ইট পাটকেল পর্ব -৩+৪

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩

আমজাদ চৌধুরী কে যখন হসপিটালে নেয়ার তোড়জোড় চলছে ঠিক সেই মূহুর্তে তাদের সামনে হাজির হলো নূর। আশমিন চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সানভি আমতা আমতা করে বললো,

— সরে দাড়ান ম্যাম।স্যার কে এখনি হসপিটালাইজ করতে হবে। নাহলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

নূর বাকা হেসে আমজাদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে দাড়ালো। কামিনী চৌধুরী তাকে ধরে বিলাপ করে যাচ্ছে। লারা ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে পাশেই দাড়িয়ে। নূর আশমিনের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

— সবাই শান্ত হন।কেউ অস্থির হবেন না প্লিজ। আংকেলের গ্যাস্টিকের ব্যথা হয়েছে।ছেলের বিয়ে বলে কথা, হেভি খাবার খাওয়ায় এই অবস্থা। নাথিং এলস।আশমিনের সামনে গ্যাস্টিকের মেডিসিন এগিয়ে দিয়ে বললো,

— নিন,এটা আংকেল কে খাইয়ে দিন।দশ মিনিটে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি বরং ভালো ছেলের মতো বিয়ে টা করে নিন।সুন্দরী সুশীল বউ অপেক্ষা করছে তো।বিয়ে টা আপনাকে করতেই হবে মন্ত্রী সাহেব। নাহলে আমার শূন্যতা অনুভব করবেন কিভাবে।আমাকে ফিরে পাওয়ার বিন্দু মাত্র আশার স্বস্তি আমি আপনার ভিতর অবশিষ্ট রাখবো না। নূর তার কথার খেলাপ করে না।

শেষের কথা গুলো ফিসফিস করে বললো নূর।আশমিন তার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে। ভিতরে রাগে ফেটে পরলেও ভাইরে সে একদম শান্ত।নূরের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো সে।নূরের দিকে ঝুকে ফিসফিস করে বললো,

— আমি একজন মন্ত্রী নূর।তোমার মতো হাজার হাজার কুটিল বুদ্ধি পিছনে ফেলে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।তুমি এতদূর করতে পেরেছো কারণ আমি চেয়েছি।উড়ে বেড়াও,যতো খুশি উড়ে বেড়াও।কিন্তু এটা ভুলে যেও না তোমার নাটাই এই আশমিন জায়িনের হাতে।উড়বে,গোত্তা খাবে সমস্যা নেই।কিন্তু যখন সুতা টান দিবো তখন আমার কাছেই আসতে হবে। তখন কি হবে নূর! তোমার মন্ত্রী সাহেব কিন্তু খুব নিষ্ঠুর। তার নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে পারবে তো! ভেবে চিন্তে কদম ফেলো নূর।তোমার পায়ে শিকল লাগাতে আমি মোটেও সময় নিবো না। (দাতে দাত চেপে)

— একি মন্ত্রী সাহেব! নাটাই থেকে সুতো ছিড়ে কবেই উড়ে গেছে আর আপনি তো দেখছি খবর ও রাখেন না।এতো বেখেয়ালি হলে চলে!(বাকা হেসে)

— দেখা যাক।

নূরের থেকে দূরে সরে চারিদিকে চোখ বুলালো আশমিন।সবাই আমজাদ সাহেব কে ঘিরে ধরে আছে। সেদিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে উঠলো সে,

— সবাই এভাবে ভীড় করে আছেন কেন।সরে দাড়ান। গাড়ি বের করো সানভি।আর মিস.তেহজিব নূর,আপনি নিশ্চয়ই ডাক্তার নন।আপনার দূরদর্শী খমতার বলে আব্বুর বুকের ব্যথা গ্যাস্টিক মনে হতেই পারে।তাই বলে ছেলে হিসেবে তো আমি তা ধরে বসে থাকতে পারি না।কারোর খামখেয়ালি ধারণা নিয়ে তো আর বাবা কে হারাতে পারি না।আপনার কাছে হয়তো বাবার মূল্য তুচ্ছ্য।তবে আমার কাছে সব কিছুর চেয়ে বাবার মূল্য বেশি।আশা করি বোঝাতে পেরেছি।

সানভি গাড়ি নিয়ে আসতেই আমজাদ সাহেব কে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো আশমিন। নূর কে ইচ্ছে করেই এতো তিক্ত কথা শুনিয়েছে সে।নিজের করা ভুল গুলো সেও নাহয় একটু উপলব্ধি করুক।গর্ত থেকে যখন টেনে বের করে এনেছে তখন ঘাড়ের বাকা রগ গুলোও ঠিক সোজা করে দিবে। কামিনী চৌধুরী সাথে আসতে চাইলে সাথে সাথে মানা করে দিলো আশমিন। এমনিতেই মেজাজ পুরো খিচে আছে।মায়ের ফেচফেচ কান্না এখন টোটাল সহ্য করতে পারবে না সে।এর মধ্যেই বিভিন্ন চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ চলছে,
“ছেলের বিয়েতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলেন মন্ত্রী আশমিন জায়িনের বাবা আমজাদ চৌধুরী”

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। পিছনে গার্ড আর মিডিয়ার প্রায় পঞ্চাশ টার মতো গাড়ি তাদের ফলো করছে।আমজাদ চৌধুরী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে।আশমিনের তাতে কোন হেলদোল নেই।সে একমনে ফোন ঘেটে যাচ্ছে। আমজাদ চৌধুরী এবার মেজাজ হারালেন। কর্কশ গলায় বললেন,

— এদিকে তাকাও বেয়াদব ছেলে। বিয়ে যখন করবেই না তাহলে এতো নাটক করার কি দরকার ছিল।কেমন ছেলে তুমি?বিয়ে বন্ধ করার জন্য বাবা কে হার্ট এট্যাকের রুগি বানিয়ে দাও!দিন দিন অসভ্য হচ্ছো।

সানভি শুকনো ঢোক গিলে পিছু ফিরে আমজাদ চৌধুরী আর আশমিনের দিকে তাকালো। তা দেখে আমজাদ চৌধুরী ফুসে উঠলো,

— এভাবে তাকাচ্ছো কেন? ছেলে হয় আমার।চাইলে দু চার ঘা লাগিয়ে ও দিতে পারি।আর তোমাকে বলছি বেয়ারা ছেলে,আমি কিছুতেই হসপিটাল যাবো না।ফিনাইলের গন্ধ আমার একদম সহ্য হয় না।

— ঠিক আছে।তোমাকে নানা বাড়ি রেখে আসছি।সানভি,গাড়ি ঘোরাও।

আশমিনের শান্ত গলা। সানভি অসহায় চোখে তাকালো আমজাদ চৌধুরীর দিকে।আমজাদ চৌধুরী মুখ কালো করে বসে আছে। ছেলের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ কটমট করে সানভিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললো। আমজাদ চৌধুরীর চুপসে যাওয়া মুখ দেখে সানভির প্রচন্ড দুঃখ হলো। এরকম একটা নিষ্ঠুর ছেলের পিতা হওয়া তার মোটেও উচিত হয় নি।

আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে নূর কে দেখে যাচ্ছে। যে বর্তমানে রুমের এক কোনায় বিধ্বস্ত হয়ে বসে আছে। বিরবির করে কিছু বলছেও হয়তো।কিন্তু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আশমিন বোঝার চেষ্টা ও করলো না।সে শুধু একমনে নূর কে দেখে গেল।

চোখ বন্ধ করে রুমের এককোনায় চুপ করে বসে আছে নূর।বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রণা চেপে ধরেছে তাকে।কিন্তু সে কাদছে না।সে জানে, আশমিনের বাজপাখির মতো নজর এখন তার উপরেই।তাই তার সামনে কোন ভাবেই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করবেনা সে। চার বছর আগের আশমিনের একটা কথাই তার কানে বার বার বেজে যাচ্ছে,

— যে মেয়ে নিজের বাবার ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে না সে আমার ভালোবাসার মূল্য দিবে কিভাবে।বাবার মৃত্যু থেকে যার ক্যারিয়ার বড় সে মেয়েকে আমি আমার জীবনে চাই না। দেখা গেলো আমাকে মৃত্যু মুখে রেখে সে নিজের স্বপ্ন পুরন করতে চলে গেলো। এই নূর কে আমি ভালোবাসি নি।তাই এই নূরের জায়গা আমার জীবনে নেই। গো টু হেল উইথ ইয়োর ফা*কিং ড্রিম।

চোখ খুলে ফেললো নূর।বাবা নেই ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসলো তার।এই পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই।সে একা।মহাকাশের এক বিন্দুর মতো সে একদম একা।আশমিন পুরনো ঘা তাজা করে দিয়েছে তার।তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো নূর।যে তাকে তখন বোঝে নি সে আজ আর কি বুঝবে?ভালোবাসি বললেই হয় না। বিশ্বাস করতে হয়,ভরসা করতে হয়।শুধু ভালোবাসা কখনোই টিকে থাকে না। আশমিন সেদিন তার বিধ্বস্ততা দেখে নি।তার ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাওয়া ভঙ্গ হৃদয় দেখে নি।সে শুধু তার ভুল দেখেছে।তাকে এতো বড় পৃথিবীতে সম্পুর্ন একা ছেড়ে দিয়েছে।সদ্য বাবা হারানো মেয়েটা কে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা দিয়েছে।আশমিন কে আর যাই হোক ক্ষমা করা যায় না।এবার আশমিন বুঝবে ভাঙ্গনের যন্ত্রণা কাকে বলে। আমি তোমাকে বোঝাবো নিঃসঙ্গতা কাকে বলে। ক্ষমতার খুব বড়াই না তোমার? দেখি কতো ক্ষমতা তোমার। কামিনী চৌধুরী এবার বুঝবে তেহজিব কি জিনিস।মায়ের কুৎসিত চেহারা সহ্য করতে পারবে তো আশমিন জায়িন। উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো নূর।

রুমের মধ্যে পায়চারি করে যাচ্ছে কামিনী চৌধুরী। নূর কে এখানে সে একদম সহ্য করতে পারছে না।ভাইয়ের মেয়ে হলে কি হবে।আস্তো বজ্জাত একটা। এতো বছরের সাজানো প্ল্যান কোন ভাবেই নষ্ট হতে দিবে না সে।আশমিনের মতিগতি ভালো ঠেকছে না।সে জানে,আমজাদ চৌধুরীর কিছু হয় নি।বিয়ে বন্ধ করতেই আশমিন এই নাটক করেছে।ছেলে কে হাড়ে হাড়ে চেনে সে।অনেক কষ্টে দুজনের মধ্যে দূরত্ব এনেছে। এখন কিছুতেই তাদের কাছাকাছি রাখা যাবে না। এই মেয়েকে যেভাবেই হোক বিদায় করতে হবে।

লাক্সারি কেবিনে শুয়ে আছে আমজাদ চৌধুরি।পাশেই সানভি দাঁড়িয়ে। আশমিন সোফায় বসে নূর কে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। নূরের হাসি বিষাদ কোনটাই চোখের আড়াল হয়নি তার।দুটোর মানেই সে বোঝে। সঠিক সময় আসলে নূর কেও বুঝিয়ে দিবে।
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৪

বিশাল ড্রয়িং রুমে গম্ভীর হয়ে বসে আছে আশমিন।পরিবারের সবাই এখানে উপস্থিত। কামিনী চৌধুরী থমথমে মুখে আমজাদ চৌধুরীর পাশে বসে। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। সবার দিকে চোখ বুলিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো নূর।আশমিন শান্ত চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। আশমিনের পুরো পরিবার অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে আশমিন কি বলতে চায় তা জানার জন্য। লারা আর তার পরিবার একপাশে বসে।আশমিন চারিদিকে চোখ বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— বিয়েটা ক্যান্সেল করছি আমি।লারা কে বিয়ে করবো না আমি।কারোর কোন প্রশ্ন থাকলে একজন একজন করে জিজ্ঞেস করতে পারেন।আগামী দশ মিনিট সময় আছে আপনাদের কাছে।দশ মিনিট পর আমি এখান থেকে চলে যাবো। ইমপোর্ট্যান্ট মিটিং আছে আমার।

আশমিনের এমন খাপছাড়া ভাব দেখে ফুসে উঠলো কামিনী চৌধুরী। বাজখাঁই গলায় বলল,

— এটা কেমন মশকরা আশমিন? বিয়ে করবে না মানে?এতো ঘটা করে অনুষ্ঠান করে লোকজন জানিয়ে এখন বলছো বিয়ে করবে না।মশকরা হচ্ছে এখানে!প্রেস,মিডিয়া সবাই জানে তুমি লারা কে বিয়ে করছো। সোসাইটি তে কতটা অপমান হতে হবে ধারণা আছে তোমার? বিয়ে আজকেই হবে এবং এক্ষুনি। কাজি ডাকো সানভি।

চিৎকার করে কথাগুলো বলে হাপিয়ে উঠলো কামিনী চৌধুরী। আশমিন ভাবলেশহীন ভাবে ফোন স্ক্রোল করে যাচ্ছে। সানভি অসহায় চোখে আশমিনের দিকে তাকালো। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে, ব্যস্ত গলায় বলল,

— আর কারোর কিছু বলার আছে?সময় শেষ হচ্ছে। আর প্লিজ, কেউ মিসেস চৌধুরীর মতো এতো লম্ভা স্পিচ দিবেন না। সময় সল্পতা বুঝতেই তো পারছেন।

সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। লারা ভীতু চোখে আশমিনের দিকে তাকালো। নূরের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে একমনে নুডুলস খেয়ে যাচ্ছে।

কামিনী চৌধুরী ক্রোধে ফেটে পরলেন। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নূর কে টেনে দাড় করিয়ে হিসহিস করে বললেন,

— সব তোর জন্য হয়েছে।আবার কেন এসেছিস এখানে?আমার ভাই কে খেয়ে শান্তি হয় নি?এখন আমার সংসারে আগুন লাগাতে এসেছিস।বেহায়া মেয়ে।লজ্জা নেই তোর?এভাবে আরেকটা মেয়ের সংসার ভাঙে দিতে বিবেকে লাগছে না?এই মুহুর্তে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাবি।তোর অপয়া চেহারা আর দেখতে চাই না এ বাড়িতে।

আশমিন চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে কামিনী চৌধুরীর দিকে।কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না সে।লারার বাবা মা মুচকি মুচকি হাসছেন নূরের এই অবস্থা দেখে।নূর নুডলসের বাটি টা সানভির হাতে দিয়ে শাসানোর ভঙ্গিতে বললো,

— খবরদার এখান থেকে খাবে না।শুধু ধরে দাড়াও।

কামিনী চৌধুরীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো নূর।নূরের নখ দেবে কিছুটা জায়গা তৎক্ষনাৎ কেটে গেলো। কামিনী চৌধুরী হালকা আর্তনাদ করতেই নূর নিজের ঠোঁটে আঙুল চেপে ‘হুস’ বলতেই থেমে গেলো সে। নূর তার হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে নিয়ে চিৎকার করে ডাকলো,

— গার্ডস,,,

সাথে সাথে বিশজন পালোয়ান সাইজের লোক এসে দাঁড়িয়ে গেলো নূরের চারিদিকে। নূর হুংকার দিয়ে বললো,

— আবর্জনা পরিস্কার করো।রাইট নাও।আমার সামনে আমি কোন আবর্জনা দেখতে চাই না।

গার্ড গুলো সাথে সাথে সোফা সহ লারা আর তার পরিবারকে বাইরে ছুড়ে ফেললো। একজন মেয়ে গার্ড এসে কামিনী চৌধুরী কে ধরে নূর থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। আমজাদ চৌধুরী আশমিনের পাশে বসে তার ফোনের দিকে ঝুকে আছেন।আশমিন বাইক রেসিং গেম খেলছে সে সেটা মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। বাকি কোন কিছুতে তাদের খুব একটা আগ্রহ নেই।

সানভি ভয়ে কাপছে।আশমিনের এমন হেয়ালি ব্যবহার দেখে নূরের রাগ তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। হাতের থেকে ফোন টা নিয়ে সাথে সাথেই সমস্ত শক্তি দিয়ে দেয়ালে ছুড়ে মারলো। সানভি আর্তনাদ করে বললো,

— কি করলেন ম্যাম।এতে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ছিল।

— আই ডোন্ট কেয়ার।(দাতে দাত চেপে)

কামিনী চৌধুরী পারছে না নূর কে কাচা চিবিয়ে খেতে।আমজাদ চৌধুরীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো,

— বসে বসে তামাশা দেখছো? আমাদের গার্ডদের ডাকো।এই মেয়েকে এখানেই মেরে পুতে দিবো আমি।আমাকে পাওয়ার দেখানো হচ্ছে।এই কামিনী চৌধুরী কে!আশমিন, চুপ করে বসে আছো কেন?পুলিশ কে কল করো।একে এক্ষুনি জেলে ভরবো আমি।

আশমিন হালকা বিরক্তির চোখে তাকালো নূরের দিকে।যে এই মুহুর্তে চোখ দিয়েই তাকে ভষ্ম করতে ব্যস্ত।
আশমিন ইশারা করতেই গার্ড গুলো কামিনী চৌধুরী কে ছেড়ে বাইরে চলে গেলো।

— মিসেস চৌধুরী কে নিয়ে ভিতরে যাও।

মেয়ে গার্ড টা আশমিনের কথা অনুযায়ী কামিনী চৌধুরী কে জোর করে ভিতরে নিয়ে গেলো। আশমিন আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— তুমি কি ছেলে আর ছেলে বউয়ের রোমান্স দেখতে চাচ্ছো?

আমজাদ চৌধুরী চোখে রাঙিয়ে তাকালো আশমিনের দিকে। মেকি রাগ দেখিয়ে বললো,

— বাবা হই তোমার।অসভ্যের মতো কথা বলছো কেন?আমি তোমার মতো মেনার্সলেস নই।

আমজাদ চৌধুরী হনহন করে চলে গেলো ভিতরে। আপাতত বউ কে ঠান্ডা করতে হবে। সানভি এখনো নুডুলসের বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে। যাবে নাকি থাকবে সেই দ্বিধায় ভুগছে।

আশমিন সানভি কে কিছু একটা টেক্সট করতেই সানভি নুডলসের বাটি রেখে গন্তব্যের দিকে চলে গেলো।

আশমিন কয়েক কদম এগিয়ে নূরের সামনা সামনি দাড়ালো। সারা শরীরে চোখ বুলিয়ে ঠোঁট উচু করে শীষ বাজাতেই নূর বাকা হাসলো। মনে মনে কপাল কুচকালেও উপরে স্বাভাবিক থাকলো আশমিন।

— লুকিং সো হট বেইব।

— ইউ অলসো লুকিং লাইক আ লুজার।(বাকা হেসে)

— রিয়ালি???(ঘার কাত করে)

— ইয়াহ।

— দেন মিট মি ইন মাই আরমস।আই প্রমিস ইউ,ইউ ওইল নট সে দিস এগেইন।

— অশ্লীল।

আশমিন নিজেদের দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেললো। নূর কে নিজের সাথে চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,

— নেতারা অশ্লীল ই হয়।তোমার সাথে আমার সম্পর্ক এর চেয়েও গভীর। ভুলে গেলে নাকি নূর?

— সরে দাড়ান।কতো বার বলবো এভাবে কাছে আসবেন না (আশমিন কে সরানোর চেষ্টা করে)। আর কোন সম্পর্কের কথা বলছেন আপনি? সব সম্পর্ক আপনি নিজেই শেষ করেছেন। যেহেতু বিয়ে আর হচ্ছে না তাই আমি কালকেই ব্যাক করছি কানাডা।লিভ মি।

— তোমাকে গর্ত থেকে বের করতেই এতো আয়োজন তেহজিব নূর।পালানোর কথা ভাবলে কি করে।মুক্তির স্বাদ আর এ জীবনে তোমার পাওয়া হবে না। তোমাকে এখানেই থাকতে হবে।আমার বন্দিনী হয়ে।

আশমিনের চোখ গুলো রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। নূর সেদিকে তাকিয়ে ক্রুর হাসলো। দাতে দাত চেপে ফিসফিস করে বললো,

— আমার সাথে লাগতে আসবেন না মন্ত্রী সাহেব। পৃথিবীতেই জাহান্নাম ভ্রমণ করিয়ে আনবো।চিনেন তো আমাকে নাকি?

আশমিন হাতের বাধন আরেকটু শক্ত করলো। নূর কে নিজের সাথে আরেকটু নিবিড় ভাবে মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। মন্থর গলায় নূরের মতো ফিসফিসিয়ে বললো,

— আপাতত জান্নাত ভ্রমণ করতে চাইছি।ইউ ওয়ান্না গো উইথ মি?

নূর কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার ঠোঁট আকড়ে ধরলো আশমিন।দুই মিনিটের মতো নিজের রাজত্ব চালিয়ে নূর কে ছেড়ে দিলো সে।নূর ক্ষেপা বাঘিনীর মতো আশমিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আশমিন ভাবলেশহীন ভাবে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙতেই নূর আশমিনের পাঞ্জাবীর ঠিক দুই ইঞ্চি উপরে গলায় নিজের দাত বসিয়ে দিল।আশমিন বাধা দিল না।এমনকি নড়লো ও না।নিজের কাজ শেষ করে নূর সরে আসলো। আয়েশ করে সোফায় বসে আশমিনের গলার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে বললো,

— আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না মন্ত্রী সাহেব। তাহলে এভাবে বার বার র*ক্তাক্ত হবেন।বাই দ্যা ওয়ে,গুড লাক ফর ইউর মিটিং।

আশমিন টিস্যু দিয়ে গলার হালকা র*ক্ত টুকু মুছে ফেললো। নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

— এমন র*ক্তাক্ত আমি বারবার হতে চাই।

সানভি এসে আশমিনের হাতে কিছু ডকুমেন্টস দিতেই আশমিন সাথে সাথে সেগুলোতে আগু*ন লাগিয়ে দিলো। নূর হতভম্ব হয়ে গেলো আশমিনের এমন কাজে। আশমিন নিরীহ চোখ নূরের দিকে তাকালো।

— মাই ফোন ইকুয়াল টু ইয়ুর পাসপোর্ট। হিসাব বরাবর তো?

চলবে,,,
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here