#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ– ০২
মনের ভেতর, চাপা সন্দেহ নিয়ে, কাঁপা কাঁপা হাতে ফাইল টা এগিয়ে দিলো। নাছিম কলম। নাড়ছে, আর মন দিয়ে আয়শার ফাইল দেখছে। আয়শা প্রচুর ঘামছে, সাথে তার হাতের তালুও ঘেমে অনেকটা চিটচিটে হয়ে গেছে। ছোট বেলা থেকেই আয়শা বেশি টেনশনে থাকলে, তার নাকের মাথা এবং হাতের তালু ঘামে।
আয়শা দু হাত নিচু করে ঘষছে। নাছিম কিছুক্ষণ ফাইলটা পড়ার পর। চশমা নাড়িয়ে বললো..
” মিস আয়শা, আপনার এসএসসি, এইচএসসি সি তে নম্বর ভালো না। ভার্সিটির প্রথম ইয়ারে, দুই বিষয়ে ফেল করেছেন। এডুকেশন কোয়ালিটি খুব খারাপ।
ছবি গুলো ভালো, কিন্তু এডুকেশনাল কোয়ালিটি টাও তো ইম্পর্ট্যান্ট। ”
আয়শা লজ্জয় মাথা নিচু করে আছে। প্রথমেই নাছিমের সাথে উলটো পালটা ব্যাবহার করেছে, চাকরিটা মনে হয় আর হবে, না। হবার কথাও না। এতো অকাজ করলে উনি কেন কোন ব্রেন্ডের মালিকই তাকে চাকরি দেবে না। ফেইলের জন্য আয়শার মন খারাপ হচ্ছে না, মন খারাপ হচ্ছে সে চাকরি টা পাবে না। আয়শার চাকরিটা খুব যে দরকার।
অগত্যা আয়শা মাথা নিচু করে বসে রইলো। নাছিম ফাইল দেখার ফাঁকে আয়শা কে আর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। উজ্জ্বল শ্যামলা গড়নের মেয়ে, হালকা হলুদ-গোলাপি রংয়ের কুরতি, পড়ায় গায়ের রংয়ের সাথে শোভা পাচ্ছে। পাতলা, ধূসর গোলাপি ঠোঁট গোল গাল শ্যামবর্ণ চেহারায়, আলাদা মোহ আছে। মেয়েটার চঞ্চল চাহুনি অন্যরকম । নাছিম আয়শার থেকে চোখ সরিয়ে আবারো ফাইল দেখায় মন দিলো।
শেষের কয়েক টা পাতায় ছবি প্রিন্ট আউট করা। একটা পথিক শিশুর হাতে বিভিন্ন রংয়ের বেলুন নিয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আরেক টা ছবিতে, বৃদ্ধ স্বামী- স্ত্রী হাত ধরা ধরি করে নদীর কাছে বসে আছে। নাছিম আরও কয়েক টা ছবি দেখলো, অসাধারণ নিখুঁত ভাবে তোলা, ইউনিক সব গুলো ছবি।
” ছবি গুলো ভালো। ”
” ধন্যবাদ স্যার। ”
” আমাদের হাতে আর ও ভালো ফটো গ্রাফার আছে। হাই এডুকেটড। কর্নফরম করতে পারছি না, ম্যানেজার সাহেব আপনাকে জানিয়ে দিবেন। ”
নাছিম, আয়শার কাছে ফাইল গুলো দিয়ে দিলো। আয়শা ফাইল গুলো গুছিয়ে নিলো। আয়শা নাছিমের চেম্বার থেকে বের হয়ে এলো। আয়শার যাওয়া পর্যন্ত নাছিম আয়শা কে আর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলো। আয়শা বের হবার পর নাছিম ম্যানেজার কে ডাক দিলো। ম্যানেজার এসে গেট নক করতেই নাছিম ভেতরে আসাতে বললো…
ম্যানেজার সাহেবের উদ্দেশ্য নাছিম বললো…
“কিছুক্ষণ আগে যে মেয়েটা গেলো। ”
” স্যার মেয়েটা ইন্টারভিউতে রিজেক্ট তাই তো?”
নাছিম গম্ভির গলায় বললো…
” না। আগামীকাল, ওর জয়েন লেটার পাঠিয়ে দাও। ”
ম্যানেজার অবাক হয়ে কিছুক্ষণ পর্যন্ত নাছিম কে দেখলো। মেয়েটা এতো কথা শোনালো, তবুও স্যার চাকরি দিচ্ছে। মেয়েটা কে স্যার জব্দ করবে, সেটা ভেবেই ম্যানেজারের আয়শার জন্য বড্ড আফসোস হলো। নাছিম থুতনি চুলকিয়ে ভাবুক গলায় বললো…
” মেয়েটার ডিটেইলস, আমার চাই। ”
” ওকে স্যার। আগামি কাল পেয়ে জবাবেন। ”
” না। আজই চাই আমার সন্ধ্যায়, আমায় ফোন কলে জানিয়ে দিবেন। ”
” আচ্ছা। স্যার। ”
ম্যানেজার চলে গেলো। নাছিম চেয়ার থেকে উঠে ব্যাস্ত শহরের দিকে ক্ষানিক ক্ষন তাকিয়ে রইলো…
।
।
চারিদিকে ঝুম ঝুম বৃষ্টি পড়ছে,ছাতা হাতে কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ওরিন। প্রায় এক ঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছে, রিক্সার কোন নাম গন্ধ ও নেই। রিক্সার খোঁজে ওরিন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বৃষ্টির কারনে, কেউ রাস্তার আশে পাশে ও নেই…
হঠাৎ ওরিনের সামনে দিয়ে, লাল রংয়ের একটা গাড়ি দ্রুত চলে গেলো। গাড়িটা যাওয়ার আগে ওরিনের আপাদমস্তক ভিজিয়ে দিয়ে গেলো। রাগে ওরিন দাঁত কির মির করে, উঠলো। ওরিন চিতকার দিয়ে বললো…
” এই কানা, চোখে দেখিস না নাকি? কোথায় পালাচ্ছিস…”
গাড়ির ভেতরে থাকা, মানুষ টি শুনতে পেলো, কি না। জানা গেলো না। কিছু দূর যেতেই গাড়িটা থেমে গেলো। ওরিন সে দিকে পাত্তা দিলো না, এই ভারি বর্ষনের সময় তার এখন বাসায় পৌছানো দরকার। গাড়ি থেকে একটা ছেলে, ওরিন কে উঁকি মেরে দেখলো। ছেলেটা গাড়ি পিছিয়ে আবার ও ওরিনের গাঁ ভিজিয়ে দিলো।
ওরিন এবার আকাশ সমান রাগ নিয়ে, বললো…
” তুই কে রে। গাড়ি থেকে বের হয়। মাতাল হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিস। ”
গাড়িতে বসা ছেলেটা ওরিন কে ভিজিয়ে, ওরিনের রাগ দেখে মজা পেলেও মাতাল শব্দটা শুনে, খুব ইগোতে লাগলো। ছেলেটা গাড়ি থেকে বের হলো। গাড় নীল রংয়ের জেকেট, ধূসর জিন্স পেন্ট, চুল গুলো জেল দিয়ে স্পাইক করা, ২৪-২৫ বছরের একটা ছেলে। ওরিন ছেলেটার কাছে গিয়ে, কড়া গলায় বললো…
” রাস্তার ময়লা দিয়ে আমাকে ভিজিয়ে দিলেন কেনো? ”
” রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেনো?”
” সেই কৈফিয়ত আপনাকে কেনো দিবো?”
” তাহলে দাঁড়িয়ে থাকুন আরেক বার ভিজাই। ”
” আমি রাস্তার সাইডে দাড়িয়ে ছিলাম আপনি ইচ্ছা করে ভিজিয়েছেন। ”
” বেশ করেছি, ভিজিয়েছি। কি কি করবেন আপনি?”
” দেখতে থাকুন কি করি। ”
বলেই ওরিন রাস্তার পাশে রাখা পরিত্যক্ত ভাঙ্গা ইট গাড়ির পেছনে ছুড়ে মারলো। ততক্ষণে গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে গেলো। ওরিন সয়তানি হাসি দিয়ে বললো..
” দেখেছেন। কি করেছি?”
” ইউ..ড্যাম গার্ল. ”
” আপনি, একবার আমায় ভিজিয়েছেন। কিছু বলি নি ইচ্ছা করে দ্বিতীয় বার ভিজিয়েছেন৷ সরি না বলে গলা বাজি করছেন। তার ছোট্ট শাস্তি। ”
বলেই ঠোঁট টেনে হেসে, হাটা শুরু করলো ওরিন। ছেলেটা রাগে হাত মুঠো করে দাড়িয়ে রইলো।
” এই মেয়েটা তো ফার্স্ট ইয়ারে পরে।নাম ওরিন, কেমিস্ট্রির খুব ভালো স্টুডেন্ট। ”
ফরিদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো..
” আমাদের কলেজের জুনিয়র স্টুডেন্ট। সিনিয়ারের সাথে বেয়াদবি করে চলে গেলো৷ ”
” বেয়াদবি করলো কই। তুই তো ইচ্ছা করে নোংরা পানি দিয়ে গা ভিজিয়ে দিলি।”
ফরিদ বাধনের দিকে, চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো…
“তুই কি মেয়েটার দল নিচ্ছিস। ”
” নাহ৷ চল গাড়িতে উঠি। ”
ফরিদ রাগে কট মট করে, গাড়ি চালাতে শুরু করলো। মেয়েটার কি সাহস তার গাড়ির কাঁচ ফাটিয়ে ফেললো। ছারবে না ফরিদ, এর শোধ নেবেই৷ বাধন বললো…
” কি করছিস দোস্ত। আস্তে গাড়ি ড্রাইভ কর.. ”
ফরিদ গাড়ি ড্রাইভিং করতে করতে বললো…
” এভাবেই চলবে। তুই থাক না হলে গাড়ি থেকে নেমে যা। ”
ফরিদের ধমক খেয়ে, বাধন চুপ করে রইলো।
–
–
কলিং বেলের শব্দ পেয়ে আয়শা উঠে দাড়ালো। দ্রুত দরজা খুলতেই আয়শা কিছুটা অবাক হয়ে গেলো। ওরিন কাঁদা মাখা গায়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আয়শা ওরিন কে দেখে মুখ চেপে হাসলো। ওরিন ক্লান্ত সুরে বললো…
” আসবি না তো আপু? ”
আয়শা আওয়াজ করে হেসে বললো…
” এই অবস্থা হলো কিভাবে..?”
“আর বলো না আপু, একটা ছেলে ইচ্ছা করে ভিজিয়ে দিয়েছে। জেদ করে আমি কি করেছি জানিস?”
আয়শা মাথা দুলিয়ে বললো..
” কি করেছিস তুই?”
” ইট নিক্ষেপ করে, গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে দিয়েছি। ”
আয়শা হাসতে হাসতে বললো..” প্রাউড অফ ইউ মাই লিটেল, সিস্টার ঠিক করেছিস একদম। ”
ওরিন প্রাউড ফিল নিয়ে রুমে, যেতে নিলো, ঠিক তখননি আফজাল সাহেব এসে বললেন…
” কি হয়েছে? হাসাহাসি করছো দুজনে..”
“তোমার মেয়ে, এক পাজি ছেলের গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে দিয়েছে।”
“বেশ করেছে। উত্তম প্রতিবাদ।”
বলেই হালকা হেসে ওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
________
সন্ধ্যা বেলা এক কাপ কফি নিয়ে, নাছিম সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে ঠিক তখনি, নাছিমের ফোন টা বেজে উঠলো। নাছিম ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়েই ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বললো…
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ- ০৩
কমলা রংয়ের গোধূলির শেষে সন্ধ্যা নামলো। চারিদিকে কালো আভা ছড়িয়ে পরছে। রুম টায় আধো অন্ধকার ছেঁয়ে যাচ্ছে। এক কাপ কফি নিয়ে, নাছিম সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে ঠিক তখনি, নাছিমের ফোন টা বেজে উঠলো। নাছিম ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে, ফোনটা রিসিভ করলো…
” হ্যালো! ”
” হ্যালো স্যার! মেয়েটার সব ইনফরমেশন পেয়েছি? ”
” ওহ। হ্যাঁ বলুন। ”
“স্যার মেয়েটা শাহাবাগ থাকে, মা তিন বছর আগে মারা গেছে। বাবা রিটায়ার্ড কৃষি অফিসার। ছোট বোন আজিজুল হক কলেজে ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বছরে পরে। আয়শা মেয়েটা অনার্স প্রথম বছরে দু সাব্জেক্টে ফেল করার পর আর পরে নি। ছবি তোলার তীব্র ইচ্ছায় ফটোগ্রাফি প্রফেশনে আসে। আর দারুণ ছবি তোলে। ”
” আচ্ছা। জয়েনিং লেটার পাঠিয়েছেন। ”
” জ্বি স্যার। আগামী মাসে..”
” না। আমাদের ফ্যাশন কনসেপ্ট আছে। আগামী মাসে নয়, কাল সকাল দশ টায় জয়েন। বলে দিন। ”
” আচ্ছা স্যার। কিন্তু ওর স্যালারি? ”
” ফুল মান্থর স্যালারি পাবে। ”
“ওকে স্যার। ”
নাছিম ফোনটা কেটে রেখে, আবারও ল্যাপ্টপের স্ক্রিনে মনোযোগ দিলো। ঠিক তখনই কেউ পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলো। নাছিমের পিছনে দাঁড়িয়ে রইলো। নাছিম হালকা হেসে বললো, মারিয়া..
মারিয়া মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো..
” ভাইয়া তুমি সব সময় বুঝে যাও কি ভাবে যে আমি এসেছি। ”
” আমার চেয়ে বেটার আমার বোন কে আর কে বুঝে? ”
মারিয়া হালকা হেসে বললো…
” আমার কেউট ভাইটা। ”
” এখন বল কি চাই তোর?”
মারিয়া অবাক হয়ে বললো। ” কি চাই মানে? তুমি কি এটাও বুঝে গেছো, আমার কিছু চাই?”
নাছিম ল্যাপটপ স্ক্রিন থেকে মাথা উঠিয়ে, হালকা হেসে বললো…
” তুই অকারণে আমার রুমে আসিস না। যত বার আসেছিস কিছু না কিছু আবদার করতেই৷ ”
মারিয়া মাথা নিচু করে, লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো…
” আমি কারো প্রেমে পড়েছি ভাইয়া। ”
নাছিম অবাক হয়ে, বললো..
” কার? কে সে? কত দিন ধরে চলছে? ”
” আমরা দুজন একই ভার্সিটিতে পড়তাম। স্টাডি শেষে সে এখন, তার বাবার বিজনেসে জয়েন করেছে।”
“বাহ৷ নাম কি ছেলের?”
” তুষার আবসার। ”
” আরফান আবসারের ছেলে।”
মারিয়া, মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো।
” ওকে তো আমি চিনি। একটা পার্টিতে পরিচিত হয়ে ছিলাম। ছেলেটা বেশ বিনয়ী, ব্যাক্তিত্ববান। ”
” ভাইয়া আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি। আগামীকাল, ওর বাবা বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে, প্লিজ না করো না। রাজি হয়ে যাও ভাইয়া৷”
নাছিম মারিয়ার কাঁধে হাত দিয়ে বললো…
“দুজন দুজন কে ভালোবাসিস। ছেলে ভালো। আমি না করবো কেনো। তোর খুশিতেই আমার খুশি।”
বলেই নাছিম মিষ্টি হাসলো। মারিয়া ও বড় ভাইকে খুশিতে জরিয়ে ধরলো।
” এখনি খবর টা ফরিদ ভাইয়া কে দিয়ে আসি৷ ”
নাছিম বললো..” বাদর টা কোথায় রে…”
” ফরিদ বাদর টা মনে হয় রুমেই আছে। ”
বলেই মারিয়া খি খি করে হেসে দিলো। মারিয়া ধীর পায়ে, ফরিদের রুমের কাছে আসলো। দরজা আটকানো। মারিয়া দু তিন টা ডাক দিলো, ফরিদ এসে, বিরক্ত মুখে দরজা খুলে দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। ফরিদের, বিরক্ত, আর গোমড়া ভাবটায় মারিয়ার অবাক হলো।
তার জানা মতে তার ছোট ভাইয়া ফরিদ, একজন হাসি-খুশি বেখেয়ালি মানুষ। যে সারা দিন বাউন্ডুলের মতো বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে৷ মারিয়া, ফরিদের ঘরে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের চেয়ার টেনে বসে বললো…
” ছোট ভাইয়া। তোমার মন খারাপ?”
” আর বলিস না। রাস্তায় একটা ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে, আমার গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে দিয়েছে৷ ”
” নিশ্চয়ই তুমি কিছু করেছিলে মেয়েটাকে? ”
” হ্যাঁ। মজা করে ওকে ভিজিয়ে দিয়েছিলাম। ”
” আগেই বুঝেছিলাম। তুমি কিছু করে ছিলে, না হলে মেয়েটা শুধু শুধু তোমার গাড়ির কাঁচ ভাঙতে যাবার কেনো?”
ফরিদ সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো..
” তুই কি মেয়েটার পক্ষ নিচ্ছিস। নিজের ভাই কে ছেড়ে ? ”
মারিয়া মুখ টিপে হেসে বললো…
“আমি কারো পক্ষে কথা বলছিনা। তবে, কে আমার ভাই কে জব্দ করলো, তাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে।”
বলেই মারিয়া ফিক করে হেসে দিলো।
” পিচ্চি মেয়ে, দ্বারা দেখাচ্ছি তোকে…
বলেই ফরিদ মারিয়াকে ধরতে যাচ্ছিলো, তার আগেই মারিয়া ফটা ফট ছোট ভাইয়ার রুম থেকে ভো করে দৌড় দিলো মারিয়া৷
বাইরে কলিং বেলের শব্দ পেয়ে, আয়শা দরজা খুলে দেয়ার জন্য উঠে দাড়ালো। দরজা খুলতেই আয়শা অবাক হলো। তার নামে পার্সেল এসেছে। আয়শা ভেতরে এসে, খামটা খুলে চিঠি পড়লো।
কয়েক মূহুর্তেই আয়শার মুখে হাসি ফুটে উঠলো, নাছিম ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড থেকে আয়শার জন্য, জয়েনিং লেটার এসেছে। এবং আগামীকালই আয়শার জয়েন।
আয়শা খুশিতে আত্নহারা হয়ে, বাবা কে ডাক দিলো। আফজাল খান মেয়ের চেঁচামেচি শুনে বের হলো। আয়শা বাবা কে জরিয়ে ধরে বললো…
” বাবা আমি চাকরিটা পেয়েছি।”
আফজাল সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ওরিন রুম থেকে বেরিয়ে বাবার উদ্দেশ্য বললো…
” খালি বড় মেয়েকে ভালোবাসো। ”
আফজাল সাহেব, বললেন।
” আমার দু মেয়েইতো আমার সব। তোদের জন্যই বেঁচে আছি রে মা। ”
” তুমি ছাড়াই বা আমাদের কে আছে, বাবা? ”
বলেই দুই মেয়ে গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো। মেয়েদের রাগ দেখে আফজাল সাহেব হাল্কা হাসলো। স্ত্রী চলে যাবার পর দু মেয়েকে আগলে রেখেছেন। কোন কিছুর খামতি রাখেন নি। মেয়েদের সব সময় ভালো মানুষ হবার অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছেন। স্নেহের কোনো খামতি রাখেন নি।
রাতে খাবার শেষে, আয়শা সব কিছু গুছিয়ে, ক্লান্ত শরীরে শুয়ে পরলো। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় ওরিন গুন গুনিয়ে পড়ছে। আয়শা গালে হাত দিয়ে বোনের পড়া শুনছে। ওরিন টা খুব মেধাবী, আয়শা ওরিনের মতো লেখা পড়া করলে, আরও এগুতে পারতো । কিন্তু আয়শার পড়াশোনা করতে একদম ভালো লাগে না। মাথা গিজ গিজ করে, ভাবতে ভাবতেই রুমের মৃদু আলোয় আয়শার চোখ ঘুমে তলিয়ে গেলো।
।
।
ভোরে প্রবল আলোয় আয়শার ঘুম ভাংলো। এদিকে ওদিক হাত বাড়িয়ে আয়শা ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো, ঘড়িতে সকাল ছয়টা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। আয়শা মাথায় কষিয়ে খোঁপা বেধে নিলো। রান্না ঘরে গিয়ে দু কাপ চা বসালো। চা শেষ হতেই আয়শা বারান্দায় গেলো। আফজাল সাহেব তাজবি পড়ছেন বসে বসে। আয়শা বাবার হাতে চা দিয়ে, নিজে চা খেলো।
চুলায় ভাত বসিয়ে ঘড়ের কাজ করা শুরু করলো। ঘড়িতে নয় না বাজতেই আয়শা দ্রুতো রেডি হতে,গেলো। বাসা থেকে বের হতেই এটা রিক্সা দেখতে পেয়ে, আয়শা অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। রাস্তায় ঘটলো আরেক বিপত্তি। অনেক ক্ষন জ্যামে বসে থাকার পর আয়শা অফিসে পৌঁছালো। আয়শা অফিসে ঢুকতেই, মিলি নামের মেয়েটা বললো…
” প্রথম দিনই লেট করে আসলে? ”
” জ্যামে আটকা পড়েছিলাম। ”
“স্যার কিন্তু লেট করা পছন্দ করেন না। টাইম মত আসবে। ”
” হুম। ”
” তুমি আসলে, স্যার তোমাকে, যেতে বলেছেন। প্রথম দিন লেট করেছো স্যার যে কি করবেন..”
” কুল কুল ভয়ের কি আছে। আমি যাচ্ছি।”
আয়শা নাছিমের কেবিনের দিকে গেলো। আয়শা দরজা নক করবে তখন ঘটলো আরেক বিপত্তি…
।
।
চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই ❤