ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ১৫+১৬

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-১৫

রাত প্রায় বারোটা বাজে। অনেক গেস্ট রা চলে গেছে। মারিয়া আর আয়শা ছবি নিয়ে কথা বলছিলো।
নাছিম, ফোনে কারো সাথে কথা বলছে, ফোন কাটা মাত্রই আয়শা নাছিমের উদ্দেশ্য বললো…

” স্যার আমি এখন বাসায় যেতে পারি? ”

” বাসায় যেতে হবে না। আপনার জন্য গেস্ট রুম বরাদ্দ আছে। ”

“কিন্তু স্যার আমি তো কোন লাগেজ আনি নি। ”

“অহ গড। আনেন নি কেনো?”

” আমি জানতাম নাকি? আমার জন্য গেস্ট রুম আছে।”

” চলুন আপনাকে, পৌঁছে দিয়ে আসি। ”

” কেনো স্যার? আপনার ড্রাইভার নেই? ”

” আপনাকে সেটা ভাবতে হবে না। চালুন। ”

বলেই নাছিম হলের থেকে বেড়িয়ে গেলো। আয়শা মুখ ভেংচি কাটে নাছিমের পিছু পিছু হাটা শুরু করলো।


“দেখলে দাদী ভাইয়ার রিয়েকশন।”

” সেটাই তো দেখছি? ”

মারিয়া সরু চোখে তাকিয়ে বললো..

” ডাল মে কুচ কালা হে দাদী?”

” ব্যাপার টা দেখতে হচ্ছে। ”

” হ্যাঁ দাদী৷ এই প্রথম বার দেখলাম ভাইয়া একটা মেয়ের ব্যাপারে পজেসিভ। ”

শেহতাজ বেগম কিছু বললেন না। লাঠিতে ভড় দিয়ে দাঁড়িয়ে, কিছু একটা ভাবলেন।

সারা দিনের ক্লান্তিতে আয়শা, ঘুমিয়ে গেছে। নাছিম ড্রাইভিং করছে, কিছু ক্ষন পর পর আয়শার দিকে তাকাচ্ছে। আয়শার কপালে কয়েকটা চুল উড়ে উড়ে খেলা করছে। আয়শার সে দিকে খেয়াল নাই। বাইরের এক গুচ্ছো আলো আয়শা কে স্পর্শ করছে, আয়শা কে দেখে লাগছে, শুভ্র রঙের মেয়ে।

আয়শার বাসার কাছা কাছি এসে, নাছিম গাড়ি থামালো৷ কয়েক বার ডাক দেওয়া শর্তেও আয়শার ঘুম ভাংলো না। মেয়েটা বেশি ক্লান্ত মনে হয়। নাছিমের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো…

নাছিম বোতল থেকে পানি বের করে আয়শার মুখে ঢেলে দিলো। কয়েক মুহূর্তে পরেই আয়শা ধড় ফড়িয়ে উঠলো।

” আল্লাহ, আমায় বাঁচাও। ঝড় এসেছে সুনামি এসেছে সবাই পালাও পালাও।

নাছিম হো হো করে হেসে দিলো। এই মেয়েটা পারে ও বটে। নাছিম হাসি বন্ধ করে, অর্ধেক ঘুমন্ত আয়শাকে ঝাকি দিয়ে বললো…

” মিস, আয়শা কিচ্ছু হয় নি। আপনি আমার গাড়ির ভেতরে বসে আছেন। ”

” তাহলে ঝড় বৃষ্টি হলো কিভাবে, আমি ভিজলাম কি ভাবে?”

” এতো বার ডাক দেয়ার পর আপনার ঘুম ভাংছিলো না। তাই পানি ঢালতে হলো? ”

” তাই বলে আমায় ভিজিয়ে দিলেন? ”

“ঘুম না ভাংলে আমার আর কি করার আছে? ”

‘ দাঁড়াও খারুস তোমকেও মজা দেখাইতেছি। আয়াশা ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে হাটা শুরু করলো। রাগে আয়শা দ্রুতো গতিতে বিল্ডিংয়ে ঢুকে গেলো। ‘

নাছিম এখনো মিটি মিটি হাসছে, ক্রেজি গার্ল। নাছিম গাড়ি ঘুড়িয়ে আবারো ধানমন্ডির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।



রাত দুটো বাজে, কিছুক্ষণ আগেই নাছিম বাসায় ফিরেছে। লং শাওয়ার নিয়ে নাছিম বেড়িয়ে এলো। এক কাপ কফি খেতে পারলে নাছিমের ভালো লাগতো। কিন্তু বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে কে কফি বানাবে এখন।

নাছিম চুল মুছতে মুছতে রান্না ঘরের দিকে গেলো। লাইট অন করে নিজেই কফি বানানো শুরু করলো। ঠিক তখনি মারিয়া নাছিমের উদ্দেশ্য বললো…

” ভাইয়া তুমি এতো রাতে?”

” আয়শা কে ড্রপ করে দিয়ে কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছি। কফি খেতে ইচ্ছে করছিলো।”

” আমাকে বলতে পারতে। ”

” আমি ভেবেছিলাম সবাই ঘুমিয়ে গেছে। ”

” আমি ঘুমাই নি। ঘুম আসছে না। ”

” কেনো? ”

” জানি না। ”

” বিয়ের আনন্দে আমার বোনটার ঘুম উড়ে গেলো নাকি? ”

বলেই নাছিম হালকা হাসলো। মারিয়া লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো,

” ভাইয়া তুমিও না। এমনিতেই ঘুম আসছিলো না আমার। ”

” কফি খাবি?”

” হ্যাঁ। তোমার হাতের কফি মিস করতে চাই না ভাইয়া।”

নাছিম দু কাপ কফি বানিয়ে, মারিয়া কে এক কাপ দিয়ে নিজেও আরেক কাপ কফি খাওয়া শুরু করলো। মারিয়া কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো…

” মেয়ে টা কিন্তু ভারী মিষ্টি।”

নাছিম মারিয়ার কথায় বিষম খেয়ে, কাঁশতে শুরু করলো। কাঁশতে কাঁশতে নাছিম বললো…

” কোন মেয়ে টা?”

” আয়শা। ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে তো। ”

” ও আচ্ছা। ”

মারিয়া সরু দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে লক্ষ্য রাখলো। ইম্প্রেশন দেখার জন্য, নাছিমের মুখে রহস্যে ছাপ, কিন্তু সে স্বাভাবিক থাকার ভান করছে।

মারিয়ার ভালো করেই জানা আছে তার ভাই বড্ড চাপা স্বভাবের। কোন কথাই সহজে শেয়ার করতে চায় না। কিন্তু মারিয়া এবার, তার ভাইয়ের মুখ থেকে সত্যিটা জেনেই ছাড়বে।

” ভালো লেগেছে খুব। সুইট আছে৷ ”

“হুম। ”

বলেই নাছিম আবারো কফির কাপে চুমুক দিলো। মারিয়া ফট করে বললো..

” আমার বড় ভাবী হলে আরো বেশি সুইট হবে। ”

বলেই মুচকি হাসি দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে নাছিমের দিকে তাকালো। নাছিম হাসছে কি না, সঠিক বুঝা গেলো না। তবে মারিয়া আন্দাজ করলো তার ভাই হয়তো মনে মনে ঠিক ই হাসছে। প্রকাশ করছে না, শুধু।

সকাল দশ টা কি সারে দশটা। আয়শা রেডি হয়ে নিজের ক্যামেরা লেন্স, স্ট্যাম্প সহ নিজের জিনিস পত্র নিয়ে বের হলো। বাবা, আর ওরিন গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলো। ওরিন হালকা হেসে বললো…

” তোমাকে বড্ড মিস করবো আপু। ”

” আমিও মিস করবো। অনেক বছর পর, বাসা থেকে অন্য কোথাও থাকবো। ”

আফজাল সাহেব মেয়ের উদ্দেশ্য বললেন..

” সাবধানে থাকিস মা। আর খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করিস। ”

” দু দিনের জন্যই তো যাচ্ছি তুমি চিন্তা করো না বাবা। এখন আসছি। ”

” আচ্ছি, গিয়ে ফোন করিস মা। ”

” ওকে বাবা।”

বলেই আয়শা গাড়িতে উঠে গেলো। এক ঘন্টার মধ্যেই আয়শা নাছিমদের বাসায় চলে এলো। গাড়ি থেকে নেমে ওপরের দিকে, তাকাই দেখলো। নাছিম এক হাতে কফি আরেক হাতে ফোন নিয়ে কারো সাথে কথা বলছে।

আয়শা ড্রাইভারের সাথে জিনিস পত্র নিয়ে লিফটে উঠলো। নাছিমদের ফ্লাটের সামনে এসে কলিং বেল বাজাতেই এক জন মহিলা দরজা খুলে দিলো। আয়শা বাসার ভেতরে ঢুকতেই চারিদিকে চোখ বুলালো, আয়শাদের চেয়েও দিগুণ বড় ফ্লাট এটা। চারি দিকে হুয়াইট ফার্নিচার দিয়ে সাজানো গোছানো।

সোফার এক পাশে কয়েক জন মহিলা বসে আছে অন্য একটা সিঙ্গেল সোফায় নাছিম স্যারের দাদী হাতে পান সাজাচ্ছেন এবং গল্প করছেন। আয়শা কে দেখা মাত্রই দাদী বললেন…

” আসো মাইয়া, আসো। ”

আয়শা দাদীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। দাদী পান চিবুতে চিবুতে বললেন…

” বসো৷ ”

আয়শা দু সোফার এক কোনায় বসে রইলো। মারিয়া আয়শা র কাছে এসে বসলো। এক গাল হাসি দিয়ে বললো…

” কেমন আছো আয়শা?”

আয়শা হালকা হেসে বললো,

” ভালো। তুমি?”

” আমিও ভালো আছি। ”

” চলো তোমার রুম, দেখিয়ে দেই। ”

আয়শা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কয়েক কদম হেটেই, মারিয়া মুচকি হাসি দিয়ে বললো…

” এটা তোমার রুম। ”

” আচ্ছা ধন্যবাদ। ”

” ওকে। তুমি গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রেস্ট নাও। ”

বলেই মারিয়া মুচকি মুচকি হেসে চলে গেলো। মারিয়ার ঘন ঘন মুচকি হাসি দেখে আয়শা বেশ অবাক হলো। মেয়েটা দেখতে বেশ মিষ্টি তাই হয়তো হাসি খুশি থাকতে ভালোবাসে।

কি অদ্ভুত! খারুস টা একটু ও হাসে না। সব সময় গোমড়া মুখ করে রাখে। আর তারই বোন কি মিষ্টি করে হাসে। আয়শা ব্যাগটা বিছানার পাশে রাখলো। রুমটা বেশ সুন্দর, দেখে মনে হয় না এটা গেস্ট রুম। বারান্দা দিয়ে বাতাস আসছে।
আয়শা ব্যাগ থেকে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে গেলো। শাওয়ার নিতে নিতে গুন গুনিয়ে গান শুরু করলো…

‘ টিপ টিপ বারসা পানি.. পানি নে আগ লাগাদি। আগ লাগি দিল মে তো?

দিল কো তে রি ইয়াদ আয়ায়াই!’

বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতেই নাছিম ভরকে গেলো। তার বাথরুম থেকে মেয়েলি সুরে কেউ গান গাইছে। নাছিম কি করবে বুঝতে পারছে না। দিনে দুপুর দুপুরে ভুতের উৎপাত ঘটলো নাকি তার রুমে…?
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ১৬

‘ টিপ টিপ বারসা পানি.. পানি নে আগ লাগাদি। আগ লাগি দিল মে তো?

দিল কো তে রি ইয়াদ আয়ায়াই!

আব তুম হি বাতাদো সাজান মেয়ে কেয়া কারু.….’

বারান্দা থেকে ফোন কল শেষ করে, রুমে আসতেই নাছিম ভরকে গেলো। কেউ মেয়েলি শুরে গান গাইছে।নাছিম বাথরুমে একবার নক দিলো কিন্তু কোন রেস্পন্স পেলো না।

শাওয়ার থেকে পানির পরছে আর কেউ আগের মতোই গান গাইছে। নাছিম কি করবে বুঝতে পারছে না। দিনে দুপুরে ভুতের উৎপাত ঘটলো নাকি তার রুমে…?

নাছিম আবারো দরজায় নক করলো। ভেতর থেকে শব্দ এলো।

” এই কে রে? ”

পানির শব্দে নাছিম কথা ঠিক বুঝতে পারলো না। ভেতর থেকে আবারো শব্দ এলো।

” শান্তি মতো গোসল করছি। আবার নক করলে মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দেবো। ”

গলার কন্ঠেটা নাছিমের চেনা চেনা মনে হচ্ছে কিন্তু নাছিম বুঝতে পারছে না। কার এতো বড় সাহস তার অনুমতি না নিয়ে তার বাথরুমে শাওয়ার নিচ্ছে।

নাছিম কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো কিন্তু ভেতর থেকে কেউ বের হলো না৷ নাছিম ল্যাপটপ টা নিয়ে বারান্দায় গেলো। বেতের চেয়ারে পা রেখে কাজ শুরু করলো।

আয়শা বাথরুম থেকে বের হয়ে জামা কাপড় পরে নিলো। চুল মুছতে মুছতে গুন গুন করে গান গাইছে এবং ঘর ময় পায়চারী করছে। নাছিম গুন গুন শব্দ শুনে দ্রুত তার রুপে এসে আয়শা দেখে চূড়ান্ত বিষ্ময় নয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

আয়শা নাছিমের দিকে তাকায়েই জোরে চিৎকার দিলো। আয়শার মনে মনে চিন্তায় শেষ হচ্ছে, আয়শা তো রুমেই কাপড় পরেছে এই খসরু টা সব দেখেনিতো?

আয়শার চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। আয়শা তোর ইজ্জত গেলো রে। তুই শেষ।

নাছিম রাগী কন্ঠে বললো…

” আপনি আমার রুমি কি করছেন? ”

আয়শা মনে মনে ভাবলো তার মানে খারুস টা কিছু দেখে নি৷ আয়শা মনে মনে আল্লাহ নাম নিলো।
নাছিম আবারো ধমক দিয়ে বললো..

” কি হলো বলুন? আমার রুমে কি করছেন? ”

” এটা আপনার রুম? ”

” তো কি মনে হয়, মিস আয়শা? আমি ভাড়া থাকি?”

” না মানে, আমি সেটা বলতে চাই নি। মারিয়া আমাকে এই রুমে নিয়ে এলো। ”

” ওহ শিট। মেয়েটা প্রচন্ড দুষ্টু হয়ে গেছে। ”

” হ্যাঁ মারিয়াই তো বললো, এই রুম আমার জন্য। নাহলে কি আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নাই আপনার রুমে আমি আসতে যাবো।”

” চলেই তো এসেছেন।”

“হুহ। আমি জানতাম নাকি? ”

বলেই আয়শা ব্যাগ নিয়ে, বের হতে যাবে, ঠিক তখনি আয়শা খেয়াল করলো দরজা বাইরে থেকে আটকানো। আয়শা দরজার লকে ধাক্কা মেরে বললো…

” দরজা খুলছে না তো?”

নাছিম ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে বললো…

” এটা নিশ্চয়ই মারিয়া করেছে। ”

” খুলতে বলুন না?”

” এখন ডাকা ডাকি করেও লাভ নেই, আমি ভালো করেই জানি মারিয়া দরজা খুলবে না। ”

” তাহলে এখন উপায়? ”

” বসে থাকুন। ওর দরকার হলে ও নিজেই খুলে দিয়ে যাবে। ”

আয়শা এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। অফিসের বসের বেড রুমে আটকে গেকে কি করা উচিত তার সত্যিই জানা নেই। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হবে আয়শা কখনো ভাবে নি৷

আয়শা হাতে রাখা তোয়ালে টা নিয়ে, বারান্দায় গিয়ে চুল মুছতে শুরু করলো। এই বারান্দা টা বেশ বড় গ্রীল নেই। চারিদিকে বিভিন্ন রকমের গাছ দিয়ে সাজানো৷ বেলকনিতে এক পাশে বিশাল নয়ন তারা ফুল গাছ। শত শত গাড় গোলাপি রঙের ফুল ফুটেছে। আয়শা ফুল গাছ টার কাছে গেলো। তার বড্ড ইচ্ছে করছে দু তিনটা ফুল নিতে, আয়শা হাত বাড়াতে গিয়েও ফুল নিলো না। যতোই ফুল হোক নাছিমের পার্মিশন ছাড়া ফুল ছেঁড়া এক দম ঠিক হবে না।

আয়শা নিজের ইচ্ছে টাকে দমিয়ে। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। আয়শা কোথায় ফেঁসে গেলো। ধুর একদম ভালো লাগছে না। আয়শা এই খারুস টার রুমে যাবে না।
রোদে দাঁড়িয়ে পুড়ে তান্দুরি হয়ে যাবে। তবুও যাবে না। হুহ…

” রোদে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”

আয়শা পিছনে ঘুরে তাকালো, নাছিম দু হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়শার মুখ খানা রোদে লাল আবরণ ধারন করেছে। নাছিম ফিক করে হেসে বললো…

” দুপুরের এই কড়া রোদে বেশি ক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলে, আপনার গাল টমেটো হয়ে যাবে। ”

আয়শা ভেংচি কাটলো। নাছিম তিনটা নয়ন তারা ফুল নিয়ে আয়শার কাছে আসলো। আয়শার কানে ফুল গুলো গুঁজে দিয়ে বললো…

” আমার রুমে বসতে পারেন। আমি বিগড়ে যাওয়া ছেলে নই৷ সৎ ব্যাক্তিত্ব আছে আমার। ”

বলেই নাছিম রুমে চলে গেলো। আয়শা ফুল গুলো তে হাত দিলো। নাছিম কি তাহলে এতোক্ষণ তাকে দেখছিলো। উনি জানলো কি ভাবে আয়শার ফুল চাই?

আয়শা নাছিমের রুমে গেলো। স্টাডি টেবিলের পাশে একটা সোফায় গিয়ে বসলো। এসির বাতাসে আয়শা প্রান ফিরে পেলো। কি গরম টাই না আয়শা সয্য করছিলো। নাছিম বিছানার এক পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।

সারা দিন কাজ, অফিসে ও কাজ, বাসায় ও কাজ। নিজের বোনের বিয়ে, বাইরে গিয়ে সবার সাথে গল্প করবে তাও না। সেই কাজই করছে।

নাছিম ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বললো…

” মিস,আয়শা এভাবে তাকাবেন না প্লিজ, এমনিতেই একা ঘরে আমি, ভয় লাগছে আমার। ”

আয়শা বড় বড় চোখ করে তাকালো। কি দুষ্টু লোকটা। বার বার আয়শা কে প্যাঁচে ফেলার ধান্দা। আয়শা মুখ ঘুড়িয়ে অন্য দিকে তাকালো। নাছিম আয়শার রিয়েকশন দেখে হাসলো।

” আ আ আপনার দিকে তাকাতে যাবো কেন আমি৷ আমার কি খে…”

নাছিম আয়শাকে থামিয়ে দিয়ে বললো..

” আপনার খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই আমি জানি। এজন্যই ফাঁকি বাজি করেন। ”

আয়শা ভেংচি মারলো। খুধায় পেটের ভেতর চো চো করছে। আয়শার ছোট বেলার অভ্যাস নতুন কোন জায়গায় এলেই আয়শার ক্ষুধা লাগে। আয়শা একবার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো, ঘড়িতে দুটো বাজে।

আয়শা গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো, নাছিম আড় দৃষ্টিতে আয়শা কে দেখছে এবং ল্যাপটপে কাজ করছে৷ হুট করেই বাইরে থেকে শব্দ এলো, আয়শা শব্দ পেয়ে উঠে দাঁড়ালো। মারিয়া দরজা খুলে একটা হাসি দিলো…

” কি করো ভাইয়া?”

” দেখতেই তো পারছিস কাজ করছি। তুই দরজা লক করেছিস কেনো?”

” ইসস… আমার এক দম খেয়াল ছিলো না। ”

বলেই হাসলো। মারিয়া আয়শার উদ্দেশ্য করে বললো…

” ভা..থুড়ি আয়শা!”

” হ্যাঁ? ”

” দাদী তোমায় ডেকেছে? ”

নাছিম অবাক হয়ে বললো…

” দাদী আয়শা কে ডেকেছে?”

” হুম। আমাকেই তো বললো.. যা ফটোগ্রাফার মেয়েটাকে নিয়ে আয়। ”

মারিয়া নাছিমের উত্তরে অপেক্ষা না করে, আয়শা কে তাড়া দিয়ে বললো…

” আয়শা! চলো , চলো। ”
আয়শা বেড়িয়ে যেতেই মারিয়া বললো…

” ভাইয়া কেমন চমক দিলাম। ”

” আমি জানতাম তুই ইচ্ছা করে আয়শা কে এই ঘরে পাঠিয়েছিস। ”

” তোমার গাছের ফুল তো কাউকে ছিঁড়তে দাও না। আয়শার কানে ফুল এলো কি করে? হু? ”

নাছিম মাথা চুল্কালো। মারিয়া বড্ড চালাক, দ্রুতো সব বুঝে যায়। মারিয়া এক গাল হেসে বললো…

” অফিসের এমপ্লয়ির প্রতি এতো কেয়ার দেখেই আমি বুঝে ছিলাম। ”

নাছিম হাসলো। মারিয়া আবারও বললো..

” আগে বললেই পারতে। আমি সব সেটিং করে দিতাম।”

” তাই না। পাঁকা মেয়ে..

মারিয়া গা দুলিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো।

________SPECIAL EXTRA PART_________

শেহতাজ বেগম, হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য কাঁচা হলুদ বাটছেন। আয়শা কয়েকটা ছবি তুললো। শেহতাজ বেগম আয়শার উদ্দেশ্য বললো…

” তুমি মুরগার ( মুরগীর) মাংস রান্না করতে পারো?”

আয়শা ছবি তুলতে তুলতে বললো,

“জ্বি। দাদী পারি। ”

” আলু কয়টা কেঁটে দাও দেখি।”

আয়শা ক্যামেরা টা রেখে, আলু কেঁটে দিলো।

শেহতাজ বেগম ঘাম মুছতে মুছতে বললেন।
“তুমি একটু তরকারি টা রান্না করে দিবে আয়শা?”

আয়শা একটু অবাক হলো, কিন্তু বুঝতে দিলো না। আয়শার পাশে থেকে বুয়া বললো…

” আমি রান্না করে দেই?”

শেহতাজ বেগম ধমক দিয়ে বললেন,

” তোরে রান্না করতে কইছি? যা দেখ মেহমান দের কি লাগবো…”

আয়শার এখন বেশ সন্দেহ লাগছে। দাদী ইচ্ছা করেই তাকে দিয়ে রান্না করাচ্ছে। দাদী কি তাকে, রাঁধুনি বানিয়ে রাখতে চাইছে?
সবার প্রমোশন হয়, আয়শা ফটোগ্রাফি থেকে এখন বসের বাসায় রাঁধুনির কাজ করবে না তো?

সবাই টেবিলে খেতে বসেছে। আয়শা আর দাদী এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে, টেবিলে খাবার দেখে আয়শার খুধা বেরে গেলো। দাদী নাছিমের প্লেটে মাংস দিলো, নাছিম, ফরিদ খাওয়া শুরু করলো। ফরিদ বললো…

” মাংস টা তো খুব টেস্ট হয়েছে। প্রতি দিনের মতো না। আজকে একটু বেশি ইয়াম্মি?”

নাছিম বললো..” টেস্ট ডিফ্রেন্ট কে রান্না করেছে? ”

মারিয়া মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ” আয়শা রান্না করেছে ভাইয়া। ”

ওমনি নাছিম কাঁশি দেওয়া শুরু করলো। আয়শা দ্রুতো পানির গ্লাস হাতে দিলো।


চলবে

]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here