ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ৪৫+৪৬

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৪৫

আফজাল সাহেব মনোযোগ দিয়ে, পত্রিকা পড়ছেন, এবং ঘন ঘন চশমা ঠিক করছেন। ওনার বিপরীত পাশের সোফায় লুঙ্গি পড়ে রাগী রাগী ভাব নিয়ে বসে আছে নাছিম। আজকে যেহেতু শুক্রবার তাই কারো অফিসের তাড়া নেই। আয়শা কিছুক্ষণ পর পর ড্রিইং রুমে তাকাচ্ছে, আর নাছিম কে দেখে মুখ টিপে হাসছে। হালকা বেগুনি রঙের শার্ট এবং আকাশী রঙের চেক লুঙ্গিতে তাকে নতুন জামাই এর মতো দেখতে লাগছে।

চোখ মুখ ভর্তি বিরক্ত আর রাগে ছাপ। আয়শাকে কাছে পেলে না জানি হাত মুচড়ে দেয় তাই, আয়শা কাছে যায় নি ভয়ে। নাছিম আবারো উঠে, বাথরুমে চলে গেলো। আয়শা রান্না করছে, এবং হো হো করে হাসছে। সকালে কাঁচা ডিমের চা খাবার পর থেকে নাছিমের কম পক্ষে আট-দশ বার বাথরুমে যেতে হয়েছে। আয়শার বাবা আফজাল সাহেব তাই নাছিমের হাতে লুঙ্গি ধরিয়ে, দিয়েছে।

ওরিন থালা মুছতে মুছতে বললো, ” আপু তুমি কাজ টা ঠিক করো নি। বেচারার অবস্থা দেখে মায়া লাগছে। ”

আয়শা ওরিনের গাল টেনে, বললো..” ওরে আমার মায়াবীনি রে..তুই ফরিদের দামি গাড়ির টায়ার পাংচার করে পঁচিশ হাজার টাকা লস করে, কাজ টা কি ঠিক করেছিস? ”

” আপু, ব্যাপার সেটা না। ফরিদ আমাদের ট্রিটের নাম করে, রেস্টুরেন্টের বিল আমাদের কে দিয়ে পে করেছে, এর রিভেঞ্জ নেওয়ার দরকার ছিলো। ”

” এই খারুস টা কি করেছে,জানিস?”

ওরিন মাথা দুলিয়ে না সূচক ইশারা করলো। আয়শা বললো, ” সকাল বেলা তোর পেছনে৷ দৌড়ে যখন ছুটে গিয়েছিলাম, তখন এই লোকটা আমার কো…”

আয়শা থেমে গেলো, ছোট বোন কে এসব বলা কি উচিত হবে, নাছিম আয়শার কোমড়ের তিল দেখে, সুন্দর বলেছে। কথা টা শুনতে কেমন দেখায়, আয়শার কিউরিওসিটি নিয়ে, চুপ করে রইলো আর কিছু বললো না। ওরিন আয়শার কাধে হাত রেখে বললো…
” কি হলো আপু কি করেছে তোমার খারুস? ”

আয়শা হালকা কাঁশি দিয়ে বললো, ” তোকে ধরতে গিয়ে, পরে যাচ্ছিলাম তখন উনি আসে…”

ওরিন ক্ষানিকটা অবাক হয়ে, বললো..” তার পর?”

” তার পর কি? কিছু না তুই বাসন পরিষ্কার কর, আমার রান্না বাকি আছে। এখন বলার সময় নেই। ” বলেই আয়শা ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

সেই সকাল বেলা এসে নাছিম এ বাসায় আটকে গিয়েছে বার বার বাথরুমে যাবার কারনে, অনলাইন মিটিংয়ে ঠিক মতো জয়েন হতে পারে নি। তার পর আবার শরীর টাও বেশ দূর্বল লাগছে। মাথায় ভোতা যন্ত্রণা হচ্ছে। ক্ষুধায় পেটের ভেতর গুর গুর শব্দ হচ্ছে।
নাছিম শুকনো ঠোঁট টাকে, ভিজিয়ে ঘড়ির দিকে, তাকালো সবে মাত্র বারোটা বাজে বিশ মিনিট।

নাছিম সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। এদিকে সেদিক পায়চারি করতে করতে নাছিম দেখলো আয়শা কোমড়ে ওরনা, পেচিয়ে মন দিয়ে রান্না করছে। আয়শার নাকে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামছ জমেছে। রান্না ঘর থেকে মাংস কষানো গন্ধ আসছে, নাছিম জোরে হাঁচি দিতেই আয়শা এবং ওরিন সামনে দেখলো নাছিম দাঁড়িয়ে আছে।

ওরিন আয়শার কানে ফিশ ফিশ করে করে বললো, ” আপা উনি এখানে মনে হয়, তোমাকে দেখতে এসেছে। ”

আয়শা কড়াই নাড়তে নাড়তে বললো..” ধুর। কি যে বলিস। এক জায়গায় কতক্ষণ বসে থাকবে এই জন্যই হয়তো পায়চারি করছে। ”

ওরিন ঠোঁট উলটিয়ে বললো, ” কি জানি৷ আমার তো মনে হয় তোমাকে দেখছিলো। ”

বলেই ফিক করে, হেসে ওরিন নাছিমের কাছে গেলো। নাছিমের উদ্দেশ্য বললো, ” আপনার কিছু লাগবে ভাইয়া। ”

নাছিম আমতা আমতা করে বললো ” এক গ্লাস পানি। ”

ওরিন দ্রুত টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নাছিম কে দিলো। নাছিম পানির গ্লাস টা নিয়ে, একটা রুমে, ঢুকলো। রুমে ঢুকতেই নাছিম বুঝতে পারলো এটা আয়শা এবং ওরিনের রুম। বেশ পরিপাটি করে রুম টা সাজানো, বারান্দায় নানা রংয়ের ফুল আর গাছ বাতাসে সাথে দুলছে।

নাছিম কম্পিউটারের টেবিলের দিকে চোখ গেলো। এটা নিশ্চয়ই আয়শার টেবিল হবে। পাশে গোলাপি রংয়ের কভারের ডায়রি রাখা কিছু ফাইলের ওপর।
নাছিম ডায়রীটা হাতে নিয়ে, দেখলো, ডায়রির ওপরে লেখা ” মন খারাপের ডায়রী”। নাছিম ডায়রীটা খুলতে যাবে ঠিক তখনি ওরিন, রুমে চলে এলো।

” ভাইয়া আপনি এখানে। ”

নাছিম আমতা আমতা করে,বললো।” আসলে, পায়চারি করতে করতে এই রুম টার সামনে এলাম। বাইরে থেকে সুন্দর লাগছিলো তাই, ভেতরে দেখতে এলাম। রুম টা কোন হোমপ্লেনার দিয়ে সাজিয়েছো?”

ওরিন হালকা হেসে, “বললো এটা কোন হোমপ্লেনার সাজায় নি এটা আয়শা আপু সাজিয়েছে। ”

” দ্যাটস সো নাইছ।”

” থেংক্স। ভাইয়া লাঞ্চ করতে ডাকছেন বাবা৷ ”

” মাত্র সারে বারোটা বাজে, এতো আরলি লাঞ্চ?”

” আসলে বাবার সুগার আছে। ডক্টর ফুড টাইম দিয়েছে। ”

” ওকে। তুমি যাও। আমি আসছি। ”

” আচ্ছা। ” বলেই ওরিন চলে গেলো। নাছিম আবারও ডায়রীটা হাতে নিলো। ডায়রীর প্রথম পৃষ্ঠা পড়ে নাছিম বুঝতে পারলো এটা আয়শার ডায়রি। দ্রুত কয়েক পাতা উলটে পড়ে, নাছিম হাসলো। ডায়রী টা আগের জায়গায় রেখে নাছিম বেরিয়ে গেলো।

আফজাল সাহেব এবং নাছিম খাবারের টেবিলে বসে আছে। নাছিমের মনে মনে শান্তি লাগছে, এবার পেট ভরে খাওয়া যাবে। আয়শা আফজাল সাহেবের প্লেটে সবজি এবং মাংস দিলো। নাছিমের প্লেটে ভায়ের সাথে দিলো শুধু কাঁচ কলা ভার্তা। নাছিম অবাক হয়ে, শুকনো মুখে, আয়শার পানে তাকিয়ে, রইলো।

আয়শা মুখ টিপে হাসলো। আবার সিরিয়াস মুখ করে বললো ” আপনার না পি পি হইছে। তাই কাঁচা কলা ভর্তা আপনার জন্য। ”

” এই আয়শা ,নাছিম কে একটু হলেও মাংস অথবা মাছ দে। ”

” নাহ বাবা। ওনাকে কাঁচ কলা ভর্তা খেতে হবে। নাহলে পেট পাতলা…।”

নাছিম আয়শা কে থামিয়ে, দিয়ে বললো..”থাক মিস আয়শা আমি বুঝতে পেরেছি। আজ না হয়, কাঁচা কলা দিয়ে খাই।”

বলেই নাছিম খাওয়া শুরু করলো। নাছিমের মুখ খানা দেখার মতো, আয়শার ইচ্ছা করছে ছবি তুলে, সবাই কে ছবি তুলে দেখাতে। আয়শা নাছিমের কাছে গিয়ে, বললো..” আরেক টু দেই কাঁচা কলা ভর্তা? ”

” নাহ থাক আর লাগবে না। ”
নাছিম কাঁশি দিয়ে, কি যেন বিড় বিড় করে বলছে। আয়শা শুনতে পেলো না। তবে আয়শা হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর নাছিম তাকে বকছে। বকলে বকুক। তাতে আয়শার কি, আয়শা তো আর শুনতে পারছে না। আয়শা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাছিমের খাওয়া দেখছে।

নাছিম হাত ধুতে ভেসিনে গেলো, আয়শা প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র রাখতে রান্না ঘরে, গেলো। আয়শা নাছিমের পেছনে দাঁড়িয়ে গুন গুনিয়ে গান গাইছে। নাছিম ভ্রু কুচকিয়ে তাকালো, আয়শা হালকা হেসে বললো…
” স্যার কেমন লাগলো কাঁচ কলা ভর্তা? ”

” প্রথম বার টেস্ট করেছি, এক্সপেরিয়েন্স খারাপ ছিলো না। নট নেড এট অল।”

বলেই, নাছিম চলে গেলো। আয়শা মুখ ভেংচি কাটলো ‘ ভয়ংকর লোক একটা , মনে হারবে তবুও মুখে হারবে না।’ আয়শা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে, এমন সময় আফজাল সাহেব আয়শার হাতে ঔষধ ধরিয়ে দিয়ে বললেন…

” এগুলো নাছিম কে দিয়ে আয়। হঠাৎ করে ছেলেটার ডায়রিয়া হলো কেনো বল তো?”

আয়শা না বুঝার ভান ধরে বললো ” কি জানি বাবা। স্যার প্রায় বাইরের খাবার খায়, এই জন্যই হয়তো পেট খারাপ হয়েছে। ”

” আচ্ছা। তুই এগুলো নাছিম কে দিয়ে ,আয় আমি আমার রুমে যাই।”

বলেই আফজাল সাহেব চলে গেলেন। মেহমান দের জন্য বরাদ্দ রুমে গেলো আয়শা। দরজা হাত দিয়ে নক করতেই দরজা খুলে গেলো। নাছিম লুঙ্গি প্যাচ দেয়ার চেষ্টা করছে। আয়শার ভীষণ হাসি পাচ্ছে, প্রিয় মানুষ টিকে লুঙ্গি পড়লে কেমন দেখতে লাগতে পারে, আপনারাই কল্পনা করুন।

আয়শা হাল্কা কাঁশি দিয়ে, বললো। ” এই ঔষধ গুলো বাবা পাঠিয়েছে । এগুলো খেয়ে নিবেন। ”
নাছিম তাড়া দিয়ে বললো, ” ওকে। ওকে।”

বিকেল বেলা, নাছিম সুস্থ বোধ করছে, তাই আর বেশি লেইট না করে বের হলো। সাথে, আয়শা এবং ওরিন ও গেলো। আয়শা নাছিমের পাশে, বসে আছে। সারা দিনেরর কথা ভাবতেই তার হাসি পাচ্ছে। আয়শা খুব কষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখেছে।
।#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৪৬ (মেঘা পর্ব)

বিকেলের কড়া রোদ সচ্ছ কাঁচের মধ্যে দিয়ে, ভেতরে প্রবেশ করছে। জানালা দিয়ে, ওরিন বাইরের দৃশ্য দেখছে। বেশ কিছুক্ষন ধরে তারা জ্যামে আটকে আছে। ওরিন বিন্দু বিন্দু ঘামছে, বাসন্তি রঙের জামা আর সূর্যের আলোয় তাকে শুভ্র হলুদ কন্যা লাগছে।

আয়শা এবং নাছিম এক সাথে বসে আছে। আয়শা পিট পিট করে আড় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে, নাছিমের দিকে। নাছিম খুব ভালো করে বুঝতে পারছে যে আয়শা তাকে আড় দৃষ্টিতে দেখছে, তবুও নাছিম প্রকাশ করছে না, মনে মনে উপভোগ করছে। আজকে সকালের ঘটনা মনে আসতেই আয়শা জানালার দিকে তাকিয়ে, হাসছে।

জ্যাম ছুটতেই নাছিম গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো, মিনিট পনেরো পর তারা একটা শপিং মলের সামনে থামলো। নাছিম সিট বেল খুলতে খুলতে বললো, ” আমরা এসে গেছি, মার্কেটে।”
আয়শা ওরিন বের হলো। গাড়ি থেকে বের হয়ে, ওরিন থমকে গেলো সামনে ফরিদ দাঁড়িয়ে আছে। ওরিনের গলা শুকিয়ে আসছে, ওরিন শুকনো ঢোক গিললো, কত গুলো রাত ওরিন এই লোকটার জন্য কেঁদে পার করেছে। কতো গুলো, দিন মনে কষ্ট নিয়ে অভিমান জমিয়েছে ওরিন। বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো ওরিন।

মাথার এক পাশে একটু খানি বেন্ডেজ করা, ফরিদ ওরিন কে দেখে এক, ফালি হাসি দিয়ে বললো…” কেমন আছো ওরিন?”

ওরিন মুখ ঘুরিয়ে, অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। ফরিদ আর কিছু বললো না, সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে ওরিন অভিমান করেছে, তার ওপর। আয়শা নাছিম ও ওরিন ফরিদ শপিং মলের ভেতরের ঢুকলো। ক্ষানিক ক্ষন ঘুরা ঘুড়ির পর তারা একটা শাড়ির দোকানে গেলো। গাড়ো লাল রঙের বেনারসি নিয়ে, ট্রায়েল রুমে গেলো ওরিন। শাড়িটা কোন মতে পেচিয়ে বের হলো।

ফরিদ ওরিন কে দেখে মিটি মিটি হাসছে। ওরিন চোখ গরম করে, তাকিয়ে বললো,” হাসছেন কেনো? ”

ফরিদ হাতে হাত রেখে দেয়ালে ভর দিয়ে বললো, “শাড়ি পড়তে পারো না? বাই দা ওয়ে উল্টো শাড়িতে তোমাকে খারাপ লাগছে না, শুধু একটু পগলী লাগছে। ”

ওরিন নিজের শাড়ির দিকে, তাকিয়ে দেখলো সত্যি সে উল্টো শাড়ি পড়েছে। ” শীট!” ফরিদ এখনো মুচকি মুচকি হাসছে। ওরিন আবারো দৌড় দিয়ে ট্রায়েল রুমে চলে গেলো। নাছিম এবং আয়শা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ফোন আসতেই নাছিম একটু দূরে সরে গেলো ফোনটা রিসিভ করা জন্য। আয়শা নিজের জন্য, শাড়ি সিলেক্ট করছে কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না।

আয়শা দাঁড়িয়ে শাড়ি গুলো, চেক করছে ঠিক তখনি নাছিম আয়শার কাছে এলো। একটা শাড়ি হাতে নিয়ে৷ বললো.. ” আয়শা এই শাড়ি টায় আপনাকে ভালো লাগবে।”
আয়শা শাড়িটা হাতে নিলো, একটা আকাশীরংয়ের শাড়ি। আয়শা একটু চমকালো এর আগেও নাছিম তাকে আকাশী রঙের শাড়ি দিয়ে ছিলো। এই লোকটা কি আকাশী রঙ এতো পছন্দ করে কেনো?

” কি ভাবছেন?”

” কিছু না। শাড়িটা একটু বেশি গর্জিয়াছ। ”

” হ্যাঁ, বাট আই গেছ এটা আপনাকে বেশি মানাবে। ”

” আচ্ছা। ”

বলেই আয়শা দোকানী কে শাড়িটা পেক করে দিতে বললো। ওরিন হাতে ভারী ব্যাগ গুলো নিয়ে ঠিক মতো হাটতে পারছেনা। ফরিদ ওরিনের হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে নিলো। ওরিন বিরক্ত হয়ে বললো.. ” আপনি ব্যাগ নিলেন কেনো?”

” পাশে দাড়ানো রুগ্ন মেয়েটা, ব্যাগের ভার বইতে পারছেনা। আমার মায়া হয় তাই নিলাম। ”

ওরিন সরু দৃষ্টিতে তাকালো, ফরিদের চেহারায় হাসি হাসি ভাব, সামনের চুল গুলো উড়ছে। ওরিনের ইচ্ছা করছে ফরিদ কে জরিয়ে ধরতে। কি ভাবছে টা কি সে ওরিন কি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি? হায়! আল্লাহ আমাকে বাঁচাও। ওরিন বিড় বিড় করে বললো, ” এতো দিন গায়েব থেকে আজ এসেছে উদ্ধার করতে। ধন্য হয়ে গেলাম আমি। ”

আয়শা ওরিন আর ফরিদের পিছু পিছু হাটছে, নাছিম ঠিক আয়শার পাশেই হাটছে। হঠাৎ নাছিম আয়শার হাত টান দিয়ে অন্য দিকে গেলো, আয়শা কিছু আয়শা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি নাছিম ইশারা করে চুপ করতে বললো। ওরিন ফরিদ একটু দূরে যেতেই নাছিম বললো… ” ওরা তো কাপিল। ওদের সাথে আমাদের না হাটাই ভালো ওরা ওদের মতো সময় কাটাক। ”

” ঠিক বলেছেন। কিন্তু আমরা কোথায় যাবো?”

” এতো বড় শপিং মলের যাওয়ার জায়গার অভাব আছে। আমার শপিং বাকি আছে। আই হেভ টু গো।”

” আর আমি কি, মুড়ি খাবো।”

” আমার সাথে আসতে পারেন। ” বলেই নাছিম হাটা শুরু করলো নাছিমের পিছু পিছু আয়শা হাটছে। নাছিম নিজের জন্য স্যুট কিনলো, আয়শা এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ একটা মেয়ে স্টাফ এসে, বললো ” স্যার আপনার বডি সাইজ মাপ লাগবে। নাছিম সম্মতি জানালো, মেয়েটা নাছিমের কাধে কোমড়ের মাপ নিলো, ব্যাপার টা আয়শার একদম ভালো লাগলো না। আয়শা মুখ ভেংচি দিয়ে ওখান থেকে সরে গেলো।

শপিং শেষে, আয়শা কে কেউ খুঁজে পেলো না। নাছিম বিরক্তি তে বিড় বিড় করে বললো, ‘এই মেয়েটা হুট হাট কোথায় গায়েব হয়ে যায়। জাস্ট ডিজগাস্টিং। বলেই নাছিম ফোন দিলো কিন্তু আয়শা ফোনটা রিসিভ করলো না কেটে দিলো।
নাছিমের রাগ দেখে ওরিন ভয়ে ভয়ে ফোন দিলো। আয়শা ফোনটা রিসিভ করেই ওপাশ থেকে বললো,

,” স্যার কে বলে দিস আমি বাসায় চলে এসেছি। বাবার জরুরি বাসায় আসতে বলেছে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য। ” বলেই আয়শা কল টা কেটে দিলো। আয়শার কথা গুলো অন্য রকম লাগছে। ওরিন ভালো করেই বুঝতে পারছে কিছু একটা আয়শার হয়েছে। না হলে আয়শা কখনো এতো কম কথা বলে ফোন কাটে না।

” মিস আয়শা কি বললো, ওরিন?”

নাছিমের কথায় ওরিনের ধ্যান ভাংলো। ওরিন বললো..” বাবা জরুরি কাজে বাসায় যেতে বলেছে তাই আপা বাসায় চলে গেছে। ”

” হাউ ইরেস্পন্সিবল সি ইজ।আমাকে এক বার বলে যেতেও তো পারতো। ”

” চিন্তা করো না ভাইয়া। আমি ওরিন কে বাসায় দিয়ে আসছি।”

নাছিম গাড়ির চাবিটা ফরিদের হাতে দিতে যাবে ঠিক তখনি ওরিন বললো,” ভাইয়া আমরা রিক্সায় যাই, আসলে প্রাইভেট কারে ওঠার অভ্যাস নেই আমার।”

ফরিদ ক্ষানিকটা অবাক হয়ে, বললো” রিক্সায় এতো জিনিস পত্র নিয়ে?”

” কোন সমস্যা হবে না।”

ওরিন ফরিদ রিক্সায়,উঠলো। নাছিম গাড়ি নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো। সন্ধ্যা নামতে আর খুব বেশি সময় নেই। রিকশা আপন গতিতে চলছে,ওরিনের চুল গুলো ফরিদের চোখে মুখে লাগছে তবে সে সরাতে পারছে না কারন তার হাতে শপিং ব্যাগ। ক্ষানিকটা পর পর ওরিনের কাধ ফরিদের কাধের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে ওরিন মৃদু হাসছে।

রিক্সা থামলো শাহবাগ মোড়ের সামনে, ওরিনন রিক্সা থেকে নেমে বললো ” সো হাউ ওয়াজ দ্যা রিক্সা ডাইড?”

” খারাপ না। ”
ফরিদ মনে মনে বললো, তুমি সাথে ছিলে তাই হয়তো খারাপ ছিলো না। তুমি সাথে ছিলে বলেই হয়তো এটা আমার লাইফের বেস্ট রিক্সা রাইড গুলোর মধ্য একটা। তোমাকে কতোটা চাই, তা বুঝানোর ক্ষমতা আমার নেই ওরিন, কোন এক সময় তুমি নিজেই বুঝে নিও।

ওরিন বাসায় আসতেই দেখলো টেবিলে খাতা কাজগজের ওপর আয়শা মাথা দিয়ে শুয়ে আছে, আয়শার চোখ দুটো ক্ষানিক লাল। ওরিন, আয়শা কে দেখে অবাক হলো। আয়শা ওরিন কে দেখা মত্র হেসে বললো,
“এসেছিস। বাবা আমাকে লিস্ট করতে দিয়েছে। কি কি আনতে হবে আমার মনে পড়ছে না, তুই একটু দেখ না ওরিন। ”

ওরিন চেয়ারে, বসতে বস্তে বললো,” ওসব পড়ে হবে। আগে বলো তুমি কেনো কান্না করেছো?”

আয়শা হাসার চেষ্টা করে,বললো ” ধুর বোকা কি আর হবে? চোখ চুলকাচ্ছিলো তাই হয়তো লাল হয়ে গেছে। ”
ওরিন আয়শার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকালো। আয়শার সাথে কিছু একটা তো হয়েছে, কিন্তু এখন আয়শা বলবেনা। কিন্তু কি হয়েছে সেটা নাছিম ভালো উত্তর দিতে পারবে।

ওরিন নিজের ঘরে গেলো, ফ্রেশ হয়ে, বারান্দায় গিয়ে ফরিদের ফোনে কল দিলো, ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে, ফরিদ হাসতে হাসতে বললো।
” কি ব্যাপার আসতে না আসতেই ফোন? আমাকে ছাড়া কি থাকতে পারছো না?”

” এই চুপ থাকেন। আপনাকে ফোন দেই নাই। নাছিম ভাই কে ফোনটা দেন। ”

” আমি থাকতে নাছিম ভাই কেনো?”

” দিতে বলছি দেন। এক্ষুনি। ”

ফরিদ দ্রুত গিয়ে নাছিম কে ফোনটা দিলো। নাছিম ফোন রিসিভ করতেই ওরিন, বললো, ” ভাইয়া আপুর সাথে কি কোন সমস্যা হয়েছে?”

নাছিম ভ্রু কুচকিয়ে বললো “নাহ তো কেনো?”

” এসেছি পর থেকেই দেখছি আপার চোখ দুটো লাল। আপা কান্না করলেই চোখ লাল হয়ে যায়। কথা ও খুব একটু গম্ভীর। আজকে সারাদিনের কোন প্রব্লেম হয়েছে?”

” তুমি আর ফরিদ হাটছিলে তখন আমি আর আয়শা অন্য একটা সপে গিয়েছিলাম কমপ্লিট স্যুটের বানাতে। একটা মেয়ে আমার মাপ নিচ্ছিলো তার আগ পর্যন্ত আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। তারপর দোকান থেকে বের হতে দেখি আয়শা নেই। ”

ওরিন অবাক হলো, এবার বুঝতে পারলো। বোনের মন খরাপ হবার কারন। আসলে সবাই এমন কেউ তার প্রিয় মানুষ কে অন্য কারো সংস্পর্শে দেখতে পারে না। নাছিম কে টাচ করায় আয়শার ভালো লাগেনি।


চলবে
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here