ইংলিশ টিচার পর্ব ১২

#ইংলিশ_টিচার
পর্ব-১২
সুমনা হক

শুভর আগ্রহ দেখে ভদ্রলোক প্রশ্ন করেই ফেললেন
-আচ্ছা আপনার কি হয় ওরা?
শুভ একটু সময় নিয় উত্তর দিলো
-মিলি আমার স্ত্রী।
লোকটা আরো আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাস করলেন
-মিলি মানে ছোট মেয়েটা?
-জ্বী।
-আপনি তাদের কথা আমাকে জিজ্ঞাস করছেন কেন?আপনার সাথে কি যোগাযোগ নেই? আচ্ছা হ্যাঁ যোগাযোগ থাকবেই বা কেমন করে এসব মেয়েদের সাথে কি আর ভালো মানুষের যোগাযোগ থাকার কথা।
-আপনি মিলিকে ভুল বুঝছেন। মিলিকে সেদিন বাসা থেকে বের হতে আমিই বাধ্য করেছিলাম, তাই মিলির পরিচিত কেউ হয়তো বাসায় দিয়ে গেছে।

-হয়তো, কিন্তু সত্যিই কেউ একজন এসেছিলো।আর সে জন্যই তো এর পরেরদিন রাজিব গিয়ে মিলির বাবাকে অনেক কথা শুনিয়ে আসে।

-রাজিব কে?
-রাজিব হলো এই এলাকার একটা মস্তান। মিলিকে ডিস্টার্ব করাতে একদিন এই রাজিব এলাকাবাসীর কাছে মাফ চাইতে হয়েছিল।এই রাজিব নাকি মিলিকে অনেক পছন্দ করতো,সে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মিলির বাবাকে অনেক মানুষ এর সামনে নানান ধরনের কথা শুনিয়েছে।
-তারপর!
-তারপর লোকমুখে শুনেছি মিলির বাবা ঠিক তার পরেরদিন ঘুম থেকে আর উঠেনি সকালে।লোকটা ঘুমের মধ্যেই স্টোক করে মারা গেলো।

-আপনি কি বলছেন এসব!!
-জ্বী মিলির বাবা খুব চিন্তাই পড়ে গিয়েছিলো কি হবে মিলির আর রিমির।রিমির জন্য ভালো আর বিয়ে ও আসেনা সেই সাথে মিলি ও চলে এসেছে স্বামীর বাড়িতে থাকতে পারেনি। তার মধ্যে রাজিব নামের ছেলেটা মিলিকে আবার বিরক্ত করছিলো।

আর বাড়িটা বিক্রি করেছে মূলত রাজিব আর এলাকাবাসীর জন্য,তারা এমনভাবে মিলি আর রিমির সাথে আচরণ করতে লাগলো যে তারা আর থাকতে পারেনি। তারা শেষমেশ বাড়ি টা বিক্রি করেই দিয়েছে।

শুভর চোখ বেয়ে পানি পরছে এবার আর শুভ নিজেকে সামলাতে পারেনি।
শুভ নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বললো
-আচ্ছা এখন মিলিরা কোথায়? আমাকে প্লিজ জানলে বলেন। আমার এইটা জানা অনেক জরুরি।
-আমি তো জানিনা। আর বাড়ি বিক্রি নিয়ে সব কথা একটা লোকের সাথে হয়েছে তাদের দুই বোনের সাথে কথা হয়নি।
-ঐ লোকের নাম্বার টা দেওয়া যাবে?
-না ভাইয়া। লোক টা আগেই আমাকে বলে দিয়েছে তার ব্যাপার এ কোনো তথ্য কাউকে না দিতে।
-এটা কেমন কথা!
-এমনি কথা হয়েছিল আমাদের মাঝে।
-আপনি তাহলে আর কোনোভাবে আমাকে সাহায্য করতে পারবেনা?
-না।
-আচ্ছা ভালো থাকুন আর মিলিদের ব্যপারে কোনো ইনফরমেশন পেলে আমাকে কষ্ট করে একটু জানাবেন ।

কথা শেষ করতেই শুভর সে কি কান্না। মিলিকে এত্ত ভালোবেসে ফেলেছে শুভ আজ তা ভালো করে বুঝতে পারছে।মিলিকে এত্তদিন শুভ পাবেই এমন একটা ধারনা ছিলো কিন্তু আজ যখন শুভ বুঝতে পারলো মিলি আর শুভর কাছে নেই আর মিলিকে পাওয়া যাবে কিনা তার ও কোনো ঠিক নেই, এখন আর শুভ নিজেকে সামলাতে পারছেনা। আর শুভ ভালোই বুঝতে পারছে মিলির বাবা মারা গেলো শুধুমাত্র দুশ্চিন্তা থেকে আর এই দুশ্চিন্তার প্রধান কারন মিলিকে শুভর মেনে না নেওয়া।

আর তাই হয়তো মিলি শুভকে মাফ করতে পারেনি আর পারবে ও না।শুভর নিজেকে আরো অপরাধী মনে হচ্ছে।

শুভ সেইদিন সিদ্ধান্ত নিলো মিলির কলেজ এর কাগজে আর কোনো এড্রেস আছে কিনা সব চেক করবে।মিলির কাছে যেভাবেই হোক শুভ মাফ চাইবে।

পরের দিন সকালে ৯ টাই কলেজ এ চলে যায় শুভ।
গিয়ে দেখে কেয়ারটেকার ছাড়া আর কেউ আসেনি।
গিয়ে সব কাগজপত্র চেক করব কিন্তু কিছুই পায়নি।
সব জায়গাতে এই একটা এড্রেস শুধু লিখেছে মিলি।

শুভর দিনরাত সব এক হয়ে গেছে, এখন আর সে আগের মতো নাই।ক্লাসে গিয়ে তেমন ভালো ক্লাস নিতে পারছেনা,সব কলিগরা এই ব্যাপার গুলো খেয়াল করতে শুরু করলো।
এভাবে অনেকদিন চলে গেলো কিন্তু শুভ আর নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারলো না।
প্রতিদিন মিলির সই করা ডিভোর্স এর কাগজ টা দেখত শুভ আর ভাবতো মিলিকে ভেবেই নিয়েছে আমি সাইন করে দিয়েছি,সেদিন যে বললাম কথাট তাহলে কি মিলি তা শুনতে পায়নি।

একদিন হঠাৎ করে শুভ তার পরিবার কে বলে সে আর দেশে থাকবেনা।
বাসার সবাই অবাক হয়ে আছে!! এসব কি বলছে শুভ,
শুভর মা তো প্রায় কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।
শুভর মা কান্নাকাটি করে বলতে শুরু করলো
-ঐ শয়তান মেয়েটা চলে গেছে ঠিকি কিন্তু বাহিরে গিয়ে ও তার শয়তানি চালিয়ে যাচ্ছে।আমার ছেলেকে কালা জাদু করেছে,আমার ছেলেকে শেষ করে দিতে চাইছে।
এত্ত ভালো চাকরি রেখে শেষমেশ আমার ছেলে বিদেশ চলে যাবে!
এই মেয়ে আমার সংসার শেষ করে দিলো।
শুভ এবার রেগে গিয়ে বললো
-আহ মা! কি সব আজেবাজে কথা বলছো তোমার মাথা ঠিক আছে?
-মাথা ঠিকি আছে।কত মানুষ বউ ছেড়ে ডিভোর্স দিয়ে নতুন করে সংসার করে। কিন্তু আমার ছেলে কেন পারছেনা?
-আমি তোমাকে আবারো মনে করিয়ে দেয়, মিলির সাথে আমার কোনো ডিভোর্স হয়নি।আর তাই দ্বিতীয় বিয়ের প্রশ্নই আসে না।
-এই মেয়ে জাদুটুনা করে যাচ্ছে ডিভোর্স দিবি কিভাবে?
-মা তুমি তো মিলিকে অশিক্ষিত বলতে,আজ আমার তোমাকে শিক্ষিত ভাবতে লজ্জা লাগছে। একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে তুমি এসব কি বলছো??
-এখন তো আমার কথা ও ভালো লাগবেনা। জানি জানি যা ইচ্ছা কর।
শুভর মা এসব বলেই তার নিজের রুমে চলে গেলো।
শুভর বাবা বললো
-ভেবে সব করছিস তো?
-হ্যাঁ বাবা,এখানে আর ভালো লাগছেনা।কলেজ, বাড়ি সব কিছুতেই আমি মিলিকে খুঁজে বেড়াই। আর তাতে করে আমার কষ্ট হচ্ছে।সব কিছু কেমন জানি গলায় কাটার মতো বিদে আছে।
-তোর এত্ত সুন্দর কেরিয়ারের কি হবে?
-কেরিয়ার দিয়ে কি করবো বাবা? যদি নিজেকে খুনি মনে হয়? নিজেকে অসুখী মনে হয়?
-মানে??
-না বাবা কিছুনা।
কিছুনা বলতে বলতে শুভ রুম থেকে গেস্ট রুমে চলে গেছে।

শুভ রুমে এসে দরজা লক করে দেয়।শুভ নিজেকে নিজে শান্তনা দিচ্ছে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে এই কথা যদি মিলি কোনো ভাবে কারো কাছ থেকে জানতে পারে মিলি ঠিক আটকাবে। আবার ভাবছে মিলি যদি না আসে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here