ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ১৭+১৮

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-১৭

” মজা হয়েছে না? ”

” হ্যাঁ। ভালো।”

মারিয়া মুচকি হাসি দিলো। নাছিম দ্রুত খেয়ে উঠে গেলো। আয়শার ক্ষুধায় পেটে মোচড় দিচ্ছি। চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে। মারিয়া আয়শার কাঁধে হাত রেখে বললো…

” চলো। আমরা খেতে বসি। ”

” হুম। ”

আয়শা, মারিয়া, দাদী আরো কয়েক জন রিলেটিভ এক সাথে খেতে বসলো। আয়শার আর তর সইছে না। আয়শা প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলো। দাদী খাবার মুখে নিয়ে বললেন…

” বাহ, ভালোই রানছো (রান্না করেছো)।”

মারিয়া খাবার চিবুতে চিবুতে বললো…

” সত্যি আয়শা, অনেক দিন পর নতুন টেস্ট পেলাম। ”

আয়শা প্রশংসা শুনে হালকা হেসে, খাওয়ায় মন দিলো। খাওয়া শেষে আয়শা কিচেনে গেলো হাত ধুতে। দাদী আয়শার পিছু পিছু এলো, আয়শা হাত ধুচ্ছে। দাদী পেছন থেকে বললো…

” আয়শা..। ”

” জ্বি? ”

” রান্না করা মায়ের থেকে শিখছো নাকি?”

” জ্বি না দাদী। আমার মা, ছয় বছর আগে মারা গেছেন। বুয়া রান্না করতো, মাঝে মাঝে একা একাই রান্না করার চেষ্টা করতাম, তখন খুব একটা ভালো হতো। এখন তো প্রতিদিনের কাজ হয়ে গেছে, তাই একটু-আধটু ভালো হয়।”

দাদী কিছুক্ষণ আয়শার মুখ পানে তাকিয়ে রইলো। আয়শা হালকা হেসে বললো..

” কি দেখছেন দাদী?”

দাদী শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন…

” নাছিমের বয়স যখন বারো বছর তখন আমার ছেলে আর বৌ-মা, গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মারা যায়। মারিয়া তখন খুব ছোট। আমি সন্তান হারালাম, আর বাচ্চা তিনটা অনাথ হয়ে গেলো।

বারো বছরে নাছিম কি আর বয়স ও নিজেকে ভাংতে দেয় নি। মনে মনে খুব কষ্ট পেতো জানতাম, রাতে যখন ঘুমাতো প্রায় কান্নার শব্দ পেতাম। আমি, মারিয়া, ফরিদ এক রুমে ঘুমাতাম, আর ও নিজের কান্না লুকানোর জন্য অন্য রুমে ঘুমাতো৷ ”

আয়শা হা করে দাদীর কথা শুনছে। দাদী আয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন..

” পিতা মাতার শোক কেমন আমি বুঝিরে। ”

আয়শার চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে এলো, নিজের মায়ের জন্য আর হয়তো নাছিমের জন্য। মা হারানোর কষ্ট আয়শা বেশ বুঝে, আয়শার তো বাবা নামক বট গাছটা আছে, যে আয়শাকে আশ্রয় দেবে, ছায়া দেবে, আয়শাকে আগলে রাখবে৷

আর নাছিমের? অবুঝ বয়সে বাবা মা কে হারিয়েছে। দাদী বলতে শুরু করলেন,

” ব্যাবসা সামলানোর মতো পরিস্থিতি আমার ছিলো না। আমার তখন একটা দ্বায়িত্ব ছিলো, তিনটা ছেলে মেয়েকে আমার মানুষ করতে হবে।
কোম্পানিটা বেঁচে দেই, ভালো এমাউন্টের টাকা আসে,তিন জনের নামে টাকা ভাগ করে, ব্যাংকে ডিপোজিট করে রেখে দেই। নাছিম লেখা পড়া শেষ করে, নিজের কোম্পানি গড়ে তোলে। সারা দিন অফিসে পড়ে থাকতো এমন কি রাতেও ঘুমাতো না ঠিক মতো৷ চার বছরের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পায় নাছিমের কোম্পানি। ”

আয়শা চুপ করে আছে। একটা বাইরে মেয়ে কে উনি নিজেদের পারিবারিক কথা বলছে কেনো? সেটাও আয়শার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে।



দক্ষিনা বাতাসে ওরিনের ঘরে পাতলা লাল রংয়ের পর্দা গুলো উড়ছে। ওরিন উবু হয়ে বই পড়ছে, বাতাসের কারনে বইয়েরে পৃষ্ঠা গুলো এলো মেলো হয়ে যাচ্ছে। ওরিন একটা বুক মেট রাখলো বইটার ওপর।

আয়শা আপু নেই, বাসাটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আয়শা আপু বাসায় থাকলে এই সময়টা নিশ্চয়ই আর সাথে আড্ডা দিতো পাশাপাশি কফিও খাওয়া যেতো। ওরিন ফোনটা হাতে নিলো, আয়শা আপুকে একটা ফোন করা যাক।

ফোন দিতে গিয়েও ওরিন কেটে দিলো, আয়শা যদি ব্যাস্ত থাকে, সেটা ভেবে। ফোন টা রেখে ওরিন জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো। বাতাসের সাথে পুর্তুলিকা ফুলের ডাল গুলো নড়ছে।

তিন দিন ধরে কলেজের ক্যাম্পাস টাও ফাঁকা ফাঁকা লাগে। পরিচিত সেই সিনিয়ার ছেলেটাকে তিন দিন ধরে দেখা যাচ্ছে না। আজ, ক্লাস শেষে ফরিদের বন্ধুরা কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো, ওরিনে ইচ্ছে করছিলো গিয়ে একবার ফরিদের কথা জিজ্ঞেস করতে। কিছু সংকোচ ওরিন কে বাঁধা দিয়ে রাখে।

ওরিন বই টা বন্ধ করে, চোখ বুজে শুয়ে রইলো। তার বড্ড শান্তির প্রয়োজন। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় ভাবনা কেন বার বার তার মনে আসছে?

——————————-

কিছুক্ষণ পরেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। সবাই সাজ গোছ করতে ব্যাস্ত। আয়শা গত কালের ছবি গুলো চেক করছিলো, আর দাদীর কথা গুলো ভাবছিলো।

ঠিক তখনি মারিয়া দরজায় শব্দ করে বললো,

” আসতে পারি?”

” হ্যাঁ। অবশ্যই। ”

মারিয়া রুমে এসে গাল ভর্তি হাসি দিয়ে বললো..

” আয়শা ইভিনিং হলুদে সবাই সেম ড্রেস পড়বে তুমিও এই ড্রেস টা পড়লে আমি খুশি হবো। ”

” আমি তো শুধু ছবি তুলবো। সেম ড্রেস পড়া বা আলাদা পড়া কোন ম্যাটার না৷ ”

” আই নো আয়শা। সবার সাথে মেচিং পড়বে। প্লিজ না করো না। ”

” আচ্ছা আচ্ছা পড়বো। কুল। ”

” হুম। পার্লার থেকে লোক এসেছে, আমি এখন যাই। ”

বলেই মারিয়া চলে গেলো। মারিয়ার দেওয়া ড্রেস টা আয়শা দেখলো। হলুদ গোল্ডেন খুব সুন্দর একটা জামা সাথে খয়েরী পাজামা এবং ওরনা।

সন্ধ্যা হতেই আয়শা ও রেডি হলো। জামা টায় বেশ মানিয়েছে তাকে। আয়শা হালকা পাউডার দিয়ে টাচআপ করে নিলো, সাথে খয়েরী লিপস্টিক এবং টানা করে আই-লাইনার পড়লো। আয়শা ক্যামেরা সহ জিনিস পত্র নিয়ে রুম থেকে বের হলো।

সবাই এক সাথে পার্টি হলে যাওয়ার জন্য রওনা হলো। নাছিম, আয়শা, মারিয়া, ফরিদ এবং কয়েক জন কাজিন এক গাড়িতে উঠলো। নাছিম ড্রাইভ করছে পাশেই আয়শা বসে আছে।

মারিয়া আয়শার উদ্দেশ্য বললো,

” আয়শা তোমায় ভারী মিষ্টি লাগছে। ”

নাছিম এক নজর আয়শার দিকে, তাকিয়ে আবার ড্রাইভিংয়ে মন দিলো। নাছিমের আয়শার দিকে চাহুনি দেখে মারিয়া মুখ টিপে হাসলো।

এক সময় সবাই হলে চলে এলো, আগে থেকেই তুষার মারিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। মারিয়া আসতেই তুষার মারিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। এর ফাঁকেই আয়শা কত গুলো ছবি তুলে নিলো। মারিয়া- তুষারের বন্ডিং টা আয়শার ভীষণ ভালো লাগছে৷

কি সুইট জুটিটা , আয়শা দাঁড়িয়ে দেখছিলো। নাছিম আয়শার পেছনে দাঁড়িয়ে বললো..

” মিস আয়শা। আপনার সাথে কথা আছে। ”

” কি কথা স্যার? ”

” ও দিকে আসুন। ”

বলেই নাছিম চলে গেলো। আয়শা নাছিমের পিছু পিছু হাটছে। কয়েক টা ছেলে আয়শার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়শা একটু অবাক হলো। একটু দূরে যেতেই নাছিম আয়শা কে নিজের কাছে নিয়ে এলো।

নাছিমের কান্ড দেখে আয়শা অবাক হয়ে গেলো। তার চোখ দুটো গোল হয়ে আছে। আয়শার চুলের হাত নাড়িয়ে বিনুনি টা খুলে দিলো। আবদ্ধ চুল গুলো খুলতেই সেই অন্যরকম ঘ্রান টা নাছিমের নাকে এলো। আয়শা এখনো অবাক হয়ে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। নাছিম আয়শার চুল গুলো, পিঠে মেলে দিয়ে বললো..

” চুল বাঁধবেন না? ”

আয়শা অবাক হয়ে বললো,
“কেনো স্যার?”

” সেটা পরেই বুঝতে পারবেন। ”

আয়শা ওখান থেকে চলে এলো। স্টেজের কাছে চলে এলো, আরো ছবি তুললো। আয়শা নাছিমের কথা মতোই চুল বাঁধলো না। অনুষ্ঠান শেষ হবার পর আয়শা রুমে চলে এলো।

ফ্রেশ হয়ে, আয়নার সামনে চুল খোঁপা করতে গিয়েই আয়শা খেয়াল করলো জামার পেছনের চেইন টা নষ্ট হয়ে গেছে, পিঠের অংশ দেখা যাচ্ছে।

আয়শা এবার বুঝতে পারলো নাছিম কেনো তার চুল খুলে দিয়ে ছিলো। আয়শার ব্যাপার টা অদ্ভুত লাগছে তবে, নাছিমের কথা ভাবতেই কেন যেন ভালো লাগছে তার…

আয়শা রুমে এসে শুয়ে পড়লো, ক্লান্তিতে রাজ্যের ঘুমে পারি জমালো।

পর দিন সকালে আয়শার ঘুম ভাংলো নাছিমের ডাকে। রুমের বাইরে থেকে নাছিম দরজায় নক করছে। আয়শা হাই মেরে চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলেই অবাক হলো। কারন..

।#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ–১৮

দরজার খট খট শব্দ হচ্ছে। জানালার আকাশী রঙের পর্দার ফাঁকে ফাঁকে রোদ আসছে।
খট খটানির শব্দে আয়শা নড়ে চড়ে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো আটটা পঁচিশ বাজে। আয়শা শব্দ করে বললো..

” কে? ”

” মিস,আয়শা আমি?”

আয়শা চোখ ডলতে ডলতে বললো..

” আমি কে? আপনার নাম নাই?”

নাছিম দাঁত চেপে বললো,
“মিস, আয়শা! আমি নাছিম।”

আয়শা দ্রুত উঠে দরজা খুলে দিলো..
” স্যার আপনি? এতো সকালে?”

” হ্যাঁ। আব এই শাড়ি টা আপনার জন্য। ”

আয়শা হাসি হাসি মুখ করে বললো…
” দাদী পাঠিয়েছে নিশ্চয়ই?”

” না। দাদীর বড় নাতী নিজে কিনেছে?”

” কিন্তু কেনো?”

” আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই। আচ্ছা আপনার মাথায় এক ঝুড়ি প্রশ্ন ছাড়া আর কিছু নেই?”

” আমার কি জানতে ইচ্ছে হয় না, আমার বস কেনো আমায় শাড়ি দিলো?”

” কোন কারণ নেই। শাড়ি টা ভালো লেগেছে তাই কিনেছি। ”

” বুঝলাম কিন্তু আমাকে দিচ্ছেন কেনো? আপনার বান্ধবি অথবা কাজিন কে ও তো দিতে পারতেন। আমকে কেনো…।”

নাছিম গম্ভীর ভাব নিয়ে বললো..

” ঠিক আছে আপনার শাড়ি পড়তে হবে না। ”

বলেই নাছিম বের হতে যাবে ঠিক তখনি আয়শা পেকেট টা ধরে বললো…

“এটা আমার শাড়ি, দিয়ে আবার নিয়ে যাচ্ছেন কেনো?”

” প্রশ্ন করে করে তো মাথা খেয়ে দিচ্ছেন। ”

” কিহ? মাথা কি খাওয়ার জিনিস? ”

” স্টপ ইট! দুপুরে এই শাড়িটা পড়বেন। মনে থাকে যেনো।”

” আচ্ছা, পড়বো। এজন্য আবার আমার পেমেন্টের টাকা কাটবেন না তো?”

নাছিম স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে। এই এলিয়েন মেয়েটা যে আজব প্রশ্ন করে নাছিম নিজেই তব্দা হয়ে যায়।

” কি হলো স্যার? ”

” না কাটা হবে না। খুশি। ”

আয়শা ফিক করে হাসি দিয়ে বললো..

” হ্যাঁ। ”

নাছিম রুম থেকে বেরিয়ে এলো , নিজের অজান্তেই নাছিম হাসলো৷ বিড় বিড় করে বললো ‘এলিয়েন একটা।’



আয়শা একটু আগে আগেই রেডি হয়ে নিলো। এমনিতেই সে ঠিক মতো শাড়ি পড়তে পারে না। ইউটিউব দেখে, বেশ সময় লাগিয়ে শাড়ি পড়লো। শাড়ির পিছনে পিন আটকাতে পারছে না। আয়শা কোন রকমে পিন আটকালো।

হালকা সাজ গোছ করলো। চুল গুলো কাঁটা দিয়ে অর্ধেক বেধে রাখলো, বাকি চুল গুলো পেছনে ছেড়ে দিলো। আগে শাড়ি পড়বে জানলে কিছু এন্টিক গয়না আনা যেতো। গলায় পাতলা চেইন এবং কানে সাদা পাথরের ঝুমকো পরলো। কাজলে আয়শার সবসময় এলার্জি তাই টানা করে আইলাইনার পড়লো, সাথে গোলাপি লিপস্টিক।

আয়শা রেডি হয়ে মারিয়ার রুমে গেলো ক্যামেরা নিয়ে। শাড়ি পড়ে ছবি তোলাটা বেশ মুশকিল। শাড়ি, গহনার ভিডিও নিলো, মারিয়া রেডি হবার পর আয়শা কে দেখে হালকা হেসে বললো…

” বাহ বাহ আয়শা তোমায় দারুণ লাগছে। ”

আয়শা ছবি তুলতে তুলতে বললো..

” আমায় ছাড়ো তোমাকে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। তোমার বর চোখ ফেরাতে পারবে না। ”

বলেই আয়শা আবারো হাসি দিলো। আয়শার কথা শুনে মারিয়া মাথা নিচু করে লজ্জা লজ্জা হাসি দিচ্ছে। আয়শা আবারো বললো…

” আমার ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসো। ”

মারিয়া আবারো হাসলো, সেই সুযোগে আয়শা আরো কয়েটা ছবি তুলে নিলো৷ আয়শা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছবি গুলো চেক করছিলো, ঠিক তখনি নাছিম রুমে এলো।

সবার উদ্দেশ্য বললো..

” গাড়ি রেডি, কিছুক্ষণের মধ্যেই বের…

নাছিম আয়শার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়ে আয়শা নাছিমের দিকে তাকালো। নাছিম আকাশীরংয়ের পাঞ্জাবি পড়েছে, চুল গুলো জেল দিয়ে স্পাইক করা। কয়েক চুল কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সাথে লেপ্টে আছে।

মারিয়া উহু উহু করে শব্দ করে কৃত্রিম কাঁশি দিলো। মনে মনে হাসি দিয়ে বললো ‘ বিয়ে আমার আর শুভ দৃষ্টি হচ্ছে এদের। আবার ম্যাচিং করে দু জন আকাশীরং পড়েছে ‘ মারিয়া মুখ টিপে হাসি দয়ে বললো…

” ভাইয়া তুমি কি যেনো বলছিলে?”

” কি বলছিলাম? ”

” ভুলে গেলে? বাইরে না গাড়ি রেডি? ”

” ওহ, হ্যাঁ। আমাদের বেরোতে হবে এখন। ”

” আমরা রেডি চলো। ”

বলেই মারিয়া, আয়শা এবং কয়েক জন কাজিন বেড়িয়ে গেলো। কাজিন দের মধ্য এক জন ফিস ফিস করে বললো…

” নাছিম ভাইয়া কে জাস্ট জোস লাগছে… ”

আয়শা মেয়েটার দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাটা শুরু করলো। নাছিম আগে আগে বেড়িয়ে গেছে। আয়শা, মারিয়া, এবং আরো বেশ কয়েক জন কাজিন দুপুর দুইটায় পৌছালো৷

আয়শা ক্যামেরা স্টেম্পে সেট করছে ঠিক তখনি নাছিম আয়শার কাছে এসে দুটো সাদা গোলাপ কানে গুঁজে দিলো। নাছিমের আচমকা এই কান্ডে আয়শা হা করে তাকিয়ে রইলো। ফুল দুটো আয়শার কানের পিঠে ঠিক মতো গুঁজে দিয়ে বললো…

” এভাবে হা করে থাকবেন না প্লিজ। মাছি, মশা ঢুকে যেতে পারে৷ ”

আয়শা চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে। নাছিমের কথা শুনে। নাছিম হালকা হেসে সরে গেলো।

_______________________

” আর কতক্ষণ হাটবো ওরিন? ক্ষুধায় পেট জ্বলছে আমার।”

ওরিন হাটতে হাটতে বললো…
” তনু রে আমারো বড্ড ক্ষুধা লেগেছে। এই ভাবে ধীরে হাটতে থাকলে সারা দিনেও রিক্সা পাবো না। দ্রুতো পা চালা। ”

তনু রুগ্ন মুখ করে বললো..

” বাল! আশে পাশে একটা খাবারের দোকান ও নাই। সব কচু!”

” আইডিয়া! ”

” কি হলো?”

” ওই দেখ একটা কমিউনিটি হল, অনুষ্ঠান হচ্ছে মনে হয়!”

তনু মাথা ডলতে ডলতে বললো…

” তো? আমাদের কি?”

ওরিন দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো,

“আমাদেরই তো সব। চারিদিকে টং দোকান ছাড়া আর কোন খাবারের দোকান নেই, যা বুঝতে পারছি এতো সহজে রিক্সাও পাবো না। ”

তনু হতাশা মুখ নিয়ে বললো…

” এখন উপায়?”

” আমাদের পোশাক, মার্জিত আছে। টিস্যু দিয়ে ঘামটা মুছে নে। আর লিপ্টিক লাগা? ”

” কিন্তু কেনো?”

ওরিন বিরক্তি নিয়ে বললো…

” উফ! গাঁধী বুঝতে পারছিস না। আমরা ওই কমিউনিটি হলে যাবো। মোরগ পোলাও, চিকেন ফ্রাই, জর্দা বোরহানি আর এসির বাতাস খেয়ে চলে আসবো। ”

” এ্যা এ্যাহ? ”

” হ্যাঁ। ”

তনু চিন্তা চিন্তা মুখ করে বললো..
” ফেঁসে যাবো না তো?”

ওরিন ভাব দেখিয়ে বললো,

” নো চান্স। কেউ চিনবে না।”

তনু ওরিনের হাত ধরে বললো..
” আমার টেনশন হচ্ছে রে..।”

” ধুর! তুই যাবি কি না বল। ”

” যাবো দোস্ত। ”

ওরিন এবং তনু চুল ঠিক করে নিলো, দুজনি লিপস্টিক লাগিয়ে ভাব নিয়ে কমিউনিটি হলে ঢুকলো। তনু ওরিনের হাত ধরে আছে৷

ওরিন ফিস ফিস করে তনুর কানে কানে বললো…

” দোস্ত হাতটা ছাড়। আর এতো নার্ভাস ফিল করিস না। কাম ডাউন! ”

তনু টিস্যু দিয়ে,ঘাম মুছতে মুছতে বললো..

” এমন করিস কেন দোস্ত?”

” উফ, তনু!”

ওরিন চোখ গরম করে তাকালো। তনু ওরিনের হাতটা ছেড়ে দিলো। ওরিন ইশারা করে বললো…

” ও দিক টায় গিয়ে বসি চল।”

তনু একটা ঢোক গিলে, ওরিনের পিছনে পিছনে হাটা শুরু করলো। দুজনের গিয়ে একটা টেবিলের কর্নারে বসলো৷ ওরিন ওয়েটার কে ডাক দিয়ে বললো…

” এক্সকিউজ মি। ”

” ইয়েস ম্যাম। ”

” আমাদের দুজন কে গরম খাবার সার্ভ করেন৷ ”

ওয়েটার কিছুক্ষন পর খাবার নিয়ে এলো। খাবার মুখে দিয়েই ওরিন বললো…

” এটা কি খাবার এনেছেন? ঠান্ডা খাবার। ”

তনু ওরিনের হাত চেপে ধরে বললো…
” দোস্ত রিয়েক্ট করিস না৷ মানুষ দেখছে। ”

” দেখুক। আর হ্যাঁ আপনাকে আমি গরম খাবার আনতে বলেছিলাম। এই ভাবে গেস্ট দের সার্ভ করেন? ”

” সরি। ম্যাম আমি ঠিক খেয়াল করি নি। ”

” ঠিক আছে। আবার খাবার আনুন? ”

ওরিন রাগে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। অচেনা কেউ পেছন থেকে বললো..

” আপনারা বর পক্ষ নাকি কনে পক্ষ?”

ওরিন না দেখেই বললো…

” আমরা কনে পক্ষ৷ ”

বলেই ওরিন তাকিয়ে চারশো বিশ বোল্টের ঝটকা খেলো। কারন…



চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here