ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ৩৯+৪০

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ– ৩৯

কয়েক সেকেন্ড পর পর কেউ বেল চাপছে । এই সময় কে আসতে পারে, বুয়া? নাহ উনি তো সকালে কাজ করে চলে যান, তাহলে কে? এসেছে। দরজার জিরো পয়েন্টে ফাঁকে চোখ দিতেই দেখলো। বাইরে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, বয়স চব্বিশের মতো হবে৷ আফজাল সাহেব ছেলেটাকে চিনতে পারলেন না৷ দরজা খুলতেই যুবক সালাম দিলো, আফজাল সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলো…

” তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না। ”

” আমি কি ভেতরে আসতে পারি?”

আফজাল সাহেব দরজা থেকে সরে দাঁড়ালেন। ফরিদ ভেতরে যেতে যেতে বললো..

” আমার নাম ফরিদ হোসাইন। ”

আফজাল সাহেব ভ্রু কুচকিয়ে তাকালেন। ওরিনের বাবার চাহুনি দেখে মনে হচ্ছে, এখনি পিঠে, দু ঘা বসিয়ে, বলবেন ‘ তার মানে তুই, সে যে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলি। ‘
আফজাল সাহেব এমন কিছুই করলেন না। ক্ষানিক ক্ষন পর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন…

” তুমি এখানে কেনো? ”

” আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। আমি দুঃখীত অতিরিক্ত নার্ভাস হয়ে, আর ওরিনের বিয়ে, হয়ে যাবে সে ভয়ে, আমি কাজটা করতে বাধ্য হয়েছি। জানি আপনি আমার ওপর অনেক রেগে আছেন রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আংকেল বিশ্বাস করুন আমি ওরিন কে কষ্ট দেই নি…”

আফজাল সাহেব ফরিদ কে থামিয়ে দিয়ে, বললেন…
” থাক আর টিভি সিনেমার ডায়লগ দিতে হবে না। ”

” আংকেল আমাকে কি আরেক টা বার সুযোগ দেয়া যায় না? ”

” কিসের সুযোগ? তুমি যদি আগে আমাকে এসে বলতে, তাহলে আমি একবার হলেও, তোমার আর ওরিনের কথা ভাবতাম। কিন্তু তুমি তা করো নি।”

ফরিদ চুপ করে রইলো, যেভাবেই হোক ওরিনের বাবার কাছ থেকে ক্ষমা পেতেই হবে তাকে। এই মূহুর্তে ওনার কথা শোনা ছাড়া ফরিদের আর কিছুই করার নেই। আফজাল সাহেব আবার বললেন…

” তুমি তোমার দিকটা ভেবেছো, একটা বাবার দিক হয়ে, চিন্তা করলে এমন কাজ করতে, পারতে না। ”

” তখন পরিস্থিতি টাই এমন ছিলো। ”

” পরিস্থিতি? আমার জায়গায় তুমি থাকলে ক্ষমা করতে?”

” নিজের মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে,ক্ষমা করতাম।”

” ওরিন কে তুমি সুখে রাখতে পারবে তার কোন গ্যারান্টি আছে। ”

” গ্যারান্টি নেই। তবে চেষ্টা তো অবশ্যই করবো, কোন খামতি রাখবো না, চেষ্টায়। ”

আফজাল সাহেব, সোফায় বসতে বসতে, বললেন…
” ঠিক আছে, তুমি রান্না জানো?”

” না জানি না। ”

” প্রথমেই না করে দিলে, ধরো তোমার বাসায় সব সার্ভেন্ট ছুটিতে, ওরিন অসুস্থ হলো, তখন তুমি কি করবে? আমার মেয়ে কে না খাইয়ে রাখবে৷ ”

ফরিদ মনে মনে ভাবলো, বাইরের থেকে খাবার অর্ডার করলেই তো হয়। কিন্তু এখন এই উত্তর দিলে হবু শ্বশুর সাহেব নিশ্চিত দৌড়ানি দিবে। ভালো কোন রিপ্লাই দিতে হবে। ফরিদ হালকা কাঁশি দিয়ে, বললো…
” আমি রান্না শিখে নেবো। আপনি কি খাবেন বলুন। ”

আফজাল সাহেব মনে, মনে ভাবলেন এই ছেলে ত্যাড়া। একে ত্যাড়ামি করেই শিক্ষা দিতে হবে। ফরিদের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো…
” চা বানাতে পারো?”

ফরিদ হেসে বললো, ” এ আর কি ব্যাপার। ”

আসলে, ফরিদ কফি বানাতে পারলেও, চা ঠিক মতো বানাতে পারেনা, লিকার বেশি হয়ে যায় চা খেতে ভিষণ তেতো লাগে। কিন্তু এবার ফরিদ সামলে নেবে। ফরিদ কনফিডেন্ট নিয়ে, বললো…

” রান্না ঘর টা কোথায়?”

আয়শার বাবা ইশারা করে, দেখিয়ে দিলেন। ফরিদ ভাব নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। চুলায় পানি বসিয়ে গুন গুন গুনিয়ে গান গাইতে গাইতে চা পাতা দিলো। চায়ের কাপে চা পরিবেশন করে নিয়ে গেলো। খবরের কাগজ সরিয়ে দেখলেন ফরিদ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে, দাঁড়িয়ে আছে। আফজাল সাহেব কিছুটা অবাক হয়ে, বললেন…

” এত তাড়াতাড়ি চা তৈরি হয়ে গেলো?”

ফরিদ চা টা এগিয়ে দিয়ে বললো..”খেয়েতো দেখুন কেমন হয়েছে।”

আফজাল সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কাঁশি দিয়ে, সব ফেলে দিলেন।
” এটা চা নাকি সরবত?”

ফরিদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, সব ফেলে দিলো। প্রতিবার বেশি লিকারের কারনে চা তেতো হয়ে যেতো তাই এবার ফরিদ তাড়াতাড়ি চা পাতা দিয়েছে, পানি ঠিক মতো গরম হবার আগেই ফরিদ চা বানিয়ে নিয়েছে। এই চা খেয়ে ওরিনের বাবা বমি করেন নি, সেটাই ফরিদের ভাগ্যের ব্যাপার।

” আংকেল আরেক কাপ চা বানিয়ে আনি?”

” একদম না। তুমি এবার আসতে পারো। ”

ফরিদ ক্ষানিকটা নিরাষ হয়ে বললো…” এভাবে আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না প্লিজ। আপনি আমাকে যা বলবেন আমি তাই করবো। ”

” আমি এখন ছাদে যাবো তুমি ছাদে গিয়ে কি করবে। ”

” কিছু করবো না। আপনার সাথে বসে থাকবো। চলে যেতে বলবেন না প্লিজ। ”

আফজাল সাহেব বিরক্ত হয়ে বিড় বিড় করে বললো ‘ একটা বাদর জুটেছে। এখন কোথাও শান্তি দেবে, না। আঠার মতো লেগে থাকবে। ‘ আফজাল সাহেব ছাদের দিকে হাটা শুরু করলেন। ফরিদ ও পিছু পিছু যাচ্ছে, ছাদে প্রবেশ৷ করতেই ফরিদ অবাক হলো, ঢাকা শহরে হয়তো এমন ছাদ খুব কমই আছে।

চারিদিকে নানা রংয়ের ফুল গাছ। মৌমাছি এই গাছ থেকে সেই গাছের ফুলে ছুটা ছুটি করছে। বেশ কত গুলো প্রজাপতি দেখা যাচ্ছে। কড়া কোন গন্ধ ফরিদের নাকে লাগছে। ফরিদ গন্ধটা অনু সরন করতে করতে এক কোনায় গেলো। শিউলি ফুলের কড়া গন্ধে মোহ যেনো কাটে না।

ফরিদের ইচ্ছা করছে, শিউলি ফুল গাছের নিচে বিছানা পেতে শুয়ে থাকতে, ফরিদ একটা শিউলি ফুল ধরতে যাবে, ঠিক তখনি আফজাল সাহেব ধমকের সুরে বললেন…
” এই তুমি শিউলি ফুল ধরত গেছিলে কেনো?”

” ধরলে কি হয়েছে, আমিতো আর ছিঁড়তে যাই নি। ”

” শিউলি ফুল ওরিনের খুব প্রিয়, আমি চাইনা ওরিন ছাড়া এই গাছ, আর কেউ ধরুক। ”

‘ আচ্ছা, আপনার মেয়েকে বিয়ে করে, নেই। তার পর দেখবো কিভাবে শিউলি ফুল ধরতে না দেন। শ্বশুর মশাই।’ বলেই ফরিদ মনে মনে হাসলো। ফরিদের স্তব্ধতা দেখে, আফজাল সাহেব সরু দৃষ্টিতে তাকালেন…

” কি ভাবছো?”

” কিছু না। আচ্ছা বেগুনি রঙের ডেইজি ফুল গাছ বাংলাদেশেও আছে। ”

” আছে খুব কম। আমার বন্ধু থাইল্যান্ড থেকে পাঠিয়েছে। ”
———————————-

মারিয়া আর তুষারের বিয়ের ভিডিও এখনো সম্পূর্ণ তৈরি করতে পারে নি। রাশিয়ান মিটিং এবং ওরিনে ফরিদ কিডন্যাপিং কারনে, আয়শা এখনো সময় করে বসতে পারে নি। আয়শা বসে বসে ভিডিও এডিট করছে। অনেক ক্ষন বসে থাকার কারনে, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আয়শার।

আয়শা কম্পিউটার থেকে চোখ সরাতেই মনে, হলো নাছিম এতোক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
আয়শা ব্যাপারটা সিরিয়াস নিলো, না। এমনিতেই অনেক ক্ষন কম্পিউটার দিকে তাকিয়ে ছিলো, এই জন্যই হয়তো আয়শা ভুল দেখেছে। খুধায় পেট মোচড়াচ্ছে আয়শার, আয়শা ব্যাগ থেকে পাস্তার বক্স বের করে পাস্তা খাওয়া শুরু করলো।

নাছিম কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে, তাকিয়ে মনে মনে, বললো..’ বাহ পাস্তা খাওয়া হচ্ছে। পাস্তা আমিও খাবো। ‘ নাছিম আয়শার ডেক্সে কল দিলো, আয়শা ফোনটা রিসিভ করতেই নাছিম বললো..
” হ্যালো। মিস আয়শা।”

আয়শা, নাছিমের দিকে তাকালো। নাছিম কম্পিউটারে মনিটরের দিকে তাকিয়ে, আছে। আয়শা বললো…” জ্বি স্যার বলুন। ”

” এখনি আমার কেবিনে আসুন। ”

আয়শা ক্ষানিকটা অবাক হয়ে বললো.. ” স্যার এখনি?”

” জ্বি। আর সাথে পাস্তার বাটি এবং কফির ফ্লাক্সটাও নিয়ে আসবেন। ”

আয়শা ফোনটা কেটে দিয়ে ভাবলো, নাছিম তো তার দিকে তাকায় নি তাহলে সে কিভাবে জানলো, আয়শা পাস্তা খাচ্ছে। আয়শা এদিক সেদিক তাকাচ্ছে৷ নাছিম আয়শার চাহুনি দেখে হাসলো।

বোকা মেয়ে একটা, হিডেন ক্যামেরা খোঁজা এতোই সহজ। আয়শা বিড় বিড় করে নাছিম কে বকা দিলো। নিশ্চই এখন খারুস টা তার খাবার খাবে। উফ, কফি খেয়েও শান্তি দিবে না লোকটা। আয়শা নাছিমের কেবিনে, যাবার আগেই নাছিম বেশ কিছু খাবার অর্ডার করলো। আয়শা ফ্লাক্স এবং পাস্তার বক্স নিয়ে নাছিমের কেবিনের দিকে গেলো।

গেট খুলে, উঁকি মারতেই নাছিম আয়শাকে ভেতরে আসতে বললো। আয়শা ভেতরে ঢুকলো, নাছিম ইশারা করে বসত বললো। আয়শা বসলো, এক জন লোক এসে খাবার দিয়ে গেলো। আয়শা অবাক হয়ে, জিজ্ঞাসা করলো..

” আমাকে ডেকেছিলেন স্যার। ”

” হ্যাঁ । সে দিন সিলেট যাবার পথে আপনি যা খাবার খেয়ে ছিলেন, ভাবলাম আপনাকে আরেক বার, ট্রিট দেই। আপনি বার্গার স্যান্ডউইচ পিজ্জা খান।”

” হ্যাঁ খাই কিন্তু। ”

নাছিম আয়শার হাতের থেকে, পাস্তার বক্সটা নিয়ে, বললো..” কিন্তু কিছু না। আপনি এগুলো খান। আর আমি পাস্তা খাবো। এক্সচেঞ্জ ফর ওয়ান ডে। ”

বলেই নাছিম চোখ মারলো। আয়শা ক্ষানিকটা অবাক হলো। নাছিম পাস্তা খাচ্ছে, আর আয়শা নাছিমে আনা খাবার খাচ্ছে। নাছিম পাস্তা খাওয়া মন দিয়ে, বললো…

” আপনার বাবা কিছু বলেছিলেন? ”

আয়শা ক্ষানিকটা বিষম খেয়ে, বললো..” বাবা কি বলবে? আই মিন কোন বিষয়ে? ”

” ওরিন এবং ফরিদের?”

” আমি বাবা কে বুঝিয়ে ছিলাম গত কাল বিকেলে। এখন জানি না কি হবে। ”

” ভেরি গুড। ”

” কেনো বলুন তো স্যার?”

” এই, যে আপনি বাবা কে বুঝিয়েছেন এই জন্য। ”

আয়শা হালকা হাসলো। নাছিম এই প্রথম বার তার প্রশংসা করেছে, ভাবতেই আয়শার ভালো লাগছে। আয়শা নাছিম কে, বললো…

” চা খাবেন স্যার। ”

নাছিম বাঁকা হেসে, বললো। ” কিছু মিশিয়ে আনেন নি তো?আবার। ”

সে দিনের কথা, মনে পড়তেই আয়শা ফিক করে হেসে দিলো। ঠোঁট কামড়ে চাপা হেসে বললো..
” এক দম না।”

।#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ–৪০

জানালার ফাঁকে ফাঁকে সাদা – আকাশী রঙের পর্দা ভেদ করে সূর্যের আলো, ঘরে প্রবেশ করছে। সিলিং ফ্যান চলছে, অথচ ঘুমের মাঝে ঘামছে আয়শা। নাকের মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম, সূর্যের আলোয় চিক চিক করছে। সূর্যের আলো চোখে পড়তেই আড়মোড়া হয়ে, উঠে বসলো আয়শা। সকাল ঘড়িতে সাতটা, সতেরো বাজে।

আয়শা ফ্রেশ হয়ে, রান্না ঘরে গেলো। চা বানিয়ে তার বাবার ঘড়ের দিকে গেলো আয়শা। আফজাল সাহেব, রকিং চেয়ারে আধো শোয়া হয়ে তাসবি পড়ছেন। আয়শা কে দেখে উঠে বসলেন। আয়শা চায়ের কাপ টা হাতে দিতেই আফজাল সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন…

” সকাল বেলা তোর হাতের চা না খেলে, একদম ভালো লাগে না। ”

আয়শা হালকা হাসলো। বাবার হাতে বাজারের লিস্ট দিয়ে, বললো…” বাবা কিছু বাজার লাগবে। সময় করে বাজার এনো। ”

” আচ্ছা। ঠিক আছে আনবো।”

আয়শা বাবার রুম থেকে বেরিয়ে, রান্না ঘরের দিকে গেলো। চুলায় ভাত বসিয়ে আয়শা কাজ করতে শুরু করলো। গত কালকের কথা ভাবতেই, আয়শার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো। গত কাল নাছিম প্রথম বার তার প্রশংসা করেছে, এই লোকটা ভারী অদ্ভুত, ভাবতে না চাইলে ও মন চলে আসে। খারুস একটা, ভালো খারুস।

আয়শার পেছনে ওরিন দাঁড়িয়ে, আছে। আয়শা একদম খেয়াল করে নি। ওরিন খেয়াল করে, দেখলো, আয়শা কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছু একটা ভেবেই হাসছে। ওরিন আয়শার কাধে, হাত রাখতেই আয়শা কিছুটা ভরকে গেলো…
” তুই? কখন ঘুম থেকে উঠলি?”

” উঠেছি তো অনেক আগেই, আচ্ছা তুমি কি ভাবছিলে?”

আয়শা থালা-বাটি মুছতে মুছতে বললো ” কিছু না। ”

” কিছু একটা তো ঠিকই ভাবছিলে, কিন্তু কি?”

আয়শা ওরিনের মাথায় হালকা চাটি মেরে বললো…” তোকে সেটা ভাবতে হবে না, যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে, আয়। ”

” যাচ্ছি যাচ্ছি, ” বলেই ওরিন মাথা ডলতে ডলতে চলে গেলো।
ওরিন আয়নার সামনে রেডি হচ্ছে৷ সে দিনের পর থেকে আজ এক সপ্তাহ হয়ে, গেলো ওরিন ফরিদ কে দেখেনি৷ অবাক লাগছে খুব, যদি ফরিদ তাকে, ভালোই বাসে তাহলে একটা সপ্তাহে এক বারও তার সামনে কেনো আসলো না।

নাকি,বাবার কথায় ফরিদের ওরিনের ওপর আগ্রহ শেষ হয়ে গেছে। মনুষ বড়ই অদ্ভুত কখন কাকে, ভালো লাগে আবার কার কাছে থেকে মন সরে যায় বলা বড় মুশকিল। ওরিন রেডি হয়ে, ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। আয়শা ওরিনের প্লেটে খাবার দিয়ে রুমে গেলো। রেডি হবার জন্য।
আয়শা রেডি হয়ে, এসে অবাক হলো, ওরিন আনমনে খাবার নেড়েই যাচ্ছে। একটুও মুখে তোলেনি খাবার। আয়শা ওরনা ঠিক করতে করতে বললো.. ” কিরে ওরিন খাচ্ছিস না কেনো তুই? ”

” খাচ্ছি তো আপু। ” বলেই ওরিন একটু রুটি খেলো। কিছুক্ষণ বাদেই ওরিন খাবার রেখে, উঠে গেলো। আয়শা বলতে গিয়েও কিছু বললো না। ওরিনের মনের অবস্থাটা সে বুঝতে পারছে। ফরিদ কে ওরিন ভুলতে পারছে না। ভুলতে পারার কথা নয়। কেউ তার প্রিয়তম কে ভুলয়ে পারে না। বাবা ফরিদ কে মেনে নিলেই হয়তো দুজন কে এক করা যেতো।

———————————-

” ফার্স্ট ডে এট কলেজ এতো নার্ভাস হইনি, আজকে যতোটা নার্ভাস লাগছে। ”

নাছিম, ফরিদের টাই টা ঠিক করে, দিয়ে বললো..” আমার বিজনেস পার্টনার তুই। এতো নার্ভাস হলে চলবে?”

ফরিদ নিঃশ্বাস ফেলে বললো..” জানি না, ভাইয়া আমি দ্বায়িত্ব পূরন করতে পারবো কি না। ”

” পারবি, অবশ্যই পারবি। পারতে, তোকে হবেই। ওরিন কে পেতে হলে নিজে কে তুই প্রমাণ করবি। ”

” হুম। ইনশাআল্লাহ আমি আমার সব টা দিয়ে চেষ্টা করবো। ”

” চল ব্রেকফাস্ট করি। ”

নাছিম, এবং ফরিদ দুজনেই নাস্তার টেবিলে গেলো। দাদী বসে, আছেন। নাস্তা শেষে ফরিদ দাদীর দিকে ছল ছল চোখে, তাকিয়ে আছে। ছোট বেলায় যখন ফরিদ স্কুলে, যেতো দাদী কপালে চুমু না দিলে, ফরিদের মনে মনে রাগ হতো। দাদী ফরিদের রাগ ভাঙ্গানোর জন্য আদর করে, চুলে হাত বুলিয়ে দিতো। ফরিদের নিজের ভুলের কারনেই দাদীর কাছে থেকে এতো দূরে সরে গেছে।
ফরিদ বেরিয়ে, গেলো। দাদী মনে মনে তার দু নাতীর জন্য দো’য়া করে দিলেন। আজ শেহতাজ বেগমে খুব খুশি লাগছে। তার দু নাতী এখন স্বাবলম্বী এক জন দাদীর জন্য এর চেয়ে, খুশির আর ব্যাপার হতে পারে না। দাদীর চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে। দাদী হালকা হেসে চোখ মুছলো।

ফরিদ গাড়ি ড্রাইভ করছে, পাশেই নাছিম বসে, আছে। ধানমন্ডির সাংঘাতিক জ্যামে আধা ঘন্টা ধরে দু জন আটকে আছে। ফরিদ ক্ষানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো,
” আজকে প্রথম অফিস আমার আমি যদি লেট করি, তাহলে আমার এমপ্লিইরা কি ভাববে। বলো তো। ”

নাছিম ক্ষানিকটা হাসলো, ছোট ছোট দ্বায়িত্ব বোধ থেকেই মানুষ বড় দ্বায়িত্ব নিতে শেখে। ফরিদের সিনসিয়ারনেস নাছিমের ভালোই লাগছে।
ফরিদ গাড়ির জানালা নামিয়ে দিলো। ক্ষানিকটা দূর থেকে ওরিন ফরিদ কে দেখেই অবাক হলো। ফর্মাল পোশাকে ফরিদ কে বেশ অন্যরকম লাগছে।

ফরিদের পাশেই একজন বসে আছে। ওরিন লোকটাকে দেখতে পারছে না। জ্যাম কমতেই, ফরিদ গাড়ি ড্রাইভ করে, চলে গেলো। ওরিন ও কলেজের দিকে গেলো। ভাড়া মিটিয়ে, কলেজে ঢুকতেই দেখলো, তনু দাঁড়িয়ে আছে। ওরিন আর তনু মিলে ক্লাসে চলে গেলো। ক্লাসে বসে, ওরিন এক মনে, ফরিদের ব্যাপারে ভেবেই চলেছে।
মানুষ মানুষ কে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে পারে, ভাবতেই ওরিনের অবাক লাগছে। ওরিনের মনে মনে এতো অভিমান জমছে, কেনো? নাহ ওরিন আর কারো কথাই ভাববে না। তবুও আনমনে তার কথা কেনো মনে পড়ে?

__________________________

কিছুক্ষণ আগেই আয়শা অফিসে এসেছে। নিজের ডেক্সে বসে, দেখলো, নাছিম এখনো আসে নি। আয়শা কম্পিউটারে মনিটার অন করলো। আজকের মধ্যেই মারিয়া আর তুষারের বিয়ের ভিডিও কমপ্লিট করে, পেনড্রাইভে দিয়ে দেবে।
ম্যানেজার সাহেব, আয়শার ডেক্সের সামনে এসে বললো…
” খবর শুনেছেন নাকি আয়শা?”

” কি খবর স্যার? ”

” নাছিম স্যারের ছোট ভাই দশ তালার অফিসে আজকে থেকে বসবেন। নতুন বিজনেস পার্টনার। ”

আয়শা ক্ষানিকটা অবাক হলো, পরক্ষনেই ভাবলো দু ভাই এক সাথে কোম্পানি চালাবে স্বাভাবিক ব্যাপার। আয়শা খুব একটা গুরুত্ব দিলো না। ম্যানেজার স্যার আবার বললেন…

” সবাই কে যেতে বলেছে। নতুন বস কে স্বাগতম জানাতে হবে যে। ”

” স্যার আমার অনেক কাজ আছে। আজকের মধ্যেই শেষ করতে হবে। আমি যেতে পারবো না। ”

” আচ্ছা। ঠিক আছে, আমি আসি। ”

বলেই ম্যানেজার স্যার চলে গেলেন। আয়শা নিজের কাজে মন দিলো। ঘন্টা খানেক পর নাছিম নবম তলায় নিজের কেবিনে এসে বসলো। টেবিলে রাখা ফাইলটা চেক করতে করতে হঠাৎ আয়শার দিকে নাছিমের চোখ গেলো। গাড়ো সবুজ রংয়ের কামিজে আয়শা কে বেশ ফুটিয়েছে। ফ্যানের মৃদু বাতাসে আয়শার চুল গুলো উড়ছে। হালকা গোলাপি রংয়ের লিপস্টিক পড়লে আয়শা আরো বেশি সুন্দর লাগতো।

হঠাৎ আয়শা নাছিমের দিকে তাকানোর আগেই নাছিম ফাইল পড়ার ভান ধরলো, এখনো কেনো জানি না মনে হলো, আয়শার নাছিম তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আয়শার সিক্সসেন্স বেশ ভালো। সত্যি কি আদোও নাছিম তার দিকে, তাকিয়ে ছিলো? আয়শা নিজের মাথা চেপে ধরলো।

মারিয়ার বিয়ের ভিডিও গুলো পেন ড্রাইভে কপি করে, করে, নাছিম কে দিতে গেলো। যাওয়ার সময় পাস্তার বক্স নিতে, ভুললো না৷ নাছিমের কেবিনে উঁকি দিয়ে বললো…
” স্যার আসবো? ”

নাছিম কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে, বললো..” হ্যাঁ আসুন। ”

আয়শা ভেতরে ঢুকলো, নাছিম কে ব্যাস্ত দেখাচ্ছে। আয়শা নাছিম কে বললো.. ” স্যার মারিয়ার বিয়ের ভিডিও করা শেষ। আমি পেন ড্রাইভ টা নিয়ে এসেছি।”

নাছিম, পেন -ড্রাইভ টা নিয়ে, বললো। ” সন্ধ্যায় আপনার একাউন্টে টাকা পেয়ে যাবেন।”

আয়শা মনে মনে খুশি হলো, আয়শার দু – মাসের স্যালারি আর সাথে মারিয়ার বিয়ের ফটোগ্রাফির এক্সট্রা টাকা বাহ। দু বছরের খালি একাউন্টে টাকা জমা হবে, আয়শার খুশি খুশি লাগছে। আয়শা নাছিমের টেবিলে পাস্তার বক্স টা রেখে চলে গেলো।

লাঞ্চ বক্স টা নাছিমের চোখের সামনে আসতেই। নাছিম বক্সটা খুললো, পাস্তা দেখে বুঝতে বাকি রইলো না। এটা আয়শা পাঠিয়েছে৷ বক্সের নিচে একটা চিরকুট রাখা, নাছিম চিরকুট টা হাতে নিলো, চিরকুটে লেখা,

— আপনি ব্যাস্ত ছিলেন তাই, ডাক দিলাম না। আপনার জন্য পাস্তা বানিয়ে এনেছি। ভয় পাবেন না, ওখানে কিছু মেশাই নি। নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। —

নাছিম হালকা হাসলো। বক্স খুলে, পাস্তা খাওয়া শুরু করলো। আয়শা আড়াল থেকে, নাছিমের হাসি লক্ষ্য করলো৷ নিজের ডেক্সে যেতে, যাবে ঠিক তখনি আয়শা কারো সাথে ধাক্কা খেলো আয়শা হাতে বেশ ব্যাথা পেয়েছে । আয়শা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত ডলছে,

অপর দিক থেকে কেউ বললো..
” সো সরি, ব্যাথা লাগে তো?”



চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here