ইস্ক পর্ব -২১+২২

#ইস্ক
#সাদিয়া

২১
“তিতিল এদিকটায় আসো তোমায় আমি একটা মন মুগ্ধকর দৃশ্য দেখাই। কাম ডেয়ার।”

তিতিল ইয়াদের ডাকে সাড়া দিয়ে ওদিকটায় গেল। দেখতে পেল একটা পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। পুকুরের চারপাশ টাই পাকা করা। তারউপর সুন্দর সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে পুকুরে নামার জন্যে। আর দুইপাশে বসার ব্যবস্থাও করা আছে। আনমনে মুচকি হাসি ফুটে এলো তিতিলের ওমন স্নিগ্ধ পানির ঢেউয়ের রাশি দেখে। মৃদু বাতাসে পুকুরের পানি কলকল ধ্বনি সৃষ্টি করছে। নিচের এক সিঁড়িতে ইয়াদ দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে। সূর্যের হাল্কা রশ্মি এসে ফর্সা গায়ের লোকটার উপর এসে আছড়ে পড়ছে। নেভিব্লু কালার শার্টের সাথে ফর্সা গায়ে হাল্কা কমলা কালার রশ্মিতে লোকটাকে দেখে আতকে উঠল তিতিলের সচ্ছ কোমল হৃদয়। সেখানেও কোমল পানির ঢেউ শুরু হয়েছে। হৃদপিন্ডের স্পন্দন ক্রমাগত শুনতে পাচ্ছে সে। নিশ্বাস মাঝে মাঝেই থেমে যাচ্ছে। তিতিলের চোখের পাতা গুলি যেন স্থির হয়ে গেল মানুষটার উপর। “ভালোবাসার মানুষের সৌন্দর্য সবার চোখে অতুলনীয় হৃদয়কাড়া হয়।”

“কি হলো এদিকে একবার আসো। দেখো পুকুরের পানি কতটা পরিষ্কার।”

তিতিলের ঘোর কাটে। তবে ঊর্ধ্ব গতিতে হওয়া বুকের আওয়াজ কমেনি এক বিন্দু। মন্দর গতিতে এগিয়ে গেল সে ইয়াদের কাছে। মন বড্ড বলছিল অবুঝ পাখির মতো একবার লোকটার বুকে গিয়ে ঝাপটে পরতে। কিন্তু মনের কোণায় কোনো একটা কিছু বারণ করছে। তবুও লোকটার উষ্ণতায় মেশে যাওয়ার আকুল প্রয়াস তৈরি হচ্ছে।

ইয়াদের কাছাকাছি যেতেই তাকে লোকটা হাত ধরে টেনে নিজের কাছে আনল। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“দেখো কি সুন্দর পুকুরের পানি।”

“…..

তিতিলের অবুঝ সরল দৃষ্টি তখন ইয়াদের উপরে লেপ্টে ছিল চুমুকের মতো। ইয়াদ আবার বলল,
“শহরে এমন সচ্ছ পানি তুমি তেমন পাবে না। দেখো সিঁড়ির পাশে নিচের ছোট নুড়ি গুলিও দেখা যাচ্ছে। আর মজার বিষয় কি জানো? এই পুকুরের অর্ধেকটাই সিঁড়ি দেওয়া। পুকুরের মাঝ পর্যন্ত তুমি সিঁড়ির অস্তিত্ব পাবে। বুঝলে পিচ্চি?”

“….

ইয়াদ হেসে তাকাল তিতিলের দিকে। দেখলো মেয়েটা তার দিকে অন্যরকম এক অদ্ভুত দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। তিতিলের ওমন চাউনি দেখে হৃদয়ে শিহরণের হাওয়া বয়ে গেল সাঁইসাঁই করে। মুখে বাঁকা হাসি তুলে তিতিল কে সে বলল,
“তিতিল কি দেখছো। আমি কি বলছি তুমি কি শুনছো আমার কথা?”

“….

“তিতিল?”

চমকে উঠল মেয়েটা। থতবত খেয়ে গেছে একদম। কপালে ভাঁজ দেখে ইয়াদ একগাল অমায়িক হাসল।
“তিতিল তুমি কি শুনেছো আমি এতক্ষণ কি বলেছি?”

“জ্বি। ক কি বলছিলেন?”

ইয়াদ উত্তর না দিয়ে তিতিলের বাহু ধরে পিছনে ফিরাল। মেদহীন পেটে শাড়ীর আঁচলের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে টেনে কাছে নিয়ে এলো। বুকের সাথে মিশিয়ে তিতিলের কাঁধে থুতনি রাখল লোকটা। ওদিকে তিতিলের অবস্থা বেহাল। হৃদপিন্ডের উঠানামার আওয়াজে চারপাশ মুখরিত করে তুলছে। গরম নিশ্বাস ফালছে ক্রমাগত। দাঁতে দাঁত চেঁপে লোকটার উষ্ণ পরশ অনুভব করছে রন্ধ্রেরন্ধ্রে। ইয়াদ ঠোঁট টিপে হেসে পেটে চাঁপ প্রয়োগ করে আরেকটু কাছে টেনে আনল তিতিল কে। নিজের গরম নিশ্বাস তিতিলের উপর ছুড়ে দিচ্ছিল অনবরত। মেয়েটা আর সইতে না পেরে এবার শাড়ী খামছে ধরে চোখ খিঁচে রইল। ইয়াদ কোমল ঠোঁট গুলি তিতিলের কানের লতিতে স্পর্শ করলে শরীরের শিরা উপশিরা গুলি থমকে গেল। রক্তের কণিকা গুলিও যেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে এবার। ইয়াদ ফিসফিস করে কানের কাছে বলল,
“দাদাভাই ঠিক এভাবেই যৌবনকালে দাদুকে নিয়ে এখানে সময় কাটিয়েছে নিজেদের একান্ত কিছু সময়। আমি আমার বেগম কে এটাই বুঝাতে চাইছিলাম। বুঝলেন তো বেগম। আমিও আমার একান্ত কিছু সময় কাটাতে চাই আমার বেগমের সাথে। তাই তো এখানে এসেছি ডেয়ার তিতিল পাখি।”

—-
ফ্রেশ হয়ে দুজনে এক সাথে দুপুরের খাবার খেতে বসেছে। খোলা একটা জায়গায় সিমেন্টের একটা টেবিল সেট করা আছে তার উপরে কাঁচ। সেখানেই দুজনে খাবার খাচ্ছে। আর তাদের মাথার উপরে রয়েছে একটা ছাউনি। সেখানে কুমড়ো, লাউ, শসা আরো কিছু গাছের লতাপাতা বেয়ে উঠেছে। ফাঁকেফাঁকে সূর্যমামা উঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছে সে তাদের সাথেই এখানে উপস্থিত। পরিবেশটা একদম অতুলনীয়। বাহির থেকে আনা খাবারই খাচ্ছে তারা। খাবার শেষ করে দুজনই চুপচাপ বসে আছে। তিতিল বলল,
“আচ্ছা এসব দেখা শুনা কে করেন?”

“বিউটি আন্টি।”

“উনি কে?”

“উনি এখানের দেখাশুনা করে।”

“….

“আর এই শাকসবজির গাছ দেখছো না? উনিই সবকিছু করে এসবের। উনার পরিবার খেয়ে যা অবশিষ্ট থাকে বাজারে বিক্রি করে দেয়। মাঝে মাঝে উনার বড় ছেলে ঢাকায় আমাদের বাসায় দিয়েও আসে।”

“আচ্ছা আপনি না হয় আমার জন্যে কিছু বাজার করে আনবেন আজ তরতাজা সবজি দিয়ে রান্না হবে।” উপরে গাছের দিকে তাকিয়ে তিতিল এ কথা বলল।

“একেবারেই না।”

“কেন? ঘর রান্নাঘর সব পরিষ্কার আছে। বেশি সময় লাগবে না একদম।”

“এখানে তোমাকে রান্নার জন্যে আনা হয়নি তিতিল।”

“তাতে কি? দেখুন কি সুন্দর লাউ আছে তিন চারটা ধনেপাতা দিয়ে রান্না করলে কিন্তু অনেক মজা লাগবে। দয়া করে ব্যবস্থা করে দিন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে যে ভাবে তোমার পছন্দ।”

তিতিল মুচকি হাসল। উঠে এক গাল হেসে এগিয়ে গেল লাউ গুলির দিকে। ওগুলিও যেন তার দিকেই তাকিয়ে ছিল ড্যাবড্যাবের মতো। লাউ গুলি নিয়ে চুপচাপ রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

—-
“ভাই তোরা আসবি কবে?”

“আপু তোর সমস্যা টা কি বল তো? আজ দুপুরেরই এলাম আর তুই..”

“তোকে অফিসে দরকার ভাই।”

“অফিসে দরকার নাকি তোর তিতিল কে? তোর ওই নিয়াম না কার সাথে তিতিল কে বিয়ে দেওয়ার..”

“স্টুপিডের মতো কথা বলিস সবসময়। মেজাজ টাই বিগড়ে দিলি।”

ইনা রাগ দেখিয়ে কল টা কেটে দিল। তাতে অবশ্য ইয়াদ বেশি পাত্তা দিল না। সে আরাম চেয়ে ল্যাপটপ খুলে বসল। তখনি তিতিলের ডাক শুনা যায়।
“রান্না হয়ে গেছে খেতে আসুন।”

“বউ রান্না করেছে দেখি গিয়ে স্বাদ কেমন।” বিড়বিড় করতে করতে ইয়াদ সামনের রুমে অগ্রসর হলো।

টেবিলে লাল শাক, মাছ ভোনা, লাউ দিয়ে চিংড়ি আর পুইশাক দিয়ে ছোটমাছ রান্না করা রয়েছে। এতসব কিছু দেখে ইয়াদের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। বলল,
“আরে তুমি পাগল নাকি। এত কিছু করতে গেলে কেন?”

“সব টাটকা খেয়ে খুব মজা পাবেন।”

“রাখো তোমার টাটকা।”

“আশ্চর্য তো। খেলে চুপচাপ খান না হলে চলে যান।”

“তুমি কি রেগে যাচ্ছো?”

“…..

“ঠিক আছে আর বলব না কথা। বউয়ের আদেশ যথার্থ।”

“….

দুজন পাশাপাশি বসে রাতের খাবার খেয়ে নিল। দুজনই তৃপ্তি সহকারে খেয়েছে।
“তিতিল আজকের খাবারটা…. এর জন্যে তো তোমার গিফট পাওয়া উচিৎ।”

“….

“রুমে আসো তোমার গিফট দিব।”

“….

ইয়াদ একবার তিতিলের দিকে তাকিয়ে চলে গেল। একটুপর আবার ফিরে এলো তিতিল তখন সব কিছু গুছিয়ে রাখছিল।
“তিতিল তোমার সাথে কথা আছে। পাঁচ মিনিটে কাজ সেরে রুমে আসো।”
#ইস্ক
#সাদিয়া

২২
আকাশে চাঁদ ঝলমল করে জ্বলছে। চাঁদের আলো চারিদিক আলোকিত করে তুলেছে। বারান্দার বাহিরের ছাউনিতে বেয়ে উঠা গাছের ফাঁকেফাঁকে চাঁদের আলো উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। এক বিস্ময়কর পরিবেশে দুল খেয়ে যাচ্ছে চারিপাশ। বারান্দার গ্রীল ঘেঁষে তিতিল আনমনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে তার রাজ্যের বিস্ময় আঁকড়ে ধরেছে। মাথায় ঝেঁকে বসেছে চিন্তা। ইয়াদ কে নিয়ে সে সন্দিহান। মানুষটা কে ভালোবাসে সে, আবার তার করা ভুলের কষ্টটাও মেনে নিতে মন দুটানায় নেচে উঠছে। তবু এ কদিনে সে এটা বেশ বুঝতে সক্ষম হচ্ছে লোকটা এখন তার জন্যে কষ্ট পায়। ভেতরে ভেতরে তাকে পাওয়ার আগুনে প্রতিনিয়ত জ্বলছে। লোকটার অশ্রুসিক্ত চোখ গুলি দেখলে তিতিল নিজেও স্বাভাবিক অবস্থায় সচল থাকতে পারে না। মনের হাকুবাকু ভাব টা তাকে ক্রমশ অস্থিরতার অগ্নিশিখায় পতিত করে। আকাশ কুসুম ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে চমকিয়ে তুলে লোকটা। তার ভাবনার মাঝেই লোকটা এসে তাকে কোলে তুলে নেয়। হঠাৎ শূন্যে ভাসতে থাকা তিতিল আতকে তাকায় ইয়াদের দিকে। বুকটা ধকধক করেছে ভয়ে।

“হেই তুমি কি ভয় পেয়েছো নাকি?”

“….

“তিতিল শান্ত হোও। ঘাবড়াচ্ছ কেন?”

“নামান আমাকে।”

“কেন?”

“নামাতে বললাম তো।”

ইয়াদের অনিচ্ছা থাকা সর্তেও নামিয়ে দিল তিতিল কে। শূন্য থেকে নেমে তিতিল নিজেকে ঠিক করে ঠোঁট উল্টে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াল।

“তোমাকে বলেছিলাম না ৫ মিনিটে কাজ সেরে ভেতরে যেতে? গেলে না?”

“ইচ্ছা হয় নি।”

“নিশ্চয় দরকারে ডেকেছিলাম।”

“বলুন।”

তিতিলের এমন কঠিন ভাবে এড়িয়ে যাওয়া দেখে বলল,
“কষ্ট দিয়ে নিজের কষ্টের উসুল করছো না?”

“বুঝলাম না।”

“আমি আগে ভুল করেছিলাম আর তুমি এখন।”

তিতিল ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি বলতে চাইছেন?”

ইয়াদ কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে তার দিকে। চাঁদের আলো তে বেশ ভালো করেই ইয়াদের অশ্রুসিক্ত চোখ গুলি চিকচিক করে উঠছে। মুহূর্তেই মুচড় দিয়ে উঠল তিতিলের বুক। শ্বাস যেন আটকে আসতে চাইছে তার। এ কেমন বিরহ যা তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে? কষ্ট লুকানোর বৃথা হাসি দেখে তিতিলের ভেতরটা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল।

“তিতিল খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।”

নিদারুণ এমন আবেগ মিশ্রিত কন্ঠ শুনে তিতিলের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল মুশলধারে। দাঁত খিঁচে নিজেকে ঠিক করার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলছে নিজের সাথে যুদ্ধ করে। এ কি করুণ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে রয়েছে সে। আহ ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে!

“কষ্ট দিতে চাইছো তো? ঠিক আছে দাও। যেহেতু আমিও তোমাকে নিজের অজান্তে কষ্ট দিয়েছিলাম তুমি না হয় জেনে দিলে। তবুও মেনে নিব। শুধু ছেড়ে যেও না প্লিজ।”

ইয়াদের অসহায় পূর্ন এমন হৃদয় ফাটা কথা গুলি যে তিতিলের বুকে নিখুঁত ভাবে সুচের মতো সূক্ষ্ম আঘাত দিচ্ছে তা কি করে বুঝাবে এই লোকটা কে। নিজের কষ্ট তুলে ধরার মতো কোনো শব্দ তার অবশিষ্ট নেই। শ্বাসরুদ্ধকর এক অবস্থায় মিশে আছে মেয়েটা।
“নিয়াম এর সাথে শুধু বিয়েটা করো না। যত পারো কষ্ট দাও তবুও আমাকে ছেড়ে যেও না। অনুরোধ। তোমার দেওয়া কষ্ট ইয়াদ সহ্য করতে পারবে কিন্তু তুমি ছেড়ে গেলে তা নিতে পারবে না ইয়াদ। শেষ হয়ে যাবো একেবারে। শাস্তিসরূপ এত কঠিন শাস্তি দিও না তিতিল।”

দাঁত কিটে তিতিল ঢোক গিলল। নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করে বলল,
“বিয়ে করলে তো?”

ইয়াদ যেন এক মুহূর্তে উন্মাদ হয়ে গেছে। রেগে একদম তিতিলের কাছে চলে গিয়ে বাহু শক্তে চেঁপে ধরল। মুখ একদম তার কাছে নিয়ে এসেছে। দুজনের মাঝে হয়তো একটু চুল দূরত্ব। দাঁত কেটে সে বলল,
“তুই শুনতে পাচ্ছিস না মরে যাবো আমি?”

তিতিল আর স্বাভাবিক থাকতে পারল না। কখন কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে গেল বুঝতে পারল না। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চিৎকার করে বলল,
“তাহলে কেন কষ্ট দিয়েছিলেন আমায়? কেন আপনার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন? কি দোষ ছিল আমার? কেন আমার থেকে আমার স্বামী কে দূরে রেখে প্রতিদিন কষ্ট দিয়েছিলেন আমায়? এমন কি আপনি একটা দিন আমার সাথে কথা বলবেন তো দূর ইনা আপু হিমা বা আম্মা আমাকে নিয়ে ভুলেও কিছু বললে কল কেটে দিতেন। এখন কেন এত দরদ আমার উপর? ভালোবাসা? এই ছিল আপনার ভালোবাসা? এই যদি হয় আপনার ভালোবাসা তবে চাই না ও ভালোবাসা। লাগবে না আপনার ওমন ভালোবাসা। ছাড়ুন আমায়।”

ইয়াদের চোখ দিয়ে বর্ষণ নেমেছে। দুই হাটু গেড়ে সে তিতিলের সামনে বসে পড়ল। তিতিলের হাত দুটো কোমল করে ধরে মাথা উপরে তুলল যেন তিতিলের মুখটা দেখতে পায়। ধরে আসা গলায় চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল,
“আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দাও। একটা সুযোগ দাও আমায়। একবারের ভুল মাফ করে দাও। মাফ তো আল্লাহও করে। আমায় না হয় শেষ বার করলে। প্লিজ তিতিল আমার ভুল গুলি ভুলে একটা সুযোগ দিয়ে দেখো। তিতিল আমি তোমাকে আমার জীবনে চাই। প্লিজ তিতিল আমার মন টা ভেঙ্গে দিও না নির্দয়ের মতো।”

তিতিলের কান্নার বেগ বাড়ল। নিজেকে সামলাতে পারছে না মেয়েটা। কি ভেবে চোখের পানি মুছে বলল,
“আমি নিয়াম কে বিয়ে করব।”

ইয়াদ যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিল না। হাত থেকে তিতিলের হাত আপনাআপনি আলগা হয়ে গেল। আড়চোখে তিতিল দেখল ইয়াদ কে। স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিতিলের দিকে। সব কিছু তার থমকে গেছে। চোখের পাতা পরছে না। তিতিল খেয়াল করল ইয়াদের ওমন প্রাণহীন চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়গড়িয়ে পড়ে গেল। আলতো করে চোখের পাতা ফেলে ইয়াদ আবার তাকাল। মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে উঠে দাঁড়াল। নরম হাতে তিতিলের গাল দুটি স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করল,
“মিথ্যে বলছো তাই না? আ আমাকে কষ্ট দিতে বলেছো না তিতিল? হ্যাঁ, বলো?”

তিতিল নিজেও জানে না এমন একটা কথা কেন বলল কোন কারনে মুখ ফেটে বেড়িয়ে এলো। কিন্তু এটা কোনোদিন সে মন থেকে বলেনি। এমন একটা কথা বলে তিতিল নিজেও যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।
ইয়াদ আমার সুধালো,
“এই তিতিল বলো না তুমি মি মিথ্যে বলেছো। এমন টা করবে না তুমি। তিতিল বলো না প্লিজ।”

“….

“এই তিতিল এত বড় শাস্তি দিও না আমায়। নিতে পারব না আমি এই শাস্তি। তিতিল বলো না এটা তুমি এমনি বলেছো। তিতিল প্লিজ। তিতিল তাকাও আমার দিকে। আমার সাথে তুমি এমন টা করতে পারো না। আমি জানি তুমি মিথ্যে বলছো। তাই না বলো?”

“পারি। আর মিথ্যেও বলছি না।”

ইয়াদ যেন পাগলের মতো তিতিলের গাল ধরে অনুরোধ করছিল তাকে ছেড়ে না যেতে।
“তুই যা বলবি আমি মেনে নিব। আমাকে যদি তোর জন্যে ২ বছরের বদলে ১০ বছরও অপেক্ষা করতে হয় করব। কিন্তু আমাকে তুই ছেড়ে যাস না। এই কষ্ট আমি নিতে পারব না তিতিল। একটু বুঝ আমারে। তিতিল রে তোর কাছে আমার একটাই অনুরোধ তুই, তুই আমারে একটা সুযোগ দে। ছেড়ে যাস না আমায়।”

“ছাড়ুন আমায়।”

“আগে বল তুই ছেড়ে যাবি না আমায়।”

“ছাড়ুন” বলেই তিতিল ইয়াদের হাত নিজের গাল থেকে সরিয়ে নিল। একদম অসহায়ের মতো তখনো তাকিয়ে ছিল ইয়াদ তার দিকে।
“আমি বিয়ে করব আর নিয়াম কেই করব।”

ইয়াদ আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছিল না। তিতিলের দিকে তাকিয়ে আচমকা দেওয়ালে পাঞ্চ করে। ওমন শব্দে তিতিল পুরো ভরকে যায়। শরীর কাঁপতে শুরু করে। ইয়াদ এবার তিতিলের মুখ খানিক চেঁপে ধরে বলে,
“বিয়ে করবি না তুই? ছেড়ে দিবে? করিস বিয়ে। যা কর গিয়ে বিয়ে। চলে যা এখান থেকে। এখনি যা আমার সামনে থেকে।”
মৃদু ধাক্কা দিয়ে ইয়াদ তাকে দূরে সরিয়ে দিল। তিতিল ইয়াদের হঠাৎ এমন পাল্টে যাওয়া রূপ থেকে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। যার ফলে বারান্দা থেকে জলদি কাঁপা পায়ে ঘরে প্রবেশ করে। ইয়াদ বারান্দার দরজাটা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে। আকস্মিক গলা ছেড়ে অদ্ভুত শব্দ তুলে চিৎকার করে উঠে। ইয়াদের ওমন চিৎকার শুনে তিতিল চোখ বুজে কানে হাত চেঁপে ধরল। ওদিকে ইয়াদ ভালোবাসার বিচ্ছেদের বেদনায় আবারো হাটু গেড়ে নিচে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তার কান্নার বেগে পরিবেশও যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। রাতের ঝিঁঝিঁ পোকা গুলিও তাদের ডাক বন্ধ করে চুপটি মেরে লুকিয়ে থাকে। ইয়াদের করুন কষ্টের কান্নার আওয়াজে গাছের পাতা গুলিও যেন নীরব হয়ে যায়। চারিপাশে তার কান্নার আওয়াজ প্রতিধ্বনি তুলে অদ্ভুত পরিবেশে রূপান্তর হয়। ইয়াদের কান্নায় পরিবেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। গলা ফাটিয়ে অন্যরকম শব্দ তুলে কান্নায় লুটিয়ে পড়ে ছেলেটা। ভেতরের দাবানলের উত্তাপ সওয়ার ক্ষমতা নেই তার মাঝে। আহ কি নিদারুণ জ্বালাময় বিচ্ছেদের বিরহ!

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here