ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ৪৩+৪৪

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ৪৩

বেল বাজানোর পরও কেউ দরজা খুলছে না। ঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে দেখলো, দশটা বেজে নয় মিনিট। দরজায় হাত রাখতেই দরজাটা খুলে গেলো। আয়শা বাসায় ঢুকে অবাক হলো। বাসা পুরো খালি। আয়শা নিজের রুমে গেলো, বিছানায় ওরিন ঘুমিয়ে আছে। পরনে বাইরের জামা, গাল বেয়ে পানি পরে, শুকিয়ে দাগ হয়ে আছে।

বুঝাই যাচ্ছে ওরিন কান্না কাটি করে, ঘুমিয়ে গেছে৷ আয়শা ঘুমন্ত ওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো৷ দরজা আটকে দিয়ে, আয়শা ওয়াশ রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। আয়শা ফ্রেশ হয়ে, আয়শা আয়নার সামনে বসে, চুল মুছছে। ঠিক তখনি ওরিন একটু নড়া চড়া হয়ে, উঠে বসলো। আয়শা কে দেখে ওরিন অবাক হয়ে, বললো…

” আপু তুমি কখন এলে? ”

” যখন তুই দরজা, খুলে বেভুর হয়ে ঘুমাচ্ছিলি তখন।”

ওরিন চুল গুলো চেপে ধরে, বললো…” আমার খেয়াল ছিলো না। মাথাটা ভীষণ ধরেছে। ”

” বাবা কোথায়?”

” আসলে, ফরিদের এক্সিডেন্ট হয়েছে। আজ বিকেলে। হাস্পাতালের থেকে বাবা ধানমন্ডি গেছে। ”

” সব তো বুঝলাম ও এখানে এক্সিডেন্ট করলো কি ভাবে..?”

ওরিন আয়শাকে সব খুলে, বললো। ওরিনের গাল বেয়ে আবার পানি পড়ছে। আয়শা ওরিনের চোলহ মুছে, দিয়ে বললো। ” চিন্তা করিস না আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করবেন। তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি চা বানিয়ে আনি৷ চা খেলে ভালো লাগবে একটু। ”

ওরিন ফ্রেশ হতে,গেলো। আর আয়শা গেলো রান্না ঘরে, আয়শা চুলায় পানি বসিয়ে সারা দিনের কথা ভাবছে, কি অদ্ভুত ব্যাপার। রেস্টুরেন্টে ফ্রি আর আইসক্রিম ও ফ্রি তে খেলো, আগে থেকেই বা কে বিল দিলো। আয়শা ভেবে পাচ্ছে না। নিশ্চয়ই কেউ আয়শা কে ফলো করছে কিন্তু কে? নাছিম না তো, উফফ আয়শা আজে বাজে কি ভাবছে।

” আপু পানি তো বয়েল হয়ে, গেছে। কি ভাবছো? ”

আয়শা হালকা কাঁশি দিয়ে, উঠলো। “কিছু না। ” বলেই আয়শা দ্রুত চা বানিয়ে, সরে গেলো। ওরিন আয়শার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। তার বোন তার থেকে কিছু লুকাচ্ছে৷ মানুষের মন রহস্যময়, কখন কার দিকে টানে তা বুঝা মুশকিল , ওরিন নিজেই যে একজন উদাহরণ হয়ে গেছে।

———————————

আফজাল সাহেব ফরিদ কে নিয়ে, তাদের বাসার এপাটর্মেন্টে ঢুকলো মাত্র৷ ফরিদ কে দেখা মাত্রই বাগানের মালি ছুটে এলো। আফজাল সাহেব লিফটে উঠে নয় তালায় এলেন। বেল চাপবার ক্ষানিক ক্ষন পরেই কাজের সহকারী মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো। ফরিদ কে দেখে মৃদু চিতকার দিয়ে বললো…
” ফরিদ বাবা আপনের কি হইছে। ”

” কিছু না। খালা আগে ভেতরে যাই তারপর বলছি।”

আফজাল সাহেব ফরিদ কে ভেতরে নিয়ে, সোফায় বসিয়ে দিলো। ড্রইং রুমে কথা বলার শব্দ পেয়ে, শেহতাজ বেগম রুম থেকে বের হলেন৷ ফরিদের মাথায় ব্যান্ডেজ করা দেখে ঘাবড়ে গেলেন। ফরিদ সোফায় বসে, আছে। দাদি ড্রইংরুমে এসে বললেন।

” ফরিদের কি হয়েছে আফজাল সাহেব? ”

” বিকেলে বেলা, ফরিদ খুঁটির সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় ব্যাথা পেয়েছে। ”

শেহতাজ বেগম ফরিদের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আফজাল সাহেবের উদ্দেশ্য বললেন..” আফজাল সাহেব আপনি প্লিজ বসুন। ”

শেহতাদজবেগম সহকারী মহিলা কে বললেন,আফজাল সাহেবের জন্য চা -নাস্তা নিয়ে আসতে। আফজাল সাহেব বললেন। ” আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত হবেন না। আমি কিছু কথা বলতে এসেছি। ”

দাদী কিছুটা অবাক হয়ে, বললো ” আমার নাতী কি আবার কোন কান্ড বাধিয়েছে? ”

” নাহ। ফরিদ আজ আমার জীবন বাঁচতে গিয়ে, নিজেই আঘাত পেয়েছে। ”

নাছিম রুম থেকে এসে ফরিদ কে এ অবস্থায় দেখে, বললো৷ ” কি হয়েছে আংকেল। একটু বলবেন। ”

” আপনারা হয়তো জানেন না। ফরিদ গত দুই তিন দিন ধরেই আমার বাসায় আসে, আমার কাছে ক্ষমা চাইতে৷ আজ বিকাল বেলাও আমার বাসায় আসে, আমার কিছু কেনা কাটা করার জন্য বাইরে যাবো, ফরিদ আমার সাথে যেতে চায়। আমি বিরক্ত বোধ করলেও আমার পিছু পিছু আসে, হঠাত আমার পেছন দিয়ে গাড়ি যায়, আমি খেয়াল করি নি। আমাকে বাঁচাতে সরি দেয় ফরিদ কিন্তু নিজেই রাস্তার পাশে খুঁটির সাথে ধাক্কা খেয়ে ব্যাথা পায়। ”

দাদী ছল ছল দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে, রইলো। দুদিন আগে দাদী নিজেই শর্ত দিয়েছিলো। ফরিদ কে যদি আফজাল সাহেব ক্ষমা করে দেন তাহলে সে নিজেও ক্ষমা কিরে দেবে৷ তার শর্ত মানতে গিয়েই ছেলেটার এই অবস্থা হয়েছে৷ ভাবতেই শেহতাজ বেগমকে নিজের কাছেই অপরাধী বোধ হচ্ছে।

নাছিম ধীরে ধীরে ফরিদ কে রুমে নিয়ে, গেলো। আফজাল সাহেব বললেন…
” যে ছেলে, নিজের জীবন বিপদে রেখে অন্যের জীবন বাঁচাতে পারে। সে আর যাই হোক খারাপ মানুষ হতে পারে না। আসলে আমার অতীত নিয়ে, যে ভুল ধারনা টা জন্মে ছিলো। তা আজ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ”

বলেই উনি ঢুকরে কেঁদে উঠলেন। ” আজ ছেলেটার কিছু হয়ে, গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না। ”
শেহতাজ বেগম সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বললো..” কান্না করবেন না। আফিজাল সাহেব, যা ঘটেছে তা ভুলে গিয়ে নতুন করে এগিয়ে যাওয়া উত্তম। আমি মনে করি আপনার মেয়েকে আমি আমার বাড়ির বউ করতে চাই। ”

” আমার ছোট মেয়ের জন্য ফরিদের চেয়ে ভালো আর কেউ নেই। এতো টুকু আমি ঠিক বুঝেছি। আমার মেয়ে আপনার বাড়ির বউ হবে।”

শেহতাজ বেগম মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, ” আলহামদুলিল্লাহ। মিষ্টি নিয়ে আয়।”

সহকারী মহিলা মিষ্টি নিয়ে, এলো। দরজায় হেলান দিয়ে নাছিম দেখছে, এবং মিটি মিটি। মনে মনে বললো..আমার বিয়েটা কবে দিবে দাদী তোমার এই নাতীর দিকে কি তোমার চোখ যায় না?

আফজাল সাহেব বললেন, ” ডাক্তার বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই ফরিদ সুস্থ হয়ে যাবে। ”

” পনেরো দিন পরে, না হয় আয়োজন শুরু করবো আমরা। ”

” ঠিক আছে। সেটাই হবে৷ আজ তাহলে আমি আসি। ”

নাছিম গিয়ে,বললো… ” আংকেল ডিনার না করে যাওয়া হচ্ছে না। সবাই এক সাথে ডিনার করবো। ”
আফজাল সাহেব হালকা সম্মতি জানালেন।

আফজাল সাহেব বাড়ি ফিরলেন রাত বারোটায়। নিজের রুমে গিয়েই কিছুক্ষণ বসে রইলেন। আয়শা ওরিন দুজিন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন, কেনো। সব সময় বাইরে থেকে এলে আয়শা অথবা ওরিন কে ডাক দেন তবে আজকে কেনো বিপরীত। ওরিন ফিস ফিস করে বললো,..
” বাবা আমাদের কাউকে ডাক দিলো না কেনো?”

” জানি না। নাছিম স্যার দের বাসায় কিছু ঘটে নি তো?”

” বলতে পারছি না আপু। ওরা বাবা কে উলটো পালটা কিছু বলেছে৷ আমার বাবা কে কেউ কিছু বললে, আমি তাকে ছারবো না। ”

” চুপ কর আন্দাজে কিছু ভেবে নিস না। চল বাবার কাছে যাই। ”

আয়শা ওরিন বাবার রুমে ঢুকলো। আয়শা বাবা কে বললো…
” বাবা শুনলাম তুমি নাকি, ফরিদের বাসায় গিয়েছিলে?”

” হুম গিয়েছিলাম। ”

ওরিন বললো..” আসার পর থেকে তোমাকে এতো অন্যমনস্ক লাগছে কেনো বাবা? ওরা কি তোমাকে ভুল ভাল কিছু বলেছে?”

” না কিছু বলে নি। ”

বাবার নিরবতা দেখে ওরিনের চোখ দুটো ছল ছল করছে। ওরিন বাবার পায়ের কাছে, বসে পরলো। ” বাবা বিশ্বাস করো আমি ফরিদের সাথে ইচ্ছা করে যাইনি। তুমি আমার সাথে কেনো আগের মতো কথা বলো, না। তুমি ছাড়া আমাদের কে আছে, তুমি আমার মা তুমি আমার বাবা তুমি সব। আমি কোন ভুল করলে আমাকে ক্ষমা কিরে দাও। ”

আফজাল সাহেব ওরিনের কান্না মুছিয়ে দিয়ে, বললেন..
” এভাবে কান্না করিস না মা। তুই কোন ভুল করিস নি। আমি মনে শক্ত পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম৷ আজ আমার মন মুক্ত, চব্বিশ বছরের ধরে বয়ে, বেরানো ধারণা ভুল। তোরা কোন ভুল করিস নি। ”

” ও বাড়িতে কি হলো বাবা?”

আফজাল সাহেব আয়শার দিকে তাকালেন। ” ফরিদ আমার জান বাঁচিয়েছে, ফরিদের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো আমাকে, বাঁচাতো না। আমি ছেলেটার কাছে কৃতজ্ঞ। শেহতাজ বেগমের কথা ফেলতে পারলাম না। ওরিনের জন্য ফরিদের চেয়ে ভালো আর কেউ নেই। ”

আয়শার চোখ দুটো খুশিতে চিক চিক করছে৷ ওরিন স্তব্ধ হয়ে, দাঁড়িয়ে আছে। ওরিনে খুশি হয়েছে, নাকি বুঝা গেলো না। আফজাল সাহেব ওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে, দিলেন।
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ৪৪

কমলা রংয়ের পর্দা দুটো বাতাসের সাথে দুলছে। এক ফালি রোদ বিছানায় শুয়ে থাকা মানুষ টার চোখে এসে পরলো। মাথাটা ভার আর লাগছে খুব ফরিদের। সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ফরিদের কপালে ভাজ পরলো। শুকনো ঠোঁট টাকে অপর ঠোঁটে সাহায্য ভিজিয়ে নিলো। ফরিদ ধীরে ধীরে উঠে, বসলো। বিছানার পাশে রাখা টেবিল থেকে গ্লাস টা নিয়ে ঢক ঢক করে পানি পান করলো।

বালিশের পাশে রাখা ফোনটা ভাইব্রেট করা, ভু ভু শব্দ করছে। ফরিদ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে। অফিসের জরুরি ফোনও হতে পারে, তাই দ্রুত ফোন রিসিভ করতেই। ফোনের ওপাশ থেকে কেউ, মেয়েলি সুরে বললো…

” আসালামু আলাইকুম। ”

” ওয়ালাইকুমুসালাম। কে বলছেন? ”

” আমি ওরিন বলছি। ” ফরিদের কপালে সুক্ষ্ণ ভাজ পরলো। হঠাৎ করে, ওরিনের ফোন।

” কিছু বলছেন না কেনো?বোবা হয়ে গেলেন নাকি?”

” বোবা হইনি। আমার নাম্বার পেলে, কোথা থেকে?”

” এই যুগে ফোন নম্বর পাওয়াটা খুব একটা মুশকিলের ব্যাপার না। কথায় আসুন এবার? ”

” কি কথায় আসবো? ”

” বুঝেন না? কঁচি খোকা নাকি। শুনুন আপনাকে আমি বিয়ে করবো না। নো মিনস নো। ”

ফরিদ খাটের সাথে হেলান দিয়ে,বাঁকা হেসে বললো..
” ওহ রিয়ালি। বিয়ে নিয়ে মজা করছো? ”

” উহু আই এম সিরিয়াস। ”

” তোমার বাবা যে, কঠিন পদার্থ তাকে, বায়বীয় করতে পারেছি আর তুমি না বলেই তোমাকে বিয়ে করবো না? ভাবলে কি করে?”

ওরিন মুখে হাত চেপে হাসছে। একটু সিরিয়াস কন্ঠে বললো.. ” আমি পালিয়ে,যাবো।”

” তাতে তোমার বাবার সম্মান যাবে। আমার ক্ষতি হবে না বোকা।”

ওরিন মাথায় মৃদু থাপ্পড় মেরে, জ্বিভ কাটলো। ” এই এই আমি বোকা নই। নিজে যে একটা গবেট, অন্যর কথায় নেচে, কিডন্যাপ করি না। ”

” আমি গবেট হলে, তুমি গবেটের হবু বউ।”

” হুহহহ” বলেই ওরিন ফোনটা কেটে দিলো, ফরিদ হাসছে। ওরিন মাথা চেপে বসে আছে তার রাগ লাগছে সাথে ভালো ও লাগছে। ভালো লাগার কারন অজানা, তবে ভালো লাগছে কেনো এতো তার। ঝগড়া করেই হোক কিন্তু, প্রিয় মানুষটার দু সপ্তাহ পর কথা তো বলতে পেরেছে।

ওরিন ঠোঁট চেপে মুচকি মুচকি হাসছে৷ ওরিন হাত দুটো পাখির মতো মেলে রুম থেকে বের হয়ে, রান্না ঘরে গেলো। আয়শা আপু বরবটি কাটছে।এবং কিছু একটা ভাবছে ইদানীং আয়শা আপু কাজ করতে করতেও ঘোরের মধ্য চলে যায়। কি ভাবে কিছুই শেয়ার করতে চায় না।

ওরিন আপেল ধুয়ে, দেয়ালের সাথে, হেলান দিয়ে খেতে শুরু করলো। ওরিন আপেলে কামড় বসিয়ে, বললো…
” তোমার খারুস বসের কি খবর আপা?”

আয়শা ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে আন মনেই বলে, ফেললো ” ভালো। ” পরক্ষণেই সামনে তাকিয়ে দেখলো ওরিন দাঁড়িয়ে আছে দাঁত বের করে হাসছে। আয়শা ভ্রু কুচকিয়ে বললো..” এই তুই কি বললি ওরিন। ”

” তোমার খারুসের কথা বলেছি আপু।” বলেই ওরিন চোখ টিপুনি দিলো। আয়শা কোমড়ে হাত দিয়ে, বললো। ” খুব পেঁকে গেছিস না তুই? বুড়ি একটা। ” বলেই আয়শা ওরিনে পেছন পেছন দৌড়তে শুরু করলো, আয়শাও রুটি বানানোর বেলুন নিয়ে ওরিনের পিছন পিছন দৌড় দিলো।

ওরিন আগে, আগে ঘড়ে ঢুকে, গেলো আয়শা হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে, পরবে ঠিক তখনি কেউ আয়শার কোমড় জড়িয়ে ধরলো, আয়শা মনে মনে, দো’য়া পড়ছে। আজকে তার কোমড় শেষ। কয়েক সেকেন্ডে যাবার পর আয়শা ব্যাথা পেলো, না দেখে এক চোখ খুলে তাকালো। সুঠাম দেহের কেউ শক্ত হাত দিয়ে তাকে জরিয়ে ধরেছে।

আয়শা সরু দৃষ্টিতে চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখলো, এটা আর কেউ না নাছিম তাকে জরিয়ে,ধরেছে। আয়শা চিতকার দিয়ে,বললো…
” অ্যা অ্যা নাছিম স্যারের ভুত। বাঁচাও বাঁচাও। ”

নাছিম আয়শার কোমড় আরো চেপে আরো কাছে নিয়ে ডান দাত দিয়ে, মুখ চেপে ধরে বললো। ” আমি ভুত নই। আমি নাছিম। নাছিম হোসাইন। বুঝেছেন?”

আয়শা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললো। আয়শা মোচড়া মুচড়ি করছে, দেখে, নাছিম কিছুটা বিরক্ত হয়ে, বললো। ” আজগর সাপের মতো মচড়াচ্ছেন কেনো। ”

” ছাড়ুন আমাকে। ”

নাছিম, আয়শাকে ছেড়ে দিলো, আয়শা ধপাস করে ফ্লরে, পড়ে গেলো। আয়শা ব্যাথ্যায়, আউউউচ করে চিতকার করলো। নাছিম নিজের শার্টের কলার ঠিক করছে ।আয়শা বিরক্ত হয়ে বললো.…
” ছেরে দিলেন কেনো?”

” আপনি তো ছেড়ে দিতে বললেন।”

” তাই বলে এভাবে ধপাস করে ফেলে দিবেন। আমার তো কোমড়ের বারোটা বাজে গেলো।”

” হাতে কি সব সময় অস্ত্র নিয়ে চলেন?গরম চা ঢেলে দেন। বেলুন নিয়ে এসেছেন মারতে।”

” আপনাকে মারতে আসি নি। যাই হোক আপনি হঠাৎ এখানে?”

” ফরিদের ফ্যামিলি গার্ডিয়ান আমি আর দাদী৷ দাদী সিঁড়ি দিয়ে চলাচল করতে পারেন না। তাই আমি এসেছি, আংকেলের সাথে কিছু কথা আছে। ”

আয়শা ইশারা করে, রুম দেখিয়ে বললো..” বাবা রুমেই আছে। ”

” ওকে। আপনার কোমড়ের তিল টা অনেক সুন্দর । “বলেই নাছিম চলে গেলো।

” থ্যাংক ইউ ।” বলেই আয়শা বিষম খেলো। কি বললো লোকটা কি বললো? অভদ্র, ভয়ংকর লোকটা। আয়শা ইচ্ছা করছে চুল ধরে দুটো ঝাকি দিতে। আয়শা রাগে ফুসতে ফুসতে রান্না ঘড়ে চলে গেলো। নাছিম আফজাল সাহেবের রুমের দরজায় নক দিয়ে বললো…

” আসবো আংকেল? ”

” হ্যাঁ এসো বাবা। ”

নাছিম রুমে ঢুকতেই নাছিম কে বসতে বললেন আফজাল সাহেব। আয়শা কে ডাক দিলেন। বাবার ডাক পেয়ে আয়শা দ্রুত বাবার রুমে গেলো, আড় দৃষ্টিতে নাছিমের দিকে তাকালো। ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারি না, টাইপ চেহারা নিয়ে বসে আছে।

” মেহমান এসেছে, নাস্তার ব্যাবস্থা কর মা।”

” হ্যাঁ বাবা করছি। ” বলেই আয়শা সরে গেলো। নাছিম আফজাল সাহেব কে বললেন। ” আংকেল বিয়ের তো আর বেশি দিন বাকি নেই। আমাদের বাসা থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। ইনভাইট করাও প্রায় শেষ। এখন থেকে বিয়ের শপিং করলে, ভালো হতো না?”

” হ্যাঁ ভালোই হতো। আর ছয় দিন বাকি, আছে। বিয়ের শপিং বলে কথা। ”

” জ্বি। আংকেল, দাদী বলেছেন আজ বিকেলে আয়শা, ওরিন দের কে নিয়ে যেতে। সাথে আমার বোন মারিয়াও থাকবে। ”

” বেশ বেশ। তাহলে আজকে বিকাল থেকেই না হয় কেনা কাটা শুরু করে দাও। ”

নাছিম হালকা হেসে, বললো..
” জ্বি। থ্যাংক ইউ আংকেল ।”

আয়শা প্লেটে কিছু খাবার সাজাচ্ছে, সাথে চা তৈরি করছে। আয়শা বিড় বিড় করে নাছিম কে বকছে। চা কাপে ঢালতেই আয়শার মাতগায় বুদ্ধি খেলে গেলো। আয়শা বাঁকা হেসে বললো, ” আজকে তোমাকে ডিমের চা খাওয়াবো যাদু। ”

আয়শা একটা কাপে কাঁচা ডিম নিলো, তার ওপর
ডিমের ওপর চা ঢেলে চামুচ দিয়ে নাড়লো। তারপর নাস্তার ট্রে নিয়ে, বাবার রুমে গেলো। এক কাপ চা বাবার হাতে দিয়ে, ডিম গোলানো চা টা নাছিমের হাতে দিলো। আয়শা বাবা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, ” নাছিম চা টা খাও। আয়শা অনেক ভালো চা বানায়। ”

আয়শা হালকা হেসে বললো ” হুম। টেস্ট করেন না..”

নাছিম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে রইলো। নাছিম চা হাতে নিয়ে বসে আছে, আর খাচ্ছে না। কাঁচা ডিমের চা খাবে কি ভাবে, নাছিমে সব উল্টিয়ে আসছে।
আফজাল সাহেব বললেন। ” কি হলো নাছিম খাচ্ছো না কেনো? চা ভালো হয় নি?”

নাছিম ঢোক গিলে, ঠোঁট টেনে জোর পূর্বক হেসে বললো..” নাহ আংকেল ভালো হয়েছে চা টা। ”

বলেই নাক কুচকিয়ে এক ঢোকে সব চা খেয়ে ফেলে। আয়শা মুখ টিপে হেসে বললো..” বাবা নাছিম, স্যারের মনে হয় চা টা বেশি ভালো লেগেছে। আর এক কাপ চা আনবো? ” নাছিম কাঁশি দিয়ে, বললো
” নো নো। ইটেস ওকে। আমি একটু ওয়াশ রুমে যাবো।”
আফজাল সাহেব আয়শা কে, বললেন ” আয়শা নাছিম কে ওয়াশ রুম টা দেখিয়ে দাও। ”

আয়শা নাছিমের দিকে এক নজর তাকিয়ে বাইরে, চলে গেলো। নাছিম আয়শাকে অনুসরণ করে বের হলো, ” ওটা ওয়াশ রুউউউউউ..”
নাছিম আয়শার হাত ধরে, দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। আয়শা গোঙ্গাচ্ছে, নাছিমের নিঃশ্বাস আয়শার গালে, এসে পড়ছে।

” আউউউ ছারুন হাত ব্যাথা করছে। ”

” চায়ের নাম করে, কি খাইয়েছেন হ্যাঁ? ”

” আপনার মুখের থেকে ডিমের গন্ধ আসছে, ইউউ।”

নাছিম রাগী কন্ঠে বললো ” তার মানে আপনি৷ চায়ের সাথে ডিম মিশিয়েছেন। কাঁচা ডিম। ”

” আরে ছারুন আমাকে। ”

নাছিমের পেট মুচড়াচ্ছে, নাছিম দ্রুত বাথরুমে ছুটে গেলো। নাছিমের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে, আয়শা হাত ডলছে, হো হো করে হাসতে হাসতে বললো। ” কাঁচা ডিমের একশন শুরু। ”



চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here