধন্যবাদ খারু..ইয়ে মানে স্যার। ”
বলেই আয়শা বিল্ডংয়ে ঢুকে গেলো। অদ্ভুত মেয়ে তো, এক কাপ চায়ের জন্য ও বললো না। বল্লেই বা কি? এবার না জানি তেলাপোকার ডিম মিশিয়ে দিতো। মাই গড।
নাছিম উঁকি দিয়ে বিল্ডিংয়ের দিকে তাকালো। গেটের সামনে দারোয়ান কে ইশারায় ডাক দিলো..
” মুরে (আমাকে) ডাক দিছলেন স্যার? ”
” হ্যাঁ। যিনি ভেতরে গেলেন..”
দারোয়ান পান চিবুতে চিবুতে বললেন…
“আয়শা আফা…?”
“হ্যাঁ। উনি কতো তালায় ভাড়া থাকেন?”
” ভাড়া? এই বিল্ডিং আয়শা আপা গো। ”
“ওহ। ”
“জ্বি। উনি আগে পাঁচ তলায় থাকতো, হেতির (ওনার) আম্মা মারা যাওয়ার পর ছয় তলায় থাহে (থাকে)।”
নাছিম একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললো..
” আচ্ছা। টাকা টা রাখুন। এটা আমার কার্ড। মাঝে মাঝে আমায় ইনফরমেশন দেবেন।”
দারোয়ান রমিজ, দাঁত বের করে হেসে বললো।
” জ্বে স্যার। ধন্যবাদ। ”
নাছিম আবার গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করলো, যে মেয়ের বাবার ঢাকা শহরে নিজের বিল্ডিং আছে। তার মেয়ের চাকরি করতে হবে কেনো?
নাছিম একসময় বাসায় চলে এলো। তার মনের প্রশ্ন গুলোর উত্তর সে খুব শীগ্রই পাবে সে।
”
”
কলিং বেজ বাজানোর পর পর ওরিন এসে দরজা খুলে দিলো। আয়শা সাইড ব্যাগটা সোফার এক পাশে রেখে গা এলিয়ে দিলো। ওরিন এক গ্লাস ঠান্ড পানি এনে আয়শার হাতে দিতেই আয়শা ঢক ঢক করে খেয়ে নিলো।
” ধন্যবাদ রে। ”
ওরিন হালকা হাসলো৷ গ্লাস টা রেখে আয়শার পাশে বসলো..
” আপুই.. ”
“হুমম.. ”
ওরিন মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে বললো
” বলো না..”
আয়শা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো..
“কি বলবো?”
ওরিন ভ্রু নাচিয়ে বললো
” তোমার বস তোমাকে লিফট দিচ্ছে ব্যাপার টাকি? হুম হুম?”
” ওই খারুস টা কি করেছে জানিস?”
ওরিন মাথা দুলিয়ে না করলো।
” ওই ওই খারুস টা এত্তো এত্তো ছবি দিয়ে বললো এগুলো এডিট করতে। তুই বল ছবি এডিট করা কি এতো সহজ? ”
” সময় লাগে অবশ্যই। তার পর?”
” তার পর রাত নয়টা বাজিয়ে দিলো। এখন তুই বল আমার দোষ কোথায়। ”
“ওয়েট ওয়েট তোমার কপালে কাটা দাগ?”
“আর বলিস না, ওই খাজস টার কেবিন থেকে পালিয়ে আসছিলাম। তখনি দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে, একটু কেটে গেছে। ”
” তুমিও না আপু। একটু দেখে চলবে তো৷ ”
“খেয়াল করি নি। ”
ওরিন একটু নড়ে চড়ে বসে বললো।
“এই আপু তোমার বস দেখতে কেমন, বলোনা। ”
” ব্যাটা দেখতে নায়ক তাহসানের মতো। কিন্তু এক নম্বার খারুস। ”
” আচ্ছা। বুঝতে পেরেছি। এখন যাও ফ্রেশ হও।”
আয়শা উঠে দাঁড়ালো, ব্যাগ নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
————— পর দিন———
আজকে দিন টা শুক্রবার, আয়শার অফিস বন্ধ। আয়শা আরামছে, ঘুম দিচ্ছে। আর ঘুমের ঘোরে নাছিম কে দু চারটা গালি দিচ্ছে। ওরিন বই থেকে মুখ উঠিয়ে, আয়শার দিকে এক নজর তাকালো। ওরিন ঠিক বুঝতে পারছে, তার আয়শা আপা কাকে বার বার গালি দিচ্ছে,ভয়ংকর লোক, খারুস, ধলা ভাল্লুক বলে।
সকাল দশ টা বাজে, ওরিন টেবিলের নাস্তা গুছিয়ে, রাখছে। আফজাল খান সাহেব নাস্তা সেরে কিছুক্ষণ আগেই বাজার করতে বেরিয়ে গেছেন। ওরিন আয়শার জন্য অপেক্ষা করছে।
“আয়শা আড়মোড়া হয়ে টেবিলে এসে বসলো। ”
ওরিন আয়শার প্লেটে খাবার দিয়ে, নিজের প্লেটে খাবার নিলো। ওরিন ঠোঁট টিপে হাসি দিয়ে বললো….
” আপু তুমি তোমার বস কে ভয়ংকর লোক বলে ডাক দাও তাই না?”
আয়শা পরোটা চিবুতে চিবুতে বলল..
” হ্যাঁ। কিন্তু তুই কি ভাবে জানলি?”
” ঘুমের ঘোরে তুমি তোমার বস কে যা গালি দাও। ”
” সিরিয়াসলি? ”
” হ্যাঁ,..
আয়শার ফোনটা বেজে উঠলো। আননোন নম্বার থেকে ফোন এসেছে। আয়শা কেটে দিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিলো। ঠিক তখনি আবার কল আসলো।
আয়শা ফোনটা কানে নিয়ে বললো, বিরক্তি প্রকাশ করে বললো…
” হ্যালো! কে বলছেন। ”
” মিস,আয়শা আপনি আমার নম্বর এখনো সেভ করেন নি?”
আয়শা হালকা কাঁশি দিয়ে বললো..
” ইয়ে মানে, স্যার আমার ঠিক মনে ছিলো না। ”
” আজ কে কি? তা মনে আছে?”
” স্যার আপনার জন্মদিন! হ্যাপি বার্থডে স্যার..”
” অহ গড। আজ কে আমার বার্থডে না। ”
” তাহলে কি স্যার আপনার সুন্নতে খাৎনা?”
নাছিম রাগে ঠোঁট কামড়ে, ধমক দিয়ে বললো..
” এক দম চুপ! আমার বয়স কত জানেন আপনি?”
” তাহলে কি স্যার? বললেই তো পারেন। ”
” আজ সন্ধ্যায় আমার বোনের মেহেদী ফ্যানশন। ”
এরে.. একদম ভুলে গেছিলাম। আয়শা নিজের মাথায় আলতো করে থাপ্পড় মারলো। ফোনের ওপাশ থেকে নাছিম, শক্ত গলায় বললো…
।#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-১৪
এই-রে একদম ভুলে গেছিলাম। নিজের মাথায় আলতো থাপ্পড় মারলো। এবার কি হবে?
আবার এক গাঁদা বকা শুনতে হবে ভবতেই আয়শার বিরক্ত লাগছে। ফোনের ও পাশ থেকে নাছিম, গম্ভীর কণ্ঠে বললো…
“ঠিক বিকেল ৪টায় আমার বাসায় আসবেন।”
” ওকে স্যার।”
” আমি ড্রাইভার কে পাঠিয়ে দেবো। রেডি থাকবেন। লেট যেনো না হয়। ”
” ওকে স্যার। লেট হবে না৷ ”
নাছিম ফোন টা কেটে দিলো, এই এলিয়েন মেয়েটা জাস্ট মাথাটা খারাপ করে দেবে, তবুও নাছিম রাগ হতে পারে না কেনো? কেনো সব সময় আয়শাকে চোখের সামনে রাখতে ইচ্ছে করে।
নাছিম জোরে শ্বাস নিয়ে, নিজে কে-ই নিজে বোঝালো, নাছিম হোসাইন দূর্বল হতে পারে না। ‘ তবুও মনের ভেতর খুব একটা জেদ আসছে না।
” ভাইয়া! এদিকে আসো না।”
মারিয়া র কথায় নাছিমের ধ্যান ভাংলো। নাছিম তার বোনের কাছে গেলো। মারিয়া অভিমানী সুরে বললো…
” দেখোনা ভাইয়া তুষার লেহেঙ্গা চুজ করতে পারছে না। এটা কেমন? ”
” ভালো। তোকে খুব মিষ্টি লাগবে৷ ”
মারিয়া হাল্কা হাসলো। মারিয়ার মাথায় ফরিদ মৃদু চাটি মেরে বললো…
” আটা – ময়দা মেখে প্লিজ সং সাজিস না। তাহলে আমি তোর মাথার দু সাইডে দুটো শিং জোড়া দিয়ে দিবো।”
বলেই ফরিদ হো হো করে হেসে দিলো। মারিয়া কিছুটা রাগী কন্ঠে ফরিদ কে বললো…
” একদম ভেঙ্গাবে না। ওটা কে মেক-আপ বলে। আজ একটা ভাবি নেই বলে। এতো সমস্যা হচ্ছে। ”
” নাছিম ভাইয়া আগে বিয়ে করুক, তার পর চট করে আমিও বিয়ে করবো। ”
” হইছে হইছে, আর আশা দিও না। ভাবি দের আশায় আমি নিজেই বুড়ি হয়ে যাবো৷ ”
নাছিম শপিং মলের শোরুমের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে ভাই – বোনের কথা শুনে মৃদু হাসছে, নাছিমের চোখ একটা আকাশীরংয়ের শাড়ির দিকে গেলো। নাছিমের ওয়েস্টার্ন ব্রেন্ড হলেও ছোট বেলা থেকেই নাছিম শাড়ি খুব পছন্দ করে। ছোট বেলায় যখন নাছিম মায়ের আঁচলের তলায় লুকাতো তখন, মায়ের আঁচলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ নাছিমের খুব ভালো লাগতো।
নাছিম শো-রুমের এক পাশে গিয়ে শাড়িটা লুকিয়ে কিনে নিলো। মারিয়া অথবা ফরিদ দেখলেই বিভিন্ন প্রশ্ন করবে। নাছিম বিল পে করে আগের জায়গায় ফিরে এলো।
শপিং শেষে সবাই বাড়ি ফিরে এলো। গাড়ি থেকে নাম বার সময় তুষার মারিয়ার ওড়না টেনে কানে ফিস ফিস করে বললো…
” তুমি বধূ সেজে বসো, আমি বর বেশে আসছি। ”
মারিয়া লজ্জা লজ্জা মুখে হাসি দিয়ে, বিল্ডিংয়ের দিকে হাটা শুরু করলো। ভালোবাসার প্রাপ্তি যে বড্ড সুখ কর৷ ক’জন ভাগ্যবান নিজের ভালোবাসাকে পূর্নতা দিতে পারে?
“মায়ায় জড়ানো কিছু ভালোবাসা পূর্নতা পায়। আর বেশির ভাগ গুলো বাস্তবতার চাপে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, আর ফ্যাকাসে ধোঁয়ার সাথে উড়ে যায়!”
____রুহি জাহান (মায়া)
বিকাল পাঁচটা কি সারে পাঁচটার কাছাকাছি বাজে। আয়শা নাছিমের আপ্যারমেন্টের কাছে নামলো। নিজের ক্যামেরা এবং প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে, যেতেই আয়শার নাছিমের সাথে দেখা হলো।
” গাড়ো সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে নাছিম, হাতা ফোল্ড করা, কয়েকটা চুল নাছিমের আধো ঘার্মাক্ত কপালের সাথে লেপ্টে আছে। ”
” মিস,আয়শা?”
“হুঁ? ”
” আমাকে দেখা শেষ হয়েছে?”
“উঁহু।”
নাছিম একটু হাসলো, হাসি থামিয়ে থম থমে মুখ নিয়ে বললো..
” মিস,আয়শা?”
” জ্ব জ্বি স্যার। ”
” কি ভুল ভাল বলছিলেন? ”
“ক- কোথায়?কিছু না তো। ”
” আচ্ছা। আপনার জন্যই ওয়েট করছিলাম।”
“কেনো স্যার? ”
” পার্টি হলে যেতে হবে খুব বেশি দূরে না। ”
বলেই নাছিম গাড়িতে বসে পড়লো, সাথে আয়শাও বসল। প্রায় দশ – বারো মিনিট পড়েই সবাই হলে পৌঁছে গেলো। হলে ঢুকতেই নাছিমের দাদি মিস শেহতাজ বেগম তাকে ডাক দিলেন। নাছিম তার কাছে যেতেই সরু চোখে দা দাদী আয়শার দিকে তাকিয়ে বললো…
” মাইয়াডা কে রে?”
” ফটোগ্রাফার দাদী? ”
” অহ। কি মায়া মায়া চেহারা।”
নাছিম ঠোঁট টিপে হাসলো। আয়শা কে ডাক দিলো…
” দাদী উনি মিস,আয়শা। তোমরা কথা বলো আমি আসছি। ”
বলেই নাছিম চলে গেলো। শেহতাজ বেগম আবারো পা থে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে দেখলো। আয়শার বড্ড নার্ভাস লাগছে।
” তুমি ফডো (ফটো)তুলো?”
“জ্বি। ”
” আর কি করো?”
” মানে?”
” রান্না জানো?”
আয়শা প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে গেলো। বিয়ের ছবি তুলতে এসে কি অদ্ভুত জবাব দিহি করতে হচ্ছে তাকে। আয়শা নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো…
” জ্বি জানি। খুব বেশি না। ”
“আচ্ছা। ঘরের কাজ জানো?”
আয়শা হা করে মহিলার দিকে তাকাচ্ছে, তাকে কি এখন নাছিমের বাসায় বুয়া রাখা হবে নাকি? অবিশ্বাসের কিছুই নেই।
নাতী যদি আয়শা কে দিয়ে কফি বানাতে পারে, তাহলে দাদী আয়শাকে বুয়াও বানাতে পারবে।
” কি হলো মেয়ে?”
” জ্বি জানি। ”
শেহতাজ বেগম প্রশন্ন হাসি দিলেন। আবার সিরিয়াস কন্ঠে বললেন…
” আমার নাতী কে কেমন লাগে? ”
আয়শা ফট করে উত্তর দিলো..
“ভাল্লুকের মতো?”
শেহতাজ বেগম থম থামে মুখ নিয়ে বললেন “কিহ?”
আয়শা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো..
“ইয়ে মানে স্যার মনে হয় ডাকছেন আমাকে। আমি যাই…”
বলেই আয়শা দ্রুত হাটা শুরু করলো। স্টেজের কাছে এসে হাফ ছেড়ে নিঃশ্বাস নিলো। দাদী -নাতী এক দম একই রকম। খালি জেরা করে। বাবা গো এখন না জানি আমাকে, বুয়া বানিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর, একটা মেয়ে স্টেজে উঠলো। গাড় সবুজ রঙের জামা গোল্ডেন কাজ করা, গর্জিয়াছ সাজ সজ্জায়, মেয়েটা কে বেশ সুন্দর লাগছে। আয়শার বুঝতে আর বাকি রইলো না এটাই নাছিমের বোন।
বিভিন্ন পোজে মেয়েটার অনেক গুলো সিঙ্গেল ছবি তুললো, আয়শা। তার পর ফ্রেন্ডস, রিলেটিভ সহ অনেকের ছবি তুললো। অতঃপর নাছিম উঠলো স্টেজে সাথে আরেক টা ছেলেও, ছেলেটাকে আয়শা ঠিক চিনতে পারলো না। ছেলেটার দৈহিক আকার প্রায় নাছিমের মতোই।
দু ভাইয়ের হাত ধরে মাঝখানে মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আয়শা এবার বুঝতে পারলো ওটা নাছিমের ছোট ভাই। আয়শা আরো খানেক ছবি তুললো৷ কনে কে এখন মেহেদী পড়ানো হচ্ছে আয়শা একটা চেয়ারে গিয়ে বসলো৷ ভাবসা গরম লাগছে খুব৷
হাতে মেহেদী পড়া শেষ করে মারিয়া আয়শার কাছে এলো। হালকা হেসে আয়শার উদ্দেশ্য বললো…
” ছবি গুলো কি আমি দেখতে পারি৷ ”
আয়শা উত্তর দিলো
” অবশ্যই দেখতে পারেন। ”
” আমাকে তুমি করে বলো। সম বয়সী কারো থেকে আপনি শব্দ ভালো লাগে না।”
আয়শা হালকা হালকা হাসলো।
মারিয়াকে কয়েকটা ছবি দেখালো। মারিয়া হাসি উজ্জ্বল মুখ করে বললো…
” বাহ। তুমি অনেক সুন্দর ছবি তুলতে পারো। ”
আয়শা হালকা হেসে বললো, “থ্যাংক ইউ। ”
” ওয়েলকাম। বাই দা ওয়ে আমি মারিয়া হোসাইন।”
” আয়শা রেহমান। ”
” নাইস টু মিট ইউ। ”
” মি টু। ” আয়শা মনে মনে ভাবছে, এই মেয়েটা কি সুন্দর করে কথা বলে, আর ওই খারুস টা?
একটু ও ভালো ভাবে কথা বলে না। হুহ খারুস। ‘
” মিস আয়শা। ”
“হুম। ”
বলে তাকাতেই দেখলো পাশে নাছিম দাঁড়িয়ে আছে। নাছিম একটু কাছে এসে বললো…
” এভ্রিথিং ইজ ওকে?”
” জ্বি স্যার। ”
” আচ্ছা। ডিনার করবেন, চলুন। ”
–
রাত প্রায় বারোটা বাজে। অনুষ্ঠান শেষ। অনেক গেস্টরাই বাসায় চলে গেছে। আয়শা নাছিমের উদ্দেশ্য বললো…
.
.
চলবে।