ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ৪+৫

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ০৪
.

“এখন কয়টা বাজে? ”

জোর পূর্বক মুখে হাসির রেখে টেনে, আয়শা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, ম্যানেজার স্যার কে বলল..

” স্যার দশ টা পঁচিশ। ”

” এতো লেইট করে এসেছেন, স্যার আপনার জন্য ওয়েট করছেন। অফিসের সি.ই.ও কে অপেক্ষা করা নো টা কি ঠিক?”

” আই এম সো সরি স্যার। মাঝ রাস্তায় জ্যামে আটকে পড়েছিলাম। ”

” ঠিক আছে। এই এক্সকিউজ স্যারের কাছে গিয়ে বলবেন না।”

“ওকে স্যার। ”

” এবার চলুন। ”

আয়শা ম্যানেজার স্যারের পিছু পিছু নাছিমের কেবিনের ঢুকলো। চেয়ারে দুজন ক্লাইন্ট বসে আছে, এক জন পুরুষ আরেক জন মহিলা, মেয়েটার বাদামি রংয়ের ঝাকড়া চুল, ফর্সা হাত দেখা যাচ্ছে,তবে চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। খুব সম্ভব ফরেনার হবে হয় তো!
নাছিম এক নজর আয়শার মুখ পানে তাকিয়ে আবার ক্লাইন্ট দের সাথে কথায় মনোযোগ দিলো।

আয়শা ফিসফিস করে ম্যানেজার কে বলল…

” স্যার এরা কারা?”

” এনারা, রাশিয়ান। কোম্পানির সাথে ডিল করবেন, সে বিষয়ে কথা হচ্ছে।”

” ওহহ।”

প্রায় আধা ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর, ওনারা চলে গেলেন। নাছিম চেয়ার এদিক ওদিক ঘুরাচ্ছে। আর হাতের আঙুল দিয়ে কলম, ঘুরাচ্ছে। আয়শা তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো নাছিমের দিকে, নাছিমের মধ্যে ‘কেডি পাঠাক’ কের মতো লাগছে কিছুটা।

ম্যানেজার সাহেব, নাছিমের উদ্দেশ্য বললো…

” স্যার ডিল টা কি, হবে? ”

” আই ডোন্ট নো। দুপুর দুই টার পর চিফ ডিজাইনারস, মডেলস, আর ফটোগ্রাফারের সাথে মিটিং হবে। ”

” ওকে স্যার। স্যার নতুন ফটোগ্রাফা কে, আপনি আসতে বলে ছিলেন..”

“সো মিস আয়শা। ”

” ইয়াহ স্যার। ”

” প্রথম দিন লেট..? ”

” একচুয়ালি স্যার, রাস্তায়…”

” লেট কেন হয়েছে জানতে ,চাই নি। অফিসে লেট আসা আমি এক দম পছন্দ করি না। আমি বার বার সুযোগ দিবো না। ”

আয়শা নিচু স্বরে বললো.. “ওকে স্যার। ”

নাছিম ম্যানেজারের উদ্দেশ্য বললো..

” ম্যানেজার সাহেব, সামনের, কেবিনটায় ওনার ডেক্সটপ দেখিয়ে দিন। ”

” ওকে স্যার.. ”

বলেই ম্যানেজার সাহেব, দরজা খুলে চলে গেলেন। আয়শাও পিছু পিছু গেলো। আয়শার জন্য বরাদ্দ ডেক্সটায় আয়শা বসলো। আয়শার স্বপ্ন পূরণে হলো। কতো দিনের স্বপ্ন ছিলো আয়শা, একটা নামী কোম্পানির ফটোগ্রাফার হবে। আজ আয়শার, ছোট বেলার শখ টাই আজ তার প্রফেশন হলো। ভাবতেই আয়শার ভালো লাগছে।

আয়শা, কাজের ফাঁকে এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ আয়শার চোখ গেলো নাছিমের কেবিনের দিকে। আয়শা আর নাছিম বরাবর বসে আছে, শুধু মাঝে দুটো সচ্ছ কাঁচের দেয়াল মাত্র। আয়শা কিছুটা আফসোস নিয়ে, বললো…

” হায় আল্লাহ! এই ডেঞ্জারাস খারুস টাকে আমার চোখের সামনেই বসতে হলো।”

” চেহারাটা মাশাল্লাহ কিন্তু একটু হাসে না কেনো? চেহারা দেখো যেনো, একটা হনুমান। ”

বলেই আয়শা নাছিমের দিকে তাকিয়ে, মুখ ভেংচি দিলো, ঠিক তখনই হঠাৎ নাছিমের চোখ আয়শার দিকে চলে গেলো, আয়শা ভেংচি দেওয়া দেখে, নিলো। আয়শা থতমত খেয়ে গেলো, নিজেকে স্বাভাবিক করে কম্পিউটারে মনোযোগ দিলো।

নাছিম থুতনি ঘসে মনে মনে, হাসলো। কতো বড় সাহস মেয়েটার আমার সামনে বসে আমাকেই ভেংচি কাটছে। মিস আয়শা, তোমাকে দৌড়ের ওপর রাখার ব্যাবস্থা করছি। জাস্ট ওয়েইট আন্ড সি।

———————————

রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে, ওরিন কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটু বাদের তার বান্ধবীরা আসবে, অপেক্ষায়। এর মধ্যেই একটা ছেলে ওরিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। সাদা গেঞ্জি ওপর দিয়ে ব্রাউন রংয়ের জেকেট পড়া, হাতে দামি ঘড়ি। পোশাক, রুচি দেখেই মনে হচ্ছে, ছেলেটা বেশ স্মার্ট ।

ওরিন এক নজর তাকিয়ে আর তাকালো না। হাত ঘড়িটায় সময় দেখে, আবার অপেক্ষা করা শুরু করলো। সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটা হালকা হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো…

” আমি রাফিদ। মাস্টার্স করছি। ”

ওরিন ছেলেটাকে প্রতি উত্তরে কিছু বললো না। হেন্ড সেক করার জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হাত টা গুটিয়ে নিলো। ছেলে ওরিনে কে বললো…

” তোমার নাম বললে না?”

ওরিন সৌজন্যেতার খাতিরে বললো…

” ওরিন। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি । ”

” ভালো। তুমি তাহলে আমার চার বছরের জুনিয়ার।”

“জ্বি। ”

” ওরি৷ আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি? ”

ওরিক অবাক চোখে তাকালো। ওরিনের চাহুনি দেখে ছেলেটাও বিব্রত হয়ে গেলো। ফরিনের বান্ধবীরা চলে এলো, ওরিন ও বান্ধবীদের সাথে ক্লাসের উদ্দেশ্য চলে গেলো। ছেলেটা বোকার মতো দাড়িয়ে রইলো। ওরিনের উত্তর না দেওয়া টা ছেলেটার আত্ন সম্মানে লাগলো।

” মেয়েটার দেমাগ দেখেছিস। স্মার্ট ডেসিং ছেলেটাকে কি ভাবে রিজেক্ট করে দিলো? ‘

ফরিদের কথায় বাধন ফোনের স্ক্রিন ছেরে মাথা উঁচু করে তাকালো। ফরিদের উদ্দেশ্য বললো…

” বুঝলাম না রাফিদ নামে ছেলেটা কে কেনো ভাড়া করে পাঠালি? ”

ফরিদ সান গ্লাস টা পড়ে বললো…

” তোকে বুঝতে হবে না। ”

” কেনো দোস্ত আমি বুঝবো না কেনো? দোস্ত ওই মাইয়া টার প্রেমে টেমে পড়েছিস নাকি মামা। ”

ফরিদ ঠোঁট টিপে, হেসে বললো..আপাতত প্রধান উদ্দেশ্য হলো মেয়েটা কে জ্বালাতন করা। একটু হেরেস্ট করবো। মানুষিক শান্তিএ জন্য। বলেই গাড়ির ভেতর ঢুকে ড্রাইভ শুরু করলো ফরিদ। বাধন কিছুটা অবাক হয়ে ফরিদের দিকে তাকিয়ে আছে, বাধন তুষার কে ছোট বেলা থেকেই চেনে। ফরিদের নিশানা কখনো সরে, না। সেটাও বাধনের ভালো মতোই জানা আছে।

পার্কিং প্লেসে গাড়ি রেখে, ফরিদ আর বাধন ক্লাস করতে গেলো। ক্লাস চলছে, বোর্ডে স্যার অংক করছে। ফরিদ মুখে চুইংগাম ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে চিবুচ্ছে। বাম হাতে খাতা থাকলেও ইচ্ছা করেই কছু নোট করছে না।

ঠিক তখনই ফরিদের চোখ গেলো জানালার দিকে, বাইরে সবুজ ঘাস গুলো তে ওরিন বসে আছে। বান্ধবীদের সাথে ঠাট্টা করছে। ঠিক তখনি উচ্চ স্বরে কেউ ফরিদের নাম ধরে ডাক দিলো। ফরিদ সামনে তাকিয়ে দেখলো, তার সামনে প্রফেসর দাঁড়িয়ে আছেন।

ফরিদ থত মত খেয়ে দাড়ালো, প্রফেসার বললেন..

” হুয়াট ইজ ডিভাইস ম্যাথ?”

ফরিদ উত্তর দিতে পারলো না। চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। প্রফেসার গলা ছেড়ে খেকারি, দিয়ে বললো…

” কোন দিকে মন থাকে?”

” সরি স্যার। ”

” বাইরে না দেখে ক্লাসে মন দাও..। বলেই স্যার চলে গেলেন। ”

ফরিদের দিকে ক্লাসের সবাই তাকিয়ে, আছে। ফরিদ চুপ করে বসে পরলো, তার চোখ বার বার, নরম ঘাসে বসে থাকা তরুণীর দিকে যাচ্ছে কেনো?
ফরিদ নিজের চুল নিজেই চেপে ধরলো।



দুপুর দুই টা বাজে…………….

মিটিং রুমে সুদর্শন ছেলে মডেল এবং সুন্দরী মেয়ে মডেল বসে আছে। টেবিলের এক পাশে আয়শা ও বসে আছে। সি.ই.ও নাছিম হোসাইনের অপেক্ষায় আয়শা বোরিং ফোন ঘাটছে।

ঠিক তখনি, একটা ছেলে আয়শার উদ্দেশ্য বললো…

” আপনি নিউ ফটোগ্রাফার রাইট? ”

আয়শা ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে, বললো…

” জ্বি। ”

” লেডি, ফটোগ্রাফার ইন্টারেস্টিং। ”

আয়শা ভ্রু কুচকিয়ে বললো…

” ইন্টারেস্টিং কেনো?মেয়েরা কি ফটোগ্রাফি প্রফেশনে কাজ করতে পারে না?”

ছেলেটা হালকা হেসে বললো..

“অফ কজ পারে। বাই দা ওয়ে। ”

“দিস ইজ মডেল আকাশ মাহমুদ। ”

” আয়শা। ”

ছেলেটা হাসি মুখে, আয়শার সাথে আলাপ করছে ঠিক তখনি নাছিম রুমে প্রবেশ করলো। সবাই দাড়িয়ে নাছিম কে সম্মান জানালো। নাছিম, আয়শার আর আকাশের দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকালো। সবাইকে বসতে বলে নাছিম মিটিং শুরু করলো।

টেবিলে আধো ঝুকি দিয়ে বললো…

” রাশিয়ার নাম কড়া ব্রেন্ড আমাদের সাথে ডিল করতে যাচ্ছে। আমি কিছু নতুন ফ্যাশন কালেকশন লঞ্চ করতে যাচ্ছি। পোশাক যত ফ্যাশনেবাল হবে, ততই স্মার্ট লাগবে।

দু দিনের মধ্যেই নতুন কালেশনে ছবি চাই। মডেলদের,বেস্ট লুকে। ”
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ–০৫

চারিদিকের উজ্জ্বল আলোয়, আর সুন্দর সজ্জায় জায়গা টা কৃত্রিম সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। রুম টা বেশ বড়, অনেকে এখনো লাইটিং ঠিক করতে ব্যাস্ত। এসির বাতাসে আয়শার হালকা ঠান্ডা লাগছে। আয়শা ক্যামেরাটা টেবিলে রেখে গাঁয়ে ওরনা পেঁচালো।

সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে আয়শা স্টুডিও রুমে বসে আছে। আজই ব্রেন্ডের পোশাকের ফটোগ্রাফি হবে। ছবির ওপরই পোশাকে সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। আয়শা বসে আছে, মডেলদের ছবি তোলার জন্য। কিন্তু তারা এখনো মেক আপ রুমে রেডি হচ্ছে। আয়শা বসে বসে বোর হচ্ছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে লাইটিং দেখছে। ”

দরজা খোলার শব্দ শুনে আয়শা দরজার দিকে, তাকালো। নাছিম দাঁড়িয়ে আছে, ম্যানেজার স্যারের সাথে কোন বিষয়ে কথা বলছেন হয়তো। নাছিমের কথা বলার স্টাইল এটিটিউড সবাটাই অন্য রকম। অনেক টাই ঘোর লেগে যায়, নাছিমের ইউনিক পারসোনালিটি দেখে। আয়শা এক দৃষ্টিতে নাছিমের দিকে তাকিয়ে আছে। নাছিমের কথা বলার গতি মন দিয়ে দেখছে।

কথা বলতে বলতে নাছিম হঠাৎ আয়শার দিকে তাকালো, সারা দিনের ক্লান্তির ছাপ চেহারার স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। হালকা লাল রংয়ের চুল গুলো উঁচু করে খোপা করা, আকাশি রংয়ের কুরতি, আর জিন্স পড়া। মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও সুন্দর আলোর সজ্জায়, আয়শা কে বড্ড স্নিগ্ধ লাগছে। শ্যামবর্ণ মুখে উজ্জ্বলতা ছেঁয়ে আছে, সাথে মিশে আছে কিঞ্চিৎ ক্লান্তি।

নাছিম পকেটে হাত ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে আয়শার কাছে হেটে আসছে, আয়শা দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো। এতো ক্ষন এক ধ্যানে নাছিম স্যার কে দেখছিলো সে, এখন তার কাছে ব্যাপারটা খুবই বিব্রতকর কর লাগছে। আয়শা এখন এসির নিচে বসেও ঘামছে। চোখ দুটো পিট পিট করছে, স্যার কি মনে করলো? ইসস নিশ্চয়ই আয়শা কে ছ্যাচড়া ভাববে, ভাবলে ভাবুক তাতে আয়শার কি। হুহ…’

নাছিম আয়শার কাছে, আসলো আয়শা ভদ্রতার খাতিরে উঠে দাড়ালো। তখনি নাছিম বলল…

“বসুন মিস আয়শা।”

আয়শা বসে পরলো। নাছিম তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়শা কে দেখছে। আয়শা নার্ভাসনেসের চোটে ঘামছে, এই ভয়ংকর লোকটা কিছু বলবে না তো! এবারে চোখ রস গোল্লার মতো করে তাকিয়ে আছে কেনো?

নাছিম ঠোঁট টিপে চাপা হাসলো, আয়শা কে বুঝতে দিলো না। নাছিম গম্ভীর কন্ঠে বললো…

“তখন কি দেখছিলেন মিস আয়শা?”

” ক ক কখন স্যার? ”

” যখন আমি ম্যানেজার সাহেবের সাথে কথা বলছিলাম তখন আপনার মন কোথায় ছিলো? শুনি?”

আয়শা কিছু বললো না। বাম হাত দিয়ে টেবিল খুঁটিতে শুরু করলো। নাছিম হালকা কাঁশি দিয়ে বললো..

” সুন্দর ছেলের দিকে তাকাবেন স্বাভাবিক। আপনি চুপ করে আছেন কেনো? লজ্জা তো আমার পাওয়ার কথা। ”

আয়শা অবাক চোখে গোল গোল করে তাকিয়ে রইলো। নাছিম ভাব নিয়ে বললো…

” এবাবে তাকাবেন না, এবার আমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছি। ”

বলেই নাছিম হালকা হাসলো। আয়শা মাথা নিচু করে ঠোঁট বিক্রিতি করে ভেংচি কাটলো। ‘ ব্যাটা ধড়িবাজ একটা।

আয়শার বিড় বিড় করে কথা বলা,নাছিম শুনতে পেলো। নাছিম অবুঝ ভাব নিয়ে বললো..

” কিছু বললেন..”

আয়শা মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে বললো…

” কোথায়? নাহ তো স্যার। ”

তখনই, আকাশ নাছিম এবং আয়শার সামনে এলো, গাল ভর্তি হাসি দিয়ে, বলল…

” হুয়াট্স আপ গাইজ?”

নাছিম হালকা হেসে উত্তর দিলো..

” গুড। ”

” তোমার কি খবর আয়শা?”

আয়শা সৌজন্যেতার হাসি দিয়ে বললো…

“ভালো। ”

নাছিম আড় দৃষ্টিতে তাকালো, আকাশ কে আর আয়শার সাথে কথা বলার সুযোগ দিতে চাইলো না। নাছিম, আকাশে উদ্দেশ্য বললো…

” শর্টের জন্য রেডি?আকাশ।”

” ইয়েস নাছিম। ”

” সো হুয়াই ইউ লেট? লেটস গো ম্যান৷ ”

আকাশ একের পর এক পোজ দিচ্ছে, আয়শা ছবি তুলছে, আয়শা কিছুটা মনোযোগ দিয়ে, আকাশের তোলা ছবি গুলো দেখলো, আয়শা আকাশের উদ্দেশ্য বললো…

” মিস্টার আকাশ আপনার শার্ট টা ঠিক করুন। ”

” কোথায় ঠিক করবো?”

” কোমরের দিকে, শার্ট টা নিচে নামান। ”

আকাশ নিজের শার্ট টা ঠিক করতে পারলো, না। অগত্যা আয়শা গিয়ে, আকাশের শার্ট টা ঠিক করে, দিলো। দূর থেকে এই দৃশ্য টা দেখতেই নাছিম হাত দুটো মুঠো করে করে নি লো। নাছিমের গা শির শির করছে। রাগ টা হুট করেই বেরে গেছে। তবুও নাছিম ধৈর্য নিয়ে বসে রইলো।

আয়শা আকাশের ছবি তুললো, তাছাড়া আরো মডেল’স দের লেডি পোশাক, ওয়েস্টার্ন সহ নানা রকম ছবি তুললো…

রাত নয় টায় আয়শা বাড়ি ফিরলো। ওরিন দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেলো। আয়শা কে বড্ড ক্লান্ত লাগছে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো। ওরিন রাতের খাবার খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দিলো, কিন্তু আয়শা ডিনার করতে গেলো না। কর্ম জীবন বড্ড কঠিন, সারা দিন কাজ শেষে যে, তৃপ্তি পাওয়া যায়, তাই তো মানুষ কে দ্বায়িত্ব পালন করার শুখ দেয়।

বালিশে জরিয়ে আয়শা জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। ভাতে প্লেট হাতে নিয়ে রুমে ঢুকলো ওরিন। আয়শা কে ডাক দিলো, আয়শা উঠতে চাইলো না। ওরিনের জোরা জুরি তে আধো শোয়া হয়ে বসলো। ভাতের লোকমা আয়শার মুখে পুরে দিয়ে ওরিন বললো…

” আপু তোমার বস, কেমন ধারা লোক? একটা মেয়ে কে এতো রাত পর্যন্ত কাজ করালো? ”

” ফটোশুটে ছিলো, তাই দেরি হয়েছে। আগামীকাল আর লেট হবে না। ”

” হুম। তোমাকে ক্লান্ত লাগছে আপা। ”

আয়শা খাবার চিবিয়ে খেতে খেতে বললো..

” ঘুমালে, ঠিক হয়ে, যাবে। ”

খাওয়া শেষে ওরিন, আয়শার উদ্দেশ্য বললো..

” ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ো আপা। ”

আয়শা বিছানা থেকে নামলো না। বাইরের পোশাক পড়েই শুয়ে পড়লো। ওরিন আয়শার কান্ড দেখে নিঃশ্বাস ছেরে বললো,

” তুমি জীবনেও শুধরাবে না আপা। ”

বলেই ওরিন আয়শার ওপর, পাতলা কম্বল মুড়ি দিয়ে দিয়ে দিলো, ওরিন। আবার পড়তে বসলো।

রাত জেগে পড়া শোনা করার অভ্যাস হয়ে গেছে ওরিনের। কিছুদিনের মধ্যেই ওরিনের কেমিস্ট্রি সাবজেক্ট ক্লাস টেস্ট হবে। ওরিন চাপ্টার গুলো, বার বার রিভাইস দিচ্ছে।


রাতে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হওয়ার কারনে রাস্তায় বেশ কাঁদা জমেছে। আয়শা সাবধানে সাবধানে পা এগুচ্ছে। পিছল খেয়ে পড়লেই সর্বনাশ। রাস্তার মোড় পর্যন্ত আয়শা হেটে গেলো। মোর থেকে, আয়শা রিক্সায় করে অফিসে পৌছালো।

আজ ঠিক সময় মতো, আয়শা অফিসে পৌছে গেছে। নিজের ডেক্সে বসতেই, আয়শার চোখ, গেলো নাছিমের কেবিনে। সচ্ছ কাঁচের ওপাশে চেয়ারটা খালি। আয়শা হাত ঘড়ির দিকে তাকালো।

‘নাছিম স্যার তো খুব পানচ্যুয়াল মানুষ। সে দিন এতো বড় বড় ডায়লগ দিয়ে আজ নিজেই লেট। হুহ। ‘ আয়শা নিজের কাজে মন দিলো। গত কাল তোলা ছবি গুলো চেক করে এডিট করা শুরু করলো। এক ধ্যানে কাজ করার পর আয়শা, চা খাবার জন্য উঠতেই অবাক হলো।

দুপুর বারো টা বাজে অথচ নাছিম এখনো আসলো না। কেবিন ফাঁকা। হুট করেই আয়শার মনে প্রশ্ন জাগলো নাছিমের ব্যাপারে। নাছিমের না আসার কারন টা কি?

‘ স্যার কোন সমস্যায় জরিয়ে গেলো না তো? ‘



চলবে

(প্রতিদিন নিত্যনতুন গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here