#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ–৪১
” সো সরি। আমি ঠিক খেয়াল করি নি। ”
” ইটস ওকে।”
বলেই অবাক হয়ে, তাকিয়ে রইলো আয়শা। তার সামনে ফরিদ দাঁড়িয়ে আছে, ফর্মাল ফরিদের পোশাকে অন্য রকম দেখাচ্ছে। ফরিদ ক্ষানিকটা হেসে বললো…” আরে আপনি আয়শা না? মারিয়ার বিয়ের ভিডিও তো আপনি করেছিলেন? ”
” হ্যাঁ। আর আমার বোন কে, আপনি তুলে নিয়ে গেছিলেন।”
” ওরিন আপনার বোন?”
” হ্যাঁ আমার একমাত্র ছোট বোন। ফরিদ স্যার। ”
” স্যার বলবেন না। প্লিজ, কল মি ফরিদ। সম্পর্কে আপনি আমার বড় তাই না? ”
” সম্পর্ক তো এখনো হয় নি।”
ফরিদ ক্ষানিকটা হেসে জবাব দিলো। ” হয়ে যাবে, অপেক্ষা করেন আপু। ”
আয়শা ফরিদের এট্যিটিউড দেখে ক্ষানিকটা অবাক হলো, এতো কনফিডেন্স সাথে, কি ভাবে কথা বলে, ছেলেটা। ফরিদের ওভার এট্যিটিউড এবং কনফিডেন্স ভাব আয়শার এক দম ভালো লাগছে না। ফরিদ ভ্রু নাচিয়ে বললো…
” আপনি ভাইয়ার কেবিনের আড়ালে, দাঁড়িয়ে কি করছেন।”
আয়শা ক্ষানিকটা ভরকে, গিয়ে আমতা আমতা করে বললো…
” আমি কি করছি মানে? আমি তো এমনিতেই হাট ছিলাম। ”
ফরিদ নাছিমের কেবিনের দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো…” ও তাই না। ”
আয়শা এদিকে সেদিকে তাকিয়ে বললো, “হ্যাঁ। ”
” ওকে । ” বলেই ফরিদ নাছিমের কেবিনের দিকে চলে গেলো। আয়শা হাফ ছেড়ে নিঃশ্বাস নিলো। দু’টো ভাই ভীষণ চালাক। সব সময় হাতে নাতে পাকরাও করার চেষ্টা করে। করুক জেরা করে লাভ নেই, আয়শা ভয় পায় নাকি।
ফরিদ নাছিমের কেবিনে নক করে, বললো..” ভাইয়া আসবো?”
” হ্যাঁ। আয়। অনুমতি নেয়া লাগবে না। ”
ফরিদ ভেতরে ঢুকলো, নাছিমের হাতে পাস্তার বাটি দেখে, বললো..” তুমি পাস্তা খাচ্ছো?”
” হুম। চিকেন পাস্তা। অনেক টেষ্ট। ”
” লেট মি চেক। ” বলেই ফরিদ পাস্তার বাটি টা হাতে, নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
” আসলেই তো অনেক জোস। কোন রেস্টুরেন্ট?”
নাছিম হেসে দিয়ে বললো, ” আয়শা স্পেশাল রেস্টুরেন্ট। আমি আসছি। ”
বলেই নাছিম তার কেবিন থেকে বের হলো। ফরিদ পাস্তা গুলো খেয়ে শেষ করলো। আয়শা স্পেশাল রেস্টুরেন্টে যেতে, হবে তো। এমন সুস্বাদু পার্ফেক্ট পাস্তা ফরিদ খুব কম খেয়েছে। ফরিদ টেবিলের পেপার ম্যাট টা ঘুড়াচ্ছে হঠাৎ ফাইলের ভেতর থেকে চিরকুটের ক্ষানিকটা অংশ বের হলো।
ফরিদ হাত দিয়ে টান দিতেই চিরকুট টা বেরিয়ে এলো, পাস্তার বক্সে লেখে সেই চিরকুট টা পড়তেই, ফরিদের ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটলো৷ ফরিদ চাঁপা হাসি দিয়ে, মনে মনে বললো..’ বাহ এতো দেখি সরষের ভেতর ভুত লুকিয়ে আছে। আমার ভাইয়া তলে, তলে প্রেম করছে তাও ওরিনে বড় বোনের সাথে। গুড গুড। ‘
নাছিম ফরিদের থেকে, দূরে সরে, আয়শার নম্বরে টেক্সট করলো ‘ থেংক ইউ ভেরি মাচ ফর ইয়ামি পাস্তা। ‘ আয়াশার ফোনে টুং টুং শব্দ হতেই আয়শা ফোনে দেখলো, খারুস মেসেজ দিয়েছে। ইনবক্স চেক করতেই আয়শার হালকা হাসলো, নাছিমের পাঠানো মেসেজ দেখে।
সে হাসি নাছিমের আড়াল হলো, না। নাছিম ঠিকই আয়শার হাসি দেখলো। নাছিম কেবিনে ঢুকলো। ফরিদ পেপার ম্যাট ঘুরাচ্ছে, নাছিম মুখে সিরিয়াস ভাব নিয়ে, বললো…
” ফার্স্ট ডে এট অফিস কেমন লাগলো?”
ফরিদ চাপা হেসে জবাব দিলো, ” অনেক ভালো। সবাই খুব হেল্প ফুল। ”
নাছিম ফরিদের কাঁধে হাত রেখে, বললো.. ” দ্যাটস গুড।”
” আয়শা রেস্টুরেন্টে টা কোথায়, ভাবছি তোমাকে ট্রিট দিবো। ”
নাছিম হো হো করে হেসে, আয়শার দিকে ইশারা করে দেখালো। ফরিদ বললো…” তোমাদের অনেক মানাবে। আল্লাহ নে বানাদি জোরি।”
নাছিম আয়শার দিকে, তাকালো। আয়শা কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে। নাছিম পকেটে হাত দিয়ে গুন গুনিয়ে গাইতে, শুরু করলো,““অবুঝ মনের ঠিকানা তুমি কি হবে, মুগ্ধ আমার প্রেমে জড়িয়ে রবে..
মুখে বলো না কে তোমার অনুভবে““
———————————-
বিকেল তিনটা কি সারে তিনটা বাজে, কিছুক্ষণ আগেই আফজাল সাহেব দুপুরের খাবার খেয়েছেন। বারান্দায় রাখা রকিং চেয়ারে আধো শোয়া হয়ে, বই পড়ছেন। ঠিক তখনি কলিং বেলের শব্দ হলো। আয়শা ওরিন কেউ এই সময় বাসায় ফেরে না, ওরিন ক্লাস শেষে কোচিংয়ে যায় এবং আয়শা অফিসে কাজ করে ছয় টায় বাসায় আসে।
কে এসেছে, দেখার জন্য দরজা খুলতেই আফজাল সাহেব অবাক হলেন। ফরিদ দাঁড়িয়ে আছে। সালাম দিয়ে এক গাল হাসি দিয়ে, বললো…
” কেমন আছেন আংকেল? ”
আফজাল সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে বললেন.. ” ভালো আছি তুমি এ সময়?”
” এখন থেকে রোজ আসবো আপনার সেবা করতে। মনে মনে ভেবে নিবো এটাই প্রায়েশ প্রায়েশ।”
” কি প্রায়েশ প্রায়েশ শুরু করেছো? ওটা প্রায়শ্চিত্ত হবে। ”
” হ্যাঁ হ্যাঁ ওটাই। আপনি প্রশন্ন হলেই আমি খুশি। ”
আফজাল সাহেব ক্ষানিকটা বিরক্ত হয়ে, ভাবলেন। ‘ এই ছোকরা সহজে তার পিছু ছাড়বে না। ‘ আঠার নেয় লেগেই থাকবে। এই পরিস্থিতিতে কি করবে আফজাল সাহেব সেটাই ভাবছেন। দরজার পাশের থেকে বাজারের থলে, নিয়ে বললো…
” আমি এখন বাজারে যাবো। কিছু জিনিস কিনতে। ”
” তাহলে আমিও যাবো। আমার গাড়ি দিয়ে, চলুন। ”
” আমি সুপার শপে যাচ্ছিনা। পাবলিক বাজারে যাচ্ছি। মিনিট পাঁচকের দূরত্ব হেটেই যেতে পারবো। ”
” হ্যাঁ তাই ভালো। হাটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। জিম করার পাশাপাশি হাটাও উচিত।”
আফজাল সাহেব অবাক হয়ে, বললেন.. ” তার পরও তুমি আমার সাথে যাবে?”
” জ্বি চলুন আব্বা ইয়ে মানে, আমার বাবা নেই তো তাই আপনার সাথে কথা বলতে গিয়ে, মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে। ”
” ইটস ওকে। আমি তোমার বাবার বয়সীই। ”
হলেই দরজার তালা আটকালেন। আফজাল সাহেব ধীরে ধীরে ছয় তলার সিড়ি বেয়ে, নামছেন। পিছু পিছু ফরিদ ও হাটছে। হাটতে হাটতে আফজাল সাহেব বললেন, ” তোমার কি আর কাজ নেই?”
” আছে তো। আফিস করেই তো এলাম। ”
আফজাল সাহেবের মনে মনে মায়া লাগছে, বাসার মোড়ের রাস্তায় আফজাল সাহেব হাটছে,পিছু পিছু ফরিদ পকেটে হাত দিয়ে, হাটছে। হঠাৎ একটা চলন্ত বাস কাছে একটা এসে হর্ন বাজাতেই, ফরিদ খেয়াল করলো। ফরিদ দ্রুত আফজাল সাহেবের হাত টান দিয়ে সরিয়ে নিয়ে, এলো। আফজাল সাহেব রাস্তার এক পাশে পড়লেন, ফরিদ খুটির সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় ব্যাথা পেয়ে, জ্ঞান হারালো।
আফজাল সাহেব উঠে বসতেই দেখলো ফরিদের দের মাথা ক্ষানিকটা কেটে গেছে, ফিনিক রক্ত গড়িয়ে,পড়ছে। আফজাল সাহেব দ্রুত লোকজন ডেকে ফরিদ কে, হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করলো।
হাসপাতালের রুমের বাইরে একটা ব্রেঞ্চিতে আফজাল সাহেব, বসে আছেন। একটা অচেনা ছেলে, তাকে বাঁচাতে গিয়ে, নিজেই মাথায় ব্যাথা পেলো। আজ যদি ছেলেটার বড় রকমের ক্ষতি হয়ে, যেতো তাহলে কি জবাবা দিতো আজীবনের আফজাল সাহেব। ছেলেটা চাইলে নিজের জীবনের ঝুঁকি নাও নিতে পারতো।
আফজাল সাহেবের চোখের কোনায় পানি জমে, গাল দিয়ে গড়িয়ে পরলো। রুম থেকে ডাক্তার, তাড়া দিয়ে বললেন, ” রুগীর সাথে কি আপনি এসেছেন। ”
” জ্বি । এখন ফরিদের অবস্থা কেমন?”
” ভালো। ঘুমোচ্ছে, সন্ধ্যার আগে উঠে যাবে। মাথায় বেশ চোট পেয়েছে, একটু সাবধানে রাখবেন। ”
” আচ্ছা। আমি কি ভেতরে যেতে পারি?”
” হুম৷ কিন্তু জাগাবেন না, ওনাকে। ” বলেই ডাক্তার চলে গেলেন।
আফজাল সাহেব দরজা ঠেলে, ভেতরে ঢুকলেন। ফরিদ বেডে শুয়ে আছে, কপালে, ব্যান্ডেজ করা। আফজাল সাহেব কিছুক্ষণ বসে, রইলেন ফরিদের পাশে।
বাসায় ফিরে, ওরিন দরজা তালা মারা দেখে, ক্ষানিকটা অবাক হলো, বাবার নম্বরের কল দিলো, ফোন রিসিভ করতেই ওরিন বললো…” কোথায় তুমি? সেই কখন থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।”
আফজাল সাহেব থম থমে, মুখ নিয়ে, বললেন । “আমি হাস্পাতালে ওরিন। ”
ওরিনের কপালে, চিন্তার ভাজ দেখা গেলো। ওরিনের কন্ঠ ভারী হয়ে আসছে। ” তুমি ঠিক আছো তো বাবা? আর কোন হাস্পাতালে আছো?”
” শাহবাগ নাইন ফোর ক্লিনিক। আমি ঠিক আছি কিন্তু?”
” কিন্তু কি?”
” ফরিদ মাথায় ব্যাথা পেয়েছে। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই ব্যাথা পেয়েছিলো। তাই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ”
ফরিদের নাম শুনতেই ভেতটা মোচড় দিয়ে, উঠলো ওরিনের। ওরিন ঠায় দাঁড়িয় রইলো। তারপর দ্রুত হাস্পাতালের উদ্দেশ্য রওনা দিলো ।
.#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ–৪২
সন্ধ্যা হতে, এখনো কিছু সময় বাকি। দূরের দিগন্তে দুটো কালো-খয়েরী রঙের পাখি উড়ে যাচ্ছে। পাখি দু’টোর ঘরে ফেরার কতো তাড়া, অথচ জানালার কাছে যে এক নিঃসঙ্গ মানুষ টি দাঁড়িয়ে আছে, তার তো কোন তাড়া নেই, কারন সে একা বলে?
হাসপাতালের কেবিনের দরজায় হেলান দিয়ে,বসে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে ওরিন। গালে বেয়ে পানি,শুকিয়ে গেছে৷ চোখের পাপড়ি এখনো আধো ভেজা। ওরিন ক্ষানিকটা সময় পর পর, ফরিদের দিকে তাকাচ্ছে। ফরিদের হলুদ বর্ন চেহারা টা কেমন মলিন হয়ে আছে, হঠাৎ ফরিদ নড়ে চড়ে উঠলো।
অস্পষ্ট গলায় বললো ” পানি পানি। আমি পানি খাবো। ”
ওরিন দ্রুত গিয়ে, এক গ্লাস পানি নিয়ে কাছে গেলো। ফরিদ এখনো ঘুমের ঘোরে, ওরিন আধো শোয়া করে, ফরিদ কে বসালো। তারপর ফরিদ কে পানি খাইয়ে দিলো। কেবিনের বাইরে থেকে তা দেখছে আফজাল সাহেব। ওনার বুঝতে আর বাকি নেই, এই ছেলেই তার মেয়ের জন্য সঠিক। কারো জীবন রক্ষা করার তে গিয়ে, যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়, সে আর যাই হোক খারাপ হতে পারে না।
মাথার ভেতর চাপা ব্যাথা করছে, আফজাল সাহেবের দু আঙ্গুল কপালের মাঝে রেখে মৃদু ঘষছেন। ফরিদের এই অবস্থার জন্য তার নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছে। ফরিদের পরিবার কে এখন কি জবাব দেবে সে…
ফরিদ চোখের হালকা পাতা খুলে ওরিন কে দেখেই, হালকা হাসি দিলো, ঘুমের ঘোরে সে ওরিন কে, দেখছে স্যালাইন লাগানো, হাত টা দিয়ে আলতো করে, ওরিনের গাল স্পর্শ করলো। এতো আসল ওরিন। ওরিন ফরিদের হাত টা সরিয়ে দিয়ে, বললো…
” আমার বাসায় কেনো এসেছিলেন? ”
” তোমার বাবার কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য। ”
” বাবা আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। স্যালাইন শেষ হলে, বাবা আপনাকে দিয়ে আসবে।”
” আর তুমি? ”
ওরিন, ফরিদের দিকে তাকিয়ে বললো…” আমি কি? ”
” কিছু না। তুমি কান্না করছো কেনো? ”
” মন চাচ্ছে তাই, কান্না করছি। আপনার কোন সমস্যা?”
ফরিদ আবারো হাসলো, ওরিন তার ওপর রেগে আছে। এই রাগ টাই কেনো জানি ফরিদের এই মূহুর্তে ভালো লাগছে। ওরিন রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। ” হাসপাতালের বেডে শুয়ে খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? ”
ফরিদ কিছু বললো না। এখন তার চুপ করে থাকাটাই শ্রেয়। সন্ধ্যা সাতটায় ফরিদ কে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হলো।
আফজাল সাহেব ফরিদ কে নিয়ে, ধানমন্ডির উদ্দেশ্য রওনা হলেন। ওরিনের ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এই লোকটা এমন কেনো? ওরিনের ভেতরের কষ্ট কি সে দেখতে পায় না। কেনো বার বার ফিরে আসে নতুন যন্ত্রণা হয়ে, ভালোবাসা কি এমনই হয়। ওরিন একা একা বাসার উদ্দেশ্য হাটতে শুরু করলো।
———————————-
আয়শা অফিস থেকে বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কম্পিউটার টা অফ করতেই হঠাৎ তার ফোনে মেসেজের টুং টুং শব্দ এলো। আয়শা হেন্ড ব্যাগ টা গোছাতে গোছাতে ফোনটা হাতে নিলো। ফোনের স্ক্রিনে খারুস লেখা। আয়শা দ্রুত মেসেজ টা চেক করলো।
‘ মিস আয়শা, আজকে কি আমাকে ট্রিট দেওয়া যায়? ফর রিসিভিং সেলারি এন্ড ফোটোগ্রাফি পেমেন্ট.. ”
আয়শা ঠোঁট কামড়ে হাসলো, হাত ঘড়িটার দিকে এক নজর তাকালো। তারপর দ্রুত টাইপিং করে, লিখলো। ” অবশ্যই দেওয়া যায়। তবে নয় টার আগে বাসায় ফিরতে হবে৷
নাছিমের ফোনে রিপলাই এলো, নাছিম চেক করে, বললো,” কুল।”
আয়শা অফিস থেকে বের হয়ে এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো। নাছিম আয়শার কাছে, এসে বললো চলুন যাওয়া যাক। বলেই গাড়ির দরজা খুললো…
” উহু। গাড়িতে নয়। ”
নাছিম ক্ষানিকটা অবাক হয়ে, বললো…” তাহলে? ”
” হেটে যাবো। যেহেতু আমি ট্রিট দিচ্ছি। আমার কথা মানতে হবে। ”
” ওকে। ”
আয়শা নাছিম দুজন রাস্তার পাশ দিয়ে,হাটছে।ল্যাম্পপোস্টের কমলা রংয়ের সোডিয়ামের আলোয় পাশে থাকা তরুণী কে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। আয়শা হাটতে হাটতে ভাবলো, নাছিম হঠাৎ তার কাছে, কেনো ট্রিট চাইলো। একজন, সি.ই.ও তার এমপ্লয়িইর কাছে ট্রিট চেয়েছে, ব্যাপারটা শুনলে যে কেও হেসে উড়িয়ে দেবে।
আয়শার নিজেকে কন্ট্রোল করা উচিত। নাছিম একজন সি.ই.ও সে সবার সাথে মিশতে পারে, তাই বলে আয়শাও তাতে গা ভাসালে চলবে না। কখনো যদি নাছিম যানে, আয়শা তার প্রতি উইক তাহলে, আয়শা লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে। ব্যাপারটা শুনতে হাস্যকর বই-কি।
আয়শা এবং নাছিম একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে, বসলো। নাছিম আয়শার দিকে, ম্যানু কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললো..”মিস আয়শা কি খাবেন সিলেক্টে করুন।”
” ট্রিট তো আমি আপনাকে দিচ্ছি। আপনি অর্ডার দিন আগে স্যার। ”
” উহু। লেডিস ফার্স্ট। ”
আয়শা ম্যানু কার্ডটা হাতে নিয়ে, কিছু খাবার অর্ডার দিলো। তারপর নাছিম ও নিজের পছন্দ মতো খাবার অর্ডার দিলো। ডিনার শেষে আয়শা যখন, বিল পে করবে তখন একজন ওয়েটার এসে বললো…
” ম্যাম আপনার বিল দেওয়া লাগবে না। ”
আয়াশা ক্ষানিকটা অবাক হয়ে, বললো..” কেনো? ”
ওয়েটার লোকটা নাছিমের দিকে এক নজর তাকিয়ে, বললো ” আমাদের লাকি কাস্টমার দের মধ্য আপনারা একজন তাই, রেস্টুরেন্টে আজকে আর কোন বিল দেওয়া লাগবে না। ”
আয়শা নিঃশ্বাস ফেলে, বললো। ” আচ্ছা। থেংক ইউ।”
আয়শা এবং নাছিম দুজনেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে গেলো। রাস্তার ধারে ছোট একটা আইসক্রিমের স্টল দেখা যাচ্ছে, আয়শার ভীষণ আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছে। পাশেই নাছিম হাটছে কি ভাববে তাই আয়শার, একটু লজ্জা লাগছে। নাছিম আয়শার দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো…
” আইসক্রিম খাবেন? ”
আয়শা ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইশারা করলো। চলুন যাওয়া যাক বলেই রাস্তা পার হবার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। আয়শা এখনো রাস্তা ক্রস করতে পারেনি। অর্ধেক রস্তায় গিয়ে নাছিম আবার ফিরে এলো, ” কি হলো এলেন যে?”
” আসলে, রাস্তা ক্রস করতে আমার ভীষণ ভয় লাগে।”
নাছিম আয়শার হাত ধরলো, নাছিম রাস্তার দু পাশে এদিকে ওদিক তাকাচ্ছে আর আয়শা নাছিম কে দেখছে। রোড ক্রস করে,দুজনেই আইসক্রিমের দোকানের সামনে এলো। আয়শা দোকানী কে, বললো..” চাচা দুটো ভ্যানিলা কোর্ণেটো দিন।”
লোকটা আয়শার হাতে কর্ণেটো আইসক্রিম দিতেই আয়শা দুটো কাগজ ছিঁড়ে খাওয়া শুরু করলো। নাছিম, আয়শা খাওয়া দেখে অবাক হলো ,কি অদ্ভুত মেয়ে দুটো আইসক্রিম গপ গপ করে খাচ্ছে। পাশে যে নাছিম দাঁড়িয়ে আছে তার কোন খেয়ালই নেই। নাছিম একটা চকবার আইসক্রিম নিয়ে, খাচ্ছে। আয়শা আরেক টা আইসক্রিম নিলো। নাছিম এবার বললো…
” একসাথে তিনটা আইসক্রিম খেলে, অসুস্থ হয়ে যাবেন তো।”
আয়শা নাছিমের কথায় কান দিলো না সে নিজের মতোই আইসক্রিম খাচ্ছে। এই মিনি বাচ্চা হাতি টা মোটা হয় না কেনো, আয়শা এক বাসায় তিন জন মানুষের খাবার সাভার করে ফেলতে পারে, একটু মোটাও হয় না মেয়ে টা। আয়শা আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে, বললো…
” আপনার আইসক্রিম আপনি খান না। আমার খাবারে নজর দিচ্ছেন কেনো। আপনি চাইলে, আরও খান। আমি বিল পে করে দিবো। ”
” নো থেংক্স একটার বেশি আইসক্রিম না খাওয়াই ভালো। ”
” এতো মেপে খেয়ে কি, হবে বলুন তো? কেউ বাঁচার জন্য খায় কেউ খাবার খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকে। আমার খেতে ভীষণ ভালো লাগে। ”
” ভালো কিন্তু আইসক্রিম বেশি খেলে ঠান্ডা শর্দি হতে পারে। ”
” ভালো লেগেছে, খেয়েছি। পরে কি হবে তা পরে বোঝা যাবে। ”
আয়শা আইসক্রিম বিক্রেতার উদ্দেশ্য করে ,বললো…” কত হয়েছে, চাচা?”
” একশো তিরিশ টাকা। কিন্তু বিল দেওয়া লাগবো না। ”
আয়শা ক্ষানিকটা অবাক হয়ে, বললো..” কেনো কেনো?”
“আপনাদের বিল একজন আগে আগে ,দিয়া দিছে । আর কইছে (বলেছে) এখানে দাঁরিয়ে থাকতে ।”
আয়শা নাছিমের দিকে তাকালো ,নাছিম না বুঝার ভান ধরে আইসক্রিম খাচ্ছে। কে আগে আগে বিল দিয়ে, দিলো আয়শা কে খুব ভাবাচ্ছে, বিষয় টা । তাকে কি ফলো করে, আয়শার মনে প্রশ্নের দলা পাকিয়ে যাচ্ছে, সব।
আয়শা এবং নাছিম আবারো হাটছে, সরু পথ ধরে, ল্যাম্পপোস্টের কমলা আলোতে, দু’জনের ছায়া এক সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে। আয়শা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, দেখলো আটটা চল্লিশ বাজে, আয়শা তাড়া দিয়ে বললো…
” আমাকে এখন বাসায় যেতে, হবে। লেট হলে, বাবা চিন্তা করবে। ”
” আমি ড্রাইভার কে গাড়ি নিয়ে,আসতে বলছি।”
” নাহ৷ আমি রিকশা দিয়ে যেতে পারবো। ”
বলেই আয়শা হাত ইশারা করে, রিকশা ডাকলো। নাছিম আয়শা কে ,বললো..” থেংক্স ফর ট্রিট মিস.আয়শা। ”
আয়শা মনে ভবলো,ট্রিট আর দিলাম কোথায়, কেউ তো আগে থেকেই বিল দিয়ে দিয়েছে । রেস্টুরেন্টেও নিশ্চয়ই আগে ,বিল দিয়ে ছিলো। নয়তো এতো কাস্টমার থাকতে, আয়শা কে কেনো ফ্রি তে খাবার খাবে। কিন্তু কে সে?আয়শাকে বিষয় টা খুব ভাবাচ্ছে।
আয়শা বাসায় এলো, নয় টা দশে। বেল বাজানোর পর কেউ দরজা খুললো না। আয়শা দরজাটায় হাত দিতেই খুলে গেলো৷ ভেতরে ঢুকে, আয়শা অবাক হলো ।কারন…
।
।
চলবে